পরে অবশ্য কি হ'লো তা আর জানা যায় না ঐ পোষ্ট থেকে।
সেই স্বপ্নে দেখা অপূর্ব সুদর্শন পুরুষ হ'লেন আমাদের কোটি কোটি প্রাণের ভালোবাসার মানুষ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা। যাকে দেখলে মনে হয় এতো সুন্দর কেউ হ'তে পারে? এত সহজ সরল আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কারও হ'তে পারে? যত দেখি তত মুগ্ধ হ'য়ে যায়। এই বয়সে চোখে জল এসে যায় যখন তাঁর সামনে বসি। কথা বলবো ব'লে যাই কিন্তু মুখের দিকে তাকিয়ে কথা হারিয়ে যায়। এমন নয়ন ভুলানো প্রাণ জুড়ানো অবয়ব!!!!!! তাঁকে সামনা সামনি যখনি দেখি তখনি খালি মনে হয় এমন মনে প্রাণে সুন্দর যেন হয় আমার সন্তান!!! যে দেখেছে সে জানে।
স্বপ্নে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ও ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের কোনও কোনও ভক্তপ্রাণ দেখতেই পারে। আর এ বিষয়ে অবিশ্বাসীরা তর্ক, ঝগড়াও করতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। আর অজ্ঞানতা থেকেই অবিশ্বাসের জন্ম। এই ঘটনাকে অলৌকিক ঘটনা বলা হ'য়ে থাকে। অলৌকিক ব'লে কিছুই নেই, সবই লৌকিক। যতক্ষণ না আমরা ঘটনার কার্যকারণ জানতে পারছি, বুঝতে পারছি ততক্ষণ তা অলৌকিক আর যে মুহূর্তে ঘটনার কারণ হস্তগত হয় তখনি তা হ'য়ে যায় লৌকিক। ঠাকুরের কাছে যা জেনেছি তাই বললাম। অলৌকিক সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর বলতেন,
"জগতে যা কিছু-ঘটে তারই কারণ আছে, আমরা যেখানে কারণটা ধরতে পারি না, সেখানে সেইটাকে বলি অলৌকিক।"
ইংরেজি ভাষার কবি, নাট্যকার ও সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের একটা লাইন শ্রীশ্রীঠাকুর প্রায়ই বলতেন, "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." যার অর্থ ছিল, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।
তবে ঠাকুর এও বলতেন, "অলৌকিকের ওপর দাঁড়ালে টান হয় না, আর টান না হ'লে মানুষের কোনও লাভ হয় না।"
যারা যে বিষয়ে, যার সঙ্গে যত বেশী ঘনিষ্ঠ, যাদের ভালোবাসা যত বেশী গভীর তারা স্বপ্নে সেই বিষয়কে, তাদের ভালোবাসার মানুষকে, প্রিয়জনকে স্বপ্নে দেখতেই পারে। এটাও একটা বিশেষ জ্ঞানের মধ্যে পড়ে যা আমার অজানা। কেউ কেউ একে ইলিউশানও ব'লে থাকে। আমরা যখন যে ভাবের মধ্যে দিয়ে যাই, একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় অবস্থান করি তখন সেই ভাব অনুযায়ী স্বপ্ন দেখা যায়। ঘুমের মধ্যে তা ভেসে ওঠে। আমাদের মাথার মধ্যে যে ধরণের চিন্তাভাবনা, ইচ্ছা তীব্রভাবে অহরহ খেলা করে, অবচেতন মনে যা সুপ্ত অবস্থায় থাকে তা হয়তো বা স্বপ্ন আকারে ভেসে ওঠে। এ নিয়ে বিশ্বাসী অবিশ্বাসীর মধ্যে তর্ক ঝগড়া বেঁধে যেতে পারে। স্বপ্নে শুধু অতীত, বর্তমান নয়, ভালো মন্দের ভবিষ্যতও ভেসে ওঠে। স্বপ্নে দেখা বিষয়ের সঙ্গে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত-এর হয়তো বা কোনও যোগসূত্র থাকতেও পারে। আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যের বাইরেও অনেক কিছু স্বপ্ন হ'য়ে আমাদের সামনে ঘুমের মধ্যে হাজির হয়। আমাদের ইন্দ্রিয় দুর্বল তাই আমারা দুর্বল ইন্দ্রিয় দিয়ে ইন্দ্রিয়ের উপরে অবস্থিত জিনিস দেখতে বা বুঝতে পারি না। আর আমি বুঝতে পারি না, দেখতে পারি না ব'লে যে তা যে সব বোগাস, বুজরুকি তা কিন্তু নয়। এই মাথা এক আজব মাথা। ঠাকুরের কথায় চিত্রগুপ্তের খাতা। চিত্রগুপ্ত মানে চিত্র মানে ছবি আর গুপ্ত মানে লুকোনো অবস্থায় যা আছে। অর্থাৎ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ অনন্ত জীবনের ইতিহাসের ছবিগুলি সব লুকিয়ে আছে আমার এই মস্তিষ্কের মধ্যে।
যাই হ'ক উপরিউক্ত বিষয়ে ঠাকুরের কাছ থেকে যা জেনেছি তাই চেষ্টা করলাম নিজের মতো ক'রে তুলে ধরতে। ভুল হ'তে পারে। নিজ গুণে ক্ষমা ক'রে দেবেন। এ বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ ন'ই। স্বপ্ন বিশেষজ্ঞেরা এই বিষয়ে বলতে পারবেন। কিন্তু আমার এই পোষ্টে আলোচনার বিষয় সম্পূর্ণ অন্য।
এবার বলি, ঐ যে বললাম স্বপ্নে দীক্ষা নেবার কথা বলছে শ্রীশ্রীঅবিনদাদা; এই ধরণের পোষ্টে হয়তো কতিপয় সৎসঙ্গী বিশ্বাসীর মন আশ্বস্ত হয়, ঠাকুরের প্রতি নির্ভরতা বাড়ে। হু হু ক'রে প্রচার ছড়িয়ে পড়ে। তার উপর আবার প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তা'তে হয়তো বা অবিশ্বাসীরও মনে দোলা লাগতে পারে।
কিন্তু আমরা প্রতি মুহূর্তে অবিশ্বাসের গোলামি ক'রে চলেছি। বিশেষ ক'রে আমরা যারা সৎসঙ্গী তাদেরই বিশ্বাস কম, নেই বললেই চলে। ঘরে ঘরে দুঃখ দুর্দশা তার প্রমাণ। আর আমরা তাবিজ, মাদুলি, তুকতাক, নানা দেবদেবী, অলৌকিক ঘটনা ইত্যাদিতে বিশ্বাসী। আমি অনেক সৎসঙ্গী দাদা ও মায়েদের মা কালীর কাছে ভক্তিভরে প্রার্থনা পূরণের জন্য জীব বলি দেবার মানত করতে ও ভক্তি গদগদ চিত্তে বলি দিতেও দেখেছি। আর প্রশ্ন করলে অশ্রদ্ধা, অসম্মান পেয়েছি। আর বেশী পেয়েছি ভক্তিমতি সৎসঙ্গী মায়েদের কাছে, কখনো কখনো উগ্রতার সঙ্গে। আর, 'যদি ভালো কিছু ফল পেতে চান এক্ষুনি মা কালীর ছবিতে লাইক দিন আর শেয়ার করুন কিম্বা এই পোষ্টকার্ড বা লিফলেট পাওয়ার সাথে সাথে পোষ্টকার্ডে বা লিফলেটে যা লেখা আছে তা লিখে বা ছাপিয়ে ১০০ জনের মধ্যে ছড়িয়ে দিন নতুবা বিপদ আসন্ন'----এই সমস্ত ধরণের ভয়জনিত ঈশ্বর ভক্তির প্রচারে আমরা সৎসঙ্গীরাই বিশ্বাসী; অদীক্ষিতদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।
আর যারা ঠাকুর বিরোধী ও ঠাকুর অবিশ্বাসী যারা তাদের কাছে এমন ঘটনা প্রচারসর্ব্বস্ব হাস্যকর গল্প ও খিল্লি মাত্র। যা অতিমাত্রায় ভীষণভাবে অহেতুক বিতর্কের, খিল্লির রসদ যোগায় ঠাকুর ও ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঠাকুর বিরোধীদের কাছে। নিজের জীবনের ওপর ঘটা অলৌকিক (?) বাস্তব ঘটনা যা পরীক্ষিত সত্য তা যতটা দৃঢ়তার সঙ্গে বলিষ্ঠ প্রভাব ফেলে ব্যক্তিজীবন ও সমাজ জীবনের ওপর তার কানাকড়িও প্রভাব ফেলে না অন্যের জীবনের অপরীক্ষিত শোনা গল্পে এবং তা পরিবেশনে। এমনই আমাদের বাস্তব, কঠিন, রূঢ়, তিক্ত, মিথ্যেতে ভরা চারপাশের পরিবেশ ও মানুষজন। তার ওপর স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের মতো স্বপ্নে পাওয়া দীক্ষার গল্প হ'লে তো অবিশ্বাসী বিরোধীদের কথায় নেই। রে রে ক'রে নেবে পড়বে ময়দানে। এমনিতেই পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত খিল্লির শিকার 'সৎসঙ্গ' বিরোধীদের কাছে। তাদের কাছে এইধরণের গল্প আজগুবি, গাঁজাখুরি গল্প; যা মেঘ না চাইতেই জল-এর মতো ব্যাপার। আর সুযোগ সন্ধানী যারা এগুলিকে নিয়ে দূর্বলদের ওপর ব্যবসা করার সুযোগ পায় তাদের কাছে এই গল্পগুলি মোক্ষম পাওনা। আর মনে রাখতে হবে আমাদের, এটা ঘোর কলির সময়। এটাই স্বাভাবিক। তাই প্রচার সম্পর্কে সাবধান হ'য়েই আমাদের প্রচার করতে হবে। যাতে প্রচারের ঠেলায় শিব গড়তে বাঁদর না গড়ে বসে। ঠাকুরের স্বপ্ন দেখা ও অলৌকিক ঘটনা প্রসংগে বলাগুলি মাথায় রেখে সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে যেন আমরা সৎসঙ্গীরা চলি। ঠাকুর সমস্ত কিছুকে বাস্তবে রূপ দিতে পছন্দ করতেন।
এ প্রসঙ্গে বলি, একবার ঠাকুরকে প্রফুল্লদা বলেছিলেন, "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের মৃত্যুর পর স্বামীজী তো তাঁকে বহুবার দেখেছেন।
তার উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, "স্বামিজী হয়তো দেখতে পারেন, কি আর একজন হয়তো দেখতে পারে---কিন্তু environment-এর (পরিবেশের) সকলে যদি স্বাভাবিকভাবে না দেখতে পারে---তাহ'লে কী হ'লো? আমার রকমটাই এইরকম যে concrete (বাস্তব) না হ'লে আমার কিচ্ছু ভাল লাগে না। যদি কোন instrument-এর মধ্যে দিয়ে কিংবা অন্য কোনভাবে environment-এর সকলে মিলে বোধ করতে না পারি---তাহ'লে খুশী হ'ই না। তাই, আমার কথাগুলির মধ্যে বোধহয় Philosophy, Art, Religion--সবকিছু Science-এ merge ক'রে গেছে।"
(১লা জানুয়ারী'২০৩২৩)
No comments:
Post a Comment