Powered By Blogger

Thursday, April 25, 2024

উপলব্ধি ৩৬ ঠিক ও বেঠিক!!!

Baidyanath Anath Samanta-এর করা পোষ্টের বিষয় ও Mondeep Banerjee-র সমর্থন ও সংশোধনসহ মন্তব্য, দু'জনেরই লেখা পড়লাম। দু'জনের লেখার মধ্যে আচার্যদেবের অবিনদাকে করা উক্তি নিয়ে তফাৎ চোখে পড়লো। একজনের লেখার মধ্যে আবেগের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেল আর অন্যজনের লেখার মধ্যে স্বাভাবিক কথাটা উঠে এলো যেটা নাকি আচার্যদেব বলেছিলেন। আমরা প্রায়ই এরকম ঘরে বাইরে দেখতে পাই দাদুদিদা ও নাতিনাতনির পারস্পরিক স্নেহ, মায়ামমতাময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাঝে পারস্পরিক কথোপকথন। দাদু নাতনিকে বলছে, নাতি দিদাকে বলছে, আবদার করছে কত অসম্ভব বিষয়। সেই হিসেবে দেখতে গেলে মনদীপ মুখার্জির বৈদ্যনাথ সামন্তের পক্ষ সমর্থন ক'রে সংশোধনী সহ তুলে ধরা আচার্যদেবের বলা কথার মধ্যে স্বাভাবিকত্ব ফুটে ওঠে। এর মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব কিছু নেই। আবার বৈদ্যনাথ অনাথ সামন্তর পোষ্টে যেটা দেখলাম সেটার মধ্যে আচার্যদেব ও অবিনদাদার কথোপকথনের ভিতর স্বাভাবিকত্বের মধ্যে একটা আবেগ ও অলৌকিকত্বের ছোঁয়া আছে। এই অলৌকিকত্ব প্রচারের বিরুদ্ধে অনেক গুরুভাইবোন আচার্যদেব ও অবিনদাদার সম্মান রক্ষার্থে তাদের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমি ভালো ক'রে ঐ পোষ্ট ও পোষ্টের বিরুদ্ধে করা মন্তব্য ও পোষ্টের স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে করা সবার মতামত পড়লাম। দেখলাম, বৈদ্যনাথ অনাথ সামন্ত যা লিখেছিলেন তার পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যে মতামত দিয়েছিলেন মনদীপ ব্যানার্জী, তা'তে দেখা যাচ্ছে তিনি ঐ বৈদ্যনাথ অনাথ সামন্তের করা পোষ্টের সমর্থন ক'রে শুধু আচার্যদেবের অবিনদাদাকে বলা কথাটার সংশোধন ক'রে দিয়েছেন মাত্র। বৈদ্যনাথ সামন্তের ফেসবুকে পোষ্টের বিষয় ও তার পক্ষে ও বিপক্ষে করা মন্তব্যগুলি পড়ে এবং বিশ্লেষণ ক'রে যে উপলব্ধি হ'লো তাই-ই আজকের লেখার উপজীব্য বিষয়। আমার বোধ, বুদ্ধি, চেতনা, শিক্ষা ইত্যাদি অনুযায়ী আজকের আমার এই উপলব্ধি! উপলব্ধি ৩৬ লিখে অন্য ভক্তদের সংগে আমার উপলব্ধি শেয়ার করলাম।
আমরা দেখেছি যুগ যুগ ধ'রে কালে কালে সময়ের আবর্তে কত সত্য বা ঘটনা কল্পনার ডালপালা ছড়াতে ছড়াতে, রুপকথা বা কল্পিত কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আবার এমন সব গল্প আছে যা আপাতদৃষ্টিতে গাঁজাখুরি মনে হ'লেও সেই গল্পের গভীরে লুকিয়ে আছে সত্য বা বিজ্ঞান। ঠাকুরের কাছে এসে আমরা দেখতে পেয়েছি, জানতে পেরেছি এমন বহু সত্য, পেয়েছি বিজ্ঞানের সন্ধান। ঠাকুর যেমন মিরাকেল পছন্দ করতেন না ঠিক তেমনি কোনওকিছুকে গালগল্প ব'লে উড়িয়ে দিতেন না বা দিতে বারণ করতেন। প্রত্যেকটি জিনিসের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজতে বলতেন। অতিরঞ্জিত আর একেবারে গাঁজাখুরি এক জিনিস নয়। মানুষের মানসিকতা,বোধবুদ্ধি, চেতনা, শিক্ষা ইত্যাদি অনুযায়ী একটু একটু ক'রে বিষয় রঞ্জিত হ'তে হ'তে অতিরঞ্জিত হ'য়ে গিয়ে শিব গড়তে বাঁদর হ'য়ে যায়। এটা মানুষের বায়োলজিক্যাল, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, নিজের জীবন ধারনের ধরণ, চলন অনুযায়ী হ'য়ে থাকে। আবার মানুষ ভালোওবাসে একটু রঙিন চাকচিক্য।
তাই মনে পড়ে, ঠাকুর প্রায়ই বলতেন, "যেখানেই দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।" ঠাকুর জ্যোতিষ বিদ্যার উপর যেমন জীবনকে দাঁড় করাননি ঠিক তেমনি জ্যোতিষ বিদ্যাকে উড়িয়ে দেননি। জ্যোতিষ বিদ্যাকে তিনি বিজ্ঞান বলতেন। মহর্ষি ভৃগুকে তিনি অশেষ শ্রদ্ধা করতেন। আর যা আমাদের মতন সাধারণ মানুষের কাছে অলৌকিক বা অসম্ভব, অস্বাভাবিক ব''লে মনে হয় তা' যারা জীবাত্মার স্তর পেরিয়ে মহাত্মায় উত্তীর্ণ হ'য়ে পরমাত্মায় লীন হ'ন তাঁদের সংগে আমাদের মত জীবাত্মার স্তরে বিচরণকারীদের কাজের মিল খুঁজলে সেটা শুধু ভুল হবে নয়, মহাভুল হবে।
যেমন ঠাকুর কখনো কখনো কথায় কথায় নিজেকে প্রকাশ ক'রে ফেলতেন, "কেষ্টদা, আমি যদি মনে করি কাঠের বিড়াল দিয়ে ইঁদুর ধরাতে পারি।" এই কথার মধ্যে আমরা ম্যাজিক বা মিরাকেল খুঁজতে পারি। কিন্তু যদিও বাস্তবে তা তিনি করেননি আবার নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে বহুবার সেই কথার প্রতিফলনও ঘটিয়েছিলেন, এটাও আমরা জানি।
এছাড়া আর যেখানে তিনি বলতেন,
"ইষ্ট, গুরু পুরুষোত্তম
প্রতীক গুরু বংশধর
রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।
আবার প্রায় সময় কথায় কথায় তাঁর প্রিয় কথা ব'লে উঠতেন, "এইবার করিবো লীলা অতি চমৎকার, আমিই বুঝিতে নারি অন্যে কিবা ছাড়।"
আর, ঠাকুরের প্রিয় কয়েকটি কোটেশানের মধ্যে শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটক থেকে উদধৃত অন্যতম প্রিয় কোটেশান যা তিনি প্রায় বলতেন, " There are more things in heaven and earth , Horatio, than are dreampt of in your philosophy" অর্থাৎ স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।
উপরিউক্ত এই চারটি উক্তির সমস্ত দিক বিশ্লেষণ ক'রে দেখলে দেখা যাবে ঠাকুর কিভাবে আজও জীবন্ত হ'য়ে আমাদের মাঝে বিচরণ করছেন ও প্রতিটি পদক্ষেপে কতটা তিনি আমাদের মাঝে জাগ্রত!!!!!!!!
তাই, বৈদ্যনাথ সামন্ত অনাথ ও মনদীপ ব্যানার্জীর বলা বিষয়ে সব দিক মাথায় রেখেই খোলামেলা বিশ্লেষণের সাহায্যে এই কথায় বলতে পারি, তাদের বলা মূল বিষয়ে সত্যতা নিশ্চয়ই আছে তবে হয়তো পরিবেষণে কোথাও আবেগ বশে এদিক ওদিক হ'য়ে গেছে কিম্বা অতিরঞ্জিত হ'য়ে গেছে। কারণ দেখা গেছে আচার্যদেব কিম্বা ঠাকুর বাড়ীর ঠাকুর আত্মজরা যখন যেখানে ব'সে বা দাঁড়িয়ে গল্প করেন, আলাপ আলোচনা করেন তখন সবটাই সবসময় লিপিবদ্ধ বা টেপ করা হয় না। যেখানে এই গল্প বা আলাপ আলোচনা হয় সেখানে যে বা যারা থাকেন, যার বা যাদের সংগে গল্প, আলাপ-আলোচনা হয় সেখানে যে যা শোনে তাই দিনের শেষে স্মৃতি হাতড়ে নিজের মত ক'রে শব্দ বা ভাষা যোগ ক'রে তাঁদের মুখে বসিয়ে দেয় আর তা' মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। রঞ্জিত হ'তে হ'তে তা' ছড়িয়ে পড়ে অতিরঞ্জিত হ'য়ে ও কল্পিত কাহিনী হ'য়ে; যা শুনলে মনে হয় গাঁজাখুরি বা মিরাকেল। আমার সঙ্গেও বাবাইদাদা ও অবিনদাদার কখনো কখনো কথা বলার মত সময়, সুযোগ বা পরিস্থিতি ঘটেছে কিম্বা বাবাইদাদা ও অবিনদাদার অন্যদের সংগে বলা কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে সেখানে দেখেছি দিনের শেষে সেই তাদের বলাগুলি অন্যের মুখে ব'সে ১৮০ডিগ্রি ঘুরে গেছে কিন্তু বলতে চাওয়া বিষয়ের মধ্যে সত্যতা ছিল। হয়তো সত্যতার গায়ে নীল লাল হলুদ ছোপ পড়ে গেছে ঠিক ক'রে বলতে না পারার কারণে। আবার এও দেখা গেছে অনেককে তাঁদের নাম ক'রে এলাকায় এলাকায় মিথ্যে প্রচার ক'রে পান্ডিত্য ফলাতে আর দেওঘরের এবং দেওঘরের ঠাকুর বাড়ীর খুব কাছের লোক প্রমাণ করতে দেখা যায় অনেককে।
তাই ঠাকুর পরিবারের ঠাকুর আত্মজদের সম্পর্কে কিছু বোলতে গেলে অবশ্যই সতর্কতা প্রয়োজন এবং যতটা সম্ভব অতিরঞ্জিত না ক'রে ঠিক ঠিকটা তুলে ধরা উচিত। নতুবা মানুষের কাছে ভুল মেসেজ যায়।
( লেখা ২৬শে এপ্রিল, ২০১৮ )

No comments:

Post a Comment