Powered By Blogger

Tuesday, November 7, 2023

প্রবন্ধঃকেউ কি শুনতে পাও?

আনন্দে আছো? সুখে আছো? বিন্দাস আছো? বাঃ! ভালো কথা। তাই-ই তো থাকতে চাই আমরা সবাই। তাই নয় কি? আনন্দে থাকো, সুখে থাকো, বিন্দাস থাকো কিন্তু দয়ালকে সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে থাকো। এই-ই তো প্রকৃষ্ট সময় তাঁকে সঙ্গে নিয়ে থাকার। আনন্দে, সুখে, বিন্দাসে থাকার সময়, পাখনা মেলে ওড়বার সময় দয়ালকে মনে প্রাণে জড়িয়ে নিয়ে থাকতে হয়, পাখনা মেলে উড়তে হয়। তা সে যত ওপরেই ওঠো না কেন ভয় নেই, নেই কোনও বিপদ। নতুবা তাঁকে ভুলে গিয়ে, তাঁকে ছেড়ে দিয়ে আনন্দে পাখনা মেলে উড়তে উড়তে কখন যে ঘুড়ির মত গোঁত্তা খেয়ে কোন মরা গাছের মগডালে লটকে যাবে, তার ঠিক কি? উড়তে উড়তে ঘুড়ির মত লটকে গিয়ে কঠিন সমস্যার মগডালে যে ঝুলবো না তার কোনও নিশ্চয়তা আছে কি!? তারপর ধীরে ধীরে জল ঝড় রৌদ্রে পুড়ে রঙ বিবর্ণ হ'য়ে, জলে ভিজে কাগজ ছিঁড়ে এদিক ওদিক টুকরো টুকরো হ'য়ে উড়ে গিয়ে অবশেষে শুধু কাঠির কঙ্কাল হ'য়ে পড়ে থাকার মত পড়ে থাকবো না তার আছে কোনও গ্যরান্টি? না নেই, থাকেও না। তখন শুধু জীবন জুড়ে নিরানন্দ, দুঃখ আর বিন্দাস না থাকার তীব্র যন্ত্রণাময় বেদনা আর বেদনা।


তাই বলি, আনন্দে থাকো, সুখে থাকো, বিন্দাস থাকো; যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় চেপে আনন্দের পাখনা মেলে উড়তে থাকো কিন্তু সঙ্গে শুধু বুড়ি ছুঁয়ে থাকো; গ্যারান্টি আউট হবে না। ছোটবেলায় বুড়ি ছোঁয়ার খেলা খেলেছি মনে আছে বন্ধু? যাকে বা যে জিনিসকে খেলায় বুড়ি করা হবে তাকে ছুঁয়ে দিলে আর খেলায় আউট হ'তাম না। সেই খেলা আজ জীবন জুড়ে হ'য়ে চলেছে বন্ধু! একজনকে জীবনের কেন্দ্রে বসিয়ে নাও আর তাঁকে ছুঁয়ে থেকে ছুটে বেড়াও যেদিক তোমার খুশী জীবনের বাঁচাবাড়ার স্বার্থে। দেখবে কোনও ভয় নেই, নেই কোনও অজানা অচেনা অদেখা আচমকা কোনও বিপদ, বিন্দুমাত্র বিপদের ঝুঁকি!

বন্ধু! এসো, রাখো হাতে হাত। আনন্দে, সুখে বিন্দাস হ'য়ে থাকো আর আমাদের ইচ্ছেটা আমাদেরই তাই আমাদের ইচ্ছের ডানা মেলে উড়বোই ব'লে বিন্দাস লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে নীল আকাশের বুকে উড়তেই পারো তা'তে কোনও বাধা নেই, নেই নিষেধ; শুধু যে নীল আকাশের বুকে উড়ে বেড়াতে চাইছো সেই নীল দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের যিনি স্রষ্টা সেই দয়ালকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে, ভালোবাসা-প্রেমের দড়িতে ক'ষে বেঁধে নিয়ে উড়তে থাকো। নতুবা এই ঘোর কলি যুগের ভয়ংকর বিষাক্ত রাবণের চপারের এক কোপে দুই ডানা কেটে জটায়ু হ'য়ে পড়ে থাকবে কোন অন্ধকার গলির কাঁটা ঝোপেঝাড়ে, নর্দমায় তার ইয়ত্তা নেই।
সাবধান! বন্ধু সাবধান!


বন্ধু! তুমি কি মনে করো তুমি ভালো আছো? তোমার চারপাশ, তোমার পারিপার্শ্বিক, তোমার সমাজ, সমাজের ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা তোমাকে বিন্দাস থাকতে দেয়? তোমার আর্থিক নিরাপত্তা কি বিন্দাস? আর যদি হয়ও তা কি চিরকালীন? আর যাদের নেই? যারা কষ্টে আছে তাদের জন্য কোনও কিছুই কি করার নেই? অন্তত সমবেদনা!? তাও নেই? থাকতে নেই? আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা!? এমন মানসিকতা!?


যাই হ'ক আমার প্রিয়জন, শোনো ঐ গানঃ
"যো সুখ মে সুমিরণ করে দুঃখ কাহে কো হোই।"
যখন খুব সুখে আছো, আনন্দে আছো, বিন্দাস আছো তখন স্বাভাবিকভাবেই যে যে দয়ালের যে রূপকে তা রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধ'রে আছো তাঁকে তখন ভুলে যাও। আর সেই ভুলে যাওয়ার সুযোগে লখীন্দরের বাসর ঘরের সরু চুলের ছিদ্রের মত সরু ভুলের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে পড়ে সর্বনাশা শয়তান কালনাগিনী! আর নিমেষের সুযোগেই বিষাক্ত এক ছোবলেই হ'য়ে যায় সব শেষ।

তাই বন্ধু! তা সে যত পার্থিব আনন্দের সাগরেই ডুবে থাকো না কেন সে আনন্দ প্রকৃত আনন্দ নয়। আমি এবং আমি যাকে নিয়ে, যা নিয়ে, যেখানে আনন্দ করছি সেই আমি, সেই আমার সঙ্গে থাকা আরও আমি ও আশপাশের জিনিসপত্র এবং সেই আনন্দের স্থান সব সেই সবেরই যিনি সৃষ্টিকর্তা তাঁকে নিয়ে আনন্দ করি না কেন!? কেন আনন্দের বন্যায় তাঁকে ভুলে যায়!? কেন আনন্দের ঠ্যালায় তাঁকে ভুলে গিয়ে শয়তান কালনাগিনীকে সুযোগ ক'রে দিই বিষাক্ত ছোবল মারার!? তাঁকে সঙ্গে নিয়ে, মাথায়-বুকে জড়িয়ে নিয়ে কেন "যো সুখ মে সুমিরণ করে দুঃখ কাহে কো হোই" গান গাইতে গাইতে ভেসে যাই না!? কোনও আপত্তি আছে কি? দয়াল কি কোনও নির্মল আনন্দ করতে, ফুর্তি করতে বারণ করেছেন? করেননি। তিনি কি বলেছেন, সংসার, ঘর, বাড়ি, বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব সব ছেড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গলায় হাতে লাল নীল সুতো বেঁধে ও মালা ঝুলিয়ে রঙ্গিন সাজে সেজে সাজা ভক্ত হ'য়ে ধূপ ধুনো দিয়ে কাঁসা ঘন্টা বাজিয়ে চন্দনে লেপ্টে কোমর নাচিয়ে মাথা দুলিয়ে আসুরিক চিৎকারে ভুল মন্ত্রোচারণে শুধু আমায় নিয়ে থাক!? বলেছেন? বলেননি। তাই তো? শুধু বলেছেন, তোরা ঘরে-বাইরে আনন্দ করছিস, করতে হিল্লিদিল্লী স্বর্গ-মর্ত-পাতাল কত জায়গায় যাচ্ছিস; তা আমায় নিয়ে যাবি না? আমায় ফেলে যাচ্ছিস? আমায় ফেলে যাবি? আমায় নিবি না? আমায় একলা ফেলে রেখে তোরা নিজেরা আনন্দ করবি? আমি একা একা ঘরের কোণে অন্ধকারে পড়ে থাকবো?


দয়ালের এই বুকভাঙ্গা আকুল কান্না কেউ কি শুনতে পাও আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা!? সত্যি ক'রে বুকে হাত রেখে বিবেকের আয়নায় মুখ রেখে বলো তো সত্যি সত্যি-ই কেউ কি শুনতে পাও!?------প্রবি।
(লেখা ৭ই নভেম্বর'২০২১)

No comments:

Post a Comment