Powered By Blogger

Sunday, December 8, 2013

Vox populi vox dei’ নয় Vox expletory vox dei (২)

'DON'T UNDERESTIMATE THE POWER OF A COMMON MAN'

– এই কথাটা কেন ঠিক? লাতিন শব্দগুচ্ছ ‘জনসাধারণের বাণী যদি ভগবানের বাণী’ হয় তাহ’লে স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে অস্বীকার করা, প্রকৃত ক্ষমতা অপেক্ষা কম ক্ষমতা ভাবা নেহাতই মূর্খামি! ভগবানের বাণী মানে সর্ব্বশক্তিমানের বাণী! আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে সর্ব্বশক্তিমানের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করবে কে? সর্ব্বশক্তিমান তো এক এবং অদ্বিতীয়! আর ‘সমাজ কো বদল ডালো’ তত্ত্বে বিশ্বাসীদের কাছে তো জনগণই ঈশ্বর, জনগনই সর্ব্বশক্তিমান! তাঁরা জনগনকেই ঈশ্বরের আসনে বসান। আলাদা ক’রে ঈশ্বরের অস্তিত্ব তাঁরা বিশ্বাস করেন না এবং মানেন না। আর জনগনকেই যে ঈশ্বরের আসনে বসান তার পেছনেও আছে সেই সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বরের আসনে নিজেকে বসাবার গোপন অভিপ্রায় ও অভিসন্ধি! তাহ’লে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে জনগণের ক্ষমতাকে underestimate করে এতবড় শক্তিমান কে? কৈশোর পেরিয়ে যেদিন যৌবনে পা রেখেছিলাম সেদিন থেকে যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় চেপে ছুটতে ছুটতে চলে গেছি বনে-বনান্তরে, শহরে-নগরে, গ্রামে-গঞ্জে; পেরিয়ে এসেছি শিক্ষা-সংস্কৃতি, নাটক, গান, খেলা ও শরীর চর্চা, রাজনীতি, ধর্ম্ম ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাঙ্গণ এই বয়স পর্যন্ত আর নিজেকে নিজে শুধু একটা প্রশ্নই করেছি কৌতূহলবশতঃ, কোন জনসাধারণের বাণী ভগবানের বাণী? সারা জীবন ধ’রে যা দেখেছি, যা শুনেছি, যা বুঝেছি এবং যা অনুভব করেছি সেই অভিজ্ঞতার ওপর দাঁড়িয়ে মেলাতে পারিনি এই প্রবচন বা বহু প্রচলিত ‘ভগবানের বাণী’ এই উক্তি বা তকমাকে জনসাধারণের সঙ্গে! মেলাতে পারিনি সাধারণ মানুষের অসীম ক্ষমতাকে আমার দেখা, শোনা, বোঝা এবং অনুভব করা, হয়তো অন্য অনেকের চেয়ে কম হ’তে পারে কিন্তু এই জীবনের আজকের দিন পর্যন্ত যতটুকু অভিজ্ঞতা লাভ করেছি সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে। আজ পর্যন্ত যতগুলি প্রাঙ্গণে আমি পদচারণা করেছি সবজায়গায় দেখেছি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক বৃত্তি-প্রবৃত্তি। যে বৃত্তি-প্রবৃত্তি আজকের জননায়ক কালকের স্বৈরাচারীর মূলধন। এই মূলধনের জন্যই যে সাধারণ মানুষকে আজ সর্ব্বশক্তিমান ব’লে সুড়সুড়ি দিয়ে ঈশ্বরের সিংহাসনে বসায় সাধারণ মানুষের মাঝে সাধারণ মানুষ হ’য়ে লুকিয়ে থাকা অনিয়ন্ত্রিত বৃত্তি-প্রবৃত্তির বিষাক্ত ছোবলে ক্ষতবিক্ষত আপাত নখদন্তহীন ভয়ংকর ভালো মানুষ নেতৃত্বের সুবাদে, সেই মানুষকেই ওই নেতৃত্ব জ্ঞানতঃ underestimate ক’রে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় নির্ম্মম-নির্দয়ভাবে কুকুরসম ঘৃণ্য বস্তু ম’নে ক’রে। আর বেড়ালের পশ্চাতে ফুঁ দিয়ে ফুলানো নকল বাঘের মত শক্তিমান সাধারণ মানুষ হাওয়া বেড়িয়ে যাওয়া নেতানো বেলুনের মত চুপসে গিয়ে পড়ে থাকে বর্জ্য পদার্থের মত। কেন এমনটা হয়? কি সেই স্বাভাবিক বৃত্তি-প্রবৃত্তি যার জন্য সাধারণ মানুষ অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন সর্ব্বশক্তিমান হওয়া সত্ত্বেও এমন অপমানজনক পরিণতির শিকার হয়? প্রবাদ আছে ‘সব ভালো তার, শেষ ভালো যার’। স্বৈরাচারী শাসকের কথা বাদ দিলাম, সাধারণ মানুষ যদি শক্তিমান হয় আর তার শক্তিতেই যদি বিরাট পরিবর্তন হয় তাহ’লে সেই পরিবর্তনের পরও তার কেন শেষ ভালো হয় না? তার বাণী যদি ভগবানের বাণীই হয় তাহ’লে কেন তার সেই সূর্যের মত অমোঘ সত্য বাণী তাকে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার গভীর অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না? তখনি মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, একটা অন্ধ কি আর একটা অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? অন্তত একটা খোঁড়া লোকও দরকার একজন অন্ধকে কিছুটা পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। ঠিক তেমনি একজন অজ্ঞানী আর একজন অজ্ঞানীকে জ্ঞানচক্ষু দান করতে পারে? অন্তত একজন আধা জ্ঞানীর দরকার একজন অজ্ঞানীকে কিছুটা ঝাপসা হ’লেও দৃষ্টি দিতে। আর ঝাপসা দৃষ্টি দিয়ে আর যাই হ’ক শেষ রক্ষা হয়না। শেষের সেদিন ভয়ংকর হয়। তাহ’লে সাধারণ মানুষ শক্তিমান হ’ল কি ক’রে আর জনগণের বাণী ভগবানের বাণীই বা কি ক’রে হ’ল? সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বর বা ভগবানই তো পুর্ণজ্ঞানী! আর জনগণ যদি পূর্ণজ্ঞানীই হবে তাহ’লে জনগণের বা মানবজাতির বা সমাজের আজ এই শোচনীয় অবস্থা কেন? আর তাও সেই অবস্থার Tradition চলেছে সমানে যুগ যুগ ধরে!!! কেন?

আজ পর্যন্ত পরিচিত-অপরিচিত, চেনা-অচেনা, জানা-অজানা, আত্মীয়-অনাত্মীয়, শত্রু-মিত্র, ভাই-বন্ধু যত মানুষের সংস্পর্শে এসেছি পুর্বে বলা শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে শুরু ক’রে ধর্ম্ম-রাজনীতির প্রাঙ্গণ পর্যন্ত, দেখেছি সবাই আমার মতই ভাঙাচোরা কিম্বা আরও স্পষ্ট ক’রে বললে বলতে পারি চূড়ান্ত ভাঙাচোরা। আরও দেখেছি এই ভাঙাচোরা জীবনকে জোড়া লাগাবার বা সারাবার কোনও ইচ্ছেও নেই এই ভাঙাচোরা মানুষগুলোর। দেখেছি সবাই যে যার নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। কে কাকে পিছনে ফেলে, ল্যাং মেরে, বুকে লাথি মেরে, পিছনে বেইমানি-অকৃতজ্ঞতার ছুরি চালিয়ে, বিশ্বাসঘাতকতার বিষাক্ত ছোবল হেনে এগিয়ে যাবে তার চূড়ান্ত ঘৃণ্য এক প্রতিযোগিতা চলছে। কেউ কাউকে সহ্য ক’রতে পারছে না। লোকদেখানো মিষ্টি একটা হাসি মুখে মেখে সবাই সবার সঙ্গে মিশছে। এদের দেখে চমকে উঠেছি, দেখেছি কি ভয়ংকর এক সত্য অন্ধকার সর্ব্বাঙ্গে মেখে উঠে আসছে গভীর অন্ধকারের পাতাল ভেদ ক’রে। সেই সত্য, শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি। গিরগিটি-কাঁকড়া চরিত্রের অধিকারী সাধারণ শক্তিমানের দল! মুহুর্তে চোখ ওলটাতে ওস্তাদ জনসাধারণের বাণী ভগবানের বাণী-র দল! আমার মত বোকা মানুষ, সরল মানুষ, সাধাসিধে মানুষ, বেকুব মানুষ, লেখাপড়া না-জানা মানুষ, অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ, অশিক্ষিত মানুষ, অজ্ঞানী মানুষ, লোভী মানুষ, অহংকারী মানুষ, পরশ্রীকাতর মানুষ, অলস মানুষ, স্বার্থপর মানুষ, নীচ মনের মানুষ, বিকৃত মানসিকতার মানুষ, কামুক মানুষ, ধান্দাবাজ মানুষ, বেইমান-অকৃতজ্ঞ-বিশ্বাসঘাতক শয়তান মানুষে কিলবিল করছে শক্তিমান সাধারণ মানুষের রুপে! এঁরা powerful common man! এঁদের বাণী ভগবানের বাণী! এঁরাই যুগের পরিবর্তন আনে নরককে স্বর্গে পরিণত করবে ব’লে, আবার সেই পরিবর্তনকে অচলায়তনে পরিণত করেন এই শক্তিমান সাধারণ মানুষেরাই! তাই সত্যিই ওই film-র dialogue-এর মত আমিও বলছি, “DON’T UNDERESTIMATE THE POWER OF A COMMON MAN”. এই powerful common man-দের মূলধন ক’রেই ক্ষমতাই অধিষ্ঠিত হয় আজকের জননায়ক কালকের স্বৈরাচারী শক্তি। আবার এই powerful common man-দের সহায়তায় ‘দশচক্রে ভগবান ভূত’-র মত অর্থাৎ দশজন শয়তান চক্রান্ত ক’রে ভগবান নামক মানুষটাকে যেমন ভূতে পরিণত করে ঠিক তেমনি প্রকৃত জননায়ক-কেও খলনায়কে পরিণত করে স্বৈরাচারী শক্তি। এরা বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা সাধারণ মানুষকে মিষ্টি হেসে Don’t underestimate the power of a common man-এর সুড়সুড়িতে তাতায়। এরাই অনিয়ন্ত্রিত রিপু জ্বরে আক্রান্ত, ভারসাম্যহীন বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে জর্জ্জরিত আমাদের মত অতি সাধারণ মানুষকে ‘Vox populi vox dei’, জনসাধারণের বাণী ভগবানের বাণী, The voice of the people is the voice of the God এই আখ্যায় ভুষিত ক’রে সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বরের অপমান তো করেই সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষকে ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে মিথ্যে তোয়াজে, ফাঁপা খোশামোদির আফিমের নেশায় বুঁদ ক’রে দেয়। ‘Vox populi vox dei’ , Don’t underestimate the power of a common man’ এই সমস্ত শব্দ ভাঙাচোরা সাধারণ মানুষের কাছে আফিম!!!!

অনেকদিন ধ’রে একটা কথা বুকের মধ্যে তোলপাড় করছিল, ওলটপালট ক’রে দিচ্ছিল জীবনটাকে। তাহ’লে কার বাণী ভগবানের বাণী? যার বাণীতে নরক থেকে মর্ত, মর্ত থেকে স্বর্গে পরিণত হয় পৃথিবী, যার বাণীতে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্ব, মনুষ্যত্ব থেকে দেবত্বে উত্তরন ঘটে মানুষের সে-কি এই শক্তিমান সাধারণ মানুষ বা জনসাধারণ? ঠিক এরকম এক সময়ে চোখে পড়ল The greatest phenomenon of the world SriSri Thakur Anukul Chandra-এর একটা Explanation. তিনি ‘Vox populi vox dei’ (জনসাধারণের বাণী ভগবানের বাণী)–র পরিবর্তন ক’রে বলেছেন, ‘Vox expletory vox dei’, (পরিপূরকের বাণীই ভগবানের বাণী)। 

‘জনসাধারণের মনোজগতে বিপ্লব কে আনবে’ এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “বিপ্লব ভাল, কিন্তু বিপ্লবটা হওয়া চাই অমৃতবর্ষী। বিষ-বিপ্লব ভাল না। বিদ্রোহ জিনিসটা ভাল না। অবশ্য for becoming (বৃদ্ধির জন্য) যা’, তাকে আমরা বিদ্রোহ বলি না। বিপ্লব মানে, ভাসিয়ে দেওয়া। বাঁচা-বাড়ার অনুকূল ভাবধারায় সারা দেশকে ভাসিয়ে দিতে হবে। তাই বলি অমৃত-বিপ্লবের প্রয়োজন আছে। বিপ্লব চাই, দানা বাঁধানোর কারিগর চাই। ওরা বলতো Vox populi vox dei (জনসাধারণের বাণী ভগবানের বাণী) কিন্তু সাধারণ মানুষ জানে না, কিসে তাদের ভাল হবে। তাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা হ’লেই তারা মনে করে সর্বোত্তম ব্যবস্থা হ’লো। তাতে তাদের যে সর্বনাশও হ’য়ে যেতে পারে, তা’ তারা বোঝে না। একদল চোরকে যদি আইন করতে দেওয়া যায়, তারা চুরির অনুকূলে আইন ঠিক করবে। ওদের বুদ্ধিই অমনতর, তাই আমার মনে হয়, প্রবৃত্তি-পরতন্ত্রি অজানদের বুদ্ধি বিচারের উপর প্রাধান্য না দিয়ে পূরণ পুরুষ যারা, তাঁদের বাণীর উপর প্রাধান্য দেওয়া ভাল। আমি তাই বলছি Vox expletory vox dei. (পরিপূরকের বাণীই ভগবানের বাণী)। 

তিনি আরো বলেছেন, "পূরণ-পুরুষ মহানদের বাণী ও নির্দেশমত যদি সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাহ’লে আর কোন খাঁকতি থাকে না। ভগবান বলতে আমরা বুঝি ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান, বৈরাগ্য-----এই ষড়গুণের সমাবেশ যাতে আছে, এমনতর মানুষ। বৈরাগ্য না থেকে ঐশ্বর্য থাকলে মানুষ ঐশ্বর্যে আবদ্ধ হ’য়ে পড়ে; আবার ঐশ্বর্য না থেকে বৈরাগ্য থাকলে সে বৈরাগ্য হয় নিষ্প্রভ। ষড়গুণের সুসমাবেশের ভিতর দিয়ে মানুষ পূর্ণতা-স্পর্শী হ’য়ে ওঠে; অর্থাৎ, ওতে ক’রে পরিবেশ সহ ব্যষ্টির বাঁচা-বাড়ার পথ অবাধ হয়। তাই, অমনতর সমাবেশ যাঁদের ভিতর, তাঁদের আমরা যুগে যুগে ভগবান ব’লে পূজা করি। বলি ভগবান রামচন্দ্র, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, ভগবান বুদ্ধ, ভগবান মনু, ভগবান শ্রীচৈতন্য, ভগবান রামকৃষ্ণ ইত্যাদি। শুনেছি God (ভগবান) হয়েছে good থেকে। শিবও যা’, Godও তাই। ভগবানের অবতার মানে মঙ্গলের অবতরণ। জাতির উন্নতি যদি চাই, তবে মূর্ত মঙ্গল যিনি তাঁর শরণাপন্ন হ’তে হবে”।

তাই আমাদের প্রয়োজন অমৃত বিপ্লবের জন্য, আমাদের দানা বাঁধানোর জন্য এমন একজন পূরণ-পুরুষ কারিগর। আর তখনই common man-এর power কা’কে বলে তা’ দেখতে পাবে জগত।
তাই দোলনচাঁপা, সত্য অপ্রিয় হ’লেও যত তাড়াতাড়ি তা’ মেনে নেওয়া যায় এবং মেনে নিয়ে অনুসরণ করা যায় ততই নিজের ও সকলের মঙ্গল। সমাজের মঙ্গল। মানবজাতির মঙ্গল। নতুবা সবটাই সৎসঙ্গের প্রধান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দার বলা কথা, “ফুটো বালতিতে জল ঢালার মত। সে একটা ফুটোও ফুটো, দশটা ফুটোও ফুটো। একটা ফুটো দিয়ে আস্তে আস্তে আর দশটা ফুটো দিয়ে তাড়াতাড়ি। জল কিন্তু বেরিয়ে যাবে”। 

এখন মানা না-মানা সবটাই ব্যাক্তিগত ব্যাপার। শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র একটা অত্যন্ত সহজ-সরল কথা বলেছেন, “মানা আর জানা দুই ভাই। মানতে হ’লে জানতে হবে, আর জানতে হ’লে মানতে হয়”!!
ক্রমশঃ

শুরু হোক পথ চলা।

 ঐশিকা হয়তো এমন একটা দিন আসবে যখন আমরা দেখবো বিজ্ঞানীরা আকাশে কৃত্রিম সূর্য তৈরী ক'রে পাঠাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে অন্ধকারকে চিরতরে দূর করার জন্য!!! তাহ'লে আমরা কি বুঝবো? মানুষের প্রয়োজনে, সভ্যতার অগ্রগতির কারণে বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু তাই ব'লে কি আমরা বলব মানুষের তৈরি সূর্য আর ঈশ্বরের সৃষ্টি সূর্য এক? বিজ্ঞানীর তৈরী সূর্য আর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট সূর্য-এর মূল্যায়ন কি একই সারিতে রেখে হয়? যেদিন মহাকাশের ওই আদি ও অকৃত্রিম ঈশ্বর সৃষ্ট সূর্য নিভে যাবে সেদিন কি খোদার ওপর খোদকারি করা অহংকারী দেমাকি মানুষ বা মানুষের তৈরী কৃত্রিম সূর্য পৃথিবীকে হিম শীতল গভীর অন্ধকারের অতল গহ্বর থেকে বাঁচাতে পারবে??? পারবে না। ঐশিকা সত্য বড় নির্মম। সবাই যে যার জায়গায় সত্য! কেউ কারও জায়গা নিতে পারে না। নিতে গেলেই মুশকিল। এটা মনে রাখতে হবে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ীই সবার সবকিছুর সহাবস্থান। এ অবস্থানকে মেনে নিয়ে এবং মাথায় রেখে চলতে হবে সবাইকে। এই অবস্থানকে যে বা যারা ভাঙতে যাবে তাকেই প্রকৃতির রোষে পড়তে হবে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ীই ঝরা পাতার মত সে ঝরে পড়ে যাবে। এর জন্য কাউকে কিছু করতে হবে না ঐশিকা! শুধু একটু ধৈর্য নিয়ে নির্বিকার ভাবে দেখে যেতে হবে। ঐশিকা কারও জন্য বা কোনও কিছুর জন্য কিম্বা কাউকে খুশি বা অখুশি করার জন্য সামনে এগিয়ে চলা থামানো যাবে না। মনে রাখতে হবে ঐশিকা 'You have come to fulfill not to destroy'!!!! এখন পিছন ফিরে তাকাবার সময় নেই। আর সেই যুগও নেই কেউ কারও জন্য ঢাক পেটাবে। সবাই যে যার নিজের ঢাক নিজে পেটাতেই ব্যস্ত। ব্যস্ত নিজেকে নিয়েই। এখন  ‘যার ধন তার নয়, নেপোয় মারে দই’-এর যুগ। এখন ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত, আমি আবার তোমার আঙ্গুল ধরতে চায়’ বললে বাড়িয়ে দেবে তেল চকচকে বাঁশ। আমরা সবাই একা। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে ঐশিকা। বিশ্বাস রাখতে হবে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’- এই বাণীর ওপর। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার আর এই অন্ধকারের মাঝে বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা এগিয়ে চলো। চলতে চলতে সাথী পাবেই এ-বিশ্বাসও রেখো অন্তরে, তবে বেকুবী ক’রো না। ধরণী আর কতবার দ্বিধা হবে? ধরণীর বুকেও ব্যথা হয় একথা ভুলে যেও না। ধরণী চান তার সন্তান মানে তুমি সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝেও মাথা উঁচু ক’রে দাঁড়াও। এগিয়ে চল সামনে। শুধু এগিয়ে চলা, অন্তহীন এই চলা!!!! ঠিকই বলেছো, তুমি তোমার মত লিখে যাও। এই আত্মবিশ্বাস একদিন তোমাকে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের মত প্রতিষ্ঠা দেবে। অসম্ভব কথাটা জীবনের অভিধান থেকে একেবারে মুছে ফেল। কে বলল ফেসবুকে গল্প লেখায় তোমার চরম মূল্যায়ন হ’য়ে গেছে?  তাহ’লে এই লেখাটা কিসের মূল্যায়ন? ফেসবুকে বা ব্লগে কারও জন্য লেখা বন্ধ করাটা বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত নয়। কারও জন্য লিখতে যেও না। কে কি বলছে দেখতে যেও না। লিখে, লেখার বিষয়বস্তুতে নিজে আনন্দ পাচ্ছো কিনা দেখ। আর তারপরে শুধু লিখে যাও, আর লিখে যাও। এ-প্রসঙ্গে The greatest phenomenon of the world SriSri Thakur AnukulChandra-এর কথা মনে পড়ে গেল। তোমার যদি এতটুকু কাজে লাগে বা সুবিধা হয় আগামীদিনে পথ চলতে তাই লিখলাম। ঠাকুর বলেছেন, “এগিয়ে যাও, কিন্তু মেপে দেখতে যেও না কতদুর এগিয়েছ; তাহ’লে আবার পিছিয়ে প’ড়বে। সরল হও, কিন্তু বেকুব হ’য়ো না। বিনীত হও, তাই ব’লে দুর্ব্বল-হৃদয় হ’য়ো না। তোমার একটু উন্নতি হ’লেই দেখবে কেউ তোমাকে ঠাকুর বানিয়ে ব’সেছে, কেউ মহাপুরুষ ব’লছে, কেউ অবতার, কেউ সদগুরু ইত্যাদি বলছে; আবার, কেউ শয়তান, বদমায়েশ, কেউ ব্যবসাদার ইত্যাদিও বলছে; সাবধান! তুমি এদের কারো দিকে নজর দিও না; তোমার পক্ষে এঁরা সবাই ভূত, নজর দিলেই ঘাড়ে চেপে ব’সবে, তা’ ছাড়ানও মহা মুশকিল। তুমি তোমার মত কাজ ক’রে যাও, যা’ ইচ্ছা তাই হোক”।শুরু হোক পথ চলা। নতুন ক’রে শুরু হ’ক আবার গল্প লেখা। এবং তা অবশ্যই আমাদের জন্য ফেসবুকে ও ব্লগে ভালো থেকো ও সবাইকে ভালো রেখো।      


রিভিউ।

 ঐশিকা বসুর লেখা ও ফেসবুকে পাঠানো ‘সরকারি চাকরি’ গল্পটা পড়লাম। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা একটা নতুন স্বাদের গল্প। সম্ভাবনাময় কলম ও তার সুপ্ত শক্তির আগামী সংকেত এক ঝলক আলো ফেলে গেল লেখাটায়। প্রথমেই বলি, চাকরি সরকারি, সত্যি খুবই দরকারি। তবে একইসঙ্গে এমন বিয়োগান্তক পরিণতি ও ব্যাঙ্গাত্মক পটভূমিতে সরকারী চাকরি!? রাজনীতি ও সরকারী নপুংশতার নজিরবিহীন ছবির প্রদর্শনী গল্পের ছোট্ট পরিসরে সবাক বাহবা না নির্বাক বিস্ময় কোনটা প্রাপ্য? কলমচি দ্বিধাগ্রস্থ! গল্পের শাঁস লাল সিগন্যালের মত সমালোচনার জন্য বিশেষণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মুহূর্তের জন্য কলমের গতি থামিয়ে দেয়, এর জন্য ঐশিকাকে ধন্যবাদ অনেক বার্তা বয়ে নিয়ে এল ‘সরকারী চাকরি’।  নাড়ির টানের মহিমা আবার প্রমানিত আগাম সাড়া পাওয়ার অতীন্দ্রিয় শক্তির প্রশ্নে। তাই মায়ের কথা না শোনার পরিণতি অবশ্যম্ভাবী। তথাকথিত পড়াশোনায় ভালো ছেলে বা বন্ধুত্বের চরিত্রের প্রশ্নে শাওন বা সন্দীপনরা-ই সমাজের আদর্শ। পদবিগুণের মাহাত্ম্য আজও ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আসন সংরক্ষণ বা দারিদ্রসীমার নীচে অবস্থান প্রশ্নে মাপকাঠি দারিদ্রতা বা পিছিয়ে পড়া জাতি নয়, মাপকাঠি এক টুকরো সরকারী সীলমোহর দেওয়া কাগজ আর দাদাভাইয়ার যোগাযোগ। যার কোনটাই দুপুরের ছিল না। ঐশিকা এটাই দুপুরের drawback বা অযোগ্যতা। যা পাশের বাড়ির দর্পণ বা অনুপের চাকরি পাওয়ার প্রশ্নে দুপুরের মনে সার্থকভাবেই প্রতিফলিত। অমিত, রাহুলের মত পথভ্রষ্ট বন্ধুরা এখনো আছে বলেই সূর্য পুর্ব দিকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়। এরা বাড়ির খেয়ে মোষ তাড়াতে সিদ্ধহস্ত। এদের মত কারও কারোর মধ্যে একটা অপরাধবোধ কিছুটা হলেও কাজ করে যেহেতু এরা তথাকথিত ভালো বা ভদ্রছেলে বা বন্ধু নয়। তবে এরা উত্তর মেরুতে একজন থাকলে অন্যজন দক্ষিণ মেরুতে অবস্থান করে। আর ঐশিকা অমিতদের মুখে অশ্লীল শব্দপ্রয়োগে সাহসিকতার সঙ্গে বলিষ্ঠ মানসিকতার মধ্যে দিয়ে বাস্তবতার প্রকাশ ঘটলেও সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া কিম্বা শব্দ অসম্পুর্ণ রেখে সম্পুর্ণ অর্থ প্রকাশের কৌশল রপ্ত করা যেতেই পারে মাইগোলা কোম্পানীতে দুপুরের রেজিগনেশনের প্রশ্নে ঐশিকার কলমে ‘যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর’ ঘুরিয়ে আবার প্রতিষ্ঠিত। আর এক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ী মহলে অনার্য ব’লেই খ্যাত। এদের কাছে কর্মীদের জীবনের কোন মুল্য নেই কর্মীদের একথা মাথায় রাখতে হবে। আর মাথায় রাখতে হবে এখানে যারা মাথায় ব’সে কাজ করে তারা মানবিক দিক থেকে ল্যাংড়া। আর দুপুর সঠিকভাবেই বলেছে, সে প্রয়োজনের তুলনায় এখানে কিছুই পেত না। আর এর থেকে ভাল খবর আর কিছুই হ’তে পারে না। প্রকারান্তরে পা ভালো থাকতেও মানসিকভাবে সে তো সবদিকেই ল্যাংড়া-ই ছিল। আর নতুন ক’রে না-হয় বোমার আঘাতে শারীরিক ভাবে ল্যাংড়া হ’ল। তা-তে কি! বিনিময়ে আর্থিক ল্যাংড়ামো তো ঘুচল! এই সমাজ ব্যবস্থায় কিছু হারিয়েই তো কিছু পেতে হয়! এর থেকে বেশী আর কি? এ-তো আর রাম রাজ্য নয় ঐশিকা সমাজকে কলমের খোঁচায় ল্যাংড়া ক’রে দিল, না-কি রেখেঢেকে রাখা ল্যাংড়া সমাজকে উলঙ্গ ক’রে দিল দিনের আলোয় সকলের মাঝে!? কোনটা? এখানেও কলমচি দ্বিধাগ্রস্থ। সাবাশ ঐশিকা, সাবাশ!!!                          

Sunday, November 17, 2013

বোধের ঘরের বন্ধ জানালা........

 অষ্টমীর রাতে একটা T.V channel-এ বৈঠকি আড্ডাই শুনছিলাম রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ঈশ্বর বিষয়ক আলোচনায় তিনি এক জায়গায় বলছেন, ব্রহ্মা খোশামুদি, তেল খাওয়া পছন্দ করতেন। কেউ একটু খোশামুদি করলেই তাকে বর দিয়ে বসতেন। মহিষাসুর তাকে খুব তেল দিয়ে তোয়াজ ক’রে অমরত্ব প্রার্থনা করল। তখন ব্রহ্মা বলল, অমরত্ব দান করার ক্ষমতা আমার নেই। ওটা নারায়ণের ব্যাপার। অমরত্ব লাভের জন্য তোমায় নারায়ণের কাছে যেতে হবে। আমার এক্তিয়ারে যতটুকু ক্ষমতা আছে তা’ আমি তোমায় দিতে পারি। ব্রহ্মা তার এক্তিয়ারে বরাদ্দ ক্ষমতা সমস্ত উজাড় ক’রে দিলেন মহিষাসুরের জন্য। কিন্তু দিয়ে বললেন, তোমায় অমরত্ব দিতে না পারলেও আমি তোমায় বর দিলাম, তোমায় কোন পুরুষ মারতে পারবে না। তাই মহিষাসুরকে বধ করতে মা দুর্গার আবির্ভাব এখানে রঞ্জনবাবুর বলা ব্রহ্মার তেল খাওয়া বা খোশামোদের প্রসঙ্গে The greatest phenomenon of the world Sri Sri Thakur Anukul Chandra-এর একটা কথা মনে পড়ে গেল। একবার এক ভদ্রলোক আশ্রমে বেড়াতে এসেছিলেন। কথায় কথায় তিনি ঠাকুরকে নিজের চাকরী সম্বন্ধে বললেন,‘আমি খোশামোদ করতে পারি না, তাই আমার উন্নতি হয়না’। রঞ্জনবাবুর কথামতো ভদ্রলোকের অফিসের বস ব্রহ্মার মত তেল বা খোশামোদ পছন্দ করেন। ভদ্রলোককে দৈত্য বা অসুরদের মত উন্নতি যদি করতে হয় তাহ’লে ব্রহ্মা রুপী অফিসের বসকে তেল দিতে হবে, খোশামোদ করতে হবে। যাইহোক ভদ্রলোকের প্রশ্নের উত্তরে শ্রী শ্রী ঠাকুর তাকে দরদ ভরে বুঝিয়ে বললেন, ‘খোশামোদ করতে যাবে কেন? তবে স্তুতি করতে হয়। প্রত্যেকের বাস্তব গুণগুলি দেখতে হয়, সেগুলির তারিফ করতে হয় তাতে নিজেরও উন্নতি হয় আর, প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য বুঝে মনোজ্ঞ ব্যবহারে সকলকে মুগ্ধ ক’রে তাদের হৃদয় জয় করতে হয়। তখন প্রয়োজন মত তাদের তুমি সংশোধনও করতে পার। আর, এইভাবে যদি চল, মানুষকে তুমি তোমার আদর্শে অনুপ্রানিত ক’রে তুলতে পারবে। এতে মানুষ সহজেই তোমাতে স্বার্থান্বিত হ’য়ে তোমার শ্রীবৃদ্ধির সহায়ক হবে। তুমি সম্মান ও খ্যাতিলাভ করবে, সুখী হবে, পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে সম্প্রীতি বেড়ে যাবে তোমার’
রঞ্জনবাবু দৈত্য বা অসুররাও এক একজন বড় সাধক। সাধনার মধ্যে দিয়ে তারা পিতা ব্রহ্মার বর লাভ করেছে, কেউ শিবের বর লাভ করেছে। রাবণ বা হিরণ্যকশিপু এবং আরও অন্যান্য অনেক বড় ক্ষমতাবান সাধকের উদাহরণ আছে। কিন্তু তাদের সাধনার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য বা কারণ ছিল আত্মস্বার্থ বা আত্মপ্রতিষ্টা। তাই, তাঁদের অর্জিত শক্তি বা ক্ষমতা জগতের অকল্যানের কারণ হ’য়ে ওঠে। আবার রাবণের সন্তান অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন মেঘনাদ আর হিরণ্যকশিপুর সন্তান বিষ্ণুর পরম ভক্ত প্রহ্লাদ। অসাধারণ দুই ব্যাক্তিত্ব! এগুলি কি তেল বা খোশামোদের ফসল? তেল বা খোশামোদি ব্যাক্তিত্ব এমন অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চরিত্র হ’তে পারে না বা তাঁদের এমন সন্তান জন্মায় না। এটা জন্ম বিজ্ঞানে স্বীকৃত। আত্মস্বার্থ ও আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্যে  বা আত্মকেন্দ্রিকতা ও হীনমন্যতা থেকে সাধনা শুরু না হ’য়ে ব্রহ্মা বা শিবকে খুশি করবার মধ্যে দিয়ে যদি এদের সাধনা শুরু হ’ত তাহ’লে স্বয়ং বিষ্ণুকে রাম বা নরসিংহ রুপে কিম্বা দশ দিকের দশ অধিদেবতার সম্মিলিত রুপ মা দুর্গা-কে আসতে হ’ত না। রঞ্জনবাবু পিতা ব্রহ্মা জানতেন তাঁর এই সন্তান সাধনার মধ্যে দিয়ে অর্জিত ক্ষমতা লাভের পর অহং মত্ততায় পথ হারাবে একদিন। তাই ঐ পুরুষের হাতে মৃত্যু নেই বিধান! অমরত্ব লাভের বর প্রার্থনা এবং তা প্রদান এই দুইয়ের মধ্যে বর প্রার্থনাকারির সাধনায় সিদ্ধি লাভের পর বর প্রার্থনায় চালাকি এবং বর প্রদানকারীর অসম্ভব প্রার্থনা পুরণের ক্ষেত্রে বর প্রদানের প্রশ্নে অম্লান ভক্তির কাছে অসহায়তার ফলস্বরুপ এমন বিধান! রঞ্জনবাবু আপনি তো জানেন কলমের শক্তি তরবারির শক্তির চেয়েও ভয়ংকর। সেই কলমের শক্তির অধিকারী যারা  তারা (আপনিও তার মধ্যে একজন) একটা সাধনা বা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এই শক্তি অর্জন করেছেন। এছাড়া জন্মগত সংস্কার বা পুর্বপুরুষের রক্তধারা সাধনায় সিদ্ধিলাভের প্রধান উপায় ছিল এই শক্তির অধিকারীদের। তা’ রঞ্জনবাবু এই কলমের শক্তির অধিকারীদের কলম থেকে যা’ নির্গত হচ্ছে তা’ কি রাবণ বা হিরণ্যকশিপুদের জীবন থেকে নির্গত শক্তির সমতুল্য নয়? কলমের ভয়ংকর   নীল মূত্রপাতে কি সমাজ-সংসার ভেসে যাচ্ছে না? আর তা’ছাড়া আমার মত যারা সমাজের ফালতু তারা না দেবতাদের মতন না অসুরদের মত শক্তির অধিকারী। আমরা ত্রিশঙ্কুর মত যুগ যুগ ধরে ঝুলছি। না স্বর্গে যেতে পারছি, না মর্তে ফিরে আসতে পারছি। রঞ্জনবাবু, দৈত্যদের বা অসুরদের ট্র্যাক চেঞ্জ করার একটা মস্ত উপায় বা সুযোগ আছে। বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে খুশি করার পরিবর্তে ইষ্টপ্রীত্যর্থে যদি সাধনা শুরু হয় তাহ’লে দস্যু রত্নাকর বাল্মীকিতে, দস্যু সল সেন্ট পল-এ রুপান্তরিত হয়। আর তাছাড়া রঞ্জনবাবু, পিতা হওয়ার সুবাদে এটা বুঝেছি যে, সন্তান যদি আমার কথা না শোনে তাহ’লে কি কষ্ট হয়। সেই কষ্ট থেকেই বুঝতে পারি, পিতা ব্রহ্মার কষ্ট কি পরিমানের। সম্ভবত সব পিতারই কম-বেশি এই অব্যক্ত চাপা কষ্টের অভিজ্ঞতা আছে। মহিষাসুরের মৃত্যুতে পিতা ব্রহ্মার হাত থাকলেও সন্তানের মৃত্যুতে পিতার কষ্ট হয়েছিল বইকি। এ-প্রসঙ্গে পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের একটা কথা মনে পড়ে গেল। ঠাকুর এক ভক্তের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “দুঃখ পাই প্রবৃত্তিমুখী হ’য়ে। আশু যদি আপনার কথা না শুনে নিজের খেয়ালে চ’লে দুঃখ ভোগে, সেখানে কি আপনি ঠেকাতে পারেন? আপনি তো চান না যে সে বেচাল চলনে চ’লে দুঃখ পায়, কিন্তু কথা যদি না শোনে কীই বা আপনি করতে পারেন? হয়তো শাসন করতে পারেন, কিন্তু শাসন করলেও যদি না শোনে”? তাই ঐ বৈঠকি আড্ডা শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, পূর্ণতার শরণে দেখার ঝাপসা দৃষ্টি স্বছ হ’য়ে যায়। বোধের ঘরের বন্ধ জানালাগুলি খুলে যায়।          
   



কিছু প্রশ্ন!! কিছু কৌতূহল!!



 বিবেকানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতার ধর্ম, ঈশ্বর, গুরু সম্পর্কিত প্রচারগুলি মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন ও কৌতূহলের জন্ম দেয়। ব্যাপারগুলি সব জট পাকিয়ে যায়। মনচড়ুই মনের আয়নায় পথ খুঁজে পাবার আশায় ঠুকরে মরে; বলে, পথ কোথায়! পথ কোথায়! প্রথমতঃ বিবেকানন্দ ছিলেন পরমপুরুষ রামকৃষ্ণের শিষ্য। রামকৃষ্ণ ছিলেন বিবেকানন্দের GOAL. নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণের স্পর্শে বিবেকের আনন্দকে উপলব্ধি ও অনুভব করে বিবেকানন্দ হয়েছিলেন । বিবেকানন্দ হলেন পরমপুরুষ শ্রী স্রী রামকৃষ্ণ ও আমার মাঝে সেতু স্বরুপ। ওপারে যেতে হলে যেমন সেতুর প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি আমার GOAL-এ পৌঁছতে হ'লে বা Living Supreme Being  রামকৃষ্ণের কাছে যেতে হ'লে সেতু রুপী বিবেকানন্দের প্রয়োজন। বিবেকানন্দ আমাদের লক্ষ্য বা GOAL নয়। আবার বিবেকানন্দ ব্যাতিরেকে রামকৃষ্ণের কাছে পৌঁছনো সম্ভব নয়। কারণ তিনি উপলব্ধবান ও অনুভবি পুরুষ যাকে ছাড়া রামকৃষ্ণের কাছে পৌঁছনো সম্ভব নয়। যেমন সম্ভব নয় রামকৃষ্ণকে ছাড়া নিরাকার ঈশ্বর বা ব্রহ্মে যারা বিশ্বাসী তাদের পক্ষে সেই নিরাকার ঈশ্বর বা ব্রহ্মে পৌঁছনো। আর যারা নিরাকার ঈশ্বর বা ব্রহ্মকে উপলব্ধি বা অনুভব করেছেন তারাই একমাত্র জানেন নিরাকার ঈশ্বর বা ব্রহ্ম বা সৃষ্টির পিছনে যে কারণ আছে সেই পরম কারণিক বা কারণপুরুষ স্বয়ং মানুষের রুপ ধরে মানুষের মাঝে জন্ম নেন। আর এই উপলব্ধবান বা অনুভবি অহং মুক্ত মানুষেরা তখন সাকার ঈশ্বর বা সাকার ব্রহ্মে আত্মসমর্পণ করেন। আর তা যদি না হয় তাহ’লে বুঝতে হবে কঠিন অহং রোগে আক্রান্ত সেই ব্যাক্তি, সে যত বড় ক্ষমতাবান সর্বোৎকৃষ্ট ব্যাক্তিত্ব হোক না কেন। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে বিবেকানন্দের পরিচয়ে রামকৃষ্ণের পরিচয় নয়, রামকৃষ্ণের পরিচয়ে বিবেকানন্দের পরিচয়। রামকৃষ্ণকে উহ্য রেখে কিম্বা আরো বলা ভালো সরাসরি উপেক্ষা করে বিবেকানন্দকে নিয়ে মাতামাতি  বিবেকানন্দ বেঁচে থাকলে কি মানতেন? আমার মনে হয় বিবেকানন্দ মানতেন না; এ-আমার দৃঢ়ও বিশ্বাস। যা' ইদানিং ভীষণ ভাবে প্রকট। আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং গতবছর এবং এবছরও পুজোর বিভিন্ন উদ্বোধনে শুনেছি বিবেকানন্দকে নিয়ে স্বামীজিরা যত কথা খরচ করেন রামকৃষ্ণকে নিয়ে তার দশ ভাগের এক ভাগও করেন না। আর সমস্ত মানুষ সে রাজনৈতিক দলেরই হ’ক  আর অন্য কোনো সংগঠনের হ’ক বিবেকানন্দ নিয়ে কথা বলতে তারা যতটা সাবলীল ও আগ্রহী কিন্তু যার আলোতে আলোকিত বিবেকানন্দ তাঁকে স্বীকৃতি দিতে, তাঁর কথা বলতে কোথায় যেন একটা অস্বস্তি, একটা লজ্জা ফুটে ওঠে সবার মধ্যে বা ততটা আগ্রহী নয় তাঁকে এড়িয়ে, তাঁকে পিছনে ফেলে, ভুলিয়ে দিয়ে বিবেকানন্দের জীবন, জীবন সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনা, বিবেকানন্দের সমাজ জীবন ও সমাজ জীবনের ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং এর প্রতিকারের সমাধান বা বিধান সম্পর্কে বলতে গর্ব বোধ করেন। এ-প্রসঙ্গে The greatest phenomenon of the world, The divine man of the present, The Living Supreme Being Sri Sri Thakur Anukul Chadra-এর একটা কথা মনে পড়লো, কিছু স্বামীজীর সঙ্গে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। সেই সময় স্বামীজীদের কাছে রামকৃষ্ণ ব্যতিরেকে বিবেকানন্দ প্রসঙ্গ অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ হ’য়ে ওঠে ও প্রাধান্য পায়। তখন আলোচনাকালে কথাপ্রসঙ্গে তিনি দুঃখ করে স্বামীজীদের বলেছিলেন, "আমার বিবেকানন্দী রামকৃষ্ণ ভালোলাগে না, আমার রামকৃষ্ণী বিবেকানন্দ ভালোলাগে” এই এক কথার মধ্যে দিয়ে তিনি যা’ বলবার বা বোঝাবার বলে দিয়েছিলেন বা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন স্বামীজীদের হিন্দিতে একটা কথা আছে, ‘সমঝদারোকে লিয়ে ইসারা কাফি হোতা হ্যাঁয়’। আমার বিশ্বাস, বিবেকানন্দ যদি জীবিত থাকতেন আর একথা শুনতেন বা জানতেন তাহ’লে স্বামীজীদের সাবধান করে দিতেন। যা’ তিনি তাঁর স্বল্প সময়ের অবস্থানের জন্য পাননি। এ-প্রসঙ্গে সৎসঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের পরবর্তী প্রজন্ম সৎসঙ্গের প্রধান আচার্যদেব সৎসঙ্গীদের প্রাণপুরুষ শ্রী শ্রী বড়দার ভুমিকা স্মরণীয় ঠাকুরের প্রয়াণের পর স্রী স্রী বড়দাকে নিয়ে কিছু অতি উৎসাহী সৎসঙ্গীদের মধ্যে ভালোবাসার আধিখ্যেতাকে লক্ষ্য করে তা’ মাত্রা ছাড়াবার আগেই বড়দা সৎসঙ্গীদের সাবধান করে দিয়ে বললেন, “তোমরা আমাকে যে যা নামে সম্বোধন কর না কেন আদত কথা আমি স্রী স্রী ঠাকুরের কুকুর”। এই এক কথায় লক্ষ লক্ষ সৎসঙ্গী বুঝে গেছিল একথার অন্তর্নিহিত অর্থ। বুঝে গেছিল ইষ্টানুসরণ ও আচার্যানুসরণ এর মর্মার্থ। বুঝেছে আচার্যানুসরণের প্রয়োজনীয়তা। ফলে লক্ষ্যচ্যুত হয়নি সৎসঙ্গী সমাজ। লক্ষ্যচ্যুত হয়নি ঠাকুরের মিশন হাজার প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও স্রী স্রী বড়দার বজ্রকঠিন ব্যক্তিত্বে ও নেতৃত্বে সৎসঙ্গীরা বুঝেছে ঠাকুর হলেন GOAL আর স্রী স্রী বড়দা হলেন সেই GOAL-এ পৌঁছোবার সেতু। ঠাকুরের কাছে পৌঁছতে হ’লে সেতু রুপী স্রী স্রী বড়দার অনুসরণ প্রয়োজন অর্থাৎ Realized Man  বড়দার চলন অনুসরণ অবশ্য প্রয়োজন। কেমন করে ঠাকুরকে ভালোবাসতে হয়, কেমন করে ঠাকুরমুখী হ’তে হয়, কেমন করে ঠাকুরের ইচ্ছেগুলি আমার ইচ্ছেতে পরিণত করতে হয় তা’ তাঁর কাছ থেকে শিখে নিতে হয়। তাই ভক্তদের তাঁকে প্রয়োজন। ভক্তদের অজ্ঞানতা, ভক্তির আধিখ্যেতা, ভালোবাসার বাহুল্য, অনিয়ন্ত্রিত প্রেম, মৌখিক ও লোকদেখানো আকুলতা, ভণ্ডামি, নিজের ইচ্ছেমত ঠাকুরের যাজনের নামে গাজন সবকিছুকেই ধরিয়ে দেন, শুধরে দেন তিনি। যে ধরতে না চায়, শুধরাতে না চায় সে প্রকৃতির নিয়মেই ঝরা পাতার মত ঝরে যায়। এ- প্রসঙ্গে স্রী স্রী ঠাকুরের সাবধান বাণী স্মরণীয়। তিনি বললেন, “তুমি যা’ করছো বা ক’রে রেখেছো ভগবান তাই গ্রাহ্য করবেন, আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিকও তেমনি। ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না”। যা’র জন্য এর আগে যতবার এসেছেন পরমপুরুষ ততবারই মাত্রা হারিয়ে বেলাইন হয়েছে তামাম ভক্তকুল। যার যা’ ইচ্ছা হয়েছে তাই করেছে পরম পুরুষকে নিয়ে সিদ্ধপুরুষের ভঙ্গিতে। আর সাধারণ মানুষ, ভাঙাচোরা মানুষ, বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা মানুষ, অজ্ঞানী অনিয়ন্ত্রিত মানুষ, হাজার ভুলে ভরা মানুষ, অচেতন মানুষ, বেকুব মানুষ, শারিরিক, মানসিক, আত্মিক দুর্বল মানুষ, অশিক্ষিত ও লেখাপড়া না জানাওয়ালা মানুষ ইত্যাদি আমরা তাদের দ্বারা পরিচালিত হ’য়ে জীবনকে ও পারিপার্শ্বিককে করেছি ও করছি ধ্বংস। তাই সৎসঙ্গীরা প্রধান আচার্য দেবের নেতৃত্বে অনুকূল নামের পেয়ালায় তাঁর বীজ নামের সুরা ভরে পান করতে করতে মাতাল হ’য়ে ছুটে চলেছে তাঁর মিশন প্রতিষ্ঠায়। তাঁর মহিমার কথা, দয়ার কথা, ভালোবাসার কথা, প্রেরণার কথা, বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার কথা, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র গঠনের কথা এক কথায় জীবনকে ঘিরে যা’ কিছু সমস্ত কথা তুলে ধরে মানুষের কাছে সৎসঙ্গীরা প্রধান আচার্য দেবের দেখানো পথে। এইজন্য ঠাকুরের কথা অনুযায়ী, ঠাকুরের দেখানো পথে সৎসঙ্গীদের বলা উচিত বা হয়ত বলেনও, ‘রামকৃষ্ণী বিবেকানন্দের মত অনুকুলি বড়দা’।
এবার প্রশ্ন জাগে মনে, ভগিনী নিবেদিতাকে বলা হয় তিনি বিবেকানন্দের শিষ্যা। কেন? তিনি কি পরমপুরুষ পুরুষোত্তম সদ্গুরু প্রিয়পরম স্রী স্রী রামকৃষ্ণের শিষ্যা নন? তিনি সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হ’য়ে এসেও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মালিক Saviour of Mankind, Supreme Beloved, Living Supreme Being, Living GOD, The Almighty জীবন্ত ঈশ্বরের চরণে আশ্রয় কি পেলেন না? বিবেকানন্দ কি গুরু ছিলেন? বিবেকানন্দ যেখানে নিজেই রামকৃষ্ণের শিষ্য ছিলেন সেখানে নিবেদিতাকে নিজের শিষ্য করলেন কিভাবে? তিনি কি জানতেন না রামকৃষ্ণই একমাত্র লক্ষ্য বা গুরু, তিনি নন? এপ্রসঙ্গে স্রী স্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের বলা সত্যানুসরণের একটা বাণী মনে পড়ল। তিনি বললেন, “গুরু হ’তে চেয়ো না, গুরুমুখ হওয়ার চেষ্টা কর”। অর্থাৎ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মালিক নররুপী নারায়ণ রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, হজরত মোহাম্মদ, চৈতন্য মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ এবং সর্বশেষ স্রী স্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র ছাড়া গুরু কেউ নন “গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ। গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ স্রীগুরুবে নমঃ”। এই গুরুবন্দনা কার জন্য? একমাত্র নররুপী ঈশ্বর, ভগবান, আল্লাহ্‌, খোদা, GOD বা LORD-ই গুরু। রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ এবং সর্ব্বশেষ অনুকূলচন্দ্র এঁদের জন্যই এই গুরু বন্দনা। এঁদের ছাড়া এই গুরুবন্দনা কোনও সাধকের জন্য নয়। “অখণ্ডমন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম। তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ স্রীগুরুবে নমঃ”। অখণ্ড মণ্ডলাকারে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে অবস্থিত কার চরণকে প্রণাম জানাই ভক্তকুল?
এই প্রসঙ্গে স্রী স্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেন, “গুরু মানেই সদ্গুরু, আচার্য। গুরু-পুরুষোত্তমই সচ্চিদানন্দের মূর্ত বিগ্রহ, তিনিই রূপায়িত ঈশ্বর-প্রেরণা, তিনিই আত্মিক-শক্তির প্রোজ্জ্বল প্রকাশ, অস্তিবৃদ্ধির পরম অমৃতপথ দুনিয়ার যত দ্বন্দ্বের মাঝে অন্বয়ী সার্থকতার সারকেন্দ্র তিনিই। তাঁকে ভালবেসে, তাঁর ইচ্ছা পরিপূরণ ক’রে তঁদনুগ আত্মনিয়ন্ত্রণে, তাঁরই সঙ্গ, সাহচর্য ও সেবার ভিতর দিয়ে মানুষ ঈশীস্পর্শ লাভে ধন্য হয়। আর, গুরু-পুরুষোত্তমকে direct (সরাসরি) যারা না পায়, তারা তঁদনুবর্ত্তী আচার্য-পরম্পরার ভিতর দিয়ে তাঁর ভাবটাই কিছু না কিছু পায়। ঐ ভাব যখন মলিন ও ম্লান হ’য়ে যায়, উবে যাবার মতো হয়, বিকৃতিতে আচ্ছন্ন হ’য়ে ওঠে , মানুষকে ঈশীস্পর্শে সঞ্জিবিত ক’রে তোলবার জন্য তখন তিনি আবার মানুষ হ’য়ে আসেন, মানুষের মধ্যে তাদেরই একজন হ’য়ে বিচরণ করেন, আর নিজের আচরণ দিয়ে প্রতি পদক্ষেপেই দেখিয়ে দেন, কেমন ক’রে মানুষ ঈশ্বরেরই হ’য়ে চলতে পারে সব কিছুর মধ্যে। তাই গুরু তিনিই, আর তাঁর অভাবে তঁদ্ভাবভাবিত, তঁৎচলননিরত যারা তাঁরা। যেখানে কারও কিছু হয়েছে, কেউ কিছু পেয়েছে----তা’ অমনতর গুরুকে ধ’রেই। অবশ্য, নামকো-ওয়াস্তে ধরলে হবে না, তাঁকে অনুরাগভরে অনুসরণ করা চাই। আবার, একথাও স্মরণ রাখতে হবে----সদ্গুরু শুধু means (উপায়) নন, তিনি নিজেই goal (উদ্দেশ্য)”   
কিন্তু আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় জগতের যে কোনও ব্যক্তি বা সাধককে তাদের ভক্তকুল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে দেন। এখানেই ধর্ম সম্পর্কে নাস্তিকদের নাক সিটকানোর সুযোগ। নিবেদিতার এতদিনের সাধনা কি বৃথা গেল? এত কাছে এসেও অমৃতের স্বাদ পেল না? তাহ’লে সাধনায় কি কোনও খামতি ছিল? পরমপিতা রামকৃষ্ণকে ছেড়ে তিনি বিবেকানন্দকে গুরু রুপে বরণ করলেন? কেন? আর কেনই বা বিবেকানন্দ তাঁকে শিষ্যারুপে গ্রহণ করলেন? বিবেকানন্দ কি নিবেদিতার গুরু ছিলেন? সমস্ত কিছু জানা সত্ত্বেও, বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণকে ভগিনী নিবেদিতার থেকে আড়াল করলেন নাকি নিবেদিতাকে রামকৃষ্ণ থেকে আড়াল করলেন? কেন? এপ্রশ্নের উত্তর কোথায়? আমার মনে হয় ব্যাপারটা যেভাবে দেখানো হয় আসলে ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। প্রচারটার মধ্যে কোথাও অতিশয়োক্তি বা ভক্তির আধিক্য অথবা ভুল বিশ্লেষণ আছে। স্রী স্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শিষ্যদের যেমন শিষ্যত্ব গ্রহণের পদ্ধতি বা মাধ্যম হিসাবে ঋত্বিক সম্প্রদায় আছে। তাঁরা দীক্ষা দেন। দীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ঠাকুরের সঙ্গে যুক্ত ক’রে দেন এবং করণীয় কর্তব্য বলে দেন এই মাত্র। কিন্তু ঐ ঋত্বিক সম্প্রদায় কখনোই সৎসঙ্গীদের কাছে গুরু নন বা সৎসঙ্গীরা তাঁদের শিষ্য নন। ঋত্বিক সম্প্রদায় কখনোয় সে অধিকারের অধিকারী নন, যদিও বহু ঋত্বিক ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের উচ্চ মার্গের পুরুষ যারা নিজেরাই এক একজন গুরু হয়ে বসতে পারতেন।  আর ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা প্রধান আচার্যদেব স্রী স্রী বড়দা ও বর্তমান আচার্যদেব স্রী স্রী বড়দাদা ও পরম পূজনীয় বাবাইদাদার কথা না’হয় নাই বললাম। শুধু এটুকুই বললে যথেষ্ট, ‘বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার’! নিবেদিতার ক্ষেত্রেও আমার মনে হয় হয়তো প্রচার পর্বে কোথাও কোনও গণ্ডগোল হয়ে আছে যা’ পরবর্তী সময়ে কেউ উদ্যোগ নেয়নি বা সাহস করেনি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বা ভুল শুধরে নিতে। আর বিবেকানন্দের ক্ষেত্রে বিরামহীন ব্যস্ততা ও অল্প সময়ের মধ্যে প্রস্থান হয়ত তাঁকে সে সুযোগ থেকে বঞ্ছিত করেছে। এ ব্যতিরেকে যদি অন্য কিছু হয় তবে তা দুর্ভাগ্য কিম্বা বিধির লিখন বলে ধরে নিতে হবে। স্বয়ং সাকার ঈশ্বর বা ব্রহ্ম যেখানে উপস্থিত সেখানে তাঁর চরণে আশ্রয় না পাওয়া ধর্ম জগতে বা আধ্যাত্মিক জগতে ঈশ্বর আরাধনায় সিদ্ধ বা সিদ্ধ্বা বলে খ্যাত মানুষদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। এর চেয়ে সাধারণ ভাঙ্গাচোরা মানুষরা অনেক বড় ভাগ্যবান বা সিদ্ধ বা সিদ্ধ্বা বলা যেতে পারে। এর থেকে বোঝা যায় ধর্ম জগতটা বড় গোলমেলে! আর এই গোলমালের ব্যাপারটা ধর্ম জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা বা ভক্তরাই তৈরী করেছে তাদের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আধা জ্ঞানের অহঙ্কারে বা অজ্ঞানতায়। আর এই জন্যই মনে হয় মূলের সঙ্গে যোগ না থাকলে স্রোত হারিয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয় একসময়ের কুলকুল ক’রে বয়ে চলা নদী। যদি সত্যি সত্যিই শেষ জীবনে নিবেদিতা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে তাহ’লে হয় বুঝতে হবে স্বাভাবিক ভাবেই পরম পুরুষ রামকৃষ্ণের পূর্ব রুপের প্রতি আকর্ষণ হ’তেই পারে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই, এ স্বাভাবিক। আর তা’ যদি না হয় তাহ’লে প্রচার অনুযায়ী বলতে হয় তাঁর ধর্মীয় জীবনে, আধ্যাত্মিক জীবনে কোথাও অপূর্ণতা, খামতি, অতৃপ্তি ও তৃষ্ণা ছিল। হয়তো কোথাও তাঁর না পাওয়ার একটা খেদ ছিল। তাই কিছু একটা খুঁজে পাওয়ার তীব্র তাগিদে সামনে দিগন্ত বিস্তৃত মহাসমুদ্রের বুকে মিশে যাওয়া নীল আকাশকে ফেলে পিছন দিকে, সূর্যকে পিছনে ফেলে তাঁকে ছুটতে হয়েছিল। রামকৃষ্ণের মধ্যেই তো তিনি ভগবান বুদ্ধকে পেতেন!! কেন পেলেন না? রামকৃষ্ণের মধ্যেই পূর্ববর্তী অবতার-মহাপুরুষরা সবাই আছেন। কেন তিনি রামকৃষ্ণের মধ্যে তাঁদের ঝলক দেখতে পেলেন না!!! তবে কি রামকৃষ্ণ সম্পর্কে তাঁর কোন interest ছিল না? তিনি বিবেকানন্দের মধ্যেই নিজেকে সম্পূর্ণ concentrate করেছিলেন? তাই সামনে অবস্থিত পুর্ণতার মুর্ত রুপ, নব রুপ রামকৃষ্ণকে ফেলে তাঁর পুর্ব রুপ বুদ্ধদেব রুপী পূর্ণতার পিছনে ছুটেছিলেন শেষ জীবনে পূর্ণতা লাভের আশায়? তবে কি তিনি রামকৃষ্ণকে চিনতে পারেননি!! আধ্যাত্মিক জগতে তবে কি এতবড় ব্যর্থতা!! ভাবতে বসলে সব ওলোট-পালোট হ’য়ে যায়। কেন তিনি রামকৃষ্ণ থাকতে বিবেকানন্দকে গুরু করলেন, কেনই বা বিবেকানন্দ তাঁকে শিষ্য করলেন, বিবেকানন্দ কি তাঁকে রামকৃষ্ণের প্রকৃত পরিচয় দেননি, ভগিনী নিবেদিতা কি রামকৃষ্ণকে চিনতে পারেননি???? এরকম নানা প্রশ্নে মাথাটা এলোমেলো হ’য়ে যায়। প্রশ্ন মনে আসতেই পারে কিন্তু কে উত্তর দেবে? যাই হোক, স্পুটনিক-এর যুগে গোরুর গাড়ির ব্যবহার মানে সময় ও স্রোতের উলটো দিকে চলা। যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী সময়ের তালে পা ফেলতে না পারা। স্পুটনিক-এর যুগে বসে স্পুটনিকের মেকানিজম দিয়েই অনুভব করতে হবে গোরুর গাড়ির মেকানিজম। গোরুর গাড়ির মেকানিজম দিয়ে স্পুটনিকের মেকানিজম বোঝা যায় না। দুটোই যুগোপযোগী গতির মাধ্যম। যখন যেমন প্রয়োজন তখন তেমন তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাঁর আবির্ভাব।
এপ্রসঙ্গে The divine man of the present স্রী স্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের বলা অনেক বাণীর যে-কোনো একটা স্মরণীয়। ঠাকুর বললেন, “সকলেই পূর্ণ, সবাই বরিষ্ঠ, বড় কথার মধ্যে রয়েছে পরিপূরণ। যখন যেমন প্রয়োজন তখন তেমন আবির্ভাব----  যুগপ্রয়োজন পরিপূরণের জন্য। যুগে যুগে সেই একজনই আসেন, পূর্ব্বতন ও পরবর্ত্তীর মধ্যে---তাই রয়েছে অচ্ছেদ্য সঙ্গতি। বিবর্ত্তনের ধারা এইভাবে এগিয়ে চলেছে। তাই, একজনকে খাটো ক’রে আর-একজনকে বড় করা ভালো নয়। স্রী কৃষ্ণের মধ্যে রামচন্দ্রকে দেখি না, বুদ্ধদেবের মধ্যে স্রী কৃষ্ণকে খুঁজে দেখি না—এই যে দোষ। বর্ত্তমানের মধ্যে পূর্ব্বতনকে খুঁজে দেখার বুদ্ধি যদি আমাদের থাকে, তাহ’লে তাঁর মধ্যে পূর্ব্বতন প্রত্যেককে আমরা পেতে পারি এবং তাঁকে কেন্দ্র ক’রে সমগ্র মানব-সমাজ ঐক্যবদ্ধ হ’য়ে উঠতে পারে----প্রত্যেকে স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যে অক্ষুণ্ণ থেকে। ‘স পূর্ব্বেষামপি গুরুঃ কালেনানবচ্ছেদাৎ’। আপনার মধ্যে আপনার বাবা আছেন, ঠাকুরদা আছেন, পূর্ব্ব-পূর্ব্ব পুরুষ সবাই আছেন--- তাঁদেরই বিবর্ত্তিত রূপ। আজকের দিনে তাই পূর্ব্ববর্ত্তী কোন অবতার-মহাপুরুষকে যদি বুঝতে চাই, তবে বর্ত্তমান পূরয়মাণ অবতার-মহাপুরুষ যদি কেউ থাকেন, তাঁর মধ্যে দিয়েই বুঝতে পারব। নচেৎ তাঁর সন্ধান পাব না। আবার প্রেরিত, তথাগত, অবতার-মহাপুরুষ বা পুরুষোত্তম যারা, তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যে সব aspect-ই (দিকই) থাকে; affair(বিষয়) দরকার, তখন টের পাওয়া যায়, নচেৎ প্রয়োজনোপযোগী কতকগুলি aspect (দিক) prominent (প্রধান) ও active (সক্রিয়) দেখা যায়, অন্য সব aspect (দিক)-এর spark (ঝলক) মাঝে-মাঝে দেখা যায়”।……..

কোন বিষয়ের ব্যাখ্যা যার যার নিজের মত হয়। জ্ঞানের গভীরতা তথা পুর্ণতার ওপর ব্যাখ্যার গভীরতা, নিখুঁততা বা পুর্ণতা নির্ভর করে। আমার মনে হয়, প্রচারিত তথ্য বা ব্যাখ্যা অনুযায়ী এইভাবে যদি দেখা যায় তাহ’লে বলা যেতে পারে, ভগিনী নিবেদিতা যদি জীবন্ত নররূপী ঈস্বর রামকৃষ্ণকে চিনতে পারতেন এবং রামকৃষ্ণের মধ্যে জীবন্ত নররূপী ভগবান বুদ্ধকে খুঁজে দেখতেন তাহ’লে রামকৃষ্ণের মধ্যেই বুদ্ধকে খুঁজে পেতেন এবং রামকৃষ্ণকে কেন্দ্র ক’রে তাঁর আধ্যাত্মিক জীবন সার্থক হ’য়ে উঠত, ফলে সমগ্র মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার পথিকৃৎ হ’য়ে থাকতেন ভগিনী নিবেদিতা বৌদ্ধ দর্শনের প্রতি নিবেদিতার শেষ জীবনে ভালোবাসা বা আকৃষ্ট হওয়ার প্রশ্নে শেষ জীবন বা প্রথম জীবন ব’লে কোন কথা থাকত না বা সময়ের ব্যবধান থাকত না। একই কথা বিবেকানন্দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদিও প্রচার অনুযায়ী অবশ্য বিবেকানন্দের ওপরেও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব পড়েছিল, পড়তেই পারে; আর এটা স্বাভাবিক। এই প্রচার যদি negative aspect থেকে সত্য হ’য়ে থাকে তাহ’লে ধ’রে নিতে হ’বে বোধের কোথাও গন্ডগোল আছে। আর তা’ অবশ্যই ব্যাখ্যার দিক থেকে। কারণ কোনও ধর্মের সঙ্গে কোনও ধর্মের প্রকৃতপক্ষে কোনও বিরোধ বা তফাৎ নেই। সব ধর্মই পারিপার্শ্বিক বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার কথায় বলে। পারিপার্শ্বিক সহ বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠাকে যা’ যা’ ধ’রে রাখে তাই ধর্ম। পূর্ণতা অর্জনের জন্য, চরম শ্রেষ্টতা লাভের পথে এগিয়ে চলার জন্য, প্রকৃষ্ট কৌশল রপ্ত করার জন্য, জীবনে সম্পূর্ণাবস্থা প্রাপ্ত হওয়ার জন্য, প্রকৃষ্ট গুণ বা জ্ঞান লাভ করার জন্য যা’ যা’ দরকার বা যা’ আমায় পথ দেখায় অর্থাৎ আমার সাধনা, আমার চেষ্টা, আমার অনুশীলন ইত্যাদি এবং যা’ কিছু আমার অস্তিত্বকে, আমার বিদ্যমানতাকে,পারিপার্শ্বিক সহ আমার বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠাকে ধ’রে রাখে তাই ধর্ম্ম। স্রী স্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেন, “ধর্ম্ম যদি না’ ফুটলো তোর সংসার মাঝে নিত্ত্য কর্মে, বাতিল ক’রে রাখলি তা’রে, কি হবে তোর তেমন ধর্ম্মে?” ঠাকুর তাঁর ভক্ত বা অনুগামীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আমার ইচ্ছা ছিল, আপনাদের এমন ক’রে তৈরী করি যে, আপনাদের অপারা, অজানা কিছুই থাকবে না। বিশ্ববিজ্ঞান, কারখানা ইত্যাদি করার পিছনেও আমার ঐ উদ্দেশ্য। কি বিজ্ঞানের দিক দিয়ে, কি যন্ত্রপাতির দিক দিয়ে---কোনও দিক দিয়ে আমাদের দেশের খাঁকতি থাকে, তা’ আমার ভাল লাগে না। ধর্ম্মের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আপনারা সব ব্যাপারে অদ্বিতীয় হ’য়ে  ওঠেন, এই আমার ইচ্ছা। এই বাস্তব দক্ষতা যদি না ফোটে, তবে ধর্ম্ম হয়ে দাঁড়ায় শুধু কথার কথা। শিক্ষা কাকে বলে, সভ্যতা কাকে বলে, কৃষ্টি কাকে বলে, দেবদক্ষ চৌকস মানুষ কাকে বলে, আমার বড় সাধ হয় তার নমুনা দেখাতে।......” তাই সব ধর্ম্মই যুগোপযোগী আধুনিক । বরং বলা ভাল সব মতই যুগোপযোগী আধুনিক। মত বললাম এই জন্য যে ধর্ম্ম সম্পর্কে বোধের জায়গাটা স্রী স্রী ঠাকুর পরিস্কার ও স্বচ্ছ ক’রে দিয়েছেন। ঠাকুর বললেন, “যার-উপর যা’-কিছু সব দাঁড়িয়ে আছে তাই ধর্ম্ম, আর তিনিই পরমপুরুষ। ধর্ম্ম কখনও বহু হয় না, ধর্ম্ম একই আর তার কোন প্রকার নেই। মত বহু হতে পারে, এমন-কি যত মানুষ তত মত হ’তে পারে, কিন্তু তাই ব’লে ধর্ম্ম বহু হ’তে পারে না। হিন্দুধর্ম্ম, মুসলমানধর্ম্ম, খৃষ্টানধর্ম্ম, বৌদ্ধধর্ম্ম ইত্যাদি কথা আমার মতে ভুল, বরং ও-সবগুলি মত। কোনও মতের সঙ্গে কোনও মতের প্রকৃতপক্ষে কোনও বিরোধ নেই, ভাবের বিভিন্নতা, রকমফের- একটাকেই নানাপ্রকারে একপ্রকার অনুভব! সব মতই সাধনা বিস্তারের জন্য, তবে তা’ নানাপ্রকারে হ’তে পারে; আর যতটুকু বিস্তারে যা’ হয় তাই অনুভূতি, জ্ঞান। তাই ধর্ম্ম অনুভূতির ওপর”। 

Saturday, November 16, 2013

সাড়া!!


শরীরে আগুন জ্বালিয়ে সে ডেকেছিল আমায়
সে ডাকে সাড়া দিয়ে যাওয়া হয়নি আমার।
শুধু একা একা পুড়েছি দুজনাই।
যদি পুড়লাম দুজনেই
তবে আলাদা আলাদা
একা একা পুড়লাম কেন? বুঝলাম না!
পুড়তেই যদি হবে
পুড়ি না কেন তবে, দোঁহে ?
সে-কি লজ্জা, ভয় না-কি অক্ষমতা
বা অন্য আরো অনেক কিছু?
আগুন হ’য়ে ডেকেছিল যে,
আগুন হ’য়ে যায়নি তার কাছে।
বলা ভালো, যাওয়া হয়নি তার কাছে।
এমন উদার স্বতঃস্ফূর্ত উষ্ণ আহবান !
হে ভগবান! করেছি উপেক্ষা!
জানি-না কি সে শক্তি
করেছিল পিছনে অপেক্ষা!
নিজের কাছে নিজেই রহস্যময়!
মনে জাগে বড় ভয়!
হ’য়ে বিস্ময়, প্রশ্ন করি,
শীতের রাতের দুর্লভ উষ্ণতা
নিভে যায় ধীরে ধীরে,
সক্ষমতা ছাই হ’য়ে ঝ’রে পড়ে অবশেষে!
কেন? কেন যাওয়া হয়নি?
এ-কি অভিমান, অসহায়ত্ব ? না-কি
আরো বড় আগুনের তাপ করেছিল অভিভূত!
অথচ পুড়েছি, পুড়েছি অন্তরের অন্দরে
নীরবে নিভৃতে একাকী!
অভিমান নরক কি মূল,
অসহায়ত্ব কাপুরুষতার প্রতিফলন
কিম্বা অবৈধতার ভয়।
আর, আরো বড় আগুন-
সে-কি? সে-কি ঈশ্বর?

কামনার আগুনে পুড়ি সেবিছ ঈশ্বর!!
পথ কোথায়!!!

অশ্লীল ও বাধ্যবাধকতা প্রশ্নে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো বর্তমান পৃথিবীর আধুনিক সভ্যতা। সামাজিক দায়বদ্ধতা মানুষকে সহনশীল করে তোলে। এখন copyist- দের যুগ। মৌলিকত্ব বা উদ্ভাবনী শক্তি এখন কোথায় পাব? প্রশ্ন জাগে মনে! আর মৌলিকত্ব ছাড়া তো সহনশীলতা একা থাকে না। দর্শন শব্দটার সঙ্গে একটা গভীর সুদূরপ্রসারী প্রগাঢ় জীবনবোধ জড়িয়ে আছে। কবি নজরুলরা জন্মায়। স্বাতন্ত্রতা সেই কবিদের মধ্যে থাকে যারা জন্মায়। কবির মুল্যবোধ, কবির সত্যপ্রতিজ্ঞ সত্যনিষ্ট বিশ্বাস জন্মানো কবির ব্যাক্তিত্বকে দৃঢ় মজবুত ক’রে কবিকে স্বাতন্ত্রতা দান ক’রে স্বতন্ত্র মানুষে পরিণত করে। আর তখন তাঁরা সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে, দেখতে ও শুনতে শেখে। পরিশ্রম করে স্কুলের হেডমাস্টার হওয়া যায় কিন্তু নজরুল বা রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের  জন্মসিদ্ধ ব্যাক্তিত্বরা পৃষ্টপোষকতা-কে বিনিময় ক্ষেত্রে পরিণত করে না। নিজের চোখ দিয়ে দেখা, নিজের কান দিয়ে শোনা, নিজের মুখ দিয়ে বলা তাদের সহজাত ব্যাপার। বৃত্তি-প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত তথাকথিত ব্যাক্তিতরা পৃষ্ট-পোষকতার শ্রীচরণে নিজেদের প্রতিভাকে সমর্পণ করে। তখন নীল কালি নীল মুত্রে পরিণত হয়। আর তখন নীল মুত্রের ক্ষারে জ্বলে যায় সমাজ জীবন। এরা আদর্শের কথা বলে আদর্শহীন জীবনের অধিকারী হয়ে! এরা শৃঙ্খলার কথা বলে বিশৃঙ্খল চলনার পৃষ্টপোষক হ’য়ে! এরা সভ্যতার ধ্বজা ওড়ায় অসভ্যতার নিশান হাতে! এরা সাম্যের বাণী আওড়ায় চুড়ান্ত বিলাসিতার প্রাসাদের চূড়ায় শুয়ে! গরীবের জন্য এদের অন্তরাত্মা বিলিতি দামী সুরার ঢেকুর তুলে ডুকরে কেঁদে ওঠে। বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের কোনও দোষ বা ভুল এদের চোখে পড়ে না বা পড়লেও To err is human ব’লে সন্তর্পণে এড়িয়ে যায়। এঁরা তেলা মাথায় তেল দেওয়ার নিপুণ খেলায় সিদ্ধহস্ত। অথচ কোনও অখ্যাত সাধারণ ব্যাক্তি যারা এঁদের খ্যাতির চুড়ায় উঠবার সিঁড়ি বা মূলধন তাদের কোনও অসাধারণ performance-এর বেলায় এঁদের চোখ তমসাচ্ছন্ন থাকে কিন্তু সামান্যতম ভুল বা দোষের বেলায় এঁদের চোখ সহানুভুতিহীন হয়ে পড়ে সেই পৃষ্টপোষকতা কিম্বা দুর্বল চিত্তের কারণে। পৃষ্টপোষোকদের দয়ায় প্রতিভাহীন, পরিশ্রমবিমুখ বহু ব্যাক্তিত্ব প্রতিনিধিদের কথা ছেড়ে দিলেও পরিশ্রম ক’রে, লড়াই ক’রে যারা উপরে উঠে আসে তাঁদেরও কিন্তু নজর থাকে সেই ভাগারের দিকেই। আদর্শের ভয়, ধর্মের ভয় এঁদের আদর্শ বিরোধী, ধর্ম বিরোধী ক’রে তোলে এবং নীল মূত্রের তীব্র ক্ষারের শক্তিতে শক্তিমান হ’য়ে এরা অধর্ম ও অনাদর্শের পরিবর্তে ধর্ম ও আদর্শকে সজ্ঞানে ঘায়েল করে। কিন্তু নানারকম জটিল পরিস্থিতিতে, নানা রঙ্গিন পরিবেশের চাপে আদর্শহীন, ধর্মহীন মানুষ, সাধারণ দিশেহারা মানুষ, পথভ্রষ্ট মানুষ, মনের জগতে সম্পুর্ণ অনিকেত মানুষ আজ এই সমস্ত ব্যাক্তিত্বের দ্বারা ছড়ানো-ছেটানো নতুন নতুন অভিভূতির দ্বারা আক্রান্ত। এই সমস্ত অতি সাধারণ মানুষেরা এই নানারকম ভয়ংকর পরিস্থিতিতে প’ড়ে এই সমস্ত ব্যাক্তিত্ত্বের দ্বারা আলোকিত, মোহিত ও রঞ্জিত হ’চ্ছে। ফলে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক; কি সত্য, কি মিথ্যা; কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ; কোনটা আসল, কোনটা নকল আজ সাধারণ মানুষের কাছে ডালে-চালে খিচুড়ি হ’য়ে গেছে। আলাদা করা আজ কঠিন! আজ ভয়ঙ্কর সমস্যা জর্জরিত পীত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। পথ কোথায়!!!

Friday, November 15, 2013

মানা, না-মানা।

মানা, না-মানা। 

মন বলল, যাকে সত্য বলে মনে করছো
আসলে তা হয়তো সত্য নয়,
মরুভূমির মাঝে মরীচিকা যারে কয়!
পাপপুণ্য জানি না, জানি শুধু সত্য।
পালন থেকে হবে পতন;
সত্য হননে যদি থাকি মত্ত।  
স্বর্গ থেকে নেবে আসা গঙ্গা
বহু ধারায় হয়েছে বিভক্ত,
মূল ধারা বয়ে যায় অনাবিল অনন্ত!
পিছে থাকে অলকানন্দা
শাখা প্রশাখা হ'য়ে কলুষিত।
মূল থেকে হ'য়ে বিচ্ছিন্ন
গতি হ'লে রুদ্ধ,
প্রাণহীন পচা ডোবায় হবে পরিণত;
পবিত্র জলাশয় জেনো,
এ-তো চিরসত্য।
অমৃতের মাঝেই আছে লুকিয়ে মৃত,
যেমন সুধা ভাণ্ডারে জ্বলন
থাকে আবৃত হ'য়ে আদৃত!
উড়াইয়া ছাই যদি পাই অমূল্য রতন,
এ- বোধিরে রাখিবো জড়ায়ে হৃদয় মাঝারে,
করিব মণিসম যতন!
রিপু জ্বরে হ'য়ে কাহিল,
শান্তির খোঁজে ফেরে বৃথা শ্রীযুক্ত শ্রীল......,
প্রভুর দুয়ারে দুয়ারে শোণিতাক্ত পায়ে!
বৃত্তি প্রবৃত্তি যারে দংশিল।
পাষাণী হৃদয় নয়, প্রভু প্রেমময়!
চরণ পুজা নাহি মাঙ্গে,
মাঙ্গে মগ্নতা 'চলনময়'
অনুষ্ঠানে বাঁধি তাঁরে
পথ পাওয়ার তরে,
অচল করে রাখি তাঁরে
 'করা' বাতিল করে!
পাওয়ার ঘরে সঞ্চিত অবশেষে
দুঃখ,কষ্ট আর কান্না!  
হে ঈশ্বর! জানি, এ আমার একান্তই,

এসব  মানা আর  না-মানা।