Powered By Blogger

Wednesday, March 30, 2022

উপলব্ধি ৩১ঃ আনন্দের ফেরিওয়ালা!

সকালবেলায় বেরিয়েছিলাম সাংসারিক কয়েকটি কাজে। গত কয়েকদিন রামনবমী উপলক্ষ্যে আয়োজিত 'বিশেষ সৎসঙ্গ' এর জন্য মানসিক ও শারীরিক ব্যস্ততার চাপ জীবনকে অন্তর্মুখী ক'রে রেখেছিল। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানারকম অবাঞ্ছিত বাধাবিঘ্ন কাটিয়ে যখন অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে শেষ হ'ল ও অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সফল হ'ল তখন অনাবিল এক আনন্দে ভেসে যেতে চাইলো মন। ভাবলাম, যাক সারা রাজ্য তথা দেশ জুড়ে পরমপ্রেমময় পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের জন্মদিন নিয়ে শুভ রামনবমীতে অবাঞ্ছিত উন্মাদনার মাঝে প্রকৃতির রোষ নিয়ে যে পবিত্র দিনটা শেষ হ'লো সেই দিনটার সাক্ষী হ'য়ে রইলাম আমি ও আমার গুরুভাইবোনেরা মর্যাদা পুরুষ পরমপ্রেমময় পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের নতুন রূপ পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'মাতৃসম্মেলনসহ বিশেষ সৎসঙ্গ' আয়োজনের মধ্যে দিয়ে। হঠাৎ ওঠা কালবৈশাখীর দমকা হাওয়ার সাথে প্রবল ঝড়বৃষ্টিকে মোকাবিলা ক'রে তুমুল "রঘুপতি রাঘব রাজা রাম আর অনুকূল নামের জোয়ার এলো ভাসিয়ে দে না তরী" গানে ভেসে গেল চারপাশ। ভরপুর হ'য়ে গেল শরীর-মন-আত্মা!!!!! কিন্তু এত আনন্দ ফেরির মাঝেও যেন মনে হচ্ছে একটা ছন্দপতনের সুক্ষ্ম আওয়াজ ভেসে আসছে কানে! মনে হচ্ছে কোথায় যেন কেটে গেছে সুর, তাল, লয়!! কোথায় যেন একটা বড় ফাঁক সৃষ্টি হ'য়ে গেছে!!! কারা যেন বিষাদের কালো ছায়ায় ঢেকে দিতে চাইছে আনন্দের আকাশ!!!! কেন এমন হ'লো!? এ কিসের লক্ষণ!! কিসের ইঙ্গিত!!! যাই হ'ক, তবুও মনটাকে চাপমুক্ত রাখতে একটু রিল্যাক্স মুডে বেরিয়েছিলাম বাইরে, সংগে অনেকগুলি সাংসারিক কাজ নিয়ে। কয়েকটা কাজ শেষ ক'রে যখন অন্য একটা কাজে অগ্রসর হয়েছি সেইসময় একজন পাড়ার পরিচিত ডেকে দাঁড় করালো আমায়। কুশল বিনিময়ের পর সে রামনবমীতে অনুষ্ঠিত সৎসঙ্গ সম্পর্কে কথা তুললো। কথাপ্রসঙ্গে সে জানালো তার দুঃখের কথা। কয়েক বছর হয়েছে অবসর নিয়েছে। অবসরের কয়েক বছর পর কিছুদিন আগেও হেঁটেচলে বেড়ানো মানুষটা হঠাৎ শয়তানের ছোবলে এখন স্বাভাবিক হাঁটাচলা হারিয়েছে। আগের মত আর দৌড়ঝাঁপ করতে পারে না, হাতে লাঠি নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটাচলা করতে হয়। আমার সাথে দেখা হ'লে একটু দাঁড়িয়ে কথা বলে। বুকের মধ্যে জমে থাকা কথা বেরিয়ে আসে অনর্গল। বুঝতে পারি চারপাশে প্রত্যেকেই বুকের মধ্যে একা একা বাস করে অনেক দুঃখ যন্ত্রণা নিয়ে; উপরে প্রকাশ পায় না, একান্তে বেরিয়ে আসে সেসব। যাক সেসব কথা, আমাকে সে যা জানালো তা'তে বুঝতে পারলাম আমাদের কোন সৎসঙ্গী গুরুভাই তার সংগে কোনও অন্যায্য আচরণ করেছে যার জন্য তার মনে হয়েছে আমাকে তা জানানো দরকার আর তাই সে জানিয়েছে। নানাকথায় বুঝতে পারলাম তার নিকট জনদের মধ্যে কেউ ঠাকুরের দীক্ষিত; সে এ কাজ করেছে অর্থাৎ তাকে খোঁড়া, ল্যাংড়া ইত্যাদি ব'লে খোঁটা দেয়, ব্যঙ্গ করে। ঈশ্বরের অভিশাপ ব'লে গায়ের ঝাল মেটায়। বলতে বলতে তার চোখে জল এলো। আমি চুপ ক'রে শুনছিলাম আর ভাবছিলাম এই মানুষটার আমার গুরুভাইয়ের ব্যবহারে ঠাকুরের কাছে আসার রাস্তা বোধহয় বন্ধ হ'য়ে গেল। এটাই স্বাভাবিক ও বাস্তব যে আমার মন্দ কাজের দায় আমার পিতার না হ'লেও আমার পিতাকে আমার জন্য অপমানিত হ'তে হয়, লাঞ্ছিত হ'তে হয়। শুনতে হয় অমুক বাবুর ছেলে বলে। আমি তাকে বললাম, একজন তোমাকে খারাপ কথা বললো, খারাপ ব্যবহার করলো সেটা তোমার মনে দাগ কেটে যায় আর আমি যে তোমায় ভালোবাসি সেটা তোমার মনে দাগ কাটে না কেন? দশজনের মধ্যে নয়জন তোমায় আঘাত দেবে একজন তোমায় এত ভালোবাসা দেবে যে ঘটি উপচে জল পড়ার মত ভালোবাসা উপচে পড়বে সেটা তোমার ক্লান্ত শরীর মনকে একেবারে ভিজিয়ে দেবে। সেটা ভেবে দ্যাখো না কেন? আর তোমায় কেউ আঘাত করুক সেই সুযোগও তুমি কাউকে দাও কেন? তোমার কোন ত্রুটির জন্য এমনটা হয় সেটা কখনো ভেবে দেখেছো কি? এছাড়া সৎসঙ্গী, গুরুভাই, ঠাকুরের দীক্ষিত বলেই কি সে মহান মানব হ'য়ে গেছে? দেবতা হ'য়ে গেছে? ঠাকুর বলেছেন, "স্কুলে গেলেই তা'কে ছাত্র বলে না আর, মন্ত্র নিলেই তা'কে শিষ্য বলে না, হৃদয়টি শিক্ষক বা গুরুর আদেশ পালনের জন্য সর্ব্বদা উন্মুক্ত রাখতে হয়। অন্তরে স্থির বিশ্বাস চাই। তিনি যা'ই ব'লে দেবেন তা'ই ক'রতে হবে, বিনা আপত্তিতে, বিনা ওজরে বরং পরম আনন্দে।" আমরা কি ঠাকুরের কথা কেউ মেনে চলি না চলার চেষ্টা করি? তাই, এদের কথা ভেবে সময় নষ্ট ক'রে, শরীর মনকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। Be practical. Be calm & quite. যে আমাকে ভাবে না তাকে নিয়ে দিনরাত ভেবে ভেবে কষ্ট পাওয়ার কোনও লাভ নাই। যে আমাকে নিয়ে ভাবে, আমার নিয়ে চিন্তা করে তাকে নিয়ে ভাবো, তার জন্য করো। এমন কেউ বান্ধব তোমার আছে কি, এমন কোনও বান্ধব সমাজে তুমি তৈরী করে রেখেছো কি যে তোমাকে নিয়ে ভাবার মত তার অমূল্য সময় নষ্ট করবে? যদি না থেকে তাহ'লে এসো ঈশ্বর আছেন একমাত্র যিনি আমি তাঁকে নিয়ে না ভাবলেও তিনি আমাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবেন, এসো তাঁর স্মরণাপন্ন হ'ই, তাঁকে ভাবি, তাঁকে ভালোবাসি; তাহ'লে তুমি ভালো থাকবে বাকি জীবন। এতসব কথা বলার পর তার মনটা একটু যেন শান্ত হ'ল। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। একগাল হাসি দেখে আমারও মনটা আনন্দে ভরে গেল। গায়ে হাত রেখে বললো, দ্যাখো, তোমার কাছে কথা ব'লে মনটা হালকা হলাম। এখন আর মনের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই, নেই কোনও কষ্ট। এখন আমার আনন্দ হচ্ছে। কত কিছু জানা গেল তোমার সংগে কথা বলে। এরকম যখন কথা বলছি তখন দেখলাম আমার থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে একজন আমাকে ডাকছে আর বলছে, দাদা, একটু ধরুন, একটু ধরুন। তাকিয়ে দেখলাম, দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে একজন অন্যজনকে দু'হাতে জড়িয়ে ধ'রে আছে আর লোকটা সমস্ত শরীর ছেড়ে দিয়েছে তার উপর। আশেপাশের সকলকে ডাকাডাকিতে অনেকে জড়ো হ'য়ে গেল। একজন মা জল নিয়ে এলেন; লোকটার চোখেমুখে ছিটিয়ে দেওয়া হ'লো। পাশের বাড়ি থেকে এক মা একটা পাখা নিয়ে এলেন, আমার হাতে দিয়ে বললেন একটু হাওয়া করতে। আমি হাওয়া করতে লাগলাম আর যে জল ছিটিয়ে দিচ্ছিল তাঁকে বললাম চোখমুখের সংগে ঘাড়ে ও কানে জল দিতে। ইতিমধ্যে যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে সেখানে পাশেই একজন ডাক্তারের বাড়ি সেইসময় তিনি বাইরে এসেছিলেন তিনি এগিয়ে এসে বললেন অসুস্থ মানুষটার জামাটা খুলে দিয়ে শুইয়ে দেবার জন্য। একজন অ্যাম্বুলেন্স আনার জন্য বললেন। এর মধ্যে লোকটা চোখ খুলে তাকালো, আমি হাওয়া করতে করতে বললাম কেমন লাগছে এখন? লোকটা ধীরে ধীরে বলল, এখন ভালো লাগছে। আমি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? লোকটা চোখ খুলে তাকাতেই ডাক্তারবাবু ফিরে গেলেন। ফিরে যেতে যেতে বললেন, কি ক'রে বলবো কি হয়েছে? কি অসুখ আছে ভিতরে তাতো জানি না। এই কথা ব'লে ডাক্তারবাবু ঘরে ঢুকে গেলেন। আমি তার ঘরে ঢুকে যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইলাম ভাবলাম...............!!! দূরে একটা রিক্সা দাঁড়িয়েছিল। বউয়ার রিক্সা। অদভুত নাম! অদভুত চেহারা! যেমন রোগা তেমন লম্বা। আর সবসময় খেয়ে থাকে। তবে, রিক্সা ঠিকঠাক চালায়। একটায় অসুবিধা শুধু, তা হ'লো ৫মিনিটের রাস্তা ২০মিনিট লাগিয়ে দেয়। এই অসুস্থ লোককে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই লোকই শ্রেয়। রিক্সা আসার পর অসুস্থ মানুষটিকে রিক্সায় তুলে দিয়ে হাসতে হাসতে বললাম, কি হ'লো হঠাৎ? কিচ্ছু চিন্তা করবেন না, এরকম হ'তেই পারে। খালি পেট কিম্বা গ্যাসের জন্য হ'তে পারে। এ এমন কিছু না। আপনি ভালো হ'য়ে গ্যাছেন। হয়তো রোদে মাথা ঘুরে গ্যাছে। বাড়ি গিয়ে একটু খেয়ে শুয়ে থাকবেন। সঙ্গের লোকটিকে বললাম, ডাক্তার দেখিয়ে একটু প্রেসারটা চেক করিয়ে নেবেন। অসুস্থ লোকটি হেসে মাথা নাড়ালো। রিক্সা ধীরে ধীরে এগিয়ে চললো। লোকটির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম। যাক বিপদ মোটামুটি কেটে গেছে। মনে আনন্দ হ'লো যাক হাসি মুখে ফিরে যাচ্ছে লোকটি বাড়ি। পরে জানা গেল লোকটি বাড়ি থেকে সকালবেলা খালি পেটে বাইরে এই রোদের মধ্যে বেরিয়ে পড়েছিল আর তাইতে মাথা ঘুরে যায়। ফলে বিপদজনক ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু বেশী কিছু বাড়াবাড়ি হয়নি। যাই হ'ক বড় কিছু হওয়ার আগেই ঈশ্বরের কৃপায় লোকটি স্বাভাবিক চেতনায় ফিরে আসে ও বাড়ি ফিরে যায়। যাওয়ার আগে আমার দিকে চেয়ে একটা হালকা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে দিয়ে গেল। মনে বেশ আনন্দ হ'লো। নিজেকে হালকা বোধ হ'লো আমার। লোকটি চলে যাবার পর সবাই যে যার মত চলে গেলে আমিও আমার গন্তব্যের দিকে রওয়ানা দিলাম। মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো, কখন যে কার কি হয় কেউ জানে না!!!!!!!!
(৩১শে (মার্চ ২০১৮ লেখা) 

Monday, March 21, 2022

কেউ কি নেই?

কেউ কি ভালোবাসার কথা বলবে না!? 

কেউ কি প্রেমের বাতাস ছড়াবে না!?

কেউ কি নেই প্রেম ভালোবাসার জন্য জীবন বলি দেবে?

সবাই রেগে আছে! ঘরে বাইরে সবাই তপ্ত, উত্তপ্ত! 

সবাই ছড়াচ্ছে ক্ষোভের আগুন! 

সত্যি হ'ক আর মিথ্যা হ'ক, বানিয়ে বানিয়ে হ'ক আর ইতিহাস ঘেটে হ'ক 

সবাই আজ হিতাহিতজ্ঞানশূন্য!

ধর্ম, শিক্ষা, রাজনীতি 

সব নীতির আঙিনায় ধুন্ধুমার।

মিছিলে মিটিংয়ে মাইকে হুংকার, 

আলোচনার টেবিলে হুংকার, 

মিডিয়ায় হুংকার, কবিতায়, সাহিত্যে হুংকার! 

কলমের ডগায় আগুন, 

রঙ তুলিতে, সিনেমায় নাটকে গানে আগুন! 

শুধু বাদ প্রতিবাদে মার কাটারি আগুনে হুংকার! 

সত্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা, মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্য, 

সৎ-এর বিরুদ্ধে অসৎ আর অসৎ-এর বিরুদ্ধে সৎ, 

হিংসার বিরুদ্ধে অহিংসা, অহিংসার বিরুদ্ধে হিংসা 

সবাই আজ খড়্গহস্ত! 

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি! 

এলিট সমাজ হয় মুখে কুলুপ আটা ভীষ্ম 

নতুবা নিজ নিজ এজেণ্ডায় মুখর! 

বিদ্রোহ বিপ্লবের তুলছে তুফান। 

হে মানব! শান্ত হও। 

চিত্ত শান্ত স্নিগ্ধ রাখো উত্তাপের মাঝে। 

মিথ্যার বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসৎ-এর বিরুদ্ধে মুখর হও, 

জ্বালাও আগুন কিন্তু মনে রেখো 

সেই মুখরতায় যেন বিষাক্ত নিশ্বাস না ছড়িয়ে পড়ে,

নিয়ন্ত্রণহীন আগুনের ভয়াবহতায়

জ্বলে খাক না হ'য়ে যায় মনুষত্বের মূল বুনিয়াদ।

এসো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হও,

কঠোর কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলো,

কড়া হাতে দমন করো অন্যায়কে কিন্তু ন্যায়ের ওপর দাঁড়িয়ে,

হিংসাকে রুখে দাও পাথুরে মনোভাবে কিন্তু হিংসা দিয়ে নয়,

হিংসাকে হিংসা করো দয়ালের আহবানে

আর নিজের ওপরে হওয়া অন্যায়কে সহ্য করো।

কিন্তু রুখে দাও, দমন করো, নিকেশ ক'রে দাও

অন্যের ওপর হওয়া অন্যায়কে, নির্মম নিষ্ঠুরতাকে।

আর প্রেম ভালোবাসায় ভরিয়ে দাও বিশ্ব চরাচর।

শয়নে স্বপনে জাগরণে ধ্বনিত হ'ক

আর চরিত্রে গড়ে উঠুক 

প্রেমময় জীবন্ত ঈশ্বরের বাণীঃ

প্রেমকে প্রার্থনা করো আর হিংসাকে দূরে রাখো।--------প্রবি

Thursday, March 17, 2022

শয়তান আর ভগবান।

ঈশ্বর বিশ্বাসী ধার্মিকদের রাজনীতির লোকেরা দুর্বল ভাবে। ভাবে এরা ভাবপ্রবণ, আবেগ সর্বস্ব। ভাব আর আবেগকে এরা দুর্বলতা মনে করে। মনে করে এরা কোনো কাজের না। সমাজ বা রাষ্ট্র গঠনের কাজ রাজনীতি বা রাজনৈতিক নেতার। কিন্তু ভারতের প্রাচীন ইতিহাস তা বলে না। ধর্মের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতির উত্থান আর ঈশ্বর বিশ্বাসী ধার্মিক প্রকৃত রাজনৈতিক নেতা। রাজনীতির রাজনীতি ধর্মনীতি আর নেতার নেতা ধর্মনেতা। ধর্ম মানে স্বপারিপার্শ্বিক বাঁচা বাড়া। আর স্বপারিপার্শ্বিক বাঁচাবাড়ার নীতিই ধর্মনীতি। তাই ঈশ্বর বিশ্বাসী ধর্মীয় নেতাদের ভাবুক আবেগ সর্বস্ব দুর্বল ভাবা মূর্খতা। ভাব নেই, আবেগ নেই সেই নেতা সাক্ষাৎ শয়তান। ভাবুক আবেগ সর্বস্ব সক্রিয় মানুষ ভগবান। প্রবি।

Wednesday, March 16, 2022

উপলব্ধি ৩০ঃ সভ্যতা ও শোষিত মানুষের সংকট!

চতুর্দিকে শুনি শুধু সভ্যতার সংকট আর সভ্যতার সংকট আর শোষিত মানুষের মুক্তির শ্লোগান! সেই কবে থেকে শুনে আসছি যখন ছিলাম ছোট্ট তখন থেকে আজও এই জীবন সায়াহ্নে! প্রজন্মের পর প্রজন্ম এইভাবেই সেই যাবতীয় সংকট থেকে মুক্তির লড়াইয়ের "সেই ট্রাডিশান সমানে ব'য়ে চলেছে" আর চলেছে কলমের নীল মূত্রপাত! সভ্যতার সঙ্কট আর শোষিত মানুষের মুক্তি কে, কোন মহাত্মা চাননি? গোড়া কেটে আগায় জল দেবার মত যত মতবাদের আস্ফালন আর দিন শেষে মুখ থুবড়ে জটায়ুর মত ডানা কেটে পড়ে থাকা! এই তো আল্টিমেট প্রাপ্তি! তাই নয় কি? কেন এমন হয়? কেন রাবণেরা বারবার জটায়ুর ডানা কাটায় সফল হ’য়ে দিগ্বিজয়ের হুঙ্কার ছাড়ে!?

 সভ্যতার আর শোষিত মানুষের যে সংকট সেই সঙ্কটের কথা নানাভাবে নানা মতবাদে ব্যক্ত হয়েছে, হয়েছে বিশ্লেষণ দেশে বিদেশে নানা মুনির নানা মতে। কিন্তু গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না-র মত দেশী মুনির মতবাদ বা বিশ্লেষণের চেয়ে বিদেশী পণ্যের কদরের মত বিদেশী মতবাদে বা বিশ্লেষণে আকৃষ্ট হয়েছি, হ’য়ে চলেছি আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম। আর দেশী মতবাদকে নিজের মত ক’রে সাজিয়ে নিয়ে সেজেছি 'যেমন খুশী সাজো' প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মত আর মুক্তির মঞ্চে সংকট মোচনে ‘মুশকিল আসান করে ওগো......’ ব’লে গেয়েছি মুক্তির গান। সমাজ জীবনে দেখা গেছে ‘আপন বা ঘর চেয়ে পর ভালো’ তত্ত্বে ভরসা রাখতে অতি বিজ্ঞ মানুষজনকে। কিন্তু দিন শেষে সূর্য যখন ঢ’লে পড়ে পশ্চিমাকাশে তখন তাদের আবার মনে হয়েছে ‘পর চেয়ে ঘর ভালো’! মন বলে, ফিরে চলো মন সেই নিকেতন, যেথায় আছে বাঁধা শৈশব আর কৈশোরের হৃদস্পন্দন! ততদিনে সব শেষ! মাথার ওপর সংকট সূর্যের প্রখর তেজ জ্বালিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমাকাশে ঢ’লে পড়া বার্ধক্য। 

সে যাই হ’ক, যার যা লাগে ভালো। প্রত্যেকেই স্বাধীন, আমাদের ইচ্ছেটা আমাদেরই; গ্রহণ ও বর্জন একান্তই ব্যক্তিগত। কিন্তু প্রশ্ন জাগে মনে, সভ্যতার আর শোষিত মানুষের যে সংকট সেই সংকটের মুক্তির বাদ, বিশ্লেষণ আউড়ে যাই আমরা গরুর জাবড় কাটার মত যুগ যুগ ধ’রে কিন্তু একবার কেন ভেবে দেখি না এই রাবণদের হাত থেকে জটায়ুদের রক্ষা করার বা বাঁচাবার চিরন্তন উপায়টা কি? কেন রাবণরা বারবার ডানা ছাঁটার কাজে সফল হয়? কেন রাবণদের এত বাড়বাড়ন্ত? কেন রাবণরা আসমুদ্রহিমাচলব্যাপী সাম্রাজ্য বিস্তারে সিদ্ধহস্ত? কেন, কি জন্য, কি দোষে, কিসের ভুলে জটায়ুদের ডানা কাটা যায়, পড়ে থাকে মুখ থুবড়ে বনে-বাদাড়ে, পথেঘাটে বারবার? এর বিশ্লেষণ কি মহাত্মারা করেছেন? এই সংকট থেকে মুক্তির উপায়ের বাদ বা কোনও বিশ্লেষণ কি তাঁরা বলেছেন বা করেছেন নাকি পথ দেখিয়েছেন? 

উত্তর কি এখন!?

( লেখা ১৬ই মার্চ' ২০১৮ )

Sunday, March 13, 2022

এলিট সমাজের বৈশিষ্ট্য।

 ভাসা ভাসা ভাবে কোনোকিছু দেখা আমাদের তথাকথিত এলিট সমাজের বৈশিষ্ট্য। দিদি নং ওয়ানের সঞ্চালিকাও তাই করেছেন। এই ব্যাপারটাকে Superficial thoughts দিয়েই ব্যাখ্যা করেছেন। যা এলিট সমাজের কাছে স্বাভাবিক। চেতনার গভীরে যাবার সামাজিক প্রেক্ষাপট এতটাই ক্ষীণ হ'য়ে পড়েছে চতুর্দিকের চটজলদি পাওয়ার তাগিদে ভিড় করা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের ভিড়ে যে এই প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে অসাম্য বা অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাননি সঞ্চালক, প্রেমিক-প্রেমিকা তথা উপস্থিত দর্শকবৃন্দ। সঞ্চালিকা এর মধ্যে খাঁটি প্রেম দেখতে পেয়েছেন। দেখতে পাননি পুরুষটির মধ্যে খাঁটি প্রেমের অজুহাতে কাজ বাগাবার জন্য নিজের ধর্ম বা নিজের পিতৃদত্ত নাম পরিবর্তন করার মত ঘৃণ্য মানসিকতা, দেখতে পাননি কাজ বাগাবার পরে নিজের ভালোবাসার মানুষের সামনে প্রতারণার মুখোশ খুলে ফেলে নিজের ধর্মে বা নিজের পিতৃদত্ত নামে পুনরায় ফিরে আসার মত ব্যাক্তিত্বহীন, না মরদের পাতলা চরিত্র। দেখতে পাননি ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের ধর্মে, নিজের পিতৃদত্ত নামে থেকে যাবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার মত প্রেমিক পুরুষের মধ্যে উদারতার মানসিকতা। দেখতে পাননি বিয়ের পরেই বা বিয়ের আগেই বা প্রেম জমে যাবার পরেই বা সম্পর্ক স্থিত হবার পরেই নিজের ধর্মে বা নিজের সম্প্রদায়ে ভালোবাসার মানুষটিকে কনভার্ট করার মৌলবাদী মানসিকতা। দেখতে পাননি নাম পরিবর্তনের এফিডেবিটের পিছনে মূল কারণের ছবি।  

আর মেয়েটির মানসিকতার মধ্যে কি দেখলাম? পতিব্রতা হিন্দু নারীর মত স্বামীর সব চাহিদা মেনে নিয়ে, নিজেকে স্বামীর কাছে অর্পণ ক'রে প্রমাণ করলেন স্ত্রী হিসাবে তিনি তার পিতৃদত্ত 'অর্পিতা' নাম সার্থক করেছেন। প্রমাণ করলেন স্বামীর দোষত্রুটি, প্রতারণা, কপটতা দেখেও না দেখা আদর্শ স্ত্রীর পরিচয়। কিন্তু স্ত্রী হিসাবে প্রমাণ করতে পারেননি আদর্শ স্ত্রীর পরিচয় হ'ল স্বামীর মঙ্গলহেতু স্বামীর দোষ, ত্রুটি, ভুল, অন্যায় স্বামীর কাছে তুলে ধ'রে স্বামীকে মঙ্গলের পথে চালিত করা।  আর আদর্শ নারী হিসাবে সেই দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি স্বামীর কাছে, সেই শিক্ষা তুলে ধরতে পারেননি সমাজের কাছে যে ভালোবেসে বিয়ে করতে গিয়ে বা কারও স্ত্রী হওয়ার জন্য নিজের ধর্ম, নিজের সম্প্রদায়, নিজের সংস্কৃতি, নিজের পিতৃ পরিচয় ত্যাগ করার প্রয়োজন পড়ে না। আদর্শ স্ত্রী হওয়ার জন্য অন্য ধর্মে কনভার্টেড হ'য়ে নিজের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে হয় না। এই মেকী, মিথ্যে, কপট ভালোবাসা আর যাই হ'ক ভবিষ্যৎ সুস্থ মজবুত সম্পর্কের ভিত হ'তে পারে না। এতে মানুষ হিসাবে জীব জগতের মাঝে নিজের অস্তিত্বকেই টেনে নীচে নাবানো হয় যা কিনা নিজের কাছে নিজের অর্থাৎ মনুষত্বের চরম অপমান। দিদি নং ওয়ানের ঘটনাটির বিবরণ যদি সত্য হ'য়ে থাকে তাহ'লে উভয়ের প্রেম মানুষের কাছে, সমাজের কাছে দিশাহীন প্রেম হ'য়ে রইলো। উভয়ের প্রেম অমর হ'য়ে থাকতো যদি দুজনেই দুজনের ধর্ম, দুজনের সম্প্রদায়ের Identity বজায় রেখেই স্বামী-স্ত্রীর জীবনযাপন করার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতেন আর সেটাই হ'তো আদর্শ স্বামীস্ত্রীর, আদর্শ সম্প্রদায় নিরপেক্ষ সমাজ গঠনের জ্বলন্ত উদাহরণ। যাই হ'ক পরবর্তী সময়ে কেউ এই লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে আশা করি যদি কেউ ভিন্ন ধর্মে অর্থাৎ ভিন্ন সম্প্রদায়ে সংসার বাঁধে।

Friday, March 11, 2022

ঈশ্বর মানে?

 ঈশ্বর মানে ভালোবাসা। শত্রুমিত্র, ধনী গরীব, শিক্ষিত অশিক্ষিত এককথায় তাঁর সৃষ্ট মানুষ সহ সৃষ্টির সমস্ত কিছুকে ভালোবাসা।

 

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেন, ভালোবাসা মানে ভালোতে বাস করা অর্থাৎ ভালো মানে ঈশ্বর, ইশ্বরে বাস করা।

 

ভালোবাসা মানে ভালো বাসা। ঈশ্বরের শ্রীচরণ এক ও একমাত্র ভালো বাসা। সেই ভালো বাসাতে বাস করা। সেই বাসা অর্থাৎ তাঁর শ্রীচরণে বাস ক'রে তাঁর চলন আয়ত্ত করা, তাঁর চলন নিজের চলন ক'রে তোলা।--প্রবি।

Thursday, March 10, 2022

মার্কিন মহিলাকে ধর্ষণ।


২০১৫ ৯ই মার্চ এই লেখাটা লিখেছিলাম আর আজ ২০১৮ ৯ই মার্চ। এই তিন বছরে ছবিটা একটুও বদলায়নি। একই ঘটনা ঘটে চলেছে বছরের পর বছর শুধু তফাৎ সংখ্যার।  সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রতি ২২ মিনিটে একটি ক'রে রেপ হয় ভারতে। তাই এস ওয়াজেদ আলির বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করি আরও একবার, " সেই Tradition সমানে চলেছে।" হে ঈশ্বর! হে দেবাদিদেব মহাদেব! আরো একবার হ'ক দক্ষযজ্ঞ! আরও একবার হ'ক মহাপ্রলয়!

বৃন্দাবনের ধর্মীয় সংস্কৃতিতে মার্কিন মুলুক থেকে আসা বিদেশিনীর বয়ান  ও হাসপাতালের শারীরিক পরিক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী এটা জানা গেল যে মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু মথুরা পুলিশ এই ধর্ষণের ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে, পুলিশের মত দিয়েছে রায়। তাই বলে কি পুলিশকে দোষ দেওয়া বিদেশিনীর বা আমাদের শোভা পায়? কে কোথায় ধর্ষণ হ’ল, কোন নারী কোথায় তিনদিন বা আরো বেশিদিন নিখোঁজ হয়ে গেল, কার কোথায় শ্লীলতাহানি হ’ল, কোন নারীকে কোন রাবন তুকে নিয়ে গেল এইসব খবরে এখন আর চমক নেই ভারতে। বরং এগুলি না হওয়াটাই চমক! প্রশ্ন অন্য জায়গায়। এই যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম্মের বা ঈশ্বরের আঙিনায় প্রতিনিয়ত ঈশ্বর প্রেমে মগ্ন ও ধর্ম্মীয় ভাবাবেগে আপ্লুত নারী ভক্তদের ওপর ধর্ম্মীয় বা ঈশ্বরে বিশ্বাসী(!?) ব্যক্তিদের দ্বারা যে যৌন হেনস্থা হচ্ছে তার সমাধান কোথায়? মার্কিন মুলুক থেকে হরি নামরসে মাতোয়ারা হয়ে বৃন্দাবনের আঙিনায় ছুটে আসা বিদেশিনী কিম্বা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্ম্মীয় প্রতিষ্ঠানে শারীরিক মানসিক নানাবিধ জটিল সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাওয়ার জন্য ছুটে যাওয়া দেশিবিদেনীদের ওপর যে যৌন অত্যাচার হয়ে চলেছে তার জন্য কে বা কারা দায়ী? এর প্রতিকার-ই বা কোথায়? প্রতিদিন টিভির দৌলতে আজ আমরা দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা ঘটনা, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে জেনে যাই। কোনও ঘটনা-ই আজ আর আমাদের অজানা নয়। ভারতের বিভিন্ন ধর্ম্মীয় গুরু ও গুরুমাদের বা স্বঘোষিত ঈশ্বরদের দ্বারা ঘটিত নানা অধর্ম ও কুকর্মের সঙ্গে সঙ্গে নারী কেলেঙ্কারির বহু ঘটনাই টিভি, রেডিও, কাগজ ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। এইসব ঘটনা আমরা পুরুষরা যেমন জানি তেমনি নারীরাও জানে। তারপরেও নারীর ওপর বিরামহীন যৌন হেনস্থা হয়েই চলেছে! 


যাইহোক ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠানে বা ধর্মীয় গুরুদের দ্বারা সাধারণ ভক্ত বিশেষত নারীদের ওপর যে ধরণের লজ্জা ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটে চলেছে তাতে একটা কথা স্বভাবতই মনে আসে এই সমস্ত ভুক্তভোগী ভাঙাচোরা মানুষগুলির অতিরিক্ত সরলতা, আবেগ, বিশ্বাস, নির্ভরতা ইত্যাদি চারিত্রিক বিশেষত্ব এদের সর্ব্বনাশের মূল কারণ। এ প্রসঙ্গে The greatest phenomenon of the world Sri Sri Thakur Anukul Chandra-এর তাঁর ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলা কথাগুলি স্মরণীয়। 


একবার এক ভক্ত ঠাকুরকে দর্শন ও প্রণাম করতে এসেছিলেন। সেই ভক্ত সঙ্গে নিয়ে আসা ব্যাগ সুটকেস ইত্যাদি বাইরে রেখে এসে যখন ঠাকুরকে প্রণাম করছিলেন তখন ঠাকুর সেই ভক্ত কখন এসেছেন, কোথায় উঠেছেন, কিছু খেয়েছেন কিনা, বিশ্রাম করেছেন কিনা ইত্যাদি খোঁজ নিলেন। এর উত্তরে সেই ভক্ত মানুষটি জানালেন যে তিনি এইমাত্র এসেছেন এবং এসেই প্রথমে তিনি ঠাকুর দর্শন ও প্রণাম করতে এসেছেন। যখনই কেউ বাইরে থেকে ঠাকুর দর্শন ও প্রণাম করতে আসতেন তখনি ঠাকুর প্রথমেই তাকে তার থাকা, খাওয়া, বিশ্রাম করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন তারপর যখন তরতাজা হয়ে সামনে আসতেন তখন তার কোনও কথা বা সমস্যা থাকলে শুনতেন। ঠিক তেমনি ঐ আগুন্তুক ভক্তের ঐ কথা শুনে ঠাকুর তাকে প্রথমে ঘর ঠিক করে, স্নান করে, খাওয়া দাওয়া সেরে, বিশ্রাম করে তারপর তাঁর কাছে আসতে বললেন এবং সঙ্গে কোনও ব্যাগ সুটকেশ ইত্যাদি কিছু দেখতে না পেয়ে তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এর উত্তরে সেই ভক্ত মানুষটি জানালেন যে গেটের বাইরে ব্যাগ সুটকেশ রেখে তবেই তিনি দর্শন ও প্রণাম করতে এসেছেন। একথা শুনে ঠাকুর অত্যন্ত বিচলিত হ’য়ে পড়লেন এবং তাকে শিগিগিরি সেইস্থানে ফিরে যেতে বললেন এবং তার সামগ্রী যথাস্থানে রেখে তারপর স্নান, খাওয়া ও বিশ্রাম শেষে আসতে বললেন। এই কথা শুনে সেই ভক্ত ঠাকুরকে বলেছিলেন যে তিনি তো ঠাকুরবাড়িতে এসেছেন, তার প্রিয়পরমের কাছে এসেছেন তাহলে তার ভয় কোথায়? এর উত্তরে ঠাকুর যা বলেছিলেন তা’ বাণী আকারে পৃথিবী জুড়ে সমস্ত ধর্ম্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাসী সাধারণ সরল সিধেসাধা ভাঙাচোরা মানুষের কাছে চিরস্মরণীয়। পরমপ্রেমময় ঠাকুর চকিতে সোজা হ’য়ে বসে সেই ভক্ত মানুষটিকে সাবধান করে দিয়ে বললেন, 


“মন্দিরের আশেপাশে কুৎসিত লোকের আনাগোনা বেশী, সাবধান থেকো তা’ থেকে”।


আজ শুধু মনে হয় এই কথা যদি ঐ বিদেশিনী বা অন্যান্য লাঞ্ছিত, অপমানিত, উৎপীড়িত, প্রতারিত, ধর্ষিত মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া যেত তাহ’লে হয়তো বা তারা মানুষ, ধর্ন্ম, ঈশ্বর ও বাস্তব পরিস্থিতি-পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হ’ত এবং তথাকথিত ধর্ম্মীয় ও ঈশ্বরপ্রেমী ভন্ড কুৎসিত মানুষগুলোর হাত থেকে রক্ষা পেত।

নির্বাচন, ধর্ম ও ঈশ্বর পূজা।

নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই ধর্মপ্রাণ হ'য়ে পড়ছে সমস্ত দলের প্রার্থীরা। মন্দিরে মন্দিরে সেজে উঠছে বিগ্রহ! মন্দির-মসজিদ-গির্জা ইত্যাদি সব যেখানে যা আছে ছোটো বড় ঠাকুর দেবতার স্থান তা সে দালান হ'ক আর বটতলা হ'ক সেজে উঠছে! সেজে উঠছে নানা রঙে, নানা ঢঙে! বালাই ষাট! ভোট বড় বালাই! বড়ই দায়!


কাল যাচ্ছিলাম গঙ্গার ওপারে লঞ্চে ক'রে খড়দা যাবো ব'লে। একজন খিটকেল মার্কা আধা পরিচিত লোক আমাকে দেখে 'জয়গুরু' ব'লে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছি। আমি 'জয়গুরু' ব'লে আমার গন্তব্যস্থল বললাম। সে কথা শুনে সে বললো, 'সৎসঙ্গে'? আমি মৃদু হেসে ঘাড় নাড়লাম। তারপর একেবারে বিনয়ের সঙ্গে বললো, "দাদা, নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে তত মন্দিরে-মসজিদে-গির্জায় সমস্ত ধর্মস্থানে ঈশ্বরের কাছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের" এই পর্যন্ত ব'লে একটু থেমে গিয়ে হ্যা হ্যা ক'রে ইঙ্গিতপূর্ণ বাঁকা দৃষ্টিতে হেসে বললো, ------- আটকে যাচ্ছে! আমি শুনেও না শোনার ভান ক'রে একটু বিরক্ত হ'য়ে জোরে পা ফেলে এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। 

 

আজকাল বেশী কথা বলার ইচ্ছেটাই যেন হারিয়ে ফেলেছি। বিশেষ ক'রে 'জয়গুরু' শব্দটা শুনলে সেই লোকের সঙ্গে কথা বলার উৎসাহ উদ্দামতাটা যেন কেমন যেন স্তিমিত হ'য়ে যায়, ঝিমিয়ে যায়! বিশেষ ক'রে সেই সৎসঙ্গীদের মুখে 'জয়গুরু' শুনলে এমনটা হ'য়ে থাকে যাদের দেখে কবি সুকান্তর 'অবাক পৃথিবী' কবিতাটা মনে পড়ে। ভেসে ওঠে চোখের সামনে কবির এই কবিতা লেখার সময়ের মুখটা। বারো লাইনের একটা কবিতায় তৎকালীন মানুষ, মানুষের স্বভাব, সমাজ ও সভ্যতা দেখে তিনি নয় নয়বার অবাক শব্দটা লিখেছেন!  বর্তমান সৎসঙ্গীদের দেখে একই রকম অবস্থা আমারও। 'জয়গুরু'-র উত্তরে 'জয়গুরু' বলতে ইচ্ছে করে না। কখনও কখনও সৎসঙ্গীদের 'জয়গুরু'-র উত্তরে মুখ দিয়ে উৎসাহে-উদ্দীপনায় 'পরাজয়গুরু' শব্দটা বেরিয়ে আসে। 'পরাজয়গুরু' শুনে থতমত খেয়ে যায় সামনের জন! অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে। পরে  মাথা চুলকাতে চুলকাতে চ'লে যায় 'কি হ'লো ব্যাপারটা?' এইভেবে। এরকম ভাবতে ভাবতে কিম্বা মনে মনে একটা জম্পেশ খিস্তি দিয়ে চলে যায়। অনেকে আছে 'পরাজয়গুরু' শুনে 'ব্যাপারটা কি হ'লো? কথাটা কি বললো?' না বুঝেই নিজের ধান্দার উদ্দেশ্যে চলে যায়। আসলে এরা বুঝতে পারা, না পারা সব মানুষেরা ব্যস্ত নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তির প্রবল টানে। 


প্রশ্ন জাগতে পারে পাঠক মহলে বিশেষ ক'রে সৎসঙ্গী মহলে, এমন কেন হয়? ঐ খিটকেল মার্কা লোকটাকেই বা 'জয়গুরু' কেন বললাম?


প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারি, এমনটা হয় অর্থাৎ 'জয়গুরু'-র উত্তরে 'জয়গুরু' বলতে ইচ্ছে করে না তার কারণ এখন সব গুরুদের শিষ্যরাই পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে দেখা হ'লে জয়গুরু বলে এবং অন্য গুরুর পরিচিত শিষ্যদেরও জয়গুরু বলে। 'জয়গুরু' এখন আর সৎসঙ্গীদের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়। 'জয়গুরু' এখন ইউনিভারসাল ওয়ার্ড, আন্তর্জাতিক বা সার্বজনীন শব্দ। 'জয়গুরু' এখন পথ চলতি কথা। এছাড়া 'জয়গুরু' শব্দটা এখন একটা খিল্লি শব্দ হ'য়ে দাঁড়িয়েছে পথেঘাটে একশ্রেণীর ছেলেমেয়ের কাছে এবং টিভিতে অংশগ্রহণকারী 'বি' গ্রেড তথাকথিত সেলিব্রিটিদের কাছে। আর 'জয়গুরু'-র উত্তরে ভেসে আসে তাদের মুখে 'এনজয় গুরু'। আর উৎসাহের সঙ্গে এই 'জয়গুরু' বা 'এনজয় গুরু' বলার ধরণ, তার মুখভঙ্গী, শরীরের ভাষা আজও কানে বাজে, চোখে ভেসে আসে। বিশেষ ক'রে যখন কেউ 'জয়গুরু' বলে।


আর সৎসঙ্গীদের মধ্যে যখন কেউ 'জয়গুরু' বলে তখন তাদের (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে বেশীরভাগ) প্রতিদিনকার ঠাকুরকে নিয়ে যে জীবন চলনা, যে কপট ভক্তি, কেন্দ্রে কেন্দ্রে যে দুরারোগ্য 'আমি প্রধান, আমি প্রধান' ব্যাধি, যে আচার্য না মানার প্রবণতা কিম্বা লোকদেখানো আচার্য মানার ঠগবাজি, শিষ্য সেজে ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে যে ভক্তিবাজি সেসব দেখে মনে প্রশ্ন জাগে আমরা প্রতিমুহূর্তে আমাদের অসৎ ধান্দাবাজি কপট চলনা দিয়ে, মিথ্যাচার ক'রে ঠাকুরের সঙ্গে যখন বেঈমানি করছি, করছি নেমকহারামী, ঠাকুরের দয়ায় ভরপুর হওয়ার পরও হচ্ছি অকৃতজ্ঞ, কৃতঘ্ন তখনও তাদের 'জয়গুরু'-র উত্তরে আমাকে বলতে হবে 'জয়গুরু'? জয়গুরু মানে গুরুর জয় হ'ক। আমার জীবন যখন বলছে আমি প্রতিমুহূর্তে আমার গুরুর পরাজয়ের ডঙ্কা বাজাচ্ছি, গুরুকে হারিয়ে দেবার পথ প্রশস্থ করছি তখন কি আমার মুখে 'জয়গুরু' বলা শোভা পায়? এটা কি গুরুর সঙ্গে মিথ্যাচার নয়? তাই সেইসমস্ত মিথ্যাচার করা মানুষগুলোর মুখে যখন শুনি 'জয়গুরু' শব্দ তখন এর উত্তরে মাঝে মাঝে বেড়িয়ে পড়ে এককথায় 'পরাজয়গুরু' শব্দ। কারণ গুরুর কি জয় হচ্ছে? গুরুর কি আমাদের কারণে প্রতিনিয়ত পরাজয় হচ্ছে না? এতসব প্রশ্ন করার ইচ্ছে জাগে না।


দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারি, ঐ খিটকেল মার্কা লোকটাকে 'জয়গুরু' বলার কারণ আধা পরিচিত লোকটি সৎসঙ্গী নয়। খড়দহে ঠাকুরের কাজে যাতায়াত করার সুবাদে বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তেমনি লঞ্চ যাত্রী হিসেবেও দু'পারের ঘাট সংলগ্ন বহু মানুষের সঙ্গে কমবেশি পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হয়। সামান্য হাসি বিনিময়, হাত দেখানো, ভালো আছি, জয়গুরু ইত্যাদি অল্পবিস্তর হ'য়ে থাকে যাতায়াতের পথে। ঠিক তেমনি পরিচিত, আধা পরিচিত অদীক্ষিত সৎসঙ্গী নন এমন মানুষের মুখে 'জয়গুরু'-র উত্তরে জয়গুরু বলা উচিত ব'লে মনে করি আর তাই বলি। আর আধা পরিচিত বা পরিচিত অদীক্ষিত কারও 'জয়গুরু' বলার সময় অবশ্যই তাদের 'জয়গুরু' বলার ধরণ স্বাভাবিকভাবেই মার্কিং করা হ'য়ে থাকে আর তার উপরই নির্ভর করে জবাব দেওয়া না দেওয়া। যদিও তেমন বিসদৃশ আচরণ করার সুযোগ পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাও থাকে না তাদের। উত্তর দেওয়া-না দেওয়া প্রশ্নকর্তার গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভর করে।  

      

যাই হ'ক, যতই ঐ খিটকেল মার্কা লোকটার বিদ্রুপাত্মক কথা "দাদা! নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে------------আটকে যাচ্ছে" না শুনে বা না শোনার ভান ক'রে এগিয়ে যায় না কেন ঐ কথাটা কানের মধ্যে বেজেই চলেছে সেদিন থেকে। তাই আজ লিখতে বসলাম মাথা থেকে বোঝাটা নামাবার জন্য।


নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের চরণ পূজার রমরমা নতুন কিছু নয় এটা বরাবরের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মাত্র। এটা সবক্ষেত্রেই হ'য়ে থাকে। কি ধর্ম, কি শিক্ষা, কি ক্রীড়া, কি চাকরি, কি ব্যবসা, কি সিনেমা, নাটক, যাত্রা, অভিনয় ইত্যাদি ইত্যাদি সবক্ষেত্রের মত রাজনৈতিকক্ষেত্রেও চরণ পূজার চলন অবিসংবাদিত। ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে এবং কিছু না ক'রে পাওয়ার মানসিকতার মানুষদের কাছে ঈশ্বরের চরণ পূজা হাজার বছরের জন্মজন্মন্তরের আদত। আর যারা ধর্ম মানে না, ঈশ্বরের অস্তিত্ব মানে না, হিন্দু ধর্মের দেবদেবী নিয়ে কটুক্তি করে, বিকৃত পোষ্ট করে ফেসবুকে যেমন শিবলিঙ্গে কনডোম পড়ানো আবার সেই পোষ্টের পক্ষে দাঁড়িয়ে নানারকম অজুহাত খাড়া ক'রে সাফাই গায় যারা তারা ভুলে যান ফেসবুকে পোষ্ট করা ছবিতে শিবলিঙ্গে কনডোম পড়াচ্ছে যে বুলাদি সেই বুলাদির বিজ্ঞাপন ছিল এইচআইভি আর এইডস সংক্রমণ নিয়ে। সরকারি এই অ্যানিমেটেড চরিত্রটি এইচআইভি আর এইডস সংক্রমণ নিয়ে অবিরাম সচেতনতার বার্তা বিলিয়ে চলতেন ১৯৯৮ সাল থেকে ৷ তাহ'লে কি শিবলিঙ্গ এইচআইভি আর এইডস সংক্রমণ ছড়ায় যার জন্য অ্যানিমেটেড চরিত্র বুলাদিকে দিয়ে ঐ লিঙ্গের মাথায় কনডোম পড়াতে হ'লো অভিনেত্রী তথা নির্বাচনী প্রার্থী সায়নী ঘোষকে!? কি বলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের ঐ বুলাদিকে দিয়ে শিবলিঙ্গের মাথায় কনডোম পরানো পোষ্টের স্বপক্ষে বিশ্লেষণকারীরা? ভোটের লড়াইয়ে জেতার জন্য সেই ইশ্বরকে না মানা, ধর্মকে না মানা অবিশ্বাসীরা, বামপন্থীরা লুকিয়ে বাড়িতে পুজো দেয়, ঈশ্বরকে কলঙ্কিত করতে বুক ও হাত পা না কাঁপা অভিনেত্রী ও অন্য মানুষেরা আবার মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে নির্বাচনী প্রচারের যাত্রা শুরু করে। সেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঈশ্বরকে নিয়ে ল্যাজেগোবরে হ'তে এদের লজ্জা লাগে না, দ্বিধা করে না। এরা ঈশ্বরের চলন পুজোর ধার ধারে না। এদেরই বা দোষ কোথায়? এরা তো এদের পূর্বপুরুষের কাছ থেকেই এই শিক্ষা পেয়ে এসেছে। ভালো শিক্ষা থেকে খারাপ শিক্ষার সংক্রমণ বেশী ও দ্রুতগতিতে ছড়ায় এবং ছড়ায় তা বংশ পরম্পরায়। তাই সাবধান হ'তে হয়, সাবধান থাকতে হয়। পরবর্তী বংশধর, পরবর্তী প্রজন্ম এই লিঙ্গে কন্ডোম পরানো ছবি দেখে দেখে শিখে যায় লিঙ্গ কি? লিঙ্গের কাজ কি? লিঙ্গ দিয়ে কি হয়? লিঙ্গে কেন কনডোম পরানো হয়? লিঙ্গে কনডোম পরালে কি হয়? বুলাদি কে? বুলাদি কেন লিঙ্গে কনডোম পড়ালো? কনডোমের সাফল্য কিসের ওপর নির্ভর  করে? এরকম হাজারো প্রশ্ন নিয়ে বড় হবে আগামী বংশধর, আগামী প্রজন্ম।  


ঠিক তেমনি সৎসঙ্গীদের কাছেও (ব্যতিক্রম আছে। ব্যতিক্রম ব্যাতিক্রমই আর ব্যতিক্রমরাই ঠাকুরের আশা) ফুল বেলপাতা ঘট ধুপধুনো প্রদীপ চন্দন তুলসীই ইত্যাদি সেই শেষ কথা। এইসমস্ত উপকরণ সাথে সেই পুরোহিত প্রথার মাধ্যমে সৎসঙ্গীদের মন্ত্র পাঠ, সেই পাঁচালি পাঠ সহযোগে আকুতি ভরা হৃদয়ে সেই চরণ পূজার হাজার রকম রকমারিতে সেজে উপেক্ষার হৃদয় দিয়ে চলন পূজার জলাঞ্জলি দিয়ে ঠাকুরের মনের মত সোনার মানুষ হ'তে গিয়ে আমরা তাঁর সোনার সৎসঙ্গীরা হ'লাম গরু।

 

আসলে চলন পূজার ধার কেউ ধারে না। শুধুই মিথ্যাচার আর ঢাকঢোল পিটিয়ে চরণ পূজা! চরণ পূজা!! চরণ পূজা!!!

Wednesday, March 9, 2022

তরুন যুব ও ছাত্র নেতা।

দেশের রাজনীতির ময়দানে নতুন নতুন মুখের আবির্ভাব প্রতিনিয়তই আমরা দেখতে পাই। দেখতে পাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তরুণ যুব ও ছাত্রনেতাদের। সেইসব তরুণ যুবনেতা ও ছাত্রনেতাদের মুখের কথা ও ভাষা আজ আর অবাক বা স্তম্ভিত করে না মনকে! বাঁদরের পোঁদের মত কড়া পড়ে গেছে মনে আর গন্ডারের চামড়ার  মত হ'য়ে গেছে শরীরের চামড়া!!! তাদের অর্থাৎ আজকের নব্য তরুণ যুবা রাজনীতির আইকনদের শরীরী ও মুখের ভাষা প্রমাণ করে দেশে আজ মাথার কাজ পায়ে করছে!!!! এদের জীবন, এদের চরিত্র, এদের মুখের ভাষা প্রমাণ করে যে,  দেশের পূর্বসূরীরা কেমন ছিল, কেমন ছিল তাদের চরিত্র, কেমন ছিল তাদের মানসিকতা, কেমন ছিল তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, কেমন ছিল তাদের ব্যবহার, কেমন ছিল তাদের ব্যক্তিগত জীবন আর সর্বোপরি কেমন ছিল তাদের বায়োলজিক্যাল মেকআপ!!!!!!!! 

আর, মানুষ, সাধারণ মানুষ সম্মোহিতভাবে চেয়ে থাকে, শুনতে থাকে তাদের কথা ও ভাষা!

ঠিক এই যখন মানসিক অবস্থা ঠিক তখনি চোখে পড়লো The greatest phenomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী!!!! শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন,

জেনে রেখো ---

বিচারের দিন যখনই আসুক না কেন,

অন্যের প্রতি তোমার প্রত্যেকটি

অসাবধান বাক্যের

জবাবদিহি ক'রতে হবে,

তোমার বাক্যই তোমাকে

বিমোচিত বা বিমর্দ্দিত ক'রবে।। 

--#শ্রীশ্রীঠাকুর_অনুকূলচন্দ

আজ বাংলা যা ভাবে কাল ভারত তা ভাববে তো?

যদিও এই প্রবাদ আজ বাতিল হ'য়ে গেছে। আজ আর বাংলা কিছু ভাবতে পারে না কারণ ভাববার মত সেই উর্বর মস্তিস্ক আজ আর নেই বাংলার মাটিতে যে কাল ভারত তা নিয়ে ভাববে। অবশ্য আজ বাংলা যা ভাবে, যা বলে বা করে তা সবাই জানে ও জগৎ বিখ্যাত যা নিয়ে গোটা ভারত তা অবশ্যই ভাবে এবং সবার চর্চার বিষয়; যার সামান্যমাত্র উদাহরণ রবীন্দ্র ভারতীর এই ঘটনা।

গত বৃহস্পতিবার (০৪/০৩/২০) বসন্ত উৎসব আয়োজিত হয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মরকতকুঞ্জ (বিটি রোড) প্রাঙ্গণে। সেই অনুষ্ঠানে বেশ কয়েক জন তরুণ-তরুণীকে পিঠে এবং বুকে রং দিয়ে অশ্লীল শব্দ এবং বিকৃত রবীন্দ্রসঙ্গীত লেখা দেখা যায়। বসন্ত উৎসবের নামে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনুষ্ঠান প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দ্বীপপাল থেকে পঙ্গপাল সবার মনে! আর সবাই বিস্ময়ে তাদের নিশ্চিন্ত ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে। কে বা কারা যেন শান্ত ঘুমের জগতে অশান্তির হাওয়া ব'য়ে দিয়ে গেল! আর কুম্ভকর্ণের মত হঠাৎ কাঁচা ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে উপাচার্য! ঘুম ভেঙে উঠেই নিজের ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতে রাতারাতি ইস্তফা দিলেন!!! সাপও মরলো লাঠিও ভাঙলো না প্রবাদের মত কারও কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হ'লো না আবার কারও বিরুদ্ধ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে হ'লো না! একটা সহজ সমাধান। একে কি বলবো!? পলায়ন মনোবৃত্তি!? যে মানুষ কোনও কঠোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত প্রতিষ্ঠানের, রবীন্দ্র সংস্কৃতির রক্ষাকর্তা!? অভিভাবক!? পথ প্রদর্শক!? 


এ তো গেল কর্তৃপক্ষের কথা। আবার আরও একদল রবীন্দ্র অনুরাগী সচেতন (?) নাগরিকের কাছে মনে হয়েছে এই সমস্ত পিঠে বুকে অশ্লীল শব্দ লেখা ছবি পোস্ট না করায় ভালো।  ওইসব ছবি দৃষ্টিকটু! অতএব এর প্রচার না হওয়ায় ভালো। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন দৃষ্টিনন্দন মনে হয়েছিল বলেই কি তাহ'লে সেদিন তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ হয়নি? অনুষ্ঠানে উপস্থিত মানুষের ও কর্তৃপক্ষের ঘুমও কি দেরিতে ভাঙে? ভাঙে ছবি বিতর্কিত হ'য়ে রূপ নিয়ে ভাইরাল হ'লে? তার আগে আগাম সাবধান হয় না? বাড়ির অভিভাবক বা প্রশাসন বা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের মনে কেন আগাম বলিষ্ঠ সতর্কতা জারি করা থাকে না তাদের সন্তানসন্ততি, ছাত্রছাত্রী ও দর্শকবৃন্দের উপর? কেন সমাজ সচেতন রবীন্দ্র অনুরাগী এই বিষয়ে নিরন্তর সচেতন করার প্রয়াসে ব্রতী হয় না? তাহলে কি ধ'রে নিতে হবে অযোগ্য অদক্ষ অভিভাবক, সচেতন নাগরিক বা কর্তৃপক্ষ? নাকি উদাসীনতা? সন্তান বা ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বা আম জনতার প্রতি বাৎসল্য? বা আর অন্যকিছু?


এখন স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, এই বসন্ত উৎসব বা যেকোনও উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠানের আগে এবং অনুষ্ঠানের দিন গরীব-বড়লোক, লেখাপড়া জানা-না জানা সর্বস্তরের মানুষের মনে কমবেশী উচ্ছাস জাগে এবং তার মধ্যে জড়িয়ে থাকে অশ্লীলতা। এই উচ্ছাসের মধ্যে যে আদিম অশ্লীলতা ফল্গুধারার মত বইতে থাকে কখন তার সমাপ্তি ঘটে বা সীমাবদ্ধ গন্ডির মধ্যে থাকে? কখন এই আদিম অশ্লীলতার সংস্কৃতি তার সীমাবদ্ধ গন্ডির বাঁধ ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এসে বাঁধ ভাঙা জলের মত ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমাজ ও তার সভ্যতাকে? এই বাঁধকে রক্ষা করতে না পারা বা বাঁধ ভাঙার জন্য কিংবা একেবারেই উৎসকে নির্মূল করতে না পারার জন্য কে বা কারা দায়ী? কি দায়ী?


আর, অনেক রবীন্দ্র অনুরাগীর (?) মত যারা রবীন্দ্র ভারতীর বসন্ত উৎসবের অশ্লীল ছবি পোস্ট করা নিয়ে অস্বস্তি বোধ করে এবং পোস্ট না করার জন্য মন্তব্য করে তাতে ছবি পোস্ট করা নাহয় বন্ধ হ'লো কিন্তু কাজের কাজ কি হ'লো বা হবে? এই সংস্কৃতির মূলে কি হাত পড়বে বা মূল উৎখাত হবে? গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়ার মত ব্যাপারটা নয় কি? আর তাছাড়া এটা সবাই জানি যে, এমনিতেই দু'দিন বাদেই সব বন্ধ হ'য়ে যাবে ও চাপা পড়ে যাবে আবার অন্য কোথাও অন্য রূপে অন্য ঢঙ্গে এই সংস্কৃতির বমন উদ্গীরণ হবে কিন্তু এই আচরণের উৎস কোথায়? কে বা কারা এই আচার ব্যবহার করার ও আমদানি করার জন্য দায়ী? চাপা দিয়ে দিয়ে আর কতকাল বাংলা ও বাঙালির ঘা লুকিয়ে রাখবো বা বমন চেপে রাখবো? একসময় তো একদিন না একদিন উদ্গীরণ হবেই! নাকি? আর বমন উদ্গীরণ না হ'লে বুঝবোই বা কি ক'রে কতটা ভয়ঙ্কর পরিমাণে জমা হয়েছে পৃথিবীর অদ্ভুত জাত বাংলা ও বাঙালির পেটে সমাজ-সভ্যতাকে জ্বালিয়ে খাক ক'রে দেওয়া এসিড! তাই না? কে দায়ী? কার দোষ?  আর এর সমাধানই বা কি এবং কোথায়?


এই নিয়ে আলোচনা করার অবকাশ কারও নেই! কারণ বুমেরাং হ'য়ে ফিরে আসবে তা নিজের দিকেই। আর এই জায়গায় আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করানোর সাহস না আছে পিতামাতা, অভিভাবক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীর; না আছে রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় নেতা, প্রশাসক, বিচারক, সমাজ সংস্কারক ইত্যাদির। সবাই অন্যের কোর্টে বল ছুঁড়ে দিয়ে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছি!!!!!! আর, মাঝে মাঝে হটাৎ হঠাৎ কাঁচা ঘুম ভেঙে কুম্ভকর্ণের মত নেবে পড়ছি 'মার ঝাড়ু মার, ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদেয় কর' স্লোগান নিয়ে বিলাসিতায় মোড়া নকল লড়াইয়ের ময়দানে! আর ভাবছি সেই মহান কথা যা আজ বস্তাপচা হ'য়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বাংলার আকাশেবাতাসে: বাংলা আজ যা ভাবে কাল গোটা ভারত তা ভাবে!!!!!!!

Tuesday, March 8, 2022

প্রবন্ধঃ হে অহংকারী শক্তিমান মানব!

তুমি স-ব দিকে শক্তিশালী হ'তে পারো, মর্তভূমে তো কম দেখলাম না জন্মের পর থেকে এই বয়স পর্যন্ত তোমার দাদাগিরি! এবার আকাশে চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ - নক্ষত্র সৃষ্টি করতে পারো আবার ধ্বংসও করতে পারো, সৃষ্টি করতে পারো সৃষ্টিকর্তার মত সৃষ্টির যাবতীয় যা কিছু; কিন্তু মনে রেখো তা সব কৃত্রিম ও ক্লোন; মৌলিক নয়। কিন্তু ধ্বংস করতে পারো সৃষ্টিকর্তার মৌলিক যাবতীয় যা কিছু সৃষ্টি কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হ'তে পারো না। কারণ তোমায় তিনি সৃষ্টি করেছেন আর তুমি যা করছো তা হ'লো ওই 'মেরি বিল্লি মুঝসে ম্যাও'-এর বিল্লির মতন। ফ্যাশ ফ্যাশ ক'রে সৃষ্টিকর্তার দিকে ছুড়ে দিচ্ছো ফাপা চ্যালেঞ্জ!  ঈশ্বর তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আর তুমি অসীম অনন্ত শক্তিতে মদমত্ত হ'য়ে নিজেকেই মনে করছো তুমিই তোমার ও তোমার চারপাশের সৃষ্টির কর্তা! তুমিই ঈশ্বর!! 

হে মানব! তুমি সব করতে পারো কিন্তু যেহেতু তোমার সব সৃষ্টিই  কৃত্রিম ও নকল তাই ঈশ্বরের মতন শক্তিমান হ'য়েও ঈশ্বর হ'তে পারো না কারণ তোমার মধ্যে যা নেই তা হ'লো মৌলিকত্ব আর শ্রীশ্রী ঠাকুরের কথামতো প্রেম-ভালোবাসা! তুমি শ্রীশ্রী ঠাকুরের বলা বাণীর উজ্জ্বল ও জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত! শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বললেনঃ 

"তুমি যদি এমন শক্তি লাভ ক'রে থাক যাতে চন্দ্র-সূর্য্য কক্ষচ্যুত ক'রতে পার, পৃথিবী ভেঙে টুকরা-টুকরা ক'রতে পার বা সব্বাইকে ঐশ্বর্য্যশালী ক'রে দিতে পার, আর যদি হৃদয়ে প্রেম না থাকে, তবে তোমার কিছুই হয়নি।"

হে শক্তিমান মানব! সত্যিই তো তোমাদের প্রত্যেকের হাতে কত ভয়ংকর ভয়ংকর মারণাস্ত্র। তোমরা ইচ্ছে করলেই একমুহূর্তে চোখের পলক পড়ার আগেই পৃথিবীকে টুকরো টুকরো ক'রে দিতে পারো। তাও একবার নয়, তোমাদের সম্মিলিত পরমানু শক্তি দিয়ে 'শ বার টুকরো টুকরো ক'রে উড়িয়ে দিতে পারো অনন্ত মহাশূন্যের বুকে পৃথিবী নামক এই বিশাল গ্রহকে। কিন্তু হৃদয় তোমার প্রেমহীন, শ্মশান শূন্যতা আর হাহাকারে ভরা। তোমার হৃদয়, তোমার মন, তোমার মস্তিষ্ক, তোমার চারপাশ মারণাস্ত্র, হিংসা, কুটিলতা, ঘৃণা, চাটুকারিতা, স্তাবকতা ইত্যাদি দিয়ে ঘেরা। এই ঘেরাটোপ থেকে তুমি বেরোতে পারো না! তোমার ভয় হয় তুমি এই বুঝি সমাপ্ত হ'য়ে গেলে! অস্তিত্ব ধ্বংসের ভয়ে তুমি বাহুবলে করতে চাও বিশ্বজয়, দখল রাখতে চাও সবকিছুর। 

আর তাই তুমি সব দিকে ধনী ঐশ্বর্যশালী হওয়া সত্ত্বেও তুমি আজ ভিখারি! হে মানব তুমি আজ পথের ভিখারি। তুমি সব চাইতে গিয়ে, পেতে গিয়ে যা ছিল তোমার সম্বল তাও হারিয়েছো। হারিয়েছ মানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা আর নির্ভরতা। তুমি শক্তিমান এ কথা ঠিক কিন্তু ভুলে গেছো তুমি সর্বশক্তিমান নও। তুমি অন্তর্যামী হ'তে পারো কিন্তু তুমি সর্বজ্ঞ নও, আর সর্বজ্ঞ হ'তে পারো না কোনোদিনও কোনোকালেই। তুমি দ্রষ্টাপুরুষ হ'তে পারো কিন্তু অসীম অনন্তের দ্রষ্টাপুরুষ নও, হ'তে পারো না ত্রিকালজ্ঞ। তুমি নিশ্চয়ই পিতা। সু বা কু সন্তানের পিতা। কিন্তু তুমি নও পরমপিতা।

তুমি যে যত বড় পন্ডিত, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা হও না কেন তোমার মধ্যে আছে অসম্পূর্ণতা, আছে সীমাবদ্ধতা, তুমি নও ঈশ্বরের মতো, জীবন্ত ঈশ্বরের মতো নির্ভুল, নও নিখুঁত, নও সম্পূর্ণ, নও অসীম-অনন্ত-অজর-অমর, ঈশ্বরের মতো।

হে শক্তিমান মানব!  দু'দিনের জন্য আসা এই পৃথিবীতে তুমি শান্ত হও, শান্তি পাও আর সবাইকে ক্ষণিকের জন্য আসা এই পৃথিবীতে শান্তি পেতে দাও। তোমার কাছে অনুরোধ দাও বাঁচতে, বাড়তে।

Monday, March 7, 2022

উপলব্ধি ২৭ঃ ব'য়ে চলা ট্রাডিশান।

যে কাজ আপাত ভালো হ'লেও, যুক্তিপূর্ণ মনে হ'লেও সুদূর প্রসারী কি ফল প্রসব করবে তার চিন্তা করার শক্তি, দৃষ্টি যদি মোড়লদের না থাকে তাহ'লে যা হবার তাই হয় আর দেশ জুড়ে হয়েছেও তাই, হচ্ছেও তাই আর অনন্তকাল যতদিন সৃষ্টি থাকবে, হবেও তাই। আপাত ভালো কাজের নামে বা আদর্শের নামে যে বিকৃতি আমি চাষ করেছি ও করছি বা করে যাবো তার ফসলও ফলবে তাই। নষ্ট বীজে যদি জন্মায়ও নষ্ট চারাগাছই জন্মাবে আর ফলও দেবে তাই-ই। ভালো কাজ, আদর্শ কখনও বিকৃতির জন্ম দেয় না। প্রেম কখনও হিংসার জন্ম দেয় না। প্রেমের বুক থেকে হিংসার কখনও প্রতিফলন হয় না। ঠিক তেমনি যা ভালো বা আদর্শ তার প্রতিফলন কখনও কোনও অবস্থাতেই, কোনও সময়েই কালো হয় না, খারাপের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাকে ডেকে আনে না। তাই সমাজ ও দেশ গঠনের নামে, স্বাধীনতার নামে রাজনীতিতে, ধর্মে, শিক্ষায় এবং শিক্ষা ও চেতনা বিস্তারের নামে কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে যে মহান আত্মা যে আন্দোলনের জন্মই দিক না কেন ঠাকুরের বলা “উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বরযুক্ত চিন্তা”-র উপর ভর ক'রে সেই আন্দোলনের ভ্রূণেই অর্থাৎ জৈবি সংস্থিতি যাকে বায়োলজিক্যাল মেক আপ বলে তার মধ্যেই সুদূর প্রসারী ভুল ও তার মারাত্মক পরিণতির সম্ভাবনা নিহিত থাকেই থাকে। কারণ তাঁরা কত দূর দেখবার ক্ষমতা রাখেন? তাঁরা যারা সমাজ, দেশ, সংস্কৃতি, শিক্ষা ইত্যাদির রূপকার এক কথায় মহান আত্মা তাঁদের প্রত্যেকের জীবনেই, জীবনের শুরু থেকে হাজার ভুল। ভুলের উপর দাঁড়িয়েই সেই ভুলকে চিনতে পেরেছেন অনেক ক্ষয় ক্ষতি স্বীকার করার পর তারপর তাঁরা সেই পথ সম্পর্কে সাবধান করেছেন কিন্তু যে আরো সাঙ্ঘাতিক ভুল আগামীতে অপেক্ষা করছে সেই ভুল সম্পর্কে সেই মহান আত্মা ছিলেন বা আছেন অজ্ঞ, অন্ধ; সে সম্পর্কে সাবধান করার ক্ষমতা তাঁর বা তাঁদের ছিল না বা নেই। অতএব সেই ভুলের খেসারত তাঁরা তো দেবেনই যদি তাঁরা ততদিন বেঁচে থাকেন তাছাড়া তাঁদের ভুলের জন্য, কৃত অপরাধের জন্য গোটা সমাজ, দেশ, মানবজাতিকে দিতে হবে ভয়ঙ্কর খেসারত কারণ তাঁদের উপর নির্ভর করেছিল বা করছে গোটা জাতি, গোটা সমাজ। আর যে ভুলের বিষবৃক্ষ তাঁরা স্থাপন ক'রে গেলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সেই বিষবৃক্ষের ফল তো পরবর্তী প্রজন্ম খাবেই আর ছড়িয়ে যাবে তার বীজ বংশপরম্পরায় রেতঃ ধারার মধ্যে দিয়ে গ্রামে, গঞ্জে, শহরে, বন্দরে, পাহাড়ে-পর্বতে, বনে-বনান্তরে আসমুদ্রহিমাচলব্যাপী আর তার পরিণাম হবে ভয়ংকর যা এড়িয়ে যাবার বা এর থেকে নিস্তার বা মুক্তি পাবার কোনও উপায় থাকবে না। কর্মফল ভোগ করতে হবেই এতে কোনও সংশয় নেই, দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই, নেই কোনও দ্বিমত। 

কথাগুলি মনে এলো কয়েকটা ঘটনা থেকে। আজ সকালে পরিচিত বন্ধু বান্ধব, শুভানুধ্যায়ী কয়েকজনের সংগে সাক্ষাৎ হ'য়েছিল। তাদের মধ্যে যেমন ছিল গুরুভাই, তেমন ছিল ছোট ও বড়বেলার কয়েকজন রাজনৈতিক দলের সংগে যুক্ত বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী। কথা হচ্ছিল নানা বিষয় নিয়ে। কথা বলতে বলতে আলোচনায় উঠে এলো সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে। উঠে এলো লেনিনের মূর্তি ভাঙ্গা প্রসঙ্গ, উঠে এলো সংবাদে উঠে আসা শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙ্গা ও তার প্রতিক্রিয়াস্বরুপ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া এবং কথা প্রসঙ্গে অতীত ও বর্তমানে সংঘটিত আরও অনেক কর্মকান্ড। আলোচনা খুব জমে উঠেছিল। প্রত্যেকেই নিজের নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য রাখছিল। পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে, আলোচনায় চনা পড়ার অবকাশ থাকলেও পারস্পরিক সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখার মানসিকতা সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত হ'তে বাধা দিয়েছিল। সবার কথাগুলি শুনছিলাম মন দিয়ে আর তারা অপেক্ষা করছিল আমার প্রতিক্রিয়া জানতে। কথাগুলি শুনতে শুনতে আমার মনে আমার গুরুদেব অনুকূল ঠাকুরের অপূর্ব সুন্দর হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠছিল আর মনে পড়ছিল তাঁর ব'লে যাওয়া লক্ষ লক্ষ কথা ও হাজার হাজার বাণীর কয়েকটা কথা ও বাণী। উপলব্ধি হ'লো তাঁর কথা ও বাণীগুলির। তখন উপরে উল্লিখিত কথাগুলি আলোচনায় আমি তুলে ধরেছিলাম আর বলেছিলাম নিম্নে উল্লেখিত ঠাকুরের বাণীগুলি সংগে আরও সামান্য কিছু উপলব্ধি। সেগুলিও পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম।

“যা’ ইচ্ছা তাই করবে তুমি
তা’ কিন্তু রে চলবে না,
ভাল ছাড়া মন্দ করলে
পরিস্থিতি ছাড়বে না।“

“উচিত-বাদের দম্ভ কর
হিতের ধারটি ধারছ না,
এমন চলায় চললে জেনো
পাবেই পাপের লাঞ্ছনা।“

“দেশের সেবার ধুয়ো ধ’রে
জানিস কী যে করলি তা’,
কি পেতে কী করতে হয়
আছে কি তার দর্শিতা?”

শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীগুলি তুলে ধ’রে স্বাভাবিকভাবেই বললাম, এই যে মূর্তি ভাঙার বা যে কোনও কিছু ভাঙ্গাভাঙ্গির খেলা তো আজকে নতুন নয়। এর সূত্রপাত তো বহু আগে থেকেই। স্বাধীনতার কথা যদি ধরা যায় তখনও দেশনেতাদের প্রত্যক্ষ মদতে ভাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ, অসহযোগ ইত্যাদি পথ স্বাধীনতা আন্দোলনের হাতিয়ার ছিল। আর তার পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে পরবর্তী জনজীবনে। আর দেশ ভাঙার থেকে বড় ভাঙ্গা আর কি হ’তে পারে!? দেশ ভাঙার খেলার থেকে তো কারও মূর্তি ভাঙার খেলা বা নাটক বড় বা বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশ ভাঙার  ভয়ঙ্কর খেলা দিয়ে যে ভারত নেতৃত্বের হাতে খড়ি পরবর্তী সময়ের বা প্রজন্মের নেতৃত্বের বা ভারতীয় জনগণের সেই হাতে মূর্তি ভাঙা কি এমন অবাকের বা অপরাধের!? এটাই তো হওয়ার কথা। নষ্ট বীজে নষ্ট চারাগাছ তো জন্মাবেই আর তার ফলও হবে পোকায় খাওয়া বিষাক্ত নষ্ট ফল। সেদিন ঠাকুর দেশ নেতাদের উদ্দেশ্যে সাবধান ক’রে দিয়ে বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলেন, “Dividing compromise is the hatch of animosity.” ভাগ ক’রে সমাধান করার অর্থ তা দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো। আজ তা দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো কাকে বলে তা সেই স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী পাকিস্থান ও বাংলাদেশের প্রতিদিনের ঘটনাবলীতে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ভারতবাসী ও সমগ্র বিশ্ব!

আবার এই যে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলন সেই অসহযোগ আন্দোলনও সত্যদ্রষ্টা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর সমর্থন করেননি। সেদিনের ঠাকুরের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কিত বক্তব্য স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কেউ মেনে নিতে পারেননি। সেদিনের দেশ সেবার নামে অসহযোগিতার মানসিকতা অদূর ভবিষ্যতে কি বিষময় পরিণতি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ব’য়ে আনতে পারে তার কল্পনাও সেদিনের নেতৃবৃন্দ করতে পারেননি। উচিত-অনুচিতের ফারাক ছিল না বোধের ঘরে। যা সেদিন তাৎক্ষণিক উচিত মনে হয়েছে তাই করেছে হিতাহিতের ধার না ধেরে। ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি যে ছেড়ে কথা বলবে না তা স্বাধীনতা পরবর্তী এবং বর্তমান সময়ের আগেপিছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। যেমন আজ প্রতি পদক্ষেপে দেখতে পায় কোনও কিছু গঠনমূলক কাজের জন্য কেউ কাউকে সহযোগীতার হাত বাড়ায় না তা রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় যে ক্ষেত্রই হ’ক না কেন কিম্বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্ম প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি যে প্রতিষ্ঠানই হ’ক না কেন। মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে ঘরে বাইরে প্রতিটি মানুষের মধ্যে অসহযোগিতার বিষ! যা আজ বিশাল বিষবৃক্ষ হ'য়ে ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে আসমুদ্রহিমাচল ব্যাপী।


ঠিক তেমনি আজ যারা যে দলেরই হ'ক না কেন মূর্তি ভাঙার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আন্দোলন সংগঠিত করছে তারাও একবার অতীতের দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখলে দেখতে পাবে দেশ জুড়ে এই ভয়ঙ্কর ভাঙার নাটকের বা খেলার একদিন তারাও কুশীলব বা খেলোয়াড় ছিল; আর তাদের পূর্ব পুরুষরা ছিল দেশ ভাঙার ভয়ঙ্কর কারিগর; যে ভাঙার ভয়ঙ্কর বিষে নীল হ'য়ে গেছে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের হাত। এস ওয়াজেদ আলির সেই বিখ্যাত কথা “সেই ট্রাডিশান সমানে ব’য়ে চলেছে” সুরে বলা যেতে পারে সেই অসহযোগিতা বা সেই ভাঙার ভয়ঙ্কর খেলা বা নাটকের ট্রাডিশান সমানে ব’য়ে চলেছে মাত্র; যার পরিণতি ধ্বংস। সেই অপেক্ষায় টিকটিক ক’রে এগিয়ে চলেছে সময় নীরবে, নিঃশব্দে!!!

Thursday, March 3, 2022

কবিতাঃ আমি কি?

কিসের রাজা? কিসের নীতি?
কিসের সাজসজ্জা? কিসের রীতি?
শুরু থেকে শেষ শুধু উন্নতির নামে দুর্নীতি!
কিসের উন্নতি? কিসের পরিবর্তন?
কিসের সভ্যতা? কিসের উদবর্দ্ধন?
চারিদিকে শুধু ভয়! ভয়! আর ভয়!
কিসের সংস্কৃতি? কিসের আন্দোলন?
কিসের সততা? কিসের উত্তোলন?
শরীরে-মনে-চরিত্রে হচ্ছে ক্ষয় অবক্ষয়!
কিসের সকাল? উঠবে কিসের নূতন সূর্য?
কিসের সমাজ? কিসের ব্যবস্থা? কে সেই পুজ্য?
চারিদিকে শুধু ক্ষমতার আস্ফালন!
কিসের কবিতা? কিসের নাটক?
কিসের সাহিত্য? কিসের পাঠক?
শুধু তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা
ফেউদের রাতভর ঘেউ ঘেউ আর ব্যর্থ প্রক্ষালন!
আমি কি নই সেই একজন!?