তুমি স-ব দিকে শক্তিশালী হ'তে পারো, মর্তভূমে তো কম দেখলাম না জন্মের পর থেকে এই বয়স পর্যন্ত তোমার দাদাগিরি! এবার আকাশে চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ - নক্ষত্র সৃষ্টি করতে পারো আবার ধ্বংসও করতে পারো, সৃষ্টি করতে পারো সৃষ্টিকর্তার মত সৃষ্টির যাবতীয় যা কিছু; কিন্তু মনে রেখো তা সব কৃত্রিম ও ক্লোন; মৌলিক নয়। কিন্তু ধ্বংস করতে পারো সৃষ্টিকর্তার মৌলিক যাবতীয় যা কিছু সৃষ্টি কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হ'তে পারো না। কারণ তোমায় তিনি সৃষ্টি করেছেন আর তুমি যা করছো তা হ'লো ওই 'মেরি বিল্লি মুঝসে ম্যাও'-এর বিল্লির মতন। ফ্যাশ ফ্যাশ ক'রে সৃষ্টিকর্তার দিকে ছুড়ে দিচ্ছো ফাপা চ্যালেঞ্জ! ঈশ্বর তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আর তুমি অসীম অনন্ত শক্তিতে মদমত্ত হ'য়ে নিজেকেই মনে করছো তুমিই তোমার ও তোমার চারপাশের সৃষ্টির কর্তা! তুমিই ঈশ্বর!!
হে মানব! তুমি সব করতে পারো কিন্তু যেহেতু তোমার সব সৃষ্টিই কৃত্রিম ও নকল তাই ঈশ্বরের মতন শক্তিমান হ'য়েও ঈশ্বর হ'তে পারো না কারণ তোমার মধ্যে যা নেই তা হ'লো মৌলিকত্ব আর শ্রীশ্রী ঠাকুরের কথামতো প্রেম-ভালোবাসা! তুমি শ্রীশ্রী ঠাকুরের বলা বাণীর উজ্জ্বল ও জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত! শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বললেনঃ
"তুমি যদি এমন শক্তি লাভ ক'রে থাক যাতে চন্দ্র-সূর্য্য কক্ষচ্যুত ক'রতে পার, পৃথিবী ভেঙে টুকরা-টুকরা ক'রতে পার বা সব্বাইকে ঐশ্বর্য্যশালী ক'রে দিতে পার, আর যদি হৃদয়ে প্রেম না থাকে, তবে তোমার কিছুই হয়নি।"
হে শক্তিমান মানব! সত্যিই তো তোমাদের প্রত্যেকের হাতে কত ভয়ংকর ভয়ংকর মারণাস্ত্র। তোমরা ইচ্ছে করলেই একমুহূর্তে চোখের পলক পড়ার আগেই পৃথিবীকে টুকরো টুকরো ক'রে দিতে পারো। তাও একবার নয়, তোমাদের সম্মিলিত পরমানু শক্তি দিয়ে 'শ বার টুকরো টুকরো ক'রে উড়িয়ে দিতে পারো অনন্ত মহাশূন্যের বুকে পৃথিবী নামক এই বিশাল গ্রহকে। কিন্তু হৃদয় তোমার প্রেমহীন, শ্মশান শূন্যতা আর হাহাকারে ভরা। তোমার হৃদয়, তোমার মন, তোমার মস্তিষ্ক, তোমার চারপাশ মারণাস্ত্র, হিংসা, কুটিলতা, ঘৃণা, চাটুকারিতা, স্তাবকতা ইত্যাদি দিয়ে ঘেরা। এই ঘেরাটোপ থেকে তুমি বেরোতে পারো না! তোমার ভয় হয় তুমি এই বুঝি সমাপ্ত হ'য়ে গেলে! অস্তিত্ব ধ্বংসের ভয়ে তুমি বাহুবলে করতে চাও বিশ্বজয়, দখল রাখতে চাও সবকিছুর।
আর তাই তুমি সব দিকে ধনী ঐশ্বর্যশালী হওয়া সত্ত্বেও তুমি আজ ভিখারি! হে মানব তুমি আজ পথের ভিখারি। তুমি সব চাইতে গিয়ে, পেতে গিয়ে যা ছিল তোমার সম্বল তাও হারিয়েছো। হারিয়েছ মানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা আর নির্ভরতা। তুমি শক্তিমান এ কথা ঠিক কিন্তু ভুলে গেছো তুমি সর্বশক্তিমান নও। তুমি অন্তর্যামী হ'তে পারো কিন্তু তুমি সর্বজ্ঞ নও, আর সর্বজ্ঞ হ'তে পারো না কোনোদিনও কোনোকালেই। তুমি দ্রষ্টাপুরুষ হ'তে পারো কিন্তু অসীম অনন্তের দ্রষ্টাপুরুষ নও, হ'তে পারো না ত্রিকালজ্ঞ। তুমি নিশ্চয়ই পিতা। সু বা কু সন্তানের পিতা। কিন্তু তুমি নও পরমপিতা।
তুমি যে যত বড় পন্ডিত, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা হও না কেন তোমার মধ্যে আছে অসম্পূর্ণতা, আছে সীমাবদ্ধতা, তুমি নও ঈশ্বরের মতো, জীবন্ত ঈশ্বরের মতো নির্ভুল, নও নিখুঁত, নও সম্পূর্ণ, নও অসীম-অনন্ত-অজর-অমর, ঈশ্বরের মতো।
হে শক্তিমান মানব! দু'দিনের জন্য আসা এই পৃথিবীতে তুমি শান্ত হও, শান্তি পাও আর সবাইকে ক্ষণিকের জন্য আসা এই পৃথিবীতে শান্তি পেতে দাও। তোমার কাছে অনুরোধ দাও বাঁচতে, বাড়তে।
No comments:
Post a Comment