যদিও "আজ বাংলা যা ভাবে কাল তা ভারত ভাবে" এই প্রবাদ আজ বাতিল হ'য়ে গেছে। আজ আর বাংলা কিছু ভাবতে পারে না কারণ ভাববার মত সেই উর্বর মস্তিস্ক আজ আর নেই বাংলার মাটিতে যে কাল ভারত তা নিয়ে ভাববে। অবশ্য আজ বাংলা যা ভাবে, যা বলে বা করে তা সবাই জানে ও জগৎ বিখ্যাত যা নিয়ে গোটা ভারত তা অবশ্যই ভাবে এবং সবার চর্চার বিষয়; যার সামান্যমাত্র উদাহরণ রবীন্দ্র ভারতীর এই ঘটনা।
গত বৃহস্পতিবার (০৪/০৩/২০) বসন্ত উৎসব আয়োজিত হয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মরকতকুঞ্জ (বিটি রোড) প্রাঙ্গণে। সেই অনুষ্ঠানে বেশ কয়েক জন তরুণ-তরুণীকে পিঠে এবং বুকে রং দিয়ে অশ্লীল শব্দ এবং বিকৃত রবীন্দ্রসঙ্গীত লেখা দেখা যায়। বসন্ত উৎসবের নামে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনুষ্ঠান প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দ্বীপপাল থেকে পঙ্গপাল সবার মনে! আর সবাই বিস্ময়ে তাদের নিশ্চিন্ত ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে। কে বা কারা যেন শান্ত ঘুমের জগতে অশান্তির হাওয়া ব'য়ে দিয়ে গেল! আর কুম্ভকর্ণের মত হঠাৎ কাঁচা ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে উপাচার্য! ঘুম ভেঙে উঠেই নিজের ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতে রাতারাতি ইস্তফা দিলেন!!! সাপও মরলো লাঠিও ভাঙলো না প্রবাদের মত কারও কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হ'লো না আবার কারও বিরুদ্ধ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে হ'লো না! একটা সহজ সমাধান। একে কি বলবো!? পলায়ন মনোবৃত্তি!? যে মানুষ কোনও কঠোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত প্রতিষ্ঠানের, রবীন্দ্র সংস্কৃতির রক্ষাকর্তা!? অভিভাবক!? পথ প্রদর্শক!?
এ তো গেল কর্তৃপক্ষের কথা। আবার আরও একদল রবীন্দ্র অনুরাগী সচেতন (?) নাগরিকের কাছে মনে হয়েছে এই সমস্ত পিঠে বুকে অশ্লীল শব্দ লেখা ছবি পোস্ট না করায় ভালো। ওইসব ছবি দৃষ্টিকটু! অতএব এর প্রচার না হওয়ায় ভালো। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন দৃষ্টিনন্দন মনে হয়েছিল বলেই কি তাহ'লে সেদিন তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ হয়নি? অনুষ্ঠানে উপস্থিত মানুষের ও কর্তৃপক্ষের ঘুমও কি দেরিতে ভাঙে? ভাঙে ছবি বিতর্কিত হ'য়ে রূপ নিয়ে ভাইরাল হ'লে? তার আগে আগাম সাবধান হয় না? বাড়ির অভিভাবক বা প্রশাসন বা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের মনে কেন আগাম বলিষ্ঠ সতর্কতা জারি করা থাকে না তাদের সন্তানসন্ততি, ছাত্রছাত্রী ও দর্শকবৃন্দের উপর? কেন সমাজ সচেতন রবীন্দ্র অনুরাগী এই বিষয়ে নিরন্তর সচেতন করার প্রয়াসে ব্রতী হয় না? তাহলে কি ধ'রে নিতে হবে অযোগ্য অদক্ষ অভিভাবক, সচেতন নাগরিক বা কর্তৃপক্ষ? নাকি উদাসীনতা? সন্তান বা ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বা আম জনতার প্রতি বাৎসল্য? বা আর অন্যকিছু?
এখন স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, এই বসন্ত উৎসব বা যেকোনও উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠানের আগে এবং অনুষ্ঠানের দিন গরীব-বড়লোক, লেখাপড়া জানা-না জানা সর্বস্তরের মানুষের মনে কমবেশী উচ্ছাস জাগে এবং তার মধ্যে জড়িয়ে থাকে অশ্লীলতা। এই উচ্ছাসের মধ্যে যে আদিম অশ্লীলতা ফল্গুধারার মত বইতে থাকে কখন তার সমাপ্তি ঘটে বা সীমাবদ্ধ গন্ডির মধ্যে থাকে? কখন এই আদিম অশ্লীলতার সংস্কৃতি তার সীমাবদ্ধ গন্ডির বাঁধ ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এসে বাঁধ ভাঙা জলের মত ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমাজ ও তার সভ্যতাকে? এই বাঁধকে রক্ষা করতে না পারা বা বাঁধ ভাঙার জন্য কিংবা একেবারেই উৎসকে নির্মূল করতে না পারার জন্য কে বা কারা দায়ী? কি দায়ী?
আর, অনেক রবীন্দ্র অনুরাগীর (?) মত যারা রবীন্দ্র ভারতীর বসন্ত উৎসবের অশ্লীল ছবি পোস্ট করা নিয়ে অস্বস্তি বোধ করে এবং পোস্ট না করার জন্য মন্তব্য করে তাতে ছবি পোস্ট করা নাহয় বন্ধ হ'লো কিন্তু কাজের কাজ কি হ'লো বা হবে? এই সংস্কৃতির মূলে কি হাত পড়বে বা মূল উৎখাত হবে? গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়ার মত ব্যাপারটা নয় কি? আর তাছাড়া এটা সবাই জানি যে, এমনিতেই দু'দিন বাদেই সব বন্ধ হ'য়ে যাবে ও চাপা পড়ে যাবে আবার অন্য কোথাও অন্য রূপে অন্য ঢঙ্গে এই সংস্কৃতির বমন উদ্গীরণ হবে কিন্তু এই আচরণের উৎস কোথায়? কে বা কারা এই আচার ব্যবহার করার ও আমদানি করার জন্য দায়ী? চাপা দিয়ে দিয়ে আর কতকাল বাংলা ও বাঙালির ঘা লুকিয়ে রাখবো বা বমন চেপে রাখবো? একসময় তো একদিন না একদিন উদ্গীরণ হবেই! নাকি? আর বমন উদ্গীরণ না হ'লে বুঝবোই বা কি ক'রে কতটা ভয়ঙ্কর পরিমাণে জমা হয়েছে পৃথিবীর অদ্ভুত জাত বাংলা ও বাঙালির পেটে সমাজ-সভ্যতাকে জ্বালিয়ে খাক ক'রে দেওয়া এসিড! তাই না? কে দায়ী? কার দোষ? আর এর সমাধানই বা কি এবং কোথায়?
এই নিয়ে আলোচনা করার অবকাশ কারও নেই! কারণ বুমেরাং হ'য়ে ফিরে আসবে তা নিজের দিকেই। আর এই জায়গায় আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করানোর সাহস না আছে পিতামাতা, অভিভাবক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীর; না আছে রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় নেতা, প্রশাসক, বিচারক, সমাজ সংস্কারক ইত্যাদির। সবাই অন্যের কোর্টে বল ছুঁড়ে দিয়ে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছি!!!!!! আর, মাঝে মাঝে হটাৎ হঠাৎ কাঁচা ঘুম ভেঙে কুম্ভকর্ণের মত নেবে পড়ছি 'মার ঝাড়ু মার, ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদেয় কর' স্লোগান নিয়ে বিলাসিতায় মোড়া নকল লড়াইয়ের ময়দানে! আর ভাবছি সেই মহান কথা যা আজ বস্তাপচা হ'য়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বাংলার আকাশেবাতাসে: বাংলা আজ যা ভাবে কাল গোটা ভারত তা ভাবে!!!!!!!
No comments:
Post a Comment