পথ কোথায়!!!
অশ্লীল ও বাধ্যবাধকতা প্রশ্নে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো বর্তমান পৃথিবীর
আধুনিক সভ্যতা। সামাজিক দায়বদ্ধতা মানুষকে সহনশীল করে তোলে। এখন copyist- দের যুগ। মৌলিকত্ব বা উদ্ভাবনী শক্তি এখন কোথায় পাব? প্রশ্ন
জাগে মনে! আর মৌলিকত্ব ছাড়া তো সহনশীলতা একা থাকে না। দর্শন শব্দটার সঙ্গে একটা
গভীর সুদূরপ্রসারী প্রগাঢ় জীবনবোধ জড়িয়ে আছে। কবি নজরুলরা জন্মায়। স্বাতন্ত্রতা
সেই কবিদের মধ্যে থাকে যারা জন্মায়। কবির মুল্যবোধ, কবির সত্যপ্রতিজ্ঞ সত্যনিষ্ট
বিশ্বাস জন্মানো কবির ব্যাক্তিত্বকে দৃঢ় মজবুত ক’রে কবিকে স্বাতন্ত্রতা দান ক’রে
স্বতন্ত্র মানুষে পরিণত করে। আর তখন তাঁরা সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে,
দেখতে ও শুনতে শেখে। পরিশ্রম করে স্কুলের হেডমাস্টার হওয়া যায় কিন্তু নজরুল বা
রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের
জন্মসিদ্ধ ব্যাক্তিত্বরা পৃষ্টপোষকতা-কে বিনিময় ক্ষেত্রে পরিণত করে না।
নিজের চোখ দিয়ে দেখা, নিজের কান দিয়ে শোনা, নিজের মুখ দিয়ে বলা তাদের সহজাত
ব্যাপার। বৃত্তি-প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত তথাকথিত ব্যাক্তিতরা পৃষ্ট-পোষকতার
শ্রীচরণে নিজেদের প্রতিভাকে সমর্পণ করে। তখন নীল কালি নীল মুত্রে পরিণত হয়। আর তখন
নীল মুত্রের ক্ষারে জ্বলে যায় সমাজ জীবন। এরা আদর্শের কথা বলে আদর্শহীন জীবনের
অধিকারী হয়ে! এরা শৃঙ্খলার কথা বলে বিশৃঙ্খল চলনার পৃষ্টপোষক হ’য়ে! এরা সভ্যতার
ধ্বজা ওড়ায় অসভ্যতার নিশান হাতে! এরা সাম্যের বাণী আওড়ায় চুড়ান্ত বিলাসিতার
প্রাসাদের চূড়ায় শুয়ে! গরীবের জন্য এদের অন্তরাত্মা বিলিতি দামী সুরার ঢেকুর তুলে
ডুকরে কেঁদে ওঠে। বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের কোনও দোষ বা ভুল এদের চোখে পড়ে না বা
পড়লেও To err is human ব’লে সন্তর্পণে এড়িয়ে যায়। এঁরা
তেলা মাথায় তেল দেওয়ার নিপুণ খেলায় সিদ্ধহস্ত। অথচ কোনও অখ্যাত সাধারণ ব্যাক্তি
যারা এঁদের খ্যাতির চুড়ায় উঠবার সিঁড়ি বা মূলধন তাদের কোনও অসাধারণ performance-এর বেলায় এঁদের চোখ তমসাচ্ছন্ন থাকে কিন্তু সামান্যতম
ভুল বা দোষের বেলায় এঁদের চোখ সহানুভুতিহীন হয়ে পড়ে সেই পৃষ্টপোষকতা কিম্বা দুর্বল
চিত্তের কারণে। পৃষ্টপোষোকদের দয়ায় প্রতিভাহীন, পরিশ্রমবিমুখ বহু ব্যাক্তিত্ব প্রতিনিধিদের
কথা ছেড়ে দিলেও পরিশ্রম ক’রে, লড়াই ক’রে যারা উপরে উঠে আসে তাঁদেরও কিন্তু নজর
থাকে সেই ভাগারের দিকেই। আদর্শের ভয়, ধর্মের ভয় এঁদের আদর্শ বিরোধী, ধর্ম বিরোধী ক’রে
তোলে এবং নীল মূত্রের তীব্র ক্ষারের শক্তিতে শক্তিমান হ’য়ে এরা অধর্ম ও অনাদর্শের
পরিবর্তে ধর্ম ও আদর্শকে সজ্ঞানে ঘায়েল করে। কিন্তু নানারকম জটিল পরিস্থিতিতে, নানা
রঙ্গিন পরিবেশের চাপে আদর্শহীন, ধর্মহীন মানুষ, সাধারণ দিশেহারা মানুষ, পথভ্রষ্ট
মানুষ, মনের জগতে সম্পুর্ণ অনিকেত মানুষ আজ এই সমস্ত ব্যাক্তিত্বের দ্বারা
ছড়ানো-ছেটানো নতুন নতুন অভিভূতির দ্বারা আক্রান্ত। এই সমস্ত অতি সাধারণ মানুষেরা
এই নানারকম ভয়ংকর পরিস্থিতিতে প’ড়ে এই সমস্ত ব্যাক্তিত্ত্বের দ্বারা আলোকিত, মোহিত
ও রঞ্জিত হ’চ্ছে। ফলে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক; কি সত্য, কি মিথ্যা; কোনটা ভালো,
কোনটা মন্দ; কোনটা আসল, কোনটা নকল আজ সাধারণ মানুষের কাছে ডালে-চালে খিচুড়ি হ’য়ে
গেছে। আলাদা করা আজ কঠিন! আজ ভয়ঙ্কর সমস্যা জর্জরিত পীত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি
আমরা। পথ কোথায়!!!
No comments:
Post a Comment