Powered By Blogger

Thursday, November 30, 2023

চিঠি আমার বন্ধু ...................কে,

কি আর করা যাবে বন্ধু। ভালোবেসে কিই বা আর দিতে পারি বা করতে পারি? আমার ক্ষমতাই বা কতটুকু। তবুও পাশে আছি বন্ধু। শুধু এটুকু বলতে পারি, পদক্ষেপ যখন ভুল হয়েই গেছে, ফিরে আসা যদি আর নাই হয় তখন মাঝপথে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে কি লাভ আর কি লাভ মাঝপথে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে? এগিয়ে যাও। পিছন ফিরে আর তাকিয়ো না বন্ধু। কথায় আছে, ‘ভাবিয়া করিয়ো কাজ, করিয়া ভাবিয়ো না’। ভেবে যখন কাজ করা হয়নি তখন ভুল ক'রে ফেলার পর আর সেই ভুল ভেবে ভেবে ক্লান্ত, হতাশ, আর বিধস্ত না হ'য়ে একবার আকাশের দিকে মুখ তুলে বুক ফাটো ফাটো ক'রে ‘হে ঈশ্বর ক্ষমা করো, বাড়িয়ে দাও তোমার হাত, আর আমায় গ্রহণ করো’ ব'লে দু'হাত বাড়িয়ে দাও তাঁর দিকে আর গভীর বিশ্বাসে শেষবারের মত উঠে দাঁড়াও শরীরে-মনে সর্ব্বশক্তি নিয়ে তাঁকে জীবনে গ্রহণ করার জন্য। তারপর গভীর বিশ্বাসে ঐ দশদিক ঘেরা মোহের ইন্দ্রজালকে ছিঁড়ে ফেল দু'হাত দিয়ে একটানে এক নিশ্বাসে আর এগিয়ে যাও তাঁর নামে ধ্বনি দিতে দিতে সামনের দিকেই। দেখবে সামনের ঐ নরকের পথ তাঁর নামের ইন্দ্রজালে অদৃশ্য হ'য়ে স্বর্গের পথ খুলে গেছে, সামনের ঘোর অন্ধকার কেটে গিয়ে ফুটে উঠেছে ভোরের নরম স্নিগ্ধ আলো কোন জাদুবলে আর সামনের নিশ্চিত শ্মশান ঢেকে গেছে স্বর্গের পারিজাত গাছের ফুলে ফুলে!!!!!!!!!!!!!!!

বন্ধু, পথের আর কি দোষ? কোন দোষ নেই, একথা ঠিক, যেমন ঠিক 'পদক্ষেপ ভুল'। শুধু সাবধান ক'রে দিই বন্ধু, তাঁর দয়ায় নিশ্চিত মৃত্যুকে জয় ক'রে আবার দ্বিতীয়বার যেন ঐ ভুল পথ, সর্বনাশা পথ হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে না যায়; আর যেন পদক্ষেপ ভুল না হয়! পথ পথের কাজ করবেই, তুমি তোমার কাজ কোরো বন্ধু। সেখানে যেন কোনো ভুল না হয় আর। 

এই প্রসঙ্গে The greatest phenomenon of the world Sri Sri Thakur Anukul Chandra-এর একটা কথা মনে পড়ে গেল:

“অনুতাপ কর; কিন্তু স্মরণ রেখো যেন পুনরায় অনুতপ্ত হ’তে না হয়। যখনই তোমার কুকর্ম্মের জন্য তুমি অনুতপ্ত হবে, তখনই পরমপিতা তোমাকে ক্ষমা করবেন; আর, ক্ষমা হ’লেই বুঝতে পারবে, তোমার হৃদয়ে পবিত্র সান্ত্বনা আসছে; আর, তা’ হ’লেই তুমি বিনীত, শান্ত ও আনন্দিত হবে। যে অনুতপ্ত হ’য়েও পুনরায় সেই প্রকার দুষ্কর্মে রত হয়, বুঝতে হবে সে সত্বরই অত্যন্ত দুর্গতিতে পতিত হবে। শুধু মুখে-মুখে অনুতাপ অনুতাপই নয়, ও আরও অন্তরে অনুতাপ আসার অন্তরায়। প্রকৃত অনুতাপ এলে তার সমস্ত লক্ষনই অল্পবিস্তর প্রকাশ পায়।"
(লেখা ৩০শে নভেম্বর'২০১৫)

উপলব্ধিঃ অসহায় আর্তনাদ


ডঃ প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি!
হায়দ্রাবাদ বেঙ্গালুরু জাতীয় সড়কের ধারে তোমার পোড়া শরীর পাওয়া যায়! তন্দুপল্লী টোল প্লাজা এরিয়ায় পার্ক করা ট্রাকের মধ্যে তোমায় রেপ করা হয়। তারপর তোমার শরীরে নির্ম্মম ভাবে আগুন লাগিয়ে তোমায় পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়।

শোনা যায় অপরাধী দরিন্দাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন চলবে বিচার। কতদিন চলবে তার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই।

কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সূর্য উঠবে, সূর্য অস্ত যাবে। দিন হবে! দিন কেটে রাত হবে, রাত কেটে আবার দিন হবে! সময় এগিয়ে যাবে তার নিয়মে। কারও বাধা, অনুরোধ-উপরোধ সে মানে না, মানবে না। সব চলবে স্বাভাবিক নিয়মে। মাঝে মাঝে অতি বিপ্লবীর স্লোগান উঠবে, একটু-আধটু বিদ্রোহের গান হবে, আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হঠাৎ জেগে উঠবে প্রতিবাদের ঝড়! তারপর সব চুপচাপ!

তোমার কি হবে প্রিয়াংকা!? তুমি তো আর ফিরে আসবে না। কেউ তোমার খোঁজ রাখবেও না, নামও মনে রাখবে না। তোমার শরীরের উপর দরিন্দাদের নির্ম্মম ভাবে অত্যাচার, যন্ত্রনায় ক্ষতবিক্ষত শরীর কেউ মনে রাখবে না। মনে রাখবে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নাম, আলোচিত হবে চ্যানেলে চ্যানেলে তার বিয়ের একবছরের মাথায় সন্তান জন্মের কাহানি! কিন্তু রাস্তায় নেবে কেউ বিস্ফোরক আগুন ঝরা প্রতিবাদ করবে না। যে প্রতিবাদী চরিত্রগুলি দু'দিন আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তান্ডব চালিয়েছিল তারা সব নীরব! চুপিচুপি দিয়েছে গা ঢাকা!!!!!

তাই বলি প্রিয়াঙ্কা,
তুমি নারী! তুমি পুরুষের ভোগের বস্তু! তুমি সস্তা! তুমি দস্তুর! আবহমানকাল ধ'রে চলে আসা বলাৎকারের প্রথা!!!!!!! তাই সব চুপ! সবাই নিশ্চুপ!! তুমি তো নারী! এই দেশে কত ক্ষমতাধর নারী! রাজনীতির আঙিনায় অগুনতি বিদ্রোহের আগুন ছেটানো আগুন নারী! অথচ তারা সবাই চুপ!!!!!!!!!!!!! এই আমার ভারতবর্ষ! এই আমার ভারতের ক্ষমতাধর যত আগুনখেকো নারী!!!!!!!

এই লেখা লিখতে লিখতে তোমার জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে দু'ফোটা চোখের জল কখন বেরিয়ে চোখ ঝাপসা ক'রে দিয়েছে জানি না, শুধু অসহায় আর্তনাদ ঝড় তুলছে মনের গভীরে চারপাশে সব ঝাপসা হ'য়ে যাচ্ছে দেখে।
---------প্রবি।
(লেখা ৩০শে নভেম্বর'২০১৯)

Monday, November 20, 2023

প্রবন্ধঃ তুমি কি সৎসঙ্গী?

হে আমার প্রিয়,
সৎসঙ্গীর সংজ্ঞা ঠাকুর কি দিয়েছেন তা তুমি জানো তো? ঠাকুরের দীক্ষা নিলেই কি সৎসঙ্গী হ'য়ে যায়? তুমি কি নিজেকে সৎসঙ্গী ব'লে মনে করো? রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণের অনুগামীরা কি সৎসঙ্গী নয়? জীবন্ত ঈশ্বর ছাড়া নিরাকার ঈশ্বর বা মূর্তির একনিষ্ঠ পূজারী যারা তাঁরা কি সৎসঙ্গী নয়? সৎসঙ্গ বা সৎসঙ্গীর ব্যাপক অন্তর্নিহিত অর্থ কি? যদি মনে করো তুমি ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষা নিয়েছো আর সৎসঙ্গী হ'য়ে গেছো তাহ'লে মূর্খের স্বর্গে বাস করছো।

আর, দায়সারা গোছের তাঁর দীক্ষা নিলেই যে তাঁর দয়ার অধিকারী হওয়া যায় তা কিন্তু নয়। বিধি থেকে বিধাতা। তিনি বিধির বাইরে যান না। যদি তাই হ'তো তাহ'লে সৎসঙ্গীদের জীবনে, সৎসঙ্গীদের সংসারে এত দুঃখ, কষ্ট, বিপদ আপদ থাকতো না। তাঁর দয়ার বাতাস সবার জন্য বইছে। যে তার শরীরের, মনের, আত্মার দরজা, জানালা খুলে রাখবে তার জীবনেই তাঁর দয়ার বাতাস ঢুকবে, ব'য়ে যাবে; নতুবা নয়। যে আলোর দিক থেকে অর্থাৎ তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে আর অন্ধকার অন্ধকার অর্থাৎ দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণা ব'লে চীৎকার করবে সেক্ষেত্রে দয়ালের চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। ছেলে যদি বাপকে না মানে, বাপের অনুশাসন না মানে তাহ'লে বাপের যেমন কিছু করার থাকে না ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও তাই। বাস্তবে আমার তোমার ঘরের পিতামাতার মতো। সেক্ষেত্রে তোমার না বুঝে বলা ঈশ্বর 'স্বার্থপর" কথাই ঠিক। হ্যাঁ! তোমার বোধ অনুযায়ী ক্ষুদ্রতর অর্থে তিনি স্বার্থপর! তিনি বিশেষ কাউকে দয়া করেন আর কাউকে করেন না তা নয়। তিনি দয়ার সাগর! যে ডুব দিয়েছে সেই সাগরে সেই তাঁর দয়ায় স্নান করেছে। তাঁর দয়ার সাগরে অর্থাৎ বিস্তারে তোমার অস্তিত্ব হারাও। সৎ-এর সঙ্গী হও। অর্থাৎ সত্ত্বার সত্ত্বা পরমসত্ত্বায়, অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম অস্তিত্ব, আত্মার আত্মা পরমাত্মায় মিলিত হও, লীন হও তখন আর তোমার আলাদা অস্তিত্ব ব'লে কিছু থাকবে না। নুনের পুতুলের মতো নোনা জলে গলে যাবে। বগবগানি আর থাকবে না। ঈশ্বর আমার বাপের চাকর না। ঈশ্বর আমার জমিদারী নয় যে আমি যা ইচ্ছা তাই তাঁকে ব্যবহার করবো, তাঁকে দিয়ে করাবো। তাই জেনেবুঝেই আমার আগের লেখায় সৎসঙ্গীর আগে 'প্রকৃত' শব্দ ব্যবহার করেছি। বাঁচতে যদি চাও, অস্তিত্বের বিনাশ যদি না চাও, বাড়তে যদি চাও, তাঁর দয়া যদি পেতে চাও, অকাল মৃত্যু যদি না চাও, দীর্ঘায়ু যদি চাও, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতার হাত থেকে যদি নিস্তার পেতে চাও তাহ'লে এই 'প্রকৃত সৎসঙ্গী' হ'য়ে ওঠা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপায় নেই, পন্থা আমার জানা নেই।

বুক ভরা হিংসা, মানুষকে অপমান, অশ্রদ্ধা করা, কটু কথার আঘাত করা, সহ্য না করা, অন্যের দোষত্রুটি ধরা, নিন্দা, কুৎসা করা, গুরুজনকে, শ্রেষ্ঠকে, বড়কে না মানা, সম্মান, সমীহ না করা, পদে পদে অপদস্ত করা, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা করা, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির, শ্রেষ্ঠজনের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচার করা, গালাগালি করা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো, ষড় রিপুকে লাগামছাড়া ব্যবহার করা, বৃত্তি-প্রবৃত্তির দাসত্ব করা ইত্যাদি নারকীয় গুণের অধিকারী কি সৎসঙ্গী হ'তে পারে?

হে আমার প্রিয় সৎসঙ্গী, তুমি কি এগুলির একটারও অধিকারী?
(২০শে নভেম্বর/ ২০২২)

Thursday, November 16, 2023

গল্পঃ গ্রিন সিগন্যাল ( সত্য ঘটনা অবলম্বনে )।

আজ একটা অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হ'য়ে রইলাম।

জানি না এই ঘটনাকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করবো। সত্যি সত্যিই কি এই ঘটনার পিছনে কোনও অলৌকিকতা লুকিয়ে আছে নাকি সবটাই স্বাভাবিক এক ঘটনা? আমরা যারা ঈশ্বর পূজারী, ঈশ্বরে বিশ্বাসী তারা এই ঘটনার পিছনে ঈশ্বরের অপার করুণা ব'লে মনে করি, অলৌকিক ঘটনা ব'লে ভাবি আর যারা আমরা সাধারণ-অসাধারণ ঈশ্বর অবিশ্বাসী নাস্তিকের পূজারী তারা একে এক স্বাভাবিক ঘটনা বা প্রশাসনিক অব্যবস্থা বা যান্ত্রিক ত্রুটি কিম্বা কাকতালীয় ঘটনা ব'লে বর্ণনা করি।

যাই হ'ক, যে যে রকমভাবে ভাবুক, যে যে দৃষ্টিকোণ দিয়ে ঘটনাকে বিচার ক'রে করুক সেটা তার তার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ওপর দাঁড়িয়ে তা করে। আমি শুধু ভাবি সেই শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের বিখ্যাত উক্তি; যা শ্রীশ্রীঠাকুরের খুবই প্রিয় উক্তি ছিল। তিনি প্রায়ই কথাপ্রসঙ্গে ভাবময় অবস্থায় উদাত্ত কণ্ঠে তা বলতেন, "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy," যার অর্থ "স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও অতীত।"
ঠিক তেমনি একটা ঘটনার কথা আজ আমি বলবো আমার প্রিয়জনদের কাছে।

কয়েকদিন ধরেই একটা জরুরী কাজে দেওঘরে যাবার একটা কথা চলছিল। মেয়ের সম্প্রতি নোতুন কোম্পানিতে ডিরেক্টর পদে নিয়োগ পত্র পেয়েছে। সেই ব্যাপারে সৎসঙ্গের আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার সম্মতি ও আশীর্বাদ প্রয়োজন। আজ চাকরী জীবনে ১৩বছর অতিক্রম করেছে মেয়ে আমার। প্রায় প্রথম থেকেই আচার্যদেবের নির্দেশমতো ও আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে চাকরী জীবন অতিবাহিত ক'রে চলেছে। আজ পর্যন্ত প্রতিবারই যখনই যতবার চাকরী জীবনে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে ততবারই মেয়ে আমার ছুটে ছূটে চ'লে গিয়েছে শ্রীশ্রীআচার্দেবের কাছে আচার্যদেব আচার্য পদে অভিষিক্ত হওয়ার অনেক আগে থেকেই এবং আজ পর্যন্ত। এই একই ব্যাপার আমার ছেলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই এবারও আজ ছুটে গিয়েছে মেয়ে। কারণ কোম্পানি থেকে জয়েন করার চাপ দিচ্ছে। এর আগে প্রায় ৮-৯ বছর আগে কথাপ্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআচার্যদেব মেয়েকে বলেছিলেন, 'তুই অনেক বড় জায়গায় যাবি।' আজ এই অল্প বয়সে কোম্পানির ডিরেক্টর পদে উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনা আচার্যদেবের ভবিষ্যৎ বাণীকে প্রমাণ করে। একবার পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদা বলেছিলেন, "বাবাই বাকসিদ্ধ পুরুষ" (শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাকসিদ্ধ পুরুষ)। আজ পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদার মুখনিঃসৃত কথা "বাবাই বাকসিদ্ধ পুরুষ" সত্য প্রমাণিত হ'লো।
কয়েকদিন আগে শ্রীশ্রীআচার্যদেব ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরে ত্রিপুরা হ'য়ে কুচবিহার যাওয়ার পথে কলকাতায় অমরধামে এসেছিলেন এবং একদিন থেকেই পরদিন চলে গিয়েছিলেন। সেইবার দর্শন হয়নি কলকাতায়। এবার আবার ২০ তারিখের পর বেরিয়ে যাওয়ার কথা। সম্ভবত ত্রিপুরার বরাক ভ্যালিতে আচার্যদেবের দীক্ষাদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

যাই হ'ক সেইমতো তড়িঘড়ি টিকিট কেটে যাওয়ার দিন স্থির হ'লো আজ (১৪ই জানুয়ারী'২০২৩ শনিবার)। প্রতিবার আমরা যখনই যাই পুরো পরিবার যাই। কিন্তু এবার যেহেতু চটজলদি যাওয়ার সিদ্ধান্ত হ'লো সেইহেতু আমার স্ত্রী আর মেয়ে রওয়ানা দিল। পেটের ইনফেকশানে কোমরে ব্যথার কারণে এইবার আমার প্রথম যাওয়া হ'লো না। ছেলে-বৌমা ও জামাই চটজলদি যাওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় ছুটির ব্যবস্থা করতে পারেনি; তাই এবার যাওয়া হ'লো না।
এবার আসি আসল কথায়। সকালবেলা স্ত্রী ও মেয়ে রেডি হ'য়ে যখন বের হ'লো তখন ১টা ১৫মিঃ। ২টো ৫মিঃ-এ হাওড়া থেকে ছাড়বে হাওড়া-পাটনা জন শতাব্দি এক্সপ্রেস (১২০২৩)। কিন্তু যখন গেট দিয়ে বেরোতে যাবে তখন একজন অপরিচিত মানুষ গেট খোলা পেয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। ফ্ল্যাট বাড়ি। ২৪টা ফ্যামিলি থাকে। গেটে প্রত্যেক ফ্ল্যাটের কলিং বেল আছে। আমার স্ত্রী বের হওয়ার সময় সেই যুবককে জিজ্ঞেস করলো আপনি কোথায় যাবেন? উত্তরে সে জানালো সে থার্ড ফ্লোরে যাবে। তখন স্ত্রী সেই অপরিচিত যুবককে বললো আপনি ঐ ফ্লোরের কলিং বেল টিপুন্‌, যখন ফ্ল্যাটের লোক আসবে তখন আপনি ঢুকবেন। এরপরে গেটে তালা দিতে গেল আমার ছেলে। যুবকটি জবরদস্তি করতে লাগলো ভেতরে যাওয়ার জন্য। বললো সে কলিং বেল টিপেছে। সেইকথা শুনে ছেলে তাকে লোক আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললো। কিন্তু সে বললো, সে টিচার, ঐ ফ্ল্যাটের ছেলেকে পড়ায়, প্রতিদিন আসে। যুবকটির কথা বলার ধরণ দেখে ছেলে তাকে বুঝিয়ে বলতে গেল যেহেতু সে তাকে চেনে না সেইহেতু সে অ্যালাও করবে না তাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিতে। এই নিয়ে শুরু হ'লো অকারণ তর্কাতর্কি, জেদাজেদি। ইতিমধ্যে এসে পড়েছে ঐ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ভদ্রলোক এবং ভদ্রলোকের মেয়েরা। ভদ্রলোকের বয়স ৭০বছর উর্ধ্বে। উনি অবাঙালি। এই ফ্ল্যাটের ২৪টা ফ্যামিলির মধ্যে ২২টা ফ্যামিলিই অবাঙালি। ভদ্রলোক এসে ছেলেকে উনার বাড়ির টিচারকে কেন আটকেছে তাই নিয়ে অযৌক্তিকভাবে চার্জ করতে লাগলেন। মেয়েরাও সঙ্গে সঙ্গে ছেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো মাষ্টারকে আটকানো আর তাদের বাবাকে অপমান করার জন্য। ব্যাপারটা হ'য়ে গেল চোর কোতোয়ালকে ডাঁটে মতন। ছেলে পরিস্থিতি বোঝাবার চেষ্টা করলো। প্রেস্টিজ, ইগোর থেকে যে ফ্ল্যাটে প্রবেশের নিয়ম ও সিকিউরিটি সিস্টেম অটূট রাখা জরুরী ও বড়ো প্রশ্ন সেই ব্যাপারটা বোঝাতে ব্যর্থ হ'লো। বোঝাতে ব্যর্থ হ'লো ফ্ল্যাটের ইউনিটি আউটসাইডারের জন্য-- সে যেই-ই হ'ক---যেন নষ্ট না হয়, যেন নিজেদের মধ্যে ডিভিশন না হয়। ততক্ষণে সময় গড়িয়ে গেছে। আমি চেঁচামেচি শুনে নীচে নেবে এলাম এবং ব্যাপারটা হাতজোড় ক'রে থামাবার চেষ্টা করলাম আর স্ত্রী-মেয়েকে বললাম, অনেক দেরি হ'য়ে গেছে, টোটো দাঁড়িয়ে আছে, চ'লে যেতে। তখন সময় ১টা ৩০মিঃ মতো আর ট্রেন ছাড়তে ৩৫মিঃ বাকী। এরপরে অনেক ঘটনা আছে। সেগুলি আর বললাম না।

ফাস্ট ফ্লোরে নিজের ফ্ল্যাটে এসে যখন বসলাম তখন একটু পড়েই মেয়ের ফোন এলো স্টেশন থেকে। লোকাল ট্রেনের সময় জানতে চাইলো। আমি ছেলেকে বললাম সার্চ করতে। ট্রেন যখন এলো তখন ঘড়িতে পৌনে দু'টো ( ১টা ৪৫মিঃ)। আর হাওড়া থেকে ট্রেন ছাড়বে ২টো ৫ মিঃ-এ ( তখন হাতে আর ২০মিঃ বাকী) এইকথা জেনে আমি আর ছেলে শঙ্কিত হ'য়ে পড়লাম। কি আর করবো। ঠাকুরের মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মতো নাম করতে লাগলাম। মনে মনে ঠাকুরকে ডাকছি আবার ঠাকুরের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আর ভাবছি, বাড়ি থেকে বেরোবার সময় কেন ওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলো? ঐ খানেই সময় নষ্ট হ'য়ে গেল। সঠিক সময়ে লোকাল ট্রেনটা ধরতে পারলে হাওড়ায় সময়ে পৌঁছে যেত আর ট্রেনও মিস হ'তো না।

যাই হ'ক ফোন করলাম মেয়েকে। মেয়ে ফোন ধরলো না। ঘড়িতে যখন ২টো ৫মিঃ হ'য়ে গেছে তখন আবার ফোন করলাম কিন্তু তখনও মেয়ে- বউ কেউ ফোন ধরলো। ঘড়ি এগিয়ে চললো। ১মিঃ ১মিঃ ক'রে সময় এগোতে এগোতে ২টো ২০মিঃ হ'য়ে গেল তবুও ওপ্রান্ত থেকে কোনও ফোন এলো না। ছেলেকে বললাম নেটে দেখতো ট্রেন ছাড়ার সময় ক'টা এবং কি অবস্থায় আছে। ছেলে নেট সার্চ ক'রে বললো ট্রেন ২টো ৬মিঃ-এ ছেড়ে দিয়েছে এখন ট্রেন গোবরা ছাড়িয়ে দুর্গাপুরের এগিয়ে চলেছে। হতাশ হ'য়ে হাত পা ছেড়ে দিয়ে ব'সে পড়লাম সোফায়। ওদিকে ফোনও ধরছে না কেউ। ছেলে বারবার ফোন ক'রে যাচ্ছে কিন্তু ফোন কেউ ধরছে না।

তারপর ঘড়িতে যখন ২টো বেজে ৪০মিঃ তখন হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ও প্রান্ত থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল মেয়ে খুব হাঁপাচ্ছে। বললো, পড়ে ফোন করছি। এইমাত্র ট্রেন ছেড়েছে। আমরা এখনও সিটে বসিনি। সিটে ব'সে, পড়ে ফোন করবো।

এ কথা শুনে ঠাকুরের ফটোর দিকে তাকিয়ে হু হু ক'রে উঠলো বুকের ভেতরটা। চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো জল। মন বললো, এও কি সম্ভব!?
কিছুক্ষণ পর মেয়ে পুনরায় ফোন করলো। এখন মেয়ের স্বাভাবিক গলা। সিটে ব'সে আছে। ট্রেন ছুটে চলেছে দ্রূতগতিতে। তখন তার কাছ থেকে যা জানতে পারলাম তা হ'লো, লোকাল ট্রেন যখন হাওরায় ঢুকেছে তখন সময় ২টো ১৫মিঃ। যেতে হবে ২নম্বর প্ল্যাটফরম থেকে ৯ নম্বর প্ল্যাটফরম। স্ত্রী বললো, ট্রেন তো ছেড়ে দিয়েছে এখন আর গিয়ে কি হবে চল ফিরে যাই। মেয়ে বললো, ফিরে তো যেতে হবেই, চলো একবার প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘুরে আসি। ঐ ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি ক'রে মেয়ে আর স্ত্রী যখন ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছল তখন দেখলো একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস ক'রে জানতে পারলো ট্রেনটি জন শতাব্দী এক্সপ্রেস। গ্রিন সিগন্যাল নেই তাই ট্রেন ছাড়েনি। চমকে উঠে দৌড় লাগালো মেয়ে আর বউ। তাদের B14 কম্পার্ট্মেন্ট প্ল্যাটফর্মের একেবারে সামনের দিকে। গোটা প্ল্যাটফর্মটা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হাঁটতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেল। ভয়, এই বুঝি ট্রেন ছেড়ে দেয়। এই বুঝি তীরে এসে তরী ডুবে গেল। এই বুঝি চোখের সামনে ট্রেন হাতছাড়া হ'য়ে যাবে। প্রাণপণে ঠাকুরের নাম করতে করতে দৌড়ে এগিয়ে গেল দু'জনে। গোটা প্ল্যাটফর্মে দু'জনে ছুটে চলেছে! তারপর B14 কম্পার্টমেন্টের সামনে এসে পড়িমরি ট্রেনে উঠে গেল আর ঠিক সেইমুহুর্তেই ট্রেন উঠলো দুলে, গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে ট্রেন এগিয়ে চললো ধীরে ধীরে সামনের দিকে। চুপ ক'রে দাঁড়িয়ে রইলো স্ত্রী আর মেয়ে দরজার সামনে। তারপরে ধাতস্থ হ'য়ে নিজেদের সিট খুঁজে নিয়ে সিটে গিয়ে বসলো। জানালার সামনে ব'সে আনমনে চেয়ে রইলো বাইরের দিকে। একে একে সরে যাচ্ছে ঘর বাড়ি, পথঘাট, গাছপালা আর বাতাস কেটে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন ৩০মিনিট পিছনে চলা সময়কে অতিক্রম করার জন্য, ছুটে চলেছে দেওঘরের জসিডি স্টেশনের দিকে। অনেকক্ষণ চুপ ক'রে রইলো দু'জনে। তারপরে ফোন করলো মেয়ে আমাকে। কৃতজ্ঞ চিত্তে দয়ালের দয়ার কথা স্মরণ ক'রে ভেজা গলায় সবিস্তারে বললো উপরের ঘটনাটা।
শ্রীশ্রীঠাকুরের ছবির দিকে অশ্রুসজল চোখে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে পড়ে গেল ঠাকুরের কথা।

দয়াল ঠাকুর দুঃখ ক'রে বলেছিলেন, "তোদের আমি প্রতিদিন প্রতিনিয়ত যে ছোটো ছোটো কত রকমভাবে রক্ষা ক'রে চলেছি তার ইয়ত্তা নেই।"
চোখ দিয়ে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো হাতের তালুতে।
(লেখা ১৪ই জানুয়ারী ২০২৩)

প্রবন্ধঃ স্বপ্নে দীক্ষা ও লৌকিক-অলৌকিক

একটা লেখা পড়লাম। একজন পোষ্ট করেছে এক মা স্বপ্নে দেখেছেন তিনি একটা মন্দিরে গেছেন সেখানে সেই মন্দিরে একজন অপূর্ব সুদর্শন যুবক বসে আছেন। সেই সুদর্শন যুবক তাঁকে ডেকে বলছেন দীক্ষা নিতে। তারপরে তার ঘুম ভেঙে যায়। সকাল হ'লে তিনি সেই কথা স্বামী ও শাশুড়িকে বলেন। কিন্তু তারা এ সম্পর্কে তাকে কিছু বলতে পারেননি। পরে তিনি পথেঘাটে সেই সুন্দর যুবককে অনেক খুঁজেছেন কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাননি। পরে হঠাৎ একদিন ফেসবুকে প্রকাশিত এক সুন্দর যুবকের ছবি দেখে সেই স্বপ্নে দেখা যুবকের চেহারার সঙ্গে তার হুবহু সাদৃশ্য দেখতে পান। তখন সেই মা প্রোফাইলের ইনবক্সে ও ফোনে পোষ্টদাতার সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করেন এবং পোষ্টদাতা তাকে পোষ্টে প্রকাশিত ছবির যুবকের সঙ্গে যোগাযোগের পথ ব'লে দেন।

পরে অবশ্য কি হ'লো তা আর জানা যায় না ঐ পোষ্ট থেকে।
সেই স্বপ্নে দেখা অপূর্ব সুদর্শন পুরুষ হ'লেন আমাদের কোটি কোটি প্রাণের ভালোবাসার মানুষ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা। যাকে দেখলে মনে হয় এতো সুন্দর কেউ হ'তে পারে? এত সহজ সরল আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কারও হ'তে পারে? যত দেখি তত মুগ্ধ হ'য়ে যায়। এই বয়সে চোখে জল এসে যায় যখন তাঁর সামনে বসি। কথা বলবো ব'লে যাই কিন্তু মুখের দিকে তাকিয়ে কথা হারিয়ে যায়। এমন নয়ন ভুলানো প্রাণ জুড়ানো অবয়ব!!!!!! তাঁকে সামনা সামনি যখনি দেখি তখনি খালি মনে হয় এমন মনে প্রাণে সুন্দর যেন হয় আমার সন্তান!!! যে দেখেছে সে জানে।

স্বপ্নে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ও ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের কোনও কোনও ভক্তপ্রাণ দেখতেই পারে। আর এ বিষয়ে অবিশ্বাসীরা তর্ক, ঝগড়াও করতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। আর অজ্ঞানতা থেকেই অবিশ্বাসের জন্ম। এই ঘটনাকে অলৌকিক ঘটনা বলা হ'য়ে থাকে। অলৌকিক ব'লে কিছুই নেই, সবই লৌকিক। যতক্ষণ না আমরা ঘটনার কার্যকারণ জানতে পারছি, বুঝতে পারছি ততক্ষণ তা অলৌকিক আর যে মুহূর্তে ঘটনার কারণ হস্তগত হয় তখনি তা হ'য়ে যায় লৌকিক। ঠাকুরের কাছে যা জেনেছি তাই বললাম। অলৌকিক সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর বলতেন,
"জগতে যা কিছু-ঘটে তারই কারণ আছে, আমরা যেখানে কারণটা ধরতে পারি না, সেখানে সেইটাকে বলি অলৌকিক।"
ইংরেজি ভাষার কবি, নাট্যকার ও সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের একটা লাইন শ্রীশ্রীঠাকুর প্রায়ই বলতেন, "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." যার অর্থ ছিল, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।
তবে ঠাকুর এও বলতেন, "অলৌকিকের ওপর দাঁড়ালে টান হয় না, আর টান না হ'লে মানুষের কোনও লাভ হয় না।"

যারা যে বিষয়ে, যার সঙ্গে যত বেশী ঘনিষ্ঠ, যাদের ভালোবাসা যত বেশী গভীর তারা স্বপ্নে সেই বিষয়কে, তাদের ভালোবাসার মানুষকে, প্রিয়জনকে স্বপ্নে দেখতেই পারে। এটাও একটা বিশেষ জ্ঞানের মধ্যে পড়ে যা আমার অজানা। কেউ কেউ একে ইলিউশানও ব'লে থাকে। আমরা যখন যে ভাবের মধ্যে দিয়ে যাই, একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় অবস্থান করি তখন সেই ভাব অনুযায়ী স্বপ্ন দেখা যায়। ঘুমের মধ্যে তা ভেসে ওঠে। আমাদের মাথার মধ্যে যে ধরণের চিন্তাভাবনা, ইচ্ছা তীব্রভাবে অহরহ খেলা করে, অবচেতন মনে যা সুপ্ত অবস্থায় থাকে তা হয়তো বা স্বপ্ন আকারে ভেসে ওঠে। এ নিয়ে বিশ্বাসী অবিশ্বাসীর মধ্যে তর্ক ঝগড়া বেঁধে যেতে পারে। স্বপ্নে শুধু অতীত, বর্তমান নয়, ভালো মন্দের ভবিষ্যতও ভেসে ওঠে। স্বপ্নে দেখা বিষয়ের সঙ্গে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত-এর হয়তো বা কোনও যোগসূত্র থাকতেও পারে। আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যের বাইরেও অনেক কিছু স্বপ্ন হ'য়ে আমাদের সামনে ঘুমের মধ্যে হাজির হয়। আমাদের ইন্দ্রিয় দুর্বল তাই আমারা দুর্বল ইন্দ্রিয় দিয়ে ইন্দ্রিয়ের উপরে অবস্থিত জিনিস দেখতে বা বুঝতে পারি না। আর আমি বুঝতে পারি না, দেখতে পারি না ব'লে যে তা যে সব বোগাস, বুজরুকি তা কিন্তু নয়। এই মাথা এক আজব মাথা। ঠাকুরের কথায় চিত্রগুপ্তের খাতা। চিত্রগুপ্ত মানে চিত্র মানে ছবি আর গুপ্ত মানে লুকোনো অবস্থায় যা আছে। অর্থাৎ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ অনন্ত জীবনের ইতিহাসের ছবিগুলি সব লুকিয়ে আছে আমার এই মস্তিষ্কের মধ্যে।

যাই হ'ক উপরিউক্ত বিষয়ে ঠাকুরের কাছ থেকে যা জেনেছি তাই চেষ্টা করলাম নিজের মতো ক'রে তুলে ধরতে। ভুল হ'তে পারে। নিজ গুণে ক্ষমা ক'রে দেবেন। এ বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ ন'ই। স্বপ্ন বিশেষজ্ঞেরা এই বিষয়ে বলতে পারবেন। কিন্তু আমার এই পোষ্টে আলোচনার বিষয় সম্পূর্ণ অন্য।

এবার বলি, ঐ যে বললাম স্বপ্নে দীক্ষা নেবার কথা বলছে শ্রীশ্রীঅবিনদাদা; এই ধরণের পোষ্টে হয়তো কতিপয় সৎসঙ্গী বিশ্বাসীর মন আশ্বস্ত হয়, ঠাকুরের প্রতি নির্ভরতা বাড়ে। হু হু ক'রে প্রচার ছড়িয়ে পড়ে। তার উপর আবার প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তা'তে হয়তো বা অবিশ্বাসীরও মনে দোলা লাগতে পারে।
কিন্তু আমরা প্রতি মুহূর্তে অবিশ্বাসের গোলামি ক'রে চলেছি। বিশেষ ক'রে আমরা যারা সৎসঙ্গী তাদেরই বিশ্বাস কম, নেই বললেই চলে। ঘরে ঘরে দুঃখ দুর্দশা তার প্রমাণ। আর আমরা তাবিজ, মাদুলি, তুকতাক, নানা দেবদেবী, অলৌকিক ঘটনা ইত্যাদিতে বিশ্বাসী। আমি অনেক সৎসঙ্গী দাদা ও মায়েদের মা কালীর কাছে ভক্তিভরে প্রার্থনা পূরণের জন্য জীব বলি দেবার মানত করতে ও ভক্তি গদগদ চিত্তে বলি দিতেও দেখেছি। আর প্রশ্ন করলে অশ্রদ্ধা, অসম্মান পেয়েছি। আর বেশী পেয়েছি ভক্তিমতি সৎসঙ্গী মায়েদের কাছে, কখনো কখনো উগ্রতার সঙ্গে। আর, 'যদি ভালো কিছু ফল পেতে চান এক্ষুনি মা কালীর ছবিতে লাইক দিন আর শেয়ার করুন কিম্বা এই পোষ্টকার্ড বা লিফলেট পাওয়ার সাথে সাথে পোষ্টকার্ডে বা লিফলেটে যা লেখা আছে তা লিখে বা ছাপিয়ে ১০০ জনের মধ্যে ছড়িয়ে দিন নতুবা বিপদ আসন্ন'----এই সমস্ত ধরণের ভয়জনিত ঈশ্বর ভক্তির প্রচারে আমরা সৎসঙ্গীরাই বিশ্বাসী; অদীক্ষিতদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।
আর যারা ঠাকুর বিরোধী ও ঠাকুর অবিশ্বাসী যারা তাদের কাছে এমন ঘটনা প্রচারসর্ব্বস্ব হাস্যকর গল্প ও খিল্লি মাত্র। যা অতিমাত্রায় ভীষণভাবে অহেতুক বিতর্কের, খিল্লির রসদ যোগায় ঠাকুর ও ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঠাকুর বিরোধীদের কাছে। নিজের জীবনের ওপর ঘটা অলৌকিক (?) বাস্তব ঘটনা যা পরীক্ষিত সত্য তা যতটা দৃঢ়তার সঙ্গে বলিষ্ঠ প্রভাব ফেলে ব্যক্তিজীবন ও সমাজ জীবনের ওপর তার কানাকড়িও প্রভাব ফেলে না অন্যের জীবনের অপরীক্ষিত শোনা গল্পে এবং তা পরিবেশনে। এমনই আমাদের বাস্তব, কঠিন, রূঢ়, তিক্ত, মিথ্যেতে ভরা চারপাশের পরিবেশ ও মানুষজন। তার ওপর স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের মতো স্বপ্নে পাওয়া দীক্ষার গল্প হ'লে তো অবিশ্বাসী বিরোধীদের কথায় নেই। রে রে ক'রে নেবে পড়বে ময়দানে। এমনিতেই পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত খিল্লির শিকার 'সৎসঙ্গ' বিরোধীদের কাছে। তাদের কাছে এইধরণের গল্প আজগুবি, গাঁজাখুরি গল্প; যা মেঘ না চাইতেই জল-এর মতো ব্যাপার। আর সুযোগ সন্ধানী যারা এগুলিকে নিয়ে দূর্বলদের ওপর ব্যবসা করার সুযোগ পায় তাদের কাছে এই গল্পগুলি মোক্ষম পাওনা। আর মনে রাখতে হবে আমাদের, এটা ঘোর কলির সময়। এটাই স্বাভাবিক। তাই প্রচার সম্পর্কে সাবধান হ'য়েই আমাদের প্রচার করতে হবে। যাতে প্রচারের ঠেলায় শিব গড়তে বাঁদর না গড়ে বসে। ঠাকুরের স্বপ্ন দেখা ও অলৌকিক ঘটনা প্রসংগে বলাগুলি মাথায় রেখে সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে যেন আমরা সৎসঙ্গীরা চলি। ঠাকুর সমস্ত কিছুকে বাস্তবে রূপ দিতে পছন্দ করতেন।

এ প্রসঙ্গে বলি, একবার ঠাকুরকে প্রফুল্লদা বলেছিলেন, "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের মৃত্যুর পর স্বামীজী তো তাঁকে বহুবার দেখেছেন।
তার উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "স্বামিজী হয়তো দেখতে পারেন, কি আর একজন হয়তো দেখতে পারে---কিন্তু environment-এর (পরিবেশের) সকলে যদি স্বাভাবিকভাবে না দেখতে পারে---তাহ'লে কী হ'লো? আমার রকমটাই এইরকম যে concrete (বাস্তব) না হ'লে আমার কিচ্ছু ভাল লাগে না। যদি কোন instrument-এর মধ্যে দিয়ে কিংবা অন্য কোনভাবে environment-এর সকলে মিলে বোধ করতে না পারি---তাহ'লে খুশী হ'ই না। তাই, আমার কথাগুলির মধ্যে বোধহয় Philosophy, Art, Religion--সবকিছু Science-এ merge ক'রে গেছে।"
(১লা জানুয়ারী'২০৩২৩)

অনু কবিতাঃ পাবি-যাবি।

জীবন মাঝে তুই
জীবন খুঁজে পাবি
তখন জীবন জুড়ে
আনন্দেতে রবি।
আর যাবার বেলায়
যেতেই যখন হবে
হাসি মুখে যাবি! ----প্রবি।
(লেখা ১৬ই নভেম্বর; ২০১৫)

কবিতাঃ অনুকূল

বহু দিন মাস বছর পিছনে ফেলে ছুটেছি ক্রমাগত,
যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় চেপে প্রৌঢ়ত্বের আঙিনায়
ছুটেছি অলিম্পিয়াস তনয় রূপে; রাজনীতির যত
ঘোর অন্ধকার গোলকধাঁধায় ঘুরেছি আমি, আরো গভীর
অন্ধকার ঘিঞ্জি ধর্মের পাংশুল প্রাঙ্গণে হায়! আমি হতভম্ব
জড়ভরত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র প্রতিকূল,
আমারে অজড় অমর প্রাণ দিয়েছিল নব বৃন্দাবনের অনুকূল।
আঁখি তাঁর কবেকার হারিয়ে যাওয়া সেই আলোর পর্বত,
হাসি তাঁর সৌদামিনীর রুপোলী ঝলক, নির্মল
সমুদ্র সফেন, যেন মৃতসঞ্জীবনী শীতল সরবৎ;
মাঝিহীন যে জীবনখেয়া হারিয়ে দিশা
খাদের কিনারায় ফেলে নোঙর,
ভেসে ওঠে শেষের সেদিনের ভয়ংকর ছবি;
বেঁচে ফেরার পথ আর অন্ধকার কেটে গিয়ে ভোর
যখন সে চোখে দেখে বিধাতার-বিধির ভিতর,
তেমনি দেখেছি আমি তাঁরে জীবনের ঘোর অন্ধকারে;
বলেছে সে, ‘জীবন খুঁজে পাবে হেথায়,
ছুটে এসো, চলে এসো, পিছনে ফেলে যত প্রতিকূল’
বরাভয় হাতে হাসির ফোয়ারা তুলে দেবঘরের অনুকূল।
সমস্ত দিনের শেষে বিকেলের ফুলের মতন
বিষন্নতা আসে; মধ্যাহ্নের সূর্যের মত রক্তের উষ্ণতা
শেষ বেলার ম্লান আলোয় ঝিম মেরে হতে চায় ছন্দপতন।
তখন আবার তাঁর ডাকে_________
বাধভাঙ্গা জলের স্রোতের তীব্রতার মত জাগে বাঁচার মত্ততা;
সব আলো ফিরে আসে, ফিরে আসে স্নিগ্ধ মলয়ানিল
পেলব স্পর্শে কেটে যায় শেষ বিকেলের ক্লান্তি ঘুম
জেগে ওঠে সুপ্তোত্থিত হৃদয়ের উষ্ণতা
আর ফিরে যায়, সরে যায় সব যত প্রতিকূল;
থাকে শুধু তাঁর নাম পেয়ালা, আর নাম মদ অনুকূল।
(লেখা ১৬ই নভেম্বর'২০১৬)

Tuesday, November 14, 2023

প্রবন্ধঃ শিক্ষা ও শিক্ষিতের প্রতিফলন

শিক্ষা ও শিক্ষিতের প্রতিফলন বা পরিচয় কি সেটা ভাবতে বসে সব ওলটপালট হ’য়ে গেল। আইনের বেড়াজালে সরকার বাধা পড়েছে। প্রফেসর অম্বিকা মহাপাত্র তাঁর তৈরি মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাঙ্গ চিত্র কাণ্ডের জেরে তাঁকে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগে সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড়
করিয়েছেন। প্রফেসর মহাপাত্রের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি রাজ্যবাসীকে সরকারের প্রতিহিংসা এবং পুলিশি অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ঠিক-বেঠিক, শ্লীল-অশ্লীল প্রশ্নে আবার সব ঘেঁটে ঘ হ’য়ে গেল। খবরের কাগজে নানান কার্টুনিষ্টদের কার্টুন বেরতো আর তা’ দেখবার জন্য মুখিয়ে থাকতাম, কখন সকাল হবে। সেসব বড় মজার। কিন্তু কখনও আজকের মত দেখিনি। বাক স্বাধীনতার কি কোনও বর্ডার লাইন আছে কিম্বা থাকা উচিত? বাক স্বাধীনতার জন্য যদি কেউ আহত হয় বা অপমান বোধ করে তাহ’লে কি সেই বাক স্বাধীনতা গ্রহণযোগ্য? না-কি বাক স্বাধীনতা ওসব মান-অপমান, হত-আহত, ঠিক-বেঠিক, শ্লীল-অশ্লীল ধার ধারে না, মানে না? বাক স্বাধীনতার উদরপুর্তি হ’লেই হ’ল? স্বাধীনতা মানে কি উচ্ছৃঙ্খলতা? না-কি স্বাধীনতা মানে অবাধ ভাল করা বা করতে পারা? পরিচালক ঋতুপর্ন ঘোষ-কে দেখেছিলাম তাঁকে নিয়ে মীরের মিমিক্রি বা ভাঁড়ামিতে আহত হ’তে। কেউ যদি আহত হয় বা অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তাহ’লেও তা’ বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বা আওতায় এনে কারোর আহত হওয়া বা অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করাকে খারিজ করা হবে? অন্যের গায়ে আঁচ লাগে লাগুক, আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা, ব্যাপারটা এ-রকম? আর আঁচ লাগলেই তা’ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ? প্রতিহিংসা বা অত্যাচার? বাক স্বাধীনতার নমুনা আগেও দেখেছি এখনও দেখছি। ব্যাঙ্গ ছবি বা উক্তি কিম্বা যৌনতা বা ধর্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্নে প্রতীকের ব্যবহার দেখেছি। দেখেছি সাহিত্যে ও শিল্পে ভাবধারা প্রকাশের জন্য কিম্বা মনের কোন বিশেষ ভাব প্রকাশ করার জন্য লেখক, শিল্পী, পরিচালকদের প্রতিকের ব্যবহার। বুদ্ধিদীপ্ত, রুচিশীল ও মার্জিত পরিবেশন। আর এখন চরম বাক স্বাধীনতার নমুনা আকছার দেখছি। দেখছি শিল্পীর আঁকা ছবিতে, পরিচালকের তৈরী সিনেমায়, কবির কবিতায়,গানে ইত্যাদিতে। সম্প্রতি বাংলা ছবি ‘প্রলয়’-এ বাক স্বাধীনতার নামে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নন স্টপ খোলাখুলি কাঁচা কাঁচা গালাগালি এখন প্রকৃত বাক স্বাধীনতার সংস্কৃতি? বহু মানুষের ভক্তির জায়গা, বিশ্বাসের জায়গা, শ্রদ্ধার জায়গা, ভালবাসার জায়গা-কে শিল্পীর ইরোটিক শিল্প ভাবনার একক বাক স্বাধীনতার অধিকারে বা অজুহাতে উলঙ্গ করা, লাঞ্ছিত করা, অপমান-অসম্মান করা, পদদলিত করার নাম বাক স্বাধীনতা!!! তাহ’লে সি, বি, আই অধিকর্তার সাম্প্রতিক মুখ ফস্কে বেরিয়ে আসা মন্তব্য ‘প্রতিরোধ করতে না পারলে ধর্ষণ উপভোগ করুন’ বাক স্বাধীনতার মধ্যেই পড়ে!! এ-ব্যাপারে কি বলেন বাক স্বাধীনতা ও মানবতার পুজারী অম্বিকা মহাপাত্ররা? তাহ’লে চারিদিকে এত ‘গেল, গেল’ রব কেন? তবুও সি, বি, আই অধিকর্তা তাঁর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। যদিও তাঁর এ-ধরণের মন্তব্যের পিছনে আসল কারণটা বা চাপা পড়া রাগটা স্পষ্ট ছিল।

তাহ’লে কি বাক স্বাধীনতার প্রকৃত রুপ এখন এটাই আর এটাই এখন সভ্যতা? এটাই সংস্কৃতি? এই সভ্যতায় আঁচ পড়লেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, প্রতিহিংসা বা অত্যাচার বলে বিবেচিত হবে? স্বাধীনতা ‘গেল, গেল’ বলে আওয়াজ উঠবে? সত্যমিথ্যা, আসল-নকল, আলো-অন্ধকার, দোষী-নির্দোষ, সাধু-শয়তান সব একাকার, ডালে-চালে মিশে খিচুড়ি হ’য়ে যাবে? সব কিছুর পিছনে একটা অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্য থাকে। সেই অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্যই কি বাক স্বাধীনতা রক্ষা বা লঙ্ঘন-এর বিচারের মাপকাঠি হওয়া উচিত? কুট্টিরা কি এখন ব্রাত্য? শিক্ষার অঙ্গন কি এখন বাক স্বাধীনতার দাবীতে হরিহরের গোয়ালঘর? যেখান থেকে শ্রদ্ধা মা অন্নপূর্ণার মত গৃহহীন হ’য়ে রাস্তায় এসে দাড়িয়েছে! রাজ্যবাসী-কে এই অশ্রদ্ধা চাষের হাত থেকে কে বাঁচাবে?
( ১৪ই নভেম্বর'২০১৩)

কবিতাঃ দুঃখভাব।

সবসময় এত দুঃখের কথা বলো কেন?
কেন আঁকো এত দুঃখের ছবি?
কেন বলো এত দুঃখের কথা?
দুঃখ-ই কি তোমার হবি?
দুঃখ দিয়ে হবেটা কি?
দুঃখকে ক'রে সাথী আকাশ গঙ্গা দিচ্ছো পাড়ি
সুখের সাগরে কাটছো সাঁতার তবুও সুখের সাথে আড়ি!?
এতটাই আনাড়ি!?
দুঃখ দুঃখ ভাব আসলে ভিন্ন ভাবের অভাব
না পাওয়ার অভাব তোমায় মারছে ছোবল সকাল থেকে রাত।
অভাব তোমার ঘিড়ছে জীবন ঘিড়ছে পলে পলে
সঙ্গ দোষে দুঃখের আঁধার, আলো সঙ্গ গুণে জ্বলে।
দুঃখ নিয়েই ঘর বেঁধেছো আর সঙ্গী-সঙ্গিনী তোমার অভাব
ভাবের সাথে ভাব না রাখায় কি তোমার স্বভাব?
আমি বলি, যার যেমন ভাব তার তেমন লাভ
আর মনে রেখো যেমন সঙ্গ তেমন ভাব।
প্রাচুর্যের মাঝে থেকেও তারাই নিয়ত দুঃখের কথা বলে
জেনো জীবন মাঝে ভাবের অভাব ভাবীর সাথে হ'লে।
ভাবীর সাথে রাখতে ভাব বন্ধু বাড়াও তোমার হাত
'জীবন' খুঁজে পাবে সেথায় বন্ধু পাবে সোনার ধাত!
(লেখা ১৪ই নভেম্বর'২০১৯)

Saturday, November 11, 2023

কবিতাঃ দীপাবলির অঙ্গীকার।

হে আর্য! হে আমার আর্যা!
ভোরের সূর্য হয়ে আমি অস্ত যাবো, অস্ত যাবো
মধ্যাহ্নের সূর্যের প্রখরতা নিয়ে। গোধূলির নরম
আলো চোখে মেখে আমি অস্ত যাবো
আর অস্তমিত পথে আমি দিয়ে যাবো
তোমাদের আগামীর সোনাঝরা আলোর সংকেত।
অস্তাচলের সূর্যের মত উপস্থিতি আমার
সত্তা জুড়ে; আমি আছি, আমি থাকবো
আতিবাহিক সত্তা রূপে তোমাদের মাঝে;
তোমাদের কাছে এ আমার দীপাবলির অঙ্গীকার।
কন্ঠস্বরে কান পেতে শুনতে পাবে মানব
সমুদ্রের কল্লোল ধ্বনি, দেখতে পাবে আমার
অস্তমান স্মিত মুখে অধরোষ্ঠ কাঁপন আর
শুনতে পাবে অধরৌষ্ঠ্য চাপা ঝড়ের গর্জনঃ
আমি ছিলাম, আমি আছি, তোমাদের
মাঝে আমি থাকবো।
ভোরের সূর্য হয়ে অস্ত যাবো, অস্ত যাবো
প্রাণে প্রাণে নরম আলোর সোহাগ ছড়িয়ে।
দ্বিপ্রাহরিক মধ্যগগনের তীব্রতায় মিটিয়ে
দেবো শীতলতা ও শিথিলতা যত তোমাদের।
অস্তমিত সূর্যের মত লালিমা ছড়িয়ে রাঙ্গিয়ে
দিয়ে যাবো পাংশুমুখ যত। আর শীতের
সকালের স্নেহমাখা মায়াময় আলোময়
সোনাঝরা রোদ্দুরের মত উদাত্ত কন্ঠে বলে যাবো,
হে প্রভু!
চরণতলে ঠাই দাও দাও দাওগো এবার যাবার আগে।
তোমার চরণতলে ঠাই দাও দাও দাওগো এবার.........
(লেখা ১২ই নভেম্বর'২০১৮)

প্রবন্ধঃ তৃষ্ণা!

আমার বড় তৃষ্ণা। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হ'য়ে যাচ্ছে। চারপাশে আমার জল আর জল। তবুও তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে কেন!? কেন আমি তৃষ্ণার্ত?

ঠিক এইরকম যখন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তখন একটা পোষ্ট চোখে পড়লো। মুখের কারণে নাকি কিছু মানুষের জীবনে উত্থান আটকে যায়।

তাই কি? চারদিকে কি তাই দেখছি? সকাল থেকে রাত অব্দি কি তাই দেখছি? সূর্য ওঠা থেকে শুরু ক'রে অস্ত গিয়ে আবার পরদিন ওঠা পর্যন্ত আসমুদ্রহিমাচলব্যাপী শুধু তো গালবাজ আর গলাবাজদের উত্থান!!!! তাই নয় কি?

আচ্ছা বাড়ির পাশে পেঁচো অন্ধকার গলি থেকে শুরু ক'রে উন্মুক্ত আলোর রাজপথে, বস্তির জঞ্জাল থেকে আকাশ ঢাকা ইটের জঙ্গলের দমবন্ধ করা ভিড়ে, টিভির চ্যানেল থেকে চ্যানেল শুরু ক'রে রেডিও স্টেশনে, স্থলে-জলে-অন্তরিক্ষে সব জায়গায় আমরা কি দেখি? কি শুনি? সবজায়গায় তো মুখে মারিতং জগতের কারবার চলছে! তাই না? ঘরেবাইরে, পাড়ায়পাড়ায়, স্কুলেকলেজে, অফিস-কাছারিতে, কলেকারখানায়, হাটেবাজারে, পথেঘাটে, মাঠেময়দানে, সাহিত্য, নাটক, চলচিত্র, শিল্প, ধর্ম্ম, রাজনীতি ইত্যাদি সমস্ত অঙ্গনে সকাল থেকে রাত শুধু গালবাজি আর গলাবাজি আর মুখের কারণে উপরে ওঠার লাজ লজ্জাহীন তীব্র প্রতিযোগীতা আর প্রতিযোগীতা চলছে! তাই নয় কি? ভুল বললাম? বাজে বকলাম?

হ্যাঁ! এটা সত্যি কথা যে, মুখ আর মুখের ভাষায় আকাশপাতাল তফাৎ থাকে। কারও মুখ এত সুন্দর কিন্তু মুখ খুললেই সাপ ব্যাঙ ছুঁচো বেরিয়ে পড়ে! আবার দেখতে সুন্দর না হ'লে কি হবে মুখের কথা এত মিষ্টি যে শয়নে স্বপনে জাগরণে তা মনে লেগে থাকে! কানে বাজতে থাকে!! কিন্তু সময় কি বলে? সাপ, ব্যাঙ, ছুঁচো উগলাতে উগলাতে ছুটে চলেছে শুধু সুন্দর মুখের দল উন্নতির শিখরে, উত্থানের পথে! ভবিষ্যৎ কি হবে, শেষের সেদিন ভয়ংকর হবে না সুন্দর হবে তা দেখার প্রয়োজন নেই, ধারও ধারে না। তাৎক্ষণিক ফল লাভ হ'লেই হ'লো আর হয়ও তাই। আর অসুন্দর মুখের অধিকারী মিষ্টি ভাষার মানুষ পড়ে থাকে নীচে, খুদকুঁড়ো পাওয়ার আশায় বাঁচে! ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময় নেই। ত্রুটি নিয়েই বাঁচে-মরে। মিষ্টি ভাষার মানুষের উত্থান না হওয়ার পিছনে কিছু কমি বা ছোটো বড় ত্রুটি থাকেই।
যাই হ'ক, বলছিলাম তৃষ্ণা নিয়ে আর তাই ফিরে আসি সেই তৃষ্ণায়। এই লেখাটা যখন লিখছি তখন লিখতে লিখতে মনে পড়লো পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি, সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে ভালোবাসাময় প্রেমময় আলোময়, রূপময়, রসময় মানুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-এর বাণী "Behavior is the beverage of life." যার অর্থ দাঁড়ায়, ব্যবহারই জীবনের পানীয়। এই মিষ্টি প্রাণকাড়া ব্যবহারের কথা তিনি যতবার এসেছিলেন সেই রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ রূপে ততবারই বারেবারে নানাভাবে, নানা ঢঙ্গে ব'লে গেছেন আমাদের সবার জন্য, পৃথিবী জুড়ে তাঁর সমস্ত সন্তানদের জন্য। সেখানে কোনও হিন্দু ছিল না, মুসলমান ছিল না, ছিল না কোনও খৃষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন কোনও সম্প্রদায়ের কেউ। সবাই, সব সম্প্রদায়ের বিশ্ব জুড়ে ৮০০ কোটি মানুষের জন্য ব'লে গেছিলেন এই মিষ্টি পানীয় রূপী ব্যবহারের কথা। যাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেই এই ভয়ংকর অন্ধকার সময়ে জীবনের সব তৃষ্ণা মিটে যায়! জুড়িয়ে যায় সব জ্বালা, যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট!! দূর হ'য়ে যায়, কেটে যায় সব অভাব, অনটন, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতা!!! বুকের মধ্যে জ্বলে ওঠে অপার আনন্দের আলো! আলোর ফুলঝুড়ি!!
আর, তৃষ্ণা মেটার জন্য আমরা কি করেছি? কি করছি?? কি করবো???
(লেখা ১২ই নভেম্বর'২০২১)

Friday, November 10, 2023

কবিতাঃ খাবি খাবি।

তুমি ছাড়া আমি, বৃথা এ জীবন!
আমি আর আমি শুধুই আমি,
আমি আমি করি আমি খুঁজিবারে মরণ!!
বড়র প্রতি নেইকো শ্রদ্ধা
ছোটোর প্রতি স্নেহ।
মায়া-মমতাহীন মানুষ তুমি
ধারবে না ধার কেহ।।
কোথায় যাবে? 
যেদিকেই যাও করবে হাঁসফাঁস।
দমবন্ধ পরিবেশের কে টানবে রাশ?
টাকা ছাড়া এ জীবনে
কেউ নয় আপন, কেহ নয় পর;
টাকা বাড়ায় কেবলি মানুষের দর।
হিংসা বুকে নিয়ে আবার
জীবন খুঁজে পাবি!?
কর্ম ফলের মাঝ দরিয়ায় 
শুধুই খাবি খাবি।
(লেখা ১০ই নভেম্বর ২০১৭)



Thursday, November 9, 2023

চিঠিঃ মহাদেব সরকারদাকে খোলা চিঠি।

মহাদেবদা,
আপনার মূল্যবান প্রশ্ন অনেকের মনের খোরাক জোটালো। আপনাকে ধন্যবাদ।  আপনার প্রশ্নের উত্তরটা এখানে তুলে দিলাম 
অনেকের সুবিধার জন্য

ঠাকুরের 'অজ্ঞাত কুলশীল........." বলা এই কথাটা সদাচার সংক্রান্ত বাণী। ঠাকুরের ব'লে যাওয়া যে পাঁচটা পিলারের উপর জীবনকে দাঁড় করাতে বলেছেন তার একটা হ'লো সদাচার। তাই সদাচার পালনের ক্ষেত্রে ঠাকুর ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। ঠাকুর সদাচার সম্পর্কে বললেন,

"সদাচারে বাঁচে-বাড়ে/ লক্ষী বাঁধা তা'র ঘরে, সদাচারে রত নয় / পদে-পদে তা'র ভয়।
আবার বললেন, সদাচার বলে কা'রে তা' কিরে তুই বুঝিস? যে-আচারে বাঁচে-বাড়ে সদাচার তা' জানিস।"
আর ঠাকুর, যে সদাচারী নয় অসদাচারী তার সম্পর্কে কি বলছেন? তিনি বললেন,
"সদাচারী নয়কো যে-জন ইষ্ট-বিহীন রয় / পান ও ভোজন তাহার হাতে বিষ-বহনী হয়।" আবার বললেন, "বিপ্রও যদি কদাচারী/ শীল ও শ্রদ্ধা-হারা, তা'রও দত্ত ভোজ্য অন্ন বয় বিষেরই ধারা।"
আর সদাচারী সম্পর্কে কি বলছেন ঠাকুর? "ইষ্টনিষ্ঠ সদাচারী / নীচ জাতিও হ'লে, অন্নপানীয়ে কমই দোষ জাত যায় না ছুঁলে।"
তাহ'লে দেখুন ঠাকুর বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য সদাচারকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা যাতে অনাচার না করি এবং যে কাজই করি না কেন সদাচারের দিকে লক্ষ্য রেখে যাতে করি ও চলি সে সম্পর্কে ঠাকুর নানাভাবে হাজার হাজার কথার মধ্যে দিয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।

তিনি ছড়ার আকারে বললেন, " সদাচারে লক্ষ্য রেখে যে-কাজ করিস চলিস দেখে, অনাচারে বাড়বে ভয় আনবে কতই বিপর্যয়।"
তাই এই ঘোর ভয়ংকর বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঠাকুর আমাদের "অজ্ঞাত কুলশীল মানুষের হাতে খেতে বারণ করেছেন"। 'অজ্ঞাত কুলশীল' মানে যে মানুষকে আমি চিনি না, জানি না, কোনোদিন তাকে দেখিনি, কোথায় থাকে, কি তার বংশপরিচয়, তার স্বভাব কেমন, ব্যবহার কেমন, চরিত্রই বা কেমন, তার রুচি, তার জীবনযাপন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল ন'ই তেমনতর মানুষের হাতে না খাওয়ার কথাই ঠাকুর বলেছেন মানে আমাদের রোগ, শোক ইত্যাদির আক্রমণ থেকে আগাম সাবধান ক'রে দিয়েছেন। আর এই সাবধানতা সম্পুর্ণ আমার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে।
জয়গুরু।
( লেখা ৯ই নভেম্বর'২০১৭)

বিচারপতির আপত্তি।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিচারপতির আপত্তি অথচ রায়ের কপি পুরো না পড়া।

অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিবৃতিতে আপত্তি শোনা গেল টিভিতে। সঙ্গে এও তিনি বললেন, রায়ের কপি পুরোপুরি পুঙ্খানুপুঙ্খ পড়া হয়নি। বাহঃ! প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি! আপনিও সম্পূর্ণ না পড়েই মন্তব্য করেন আম জনতার মত!?

আমার বক্তব্য:
অশোক গঙ্গোপাধ্যায় কি তাঁর ওকালতির জীবনে ও বিচারপতি থাকাকালীন এরকম কেস হিস্ট্রি না পড়েই, দু'পক্ষের কথা সম্পূর্ণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ না শুনেই ওকালতি করেছেন ও বিচারে রায় দিয়েছেন? এই বয়সে একজন দুঁদে উকিল ও অভিজ্ঞ বিচারপতি যখন এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলতে পারেন, বিবেচনা না করেই আলটপকা মন্তব্য করতে পারে যে মন্তব্যের জেরে সমাজ সভ্যতা ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে তখন আম জনতা যে মন্তব্য পেশের ব্যাপারে নেহাতই শিশু এই বিষয়ে, তা সহজেই অনুমেয়।

ভাবলেও অবাক লাগে দেশের সর্বোচ্চ বিচার ব্যবস্থায় এইধরণের আলটপকা মন্তব্য করা মানুষ নিয়োগ হ'তে পারে। দেশের স্পর্শকাতর বিষয়ে এইধরণের মন্তব্য করতে পারে কোনও দায়িত্বশীল মানুষ তা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। এদের জন্য কোনও মন্তব্যই যথেষ্ট নয় বরং অর্থহীন ও উপযুক্ত নয়।

প্রশ্ন জাগে মনে তিনি তাঁর ওকালতি-র জীবনে ন্যায়ের পক্ষে ছিলেন কি অন্যায়ের পক্ষে ছিলেন? সত্যের পথে ছিলেন কি অসত্যের পথে ছিলেন? ন্যায্য অধিকারের পক্ষে ছিলেন কি অন্যায্যের পক্ষ অবলম্বন করতেন, ভাঙার পক্ষে তাঁর রায় দিতেন কি গড়ার স্বপক্ষে তাঁর জ্ঞান, বুদ্ধি, বিচার, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি প্রয়োগ করতেন? যেনতেনপ্রকারেন মক্কেলের ক্ষতির জন্য কিংবা লাভের জন্য তাঁর জীবন ব্যয় করতেন ও করেছেন? অনেক প্রশ্ন আসে মনে!
ক্রমশ!
(৯ই নভেম্বর'২০১৯)

চিঠিঃ বাগ্মীপ্রবর শ্রদ্ধেয় প্রলয় মজুমদারদাকে খোলা চিঠি। (৪)

হে বাগ্মীপ্রবর,
আবার আপনাকে চিঠি লিখছি। এবার ৪ নম্বর। এর আগে আপনাকে (১-৩) চিঠি লিখেছি। আপনার পুরো ভিডিও অনেক বড়। তাই একটা চিঠিতে আপনাকে উত্তর লেখা সম্ভব নয়। তাই ভাগ ভাগ ক'রে পোষ্ট করছি।
আপনি প্রকাশ্যে ভিডিওর মাধ্যমে প্রধান-অপ্রধান, আচার্য প্রথা, আচার্য পরম্পরা, আচার্য-বিচার্য নিয়ে আকর্ষণীয় শব্দের জাল বিছিয়ে এত চুলচেরা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেছেন যে আপনার বাকচাতুর্যে মুগ্ধ হ'তে হয়।
কি বললেন আপনি?
আপনি বললেন, "শ্রীশ্রীঠাকুরের বাস্তব শরীর, পার্থিব জীবন যখন প্রাকৃতিক নিয়মে অপ্রত্যক্ষে চলে গেল, অপ্রকট হ'য়ে গেল তখন আপনি অবাক বিস্ময়ে ঠাকুরের দানসাগর পারলৌকিক মঞ্চে শুনলেন সৎসঙ্গের সেক্রেটারী জ্ঞানেন্দু বিকাশ গোস্বামীদা ঘোষণা করলেন, 'এখন থেকে প্রধান আচার্যদেব হলেন পূজ্যপাদ বড়দা।' এই কথা শুনে আপনি প্রথমে 'প্রধান' শব্দে মনে মনে ভাবলেন, ঠাকুর কি তাহ'লে অপ্রধান হ'য়ে গেলেন? তিনি তো আমাদের জীবনের এক ও অদ্বিতীয় অনুপম প্রধান অস্তিত্বের ব্যক্তিত্ব। তাহ'লে ঠাকুর কি এখন অপ্রধান হ'য়ে গেলেন?

তারপরে 'আচার্য' শব্দে ঈশ্বরকোটি পুরুষের মতো অবাক হ'য়ে আকাশ থেকে পড়লেন আর মনে মনে ভাবলেন, পূজ্যপাদ বড়দা আচার্য হ'লেন? তারপরে মহান সাধকের মতো বললেন, 'তাহ'লে ঠাকুরের তো আরও নাতি ছিল, আরও সন্তান ছিল। তাহ'লে পূজ্যপাদ বড়দা যদি একমাত্র প্রধান আচার্য হন তাহ'লে ঠাকুর যেমন একদিকে অপ্রধান ব'লে বিবেচিত হচ্ছেন তেমনি আর একদিকে ঠাকুরের আর যে দুই সন্তান তাহ'লে কি তাঁরা 'বিচার্য ব্যবস্থা'র জিজ্ঞাসার মধ্যে এসে গেল!? তাহ'লে একজন হ'লেন আচার্য আর দু'জন হ'লেন বিচার্য!?"
এখন আমার প্রশ্ন আপনাকে।

১) আপনার কি ঠাকুরের দানসাগর পারলৌকিক মঞ্চে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রধান আচার্যদেব ঘোষণার সময়ই এই উপরিউক্ত কথাগুলি মনে হয়েছিল? নাকি পরে কারও কথায় প্রভাবিত হ'য়ে এই কথাগুলি এত বছর পর জীবনের শেষ সময়ে এসে সুগন্ধী মাখিয়ে প্রচার করলেন?

২) আপনি কি এই সমস্ত অবাক হওয়া প্রশ্নগুলি সেই সময় শ্রীশ্রীবড়দাকে করেছিলেন? করলে, শ্রীশ্রীবড়দা এর উত্তরে কি বলেছিলেন বললেন না কেন?

৩) আজ এত পান্ডিত্যপূর্ণ মিষ্টি কথার বাহার ছড়িয়ে কথার তোড়ে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রথমদিকে প্রশংসার মোড়কে মুড়ে পরে শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে সৎসঙ্গীদের মধ্যে কথার জাগলিং ক'রে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সৎসঙ্গ জগতকে ভাসিয়ে দেবার জন্য ময়দানে কোমর ক'ষে নেমে পড়েছেন? তখন কেন এইসমস্ত বিষয় সম্পর্কে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রশ্ন করলেন না? আর যদি প্রশ্ন ক'রে থাকেন তাহ'লে সে কথা কেন বললেন না এখানে? কেন বললেন না শ্রীশ্রীবড়দা আপনার জ্ঞানগর্ভ তাত্ত্বিক প্রশ্নের উত্তরে কি বলেছিলেন? আপনার বক্তব্যের শ্রোতারা তা জানতে পারতো। গোটা সৎসঙ্গ সমাজ জানতে পারতো।

৪) যখন এই ঘোষণা করা হয় তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের অন্য দুই সন্তান কোথায় ছিলেন? সেখানে উপস্থিত ছিলেন? উপস্থিত থাকলে তখন তাঁদের কি প্রতিক্রিয়া ছিল? আপনার মতো একই প্রতিক্রিয়া ছিল?

৫) যদি উপস্থিত না থাকেন পরবর্তীতেই বা তাঁদের কি প্রতিক্রিয়া ছিল?

৬) তখন তাঁরা তো শ্রীশ্রীবড়দার সঙ্গে একসঙ্গেই ছিলেন; তাই নয় কি? কেন ছিলেন? জ্ঞান গোস্বামীদার ঘোষণায় আপনি মহা পন্ডিতের মতো প্রধান-অপ্রধান, আচার্য-বিচার্য ইত্যাদি নানা প্রশ্নের গন্ধ খুঁজে পেলেন আর তাঁরা পাননি? তাহ'লে কেন তাঁরা সবাই একসঙ্গে ছিলেন? পরে শ্রীশ্রীবিবেকদাদা বেরিয়ে যান। কেন বেরিয়ে যান? কিন্তু শ্রীশ্রীকাজলদাদা তখনও সঙ্গে ছিলেন। কেন ছিলেন? পরে তিনিও বেরিয়ে যান। কেন বেরিয়ে যান? পরে বিবেকদাদা ও কাজলদাদা এক হন। কেন এক হন? আবার কিছুদিন পর বিচ্ছিন্ন হ'য়ে যান। কেন বিচ্ছিন্ন হন? এসবের যুক্তিপূর্ণ উত্তর দেবেন না? শ্রীশ্রীবড়দাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার জন্য আপনি আপনার সাধনা লব্ধ এত যুক্তি খুঁজে পান আর এইবেলায় আপনার উত্তর কি? আপনার সাধনা কি ভোঁতা হ'য়ে গেছে?

৭) তাঁরা কি আপনার মতো প্রকাশ্যে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন কখনো?

৮) সেই সময় কি শ্রীশ্রীঠাকুরের আর দুই সন্তান শ্রীশ্রীবিবেকদাদা ও শ্রীশ্রীকাজলদাদার মনে হয়েছিল যে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রধান আচার্য ঘোষণা করা হ'লে শ্রীশ্রীঠাকুর অপ্রধান হ'য়ে পড়ছেন আর তাঁরা দু'জনে বিচার্য ব্যবস্থার মধ্যে এসে পড়ছেন? এই আচার্য-বিচার্য, প্রধান-অপ্রধান তত্ত্ব কি তাঁদের বলা নাকি আপনার উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত?

৯) আপনাকে কি বর্তমানে জীবিত ঠাকুরের কনিষ্ঠ সন্তান শ্রীশ্রীকাজলদাদা এইসব কথা ভিডিও ক'রে বলার জন্য বলেছেন? নাকি নিজের উদ্যোগে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাবার উদ্দেশ্যে এই বিভ্রান্তিকর বিচ্ছেদের বিষ বাস্প ছড়াতে এই বার্ধক্যে ময়দানে নেমেছেন ঠাকুরের ব'লে যাওয়া ছেদকের ভুমিকায় অবতীর্ন হ'য়ে?

১০) আপনি শ্রীশ্রীবড়দা প্রধান ও শ্রীশ্রীঠাকুর অপ্রধান এই অকারণ অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন তুলে এত বছর পরেও সাধারণ দীক্ষিতদের মধ্যে এবং অদীক্ষিতদের মধ্যে বিষ ঢেলে যাচ্ছেন। কেন?

১১) কেনই বা কি উদ্দেশ্যে এত বছর পর শেষ বয়সে এসে এখন ভিডিও ক'রে প্রচার করছেন সুকৌশলে ভিডিওর শুরু থেকে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রশংসা করার ছলে ভিডিওর শেষের দিকে এসে ঘৃণ্য সমালোচনার তীরে বিদ্ধ ক'রে?

১২) শ্রীশ্রীঠাকুরের অন্য দুই সন্তান কি আপনার অতিরিক্ত ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার মতন সৎসঙ্গ জগতের বিরাট সাধক হ'য়ে যাওয়া মনোভাবে বলা এই অহেতুক জোর ক'রে চুলকে ঘা করার মতন প্রধান-অপ্রধান ও আচার্য-বিচার্য ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রশ্ন সমর্থন করেন? তাঁরা নিজেরা কিছু কি এই বিষয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন? যদি দিয়ে থাকেন তাহ'লে তাঁরা কি বলেছিলেন সেটা বললেন না কেন? আর যদি দিয়ে না থাকেন তাহ'লে কি আপনার তাঁদের হ'য়ে এই অতি ভক্তি, অতি জ্ঞানের বিবৃতি 'মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি' হ'য়ে গেল না?

১৩) আপনি আপনার বক্তব্যে বড়দাকে পূজ্যপাদ বড়দা ব'লে সম্বোধন করলেন কিন্তু শ্রীশ্রীবড়দা বলতে আপনার শিক্ষা, রুচি, সাধনায় বাদ সাধল। আচ্ছা 'শ্রীশ্রী' কোথায় যোগ করা যায়? বড়দার নামের আগে 'শ্রীশ্রী' যোগ ক'রে শ্রীশ্রীবড়দা বলতে আপনার অ্যালার্জি? অথচ আপনি আপনার সমগ্র বক্তৃতায় শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে কত কত সুন্দর সুন্দর শব্দের সাহায্যে শ্রদ্ধা ভক্তির মালা গেঁথে নিজেকে উচ্চমার্গের সাধক প্রমাণ করার চেষ্টা ক'রে গেলেন নাকি? কি বলেন? ভুল বললাম?

১৪) শ্রীশ্রীবড়দা যখন ঠাকুরের দেহ রাখার পরে সৎসঙ্গের আচার্য হিসেবে অভিষিক্ত হচ্ছেন তখন অহেতুক ঠাকুরের অন্যান্য আরও নাতির প্রশ্ন আসলো কেন? কেন তুললেন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন? কেন ঠাকুরের নাতিদের টেনে আনলেন? তখন নাতিদের কি ভূমিকা ছিল? গুলিয়ে ফেলেছেন বক্তব্য রাখার সময় আর শ্রীশ্রীবড়দার আচার্য হওয়ার সময়ের ব্যবধান?

তাই মনের কোণে চাপা পড়ে থাকা বহুদিনের ক্ষোভ গ্যাঁজলা ভিডিও করার সময় উঠে এসেছে কথার মোলায়মের রসে মেখে এবং নাতি সম্পর্কে তিক্ত মনোভাব পরিবেশন হ'য়ে গেছে! ভাবছেন আপনি বাগ্মীপ্রবরের ট্যাগ পাওয়া বক্তা আপনার অপূর্ব ভাষাদ্বারা সমৃদ্ধ বাছা বাছা শব্দ চয়ন ক'রে একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বলা বক্তৃতায় আপামর সৎসঙ্গী আপ্লূত হ'য়ে আপনাকে ধন্য ধন্য ক'রে উঠবে। আপনি বোধহয় শ্রীশ্রীদাদার কবিতা 'শেষের সেদিন' পড়েননি। যদি না পড়ে থাকেন তবে একবার পড়ুন আর যদি পড়ে থাকেন স্মরণ করুন কবিতার লাইনগুলি একবার, বিশেষ ক'রে "কথার তোড়ে মাতিয়ে সবে আত্মপ্রতিষ্টারই ঝোঁকে, মিষ্টি কথায় ভূলিয়ে ভাবিস অনন্তকাল রাখবি ধরে? বাহার দেখে ভুলবে বিধি, পারবে নাকো ধরতে ফাঁকি?"----ইত্যাদি লাইনগুলি। আর আয়নায় নিজের মুখ দেখুন, দেখুন সেদিনের শ্রীশ্রীবড়দার আপনার উদ্দেশ্যে বলা কথাগুলি "ইয়ং বয়সে ফাটিয়ে দেওয়া বক্তৃতা আর ঘরে লাইটের সুইচ না নিভিয়ে আসা, সময়ের আগে আসা ও শ্রীশ্রীবড়দার কথায় আবার নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরে যাওয়া আবার ঘড়ির সময় দেখতে দেখতে আসা ইত্যাদি নিখুঁত টাইমিং সম্পর্কে আপনাকে বলা শ্রীশ্রীবড়দার কথা" যেগুলির বর্ণনা আপনি এই ভিডিওতে দিয়েছেন।
যাই হ'ক যদি এসব প্রশ্নের উত্তর থাকে আপনার কাছে তাহ'লে একজন প্রবীণ সৎসঙ্গী হিসেবে আপনি একজন প্রবীণ সৎসঙ্গীর প্রশ্নের উত্তরগুলি আশা করি দেবেন। কারণ যেহেতু আপনি প্রকাশ্যে ভিডিওর মাধ্যমে কথাগুলি বলেছেন আমিও তাই ভিডিওর মাধ্যমে না দিয়ে চিঠির মাধ্যমে আপনাকে প্রশ্ন গুলি করলাম। পারলে পরে ভিডিওর মাধ্যমে প্রশ্নগুলি তুলে ধরবো। নমস্কার।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস,
উত্তরপাড়া, হুগলী।
#প্রবিরচিঠি
(লেখা ১৮ই আগষ্ট'২০২৩)

চিঠিঃ বাগ্মীপ্রবর শ্রী প্রলয় মজুমদারকে খোলা চিঠি (৩)

হে বাগ্মীপ্রবর, আপনাকে তিন নম্বর চিঠি লিখছি। আপনার পুরো ভিডিও অনেক বড়। আর এখানে একবারে চিঠি পোষ্ট করলে পড়ার অসুবিধা তাই ভাগ ভাগ ক'রে পোষ্ট করছি।

আপনি এও বললেন আপনার বক্তৃতায় যে একবার আপনি আপনার যৌবনে বড়দার আদেশে দীর্ঘ লম্বা চওড়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আর পরমূহুর্তে বড়দা আপনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন আপনি যে ঘরে থাকেন সেই ঘর দেখতে। বন্ধ ঘরের দরজা খুলতেই ঘরের সব ফ্যান লাইট জ্বলতে দেখে আপনি বলেছিলেন, আপনার বেরোবার সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তাড়াতাড়িতে নেভাতে ভুল হ'য়ে গিয়েছিল। উত্তরে বড়দা হেসে বলেছিলেন, আগে নিজেকে ঠিক কর। নিজেকে ঠিক করলে তখন সব আপসে আপ ঠিক হ;য়ে যায়। আগে নিজেকে ঠিক ক'রে চালা তাহ'লে তোর করা দিয়েই তাঁর প্রচার অটোমেটিক্যালি হ'তে থাকবে।

মনে প্রশ্ন এলো, তাই জিজ্ঞেস করছি, এই যে আপনি ভিডিও ক'রে সুকৌশলে আপনার কথা বলার দক্ষতা দিয়ে আপামর সৎসঙ্গীদের মগজ ধোলাই করার চেষ্টা করেছেন তা আপনি শ্রীশ্রীবড়দার কথা মতো নিজেকেও ঠিকমতো চালিয়েছেন তো যাতে আপনার করা দিয়ে ঠাকুরকে প্রচার করা হয়? এই ভিডিওতে আপনাকে দেখা ও আপনার ভাষণ শোনার মধ্যে দিয়ে হাজার হাজার লোক আপনাকে চিনলো। আপনি এই বক্তৃতা না দিলে আপনাকে আপনার করা দিয়ে ক'জন চিনতো? তাহ'লে শ্রীশ্রীবড়দা জানতেন অনেক আগেই যে আপনি করার স্রোতে ভাসা মানুষ নন, আপনি কথার স্রোতে ভাসা লোক, তাও আবার দূর্গন্ধ যুক্ত কথার স্রোত? নয় কি?

আপনি ঘড়ির টাইমের কথা বলেছেন। ঘড়ি আপনি ৫মিঃ ফাস্ট ক'রে রাখতেন। কারণ বড়দার সঙ্গে চলতে সুবিধা হবে ব'লে। তা সেই কথা শুনে বড়দা ঘড়ি ঠিক ক'রে রাখতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, ঘড়িতে কাঁটা এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু চরিত্র যেখানে দাঁড়িয়ে থাকার সেইখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তারপরে তিনি আপনাকে আপনার জায়গায় ফিরে যেতে ব'লে বলেছিলেন ঠিক ৩৯ মিনিট পরে তাঁর কাছে আসতে। আপনি ফিরে গিয়ে যখন ৩৯ মিনিট পরে কাঁটায় কাঁটায় বড়দার কাছে ফিরে এলেন তখন তিনি বলেছিলেন আপনি কি কাঁটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আসছিলেন? তাঁর উত্তরে আপনি হেসে বলেছিলেন, হ্যাঁ, আমি ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আসছিলাম। তখন তিনি আপনাকে বলেছিলেন, জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তে, প্রত্যেকটি সময় এরকম ইষ্টের দিকে তাকিয়ে চলতে হয়।

তা' আমার জিজ্ঞাস্য আপনাকে, যিনি আপনাকে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে নিখুঁত চলতে শিখিয়েছিলেন সেই মানুষটার সঙ্গে সঙ্গ করলে এককেন্দ্রিক থাকা থেকে সে বঞ্চিত হবে? তাঁর সঙ্গে থাকার কারণে মনের একাগ্রতা নষ্ট হ'য়ে মন হাইজ্যাক হ'য়ে যাবে? তাহ'লে কি ধ'রে নিতে অসুবিধা হয় যে শ্রীশ্রীবড়দা আপনার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত জানতেন ব'লেই আপনাকে সেই প্রথমেই চরিত্র ঠিক করার কথা বলেছিলেন? যা আজ প্রমাণিত।

শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন বড়দা যে পশুপাখির ভাষা বুঝতে পারে সেই কথাও আপনি বলেছেন আপনার বক্তৃতায়। এবং তার প্রমাণ স্বরূপ সৎসঙ্গ চিড়িয়াখানার রাজহাঁসের বড়দাকে দেখলেই প্যাঁক প্যাঁক ক'রে ছুটে আসা এবং তার সঙ্গীহীন অবস্থার কথা বড়দাকে বলা বুঝতে পেরে তার জন্য বউ এনে দেবার কথা আপনি বলেছেন।
যে মানুষ পশুপাখি কি চায় বুঝতে পারে সেই মানুষ তাঁর এক ও একমাত্র আরাধ্য দেবতা একমেবাদ্বিতিয়ম সৃষ্টিকর্তা পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর কি চায় বুঝতে পারেন না? তিনি সৎসঙ্গীদের বহুনৈষ্ঠিক ক'রে তুলছেন? বহুনৈষ্ঠিকতার আবহে এনে ফেলছেন সৎসঙ্গীদের? আর সব সৎসঙ্গীরা বহুনৈষ্ঠিক হ'য়ে গেল? তাহ'লে কি এটা প্রমাণ হ'লো না আপনি প্রকৃতপক্ষে কি চান সেটাও শ্রীশ্রীবড়দা বুঝতে পারতেন? আজ শ্রীশ্রীবড়দার অবর্তমানে আপনি কি চান সেটাও আপনার বক্তৃতায় প্রমাণ হ'লো না?

আচ্ছা আপনি/আপনারা যাদের অর্থাৎ দেওঘরের মূল কেন্দ্রের শ্রীশ্রীআচার্যদেব পরিচালিত শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ''-কে বিকেন্দ্রিক বলেন সেই 'সৎসঙ্গ' এর বিরুদ্ধে অবস্থানরত যে সুকেন্দ্রিক সৎসঙ্গীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই তারা সবাই একেতেই অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুরে নিষ্ঠাবান তো? বহুনৈষ্ঠিক না তো? বুক ঠুকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেবেন তো আপনাদের সবাই একনৈষ্ঠিক? আপনাদের কারও ঘরে কোনও দেবদেবীর ছবি বা ফটো নেই তো? কেউ আপনারা শ্রীশ্রীঠাকুর ছাড়া আর কারও পূজা করেন না তো?
আপনি বললেন, আপনি দেখেছেন বহু লোক বড়দাকে এসে প্রণাম করেছেন, পূজ্যপাদ বড়দা ব'লে, আচার্যদেব ব'লে প্রশস্তি করেছে ও প্রচার করেছে। বড়দার কারও মাথায় হাত দেওয়া, বড়দার কাছে আশীর্বাদ ভিক্ষা চাওয়াকে আপনি গুরুত্ব দিতে চাননি। তা বড়দা কারও মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন নাকি? আর কেউ যদি বড়দার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে সেটাও বড়দার দোষ? এছাড়া বড়দা কারও মাথা স্পর্শ করলে তার কোনও ভাইব্রেশন নেই, নেই কোনও অ্যাকশান!? আপনার এগুলিকে প্রচার ব'লে কখনো মনে হয়নি। আপনার কখনো মনে হয়নি এগুলি বড়দার প্রতি ভালোবাসা। আপনি আরো অনেক কথা বললেন এর সঙ্গে। কিন্তু আপনি একবারও বললেন না শ্রীশ্রীবড়দা এইসমস্ত সম্বোধন সম্পর্কে কি বলেছেন। এ সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন সেটা আপনি জানতেন না নাকি এড়িয়ে গেলেন? তাঁকে আর কি নামে ডাকতো সেটাও ব'লে দিই আপনাকে। কেউ কেউ তাঁকে পিতৃদেব ব'লেও ডাকতেন। তা এই ডাকাডাকি নিয়ে অনেকের অনেক রকম গাত্রদাহও হ'তো। এখন বুঝতে পারছি আপনারও হ'তো। শুনেছি একবার শ্রদ্ধেয় রেবতীদা শ্রীশ্রীবড়দাকে বলেছিলেন, বড়দা, এই যে আপনাকে পিতৃদেব ব'লে ডাকে তা আগামী প্রজন্ম যদি বই পড়ার সময় দেখে, শ্রীশ্রীবড়মার ঘরে পিতৃদেব প্রবেশ করলেন। তখন পাঠক পিতৃদেব বলতে কি বুঝবে? আপনাকে নাকি শ্রীশ্রীঠাকুরকে? এই কথায় কি বোঝা যায়? শ্রদ্ধেয় রেবতীদারও কি গাত্রদাহ হ'তো চুপিসারে অন্তরে অন্তরে? তা শ্রীশ্রীবড়দা এই নানারকম সম্বোধন সম্পর্কে বলেছিলেন, তোরা আমাকে যে যে নামেই ডাক না কেন, বড়দা বলেই ডাক, আচার্য বলেই ডাক আর পিতৃদেব বলেই ডাক তা'তে আমার কিচ্ছু যায় আসে না, আমি জানি, আমি ঠাকুরের কুকুর। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী, "ঈশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় বাঁধা, ডাকলে তুমি কাছে আসো নইল্রে থাকো দূরেই খাড়া।" ঠাকুরের বাণী এভাবে কোনওদিন বাস্তবে মিলে যাবে তা আপনি ভেবেছিলেন? আপনি তো এককেন্দ্রিক। শ্রীশ্রীঠাকুর আপনাদের এক ও একমাত্র মুখ্য ও লক্ষ্য। তা আপনি বুক ঠুকে বাপের বেটার মতো মন মুখ এক ক'রে শ্রীশ্রীবড়দার মতো বলতে পারবেন, আপনি ঠাকুরের কুকুর? আজ পর্যন্ত আর কেউ করতে পেরেছে এমন অকপট স্বীকারোক্তি?
যাই হ'ক, আপনার বাগ্মীতায় প্রচুর মানুষের মনে আপনি জায়গা ক'রে নিয়েছেন কিন্তু ঠাকুরের মনে জায়গা করতে পেরেছেন তো? উপরে গিয়ে কৈফিয়ৎ দিতে পারবেন তো?

পরবর্তী চিঠিতে আপনার বক্তৃতার বাকী অংশ তুলে ধরবো।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস (প্রবি)
উত্তরপাড়া, হুগলি।
ক্রমশ।
#প্রবিরচিঠি
(লেখা ৬ই জুলাই'২০২৩)

চিঠিঃ বাগ্মীপ্রবর শ্রী প্রলয় মজুমদারকে খোলা চিঠি (২)

হে বাগ্মীপ্রবর, ইউ টিউবে আপনি আপনার 'আচার্য পরম্পরা প্রসঙ্গে বাগ্মীপ্রবর শ্রী প্রলয় মজুমদার' ভিডিওতে বক্তৃতায় অনায়াস দক্ষতায় কত উচ্চাসনে শ্রীশ্রীবড়দাকে বসিয়ে পরমুহূর্তে তাঁকে নীচে ফেলে দিলেন, কেন? আপনাকে বড়দা বলেছিল বাংলা অভিধান থেকে বাছা বাছা শব্দ প্রয়োগে তাঁকে উপরে তুলে ধরতে?
আপনি আপনার বক্তৃতায় E Forum-এ শ্রোতা গুরুভাইবোনেদের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার সঙ্গে শরীর ও মনের সম্মিলিত অবস্থা ব্যাখ্যা করার সাথে সাথে মন হাইজ্যাক হ'য়ে যাবার কথাও বললেন। বললেন এককেন্দ্রিকতার মধ্যে বহুনৈষ্ঠিকে আচ্ছন্ন থাকার কথা। এককেন্দ্রিক না থাকার ফলে বহুতে নিষ্ঠা থাকার ফলে মন আমাদের হাইজ্যাক হ'য়ে যায়, সঠিকভাবে সম্যকভাবে কোনও কিছু দেখতে না পাওয়ার, এককেন্দ্রিক যোগ না হওয়ার কথা ও তাঁর সঙ্গে নিজেকে সম্মিলিত না করতে পারার কথা বললেন। ফলে ভিতর থেকে বিভাজন, বিকেন্দ্রিকতা ও বিচ্ছিন্নতার মনোভাব দেখা দেয়। ফলে অচ্ছেদ্য বর্ণ মহান পুরুষকে পূজা, তপস্যা, প্রার্থনা, সাধনা, আরাধনা করা সত্ত্বেও কিন্ত সত্যকে দেখতে না পাওয়ার কথা বললেন। আর এই দেখতে না পাওয়ার জন্য আমার সত্তা থেকে বিচ্ছুরিত শক্তি অন্যের সত্তাকে স্পর্শ করতে পারে না, তাও বললেন। এখানেও সেই স্পর্শ করতে না পারার কারণ হিসেবে মন হাইজ্যাক হ'য়ে যাওয়ার কথা বললেন। দোষ দেখা, নিন্দা সমালোচনা করা ইত্যাদি ইত্যাদির কারণেও নানা কথার মাঝেও সেই মূল থেকে মন হাইজ্যাক হ'য়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
এই যে এতবার বারবার মন হাইজ্যাক হওয়ার কথা ব'লে শ্রোতাদের সাবধান করছেন তা আপনাকে জিজ্ঞাস্য কে মন হাইজ্যাক করছে বা ক'রে নেবে? প্রকারান্তরে আপনি এই কথা ব'লে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথার জাগলিং-এ আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরার দিকে আঙ্গুল তুলছেন না কি? তা সরাসরি বলুন না আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা শ্রীশ্রীঠাকুর থেকে তাঁর দিকে মন হাইজ্যাক ক'রে নিচ্ছেন। এত ভনিতার কি প্রয়োজন আছে? এত ঘোমটার তলায় খেমটা নাচের কি প্রয়োজন? আপনি তো মিষ্টভাষী এতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে স্পষ্টভাষী হ'তে অসুবিধা কোথায়? ঠাকুর কিই বলেননি সত্যানুসরণে "স্পষ্টভাষী হও কিন্তু মিষ্টভাষি হও"? তাহ'লে ঠাকুরের বাণীর ওপরে দাঁড়াতে ভয় বা শঙ্কা কিসের? কিসের লুকোচুরি খেলা?
মাঝে মাঝে শ্রীশ্রীবড়দাকে এ সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর কি বলেছেন তাও বললেন। আপনি বললেন শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, বড়খোকার সময় জ্ঞান সুন্দর! সূর্যোদয়ের আগে উঠে পড়ে তারপর তাঁর জপতপ পূজাপাঠ সব সেরে ফেলে। আপনি আরও বললেন, শ্রীশ্রীঠাকুর যে ব্যক্তি বিনির্মাণের প্রশিক্ষণের অর্থাৎ ব্যাক্তিকে বিশেষভাবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণের কথা বলেছেন তা আপনি বড়দার চরিত্রে দেখেছেন।
তা' আপনার কি মনে যে মানুষের চরিত্রে আপনি শ্রীশ্রীঠাকুরের বিনির্মাণের গুণাবলী প্রত্যক্ষ করেছেন সেই মানুষের সংস্পর্শে এলে সৎসঙ্গীদের মধ্যে বিভাজন, বিকেন্দ্রিকতা ও বিচ্ছিন্নতার মনোভাব দেখা
দেবে? ঠাকুরের পরম আদরের ভালোবাসার প্রথম সন্তান আদরের স্নেহের বড় খোকা সৎসঙ্গীদের বড়ভাই চোখের মণি শ্রীশ্রীবড়দা আচার্য রূপে ঠাকুর থেকে নিজের দিকে মন হাইজ্যাক ক'রে নেবে? কথার স্রোতে ভেসে শব্দের কারসাজিতে শ্রীশ্রীবড়দাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন?
পরবর্তী চিঠিতে আপনার শ্রীশ্রীবড়দার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ শব্দ দিয়ে গাঁথা মালা তুলে ধরবো।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস (প্রবি)
উত্তরপাড়া, হুগলী।
ক্রমশ।
#প্রবিরচিঠি
(লেখা ৬ই জুলাই'২০২৩)

চিঠিঃ বাগ্মীপ্রবর শ্রী প্রলয় মজুমদার কে খোলা চিঠি (১)

ইউ টিউবে প্রচারিত 'আচার্য পরম্পরা প্রসঙ্গে বাগ্মীপ্রবর শ্রী প্রলয় মজুমদার' ভিডিওটি দেখলাম ও শুনলাম।
একটানা একটুও না থেমে দম না নিয়ে উৎসাহে ভরপুর হয়ে আপনি বক্তব্য রেখে গেলেন! কি প্রাণশক্তি! ইষ্টে উৎসর্গীকৃত নিবেদিত প্রাণের অপরূপ পরিচয় পেলাম।
হে বাগ্মীপ্রবর,
কি অপুর্ব আপনার বক্তৃতা, আপনার বাচনভঙ্গি, আপনার বাকচাতুর্য! আপনার কৌশলী পদক্ষেপ, শব্দের যাদুকরী প্রভাব আপনাকে ক্রমশঃ নিয়ে গেল আপনার লক্ষ্য পূরণে সফল হ'তে। নিয়ে গেল ভিডিওর মাধ্যমে আপনার গোপন এজেন্ডা সুকৌশলে অপ্রত্যক্ষভাবে ধীরে ধীরে সৎসঙ্গীদের মনে গেঁথে দেওয়ার ইপ্সিত লক্ষ্যে! জানি না লক্ষ্য পূরণ হয়েছে কিনা কিংবা লক্ষ্যে পৌছেছেন কিনা।
আপনি সত্যমিথ্যার অপূর্ব রসায়নে ও যুক্তি অযুক্তির মোক্ষম ককটেলে বক্তৃতার মাধ্যমে সাধারণ সৎসঙ্গীদের মগজ ধোলাই-এ কি ভয়ংকর ভূমিকা পালন করলেন। আপনার প্রচার করার ক্ষমতা অনবদ্য ও অসীম! নারীসুলভ মিষ্টি মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে নিয়ে গেলেন এক মিথ্যের অপপ্রচারের কল্পলোকে! বর্তমান সময়ের রাজনীতির ময়দানে জয়ী সরকারী দলের প্রশাসনিক নেতৃত্বের উন্নতি আর দুর্নীতি দুই সহদর ভাইয়ের মত পাশাপাশি হাত ধ'রে মিষ্টি চলার যে কায়দা সেই একই কায়দায় চলা আপনার বক্তৃতার শুরু থেকে শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে আপনার তীব্র অনুভূতি ও উচ্চকন্ঠে প্রশংসা মিশ্রিত তীক্ষ্ণ সমালোচনা আমায় যারপরনায় স্তম্ভিত করলো! এত অপূর্ব মগজ ধোলাই-এর উচ্চ টেকনোলজি সমৃদ্ধ রক্তমাংসের মেশিন আপনি যা আমাকে নত মস্তকে স্বীকার করতে হ'লো। শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে আপনার কথার জাগলিং-এ অভুতপূর্ব প্রবল শ্রদ্ধা ভক্তি মিশ্রিত সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ সমালোচনা আমাকে মুগ্ধ করলো! দড়ির ওপর নিখুঁত ব্যালান্সের খেলায় অসামান্য দক্ষ জিমন্যাস্টিকের মত অনর্গল ননস্টপ কথার স্রোতে ভাসতে ভাসতে নিখুঁত দক্ষতায় লাইন থেকে লাইনে সরে যাওয়া এবং দক্ষ জাগলারের মত বাছা বাছা মোহনীয় শব্দ নিয়ে লোফালুফির খেলায় নিঃসন্দেহে একজন অতি দক্ষ নিপুণ খেলোয়ার আপনি! শব্দ নিয়ে জাগলিং বা ড্রিবল কাকে বলে তা আপনার কাছে শিখতে হবে। প্রশংসা আর স্তুতির বাণ ছুঁড়তে ছুঁড়তে কখন কোন সময়ে নিখুঁত লক্ষ্যে তীক্ষ্ণ সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করতে হবে প্রতিপক্ষকে তা আপনি দেখালেন আপনার আচার্য পরম্পরা সম্পর্কিত বক্তৃতায়। প্রেমিক আফজল খাঁয়ের ছদ্মবেশ থেকে বেরিয়ে এসে কখন যে আচমকা কথার ছুরিতে মাখনে ছুড়ি চালাবার মত কথার ছুড়ি চালিয়ে দিলেন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীর চোখের মণি সবার বড়দা এ যুগের শ্রেষ্ঠ ভক্ত হনুমান শ্রীশ্রীবড়দার উপর তা বুঝতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল! প্রশংসার মোড়কে নিন্দা সমালোচনা কেমন ক'রে করতে হয় তা আপনি শিখিয়ে গেলেন পরবর্তী প্রজন্মকে।
এই মহামূল্যবান অসামান্য বিদ্যা অর্জনের গুরু কি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নাকি শয়তান কিলবিস!?
পরবর্তী চিঠিতে আপনার বক্তব্য তুলে ধরবো। আপনাকে হ্যাটস অফ! সত্যিই আপনি বাগ্মীপ্রবর। আপনাকে প্রণাম!!
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস (প্রবি)।
উত্তরপাড়া, হুগলী।
ক্রমশ।
#প্রবিরচিঠি
(লেখা ৬ই জুলাই'২০২৩)

চিঠিঃ শীর্ষেন্দুবাবুকে আবার খোলা চিঠি।

ইউ টিউবে প্রচারিত আপনার "বিনতি প্রার্থনা ও ইষ্টভৃতিতে যান্ত্রিকতার উদ্ভব" সম্পর্কে বক্তব্য শুনলাম। শোনার পর আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে যা মনে হ'লো তাই আপনাকে খোলা চিঠির আকারে লিখে পাঠালাম এই ফেসবুকের মাধ্যমে।

আপনি বলেছেন, আপনি যখন দেওঘরের মূল কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তখন সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা হ'তো। আপনি সেই সংক্ষিপ্ত প্রার্থনাতে প্রার্থনার পর ফুর্তি পেতেন না। তারপর আপনি বাড়িতে পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা শুরু করেন। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে যে আপনি আপনার এই সংক্ষিপ্ত প্রার্থনাতে ফূর্তি না পাওয়ার কথা আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দাকে জানিয়েছিলেন? তাঁর সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? যদি না ক'রে থাকেন কেন করলেন না? করলে হয়তো জানতে পারতেন শ্রীশ্রীবড়দার এই ব্যাপারে মতামতটা যা আজ আমরাও জানতে পারতাম। আর যদি ক'রে থাকেন তাহ'লে তিনি এই বিষয়ে কি বলেছিলেন সেটাও আপনার বক্তৃতাতে জানাতে পারতেন।
শীর্ষেন্দুবাবু আপনি কি মনে করেন সভাসমিতিতে বা প্রকাশ্যে সমবেতভাবে একটা দীর্ঘ সময় ধ'রে শুধু প্রার্থনায় হ'ক? এটা কি সম্ভব? সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা আপনি সমর্থন করেন না। সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা নিয়েই কি আপনার সৎসঙ্গের সঙ্গে বিরোধ? নাকি অন্য আর কোনও কারণ আছে? আপনি দেওঘরের মূল কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করলেন কেন?

প্রার্থনার সময় নিয়ে বলেছেন আপনি। দেওঘরে প্রার্থনার সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ে আপনার আপত্তি আছে? আর প্রার্থনার সময় পার হ'য়ে গেলে প্রার্থনা করা যাবে না এমন নির্দেশ আছে ব'লে আমার মনে হয় না। এই নিয়মকে আপনি স্বাগত নিয়ম নয় ব'লে জানিয়েছেন। তাঁর মানে আপনি বলতে চেয়েছেন দেওঘর মূল কেন্দ্র গোঁড়ামিকে মুখ্য করে চলেছে। কিন্তু বর্তমান আচার্যদেব বলছেন, অন্তত শুক্রবার দিন তাঁর জন্মবারের দিন সকালে সবাই মিলে প্রার্থনা করা যায় কিনা ভেবে দেখতে অনুরোধ করেছেন।। সকালে কেন বললেন? কারণ বিকেলে বা সন্ধ্যেবেলায় সবাই নানাকাজে বাইরে ব্যস্ত থাকে কিন্তু সকালে সবাই কাজে বেরোবার আগে ঘরে থাকে। তাই তখন সমবেত ভাবে সময় হ'লেও হ'তে পারে। এখানে কি তাঁর কথার মধ্যে গোঁড়ামির প্রকাশ পায় নাকি নমনীয়তা প্রকাশ পায়?

শীর্ষেন্দুবাবু তাহ'লে ঠাকুরের প্রার্থনা সম্পর্কিত বাণীটা কি আপনার সময় বেঁধে দেওয়ার বিরুদ্ধে বলা কথার পরিপূরক হ'লো? কার কথাটা নেবো? আপনার কথাটা নাকি ঠাকুরের বাণীটা? ঠাকুর বললেন,
"যেথায় থাকিস্ হ'স্ না বেহুঁস করতে সন্ধ্যা-প্রার্থনা,
হ'বিই তা'তে কর্ম্মনিপুণ শক্তি পাবে বর্দ্ধনা।"

এই 'সন্ধ্যা প্রার্থনা' বলতে ঠাকুর কি বুঝিয়েছেন? কি অর্থ করেছেন? এর অন্তর্নিহিত ব্যাকরণগত অর্থ কি? 'সন্ধ্যা-প্রার্থনার' অন্তর্নিহিত ধাতুগত অর্থের সঙ্গে দেওঘর মূল কেন্দ্রের সকাল-বিকাল প্রার্থনার নির্দিষ্ট সময়ের একটা বিজ্ঞান সম্মত কি যোগযূত্র নেই? প্রার্থনার সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ে যে কথাটা বললেন আপনি, দেওঘরের নিয়ম নিয়ে যে কথা বললেন আপনি সে কথাটা কতটা যুক্তিযুক্ত ব'লে মনে হয় আপনার? ঠাকুরের এই বাণীটার মধ্যে কি একটা অন্তর্নিহিত বিশেষ সময়ে প্রার্থনা করার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না?

আর, আশ্রমে সমবেত ভাবে প্রার্থনা করার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকা উচিত নয় কি? আশ্রমিক একটা শৃঙ্খলা থাকার দরকার নেই কি? ঠাকুর থাকাকালীন ঠাকুরের সময় সুবিধা মতো প্রার্থনা করা আর ঠাকুরের অবর্তমানে আশ্রমের পরিচালকের সময় সুযোগ মতো যখন ইচ্ছা তখন প্রার্থনা করা কি একই অর্থ বহন করে ও তা সমর্থন যোগ্য? শ্রীশ্রীঠাকুর আর শ্রীশ্রীবড়দার ক্ষেত্রে একই আচরণ প্রযোজ্য? শ্রীশ্রীঠাকুরের সুবিধামতো প্রার্থনা হবে ব'লে শ্রীশ্রীবড়দার সুবিধা মতোও প্রার্থনা হবে? আর, শ্রীশ্রীবড়দাও কি ঠাকুরের মতো নিজেও তাঁর সময় সুবিধা মতো, ইচ্ছেমতো, আরাম মতো প্রার্থনা করতেন বা সেই ঠাকুরের মতো আচরণ করতেন? করতেন না। সেটা কি প্রশংসনীয় নয়?

আর, বাড়িতে বা অন্য কোথাও অন্য কোনও কাজে যুক্ত থাকার কারণে সময়ে প্রার্থনা করতে না পারার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের পরে বাড়িতে আপনার সময় সুযোগ মতো শান্ত মনে প্রার্থনা করাতে কি দেওঘর মূল কেন্দ্র কোনও নিষেধের হুলিয়া জারী করেছে? বাড়ি আর আশ্রম বা ঠাকুর মন্দির কি নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে একই গোত্রের মধ্যে পড়ে ও একই কড়া নিয়ম কানুনের মধ্যে পড়ে? বাড়ি আর আশ্রম বা মন্দিরের ক্ষেত্রে কোনও নিয়মের ব্যতিক্রম থাকবে না? তাই ব'লে কি আশ্রমে বা মন্দিরে কোনও একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকবে না? মুসলমানদের নামাজের নির্দিষ্ট সময় পালনের নিয়মের মধ্যে কি কোনও বিরোধ আছে? আপনি নিশ্চয়ই জানেন খলিলুর রহমানদাকে ঠাকুর নামাজ পালনের জন্য কি বলেছিলেন?

খলিলুর রহমানদাকে ঠাকুর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। উত্তরে খলিলুর রহমানদা বলেছিলেন, সরকারী কাজের এত চাপ যে হিমশিম খেয়ে যেতে হয়। সময়মতো দু'বেলা খাওয়ার সময় পর্যন্ত পান না। চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন। কখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন? আর, কাজের জায়গায় কোনও জায়গাও নেই যে নিভৃতে শান্তিতে নামাজের সময়ে নামাজ পড়বেন। এই কথা অতীব সত্য কথা। এই কথার সঙ্গে আপনার কথার মিল আছে। আমিও সমর্থন করি আপনার ও খলিলুর রহমানদার কথার। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং সময়, বিধি আর তাই তাঁর বিধানও নিখুঁত ও নড়চড়হীন। আপদধর্ম্মের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় হ'লেও বিধান বিধান। তাই তিনি খলিলুরদাকে বললেন, শোনেন খলিলুরদা, আপনি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়েন তাহ'লে আপনি খাঁটি মুসলমান-ই না। তো একবার আপনার অফিসে উর্দ্ধতম কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ক'রে দেখতে পারেন আপনার নামাজের বিষয়টা। কি বলে তাঁরা দেখুন না। খলিলুর রহমানদা এই কথার উত্তরে বলেছিলেন, ব্যাপারটা সেভাবে কোনওদিন ভেবে দেখিনি। আপনি যখন বলছেন তাহ'লে একবার আবেদন করবো। ঠাকুর বললেন, হ্যাঁ, ক'রে দেখেন। তারপর খলিলুরদা অফিসে তাঁর নামাজ পড়ার বিষয়টা আবেদন ক'রে জানালে অফিসের উর্দ্ধতম কর্তৃপক্ষ সানন্দে সঙ্গে সঙ্গে তা অনুমোদন ক'রে দিয়ে খলিলুর রহমনদার নামাজ পাঠের জন্য একটা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা ক'রে দিয়েছিলেন। আর এ ঘটনায় খলিলুর রহমানদা অবাক হ'য়ে গিয়েছিলেন তাঁর গুরুদেব শ্রীশ্রীঠাকুরের অভূতপূর্ব লীলায়! তারপর থেকে তিনি নিয়মমতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন সময়মতো শত কাজের মধ্যেও তাঁর গুরুদেবের আদেশ মতো।

ঠাকুরের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পাঠের নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে খলিলুর রহমানদাকে বলা নির্দেশের ক্ষেত্রে এবং ঠাকুরের কথানুযায়ী খলিলুরদার এই নিয়ম নিষ্ঠা পালন করার ক্ষেত্রে কি বলবেন আপনি জানতে ইচ্ছে করে।

এছাড়া আপনার বক্তৃতায় সম্পূর্ণ প্রার্থনা না করলে ঠাকুরকে বোঝা যাবে না আপনি বললেন। আমার আপনার কাছে জানতে ইচ্ছে করে তাহ'লে কি শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরকে বোঝেননি? শ্রীশ্রীদাদা ঠাকুরকে বোঝেননি? বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা ঠাকুরকে বোঝেননি? কারণ তিনারা সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা করতেন ও করেন। শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীবিবেকদা ও শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীকাজলদা ও তাঁদের পরিবারবর্গ সহ আপনাদের যারা পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনার পক্ষে তাঁরা ব্যতিত ঠাকুরবাড়ির শ্রীশ্রীবড়দার পরিবারে এবং বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া দেশবিদেশের কোটি কোটি ভক্তের কোনও কেউ বোঝেননি ঠাকুরকে!?

আপনি আরও বললেন, সংক্ষিপ্ত প্রার্থনায় সপ্তার্চি ও পঞ্চবর্হি উপেক্ষিত হয়। আপনি আরও বললেন, এই সপ্তার্চি ও পঞ্চবর্হির মধ্যে বীজাকারে আর্য হিন্দু ধর্ম্ম দর্শনের সবটুকু ধরা আছে এবং তা যারা এই পুর্ণাঙ্গ প্রার্থনা করেন তারা তা জানতে পারেন ও অনুভব করতে পারেন। আমার জিজ্ঞাস্য আপনার কাছে এই বীজাকারে ধ'রে রাখা বিষয়টা কি তারা জানতে, বুঝতে পেরেছেন? পেরেছেন অনুভব ও উপলব্ধি করতে? এই যে অবিকৃত প্রচারের নামে যারা দেওঘরের বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে কোমর কষে নেবে পড়েছেন দল বেঁধে ছোটো ছোটো নানা সংঘ তৈরী ক'রে তাদের বক্তব্যের মধ্যে এই অনুভূতি ও উপলব্ধি কি আপনি দেখতে পান তাদের প্রচারের ধরণ ও ভাষার মধ্যে? নাকি আপনি কোনও খবরই রাখেন না দেওঘর মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ' এবং শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচারের? আপনার বলিষ্ঠ কলম কি একবার এই আচরণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল? আপনি এই কলমের শক্তি তো শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছেই ফিরে পেয়েছিলেন। ঠাকুর না থাকলে আপনি এই শক্তি যা আজ আপনাকে সাহিত্য জগতে অন্যতম রত্ন হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা এনে দিয়েছে তা কি পেতেন নাকি কোন ধ্বংসের মোহনায় হারিয়ে যেতেন তা কি আপনি উপলব্ধি করেন?

আপনি এও বললেন, আবার এ ছাড়া পুরুষোত্তম বন্দনা থেকে শুরু ক'রে আরও বাকী যা যা আছে সেই সবগুলির মধ্যে ঠাকুরের গন্ধ 'ম, ম' করছে। তা যারা পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা করেন কই তাঁদের সঙ্গে আজ এই ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সেই ১৯৬৯ সালে ঠাকুরের দেহ রাখার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৫৪ বছর দেওঘর মূল কেন্দ্র বিরোধী যাদের যাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি, কথা বলেছি তাদের কারও গায়ে তো ঠাকুরের 'ম, ম' করা গন্ধের 'গ' টুকুও পেলাম না!? কারও আচরণে ও কথাবার্তায় তো ঠাকুরের গন্ধ পাই না!? শুধু ৫৪বছর ধ'রে তাদের কাছে পেলাম শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে------ এমনকি মায়েদেরও ছাড়েননি তারা ------- শুধু তীব্র কদর্য ভাষায় নিন্দা আর সমালোচনা-সমালোচনা-সমালোচনার দূর্গন্ধ যা ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের সর্বত্র এবং শ্রীশ্রীবড়দা নাকি বিকৃতভাবে ঠাকুরকে প্রচার করছে তার তকমাও তারা ঝুলিয়ে দিয়েছে ও দিচ্ছে নানাভাবে সমাজের সব জায়গায়।

তাই বলি শীর্ষেন্দুবাবু আপনার দয়াল ঠাকুর কি এমন সৎসঙ্গী চেয়েছিলেন এবং পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা ক'রে তাঁদের অন্তরাত্মা কি উদ্ঘাটিত হয়েছে?

আর ইষ্টভৃতি প্রসঙ্গে বললেন, ইষ্টভৃতি কে কোথায় পাঠালো, কে কোন সংঘ করলো তা বড় কথা নয়। বড় কথা হ'লো যে পুরুষোত্তমের দেওয়া সম্পূর্ণ জিনিসটা অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা উপেক্ষা না করা। তা ইষ্টভৃতি যেখানে সেখানে পাঠাবে? যে যেখানে পারবে সংগঠন তৈরী করবে আর ইষ্টভৃতি সংগ্রহ করবে? এই উচ্ছৃঙ্খলা বিশৃঙ্খলা বড় কথা নয়!? সেদিকে নজর দেওয়ার দরকার নেই? শুধু পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা করলেই হবে? ব্যক্তিগত শান্তি লাভ হবে? সমষ্টিগত শৃঙ্খলার কোনও দরকার নেই? একটা আদেশ বা নির্দেশ মেনে চলার দরকার নেই? তাহ'লে ঠাকুরের বাণীটা কি ফালতু? মিথ্যে? "এক আদেশে চলে যারা তাদের নিয়ে সমাজ গড়া।"---এই বাণীর কোনও মূল্য নেই? এইরকম ইচ্ছেমতো হাজার আদেশে সমাজ গড়ে উঠবে? ঠাকুর কি এই শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছিলেন? কে দিল এই নির্দেশ? কে দিল এই অধিকার? ঠাকুর কি কোথাও এ ধরনের কোনও কথা বলে গেছেন? যে যার নিজের ইচ্ছেমতো চলার কথা ব'লে গেছেন ও চলার অধিকার দিয়ে গেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর? কোনও নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই?
এটাকে কি বলবেন সদাচারী ভক্তি নাকি ব্যাভিচারী ভক্তি। কোনটা?
একজন প্রবীণ সৎসঙ্গী হিসেবে মনে প্রশ্নগুলি এলো তাই বললাম। বিচারের ভার শ্রীশ্রীঠাকুরের। আপনি প্রণাম নেবেন। জয়গুরু।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস ( প্রবি )
উত্তরপাড়া, হুগলী।
#প্রবিরচিঠি
(লেখা ৪ই জুলাসি'২০২৩)

Tuesday, November 7, 2023

কবিতাঃ দিও না বুকে ব্যথা।

সবাইকে তুমি টেনে তোলো
সবাইকে বলো তাঁর কথা
আদর ক'রে বুকে নাও জড়িয়ে
দিও না কাউকে ব্যাথা!
ব্যাথা যে পান তিনি আসলে
তাও তুমি জানো না,
জানো না তার কারণ
তাঁকে তুমি মানো না।
টাকা দিয়ে ঠাকুর হয় না সেবা, 
হয় না তাঁর প্রতিষ্ঠা; 
যে ব্যবহার, কথা, কাজে ঠাকুর পান ব্যাথা 
তা থেকে দূরে থাকার করো তুমি চেষ্টা।
বিশ্বাস! বিশ্বাস! বিশ্বাস!
একবার বিশ্বাস ক'রে আলোর দিকে মুখ ফেরাও।
একবার নির্ভর ক'রে দেখো দয়ালের উপর। 
একটু ধৈর্য ধরো; 
দেখবে নিমেষে কেটে যাবে অন্ধকার, 
খুলে যাবে বন্ধ দরজা, ঘুচে যাবে হাহাকার!
ঠাকুর বলেন,
আমায় তুমি ফেলেছো মেরে শেষ যে তোমার পুঁজি!
তোমার চলা, তোমার বলা, তোমার চিন্তা, 
তোমার কথা সেথায় যে আমি বাঁচি!
ঠাকুর বললেন,
ছোটোকে বড় করো, বড়কে করো আরো বড়!
আমরা বলি, বড়কে ছোট করো, 
ছোটকে করো আরো ছোট, 
লাথি মেরে দাও পাতালে ঢুকিয়ে!
টাকা দিয়ে কি আর ইষ্টপ্রতিষ্ঠা হয়?
আত্মপ্রতিষ্ঠা-ই হয় না তো ইষ্টপ্রতিষ্ঠা!!
অন্তরে হামবড়াই লুকিয়ে চোরের মত
বিবেককে দেবে ফাঁকি আর কত!?
যদি অবশ্য থাকে বেঁচে বিবেক!
টাকা একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে মাত্র
কিন্তু তা দিয়ে কাজের মূল্যায়ণ হয় না
তাই টাকার অহংকার না করাই ভালো।
মনে এলো তাই বললাম এতসব কথা
যদি না লাগে ভালো দিও না গালি,
অক্তহা কুকথা ব'লে দিও না বুকে ব্যথা।

প্রবন্ধঃকেউ কি শুনতে পাও?

আনন্দে আছো? সুখে আছো? বিন্দাস আছো? বাঃ! ভালো কথা। তাই-ই তো থাকতে চাই আমরা সবাই। তাই নয় কি? আনন্দে থাকো, সুখে থাকো, বিন্দাস থাকো কিন্তু দয়ালকে সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে থাকো। এই-ই তো প্রকৃষ্ট সময় তাঁকে সঙ্গে নিয়ে থাকার। আনন্দে, সুখে, বিন্দাসে থাকার সময়, পাখনা মেলে ওড়বার সময় দয়ালকে মনে প্রাণে জড়িয়ে নিয়ে থাকতে হয়, পাখনা মেলে উড়তে হয়। তা সে যত ওপরেই ওঠো না কেন ভয় নেই, নেই কোনও বিপদ। নতুবা তাঁকে ভুলে গিয়ে, তাঁকে ছেড়ে দিয়ে আনন্দে পাখনা মেলে উড়তে উড়তে কখন যে ঘুড়ির মত গোঁত্তা খেয়ে কোন মরা গাছের মগডালে লটকে যাবে, তার ঠিক কি? উড়তে উড়তে ঘুড়ির মত লটকে গিয়ে কঠিন সমস্যার মগডালে যে ঝুলবো না তার কোনও নিশ্চয়তা আছে কি!? তারপর ধীরে ধীরে জল ঝড় রৌদ্রে পুড়ে রঙ বিবর্ণ হ'য়ে, জলে ভিজে কাগজ ছিঁড়ে এদিক ওদিক টুকরো টুকরো হ'য়ে উড়ে গিয়ে অবশেষে শুধু কাঠির কঙ্কাল হ'য়ে পড়ে থাকার মত পড়ে থাকবো না তার আছে কোনও গ্যরান্টি? না নেই, থাকেও না। তখন শুধু জীবন জুড়ে নিরানন্দ, দুঃখ আর বিন্দাস না থাকার তীব্র যন্ত্রণাময় বেদনা আর বেদনা।


তাই বলি, আনন্দে থাকো, সুখে থাকো, বিন্দাস থাকো; যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় চেপে আনন্দের পাখনা মেলে উড়তে থাকো কিন্তু সঙ্গে শুধু বুড়ি ছুঁয়ে থাকো; গ্যারান্টি আউট হবে না। ছোটবেলায় বুড়ি ছোঁয়ার খেলা খেলেছি মনে আছে বন্ধু? যাকে বা যে জিনিসকে খেলায় বুড়ি করা হবে তাকে ছুঁয়ে দিলে আর খেলায় আউট হ'তাম না। সেই খেলা আজ জীবন জুড়ে হ'য়ে চলেছে বন্ধু! একজনকে জীবনের কেন্দ্রে বসিয়ে নাও আর তাঁকে ছুঁয়ে থেকে ছুটে বেড়াও যেদিক তোমার খুশী জীবনের বাঁচাবাড়ার স্বার্থে। দেখবে কোনও ভয় নেই, নেই কোনও অজানা অচেনা অদেখা আচমকা কোনও বিপদ, বিন্দুমাত্র বিপদের ঝুঁকি!

বন্ধু! এসো, রাখো হাতে হাত। আনন্দে, সুখে বিন্দাস হ'য়ে থাকো আর আমাদের ইচ্ছেটা আমাদেরই তাই আমাদের ইচ্ছের ডানা মেলে উড়বোই ব'লে বিন্দাস লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে নীল আকাশের বুকে উড়তেই পারো তা'তে কোনও বাধা নেই, নেই নিষেধ; শুধু যে নীল আকাশের বুকে উড়ে বেড়াতে চাইছো সেই নীল দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের যিনি স্রষ্টা সেই দয়ালকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে, ভালোবাসা-প্রেমের দড়িতে ক'ষে বেঁধে নিয়ে উড়তে থাকো। নতুবা এই ঘোর কলি যুগের ভয়ংকর বিষাক্ত রাবণের চপারের এক কোপে দুই ডানা কেটে জটায়ু হ'য়ে পড়ে থাকবে কোন অন্ধকার গলির কাঁটা ঝোপেঝাড়ে, নর্দমায় তার ইয়ত্তা নেই।
সাবধান! বন্ধু সাবধান!


বন্ধু! তুমি কি মনে করো তুমি ভালো আছো? তোমার চারপাশ, তোমার পারিপার্শ্বিক, তোমার সমাজ, সমাজের ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা তোমাকে বিন্দাস থাকতে দেয়? তোমার আর্থিক নিরাপত্তা কি বিন্দাস? আর যদি হয়ও তা কি চিরকালীন? আর যাদের নেই? যারা কষ্টে আছে তাদের জন্য কোনও কিছুই কি করার নেই? অন্তত সমবেদনা!? তাও নেই? থাকতে নেই? আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা!? এমন মানসিকতা!?


যাই হ'ক আমার প্রিয়জন, শোনো ঐ গানঃ
"যো সুখ মে সুমিরণ করে দুঃখ কাহে কো হোই।"
যখন খুব সুখে আছো, আনন্দে আছো, বিন্দাস আছো তখন স্বাভাবিকভাবেই যে যে দয়ালের যে রূপকে তা রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধ'রে আছো তাঁকে তখন ভুলে যাও। আর সেই ভুলে যাওয়ার সুযোগে লখীন্দরের বাসর ঘরের সরু চুলের ছিদ্রের মত সরু ভুলের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে পড়ে সর্বনাশা শয়তান কালনাগিনী! আর নিমেষের সুযোগেই বিষাক্ত এক ছোবলেই হ'য়ে যায় সব শেষ।

তাই বন্ধু! তা সে যত পার্থিব আনন্দের সাগরেই ডুবে থাকো না কেন সে আনন্দ প্রকৃত আনন্দ নয়। আমি এবং আমি যাকে নিয়ে, যা নিয়ে, যেখানে আনন্দ করছি সেই আমি, সেই আমার সঙ্গে থাকা আরও আমি ও আশপাশের জিনিসপত্র এবং সেই আনন্দের স্থান সব সেই সবেরই যিনি সৃষ্টিকর্তা তাঁকে নিয়ে আনন্দ করি না কেন!? কেন আনন্দের বন্যায় তাঁকে ভুলে যায়!? কেন আনন্দের ঠ্যালায় তাঁকে ভুলে গিয়ে শয়তান কালনাগিনীকে সুযোগ ক'রে দিই বিষাক্ত ছোবল মারার!? তাঁকে সঙ্গে নিয়ে, মাথায়-বুকে জড়িয়ে নিয়ে কেন "যো সুখ মে সুমিরণ করে দুঃখ কাহে কো হোই" গান গাইতে গাইতে ভেসে যাই না!? কোনও আপত্তি আছে কি? দয়াল কি কোনও নির্মল আনন্দ করতে, ফুর্তি করতে বারণ করেছেন? করেননি। তিনি কি বলেছেন, সংসার, ঘর, বাড়ি, বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব সব ছেড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গলায় হাতে লাল নীল সুতো বেঁধে ও মালা ঝুলিয়ে রঙ্গিন সাজে সেজে সাজা ভক্ত হ'য়ে ধূপ ধুনো দিয়ে কাঁসা ঘন্টা বাজিয়ে চন্দনে লেপ্টে কোমর নাচিয়ে মাথা দুলিয়ে আসুরিক চিৎকারে ভুল মন্ত্রোচারণে শুধু আমায় নিয়ে থাক!? বলেছেন? বলেননি। তাই তো? শুধু বলেছেন, তোরা ঘরে-বাইরে আনন্দ করছিস, করতে হিল্লিদিল্লী স্বর্গ-মর্ত-পাতাল কত জায়গায় যাচ্ছিস; তা আমায় নিয়ে যাবি না? আমায় ফেলে যাচ্ছিস? আমায় ফেলে যাবি? আমায় নিবি না? আমায় একলা ফেলে রেখে তোরা নিজেরা আনন্দ করবি? আমি একা একা ঘরের কোণে অন্ধকারে পড়ে থাকবো?


দয়ালের এই বুকভাঙ্গা আকুল কান্না কেউ কি শুনতে পাও আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা!? সত্যি ক'রে বুকে হাত রেখে বিবেকের আয়নায় মুখ রেখে বলো তো সত্যি সত্যি-ই কেউ কি শুনতে পাও!?------প্রবি।
(লেখা ৭ই নভেম্বর'২০২১)

Monday, November 6, 2023

প্রবন্ধঃ নোবেল পুরস্কার।



নোবেল শান্তি পুরস্কার!
কি হবে ও কি হয়েছে এই পুরস্কার প্রদানে?
কি হবে নারীর অধিকারের দাবীতে লড়াই করার জন্য জেল খাটা, অত্যাচারিতা, নির্যাতিতা ইরান নিবাসী মহিলা চিকিৎসক ৫৩বছর বয়সী নার্গীস মুহাম্মদীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়ে? আর কতদিন চলবে পুরস্কারের আড়ালে নিজেদের অপদার্থতা ঢাকার নির্লজ্জ খেলা? কতদিন চলবে অত্যাচারিতকে, ভুক্তভোগীকে রসকষহীন নিষ্প্রাণ মেডেল, শুখা প্রশংসা পত্র আর টাকা প্রদানের মাধ্যমে অত্যাচারীকে, অন্যায়কারীকে তোষণ পোষণের অমানবিক লুকোচুরির খেলা? জেলের ক্ষুদ্র কুঠুরিতে বন্দী নার্গীস মুহাম্মদীর ওপর শারীরিক মানসিক অমানুষিক অত্যাচারের অসহনীয় জ্বালা, যন্ত্রনা, কষ্ট, ব্যথা কমে যাবে এই শান্তি পুরস্কারে ? মলম বা ওষূধের কাজ করবে এই তথাকথিত নোবেল শান্তি পুরস্কার? শান্তি পুরস্কার পেলেই তাঁর ৩৫বছরের জেল খাটা ও বেঁচে থাকলে প্রকাশ্যে ১৫৬ ঘা চাবুক মারার শারিরিক-মানসিক অসহ্য যন্ত্রণা, অপমান ম্যাজিকের মতন শান্তিতে পরিণত হবে? তাঁর চিকিৎসার ওপর ও ইসলাম ধর্মের ওপর গবেষণালব্ধ জ্ঞান যে দেশের সম্পদ তা যে নষ্ট হ'লো নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেই তা কি পূরণ হবে, অন্ধকারের আলো ভেদ ক'রে আলোয় উদ্ভাসিত হবে তাঁর জ্ঞান?

কথায় আছেঃ "Knowledge rules the world.-----Francis Bacon
Knowledge is Power, Power is Wisdom, Wisdom is understanding. ---A famous quote by Lilcent King.
Ignorance is the curse of God,. Knowledge is the wing where with we fly to heaven." W. Shakespeare.

এসব কথার কি কোনও মূল্য নেই নোবেল কমিটির কাছে? জ্ঞান বিজ্ঞানের সমস্তদিকের অগ্রগতি নিয়ে কাজ নোবেল কমিটির। এই যে জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে ধর্মের মিথ্যে দোহাই দিয়ে সেই বিষয়ে কি নোবেল কমিটির নোবেল মানুষদের কোনও সদর্থক ভুমিকা থাকা উচিত নয়? বিশ্বের সমস্ত জ্ঞানী, পন্ডিত, বিজ্ঞ মানুষদের এই জ্ঞানের ওপর দাঁড়ানো উচিত নয়? এই জ্ঞানের অহিংস লড়াই সংগঠিত করা, দিকে দিকে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ তো জ্ঞানী, পন্ডিত, বিজ্ঞদের; এ কাজ তো আম জনতার নয়? তাহ'লে সবই কি ভালো ভালো কথার আড়ালে মিথ্যের বেসাতি? সবই কি ভালো ভালো কথার হাই? সবই কি মুখে মারিতং কথার স্রোতে ভাসা? সবই কি নাটক? সবই কি প্রহসন? বিশ্বজুড়ে সবারই কি মন এক আর মুখ আর এক? সবই কি শুধু বিশ্বজুড়ে মুখেতে আছে আর বইয়ের পাতার বড় বড় কথা? আচরণে বা বাস্তবে তা নেই? অলীক মায়াময় কথার মালা?

তাহ'লে সবই কি ইউটোপিয়া? এই ইউটোপিয়াকে সামনে রেখেই তিলে তিলে অসহনীয় যন্ত্রণায় কষ্টে ক্ষতবিক্ষত হ'য়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষের হাতে মারা যাবে নারীর অধিকারের দাবীতে লড়াই করার জন্য আলোর দিশারী, নারী মুক্তির যোদ্ধা ইসলামের পুজারী রাসুল প্রেমী কোরানজ্ঞ এক মুসলিম নারী ইরান নিবাসী মহিলা চিকিৎসক ৫৩বছর বয়সী নার্গীস মুহাম্মদী!? আর নীরবে চেয়ে চেয়ে দেখবে সমগ্র বিশ্বের সমগ্র পুরুষসমাজ??

নার্গীস মুহাম্মদী-র আগেও তো অনেককে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তা'তে কি হয়েছে? কার ঘুম ভেঙ্গেছে? কে বা কোন দেশের কোন সরকার, কোন প্রশাসন, কোন সংগঠন অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকা কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গাবার জন্য সংগঠিত হয়েছে বা সংগঠিত করেছে গোটা বিশ্বকে? শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর এরকম অন্ধকার যুগ ঘুচে শান্তি এসেছে? পুরস্কার পাওয়া কি কোনও আন্দোলনের লক্ষ্য? পুরস্কার পাওয়ার লক্ষ্যে কি কেউ ন্যায্য দাবী আদায়ের মরণপণ লড়াই করে? এই ধরণের বিভিন্ন পুরস্কার কমিটির বিচারে গৃহীত পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত কি গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়ার মতন নয়, আইওয়াশ নয়, আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' ইত্যাদির মতো সস্তা মানসিকতা নয়?
নারী অধিকার রক্ষা ও দাবী আদায়ের জন্য অন্যায্য নির্ম্মম সাজা পাওয়া মহিলা চিকিৎসক নার্গীস মুহাম্মদী মুক্তির জন্য নোবেল কমিটি বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করুক, জনচেতনা জাগ্রত ক'রে আন্দোলন সংগঠিত করুক বিশ্বজুড়ে, ইসলামি দেশগুলোর প্রধান ও ইসলামি বুদ্ধিজীবীদের কাছে বার্তা পাঠাক তাদের মানবিক ভুমিকা পালন করার জন্য। বিশ্বজুড়ে নারী স্বাধীনতা, নারীর অধিকার রক্ষা ও দাবীর জন্য লড়াইয়ে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালনকারী নারী সংগঠনগুলি বিশ্বজুড়ে সংঘবদ্ধ হ'য়ে একযোগে সোচ্চার হ'ক এই অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে। সমস্ত বিশ্বের রাষ্টপ্রধান মানবিকতার পক্ষে, মানব সভ্যতার অগ্রগতির পক্ষে দাঁড়িয়ে তাঁদের মানবিক মানসিকতা ব্যক্ত করুক, আর্জি জানাক ইরানের প্রশাসকের কাছে। প্রয়োজনে সমস্ত মুসলিম কান্ট্রির প্রশাসক ও সচেতন মানবিক বিবেকবান ইসলামিক বুদ্ধিজীবীদের সম্মিলিত উপস্থিতিতে নবী মহাম্মদের কোরানের আয়াতে বিচার বিশ্লেষণ হ'ক নিম্নে উল্লিখিত অন্যায় নির্ম্মম সাজা প্রাপ্ত নার্গীস মুহাম্মদীর দাবীরঃ
"নারীদের হিজাব বোরখা বাধ্যতামূলক পরার আইন রদ। নারীর শিক্ষার অধিকার, পুরুষের সমান অধিকার দাবী। এছাড়া নিজের গর্ভের অধিকার। অর্থাৎ নারী নিজে না চাইলে গর্ভবতী হবেন না, তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি ব্যবহার করবেন স্বেচ্ছায়। নারীর ও অধিকার থাকবে তালাক দেবার। নারী চিকিৎসক না পেলে পুরুষ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করার অধিকার।"

ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে যেভাবে, যে প্রক্রিয়ায়, যে দূরদৃষ্টিতে, যে বুদ্ধিমত্তায়, যে পারদর্শিতায়, যে চতুরতায়, যে ঐকান্তিক ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় ও যে বৈদেশিক কূটনীতির তৎপরতায় পারস্পরিক প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ও যোগাযোদের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছিল বিনা ক্ষয়ক্ষতিতে ঠিক তেমনভাবেই উদ্ধার করা হ'ক নারীর অধিকারের দাবীতে লড়াই করার জন্য জেল খাটা, অত্যাচারিতা, নির্যাতিতা ইরান নিবাসী মহিলা চিকিৎসক ৫৩বছর বয়সী নার্গীস মুহাম্মদীকে এবং তাঁর দাবীকে পূরণ করার মধ্যে দিয়ে মর্যাদা দেওয়া হ'ক সমগ্র মুসলিম নারীজাতিকে এবং পুরুষ নারীর পারস্পরিক সম্পর্ক মধুর হ'ক নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার পরিবর্তে।

বন্ধ হ'ক নোবেল পুরস্কারের গোড়া কেটে আগায় জল দেবার মিথ্যে সস্তার নাটক। (লেখা ১৭ই অক্টোবর'২০২৩)

খোলা চিঠিঃ শ্রীকুমার মুখার্জীদাকে। (১)

দেখছো যখনই কেউ কাউকে দোষারোপ করছে---
নিন্দা ক'রে বেড়াচ্ছে--
কোন হেতুর ধার না ধেরে,---
তা'র বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ
বাস্তব অবস্থা সম্বন্ধে ওয়াকিব হওয়ার
তোয়াক্কা না রেখে,---
যাকে নিন্দা করে বেড়াচ্ছে--
সহজভাবে তা'র অবস্থার কথা
তা'কে জিজ্ঞাসা করার ও
ফুরসৎ হয়নি তা'র,---
অযৌক্তিক চরিত্রের খোলস প'রে
হাত নেড়ে, বাক্যের সমারোহসজ্জা নিয়ে
কায়দায় লোক ভেড়াতে চাচ্ছে
তা'র নিজের পক্ষে,---
ঠিক বুঝবে, সেখানে
এর অন্তরালে আছে
হয় কামিনী, নয় কাঞ্চন ,
নয় হীনম্মনতা ,
কিংবা এ তিনেরই সংমিশ্রণ,---
যার ফলে, সে স্বতঃই একটা
অলীক ভাঁওতা সৃষ্টি করছে---
যা'কে নিন্দা করছে--
সে তার অন্তরায় ভেবে ,
ঐ নিন্দাটা হ'চ্ছে নিজেকে লুকিয়ে চলার
একটা সাবধানী চালবাজী অভিব্যক্তি,
একটু নাড়া দিলেই ঠিক পাবে ।।
#শ্রীশ্রীঠাকুর
(যতি-অভিধর্ম্ম)

এই বাণীটা শ্রীকুমার মুখার্জীদা পোষ্ট করেছেন তার টাইমলাইনে। আমি শ্রীকুমারদাকে প্রশ্ন করেছিলাম, এই বাণীটা কার বা কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শ্রীকুমারবাবু? ঠাকুরের অবস্থা কি হয়েছে জানেন? পঞ্চ ভূতের ফাঁদে ব্রহ্মা পড়ে কাঁদে যেমন ঠিক তেমনি ভক্ত (?) কূল মাঝে পরমপিতা মুখ ঢাকে লাজে!
(শ্রীকুমার মুখার্জীদার এই পোষ্টটা শেয়ার করলাম। মুখার্জীদার সঙ্গে কথোপকথনের আমার অংশটা আমি এখানে তুলে দিলাম সমস্ত গুরুভাইদের জানার সুবিধার্থে)।
শ্রীকুমারবাবু আপনি লিখেছেন, "নিশ্চই যাদের গায়ে ছেঁকা লাগছে বাণীটা তাদেরই জন্যে".......ইত্যাদি।
কাদের গায়ে ছেঁকা লাগছে শ্রীকুমারবাবু? সবসময় ধোঁয়াশা রেখে কথা বলেন কেন? সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে অসুবিধা কিসের বা কোথায়? কেন হিম্মতের অভাব? আমি যদি বলি বাণীটা আপনার গায়ে ছেঁকা দিচ্ছে না তাহ'লে আপনার কথা অনুযায়ী এটা ধ'রে নিতেই পারি বাণীটা আপনার জন্য নয়। আবার আপনিই বলছেন তাঁর সব বাণী আপনারই জন্য, আপনার উন্নতি ও আদর্শের স্বার্থ রক্ষার জন্য। তাহ'লে কথাগুলি পরস্পর বিরোধী হ'লো নাকি? একবার বলছেন যাদের গায়ে ছেঁকা লাগছে তাদের জন্য উপরে আপনার পোষ্ট করা বাণীটা, আবার বলছেন আপনার জন্য বাণীটা। আচ্ছা শ্রীকুমারবাবু একই মানুষের একই বিষয়ের উপর কথা এত fluctuate করে কখন ও কেন? বাণীটা আপনি পোষ্ট করেছেন আর নিশ্চয়ই বাণীটা ভালোভাবেই পড়েছেন ও মানে বুঝেছেন। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে আপনার সঙ্গে আমার আগের দীর্ঘ আলোচনায় আপনি যে যে কথাগুলি বলেছিলেন সেই বলাগুলি কার বা কদের উদ্দেশ্যে ছিল বলতে পারেন? আলোচনা যখন ক্রমাগত চলছিল তখন আপনি আপনার রাগ প্রকাশ ক'রে দিয়েছিলেন আর সেই রাগটা ছিল ঠাকুরের আত্মজদের উপর। কেন? কি কারণ? এই পোষ্টেও দেখা যাচ্ছে আপনি বাইরের কোন এক অদৃশ্য শত্রুর কথা বলেছেন। আপনার কাছে জিজ্ঞাস্য আপনার ভিতরের ও বাইরের কোন শত্রু ধ্বংসের কথা বলছেন?
দাদা, যদি ঠাকুরের বাণীগুলি আপনার কথানুযায়ী আপনার শিক্ষার জন্য হয়, আপনার উন্নতির জন্য হয়, আপনাকে শানিত ক'রে তুলবার জন্য হয় তাহ'লে আপনার আমাকে করা কমেন্টগুলির মধ্যে ঠাকুরের আত্মজদের উপর একটা বিতৃষ্ণা ঝ'রে পড়ে কেন? এই কি শিক্ষার নমুনা? এই কি আপনার উন্নতির নমুনা? এই কি আদর্শের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেকে শানিত ক'রে তোলার নমুনা? আপনি তো এক অদৃশ্য শত্রুর পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছেন। আপনি যে শত্রুর কথা বলছেন সে তো আপনার খুবই পরিচিত। তাহ'লে কেন সরাসরি নাম তুলে আক্রমণ করছেন না? তাহ'লে আপনাকে উত্তর দিতে সুবিধে হয়। এর আগেও আপনি আক্রমণ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোথায় যেন ঘোমটার তলায় খেমটা নাচের মতন। আপনারা শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধী, শ্রীশ্রীঅশোকদাদা বিরোধী ঠাকুর পরিবার বিরোধী; আপনার বাড়ীর সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানে আপনি শুধু ঠাকুরের ফটো রেখেছেন দেখেছি সেখানে আর কারও ফটো ছিল না। অর্থাৎ আপনি প্রমাণ করেছেন আপনি মূল কেন্দ্র বিরোধী তথাকথিত সৎসঙ্গী। আপনার আচরণে, কথায় ও বার্তায়, চিন্তায় ও চলনে সবেতেই প্রমাণ হয় আপনি ঠাকুর পরিবার ও মূল কেন্দ্র বিরোধী। তাহ'লে উপরের পোষ্ট করা বাণীটা যদি আপনার পরামর্শ মতো 'বুঝে বুঝে দেখতে হয়' তাহ'লে কি দেখবো? দেখবো, ঠাকুর যে কতবড় ভবিষ্যৎ বক্তা, কত দূরদৃষ্টি তাঁর তা' তাঁর কত আগের দেওয়া এই উপরোক্ত বাণীটা তার প্রমাণ। তিনি জানতেন, তাঁর ভক্তকূলের আহাম্মকি ক্রিয়াকর্মের জন্য তাঁকে লজ্জায় মুখ ঢাকতে হবে! আর দেখুন কি অদভুত তাঁর লীলা আপনাকে দিয়েই তাঁর বিরাশি সিক্কার থাপ্পর আপনাকেই দিয়েছেন আপনার হাত দিয়ে বাণীটা পোষ্ট করিয়ে। যাই হ'ক আসুন সরাসরি খোলাখুলি আলোচনার টেবিলে বসুন, কেন মূল কেন্দ্র বিরোধী, কেন ঠাকুরের আত্মজদের বিরোধী, কেন ঠাকুর পরিবার বিরোধী। এতবড় ভক্ত হ'য়ে গেছেন আপনারা সবাই যে আপনারা ঠাকুরের পরেই বড়দার চেয়েও যোগ্য ব্যক্তি!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
দেখুন শ্রীকুমারবাবু আপনি লিখেছেন কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ঘোমটার নীচে খেমটা নাচ নাচছে তা' চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তথ্য ও তত্ত্ব দিয়ে। দাদা, সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষকে আপনি কোনদিনই তথ্য ও তত্ত্ব দিয়ে জাগাতে পারবেন না সে আপনি যতই চোখে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দিন। আপনার মত গোটা মানুষ ক’টা আছে? আপনাকে সোজাসুজি সহজ সরল ভাবে সত্য তুলে ধরতে হবে, আপনার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলা কথা দিয়ে খেমটা নাচের কুশীলবদের মুখোশ খুলতে পারবেন না উল্টে আপনারই খুলে যাবে। তাই বলি, সোজা ব্যাটে খেলতে হবে যদি আউট হ’তে না চান। আর বলি, হ্যাঁ, আবার চাই। আপনার কথামতই বলছি, আবার তুলে ধরা চাই। তুলে ধরুন যে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে যে দুর্বুদ্ধি বা নির্বুদ্ধিতা থেকে যে ঘোমটার পিছনে থেকে খেমটা নাচ নাচছে সেই ঘোমটা ও উদ্দেশ্যের রহস্য উন্মোচন করার জন্য আবার তুলে ধরা চাই। ধরুন, বৃহত্তর স্বার্থে খোলাখুলি তুলে ধরুন।
আপনি লিখেছেন, আপনি পয়েন্ট টু পয়েন্ট সব সোজা ক'রে বলেছেন, এখন না বুঝলে, উল্টো বুঝলে আপনার কিছু করার নেই।
আপনি বলি কি, আপনি বলেন সোজা কিন্তু ঐ ভূতের হাঁটার মত। তাই উল্টো বোঝে সবাই। আপনিই বা কি করবেন আর যারা উল্টো বোঝে তারাই বা কি করবে? গন্ডগোল তো ঐ, যে পা দিয়ে ভূত হাঁটছে সেই পায়ে। পাদুকা দেখেই তো সবাই ধ'রে ফেলছে ঐটা মানুষের হাঁটা না ভূতের হাঁটা! ভূত বেচারা কি আর করবে সে যে ধরা পড়ে যাচ্ছে তা'তো আর সে বুঝতে পারছে না। সে তো আর জানে না কিম্বা জানলেও এত বেহুঁশ যে খেয়ালই নেই যে সবাই তার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভূত ভাবছে সবাই বোধহয় মাথা নীচু ক'রে সসম্ভ্রমে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! আসলে যে সবাই ভূতের অদ্ভুত হাঁটাটার দিকে মাথা নীচু ক'রে তাকিয়ে দেখছে সেইটা আর ভূতের মাথায় নেয়। সে ভাবছে আমায় সবাই সমীহ করছে তা ই সবাই মাথা নিচু ক'রে রেখেছে। ভূতের হাঁটা হ'লো, ভূত যখন হাঁটে তখন তার পায়ের গোড়ালি ঘুরে সামনে চলে আসে আর আঙ্গুল থাকে পিছনে। তাই ভূত আর কি করবে বেচারা। সে ভূত হ'য়েই থেকে গেল আজীবন, মানুষ হওয়া আর হ'লো না। কি করবে, স্বভাব যায় না ম'লে, ময়লা যায় না ধুলে। যাই হ'ক কি আর করবো দাদা আমরা যে সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষ।
মনে মনে মন কলা খাওয়ার রোগটা বেশ ভালোই ধরেছে বোঝা গেল। নিজের মনে নিজে ভেবেই নিলেন আমার ছেঁকা লেগেছে। আহাঃ কি আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে! ছেঁকা খাওয়ার কথাটা আপনিই বলেছিলেন প্রথমে আমাকে। আপনার পোষ্ট করা ঠাকুরের বাণীটা প’ড়ে আপনাকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, “বাণীটা কার বা কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?” উত্তরে আপনি ছেঁকা খাওয়ার কথা বলেছিলেন। আমি আপনাকে ধোঁয়াশা কথা ছেড়ে স্পষ্ট ক’রে বলার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু আপনি আনন্দে ডগমগ হ’য়ে বুঝেই ফেললেন ছেঁকাটা আমার লেগেছে। এই যে মনে মনে নিজের মত ক’রে সব কিছু ভেবে নেওয়া, ধ’রে নেওয়া এটা অপরিণত বালখিল্য মস্তিষ্কের লক্ষ্মণ। এতে বোঝা যায় দূরদৃষ্টির দৌড় কতদূর।
আমাকে সাবধান ক’রে লাভ নেই নিজেকে নিজে সাবধান করুন। নিজেই আপনার অনেক আগের লেখায় বলেছেন ‘হয়তো ভুল মেসেজ চলে গেছে।‘ তাই বলি, সুকান্তবাবু কেউ তার নিজের দুস্থ (বা দুষ্ট) বুদ্ধির নির্যাস আপনার মুখে বসানোর চেষ্টা করার সাহস করেনি। আপনি আপনার আগের এবং এখনের লেখাগুলি আবার বারবার পড়ুন, নিজের প্রতি নিজে কঠোর হ’য়ে দেখুন, দেখতে পাবেন কোথায় কখন কিভাবে ঠাকুরের জ্যেষ্ঠত্মজের প্রতি, তার পরিবারের প্রতি আপনার ঘৃণা বিতৃষ্ণা ইত্যাদি পোষণ পেয়েছে। আপনার অবচেতন মনে এটা হয়েছে ব’লে আমি মনে করিনা, কারণ আপনার ব্যাক্তিগত উপস্থিতি ও আপনার চারপাশের পরিস্থিতি তা’ স্বীকার করে না। আর ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা পোষণের সূত্র আপনি নিজেই, আপনার করা মন্তব্যগুলি ও মন্তব্যগুলির ভাষা নিয়ে একটু ভালো ক’রে নেড়েচেড়ে দেখুন পোষণের সূত্র আবিষ্কার করতে পারবেন। কার শিক্ষা কি হ’লো সেই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার রুচি ও সময় নেই। পরস্পর বিরোধী কথাবার্তায় স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষার প্রতি সন্দেহের জন্ম দেয়। ইষ্টের প্রতি অস্খলিত, অচ্যুত, অকপট নিষ্ঠা, ভালোবাসা, বিশ্বাস ভেতরের শত্রুকে অটোম্যাটিক কন্ট্রোলে রাখে, তার জন্য আলাদা ক’রে সংগ্রাম করতে হয় না।
শ্রীকুমারবাবু, আপনি লিখেছেন আপনি কাউকে পয়েন্ট ক'রে কিছু লেখেননি। আমি নিজে থেকেই গায়ে পড়ে ছেঁকা নিয়েছি। আমি কি কাউকে বা আপনাকে পয়েন্ট ক'রে কিছু বলেছিলাম? যখন কেউ ঠাকুরের কোনও বাণী বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পোষ্ট করছে তখন সেই বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থ ও তার প্রভাব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে। ঠাকুরের বাণী নিয়ে বিশ্লেষনাত্মক আলোচনা হবে তা'তে দোষ, ভুল বা অন্যায়টা কোথায় শ্রীকুমারবাবু? আর আপনি কোন মনোভাব থেকে কাকে বা কাদের উদ্দেশ্য ক'রে এই বাণীটা পোষ্ট করেছেন তা' কি কারও আর অজানা আছে? আপনি নিজেই তো তার রহস্য উদ্ঘাটন ক'রে দিয়েছেন আপনার বিভিন্ন লেখায়, মন্তব্যে ঠাকুর বাড়ির বিরোধীতা ক'রে; এখন আবার বিড়ালের মত 'আর মাছ খাবো না, কাশীবাসী হবার' কথা বলছেন? আপনাকে কে বললো আমার গায়ে ছেঁকা পড়েছে? আপনার কলমে এত ধার হ'য়ে গেছে, এত তাপ সৃষ্টি হ'য়েছে যে আপনার কলমের খোঁচায়, কলমের তাপে কারও রক্তপাত হবে, গায়ে ছেঁকা পড়বে? এ'তো অহংকারের কথা দাদা!!!!!!! আপনি ঠিকই বলেছেন, এটা প্রতিযোগিতা বা হার জিতের জায়গা নয়; এই জায়গা সত্য, মিথ্যা, মুখ ও মুখোশ আর ঠিক, বেঠিক উন্মোচনের জায়গা। তার জন্য আপনাকে আমাকে উভয়কে প্রস্তুত থাকতে হবে।
সুজিত রায়বাবু, আপনি ঠাকুরের যে বাণীটা পোষ্ট করেছেন সেটার ইঙ্গিত কার দিকে সেটা সহজেই অনুমেয়।
"শিষ্য গুরুর ভেদ গণে না
একনজরে ভজে,
ধর্ম তাহার দ্বিধা হ'য়ে
দুর্ব্বিপাকেই মজে।
--শ্রীশ্রীঠাকুর--
এটা ঠাকুরের বাণী আর ঠাকুরের বাণী মানেই বেদবাণী যা জ্বলন্ত অঙ্গার। ঠাকুরের বাণীটা আপনি পোষ্ট করেছেন আমার কমেন্টের উত্তরে তাহ'লে ধ'রেই নিতে পারি বাণীর অর্থটা বুঝেই আপনি আমার কমেন্টের উত্তরে এই বাণীটা পোষ্ট করেছেন। আর অর্থটা যদি আমি বুঝে থাকি তাহ'লে এই অর্থটা দাঁড়ালো যে আমাদের উভয়কেই এই বাণীর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দেখে নিতে হবে, বুঝে নিতে হবে, পরখ ক'রে নিতে হবে যে ঠাকুরের এই বাণীটার ভিতরে সত্যিই কোনও সত্য আছে কিনা, দম আছে কিনা; নাকি শুধুই বকোয়াস। আপনার এই বাণীটা পোষ্ট ক'রে আপনি প্রমাণ করলেন আপনি শ্রীকুমারদার সমগোত্রীয়। আর তাই লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে আমার মন্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থের ধার কাছ দিয়ে না গিয়ে অন্যের প্রভাবে প্রভাবিত হ'য়ে বিজ্ঞের মত অল্প কথায় শুধু ঠাকুরের একটা বাণী তুলে ধ'রে প্রমাণ করতে চাইলেন আপনি অনেক বড় মহাপন্ডিত, বোদ্ধা; আর আমি চার অক্ষর। যাই হ'ক বাণীর মর্মার্থ যদি আমি বুঝে থাকি এবং আপনিও বুঝে থাকেন তাহ'লে আপনার মনোভাব অনুযায়ী পোষ্ট করা বাণীর ফলাফল স্বরুপ আমাকে অপেক্ষা করতে হবে দুর্ব্বিপাকের দিনটার জন্য। আর যদি ধর্ম্ম আমার দুই ভাগে বিভক্ত হ'য়ে সংশয় ও সন্দেহের মধ্যে ভুগে ভুগে আমি দুর্ব্বিপাকে না মজি অর্থাৎ দৈব দ্বারা সংঘটিত বিপদগ্রস্থ বা দুর্ঘটনাগ্রস্থ না হ'ই তাহ'লে বুঝে নিতে হবে ঠাকুর মিথ্যা আর ঠাকুরের বাণী বকোয়াস, ফালতু। আর ঠাকুরের এই বাণীটা যদি আপনার বিকৃত অর্থে প্রয়োগ হ'য়ে থাকে, মিথ্যার বেসাতি হ'য়ে থাকে তাহ'লে সুজিত বাবু আপনিও প্রস্তুত থাকুন শ্রীকুমারবাবুদের মতন আপনার ঠাকুরবিরোধী, ঠাকুর পরিবার বিরোধী, ঠাকুরের আত্মজ বিরোধী কৃতকর্মের ফলভোগের জন্য। এটা মনে রাখবেন ঠাকুরের বাণী "তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি" আমার আপনার উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।
শ্রীকুমারবাবু, কথায় আছে, পাগলে কিনা বলে ছাগলে কিনা খায়, আপনারও সেই দশা হয়েছে নাকি!? আপনার প্রোফাইল দেখলে তো পান্ডিত্যের বিচ্ছুরণ ঘটে তাহ'লে এত সস্তা ভাবনা-চিন্তা, বালখিল্য ধারণা ধারণ করেন কি ক'রে? তাহ'লে কি সবটাই ঠাকুরের কথা অনুযায়ী তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকার কারণে হচ্ছে? এসব মন্তব্য করেন কি ক'রে? সুজিতবাবুকে লেখা আমার মন্তব্যের কোথাও কি কোনও আপনার মন্তব্যে লেখা আজেবাজে অর্থহীন ভিত্তিহীন কথা " ভয় দেখানো, সন্ত্রাস করা, সমাজচ্যুত করা, ইষ্টদ্রোহী ঘোষণা, হুমকি দেওয়া, শারীরিক আক্রমণ" ইত্যাদির আভাস বা ছোঁয়া আছে? " সবই হাউইবাজি, খুব দেখা আছে এসব" ইত্যাদি আরও সব ছ্যাবলা কথা রাস্তার ছেলেদের মানায় আপনার মত এলিট ও ঠাকুরের একনিষ্ঠ কর্মীকে মানায় না। আপনি আমার মন্তব্যের ভুল ও বিকৃত ব্যাখ্যা করবেন না; ভুল ব্যাখ্যা ক'রে নিজের ও অন্যের ক্ষতি করবেন না, এটা আমার বিনীত অনুরোধ। আপনার প্রত্যেকটি কথার জবাব দিতে আমি প্রস্তুত কিন্তু শালীনতা বজায় রেখে।
আপনি লিখেছেন আপনি ভুক্তভোগী। খুব কাছে থেকে সব দেখেছেন, অনুভব করেছেন। সীমাহীন নীচে নাবার ও শাস্তিদানের নমুনা দেখেছেন।
এই ভুক্তভোগী বলেই আপনার ভিতরে রোগটা বাসা বেঁধেছে। আপনার আজকের যে অবস্থা তার জন্য আপনি দায়ী নন; দায়ী আপনার পূর্বপুরুষ। আপনার অবস্থা ভগীরথের মত। ভগীরথকেও ভুগতে হয়েছিল তার পূর্বপুরুষের জন্য। আপনি যা লিখেছেন তাতে পরিস্কার আপনি ভীষণ ভাবে প্রভাবিত। জানি না ভগীরথ হ'য়ে সবাইকে মুক্তি দিতে আর পারবেন কিনা এ জন্মে। কারণ আপনার বোধ, আপনার রাগ, আপনার ঘৃণা আপনাকে আজ অন্ধ ক'রে দিয়েছে। তাই সব কিছু আজ আপনার কাছে ঘেঁটে ঘ হ'য়ে গেছে। তাই শ্রীশ্রীবড়দা ব্যতীত ঠাকুরের অন্য সন্তানদের সব ঠিক আর শ্রীশ্রী বড়দার সব বেঠিক ব'লে মনে হয় আপনার। শ্রীশ্রীবড়দার সব যদি বেঠিক, ভুল ও অন্যায় হ'য়ে থাকে তাহ'লে ঠিক, নির্ভুল ও ন্যায়কারীদের আজ ঠিকানা কোথায়? যদি শ্রীশ্রীবড়দা মিথ্যা হ'য়ে থাকে আর বাকীরা যারা বড়দার চরম বিরোধী তাঁরা সত্য হ'য়ে থাকে তাহ'লে কালের গতিতে কেন আজ মিথ্যা সত্য ও সত্য মিথ্যা হ'য়ে যায়? "ঠাকুর কি তোর এতই বেকুব ফাঁকি দেখে নয় সামাল?" এটা তো ঠাকুরেরই কথা! তাহ'লে ঠাকুর তো আজ মিথ্যা হ'য়ে যাচ্ছে। কে মানবে ঠাকুরকে? যদি মিথ্যার রমরমা রশ্মি সূর্যের রশ্মির মত চারিদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তাহ'লে কে বিশ্বাস করবে ঠাকুর যেমন দয়াল তেমনি ভয়াল? কোথায় তাঁর ভয়াল রূপ অন্যায়কারীদের ওপর? তাঁর বংশধর ব'লে? আজ কার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী ঠাকুরের মিশন ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের মত আছড়ে পড়েছে ও পড়ছে দেশবিদেশের মাটিতে? বুকে হাত দিয়ে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলার সময় এসেছে; বলুন যদি সত্যের পূজারী হ'য়ে থাকেন, কার নেতৃত্বে ঠাকুর আজ বিশ্বব্যাপী ধর্মের অঙ্গনে বিশ্ব ধর্মীয় নেতা? শ্রীশ্রীবড়দার নেতৃত্বে নাকি ঠাকুরের অন্য সন্তানদের নেতৃত্বে নাকি অন্য কোনও কারও নেতৃত্বে? বলুন, ঠাকুর পরবর্তী কে সেই শারীরিক-মানসিক-আত্মিক শক্তিতে শক্তিমান মহান সিদ্ধপুরুষ যিনি ঠাকুরের মিশনকে অ্যাটলাসের মত বলিষ্ট কাঁধে বহন ক'রে চলেছিল বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে? বলুন একটা নাম? আজকের বিশাল 'সৎসঙ্গ' আপনার কাছে মূল্যহীন। কিন্তু আপনি যে প্ল্যাটফর্ম তৈরীর চেষ্টায় আছেন তার মূল্য, তার অস্ত্বিত্ব থাকবে তো ভবিষ্যতে?
আপনি প্রতিবারের মত এবারও একটা ভুলের বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন। কেন খাচ্ছেন বুঝতে পারছি না। কে শেখালো, কে বোঝালো, কে শোনালো আপনাকে যে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ছাড়া আর কাউকে ইষ্টের আসনে বসানো হয়েছে? কেন এই মিথ্যে প্রচার? কে সে? কাকে ইষ্টের আসনে বসানো হয়েছে? ঠাকুর ছাড়া কে সে যিনি সৎসঙ্গীদের কাছে আর এক ইষ্ট? আপনারা মুষ্টিমেয় কয়েকজন সব বুঝে গেলেন যে ইষ্টের আসনে ঠাকুর ছাড়া আরও কেউ আছেন? কে তিনি? আর আমরা কোটী কোটী ঠাকুরের অনুগামী তাঁরা জানতে পারলাম না? আমরা এতবড় চার অক্ষর যে আমাদের ঠাকুর পরিবার বোকা বানাচ্ছে আর ঠাকুর আমাদের রক্ষা করছে না? কিন্তু আপনারা মুষ্টিমেয় কয়েকজন এতবড় ভাগ্যবান যে আপনারা ঠাকুরের দয়ায় আজ ভেসে যাচ্ছেন আর আমরা ভোগে যাচ্ছি?
আপনি ভুক্তভোগী আর এত কাছ থেকে সব দেখেছেন আর আমরা সব দূরে ছিলাম? আপনার ঋত্বিক কে আমি জানি না। তবে আমার মা-বাবা ও বড়দার ঋত্বিক ছিলেন শ্রদ্ধেয় নরেন্দ্রনাথ মিত্র। আমি কার দীক্ষিত, এই কথা ব'লে আপনি আমায় খোঁচা মেরেছেন। আর এর পরেও বলেছেন আপনার কথায় নাকি তেজ আছে, ক্রোধ নেই। আপনার প্রতিটি লেখায় বর্ণনা আছে কোনটা ক্রোধ আর কোনটা তেজ। আপনাকে জানাই আমার ঋত্বিক ছিলেন শ্রদ্ধেয় হরপ্রসন্ন মজুমদার। একেবারে ছোটোবেলা থেকে এদের দেখেছি। শ্রদ্ধেয় প্রফুল্ল দাসদা, শ্রদ্ধেয় রেবতী মোহন বিশ্বাসদা, শ্রদ্ধেয় মণিলাল চক্রবর্তীদা ইত্যাদি ঠাকুরের লীলাসঙ্গী তথা মহান ব্যক্তিসহ আরও অন্যান্যদের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সময় কাটিয়েছি। এদের কে কতটা নীচে নেবেছে আর নাবেনি তার মূল্যায়ন করার মানসিকতা কোনোদিন ছিল না কিন্তু কাদের কথা আপনি বলছেন যে তারা "কতটা নীচে নাবতে পারে তা কল্পনা করা যায় না"? ঠাকুরবাড়ির কোন সদস্য তিনি? নাম বলুন। শ্রীশ্রীবড়দা? কিন্তু শ্রীকুমারদা আমরা কোনোদিনই ঠাকুর পরিবারের কোনও সদস্যদের সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করাকে ব্রহ্মহত্যার মত পাপ ব'লে মনে করি। আর আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের আত্মজ ঠাকুরের প্রথম সন্তান অত্যন্ত আদরের বড়খোকা শ্রীশ্রীবড়দার পরিচালনায় এই অপসংস্কৃতির ধারক বাহক হবার শিক্ষায় শিক্ষিত হ'ইনি। আমরা যে শ্রদ্ধার চোখে শ্রীশ্রীবড়দাকে দেখি সেই একই চোখে ঠাকুরের সব সন্তানকেই দেখি। তাঁরা সবাই আমাদের চোখে প্রতীক গুরু বংশধর। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বার্থ ও শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠার, শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন প্রতিষ্ঠার কীলক নয়; কীলক হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম সন্তান আদরের বড়খোকা বিশ্বের সমস্ত সৎসঙ্গীর বড়ভাই পরম ভক্ত ঠাকুরের এ যুগের হনূমান, বিবেকানন্দ, অর্জুনরুপী পরম পূজ্যপাদ আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা।
(লেখা ২৮শে সেপ্টেম্বর'২০১৭)

Sunday, November 5, 2023

প্রবন্ধঃ বড়লোক বা কোটিপতি হওয়ার সহজ উপায়।

'চাপ বাড়ছে কেষ্টর'
শিরোনামে tv9bangla টিভির প্রতিবেদন।
"গত ৯ বছরে লাফিয়ে বেড়েছে কেষ্টর পরিবারের আয়। ২০১৩ সালে কেষ্টর বার্ষিক আয় ছিল ৫ লক্ষ। আর ২০২২ সালে অনুব্রতর বার্ষিক আয় ১ কোটিরও বেশি। আয়করের নথিতে রোজগার বেড়ে ২০ গুণ, তাজ্জব সিবিআই কর্তারা।"
জেলের দেওয়ালে দেওয়ালে কান পাতলে শোনা যাবে কান্না ভেজা গলায় এদের স্বগোক্তিঃ 'তুমি মহারাজ সাধু হ'লে আজ আমি আজ চোর বটে।'
এছাড়া আরও প্রবাদ আছেঃ চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা।
তাহ'লে এত কথা উঠছে কেন? ধরা পড়েছে বলে? ধরা পড়েছে তো কি হয়েছে? আবার ছাড়া পেয়ে যাবে সময় হ'লেই। এটুকু কষ্ট করায় যায়। একটু কষ্ট তো করতেই হবে দাদা। আর চুরি করেছে? বেশ করেছে। চোরের দেশে চুরি করা অন্যায় কোথায়? প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত যার যখন ক্ষমতা ছিল বা আছে তখন সে চুরি করেছে ও করছে। আগামীতে তুমি অঞ্চল থেকে জেলা, জেলা থেকে রাজ্য, রাজ্য থেকে দেশ পর্যন্ত ক্ষমতাশীল পার্টির কিম্বা পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যালিটি, বিধানসভা বা লোকসভা যে কোনও একটার ক্ষমতা দখল করো, তারপর কমিশনার, পঞ্চায়েত প্রধান, চেয়ারম্যান, এম এল এ, এম পি, মন্ত্রী হ'য়ে যাও। ব্যাস! পাঁচ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত হ'য়ে সারা জীবনের ধন কামিয়ে নাও। মাত্র পাঁচটা বছর হ'লেই হ'লো। কাফি। পরের বারের জন্য আর লোভ ক'রো না। পরের পাঁচ বছরের জন্য অন্য আর একজন গরীব আসুক। অন্য আর একজন ক্ষমতাসীন পার্টির সভাপতি, জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাক। গরীবি হঠাও স্লোগান রাতারাতি সফল হবে। খুব কম সময়ে দেশজুড়ে একসঙ্গে অনেক গরীবের বড়লোক হবার সবচেয়ে সহজ কর্ম, ব্যবসা আর কিছুই নেই। মাত্র পাঁচ বছরে কোটিপতি হবার সবচেয়ে সহজ অর্থনীতি। পাঁচ বছর অন্তর অন্তর সে যে দলই সরকারে ক্ষমতায় থাকুক সেই দলের নোতুনরা যদি সুযোগ পায় এলাকা এলাকায় পার্টি সংগঠনের দায়িত্বশীল গুরুত্বপূর্ণ পদে কিম্বা পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যাল স্তর থেকে বিধানসভা, লোকসভা ও রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করার, সরকারে মন্ত্রী হবার তাহ'লে হিসাব ক'রে দেখা যেতে পারে পাঁচ বছরে ভারতবর্ষে কতজন কোটিপতি হচ্ছে। দেশজুড়ে পঞ্চায়েতে কটা সিট, মিউনিসিপ্যালিটিতে কটা সিট, রাজ্যে বিধানসভা, লোকসভায় কটা সিট হিসাব করলেই বেরিয়ে যাবে পাঁচ বছরে কোটিপতির সংখ্যা। উন্নতি আর দুর্নীতি হাত ধরাধরি ক'রে পায়ে পা মিলিয়ে "কদম কদম বাড়ায়ে যা, খুশীতে গীত গায়ে যা" গাইতে গাইতে এগিয়ে যাবে হাত ধরাধরি ক'রে পাঁচটা বছর। ব্যাস। কেল্লা ফতে। সারা জীবনের জন্য নিশ্চিন্ত। কোটিপতি হবার এমন সুন্দর ফর্মুলা আর নেই। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো, অর্থনীতিবিদেরা দেশের স্বার্থে ভেবে দেখতে পারে।
তবে একটা শর্ত থাকবে। পাঁচ বছরের বেশী যেন কেউ না থাকে। অন্যকে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ ক'রে দিতে হবে। মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকতে হবে দলের মধ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বার্থে।। নতুবা অহেতুক সবার পক্ষে অমঙ্গল।
তবে বাঁ হাতি রোজগারে লালিতপালিত জীবন শেষের সেদিনের জন্য কিন্তু ভয়ঙ্কর; এটা মাথায় রাখতে হবে। কোটিপতি হওয়ার জন্যে এটুকু শিরোধার্য কি বলেন রাজনীতিবিদরা?-----প্রবি।
(লেখা ৫ই নভেম্বর'২০২২)