Powered By Blogger

Thursday, November 9, 2023

চিঠিঃ বাগ্মীপ্রবর শ্রদ্ধেয় প্রলয় মজুমদারদাকে খোলা চিঠি। (৪)

হে বাগ্মীপ্রবর,
আবার আপনাকে চিঠি লিখছি। এবার ৪ নম্বর। এর আগে আপনাকে (১-৩) চিঠি লিখেছি। আপনার পুরো ভিডিও অনেক বড়। তাই একটা চিঠিতে আপনাকে উত্তর লেখা সম্ভব নয়। তাই ভাগ ভাগ ক'রে পোষ্ট করছি।
আপনি প্রকাশ্যে ভিডিওর মাধ্যমে প্রধান-অপ্রধান, আচার্য প্রথা, আচার্য পরম্পরা, আচার্য-বিচার্য নিয়ে আকর্ষণীয় শব্দের জাল বিছিয়ে এত চুলচেরা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেছেন যে আপনার বাকচাতুর্যে মুগ্ধ হ'তে হয়।
কি বললেন আপনি?
আপনি বললেন, "শ্রীশ্রীঠাকুরের বাস্তব শরীর, পার্থিব জীবন যখন প্রাকৃতিক নিয়মে অপ্রত্যক্ষে চলে গেল, অপ্রকট হ'য়ে গেল তখন আপনি অবাক বিস্ময়ে ঠাকুরের দানসাগর পারলৌকিক মঞ্চে শুনলেন সৎসঙ্গের সেক্রেটারী জ্ঞানেন্দু বিকাশ গোস্বামীদা ঘোষণা করলেন, 'এখন থেকে প্রধান আচার্যদেব হলেন পূজ্যপাদ বড়দা।' এই কথা শুনে আপনি প্রথমে 'প্রধান' শব্দে মনে মনে ভাবলেন, ঠাকুর কি তাহ'লে অপ্রধান হ'য়ে গেলেন? তিনি তো আমাদের জীবনের এক ও অদ্বিতীয় অনুপম প্রধান অস্তিত্বের ব্যক্তিত্ব। তাহ'লে ঠাকুর কি এখন অপ্রধান হ'য়ে গেলেন?

তারপরে 'আচার্য' শব্দে ঈশ্বরকোটি পুরুষের মতো অবাক হ'য়ে আকাশ থেকে পড়লেন আর মনে মনে ভাবলেন, পূজ্যপাদ বড়দা আচার্য হ'লেন? তারপরে মহান সাধকের মতো বললেন, 'তাহ'লে ঠাকুরের তো আরও নাতি ছিল, আরও সন্তান ছিল। তাহ'লে পূজ্যপাদ বড়দা যদি একমাত্র প্রধান আচার্য হন তাহ'লে ঠাকুর যেমন একদিকে অপ্রধান ব'লে বিবেচিত হচ্ছেন তেমনি আর একদিকে ঠাকুরের আর যে দুই সন্তান তাহ'লে কি তাঁরা 'বিচার্য ব্যবস্থা'র জিজ্ঞাসার মধ্যে এসে গেল!? তাহ'লে একজন হ'লেন আচার্য আর দু'জন হ'লেন বিচার্য!?"
এখন আমার প্রশ্ন আপনাকে।

১) আপনার কি ঠাকুরের দানসাগর পারলৌকিক মঞ্চে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রধান আচার্যদেব ঘোষণার সময়ই এই উপরিউক্ত কথাগুলি মনে হয়েছিল? নাকি পরে কারও কথায় প্রভাবিত হ'য়ে এই কথাগুলি এত বছর পর জীবনের শেষ সময়ে এসে সুগন্ধী মাখিয়ে প্রচার করলেন?

২) আপনি কি এই সমস্ত অবাক হওয়া প্রশ্নগুলি সেই সময় শ্রীশ্রীবড়দাকে করেছিলেন? করলে, শ্রীশ্রীবড়দা এর উত্তরে কি বলেছিলেন বললেন না কেন?

৩) আজ এত পান্ডিত্যপূর্ণ মিষ্টি কথার বাহার ছড়িয়ে কথার তোড়ে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রথমদিকে প্রশংসার মোড়কে মুড়ে পরে শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে সৎসঙ্গীদের মধ্যে কথার জাগলিং ক'রে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সৎসঙ্গ জগতকে ভাসিয়ে দেবার জন্য ময়দানে কোমর ক'ষে নেমে পড়েছেন? তখন কেন এইসমস্ত বিষয় সম্পর্কে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রশ্ন করলেন না? আর যদি প্রশ্ন ক'রে থাকেন তাহ'লে সে কথা কেন বললেন না এখানে? কেন বললেন না শ্রীশ্রীবড়দা আপনার জ্ঞানগর্ভ তাত্ত্বিক প্রশ্নের উত্তরে কি বলেছিলেন? আপনার বক্তব্যের শ্রোতারা তা জানতে পারতো। গোটা সৎসঙ্গ সমাজ জানতে পারতো।

৪) যখন এই ঘোষণা করা হয় তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের অন্য দুই সন্তান কোথায় ছিলেন? সেখানে উপস্থিত ছিলেন? উপস্থিত থাকলে তখন তাঁদের কি প্রতিক্রিয়া ছিল? আপনার মতো একই প্রতিক্রিয়া ছিল?

৫) যদি উপস্থিত না থাকেন পরবর্তীতেই বা তাঁদের কি প্রতিক্রিয়া ছিল?

৬) তখন তাঁরা তো শ্রীশ্রীবড়দার সঙ্গে একসঙ্গেই ছিলেন; তাই নয় কি? কেন ছিলেন? জ্ঞান গোস্বামীদার ঘোষণায় আপনি মহা পন্ডিতের মতো প্রধান-অপ্রধান, আচার্য-বিচার্য ইত্যাদি নানা প্রশ্নের গন্ধ খুঁজে পেলেন আর তাঁরা পাননি? তাহ'লে কেন তাঁরা সবাই একসঙ্গে ছিলেন? পরে শ্রীশ্রীবিবেকদাদা বেরিয়ে যান। কেন বেরিয়ে যান? কিন্তু শ্রীশ্রীকাজলদাদা তখনও সঙ্গে ছিলেন। কেন ছিলেন? পরে তিনিও বেরিয়ে যান। কেন বেরিয়ে যান? পরে বিবেকদাদা ও কাজলদাদা এক হন। কেন এক হন? আবার কিছুদিন পর বিচ্ছিন্ন হ'য়ে যান। কেন বিচ্ছিন্ন হন? এসবের যুক্তিপূর্ণ উত্তর দেবেন না? শ্রীশ্রীবড়দাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার জন্য আপনি আপনার সাধনা লব্ধ এত যুক্তি খুঁজে পান আর এইবেলায় আপনার উত্তর কি? আপনার সাধনা কি ভোঁতা হ'য়ে গেছে?

৭) তাঁরা কি আপনার মতো প্রকাশ্যে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন কখনো?

৮) সেই সময় কি শ্রীশ্রীঠাকুরের আর দুই সন্তান শ্রীশ্রীবিবেকদাদা ও শ্রীশ্রীকাজলদাদার মনে হয়েছিল যে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রধান আচার্য ঘোষণা করা হ'লে শ্রীশ্রীঠাকুর অপ্রধান হ'য়ে পড়ছেন আর তাঁরা দু'জনে বিচার্য ব্যবস্থার মধ্যে এসে পড়ছেন? এই আচার্য-বিচার্য, প্রধান-অপ্রধান তত্ত্ব কি তাঁদের বলা নাকি আপনার উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত?

৯) আপনাকে কি বর্তমানে জীবিত ঠাকুরের কনিষ্ঠ সন্তান শ্রীশ্রীকাজলদাদা এইসব কথা ভিডিও ক'রে বলার জন্য বলেছেন? নাকি নিজের উদ্যোগে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাবার উদ্দেশ্যে এই বিভ্রান্তিকর বিচ্ছেদের বিষ বাস্প ছড়াতে এই বার্ধক্যে ময়দানে নেমেছেন ঠাকুরের ব'লে যাওয়া ছেদকের ভুমিকায় অবতীর্ন হ'য়ে?

১০) আপনি শ্রীশ্রীবড়দা প্রধান ও শ্রীশ্রীঠাকুর অপ্রধান এই অকারণ অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন তুলে এত বছর পরেও সাধারণ দীক্ষিতদের মধ্যে এবং অদীক্ষিতদের মধ্যে বিষ ঢেলে যাচ্ছেন। কেন?

১১) কেনই বা কি উদ্দেশ্যে এত বছর পর শেষ বয়সে এসে এখন ভিডিও ক'রে প্রচার করছেন সুকৌশলে ভিডিওর শুরু থেকে শ্রীশ্রীবড়দাকে প্রশংসা করার ছলে ভিডিওর শেষের দিকে এসে ঘৃণ্য সমালোচনার তীরে বিদ্ধ ক'রে?

১২) শ্রীশ্রীঠাকুরের অন্য দুই সন্তান কি আপনার অতিরিক্ত ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার মতন সৎসঙ্গ জগতের বিরাট সাধক হ'য়ে যাওয়া মনোভাবে বলা এই অহেতুক জোর ক'রে চুলকে ঘা করার মতন প্রধান-অপ্রধান ও আচার্য-বিচার্য ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রশ্ন সমর্থন করেন? তাঁরা নিজেরা কিছু কি এই বিষয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন? যদি দিয়ে থাকেন তাহ'লে তাঁরা কি বলেছিলেন সেটা বললেন না কেন? আর যদি দিয়ে না থাকেন তাহ'লে কি আপনার তাঁদের হ'য়ে এই অতি ভক্তি, অতি জ্ঞানের বিবৃতি 'মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি' হ'য়ে গেল না?

১৩) আপনি আপনার বক্তব্যে বড়দাকে পূজ্যপাদ বড়দা ব'লে সম্বোধন করলেন কিন্তু শ্রীশ্রীবড়দা বলতে আপনার শিক্ষা, রুচি, সাধনায় বাদ সাধল। আচ্ছা 'শ্রীশ্রী' কোথায় যোগ করা যায়? বড়দার নামের আগে 'শ্রীশ্রী' যোগ ক'রে শ্রীশ্রীবড়দা বলতে আপনার অ্যালার্জি? অথচ আপনি আপনার সমগ্র বক্তৃতায় শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে কত কত সুন্দর সুন্দর শব্দের সাহায্যে শ্রদ্ধা ভক্তির মালা গেঁথে নিজেকে উচ্চমার্গের সাধক প্রমাণ করার চেষ্টা ক'রে গেলেন নাকি? কি বলেন? ভুল বললাম?

১৪) শ্রীশ্রীবড়দা যখন ঠাকুরের দেহ রাখার পরে সৎসঙ্গের আচার্য হিসেবে অভিষিক্ত হচ্ছেন তখন অহেতুক ঠাকুরের অন্যান্য আরও নাতির প্রশ্ন আসলো কেন? কেন তুললেন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন? কেন ঠাকুরের নাতিদের টেনে আনলেন? তখন নাতিদের কি ভূমিকা ছিল? গুলিয়ে ফেলেছেন বক্তব্য রাখার সময় আর শ্রীশ্রীবড়দার আচার্য হওয়ার সময়ের ব্যবধান?

তাই মনের কোণে চাপা পড়ে থাকা বহুদিনের ক্ষোভ গ্যাঁজলা ভিডিও করার সময় উঠে এসেছে কথার মোলায়মের রসে মেখে এবং নাতি সম্পর্কে তিক্ত মনোভাব পরিবেশন হ'য়ে গেছে! ভাবছেন আপনি বাগ্মীপ্রবরের ট্যাগ পাওয়া বক্তা আপনার অপূর্ব ভাষাদ্বারা সমৃদ্ধ বাছা বাছা শব্দ চয়ন ক'রে একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বলা বক্তৃতায় আপামর সৎসঙ্গী আপ্লূত হ'য়ে আপনাকে ধন্য ধন্য ক'রে উঠবে। আপনি বোধহয় শ্রীশ্রীদাদার কবিতা 'শেষের সেদিন' পড়েননি। যদি না পড়ে থাকেন তবে একবার পড়ুন আর যদি পড়ে থাকেন স্মরণ করুন কবিতার লাইনগুলি একবার, বিশেষ ক'রে "কথার তোড়ে মাতিয়ে সবে আত্মপ্রতিষ্টারই ঝোঁকে, মিষ্টি কথায় ভূলিয়ে ভাবিস অনন্তকাল রাখবি ধরে? বাহার দেখে ভুলবে বিধি, পারবে নাকো ধরতে ফাঁকি?"----ইত্যাদি লাইনগুলি। আর আয়নায় নিজের মুখ দেখুন, দেখুন সেদিনের শ্রীশ্রীবড়দার আপনার উদ্দেশ্যে বলা কথাগুলি "ইয়ং বয়সে ফাটিয়ে দেওয়া বক্তৃতা আর ঘরে লাইটের সুইচ না নিভিয়ে আসা, সময়ের আগে আসা ও শ্রীশ্রীবড়দার কথায় আবার নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরে যাওয়া আবার ঘড়ির সময় দেখতে দেখতে আসা ইত্যাদি নিখুঁত টাইমিং সম্পর্কে আপনাকে বলা শ্রীশ্রীবড়দার কথা" যেগুলির বর্ণনা আপনি এই ভিডিওতে দিয়েছেন।
যাই হ'ক যদি এসব প্রশ্নের উত্তর থাকে আপনার কাছে তাহ'লে একজন প্রবীণ সৎসঙ্গী হিসেবে আপনি একজন প্রবীণ সৎসঙ্গীর প্রশ্নের উত্তরগুলি আশা করি দেবেন। কারণ যেহেতু আপনি প্রকাশ্যে ভিডিওর মাধ্যমে কথাগুলি বলেছেন আমিও তাই ভিডিওর মাধ্যমে না দিয়ে চিঠির মাধ্যমে আপনাকে প্রশ্ন গুলি করলাম। পারলে পরে ভিডিওর মাধ্যমে প্রশ্নগুলি তুলে ধরবো। নমস্কার।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস,
উত্তরপাড়া, হুগলী।
#প্রবিরচিঠি
(লেখা ১৮ই আগষ্ট'২০২৩)

No comments:

Post a Comment