প্রতিদিনের মতো সেদিনও রাতে লেখালেখির কাজে ব্যস্ত ছিলেন অবিনাশবাবু। এমনিতেই রাত ক'রে ঘুমান তিনি। বৌ, ছেলেমেয়ে অনেকবার বলেছে রাত না জাগতে। আজও তাঁকে সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিল বউ। ছেলেমেয়ে একসঙ্গে ব'লে উঠলো, বাবা! বয়স হয়েছে, এখন একটু বয়সের সঙ্গে মানানসই ক'রে চলা উচিত। অবিনাশবাবু হাসতে হাসতে বৌ, ছেলেমেয়েকে বললেন, এই শরীর দয়ালের শরীর। দয়াল হলেন আমার বিষ্ণু। আর বিষ্ণুদূতেরা ঘিরে রেখেছে এই শরীর। যতদিন না আমার দয়ালের কাজ শেষ হচ্ছে ততদিন এই শরীর নিরাপদ। যমদূতেরা এ শরীর ছুঁতে পারবে না। আর তারপরেই মেয়েকে ডেকে বললেন, শোন একটা নোতুন গান লিখেছি তুই গাইবি। যদিও এখনো লেখা ফাইনাল হয়নি; তবুও শোন। ছেলেমেয়ে, বৌমা এসে বসলো পাশে। রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয় গানের সুরে তিনি গান লিখেছেন। অবিনাশবাবু গাইছেন,
প্রাণে প্রাণে ভরে আছে প্রাণ সখা প্রেমময়
(তাঁর) প্রেমের দোলায় চড়ে এই জীবন বয়
প্রাণপাখি প্রাণে প্রাণে রাধা রাধা রাধা গায়
কে জানে প্রাণপাখি রাধাস্বামী কেন গায়?
প্রাণে প্রাণে ভরে আছে প্রাণ সখা প্রেমময়
(তাঁর) প্রেমের দোলায় চড়ে এই জীবন বয়
প্রাণপাখি প্রাণে প্রাণে রাধা রাধা রাধা গায়
সে জানে প্রাণপাখি রাধাস্বামী কেন গায়!
মেয়ে কয়েকবার রবীন্দ্রনাথের গানটা মোবাইলে শুনে তুলে ফেললো। তারপর সেখানে অবিনাশবাবুর লেখা কথাগুলি বসিয়ে কয়েকবার প্র্যাকটিস ক'রে ফাইনালি বাবাকে শুনিয়ে দিয়ে বললো, ঠিক আছে? অবিনাশবাবু খুশীতে একেবারে ডগমগ হ'য়ে উঠে বললো, আয়, শেষ একবার সবাই মিলে গায়। এই ব'লে তিনি ছেলেমেয়ে, বৌমা, বৌ সবার হাতে একটা ক'রে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো, এবার সবাই একসঙ্গে গাও। সবাই মিলে একসঙ্গে দু'বার গানটা গাইলো। তারপর অবিনাশবাবু বললেন, যাও এবার সবার ছুট্টি। আর সেই মুহুর্তেই অবিনাশবাবুর ফোনটা বেজে উঠলো। টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে দেখলো ফোনে নাম লেখা রয়েছে ঋতম। একটুখানি ভাবলো অবিনাশবাবু। তারপর ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো রাত সাড়ে এগারোটা। ফোনটা তখনো বেজে চলেছে। তারপর ফোনটা কানে নিয়ে বললো, হ্যালো। ও প্রান্ত থেকে আওয়াজ ভেসে এলো, অবিনাশদা আমি ঋতম বলছি। এত রাতে ফোন করার জন্য দুঃখিত; কিছু মনে করবেন না। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনি কেমন আছেন?
(লেখা ৫ই নভেম্বর'২০২২)
No comments:
Post a Comment