আপনি এও বললেন আপনার বক্তৃতায় যে একবার আপনি আপনার যৌবনে বড়দার আদেশে দীর্ঘ লম্বা চওড়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আর পরমূহুর্তে বড়দা আপনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন আপনি যে ঘরে থাকেন সেই ঘর দেখতে। বন্ধ ঘরের দরজা খুলতেই ঘরের সব ফ্যান লাইট জ্বলতে দেখে আপনি বলেছিলেন, আপনার বেরোবার সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তাড়াতাড়িতে নেভাতে ভুল হ'য়ে গিয়েছিল। উত্তরে বড়দা হেসে বলেছিলেন, আগে নিজেকে ঠিক কর। নিজেকে ঠিক করলে তখন সব আপসে আপ ঠিক হ;য়ে যায়। আগে নিজেকে ঠিক ক'রে চালা তাহ'লে তোর করা দিয়েই তাঁর প্রচার অটোমেটিক্যালি হ'তে থাকবে।
মনে প্রশ্ন এলো, তাই জিজ্ঞেস করছি, এই যে আপনি ভিডিও ক'রে সুকৌশলে আপনার কথা বলার দক্ষতা দিয়ে আপামর সৎসঙ্গীদের মগজ ধোলাই করার চেষ্টা করেছেন তা আপনি শ্রীশ্রীবড়দার কথা মতো নিজেকেও ঠিকমতো চালিয়েছেন তো যাতে আপনার করা দিয়ে ঠাকুরকে প্রচার করা হয়? এই ভিডিওতে আপনাকে দেখা ও আপনার ভাষণ শোনার মধ্যে দিয়ে হাজার হাজার লোক আপনাকে চিনলো। আপনি এই বক্তৃতা না দিলে আপনাকে আপনার করা দিয়ে ক'জন চিনতো? তাহ'লে শ্রীশ্রীবড়দা জানতেন অনেক আগেই যে আপনি করার স্রোতে ভাসা মানুষ নন, আপনি কথার স্রোতে ভাসা লোক, তাও আবার দূর্গন্ধ যুক্ত কথার স্রোত? নয় কি?
আপনি ঘড়ির টাইমের কথা বলেছেন। ঘড়ি আপনি ৫মিঃ ফাস্ট ক'রে রাখতেন। কারণ বড়দার সঙ্গে চলতে সুবিধা হবে ব'লে। তা সেই কথা শুনে বড়দা ঘড়ি ঠিক ক'রে রাখতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, ঘড়িতে কাঁটা এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু চরিত্র যেখানে দাঁড়িয়ে থাকার সেইখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তারপরে তিনি আপনাকে আপনার জায়গায় ফিরে যেতে ব'লে বলেছিলেন ঠিক ৩৯ মিনিট পরে তাঁর কাছে আসতে। আপনি ফিরে গিয়ে যখন ৩৯ মিনিট পরে কাঁটায় কাঁটায় বড়দার কাছে ফিরে এলেন তখন তিনি বলেছিলেন আপনি কি কাঁটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আসছিলেন? তাঁর উত্তরে আপনি হেসে বলেছিলেন, হ্যাঁ, আমি ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আসছিলাম। তখন তিনি আপনাকে বলেছিলেন, জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তে, প্রত্যেকটি সময় এরকম ইষ্টের দিকে তাকিয়ে চলতে হয়।
তা' আমার জিজ্ঞাস্য আপনাকে, যিনি আপনাকে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে নিখুঁত চলতে শিখিয়েছিলেন সেই মানুষটার সঙ্গে সঙ্গ করলে এককেন্দ্রিক থাকা থেকে সে বঞ্চিত হবে? তাঁর সঙ্গে থাকার কারণে মনের একাগ্রতা নষ্ট হ'য়ে মন হাইজ্যাক হ'য়ে যাবে? তাহ'লে কি ধ'রে নিতে অসুবিধা হয় যে শ্রীশ্রীবড়দা আপনার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত জানতেন ব'লেই আপনাকে সেই প্রথমেই চরিত্র ঠিক করার কথা বলেছিলেন? যা আজ প্রমাণিত।
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন বড়দা যে পশুপাখির ভাষা বুঝতে পারে সেই কথাও আপনি বলেছেন আপনার বক্তৃতায়। এবং তার প্রমাণ স্বরূপ সৎসঙ্গ চিড়িয়াখানার রাজহাঁসের বড়দাকে দেখলেই প্যাঁক প্যাঁক ক'রে ছুটে আসা এবং তার সঙ্গীহীন অবস্থার কথা বড়দাকে বলা বুঝতে পেরে তার জন্য বউ এনে দেবার কথা আপনি বলেছেন।
যে মানুষ পশুপাখি কি চায় বুঝতে পারে সেই মানুষ তাঁর এক ও একমাত্র আরাধ্য দেবতা একমেবাদ্বিতিয়ম সৃষ্টিকর্তা পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর কি চায় বুঝতে পারেন না? তিনি সৎসঙ্গীদের বহুনৈষ্ঠিক ক'রে তুলছেন? বহুনৈষ্ঠিকতার আবহে এনে ফেলছেন সৎসঙ্গীদের? আর সব সৎসঙ্গীরা বহুনৈষ্ঠিক হ'য়ে গেল? তাহ'লে কি এটা প্রমাণ হ'লো না আপনি প্রকৃতপক্ষে কি চান সেটাও শ্রীশ্রীবড়দা বুঝতে পারতেন? আজ শ্রীশ্রীবড়দার অবর্তমানে আপনি কি চান সেটাও আপনার বক্তৃতায় প্রমাণ হ'লো না?
আচ্ছা আপনি/আপনারা যাদের অর্থাৎ দেওঘরের মূল কেন্দ্রের শ্রীশ্রীআচার্যদেব পরিচালিত শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ''-কে বিকেন্দ্রিক বলেন সেই 'সৎসঙ্গ' এর বিরুদ্ধে অবস্থানরত যে সুকেন্দ্রিক সৎসঙ্গীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই তারা সবাই একেতেই অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুরে নিষ্ঠাবান তো? বহুনৈষ্ঠিক না তো? বুক ঠুকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেবেন তো আপনাদের সবাই একনৈষ্ঠিক? আপনাদের কারও ঘরে কোনও দেবদেবীর ছবি বা ফটো নেই তো? কেউ আপনারা শ্রীশ্রীঠাকুর ছাড়া আর কারও পূজা করেন না তো?
আপনি বললেন, আপনি দেখেছেন বহু লোক বড়দাকে এসে প্রণাম করেছেন, পূজ্যপাদ বড়দা ব'লে, আচার্যদেব ব'লে প্রশস্তি করেছে ও প্রচার করেছে। বড়দার কারও মাথায় হাত দেওয়া, বড়দার কাছে আশীর্বাদ ভিক্ষা চাওয়াকে আপনি গুরুত্ব দিতে চাননি। তা বড়দা কারও মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন নাকি? আর কেউ যদি বড়দার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে সেটাও বড়দার দোষ? এছাড়া বড়দা কারও মাথা স্পর্শ করলে তার কোনও ভাইব্রেশন নেই, নেই কোনও অ্যাকশান!? আপনার এগুলিকে প্রচার ব'লে কখনো মনে হয়নি। আপনার কখনো মনে হয়নি এগুলি বড়দার প্রতি ভালোবাসা। আপনি আরো অনেক কথা বললেন এর সঙ্গে। কিন্তু আপনি একবারও বললেন না শ্রীশ্রীবড়দা এইসমস্ত সম্বোধন সম্পর্কে কি বলেছেন। এ সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন সেটা আপনি জানতেন না নাকি এড়িয়ে গেলেন? তাঁকে আর কি নামে ডাকতো সেটাও ব'লে দিই আপনাকে। কেউ কেউ তাঁকে পিতৃদেব ব'লেও ডাকতেন। তা এই ডাকাডাকি নিয়ে অনেকের অনেক রকম গাত্রদাহও হ'তো। এখন বুঝতে পারছি আপনারও হ'তো। শুনেছি একবার শ্রদ্ধেয় রেবতীদা শ্রীশ্রীবড়দাকে বলেছিলেন, বড়দা, এই যে আপনাকে পিতৃদেব ব'লে ডাকে তা আগামী প্রজন্ম যদি বই পড়ার সময় দেখে, শ্রীশ্রীবড়মার ঘরে পিতৃদেব প্রবেশ করলেন। তখন পাঠক পিতৃদেব বলতে কি বুঝবে? আপনাকে নাকি শ্রীশ্রীঠাকুরকে? এই কথায় কি বোঝা যায়? শ্রদ্ধেয় রেবতীদারও কি গাত্রদাহ হ'তো চুপিসারে অন্তরে অন্তরে? তা শ্রীশ্রীবড়দা এই নানারকম সম্বোধন সম্পর্কে বলেছিলেন, তোরা আমাকে যে যে নামেই ডাক না কেন, বড়দা বলেই ডাক, আচার্য বলেই ডাক আর পিতৃদেব বলেই ডাক তা'তে আমার কিচ্ছু যায় আসে না, আমি জানি, আমি ঠাকুরের কুকুর। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী, "ঈশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় বাঁধা, ডাকলে তুমি কাছে আসো নইল্রে থাকো দূরেই খাড়া।" ঠাকুরের বাণী এভাবে কোনওদিন বাস্তবে মিলে যাবে তা আপনি ভেবেছিলেন? আপনি তো এককেন্দ্রিক। শ্রীশ্রীঠাকুর আপনাদের এক ও একমাত্র মুখ্য ও লক্ষ্য। তা আপনি বুক ঠুকে বাপের বেটার মতো মন মুখ এক ক'রে শ্রীশ্রীবড়দার মতো বলতে পারবেন, আপনি ঠাকুরের কুকুর? আজ পর্যন্ত আর কেউ করতে পেরেছে এমন অকপট স্বীকারোক্তি?
যাই হ'ক, আপনার বাগ্মীতায় প্রচুর মানুষের মনে আপনি জায়গা ক'রে নিয়েছেন কিন্তু ঠাকুরের মনে জায়গা করতে পেরেছেন তো? উপরে গিয়ে কৈফিয়ৎ দিতে পারবেন তো?
পরবর্তী চিঠিতে আপনার বক্তৃতার বাকী অংশ তুলে ধরবো।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস (প্রবি)
উত্তরপাড়া, হুগলি।
ক্রমশ।
#প্রবিরচিঠি
(লেখা ৬ই জুলাই'২০২৩)
No comments:
Post a Comment