Powered By Blogger

Sunday, March 31, 2024

উপলব্ধি ৩২ চরণতলে ঠাঁই দাও দাও দাও গো এবার যাবার আগে।

ঐ একটাই জায়গা যেখানে আশ্রয় নিলে জীবনে কখনো কোনদিন কোনও বিপদ আসে না। কোনও ভুল হয় না। ভুলের ভুলভুলাইয়ার ঘুলঘুলিতে ঘুরে মরতে হয় না। জন্ম স্টেশন থেকে মৃত্যু স্টেশন পর্যন্ত শুধু সফলতা আর সফলতা। শুধু আনন্দ আর আনন্দ। শুধু প্রাপ্তি আর প্রাপ্তি। তবে তা' কিন্তু আকাশের ভগবান নয়, বোবা ভগবান নয়, মন্দিরে মন্দিরে মাটির বা পাথরের ভগবান নয়; জীবন্ত ঈশ্বরের চরণে আশ্রয় নিতে হয়, জীবন সঁপে দিতে হয় আর চরণাশ্রয় মানে তাঁর চলনাশ্রয়। চলনাশ্রয় মানে? জীবন্ত ঈশ্বরের চলনকে নিজের চলন ক'রে তোলা। জীবন্ত ঈশ্বর মানে? রক্তমাংসসংকুল আমান ঈশ্বর। ঈশ্বর পুত্র নয়; হয়তো ঈশ্বর নিজেকে নিজে ঈশ্বর পুত্র বলেন কিন্তু জীবন্ত ঈশ্বরকে ঈশ্বর পুত্র বলা আমার ভালো লাগে না, বরং ভালোলাগে বলতে স্বয়ং ঈশ্বর! আমি বলিও তাই, জীবন্ত ঈশ্বর! পৃথিবীর ৮০০কোটি মানবের পিতা, পরমপিতা।

তিনি কে? তিনি মর্যাদা পুরুষ পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ The greatest phenomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।
গ্রহণ ও বর্জন আপনা আপনা। পিতাকে, পরমপিতাকে মানা আর না মানা নিজের নিজের রুচি ও শিক্ষার ব্যাপার। মানলে ভালো আর না মানলে কালো, ঘোর কালো। মানা অর্থাৎ জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ আর না মানা অজ্ঞানতার জগতে নিমজ্জন। 
( লেখা ৩১শে মার্চ, ২০১৮)

Saturday, March 30, 2024

কবিতাঃ ভুল এবার যা।

যত গণ্ডগোল মত প্রকাশের ভঙ্গীতে।
যত গণ্ডগোল মত প্রকাশের ভঙ্গীতে।
সংযম নিরুদ্দেশ! তোমরা দেখেছো কেউ তাকে?
একই কথা একটু অন্যভাবে, অন্যভঙ্গিতে বলা যেতে পারে?
লাশ না, পলাশ..........."মন্দাক্রান্তা শাবাশ! এমনিভাবেই.......
কলম! ঝরুক ঝরঝর ঝর্ণা, প্রেমবৃষ্টি!
চাই না এই অসহ্য গরমে তোমার অগ্নিবৃষ্টি।
কবি! আবার মনে পড়ে গেল,
'তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন??
বন্ধু! তেজ ভালো, ভালো রাগ।
যদি থাকে সাথে সোহাগ!
কবি! কেন প্রতিবাদ? কেন প্রতিরোধ?
যদি অসুরক্ষিতই হয় ঐ নিরোধ!?
কবি! এত অভিমান! এত রাগ!
অভিমানের চেয়ে রাগ ভালো,
রাগের চেয়ে অনুরাগ!
কবি শ্রীজাত! কবি মন্দাক্রান্ত!
প্রতিক্রিয়ায় থাকো ধীর, থাকো স্থির,
হ'য়ো না অশান্ত।
শুধু ভুল ধরালেই বন্ধু দায়িত্ব শেষ হয় না;
ঠিকটা দেখিয়ে দিয়ে ভুলকে বলতে হবে, 
ভুল এবার যা।
( লেখা ৩০শে মার্চ। ২০১৭ / শেষ স্ট্যাঞ্জা ৩০শে মার্চ। ২০১৮)
























চিঠীঃ সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি। (১)

আমার প্রিয় গুরুভাইবোন,
বর্তমান করোনা নামক ভয়ঙ্কর জৈবিক মারণাস্ত্রের আঘাতে যখন গোটা বিশ্ব ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত, যখন সমস্ত দেশের সরকার-প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই সংকট মোকাবিলায়, যখন নানাদিক থেকে কমবেশি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সচেতন মানুষ তখন কিছু সৎসঙ্গ বিরোধী দুর্বৃত্ত সচেতনভাবেই সৎসঙ্গী পরিবারের সদস্য সেজে কখনো বা নিজেকেই সৎসঙ্গী দাবি ক'রে পরিকল্পিতভাবেই নেবে পড়েছে শ্রীশ্রীঠাকুর আর তাঁর বংশধরদের সঙ্গে সঙ্গে সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে বদনাম করতে, অপমান করতে। তারা এইসময় প্রশ্ন তুলেছে, করোনা বিপর্যয়ের মোকাবিলায় সৎসঙ্গ কি করছে বা কি করেছে? এর আগেও যতবার দেশে বিপর্যয় নেবে এসেছে প্রত্যেকবারই এরা অতি উৎসাহে ময়দানে নেবে পড়ে পরিকল্পিতভাবেই ও সংঘবদ্ধভাবে। এর পিছনে কাজও করে কোনও কোনও কায়েমী স্বার্থরক্ষাকারী মুষ্টিমেয় মানুষের দল ও সংগঠন। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে না বুঝেই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের একটা অংশ কিছু একটা করতে হবেই এই অতি বিপ্লবী বালখিল্য মনোভাবে।
সাজা সৎসঙ্গী বা সৎসঙ্গী পরিবারের সদস্য হিসেবে দাবি করা প্রশ্নকর্তা সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলা যেতে পারে,
এদের বাবা মা দীক্ষিত কিন্তু এরা কি দীক্ষিত? এদের কথা অনুযায়ী মনে হচ্ছে এরা দীক্ষিত নন। এদের বাবা মা ইষ্টভৃতি নিয়ম ক'রে পাঠান বলেই কি সৎসঙ্গ কি করছে আর না করছে সেটা এদের জানার অধিকারের মধ্যে পড়ে? এদের কথা অনুযায়ী এদের বাবা মা যখন নিয়ম ক'রে ইষ্টভৃতি পাঠান তখন নিয়ম ক'রে কি এদের বাবা-মা সৎসঙ্গের ব্যাপারে আপডেটেড থাকেন? এই আপডেট থাকাটা সৎসঙ্গী হিসেবে এদের বাবা মা-র দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যারা সৎসঙ্গী নন তাদের বা তাদের পরিবারের কেউ সৎসঙ্গী হ'লেই তাদের জানাতে যাবে কেন সৎসঙ্গ? এই সমস্ত বালখিল্য দাবী অনধিকার চর্চার মধ্যেই পড়ে। এদের যদি বলা হয়, আপনি বা আপনারা কি সৎসঙ্গী? তখন আর প্রশ্ন থাকে না। প্রশ্ন থাকলেও বেসামাল ভিত্তিহীন ক'রে নিজেদের জালে নিজেরাই জড়িয়ে যায়, তখন পালিয়ে কুল পায় না, মন্তব্য ডিলিট ক'রে পালায়।


কিন্তু প্রকৃত সৎসঙ্গীকে সৎসঙ্গের সমস্ত বিষয়ে আপডেটেড থাকতে হয়। আর যদি না থাকে---হয়তো হ'য়ে ওঠে না সবসময়---তাহ'লে কিছু বলার আগে ভাবতে হয়। এইসমস্ত উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করা ব্যক্তিদের বাবা-মা যারা সৎসঙ্গী তাঁরা এই বিষয়ে কিছু বলেননি ও বলেননা। উঠলো বাতিক তো কটক যায়-এর মত করোনা মোকাবিলায় সৎসঙ্গ কি ভূমিকা নিচ্ছে তা জানবার জন্য হঠাৎ এদের ভিতরে চাগার দিয়ে উঠলো? সৎসঙ্গ কি ভূমিকা নিচ্ছে না নিচ্ছে তা কি এইসমস্ত বালখিল্য প্রশ্নকর্তাদের জানাতে সৎসঙ্গ বাধ্য? রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ কি এইসমস্ত জীবনে ব্যর্থ হওয়া বালখিল্যদের তারা কি করছে না করছে তা প্রতিমুহূর্তে আপডেট দিচ্ছে? রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যে ত্রাণ বন্টন করছে সেই ত্রাণ বন্টনের সঙ্গে এইসমস্ত অতি উৎসাহী মানুষজন কি সরাসরি যুক্ত!? আর যদি রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ ত্রাণ বন্টন করেই থাকে আর এইসমস্ত মানুষ যদি যুক্ত হ'য়েও থাকেন এদের সঙ্গে তাহ'লে কি রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য, প্রচারের জন্য এইসব সেবামূলক কাজ করছেন আর এদেরকে দায়িত্ব দিয়ে সৎসঙ্গ কি করছে না করছে তা সরেজমিন তদন্ত ক'রে তাদের জানাতে বলেছেন? নাকি 'কাজ নেই তো খই ভাজ' মানসিকতায় ফেসবুকে সৎসঙ্গ কে একটু চুলকে দেওয়ার জন্য এরা হঠাৎ হঠাৎ আবির্ভুত হন? এদের বাবা মা বলেছেন নাকি এদেরকে এই চুলকে দিতে? নিশ্চয়ই না। কারণ যারা ইষ্টভৃতি করে তারা আর যাই-ই করুক এমন নিন্দনীয় সৎসঙ্গ বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে না এবং তাদের ছেলেমেয়েদেরও এইসমস্ত নোংরা কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবেন না। আর ছেলেমেয়েরা যদি যুক্তও থাকে তাহ'লে এরা বিপথে ভুল পথে চালিত কিছু জীবনে ব্যর্থ ও ধান্দাবাজ মানুষ দ্বারা প্রভাবিত। যার ফলে এদের ভবিষ্যৎ জীবনেও নেবে আসবে ব্যর্থতার ঘোর অন্ধকার। বাবা-মা সাবধান!
একজন লিখেছে সে দীক্ষিত পরিবারের সদস্য আর তাই তার দেখতে ইচ্ছে করছে সৎসঙ্গ মানুষের পাশে দাঁড়াক ও তাদের সাহায্য করুক----এই প্রসঙ্গে বলি দীক্ষিত পরিবারের সদস্যের কোনও মূল্য নেই সৎসঙ্গ জগতে যদি না নিজে সৎসঙ্গী হন; সে নিজে যখন সৎসঙ্গ পরিবারের সদস্য নন তখন সৎসঙ্গ কি করছে না করছে তা দেখা তার অধিকারের মধ্যে পড়ে না, আর সে যেদিন সদস্য হবে (হ'লে এমন প্রশ্ন করতো না ও করবে না) আর সেদিন সে যদি সমর্পিত হৃদয়ে বুঝতে চেষ্টা করে শ্রীশ্রীঠাকুর আর তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ সম্পর্কে তবেই সেদিন সে জানতে পারবে আর তাও কিঞ্চিৎ পরিমাণে! কারণ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আর তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন নির্ভর গুরু বা প্রতিষ্ঠান নয়! বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার।
তাই এদের উদ্দেশ্যে শুধু একথায় বলতে পারি, আসুন শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখুন, পড়ুন, জানুন, বুঝুন, শেষ দেখুন তারপর মতামত প্রকাশ করুন। আর শেষ কথা বলি, নিজে কিছু সমাজসেবামূলক কাজ করেন তো এইসব মানুষজন? নাকি তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে ডুডু তামাক খেতে খেতে ফেসবুকে সৎসঙ্গ বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুধু চুলকে যান? চুলকোতে চুলকোতে শেষে নিজের বড় প্রিয় আপনজনকেও না চুলকে দেন এরা! আর তার পরিণতিতে সেই চুলকানি রোগ বংশপরম্পরায় বংশগত হ'য়ে না দাঁড়ায় অবশেষে!


আর সৎসঙ্গীদের বলি, আপনারা এদের কোনও কথায় বিচলিত ও উদ্বিগ্ন হবেন না। প্রচার সংক্রান্ত বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের কি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তা আগে জানুন। তাহলেই দেখবেন সব অস্থিরতার মেঘ কেটে গেছে। অনেকের মন্তব্যে দেখি তারা এদের দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত! আর নিজের অজান্তেই এদের ট্র্যাপে পড়ে এদের মতোই প্রশ্ন ক'রে বসেন! অনেক নিয়মিত যুক্ত গুরুভাইবোনদেরও বলতে শুনি, সৎসঙ্গ কোথায় কি সাহায্য করছে তা প্রচার করা দরকার। এদের অবগতির জন্য বলি, একবার খেপুদা শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাই, ঠাকুরকে বলেছিলেন, বড়দা, রামকৃষ্ণ, ভারত সেবাশ্রম সংঘের মত আমরাও কিছু কিছু সমাজসেবামূলক কাজ করলে পারি। তার উত্তরে ঠাকুর বলেছিলেন, তা পারো কিন্তু মাথায় রেখো আমার সৎসঙ্গ মানুষ তৈরির কারখানা। আরো অনেক কিছুই তিনি বলেছিলেন, যতটুকু মাথায় আছে ততটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র।
এছাড়া এটা মাথায় রাখবেন আজ থেকে ৭৪বছর আগে স্বাধীনতার অনেক আগেই ঠাকুর সেই সময়ের হিসেবে কোটি টাকার উপর মূল্যের সম্পত্তি হেলায় অবহেলায় পিছনে ফেলে এক কাপড়ে চলে এসেছিলেন ভারতের আজকের ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে। একদিনের জন্যও তিনি ওই বিশাল সম্পত্তি ফেলে আসার কথা মুখে আনেননি! কেউ জানতেও পারেনি কোনোদিন কত টাকা মূল্যের সম্পত্তি তিনি ছেড়ে এসেছিলেন! কোনও প্রচার, কোনও দরবারও করেননি তিনি কোনোদিন পাকিস্তান সরকারের কাছে! বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশাল সম্পত্তি সৎসঙ্গ কে ফিরিয়ে দেবার সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে। কোথায় কবে তিনি কাকে কি সাহায্য করেছেন ঘুণাক্ষরেও কেউ জানতে পারতো না এবং তিনি তা পছন্দও করতেন না! তাঁর মানসিকতা ছিল, ডান হাত দিয়ে সাহায্য করলে বাঁ হাত যেন জানতে না পারে, গোটা শরীর তো দূরের কথা! সেই সময়ে যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক পাবনা আশ্রমের বি-শা-ল অঞ্চল জুড়ে কর্মকান্ড---- যা দেখে মহাত্মা গান্ধী বিস্ময়ে হতবাক হ'য়ে আপ্লুত কণ্ঠে বলেছিলেন, এ তো আমার স্বপ্নের ছোট ভারত যা ইতিমধ্যে এখানে গড়ে গেছে!-------দেখে অবাক বিস্ময়ে শ্রীশ্রীঠাকুরকে বলেছিলেন, এই যে আপনার আশ্রম জুড়ে বি-শা-ল কর্মযজ্ঞ এর খবর তো কেউ জানতেই পারলো না, এর উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর হাসিমুখে বলেছিলেন, দাদা, আপনি যখন অফিস থেকে বাড়ি ফেরেন তখন বাড়ির আপনজনদের জন্য হাতে ক'রে কিছু আনেন? উত্তরে তৎকালীন যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক বলেছিলেন, হ্যাঁ মাঝে মাঝেই নিয়ে যায়। শ্রীশ্রীঠাকুর তখন বললেন, তা' আপনি যখন নিয়ে যান তখন কি ওই জিনিসগুলি রাস্তায় গাড়িতে মানুষজনকে দেখিয়ে বলতে বলতে নিয়ে যান, যে জিনিসগুলি বাড়ির আপনজনদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন!? সম্পাদক মশাই সঙ্গে সঙ্গে ব'লে উঠলেন, তা কি ক'রে সম্ভব!? বাড়ির আপনজনদের জন্যে জিনিস নিয়ে যাবার সময় দেখাতে দেখাতে বলতে বলতে নিয়ে যাবো কেন!? শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, ঠিক তাই! এই যে যা কিছু দেখছেন, এ সবই আমার আপনজনদের জন্য করা। আপনজনদের জন্য করা জিনিস কি বিজ্ঞাপন বা প্রচার হয়!? দাদা, এ জন্মে আমার একটা আফসোস রয়ে গেল, হয়তো আর কোনোদিনও এর পূরণ হবে না! এ জন্মে আমার পরোপকার করা আর হ'লো না! পর-ই পেলাম না দাদা যে পরোপকার করবো।


এখান থেকে সৎসঙ্গীদের যা বোঝার বুঝে নিতে হবে। শ্রীশ্রীঠাকুরের এই প্রচারহীন নীরব যজ্ঞ শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা বংশপরম্পরায় নিখুঁতভাবে হ'য়ে চলেছে আজ ৭০ বছরের ওপর! সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কত শত হাজার লক্ষ সাহায্যের অদৃশ্য হাত যে এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দেশের প্রতিটি রাজ্যের কোণায় কোণায় এমনকি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে তার হিসেব একমাত্র দয়াল রাখেন, আর কেউ না। সৎসঙ্গীরা যারা জানে তারা জানে আর যারা জানে না তারা জানলে ভালো, না জানলেও ক্ষতি নেই। শ্রীশ্রীঠাকুর প্রশ্নহীন, যুক্তিহীন এমনই দেখতে চেয়েছিলেন সৎসঙ্গীদের! তাঁকে দেওয়ার পিছনে নেই কোনও প্রশ্ন, নেই কোনও যুক্তি, নেই কোনও কৈফিয়ৎ! শুধু তাঁকে দেওয়াতেই সুখ! সুখ!! অনাবিল সুখ!!! কোথায় সেই দেওয়া যাচ্ছে তার খবর রাখার প্রয়োজন মনে করে না ঠাকুরকে নিবেদিত প্রাণ! যেসব সৎসঙ্গী ভাইবোন কোনও খবর রাখেন না তারা শুধু একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন কত হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ঠাকুর পাগল মানুষ ইষ্টভৃতি, স্বস্তয়নী, প্রণামী আরও কতরকমভাবে তাদের সর্বস্ব উজাড় ক'রে দিয়েও তৃপ্তি পাচ্ছে না; আরো, আরো আরো দিতে চায় মন, প্রাণ, হৃদয়!!!!!! দেওয়ার কিছুই দেখেনি এখনও দুনিয়ার মানুষ! এ ঘোর কলি! মহাকাল!! একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এই যুগ! ভয়ঙ্কর ভয়াবহ ভবিষ্যৎ আসছে আগামীতে যার কাছে চায়নার এই করোনা, হায়না তুচ্ছ, নস্য বন্ধু, গুরুভাইবোন আমার!!!!!!! যার বর্ণনা ঠাকুর নিজেই দিয়ে গেছেন!!!! পরবর্তী কোনও সময়ে তুলে ধরার ইচ্ছা রইলো। সেদিনের কথা ভেবে কত প্রাণ তাদের তন, মন, ধন সমস্ত উজাড় ক'রে দিয়ে জীবনকে ধন্য ক'রে তুলছে! তার খবর কেউ রাখে না!
যাই হ'ক,
সৎসঙ্গীদের কোনও দায় পড়েনি এই সমস্ত বাপের হোটেলে কিম্বা বাঁ হাতি টান মেরে খেয়ে কিম্বা বটতলায় বসে চা খেয়ে সিগারেট বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে মুখে মুখে তুড়ি মেরে হাতি ঘোড়া মেরে ফেলা, কথায় কথায় জ্ঞান বিজ্ঞানের ফোয়ারা তুলে মহাজ্ঞানীদের পায়ের নীচে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে অশ্রদ্ধার লাঙ্গল চালাতে চালাতে ত্রিভঙ্গের ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে ওঠা মেরুদন্ডহীন প্রাণীদের কৈফিয়ৎ দেওয়ার। ফেসবুকে আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এইসমস্ত মেরুদণ্ডহীন প্রাণী চেটে দিয়ে যায় আর চাটন খেয়ে আমার গুরুভাইবোন অসহায় হ'য়ে এদের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয় কিংবা এদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে তাদের বলি,
"কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়,
তাই ব'লে কি মানুষের কুকুরকে কামড়ানো শোভা পায়!?


আর,
হাতি চলে বাজার মে কুত্তা ভোঁকে হাজার
সাধুঁ ও কো দুর্ভাবন নেহী যব ঘিরে সংসার।"
হয়তো এই দুই প্রবাদের মধ্যে উত্তর পেয়ে যাবে আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা।
পরমপিতার শ্রীচরণে সকলের মঙ্গল প্রার্থনা করি। বর্তমান কঠিন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে, দুঃসময়ে শ্রীশ্রীঠাকুর পক্ষ-বিপক্ষ, শত্রু-মিত্র সকলকে সুস্থ ও স্বস্থ রাখুন। আসুন আমরা কোটি কোটি সৎসঙ্গীরা এই কঠিন সময়ে হোম কোয়ারেন্টাইন-এর সময়ে নেগেটিভ চিন্তা মুক্ত হ'য়ে নামময় হ'য়ে থাকি! আমরাই পারি, হ্যাঁ আমরা বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীরাই পারি এইসময় নামময় হ'য়ে থেকে আকুল প্রার্থনায় দয়ালের দয়ার প্রবল বর্ষণে করোনার বিষকে নির্বিষ ক'রে দিতে, ভোঁতা ক'রে দিতে করোনার বিষাক্ত দাঁতকে! হে দয়াল! দয়া করো! জয়গুরু।
( ৩০শে মার্চ, ২০২০)

Friday, March 29, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীঠাকুরের বাণী কে বিকৃত করেছে? শ্রীশ্রীবড়দা নাকি শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা।

Master Within Bengali চ্যানেলে দেবাশীষ ও সৌভিকবাবু শ্রীশ্রীঠাকুরের ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থের অনুলেখক শ্রীপ্রফুল্ল দাস দাদা দ্বারা পরিবর্তিত শ্রীশ্রীঠাকুরের একটা বাণীকে হাতিয়ার ক’রে উৎসাহের সঙ্গে বাণীর বিকৃত অর্থ প্রচার ক'রে ও বাণী বিকৃতির অপবাদ দিয়ে শ্রীশ্রীবড়দাকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের তীব্র অশ্লীল আক্রমণ করেছে। আক্রমণ করেছে শ্রীশ্রীবড়দাকে স্বার্থরক্ষাকারী ও মির্জাফর আখ্যা দিয়ে। এই আক্রমণের সময় তারা নির্দ্বিধায় উপহাসের পাত্র ক’রে তুলেছিল ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের। এবং তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বহু সমর্থক বাণী বিকৃতির অপবাদ শ্রীশ্রীবড়দার ওপর চাপিয়ে দিয়ে শ্রীশ্রীবড়দা ও তার পরিবারের সদস্যদের কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছিল ও ক'রে চলেছে।

বাণীটি হ’লো,
ইষ্ট, গুরু-পুরুষোত্তম
প্রতীক, গুরু-বংশধর
রেতশরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।

এই বাণী নিয়ে বেশ হাসতে হাসতে খিল্লির মেজাজে জ্ঞান গম্ভীর তত্ত্ব কথা শোনালেন তারা চ্যানেলে বসে। শোনালেন অত্যন্ত অসম্মান অশ্রদ্ধাজনিত শরীরী ভাষায়। শ্রীশ্রীঠাকুর আত্মজ শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের সবাই এদের কাছে খিল্লির পাত্র। অবাক লাগে আবার এদের কাছেই এদের চ্যানেলেই শ্রীশ্রীঠাকুরের অন্য দুই আত্মজদের পরিবারের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন দর্শনের ও শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া ব্যষ্টি জীবন, সমষ্টি জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্র জীবন বৃদ্ধির ওপরে ইন্টারভিউ দেয়।

পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সারা জীবন ধ’রে বলে যাওয়া প্রেম-ভালবাসা, সম্মান-শ্রদ্ধা-ভক্তির গুষ্টির তুষ্টি ক’রে এরা ইষ্টের পতাকা বহন ক’রে চলেছে। আর এদের পৃষ্টপোষক বহু ইষ্টপ্রাণ ভক্তপ্রাণ বাগ্মীপ্রবর ভক্তপ্রবর প্রবীণ সৎসঙ্গী নামধারী অদ্ভুত জীব এদেরই চ্যানেলে ব’সে শ্রীশ্রীঠাকুরের গুণকীর্তন করে। প্রেম-ভালোবাসা-ভক্তির ফোয়ারা ছুটিয়ে কথার স্রোতে ভেসে বদ্ধ পচা দুর্গন্ধময় পরিবেশ রচনা ক’রে চলেছে। যে পরিবেশের কথা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গিয়েছিলেন বহু বছর আগে সেই ১৯৩৭ সালের ২৫শে ডিসেম্বর। এই জন্যই তাঁদের দ্রষ্টাপুরুষ বলে। তিনি বলেছিলেন,
“নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস—’

তাই, এই চারিদিকে ৫৫ বছর ধ’রে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলা মিথ্যেবাদী, নিন্দুক, অশ্রদ্ধা ও অপমান প্রদর্শনকারী, নীচ মানসিকতাসম্পন্ন, ইর্ষাকাতর, পরশ্রীকাতর মানুষদের মুখে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রেম-ভালবাসা-ভক্তি ও শান্তির ললিত বাণী ঠাট্টা, তামাশা, কৌতুকে পরিণত হয়েছে।

পরবর্তী পংক্তিতে কবিগুরু বললেন,

বিদায় নেবার আগে তাই
ডাক দিয়ে যাই
দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে
প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।

তিনি দ্রষ্টাপুরুষ ছিলেন, তাই তিনি দেখতে পেয়েছিলেন ভবিষ্যৎ পৃথিবী। আর বিদায় নেবার আগে সাবধান ক’রে দিয়েছিলেন বর্তমান পৃথিবীকে সেই দৈববাণীর মতো, তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, “ তুমি যা করছো বা ক’রে রেখেছো ভগবান তাই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি।“ এই কথা বলার পর তিনি বলেছিলেন,

আমার এই কথা আগে আমার উপর প্রযোজ্য তারপর অন্যের উপর। এরপরেই বলেছিলেন,

“ যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তা’ করলে রে চলবে না, ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না।“

আর, এরই প্রতিধ্বনি হিসেবে বিজ্ঞানের ভাষায় একই কথা বলা আছে, “Every action has opposite and equal reaction.”

তারই ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।

তাই বিচার তাঁর ওপর। আমি কোনও বিচারক হ’তে আসিনি। আমি শুধু বিশ্লেষণ ক’রে দেখছি ও দেখাতে চাইছি প্রতিটি ভিডিওতে বিরোধীদের প্রচারগুলি ও প্রচারের ভাষা ও শরীরি ভাষাগুলি। নিজে দেখতে ও দেখাতে চাইছি বিশ্লেষণের মাধ্যমে কে বা কারা ও কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক। কারণ বিরোধীরা শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারকে শ্রীশ্রীঠাকুরের ১৯৬৯ সালে দেহ রাখার পর থেকেই ৫৫ বছর ধ’রে নানা বিষয়ে মিথ্যে অভিযোগ এনে শ্রীশ্রীবড়দাকে অশ্রদ্ধা অপমান নিন্দা কুৎসা গালাগালি ক’রে তাঁকে বিকৃত প্রচারকারী আখ্যা দিয়ে নিজেদের অবিকৃত সত্য প্রচারকারী হিসেবে ভূষিত ক’রে নিজেরাই বিচারকের আসনে বসে গেছে। তাই সময় এসেছে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক তা জানার। দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি দেখে নেবার, বুঝে নেবার সময় এসে গেছে তামাম সৎসঙ্গীদের।

আর যা করার,তা' সময় করে অর্থাৎ তিনিই করেন। কারণ সময় সবসে বড়া বলবান। Time is the great healer.
সময় মহান নিরাময়কারী।

যাই হ’ক এবার দেখা যাক বাণী পরিবর্তনের ব্যাপারটা। দেখা যাক, আদতে কে বা কারা বাণী

পরিবর্তন করেছে ও কি উদ্দেশ্যে করেছে।

‘স্মৃতি-তীর্থে’ গ্রন্থে শ্রদ্ধেয় প্রফুল্ল কুমার দাসদা এই বাণীর উপরে যে কাঁটাছেঁড়া ক’রে নোতুন রূপে বাণীকে প্রকাশ করেছেন যতি চিহ্নের ব্যবহার ক’রে সেই পরিবর্তিত বাণীর ওপর দেবাশীষবাবু ও সৌভিকবাবু বেশ বিজ্ঞের মতো শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হেয় ক’রে তাদের বক্তব্য রেখেছেন তাদের ভিডিওতে। প্রফুল্লদা কর্তৃক মনগড়া খেয়াল খুশীমতো পরিবর্তিত নিজের বাণী “প্রতীক, গুরু-বংশধর” ও শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী “প্রতীক গুরু বংশধর” এই দুই বাণীকে দেবাশীষবাবু ও সৌভিকবাবু বেশ বেদজ্ঞ পন্ডিতদের মতো প্রফুল্লদাকে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ মনে ক’রে প্রফুল্লদার মনগড়া মুখ নিঃসৃত বাণীকেই স্বয়ং শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী হিসেবে ধ’রে নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখনিঃসৃত বাণীকেই বলাৎকার করতে করতে ঠাকুর আত্মজ শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খিল্লি উড়িয়েছেন চ্যানেলে বসে। তাদের ব্যাখ্যা ইষ্ট, গুরু-পুরুষোত্তম মানে গুরুপুরুষোত্তমই ইষ্ট। প্রতীক, গুরু-বংশধর মানে গুরু-বংশধর তাঁর প্রতীক অর্থাৎ গুরুর বংশধরমাত্রেই ইষ্টের প্রতীক। এরা যেটা বলছে সেটা হ’লো প্রফুল্লদার দ্বারা পরিবর্তিত বাণীর ব্যাখ্যা। যদি তাই-ই হ’য়ে থাকে তাহ’লে তা ঠাকুর স্বয়ং কেন ক'রে গেলেন না? আর ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ প্রফুল্লদার ধারণা ও ব্যাখ্যাকারীদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বংশধরমাত্রেই যদি প্রতীক হ’য়ে থাকে তাহ’লে ইতিহাসের বুকে এর আগে শ্রীশ্রীঠাকুর ৭ বার এসেছিলেন, তা কোনওবারই কি তাঁর বংশধরদের সবাই তো দূরের কথা কেউ একজনও তাঁর চলে যাবার পর প্রতীক হ’য়ে বিরাজ করেছেন ইতিহাসের বুকে? দেখাতে পারবেন প্রফুল্লদার এই ইচ্ছাকৃত মনগড়া অবৈধভাবে পরবর্তিত বাণীর সপক্ষে প্রমাণ?

যাই হ'ক দেবাশীষবাবু ও সৌভিকবাবু বলেছেন, রামকৃষ্ণ মিশনের মতো 'সৎসঙ্গ' নাকি ইষ্ট একজন আর গুরু আর একজন এরকম ক'রে নিয়েছিল এই বাণীকে নিয়ে। প্রফুল্লদা নাকি একেবারে ক্লিয়ার ক'রে দিয়ে গেছেন। তা' আসুন দেখি প্রফুল্লদা কি ক্লিয়ার ক'রে দিয়ে গেছেন এবং কি রসদ যুগিয়ে দিয়ে গেছেন এদের।

শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা বাণী যেটা অনুশ্রুতি গ্রন্থের ১ম খন্ডের ‘ধর্ম্ম’ বিষয়ের ৬৬ নম্বর বাণীতে আছে তা হ’লো ""ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম, প্রতীক গুরু বংশধর"। ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ প্রফুল্লদার মতে ও তাঁর অনুসারী বেদজ্ঞ পন্ডিত দেবাশীষবাবু ও সৌভিকবাবুর ব্যাখ্যা মূল বাণী অনুযায়ী 'প্রতীক গুরু বংশধর' মানে প্রতীক হচ্ছে শুধু বড় ছেলের বংশধর। তারা বলছেন, এর মানে, বড় ছেলের বংশধর শুধু ইষ্টের প্রতীক।। কিরকম মনগড়া ব্যাখ্যা দেখুন। ‘প্রতীক গুরু বংশধর’ বলতে শুধু বড়দার বংশধরদের বোঝাচ্ছে এদের মতে। প্রতীক গুরু বংশধর বলতে অন্য কোনও বংশধরদের বোঝাচ্ছে না। আপনারা যারা আমার ভিডিও শুনছেন তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন এটার মানে তাই দাঁড়াচ্ছে কিনা। আর যদি তাই মানে দাঁড়ায় তাহ’লে সেই মানে দাঁড় করানোর দায়টাও তাহ’লে স্বয়ং ঠাকুরের। এইখানে হস্তক্ষেপ করার সাহস পেলেন কোথা থেকে প্রফুল্লদা ও ব্যাখ্যাকারীরা?

যোগ্য ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ প্রফুল্ল দাসদার যোগ্য উত্তরসূরি বেদজ্ঞ পন্ডিত দেবাশীষবাবু ও সৌভিববাবু। কারণ প্রফুল্ল দাসদা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটাকে নিজের মনের মতো ক’রে অবৈধভাবে গড়ে নিয়েছেন যাতে শ্রীশ্রীবড়দাকে কলঙ্কিত করা যায় এবং তার যোগ্য উত্তরসূরি দেবাশীষ ও সৌভিকবাবু নিজেদের বৃত্তি-প্রবৃত্তির চাহিদা ও পছন্দ অপছন্দ অনুযায়ী মনগড়া ধারণায় অভিভূত থেকে দূর্বল পর্যবেক্ষেণ শক্তি ও দুর্বল বিচার শক্তি দ্বারা সর্ব্বজ্ঞ পন্ডিতের মতো গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের মানসিকতায় শ্রীশ্রী বড়দা ও তাঁর পরিবারকে নোংরাভাবে অভদ্র ভাষায় আক্রমণ করেছে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিকৃত বাণীকে ভাসা ভাসা ভাবে ব্যাখ্যা ক’রে। সৎসঙ্গের মধ্যেও কাউকে কাউকে দেখেছি এমন ব্যাখ্যার পক্ষে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে অর্থাৎ প্রফুল্লদার দ্বারা পরিবর্তিত বাণীর ঐ "ইষ্ট, গুরু-পুরুষোত্তম, প্রতীক, গুরু-বংশধর" লাইনকে সমর্থন ক'রে বক্তব্য রাখতে। এবং পরে শুধরেও নিয়েছেন। আমরা অনেকেই মিসগাইড হয়েছি প্রফুল্লদার এই ব্যাখ্যায়। কারণ প্রফুল্লদা সৎসঙ্গের রত্ন স্বরূপ ছিলেন। তাই তাঁর কথার বিশ্বাসযোগ্যতা আমরা সৎসঙ্গীরা অস্বীকার করতে পারিনি। কারণ অত তলিয়ে দেখার মতো গবেষক মন আমাদের সবার নেই। এই ভিডিও সবাই ধৈর্য নিয়ে দেখবে না সেটাও আমি জানি। তবুও কেউ না কেউ প্রশ্ন তো তুলবেই, আজ না-হয় কাল গবেষকের দৃষ্টিতে। যদি দেখে ভালো ক'রে পুরো ভিডিওটা তবে জটিল চক্রান্তের একটা ধারণা হবে।

আসুন আমরা দেখে নিই শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর ওপর কলম চালানোর মত অহংকার, ঔদ্ধত্ব আর ধৃষ্টতা প্রকাশকারী শ্রীশ্রীঠাকুরের নারায়ণী কেরানী শ্রুতিধর শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার মনগড়া বাণীর প্রেক্ষাপট সঠিক কিনা। যার ওপর দাঁড়িয়ে বাণীর অর্থ বিকৃত ক'রে বাণী বিকৃতির অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে শ্রীশ্রীবড়দাকে।

ইষ্ট, গুরু-পুরুষোত্তম
প্রতীক, গুরু-বংশধর
রেতশরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।

ঠিক এরকমভাবে বাণীটা আছে শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার বই ‘স্মৃতি-তীর্থে’। বইটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৮ই অক্টোবর ১৯৯১ সালে বিজয়া দশমীর দিন শ্রীশ্রীঠাকুরের শুভ ১০৪তম জন্মোৎসব উপলক্ষে। আজ থেকে অর্থাৎ ২০২৪ সাল থেকে ৩৩ বছর আগে। আর, দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হয় ৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে।
আর,

ইষ্টগুরু-পুরুষোত্তম  
প্রতীক গুরু বংশধর,
রেত-শরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর। ৬৬

এই বাণীটা আছে অনুশ্রুতি ১ম খন্ডের ‘ধর্ম্ম’ বিষয়ের ৬৬ নম্বর বাণীতে। এই বইটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৪৯ সালে অর্থাৎ আজ থেকে (২০২৪) ৭৫ বছর আগে এবং শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার বই ‘স্মৃতি তীর্থে’ প্রকাশের (১৯৯১) ৪২ বছর আগে। শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা দেহ রেখেছেন ২০০৬ সালে ৯৪ বছর বয়সে। অর্থাৎ তাঁর মৃত্যুর ১৫ বছর আগে ১৯৯১ সালে তিনি তাঁর গ্রন্থ ‘স্মৃতি-তীর্থে’ প্রকাশ করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৯ বছর। সেই বইয়ে আছে এই বাণীটার ব্যাখ্যা।

১৯৪৯ সালে অনুশ্রুতি ১ম খন্ড বই যখন প্রকাশ হয় তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের বয়স ছিল ৬১ বছর। আর শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার বয়স ছিল ৩৭ বছর।

৭৯ বছর বয়সে তিনি ‘স্মৃতি তীর্থে’ বইয়ে প্রকাশ করলেন এই বাণীটা নানা যতি চিহ্ন প্রয়োগ করে। অর্থাৎ প্রফুল্লদার সেই ৩৭বছর বয়সে প্রকাশিত হওয়া বইয়ের বাণী ৪২ বছর পর অর্থাৎ ৭৯ বছর বয়সে তাঁর নিজের বই ‘স্মৃতি তীর্থে’ গ্রন্থে প্রকাশ করলেন ঠাকুরের বাণীটা পরিবর্তন ক’রে শব্দের মধ্যে কমা, হাইফেন ইত্যাদি যতি চিহ্নের প্রয়োগ ঘটিয়ে নিজের বাণী রূপে, যখন শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রূপে অবস্থান করছেন না, তখন। শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার ২২ বছর পর অর্থাৎ ঠাকুর দেহ রেখেছেন ১৯৬৯ সালে+২২ বছর অর্থাৎ ১৯৯১ সালে আলাদা ক’রে ‘স্মৃতি-তীর্থে’ বই ছাপিয়ে তাঁকে নোতুন ক’রে এই বাণীটা যতি চিহ্ন সহ প্রকাশ করতে হ’লো। কেন? কেন প্রফুল্লদাকে হঠাৎ ৭৯ বছর বয়সে লিখতে হ’লো তার ‘স্মৃতি তীর্থে’ বইয়ে এই ছড়া প্রসঙ্গে, আমি উনার লেখাটা পড়ে শোনাচ্ছি, তিনি লিখেছেন,


“এই ছড়াটির শ্রুতিলিখন আমি পাবনায় লিখি। যেমন শুনি তাতে উপরোক্ত রকমে বিরামচিহ্ন প্রকরণ হওয়া উচিত। এর মানে এই যে, গুরুপুরুষোত্তমই হলেন ইষ্ট। এবং গুরুপুরুষোত্তমের বংশধর হলেন তাঁর প্রতীক যাঁকে দেখলে তাঁর স্মৃতির উদ্দীপন হয়। বংশধরদের মধ্যে শারীরিক সাদৃশ্য অল্পবিস্তর থাকে। তিনি বীজ শরীরে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে জাগ্রত থাকেন। তাই তাঁর বংশধরদের আমাদের বিহিত ভক্তি শ্রদ্ধা করা উচিত। অর্থাৎ ঘুরিয়ে তিনি যা বললেন।

প্রফুল্লদা তাঁর বয়ানে কি বললেন, “যেমন শুনি তাতে উপরোক্ত রকমে বিরামচিহ্ন প্রকরণ হওয়া উচিত।“ হঠাৎ কেন তাঁর ৭৯ বছর বয়সে ঠাকুরের দেহ রাখার ২২ বছর পর মনে হ’লো এই বাণীতে যতি চিহ্ন বা বিরাম চিহ্ন যোগ হওয়া উচিত? শ্রীশ্রীঠাকুরের যখন ৬১ বছর বয়স ও শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার বয়স ৩৭ বছর বয়স সেই সময় যখন অনুশ্রুতি ১ম খন্ড ছড়ার বই প্রথম প্রকাশ হয় তখন কেন প্রফুল্লদা বই প্রকাশ হওয়ার আগে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এই “ইষ্ট গুরু-পুরুষোত্তম” বাণীতে যতি চিহ্ন ব্যবহার করা উচিত, এই উচিত কথা তুলে ধরলেন না? তিনি কি তাঁর এই শেষ বয়সে আসা এই 'উচিত' প্রশ্নের সংশয় নিয়ে ঠাকুরের সঙ্গে ১৯৪৯ সালে আলোচনা করেছিলেন? এবং পরবর্তী সময়ে এই বাণী প্রকাশের সময় সাল ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৯ সাল ঠাকুরের মহাপ্রয়াণের সাল বা বছর। এই ২১ বছর ঠাকুরের সঙ্গে সংগ করার সময় পর্যন্ত তখন কি তাঁর এই যতি চিহ্নের কথা মাথায় এসেছিল? তিনি কি এই ২১ বছরে একবারও তাঁর এই যতি চিহ্ন থাকা উচিত এই কথা তুলে ধরেছিলেন বা বাণীটা নিয়ে কখনো আলোচনা করেছিলেন ঠাকুরের সঙ্গে? এতদিন পর কেন তাঁর মাথায় এলো? এবং কি উদ্দেশ্যে এলো? কেন তিনি ১৯৬৯ সালে ঠাকুরের দেহ রাখার ২২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯১ সালে এবং ১৯৪৯ সালে প্রথম ছড়ার বই অনুশ্রুতি ১ম খন্ড বই প্রকাশের দীর্ঘ ৪২ বছর পর ১৯৯১ সালে তিনি ‘স্মৃতি তীর্থে’ বই প্রকাশ ক’রে তা’তে এই কথা বললেন? হঠাৎ প্রফুল্লদার মনে হ’লো বাণীতে যতি চিহ্ন যুক্ত হওয়া উচিত? এই যতি চিহ্ন ব্যবহার উচিত কিনা সেটা শ্রীশ্রীঠাকুরের মনে হয়নি? এই বাণী প্রসঙ্গে কি ঠাকুরের আলাদা ক’রে কোনও ব্যাখ্যা করা আছে?

আর শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং জানতেন না এই যতি চিহ বাদ পড়ার কথা। শ্রীশ্রীঠাকুর তো প্রতিটি কথা, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন বলার সময় বক্তব্য বিষয়ে ব্যবহৃত শব্দের অর্থভেদে, শব্দের অর্থানুযায়ী, যতি চিহ্নের প্রয়োগ অনুসারে কোথাও জোর দিয়ে, কোথাও হালকা ভাবে, কখনও দ্রুত, কখনো বা ধীর গতিতে বাণী, ছড়া, বক্তব্য বলতেন যাতে অনুলেখকদের কোনও অসুবিধা না হয় বুঝতে ও লিখতে। এতটাই তিনি সতর্ক ও যত্নশীল ছিলেন, যা অভূতপূর্ব!!! এছাড়া বাণী, ছড়া, বক্তব্য বিষয় সবটাই ছাপাবার আগে ঠাকুরকে পড়ে শোনানো হ’তো। শোনার পড়ে তাঁর সম্মতিতে, তাঁর অনুমোদনের পর ছাপানো হ’তো। তখন কি ঠাকুর বলেছিলেন এই যতি চিহ্ন ব্যবহারের কথা? কিংবা প্রফুল্লদা তখন কি এই যতিচিহ্ন প্রয়োগ সম্পর্কে তাঁর উচিতের কথা জানিয়েছিলেন ঠাকুরকে? সেই সময়ে ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত বই অনুশ্রুতি ১ম খন্ড কি ছাপাবার আগে বাণীগুলি ঠাকুরকে দেখানো হয়নি? না দেখিয়ে ছাপিয়েছিল? কিংবা বই ছাপিয়ে বেরোবার পর ঠাকুরকে দেখানো হয়নি? তখন কি প্রফুল্লদার চোখে পড়েনি এই বিকৃতি? তখন শ্রীশ্রীবড়দা পন্থী ছিলেন ব'লে তা চোখে পড়েনি? বা পড়লেও চোখ বন্ধ ক’রে ছিলেন? আর অন্তর্যামী সর্ব্বজ্ঞ শ্রীশ্রীঠাকুর সব দেখে চুপ ক’রে ছিলেন? ইংরেজী ১৯৪৯ সাল, বাংলা ১৩৫৬ সালে আজ থেকে ৭৫বছর আগে যখন অনুশ্রুতি ১ম খন্ড ছড়ার বই প্রথম প্রকাশ পায় সেই বইয়ের ভুমিকা লিখেছিলেন শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভটাচার্য্য ও শ্রী প্রফুল্ল কুমার দাস দু'জনেই যৌথভাবে। সেখানে গ্রন্থের ভুমিকায় তাঁরা লিখছেন, “প্রায় সময়ই আমরা তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে থাকতাম----বিভিন্ন মানবের গূঢ় জীবনের সংস্পর্শে ও অপূর্ব নিয়ন্ত্রণে তিনি যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা কখনও আলাপে, কখনও আলোচনায়, কখনও ছড়ায় প্রকাশ করতেন, সে কথাগুলি যথাসাধ্য আমরা দুজনেই সংগ্রহ করতাম।“

এই প্রসঙ্গে মনে প্রশ্ন জাগে, শ্রদ্ধেয় শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্য ওরফে কেষ্টদা যখন প্রফুল্লদার সঙ্গে একইসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী লিখিত ভাবে ধ’রে রাখার কাজে যুক্ত থাকতেন এবং এই গ্রন্থের ভুমিকা যখন যৌথ ভাবে লেখা হয়েছিল তখন কেষ্টদা কি এই বাণীতে যতি চিহ্ন প্রয়োগ করা উচিত-অনুচিত প্রসংগে কোনও বক্তব্য কখনও কি কোথাও অনুশ্রুতি ১ম খন্ড প্রকাশ হওয়ার পর ১৯৪৯ সাল থেকে কেষ্টদার মৃত্যুর বছর ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ ১৪ বছরে শ্রীশ্রীঠাকুর থাকাকালীন কখনও কি তিনি তাঁর সহযোগী অনুলেখক শ্রীপ্রফুল্লদার সঙ্গে এই বাণীর যতি সংক্রান্ত প্রয়োগের ব্যাপারে কোনও আলোচনা করেছিলেন বা কোথাও সে সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরকে, শ্রীশ্রীবড়দাকে বা কাউকে বলেছিলেন কিংবা লিখিত আকারে রেখে গেছিলেন? আছে সেরকম কোনও প্রমাণ? সেই সময়ে কি প্রফুল্লদার মাথায় আসেনি এই যতি চিহ্ন সম্পর্কিত উচিত-অনুচিত প্রশ্ন?

আর, ১৯৮৩ সালে অনুশ্রুতি ১ম খন্ড তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায়। সেই সংস্করণে ভুমিকা লিখেছিলেন শ্রদ্ধেয় দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দাদা। সেই সময় প্রফুল্লদা বেঁচে ছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৭১ বছর। আর শ্রীশ্রীবড়দার বয়স ছিল ৭২ বছর। শ্রদ্ধেয় দেবীদা সেই ভূমিকায় লিখছেন,অনুশ্রুতি প্রথম খন্ডের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হ'লো। এই সংস্করণে প্রতিটি ছড়া মূলের সাথে ভালোভাবে মিলিয়ে দেখা হ'লো। তখন প্রফুল্লদার এই যতি চিহ্ন সংযুক্তির কথা, এই পরিবর্তনের কথা মনে হয়নি? এই বিষয়ে দেবীদার কিছু বলা আছে?

আবার, ১৯৮৮ সালে শ্রীশ্রীঠাকুরের ১০০ বছর পূর্ণ হ’লে পরে সেইসময় শ্রীশ্রীঠাকুরের ১০০তম জন্ম উৎসব পালন উপলক্ষে রাত নটার সময় দূরদর্শনে একটা প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়েছিল। সেই সম্প্রচার অনুষ্ঠানে ‘সৎসঙ্গ’-এর পক্ষ থেকে প্রফুল্লদা শ্রীশ্রীঠাকুরের ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পবিত্র দিনে ঠাকুর সম্পর্কে স্মৃতিচারণের দায়িত্বে ছিলেন। সেইসময় প্রফুল্লদার বয়স ছিল ৭৬ বছর। তখন তিনি ‘সৎসঙ্গ’-এর সংগেই যুক্ত ছিলেন এবং সৎসঙ্গ-এর হ’য়ে দূরদর্শনে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। সেই সময় শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মশতবার্ষিক সংস্করণ রূপে এই গ্রন্থের চতুর্থ সংস্করণ বের হয়েছিল। সেদিন প্রফুল্লদার মনে হয়নি এই বাণীতে যতি চিহ্ন ব্যবহার হওয়া উচিত?

পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা দেহ রাখেন ১৯৯৪ সালে ৮৩ বছর বয়সে পুরী ঠাকুরবাড়িতে ৫ই আগষ্ট সন্ধ্যাবেলায়। আর শ্রীপ্রফুল্লদার মৃত্যু হয় ২০০৬ সালে ৯৪ বছর বয়সে। অর্থাৎ শ্রীশ্রীবড়দার দেহ রাখার ১২ বছর পরে। প্রফুল্লদার বই ‘স্মৃতি-তীর্থে’ প্রকাশ হয় ১৯৯১ সালের ১৮ই অক্টোবর। শ্রীশ্রীবড়দার দেহ রাখার ৩ বছর আগে। তখন বড়দার বয়স ৮০ বছর। আর প্রফুল্লদার বয়স ৭৯ বছর। সমসাময়িক। শ্রীশ্রীবড়দা জীবিত থাকাকালীন শ্রীপ্রফুল্লদা কি শ্রীশ্রীবড়দার সঙ্গে বাণীতে যতিচিহ্ন প্রয়োগ করা উচিত-অনুচিত প্রসঙ্গে কোনও আলোচনা করেছিলেন? আছে এমন কোনও তথ্য? থাকলে প্রফুল্লদা তাঁর ‘স্মৃতি-তীর্থে’ গ্রন্থে উল্লেখ করেননি কেন?

শ্রীশ্রীঠাকুরের অন্য সন্তান শ্রীশ্রীকাজলদাদার সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের অনুপস্থিতিতে এতবড় পরিবর্তন নিয়ে, পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ে এবং ইংগিতপূর্ণ পরিবর্তনে কোনও আলোচনা করেছিলেন? ক'রে থাকলে পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীকাজলদাদার কি এই বাণী সম্পর্কে ও যতি চিহ্ন সহ বাণী পরিবর্তন সম্পর্কে কোনও বক্তব্য ছিল? প্রফুল্লদা একা এতবড় সিদ্ধান্ত নিলেন, এবং যে বাণী সম্পর্কে নিলেন তা’তে তিনি যে অর্থ ও ইঙ্গিতপূর্ণ বিতর্কের সূচনা করলেন তা’তে সৎসঙ্গ জগতে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের মধ্যে বিরাট প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়ে সংঘাতের বীজ পুঁতে দিয়ে গেলেন নাকি? কেন এমন করলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের ‘নারায়ণী কেরানী’ শ্রুতিধর শ্রীপ্রফুল্ল দা? যা আজ সুযোগসন্ধানী বিরোধীরা নানা চ্যানেলের মাধ্যমে বাণীর বিকৃত অর্থ প্রচার ক’রে চলেছেন, ক'রে চলেছেন শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী পরিবর্তনের মতো ঘৃণ্য অপবাদ দিয়ে?

শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী পরিবর্তন কে করলেন? শ্রীশ্রীবড়দা করলেন নাকি শ্রীশ্রীপ্রফুল্লদা স্বয়ং শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী পরিবর্তনের মতো দুঃসাহসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন? শ্রীপ্রফুল্লদা নিজেই বলছেন তাঁর গ্রন্থ ‘স্মৃতি-তীর্থে’ যে, “এই ছড়াটির শ্রুতিলিখন আমি পাবনায় লিখি। যেমন শুনি তাতে উপরোক্ত রকমে বিরামচিহ্ন প্রকরণ হওয়া উচিত।“ তিনি বলছেন, ‘উচিত’। উচিত শব্দ প্রয়োগ করেছেন। তিনি একথা বলেননি, যে বাণীটি আমি শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা মতো বিরতি চিহ্ন সহযোগে লিখি এবং পরবর্তীতে যতি চিহ্ন বাদ দিয়ে সেই বাণী বিকৃত করা হয়েছে। তিনি তাঁর মত ব্যক্ত করেছেন তাঁর বোধের ওপর দাঁড়িয়ে যে, “বিরামচিহ্ন প্রকরণ হওয়া উচিত”। তা'তে কি শ্রীশ্রীঠাকুরের অনুমোদন ছিল এমন কথা কোথাও বলেছেন প্রফুল্লদা? এরকম কি দরকার ছিল? কোন অধিকারে তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী পরিবর্তনের সাহস দেখালেন? কি ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন প্রফুল্লদা? কি অক্সিজেন যুগিয়ে গেলেন সুযোগসন্ধানী বিরোধীদের জন্য সর্ব্বজনশ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রিয় নারায়ণী কেরানী তথা শ্রুতিধর শ্রীপ্রফুল্ল দাস মহাশয়? এই ‘স্মৃতি-তীর্থে’ গ্রন্থে প্রকাশিত সংশোধিত বাণী নিয়ে সুযোগ বুঝে চ্যানেলে চ্যানেলে বিরোধীরা বাণীর অর্থ বিকৃত ক'রে, বিকৃতির অপবাদ দিয়ে চলেছেন শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে প্রফুল্লদার ‘স্মৃতি তীর্থে’ গ্রন্থে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশিত শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বিকৃত বাণীকে হাতিয়ার ক’রে সুযোগসন্ধানী বিকৃত রুচির মানসিকতার অধিকারী মিথ্যেবাদী কপট অসৎ নিন্দুকেরা আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরাকে কলুষিত করার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারকে কলঙ্কিত করতে ও সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করতে তীব্র প্রয়াসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা শেষ বয়সে এসে গ্রন্থ ছাপিয়ে নিজের মনগড়া ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর দাঁড়িয়ে উচিত-অনুচিত শব্দ প্রয়োগে ঠাকুরের বাণীকে বিকৃত ক’রে জনমানসে ও সৎসঙ্গীদের মধ্যে বিভ্রান্তির বীজ পুঁতে ভয়ংকর সর্ব্বনাশা ধ্বংসের যদি উদাহরণ রেখে যান তাহ’লে সাধারণ সৎসঙ্গী কাকে বিশ্বাস করবে? প্রত্যেকের স্বাধীনতা আছে তাঁর নিজস্ব বক্তব্য রাখার। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মীরা কেন এমন অবৈধ অন্যায় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন যাতে শ্রীশ্রীঠাকুর, সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও সৎসঙ্গীদের ওপর ভয়ংকর আঘাত এসে পড়ে? কেন প্রধান প্রধান ভক্তেরা এমন কাজ করবেন যাতে মনুষ্যত্বের ভিত লুপ্ত হ'য়ে যাবার উপক্রম হয়?কেন তিনি এমন করলেন? কে দেবে এর উত্তর? সাধারণ সৎসঙ্গী যারা সহজ সরল কোনও খোঁজ খবর রাখে না, বই পড়ার বা শোনার ধৈর্য যাদের নেই, যারা সাথে পাছে থাকে না অথচ নিন্দাকথা, মিথ্যে কথা শুনলেই যাদের কান ভারী হ’য়ে যায়, যাদের এত গভীরে গিয়ে সুক্ষ্মভাবে যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে সবটা দেখার চোখ নেই, যারা চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে কানে হাত না-দিয়ে চিলের পিছনে ছুটে চলে, যাদের কোনও কিছুতেই কন্সিস্টেন্সি নেই, ধারাবাহিকতার অভাব, বৃত্তি-প্রবৃত্তির চাহিদা ও পছন্দ অপছন্দ অনুযায়ী যারা মনগড়া ধারণায় অভিভূত থাকে, যাদের পর্যবেক্ষেণ শক্তি ও বিচার শক্তি দুর্বল, যারা আর্ত, অর্থার্থী, সেই সমস্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ সৎসঙ্গীদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরের নারায়ণী কেরানী শ্রুতিধর শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা জানতেন না। জানতেন না সুযোগসন্ধানী ছেদকেরা সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ পেয়ে যাবে এর ফলে? তাহ’লে কি শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার ৭৯ বছর বয়সে বুদ্ধি বিপর্যয় হয়েছিল? তাহ’লে তিনি কি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন? তাহ’লে কি তাঁর শ্রীশ্রীবড়দার সঙ্গে কোনও মতবিরোধ ছিল যার ফল স্বরূপ তিনি ৮,৮২৯টা ছড়ার মধ্যে এই বাণীটাই বেছে নিলেন কেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই? এই বাণীতেই ও এই একটা বাণীতেই তিনি যতি চিহ্ন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন? কেন তিনি এই বাণীটাতে যতি চিহ্নের প্রয়োগ ঘটালেন? শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবদ্দশায় দীর্ঘ ২০ বছর সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি তাঁর এই বাণী সম্পর্কিত প্রশ্নের সমাধান করলেন না? কেনই বা তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ৪ বছর শ্রীশ্রীবড়দার জীবোদ্দশায় এই বাণী নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েও আলোচনা করলেন না? এরকম নানা প্রশ্ন নিয়ে আজকের এই ভিডিও শেষ করলাম। বিচারের ভার ও গ্রহণ-বর্জনের ভার আপনাদের হাতে। নমস্কার। জয়গুরু।

কবিতাঃ তুমি আছো সব আছে।

তুমি আছো সব আছে। 
তুমি নেই কিচছু নেই। 
ব্রহ্ম সত্য জগত সত্য। 
ব্রহ্ম নেই জগৎ নেই। 
অর্থাৎ তুমি সত্য জগত সত্য। 
তুমি নেই জগত নেই।
তুমি আছো জগত নেই
কিন্তু জগত নেই তুমি আছো।
যখন সব ছিল, সব আছে
তখন তুমি ছিলে, তুমি আছো।
যখন কিছুই ছিল না, 
এখনও যদি কিছুই না থাকে,
তখনও তুমি ছিলে, 
আজও তুমি আছো, আগামীতেও থাকবে।।



Thursday, March 28, 2024

প্রবন্ধঃ গ্যারান্টি!

আমি কয়েকদিন আগে একটা পোষ্ট করেছিলাম আমার প্রোফাইলে। প্রোফাইলের বিষয় ছিল নিম্নরূপ।
'ইষ্টভৃতি ও নামধ্যান পরায়ণ সক্রিয় সৎসঙ্গীদের করোনা ভাইরাসের আক্রমণে কোনও ভয় নেই! সৎসঙ্গী ভাইবোন নিশ্চিন্ত থাকো। গ্যারান্টি। সময় প্রমাণ করবে।--প্রবি।'

এই পোস্টের উত্তরে এক গুরুভাই জানতে চেয়ে একটা প্রশ্ন করেছিল আমায়; সঙ্গে ভাইরাসের ধর্ম্ম সম্পর্কে অবহিত করেছিল। মন্তব্যটা ছিল নিম্নরূপ।

"ওয়ারেন্টি আর গ্যারান্টি কোথা থেকে আসছে? ভাইরাস ধর্ম্ম আর জাত চেনে না, সতর্ক থাকা প্রয়োজন।"
গুরুভাইয়ের এই মন্তব্য সম্পর্কে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি,

অবশ্য অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সতর্ক তো হতেই হবে। ঠাকুরের যা কিছু বলা সব অসতর্কতার বিরুদ্ধেই বলা। অসতর্কতার কারণেই তো এইরকম মারণ ভাইরাস হানা দিচ্ছে বারবার! আজকের এই যে পৃথিবী জুড়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে, আমার গুরুভাইও যে সতর্কতার কথা বললো বুক বাজিয়ে এই সমস্ত সতর্কতা তো আজ মরণ কালে হরির নামের মত! জীবনের সমস্ত দিকের সমস্ত বিষয়ে সতর্কতার ঢাক তো ঠাকুর প্রাণপাত ক'রে বাজিয়ে গেছেন দীর্ঘ ৮২ বছর! কে শুনেছে তাঁর কথা!? কেউ শুনেছি!? তবে কেন আজ এত সতর্কতার উপর জোর দিচ্ছি? কোন সতর্কতার কথা বলতে চেয়েছে আমার গুরুভাই?

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচার উপায় স্বাস্থ্য ও সদাচার বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রাখা। আর এই স্বাস্থ্য ও সদাচার সম্পর্কিত বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বহু বাণী ও ছড়া দিয়ে গেছেন। কিন্তু এই সতর্ক থাকার বিষয় শুধু শারীরিক সদাচার সম্পর্কে সতর্ক থাকা নয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। মানসিক ও আত্মিক সদাচার বলে আরও গভীর বিষয় আছে। সতর্ক থাকতে হবে সেদিকেও! সতর্ক আছি কি আমরা সৎসঙ্গীরা!? ঐ যে একটা কথা আছে 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর', ব্যাপারটা এক্ষেত্রেও তাই। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সদাচার পালনীয় অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কেন অসতর্ক হচ্ছি আমরা!? কেন ঠাকুরের উপরে বিশ্বাস ভেঙে যায় সামান্য ছোটখাট বিষয়ে!? কেন এই করোনা নামক মহাভীতি আমাদের তাঁর উপর বিশ্বাস ভেঙে দিচ্ছে!? সৃষ্টিকর্তার চেয়ে করোনা শক্তিশালী!? বিশ্বাস যাতে কোনও সময়েই, তা সে যতই ভয়ঙ্কর বিপদ আসুক না কেন কোনও অবস্থায় যেন ভেঙে না যায়, আঘাত প্রাপ্ত না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর দিতে হবে। সেদিকে সতর্ক আছি তো আমরা!? তাঁর প্রতি আমাদের গভীর বিশ্বাস আছে!? প্রতিমুহূর্তে মানসিক কপটতা আমাদের চরম আধ্যাত্মিক অসদাচারী ক'রে তুলছে না তো!? ভক্ত হনুমান, অর্জুন, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ, শ্রীশ্রীবড়দা, প্রহ্লাদের মত ভক্তদের করোনার বাপও কিছু করতে পারে না। কারণ তাঁদের তাঁর সঙ্গে লাগাও-এর ইমিউনিটি পাওয়ার এত স্ট্রং!!!.!
ভাইরাস ধর্ম্ম আর জাত মানবে কেন? তারও তো একটা ধর্ম্ম আছে, তাই নয়কি? তাই সে তার ধর্ম্ম অনুযায়ী কাজ করবে আর মানুষ মানুষের ধর্ম্ম অনুযায়ী কাজ করবে, সৃষ্টির বুকে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ধর্ম্ম পালন করবে এটাই প্রতিটি প্রাণের মূল ধর্ম্ম। গুরুভাইয়ের কথাটা ও জানতে চাওয়া ভালো লাগলো। এইরকম জানতে চাওয়ার কৌতূহল বা ইচ্ছা আমাদের সত্য সন্ধানে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা ঠাকুরের আরো আরো কাছাকাছি আসতে পারি, তাঁকে জানতে ও বুঝতে পারি। আলোচনার মধ্যে দিয়ে মানুষ ঠাকুর সম্পর্কে বাস্তব ধারণা করতে পারে। ঠাকুর যে নিছক কোনও মহাত্মা বা মহাপুরুষ বা ধর্ম্মগুরু নন, তিনি যে স্বয়ং পরমাত্মা তা বোধে আনতে পারি, পারি দীক্ষা গ্রহণ ও এই জীবনকে, এই জীবনের আসাকে সার্থক ক'রে তুলতে। তাই আমি আমার পোস্টের উত্তরে লেখা গুরুভাইয়ের কথাটার বিশ্লেষণ করার জন্য আমার এই কলম ধরার প্রয়াস।

গুরুভাইয়ের করা প্রশ্ন ওয়ারেন্টি আর গ্যারান্টি প্রসঙ্গে বলি। ওয়ারেন্টি নয়, ওয়ারেন্টি তো বর্তমান ঘোর কলির জালি ব্যবসায়ীদের কথা। আগে কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরাসরি গ্যারান্টি দিত। কিন্তু আজ তারা জানে যে তারা গ্যারান্টি রাখার মর্যাদা হারিয়েছে। তাই তারা আজ আর গ্যারান্টির কথা বলে না, আর বলবার মত তাদের সেই সততা নেই। তাই ব'লে কি 'গ্যারান্টি' শব্দ তার মর্যাদা হারিয়েছে? 'গ্যারান্টি' শব্দ তার মর্যাদা হারায় নি, মানুষ মানুষকে, ব্যবসায়ী তার ক্রেতাকে গ্যারান্টি দেবার জন্য যে সততা, ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন সেই সততা, ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে এক তাল মাংসে পরিণত হয়েছে আজ; আর তা হয়েছে জৈবি সংস্থিতিতে! তাই আজ ডিকশনারী থেকে 'কুল রাখি না মান রাখি' গোছের শব্দ 'ওয়ারেন্টি' বের ক'রে এনেছে সুযোগসন্ধানী মানুষ। তাই এক্ষেত্রে অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দরবারে কোনও স্থান নেই 'ওয়ারেন্টি'-র; স্থান ছিল, আছে ও থাকবে 'গ্যারান্টি' শব্দের তা যতদিন তাঁর ও তাঁর সৃষ্ট সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকবে। তাই আমি 'গ্যারান্টি' শব্দ সচেতন ভাবেই ব্যবহার করেছি আবারও করছি। আর বারবার বলছি সৎসঙ্গীদের, হ্যাঁ গ্যারান্টি! ১০০তে ২০০ভাগ গ্যারান্টি যে ইষ্টভৃতি ও নামধ্যানপরায়ণ সৎসঙ্গীদের কোনও ভয় নেই করোনার।

এবার প্রশ্ন হচ্ছে, আমার 'গ্যারান্টি' শব্দ প্রয়োগের মধ্যে গুরুভাইয়ের সন্দেহ, অবিশ্বাস এলো কোথা থেকে?
 
এইটা আর কিছুই নয়, তাঁর প্রতি অবিশ্বাস। এই মানসিকতা তাদের, যাদের জীবনে ঠাকুর আছে নাম কা ওয়াস্তে। ঠাকুরও আছে, বৃত্তি-প্রবৃত্তির উচ্শৃঙ্খল বিশৃঙ্খল চলনও আছে। যেখানে বৃত্তি-প্রবৃত্তি বাধা পায় সেখানে ঠাকুরকে পাশে সরিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে চুমু খায়, আর যেখানে বিপদে পড়ে সেখানে ঠাকুর, ঠাকুর করে! আর বিপদে পড়ে ঠাকুরের দয়া না পেলে তখন 'দূর দূর ঠাকুর টুকুর ব'লে কিছু নেই, ওসব ফালতু।' না ক'রে পাওয়ার অসুস্থ বুদ্ধি!

আর বিশ্বাস ও নির্ভরতা এতই ঠুনকো যে, বিরুদ্ধ ভাব সেই ঠুনকো বিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার ক'রে দেয়, তখন নির্ভরতা ব'লে জীবনে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। যারা ঠাকুরকে ধরেছে তারা মনে করে জীবনে যখনই যা দরকার হবে তাই-ই ম্যাজিকের মত পেয়ে যাবে আর জীবনে কোনও দুর্ভোগ নেবে এলে তার দায় নিতে হবে ঠাকুরকে! তলিয়ে দেখবে না এই বিপর্যয় কেন নেবে এলো জীবনে, সংসারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নেগেটিভ অরবিটের (লোকজন, আলাপ-আলোচনা, চিন্তাভাবনা, খাদ্যখানা ইত্যাদি) মধ্যে কাটাতে কাটাতে শরীরে-মনে-আত্মায় যে কম্পনের সৃষ্টি হয় তারই বহির্প্রকাশ ঘটে কথাবার্তায়, কাজকর্মে। তখন ঈশ্বরের লীলা, ক্ষমতা বোঝে এমন বালখিল্য ঋষির বারো হাত কাঁকুর-এর তেরো হাত বিচির দশা প্রাপ্ত জীবন দিয়ে সম্ভব নয়। এইসব মানুষ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখবে, লীলা বুঝবে এইকথাও যা কুঁজের চিৎ হ'য়ে শোওয়ার ভাবনাও তা, একই। অথচ এরাই আবার ঈশ্বর নিয়ে, ঈশ্বরের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে!
 
ঈশ্বর যে আছেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব যে আছে, তিনি মানুষের জন্য, মানুষের মাঝে মানুষের রূপ নিয়ে যে নেবে আসেন আর নেবে আসেন বারবার যুগের উপযোগী হ'য়ে আর তিনি যে সব দেখছেন এসব কথা ঈশ্বর অবিশ্বাসী ও ঈশ্বর মানে না এমন মানুষ স্বীকার করে না। স্বীকার করতে নাই পারে তারা কিন্তু ঈশ্বর বিশ্বাসী, ঈশ্বর মানে এমন মানুষ কি ক'রে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হয়!? তারা গাছেরও খায় আবার তলারও কুড়োয় স্বভাবের। যেই ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষকে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার কথা বললাম অমনি চলে এলো নানা প্রশ্ন ও যুক্তির সম্ভার সাজিয়ে! ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করার কথা বলতে এরা না ক'রে পাওয়াকেই বোঝে! কোনও কিছু না ক'রে এরা ঈশ্বরের দর্শন, দয়া সব কিছু পেতে চায়! পেতে চায় ফোকটে! তাই পাওয়াও ঘটে না! শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, "বিশ্বাস না থাকলে দর্শন হবে কি ক'রে? যদি বিশ্বাস না কর, তোমার দেখাও হয় না, অনুভব করাও হয় না। আবার, ঐ দেখা ও অনুভব করা বিশ্বাসকেই পাকা ক'রে দেয়।"
তাই এইসমস্ত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ভক্তমণ্ডলীর কাছে গ্যারান্টি শব্দ ফেক ব'লে মনে হয়। যেখানে মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি, পান্ডিত্য শেষ সেখান থেকে শুরু হয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার অভিযান! ঈশ্বর কি করতে পারে আর না পারে তা কি ঈশ্বরের সৃষ্ট সৃষ্টির পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব!? যেখান থেকে অর্থাৎ যে উৎসমুখ থেকে সমস্ত কিছুর উদ্ভব, যিনি সমস্ত কিছুর অধিপতি---বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে সেন্ট্রাল জোন বলা হয়----সেখানে যখন মানুষ যুক্ত হ'য়ে যায় তখন আর তাকে কেউ ছুঁতে পায় না, কিছু করা তো দূরের কথা! চায়নার করোনা-ই হ'ক আর হায়না হ'ক বা আগামী পৃথিবী ধ্বংসের ভয়াবহ যে ধ্বংসাত্মক কারণ-ই হ'ক সৃষ্টির মূল মরকোচ যে নাম, বীজনাম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দিয়ে গিয়েছেন সেই নামের সঙ্গে যুক্ত একাত্ম যে জীবন তাকে কেউ টলাতে পারবে না!
 
শ্রীশ্রীঠাকুরের অভয় বাণী:
ঝড় ঝঞ্ঝা যতই আসুক
মনেতে রাখিস জোর
মাথায় আছে দয়াল ঠাকুর
ভাবনা কিবা তোর।

তাই বলি, গ্যারান্টি দিয়ে বলি, নামময় হ'য়ে থাকুন আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা। সকালে ইষ্টভৃতি করুন, তাঁর নির্দেশ মত থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেয়ে জল খান! সকাল বিকাল প্রার্থনা করুন! শারীরিক-মানসিক-আত্মিক সদাচার পালন করুন! নেগেটিভ সঙ্গ, চিন্তা-ভাবনা, কাজকর্ম থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন, কোনও ভয় নেই! দয়াল আছেন, তিনি সব দেখছেন। যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি পরিপালনের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করুন। চলতে, ফিরতে, উঠতে, বসতে ২৪ঘন্টা নাম করুন, শুধু নাম আর নাম! ভুলে যাচ্ছেন নাম করতে? মনে পড়লেই করুন। সমস্ত কাজের মধ্যে করুন, মনে মনে করুন, করার অভ্যাস করুন। রাত্রিবেলা ঘুমোবার আগে একটু তাঁর সামনে বসুন, নাম করুন, তারপর ঘুমান, ঘুমাতে ঘুমাতে নাম করুন, নাম করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম ভাঙলেই নাম করুন, তারপর ইষ্টভৃতি ক'রে বিছানা ছাড়ুন। কোনও ভয় থাকবে না। করোনা ভীতি কেন আরও আরও ভয়ানক মহাভীতিও তাঁর দয়ায় কেটে যাবে, দূর হ'য়ে যাবে জীবন থেকে! তাই তো শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গিয়েছিলেন,
 
যজন যাজন ইষ্টভৃতি
করলে কাটে মহাভীতি! জয়গুরু। ( লেখা ২৮শে মার্চ, ২০২০)

Wednesday, March 27, 2024

প্রবন্ধঃ পর্ব---২/১ (নেতা ও জনতা)

আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস তাদের দলের বরিষ্ঠ নেতাদের পিছনে সরিয়ে নেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীকে বেছে নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে নেবে পড়েছে। আগামী নির্বাচনে কংগ্রেস যদি সরকার গঠন করে তাহলে রাহুল গান্ধী হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী! সেই নেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচনী ময়দানে নেতা নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে তাঁর বক্তব্য “Give me 60months at the centre; I'll give you a life of peace and happiness"-এর সমালোচনায় 'নেতা' শব্দের গুরুত্বকে নস্যাত ক'রে আরো এক ধাপ এগিয়ে বুক চেতিয়ে বললেন, "নেতা দেশ বদলতা নেহী, জনতা দেশ বদলতা হ্যায়”।

রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই কথার জাগলিং! কোন জনতা? তাহলে যে রাজ্যে জনতা যাকে খুঁজে নিয়েছে রাজ্য শাসন করার জন্য সে ঠিক! তাহলে জনতার দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে, সরকারের প্রধানকে এত সমালোচনা কেন? কেন তাঁর এত নিন্দা? কেন তাঁকে ব্যর্থতার প্রতীক হিসাবে সেঁটে দেওয়া হয়? তাহলে কি জনতা ভুল করল? আর জনতা কি দেশের বা রাজ্যের হাল ধরে? রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস দল যদি জিতে আসে আর সরকার গঠন করে তাহলে কি দেশের শাসনভার জনতার হাতে তুলে দেবেন রাহুল গান্ধী? এই যে ৩৪বছর জনতা সুযোগ দিল বামফ্রন্টকে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য চালাবার জন্য, সেই রাজ্য কার নেতৃত্বে চালিত হয়েছিল? জনগণের? ক্ষমতার চেয়ারে বসে রাজ্যটাকে বদলাবার সুযোগ কে পেয়েছিল? জনগণ? কেন জনতা সেই ফ্রন্টের ওপর, নেতার ওপর অখুশি হ’য়ে তাঁকে সরিয়ে দিল? কেন জনতা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান মনমোহন সিং-এর ওপর অসন্তুষ্ট? কেন জনতা দেশের ১৩জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী, অটল বিহারী বাজপেয়ীর মত গুটিকয়েক প্রধানমন্ত্রীকে নেতা হিসাবে মনে রাখে? কেন জনতা সুভাষ বোসের মত নেতাকে হৃদয়ে স্থান দেয় ও সারা দেশের মানুষ নেতাজী বলে সম্বোধন করে? কেন মানুষ চিত্তরঞ্জনকে দেশবন্ধু বলে সম্বোধন করে? কেন আজও পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে পশ্চিমবঙ্গের রুপকার বলে? কেন ৩৪বছর সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও অন্যরা সেই স্বীকৃতি পান না? কেন প্রমোদ দাশগুপ্তকে আজও স্বীকৃতি দেওয়া হয় অবিসংবাদিত সাংগঠনিক নেতা হিসাবে? কেন দলমত নির্বিশেষে ভারতবর্ষের সমস্ত দল ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জ্যোতি বসুকে মেনে নিয়েছিলেন তাদের নেতা হিসাবে? এরকম অজস্র উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে।

যাই হোক, জনতা যদি দেশ বদলাতো তাহলে ভারত ৬৬বছর পরেও এমন পঙ্গু হয়ে থাকতো? জনতা তো শুধু ভোট দেওয়ার অধিকারী। তাও দলীয় প্রার্থীদের! দল যাকে প্রার্থী করবে তাঁদের মধ্যে কাউকে বেছে নাও। দলতন্ত্র আজ গণতন্ত্রের বাবা, ঈশ্বর! দলীয় সীমানার বাইরে যাবার অধিকার, অনুমতি, সুযোগ, সুবিধা, সম্ভাবনা জনগণের নেই! হয় যে কোন একজনকে বেছে নাও আর না-হয় ভোট না দিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে থাকো! আমাদের দেশে ভোট একটা উৎসব। একটা চুলকানি। ঝড়-জল-তুফান হলেও মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রতিনিধির ক্ষমতা লাভের জন্য প্রতিনিধির পক্ষে ভোটাঞ্জলি দেবেই দেবে! জনগণ দেশ নামক গাড়িটার চেয়ারে দলের মনোনীত কাউকে বসাতে পারে কিন্তু গাড়ীটা চালাতে হবে তাঁকেই অর্থাৎ সেই দলের মনোনীত নেতাকেই। জনগণ তো ভারত নামক দেশ গাড়ীটা চালাবে না! তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই অপরিপক্কতা, অজ্ঞতা সাথে অভিজ্ঞতাবিহীন একজন মানুষ যিনি মহানুভবতার নামে জনতার দোহাই দিয়ে কথার তুবড়ির রংবেরঙের ফুলঝুড়িতে জনগণকে মাতিয়ে এতবড় ভারত নামক গাড়ীটার পাইলটের চেয়ারে বসবে?
এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে এই-ই জনগণ দেশ বদলাবে? কোন জনগন? জীবনের তথা দেশের নানা পরিস্থিতি ও পরিবেশের চাপে পড়ে প্রতিদিন নতুন নতুন অভিভুতির দ্বারা আক্রান্ত জনগন? কোন মানুষ দেশ বদলাবে? যে মানুষ নানা পরিস্থিতিতে পড়ে নানারকম ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রতিনিয়ত রাঙ্গিয়ে যাচ্ছে ; Mental Identity বলে কিছু থাকছে না যে মানুষের, সেই মানুষ? কোন জনতা দেশ বদলাবে? যে জনতা নেতার কথার সুড়সুড়িতে নিজেকে দেশ বদলাবার কারিগর ভাবে সেই জনতা? তাহলে কি ধরে নেব রাহুল গান্ধী মূর্খ না-কি রাজনীতির লড়াই-এর ময়দানে ক্ষমতা লাভের লোভে জনগণের সাথে কথার জাগলিং? কোনটা?
( লেখা ২৭শে মার্চ, ২০১৪)

Tuesday, March 26, 2024

গানঃ তখন আমার বয়স ছিল

তখন আমার বয়স ছিল ষোলোর ঘরে
একবার বেড়াতে গেছি দেওঘরে
রাস্তার লাল মাটি, মহুয়া সারি
তখনও তোমার আমার হয়নি আলাপ
তখন আমি বকছি শুধুই মিথ্যে প্রলাপ
তখনও তোমার সাথে হয়নি আলাপ
তখন আমি বকছি শুধুই মিথ্যে প্রলাপ
তখন আমি দেখছি শুধুই আম আর ক্যালিপ্ টাস।
তখন ছিলাম চালাক আমি বেকুব শালা লালা লা আলালা লা লা শালা।।

তখন রঙিন চোখে সব দারুণ লাগে
মহুয়ার ফুলের গন্ধে ভোরের হিমেল হাওয়ায়
স্বপনপুরীর হাতছানিতে তন্দ্রাহত
আমি তখন পড়ছি ঢলে অলীক মায়ায়
তখন আমার মন ছিল না ভর্তি গরল
দু’চোখের দৃষ্টি আমার ছিল সরল
তখন ছিলাম বেকুব চালাক শিখছি শালা লালা লা আলালা লা লা শালা।।

ছিলাম আমি ডানপিটে ঐ মেঘলা দিনের
যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় ছুট্টে চলা
হাতের কাছে পেয়েও ঐ পরশ মানিক
সবজান্তা আমি পাথর ভেবে ছুঁড়ে ফেলা।
স্বপ্নের প্রাসাদ বানাই তোমায় ভুলে
ভালোবেসে যত্ন ক’রে প্রাসাদ সাজাই
দিনের শেষে দেখি স্বপ্ন সব গেছে উড়ে
ভাঙ্গা বুকে কোথায় খুঁজি এখন সেই তোমায়
তখন আমি তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে
রুপকথার রাজপুত্তর পথ হারিয়ে
মুখ থুবড়ে পড়ি অচিনপুরে বেকুব শালা
লালা লা আলালা লা লা শালা।।

তখনও তোমার সাথে আমার হয়নি আলাপ ও দয়াল
তখন আমি বকছি শুধুই মিথ্যে প্রলাপ
তখনও তোমার সাথে আমার হয়নি আলাপ
তখন আমি বকছি শুধুই মিথ্যে প্রলাপ
তখন ছিলাম, চালাক আমি বেকুব শালা
তখন ঘুম ভাঙলেই ঢালছি গলায় স্বপ্ন হালা।
তোমার হাত ধ’রেও না ধরার চলছে পালা
স্বপ্নগুলো সত্যি হ’য়েও পূরণ না হওয়ার জ্বালা।

গানঃ আঁধারেতে আলো জ্বলে

বুকেতে ভীষণ জ্বালা
আঁখি তলে জলের ধারা২
দয়ালের হাসিতে জুড়ায় প্রাণ
হায়রে দয়াল আমার জান।

সব ফেলে তোমার পিছে
ছুটে আমি আসি নিজে২
মিছে যেন না হয় আমার ধ্যান
হায়রে দয়াল তেরে কুরবান।

আঁধারেতে আলো জ্বলে
তারি মাঝে জীবন দোলে
চরণতলে জীবন দিলাম
হায়রে দয়াল আমার জান।

আলোর বুকে এসো সবাই।
জীবন খুঁজে পাবে হেথায়।২
হারানো জীবন খুঁজে পাবে ।
হায়রে দয়াল তেরে কুরবান।

বুকেতে ভীষণ জ্বালা
আঁখি তলে জলের ধারা২
দয়ালের হাসিতে জুড়ায় প্রাণ
হায়রে দয়াল আমার জান।৩
হায়রে দয়াল করেছি জীবন কুরবান।
হায়রে করেছি কুরবান।২
(কজরা মোহাব্বত বালা গানের সুরে------,)


গানঃ ঐ ডিগড়িয়া পাহাড়ে

ঐ ডিগড়িয়া পাহাড়ে দয়াল প্রভুর ছায়ারে
পরাণ আমার পাগল হ’য়ে যায়
ঐ ডিগড়িয়া পাহাড়ে দয়াল প্রভুর স্মৃতিতে
পরাণ আমার পাগল হ’য়ে যায়
ঐ পাগল হ’ইয়ে যায় গো প্রভু, পাগল হ’য়ে যায়।
পাগল হ’য়ে যায় গো প্রভু, পাগল হ’য়ে যায়
এই পরাণ আমার পাগল হ'য়ে যায়২

তোমার প্রেমে পাগল পারা২
তোমার মাঝে আমি হারায় রে
তোমার প্রেমে পাগল পারা২
তোমার মাঝে আমি হারায় রে।

মরি, মরি আমি মরি তোমার রূপের বাহারে
প্রভু চল ঘর বাঁধিব আমার বুকের মাঝারে।
(মন) প্রভুর পায়ে সঁপে দে, জীবন স্বামী ক’রে নে
এই বেলা মন চল পাগল হ’ইয়ে যায়
(চল) পাগল হ’ইয়ে যায় গো মন, (চল) পাগল হ’ইয়ে যায়২
এই বেলা চল পাগল হ’ইয়ে যায়২

রাতবিরেতে পড়ে মনে শয়নে আর স্বপনে
প্রেমের ফুল ফোটে প্রাণে ঝরে প্রভুর চরণে।
বুকেতে ঝড় উঠিল আঁখিতে বিদ্যুৎ খেলিল
এই বেলা চল পাগল হ’ইয়ে যায়।
(চল) পাগল হ’ইয়ে যায় গো মন, চল পাগল হ’ইয়ে যায়২
এই বেলা চল পাগল হ’ইয়ে যায়২

তোমার প্রেমে পাগল পারা২
তোমার মাঝে আমি হারায় রে
তোমার প্রেমে পাগল পারা২
তোমার মাঝে আমি হারায় রে

রুধি রাতে ক্ষণে ক্ষণে ছলাৎ ছলাৎ করে রে
দয়াল প্রভুর সাড়া জাগে পরাণে পরাণে
হাসির ঝিলিক উঠিল পরাণে রঙ লাগিল
এই বেলা চল মাতাল হ’ইয়ে যায়,
এই মাতাল হ’ইয়ে যায় গো মন, মাতাল হ’ইয়ে যায়2
এই বেলা চল মাতাল হ’ইয়ে যায়

এই বেলা চল পাগল হ’ইয়ে যায়।৪
তোমার প্রেমে পাগল পারা২
তোমার মাঝে আমি হারায় রে
তোমার প্রেমে পাগল পারা২
তোমার মাঝে আমি হারায় রে




কবিতাঃ জীবন সুধা।

হত্যা করো, হত্যা করো নির্ম্মম নিষ্ঠুর
আপোষহীন মনোভাবে নির্দয় হৃদয়ে;
উপেক্ষা করো, তাচ্ছিল্যে ভরিয়ে, দাও
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিঃসঙ্কোচে ফিরিয়ে।
ঘৃণা করো, করো অবহেলা অপমান
যা হয় হবে, যায় যাক রসাতলে যতসব
ঠুনকো পাতি শালা মান-সম্মান।
কঠোর হও, হও কঠিন প্রশ্নশূন্য হৃদয়
দূর ক'রে দাও ক্ষমাহীন দয়ামায়াহীন
প্রাণে ত্যাগ ক'রে মনোভাব সদয়।
বাৎসল্য রসের উৎকর্ষ জেনো তাচ্ছিল্য
জেনেছি দয়ালের কাছে, শয়তানের লীলা
চলে তার প্রাণে আছে যার প্রাণে সারল্য।
নির্ম্মম আঘাতে করো চুরমার, করো ধ্বংস
সমূলে হ'য়ে কালাপাহাড় অবসাদের দেওয়াল,
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দাও খাক ক'রে হতাশাগ্রস্থ
জীবনের যা কিছু জঞ্জাল। করো পদাঘাত
নীচতার বুকে সবলে, হিংস্রতার সাথে
ঘৃণা উগড়ে ফেল উপড়ে মনের ডাস্টবিনে
যত দুর্গন্ধময় ময়লা জমে আছে তোমার।
ছলে-বলে-কৌশলে দাও খতম ক'রে
ঐ রক্তচোষা বাদুর দুর্বলতাটাকে যেটা
লুকিয়ে আছে তোমার বুকে সংগোপনে।
শয়তানের বুকে ভীমবিক্রমে মার লাথি,
দে ঝাঁপ দ-য়া-ল ব'লে দয়ালের কোলে
আমি বলছি নিশ্চিত তোমায় ওই কোল-ই
একমাত্র স্বর্গ, ওই কোলেই আছে জীবন সুধা,
মৃতসঞ্জীবনী সুরা পানে ঐখানেতেই তুই
জীবন খুঁজে পাবি।

Monday, March 25, 2024

কবিতাঃ মানুষ কিছুতেই বুঝদার হ’তে চায় না!

এতগুলি যুগ পেরিয়ে গেল,
মানুষ তবুও অবুঝ রয়ে গেল;
কিছুতেই বুঝদার হ’তে চায় না।
এখনো বুঝতে চায় না ‘আকাশ’ শব্দটার মানে
সীমানাহীন কোনও বারোয়ারী সম্পত্তি নয়।
মানুষ শব্দটাতে কোনও ভবঘুরে বা ভাদাইম্মা নেই
নিখুঁত বাদের কোনও বোদ্ধা এই বিশ্ব সংসারটা চালাচ্ছেন না।
বাদগুলো সব ইউটোপিয়া
যারা এই ইউটোপিয়ায় বিভোর হ’য়ে থাকে
তারা নিজের অন্তরের মলিন আত্মাটির
কান্না শুনতে পায় না।
তারা অলীক স্বপ্নবিলাশী।
(লেখা ২৪শে জানুয়ারি'২০২৪)

কবিতাঃ হয় গো সব পাওনা।

কি যে করি ভেবে মরি 
ভেবে ভেবে মনে করি পাবো রতন
রতন বলে চলন বিনা ঠাঁই পাবে না 
করো তুমি যতই যতন!
কেউ বলে সুখে থাকতে করলে সুমিরণ 
হবে না গো মন উচাটন!
কেউ বা বলে ভুগতে হবে 
কর্মফল জনম জনম!!
কি করি ভেবে মরি, কি যে বলি 
কুল পায় না আমার মন!!
শরীর বলে মন যতই বলো, যাই করো 
ফিরে চলো মন নিজ নিকেতন!
কেউ বলে গেলে গয়া কাশী থাকবে হাসিহাসি
পুরাবে মনের সব কামনা!
কেউ বা বলে ঘরের মধ্যে ঘর তুলে 
দয়ালধাম হ'লে পরে
হয় গো সব পাওনা!

প্রবন্ধঃ ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন

তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় কমিটি পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতাদের ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের নাম মুখে আনতে পারছে না। রাজ্যের সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতা চাইবার নামে ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচের মত নেচে নেচে ‘আজ হোলী খেলবো শ্যাম তোমার সনে, একলা পেয়েছি তোমায় নিধু বনে’ গান গাইতে গাইতে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রেম জমাবে কিন্তু সরাসরি মুখে বলবে না ‘এসো হে কংগ্রেস! এসো এসো!’ এই গোপন লুকোচুরির খেলা বামপন্থীদের মজ্জাগত। এরা কখনোই বুক ফুলিয়ে বলতে পারে না, “প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা, প্যার কিয়া কোঈ চোরি নেহি কি, ছুপ ছুপ কে মন মরনা ক্যা; প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা!” সিপিএমের এই রকম হাস্যকর গা সওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই রাজ্যের মানুষ ৩৪বছর ধরে দেখতে অভ্যস্ত। এই জোট না-কি সমস্ত মানুষের জোট, কোনো দলীয় জোট নয়; এই অজুহাতে আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে এরা কোনো লজ্জা অনুভব করে না। ‘আদর্শ’ শব্দ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অভিধানের একটা শব্দ মাত্র। ওগুলো শুধুমাত্র আউড়ানোর জন্য, ক্ষমতা দখলের চাবিকাঠি মাত্র; করার বা আচরণের জন্য নয়। কম্যুনিস্টরা কোনদিনই চ্যালেঞ্জ নিতে পারেনি। দেশের সংকটের সময়ে এরা দায়িত্ব নিয়ে দেশকে সংকট মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যাবার মত হিম্মৎ দেখাতে পারেনি। সর্বভারতীয় স্তরে রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি না থাকা সত্ত্বেও আঞ্চলিক দল হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারে যোগদানের সুযোগ পাওয়া এমনকি দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র তত্ত্বকথার অজুহাতে জনগণের দেওয়া দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে, সরকারে যোগদান করে জনগণের ন্যুনতম চাহিদা পালনের দায়িত্ব নেওয়ার হিম্মৎ দেখাতে সাহস করেনি। জনগণকে এরা চিরকালই আন্ডারএস্টিমেট করে, বোকা ভাবে। এরা জানে জনগণের স্মৃতিশক্তি বড়ই দুর্বল। এরা কোনকিছুই বেশীদিন মনে ধরে রাখতে পারে না। সময়ের প্রবল স্রোতে এদের মাথার সব ঘিলু ভেসে যায়। অতএব হে দুর্বল স্মৃতিশক্তি জিন্দাবাদ।
বামপন্থীদের পরিস্থিতির অবস্থান সম্পর্কে বলা হয় এরা তত্ত্বগত অবস্থান আঁকড়ে থাকে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব ও মূল্য এরা বোঝে না। কথাটা ভুল। অন্য অনেকের তুলনায় কম্যুনিস্টরা ধান্দাবাজির রাজনীতির ময়দানে শক্তপোক্ত। রাজনৈতিক গুরুত্ব ও মূল্য এরা খুব ভালো বোঝে। জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার পিছনে এদের কোনো তত্ত্বগত অবস্থান ছিল না; ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের প্রশ্নে বাংলার আলিমুদ্দিনের অনৈক্য ও পলিটব্যুরোর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর জ্যোতিবাবুকে না পসন্দ মনোভাব এবং যেটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রাদেশিক মনোভাব। তাই এরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব ও মূল্য বোঝা সত্ত্বেও সীমিত সামান্য শক্তি নিয়ে ভারতবর্ষকে শাসন করার সুযোগ পেয়ে সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত হীনমন্যতার কারণে।

বাংলা, বাঙ্গালী ও বাঙ্গালীর মেধাকে কোনোদিনই ভারতবর্ষের রাজনৈতিক নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেনি। তাই নেতাজী থেকে শুরু করে প্রণব মুখার্জী, জ্যোতি বসু কেউই ভারতবর্ষকে শাসন করার সুযোগ পায়নি। বাঙালি ও বাঙালির মেধাকে শুধু ভারতবর্ষের নেতৃত্ব নয় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বও মেনে নিতে পারেনি। তাই ভারতবর্ষ হারিয়েছে একের পর এক যোগ্য নেতৃত্ব। আর বলতে দ্বিধা নেই ভারতবর্ষের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৌড়ে এই অসাধারণ যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন বাঙালি নেতৃত্বকে পিছন থেকে ছুরি মারার এই অশুভ খেলায় সেই সিরাজের আমল থেকে বিদেশি থেকে স্বদেশী সকলের সঙ্গে চিরকাল হাত মিলিয়েছে বুদ্ধিমান লেখাপড়াজানাওয়ালা ধান্দাবাজ বাঙালি। সিরাজের সঙ্গে বেইমানী করেছিল সিরাজের আস্থাভাজন মীরজাফর বিদেশীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে। সেই প্রথম শুরু হয়েহিল দেশের ভিতর থেকেই বাঙালির হাত ধরে বাঙালি নিধনের জঘন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

নেতাজিকে দেশের বাইরেই থেকে যেতে হ’ল সেই স্বাধীনতার স্বর্ণমুহূর্তে রহস্যজনক অন্তর্ধানের তকমা নিয়ে। স্বাধীনতার আনন্দে মশগুল সাধারণ ভাঙ্গাচোরা বাঙালি ভুলেই গেল এই স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত প্রাণ দেশের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিতর্কিত মহান ব্যক্তিত্বকে। দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রথম শ্রেণীর বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি নেতৃবৃন্দ সেই স্বাধীনতার সময় থেকে আজ পর্যন্ত এক রহস্যজনক(?) কারণে নেতাজির রহস্যজনক অন্তর্ধান বিষয়ে নিশ্চুপ! এমনকি তাঁর নিজের হাতে তৈরী দল ফরওয়ার্ড ব্লক তাঁর নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার ছিটেফোঁটা ভোগ করে চলেছে বছরের পর বছর কিন্তু নেতাজীর অন্তর্ধান সম্পর্কে কোনো উচ্চবাচ্য নেই! আর অশোক ঘোষ মহাশয়তো ক্ষমতা ভোগের টানা রেকর্ড করে ফেলেছেন, যা কিনা গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছে। দেশে ফিরে এলে নেতাজীই হতেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। আর তিনি ছিলেনও তাই। আজাদ হিন্দ সরকার আর আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রধান ছিলেন নেতাজী। তৎকালীন গোটা বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতৃবৃন্দ জানতেন ভারতবর্ষের অবিসংবাদিত নেতা জাতি-বর্ণ-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে আপামর সাধারণ মানুষের প্রাণভোমরা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস-ই হবেন স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তাঁরা জানতেন তিনি ফিরে এলে তাদের ধর্মের ভিত্তিতে বিশাল ভারতবর্ষকে ভাগ এবং বাংলা ও বাঙ্গালীকে চিড়ে ফেলে দু’ভাগ করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সফল হবে না, বানচাল হয়ে যাবে। আর জানতেন বলেই বিশ্বযুদ্ধের জয়ী সমর নায়করা কেউই তাঁকে, তাঁর অসাধারণ দেশপ্রেমকে, তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ, অস্খলিত আত্মবিশ্বাস ও কঠোর-কোমল নির্মল ব্যক্তিত্বকে মেনে নিতে পারেননি। তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার মুহূর্তেই দেশের ভিতর থেকেই শুরু হয়েছিল বিদেশীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাঙালি নিধনের খেলা। একমাত্র নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ছিলেন দেশ-কাল পেরিয়ে বিশ্বের আপামর সাধারণ মানুষের নেতা, জনগণমনঅধিনায়ক, আন্তর্জাতিক নেতা। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেস দেশকে শাসন করেছে বছরের পর বছর কিন্তু কোনোদিনও দেশের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব, দুরন্ত দেশপ্রেমিক, অবিসংবাদিত উদারমনাঃ নেতাজীকে, নেতাজীর রহস্যজনক অন্তর্ধানকে লজ্জা ও অপমানের ঘোর অন্ধকার থেকে আলোর জগতে মুক্তি দেয়নি। দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গিত মহান প্রাণেদের সম্মিলিত অরাজনৈতিক বিশাল মঞ্চকে ক্ষমতা দখল ও ভোগ এবং ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার স্বার্থে দলীয় সঙ্কীর্ণ সুবিধাবাদী মঞ্চে রুপান্তরিত করে নেতাজীকে চরম অবমাননা করেছে স্বাধীনতা পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন কংগ্রেস দল ও তার নেতৃবৃন্দ। কংগ্রেস দল পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান আর নেতাজীর প্রতি চরম অবহেলা, ঔদাসিন্য প্রদর্শন কংগ্রেস দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নেতাজীর প্রতি মানসিকতা কোন পর্যায়ের তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়; দুধকে দুধ আর পানিকে পানি আলাদা করে দেয়।
আর এই কম্যুনিষ্টরা নেতাজীকে কি চোখে দেখতো তা’ ভারতের সমস্ত রাজ্যের সমস্ত সম্প্রদায়ের লোক জানত ও জানে। আর বিজেপি নির্বাচনে সেই নেতাজীকে মই করে নির্বাচন পাড়ি দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়েই নেতাজী চ্যাপ্টার ক্লোজড করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক্ খারাপ হওয়ার ভয়ে। আর পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালে মাত হয়ে ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তা হারাবার ভয়ে মমতার নেতাজীর ফাইল প্রকাশের পথ অনুসরণ করেছে। আর তাই-ই আমরা সাধারণ বাঙালি তথা ভারতবাসী তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। আমরা সাধারণ মানুষ ভারত তথা বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতৃত্বের হীনমন্যতার শিকার হলাম।

দেশের আর এক সঙ্কট মুহূর্তে বাংলার মুখাপেক্ষী হয়েছিল গোটা দেশ। নেতৃত্বের অভাবে ভুগছিল মহান ভারতবর্ষ। সেই সঙ্কট মুহূর্তে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ খুঁজে নিয়েছিল আরও এক বাঙালিকে দেশকে নেতৃত্ব দেবার জন্য। তিনি বাংলার জ্যোতি বসু। কিন্তু সেই বাঙ্গালীও দেশকে নেতৃত্ব দেবার সুযোগ পায়নি। সুযোগ পায়নি ঘরে-বাইরের রাজনীতির নোংরা খেলার জন্য। তত্ত্বগত অবস্থানকে সামনে রেখে সিপিএম পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাঙালী জ্যোতি বাবুকে বলি চড়িয়েছিলেন। বলি চড়িয়েছিলেন তাঁর ২৪বছরের টানা প্রশাসনিক দক্ষতার চূড়ান্ত সফলতার রুপ দেখে। আলিমুদ্দিন আজকের মমতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রশ্নে দ্বিধাহীন প্রশ্নাতীত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মত মানসিকতা সেদিন দেখাতে পারেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আজকের মত সেদিন যদি আলিমুদ্দিনের বাঙালি কম্যুনিস্টরা জোটবদ্ধভাবে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বাঙালির রক্তের উষ্ণতার স্বাদ চাখাতে পারতো তাহলে সেদিন ভারতের আকাশে লেখা হ’ত নূতন ইতিহাস। বাঙালির তেজ টের পেয়েছিল গ্রীক সম্রাট থেকে শুরু করে ভারতের মাটিতে পা রাখা বিদেশী শক্তির শক্তিমানরা; টের পেয়েছিল বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশনেতারা আর্য্য বাঙালির উষ্ণ রক্তের নোনতা স্বাদ। আজ বাংলাদেশ বাঙালির রাষ্ট্র গঠন করে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে প্রমাণ দিচ্ছে বাংলা ও বাঙালির শৌর্য্য বীর্যের ঐতিহ্যের। কিন্তু পশ্চিমবাংলার বাঙালি কম্যুনিস্টরা প্রমাণ দিয়েছে তাদের রক্তে আর্য্য রক্তের অনুপস্থিতির। সেদিন পার্টির তত্ত্বগত অবস্থানের ছদ্মবেশের আড়ালে ছিল সেই বহু পুরোনো বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি মানসিকতা, ছিল বাংলা ও বাঙালির মনন ও মেধা, প্রশাসনিক দক্ষতা, প্রশ্নাতীত নেতৃত্বের সহজ ও স্বাভাবিক গুণাবলিকে মানতে না পারার জন্মগত নীচ মানসিকতা। অথচ এই জ্যোতিবাবুর নেতৃত্বেই টানা ২৪বছরের শাসনকাল-ই ছিল ভারতের মাটিতে সিপিএম পার্টি ও তার পলিটব্যুরো নামক সর্বশক্তিমান কমিটির অস্তিত্বের প্রাণভোমরা। সেদিন বাংলার বুকে মমতার তুফানের গতিতে উত্থান যতটা না বিড়ম্বনায় ফেলেছিল জ্যোতিবাবুকে তার থেকে বেশী, অনেক বেশী বিড়ম্বনার আবহাওয়া তৈরী করেছিল জ্যোতিবাবুর নিজের দলের ভিতরের পরিবেশ। জ্যোতিবাবুকে রাজনীতির ময়দান থেকে সরাবার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিল সেদিন পলিটব্যুরো নামক সিপিএমের সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। মমতাই ছিল সেদিন অপ্রতিদ্বন্দ্বী জ্যোতিবাবুর বিজয় রথকে থামাবার একমাত্র শক্তিমানরুপী পলিটব্যুরোর তুরুপের তাস। সেদিন জ্যোতিবাবুর ২৪বছরের শাসনে পরিপুষ্ট শক্তিমান পলিটব্যুরো জ্যোতিবাবুকে সরিয়ে রাতারাতি জনমানসে হাজির করেছিলেন অনভিজ্ঞ ক্লিন ইমেজের অধিকারী বুদ্ধদেববাবুকে। সেদিন ২৪বছরের টানা শাসন ব্যবস্থায় টিকে থাকা ও সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সিপিএমের গুরুত্বকে বজায় রাখা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে থাকা ও তার ফলে টানা ২৪বছরের রাজ্য শাসন আর সেই শাসনের ফল ভোগ করা ইত্যাদির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ জ্যোতিবাবুর পাশে দাঁড়ায়নি তাঁর পার্টি। বুদ্ধদেববাবুকে সামনে এনে পলিটব্যুরো সেদিন যে রাজনৈতিক চাল দিয়েছিল সেই চালে বাজিমাত হয়নি সেদিন, বাজিমাত হয়েছিল মমতার বদান্যতায়। মমতার সেদিনের অস্বাভাবিক বিস্ময়াতীত পরপর ভুল সিদ্ধান্ত বুদ্ধবাবুকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করেছিল আর মিথ্যে কৃতিত্ব নিয়েছিল পলিটব্যুরো নামক শক্তিমান ঈশ্বর আর বুদ্ধবাবুর ক্লিন ইমেজ। সেদিন সেই প্রবাদের সত্যতা প্রমানিত হয়েছিলঃ ‘ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে’। সেদিন যদি জ্যোতিবাবু আগাম মমতার মানসিকতা জানতে পারতেন, মমতার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার পরবর্তী পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে পারতেন সত্যদ্রষ্টা ঋষির মত তাহলে হয়তো জ্যোতিবাবুকে অসুস্থতার অজুহাতে সরানো যেত না। আর সরাতে গেলেও মানসিক সংঘাতের তীব্রতায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতো যা সামাল দেওয়া শক্তিমান পলিটব্যুরোর কাছে কঠিন ও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতো।

মমতা সেদিন কি ভুল করেছিলেন যার জন্য বুদ্ধদেববাবুর ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছিল আর শক্তিমান পলিটব্যুরো ফকিরের কেরামতির মত কৃতিত্ব কুড়িয়ে নিয়েছিল?
ভুলঃ ১) কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ।
২) কেন্দ্রীয় বিজেপি জোট থেকে বেরিয়ে আসা।
৩) রাজ্যে যখন বিরোধী জোটের তীব্র হাওয়া ঠিক সেই মুহূর্তে
রাজ্য বিজেপি জোট থেকেও সম্পর্ক ছিন্ন।
৪) সিপিএমের বি টিম বলে ঘোষিত রাজ্যে সাইনবোর্ডে পরিণত ও পশ্চিমবঙ্গের জনগণ দ্বারা উপেক্ষিত কংগ্রেসের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে জোট বাঁধা।

প্রশ্ন জাগে মনেঃ
১)মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র লক্ষ্য ছিল কি শুধু ক্ষমতা থেকে জ্যোতিবাবুর অপসারণ, সিপিএমের অপসারণ নয়?
২)জ্যোতিবাবুকে সরিয়ে বুদ্ধদেববাবুকে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার লক্ষ্যেই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছাকৃতভাবেই এই ভুলগুলি করেছিলেন?
৩)মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎকালীন চারপাশের একান্ত কাছের লোকেরাই কি তাঁকে এই সমস্ত একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরামর্শ দিয়েছিলেন পলিটব্যুরোর এজেন্ট হিসাবে?
প্রশ্ন অনেক কিছুই জাগে মনে, তাই প্রশ্নের অস্ত যাক।
পরবর্তী সময়ে আমরা কি দেখলাম? দেখলাম ভারতবর্ষকে নেতৃত্ব দেওয়ার তীব্র সংকট। আর সেই তীব্র সংকটে সেই অসুস্থ জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আবেদন জানালো নেতৃত্বের সংকটে অবস্থানকারী দেশের সেই সময়ের জোটবদ্ধ অবাঙ্গালী রাজনৈতিক শক্তিবৃন্দ। তাহলে কেন বলা হচ্ছে বাঙ্গালীকে কোনোদিন মেনে নেয়নি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশের অবাঙ্গালী নেতৃত্ব ও বিদেশী শক্তি? একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, দিনের আলোর মত স্পষ্ট দেখা যাবে সেদিন কেন দেশের অবাঙ্গালী নেতৃবৃন্দ জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন। মেনে নিয়েছিলেন শুধুমাত্র এই কারণে যে সেই সময় দেশের জোটবদ্ধ বিরোধী তথাকথিত সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দের মধ্যে এমন কেউ ছিলেন না যে বা যিনি দেশের জনগনের কাছে এবং নিজেদের ভিতরে পরস্পর পরস্পররের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। নিজেদের কায়েমি স্বার্থেই জোটবদ্ধ নেতৃবৃন্দ জ্যোতিবাবুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। জ্যোতিবাবুর দীর্ঘ ২৪ বছরের বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা ও প্রশ্নাতীত প্রশাসনিক দক্ষতাকে মূলধন করে টানা পাঁচ বছরের নিশ্চিত কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার সুখ ভোগ করার লোভে মত্ত হয়েই তারা জ্যোতিবাবুকে তাদের নেতা নির্বাচন করেছিলেন। জ্যোতিবাবুকে মেনে নিতে তারা বাধ্য হয়েছিলেন ক্ষমতা দখলের নেশায়; ভালোবেসে নয়, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য নয়। কিন্তু বাঙালি জ্যোতিবাবুর দেশের সেই সর্বোচ্চ আসনে বসার সোনার সুযোগে ছাই ঢেলে দিয়েছিল সেই সিপিএমের সর্বশক্তিমান পলিটব্যুরোর শক্তিমান অবাঙ্গালিরা আর তাতে রসদ যুগিয়েছিল সেই ঘর শত্রু বাঙালি। এবারের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে গণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতার আড়ালে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পার্টির পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্তকে গৌতম দেব, শ্যামল চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্যেরা ‘ঐতিহাসিক ও ইতিবাচক’ আখ্যা দেন। কিন্তু সেদিনের জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার পলিটব্যুরোর তত্ত্বগত অবস্থানের আড়ালে নেওয়া নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যমূলক ভুল সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক ভুল ও নেতিবাচক সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিতে পারেননি। স্বয়ং জ্যোতিবাবুকেই সেদিন পার্টির সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত’ বলতে হয়েছিল।
সেদিন যদি জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার জন্য এবং পরমাণু চুক্তির বিরোধিতায় ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার জন্য তত্ত্বগত অবস্থানের নামে মিথ্যে আদর্শকে আঁকড়ে ধরে রাখার গোয়ার্তুমি করতে পারেন তাহলে আজ এমন কি মহাভারত অশুদ্ধ হ’ল যে একটা রাজ্যে পায়ের তলায় জমি ফিরে পাওয়ার জন্য, অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য তত্ত্বগত অবস্থান থেকে ১৮০ডিগ্রি ঘুরে আদর্শকে বলাৎকার করতে শীর্ষ নেতৃত্বের বোধে বাধল না? কি জবাব দেবে আগামী প্রজন্মকে তাঁরা? নাকি যেনতেনপ্রকারেণ ক্ষমতা দখল করাই, ক্ষমতাতে টিকে থাকাই দলীয় আদর্শ ও একমাত্র তত্ত্বগত অবস্থান; আর এটাই শিখিয়ে যাচ্ছেন কম্যুনিস্ট নেতৃত্ব আগামী প্রজন্মকে? মোদী বা মমতা নয়, সমাজ পরিবর্তন বা গঠন নয়; ক্ষমতা দখলই একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র আদর্শ, একমাত্র তত্ত্বগত অবস্থান। এটাই সত্য, এটাই নীতি। ক্ষমতা দখলের জন্য নিজের আদর্শকে ঘায়েল করে একেবারে বিপরীত মেরুর আদর্শের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চুক্তি রফা করে দল বাঁধতে এদের নীতিতে বাধে না, লজ্জা লাগে না, অস্বস্তি বোধ হয় না; তা’তে ভবিষ্যতে যা হবার হবে। সমাজ বা দলের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার সময় নেই। বর্তমান এতটাই গুরুত্বপুর্ণ যে একমুহূর্ত ক্ষমতার বাইরে থাকা সম্ভব নয়। এতটাই ড্যাম কেয়ার মনোভাব। জনগণকে এরা চার অক্ষর ভাবে।

এবার আর এক বাঙালী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথা যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখব ইন্দিরা জমানায় প্রণব মুখার্জী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর একেবারে কাছের লোক, বিশেষ আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব। দলে ও সরকারে তিনি ছিলেন নাম্বার টু। ইন্দিরা পরবর্তী সময়ে রাজীব গান্ধীর জমানায় তাঁকে সরে যেতে হয়েছিল সেই অবাঙালি লবির বাঙালি বিদ্বেষের কারণে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দলের সংকট মুহূর্তে তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণেই তাঁকে দলে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। শুধু দলে ফিরিয়ে নেওয়াই নয় আবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর যোগ্য স্থান। রাজীব গান্ধীর আস্থাভাজন হয়ে আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছিলেন সেই নাম্বার টু হিসাবে। রাজীব গান্ধী পরবর্তী সময়ে নরসীমা রাওয়ের আমলে তিনিই ছিলেন দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, সংকোটমোচনকারী নাম্বার টু। সীতারাম কেশরীর তিনি বিশেষ আস্থাভাজন ছিলেন তাই নয়, তাঁর ওপরই সীতারাম কেশরী নির্ভরশীল ছিলেন। এর পরবর্তী ঘটনা সকলেরই জানা। বিদেশিনী হাওয়া তুলে সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার থেকে দূরে সরিয়ে রাখার খেলায় বিজেপি সফল হ’লেও চেয়ার কিন্তু পেলেন না দলের একমাত্র দাবীদার এবং দল ও সরকারের নাম্বার টু এবং ততদিনে কংগ্রেস দলের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসাবে চিহ্নিত ও প্রতিষ্ঠিত প্রণব মুখার্জী। প্রণব মুখার্জী যে শুধু কংগ্রেস দলের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ ছিলেন তাই নয়, দেশের সংকট মুহূর্তে যে দলই সরকারে থাকুক না কেন সেই দলের, সেই সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর মেধা ও মননকে স্মরণ করে দেশকে সংকট মুহূর্ত থেকে উদ্ধার করতে তাঁর সহযোগীতা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারেননি। পারেননি সেই একই কারণে, তিনি ছিলেন বাঙালি। কংগ্রেস তাঁকে চেয়ারে বসতে দেয়নি কারণ তিনি ছিলেন দল ও সরকারের অলিখিত প্রধান ও ক্রাইসিস ম্যানেজার; আর তিনিই যদি সরকারের প্রধান হয়ে যান তাহলে দলের অন্য গুরুত্বপূর্ণদের কোনো গুরুত্ব থাকে কি? তাই তিনি কোনোদিনই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারলেন না। আর তাই বাঙালী সেন্টিমেন্টকে বশে রাখতে, তাঁর যোগ্যতা ও দক্ষতাকে অস্বীকার করতে না পেরে, তাঁর প্রতি দলীয় অবিচারের ঘায়ে প্রলেপ দিতে খেসারত স্বরুপ তাঁকে রাষ্ট্রপ্রতি হিসাবে মান্যতা দিল তাঁর দল কংগ্রেস।

এইভাবে বাংলা ও বাঙ্গালীর প্রতি চিরকালীন বঞ্চনা হয়ে এসেছে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে দেশের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে।

এই দুই দলই, কংগ্রেস ও সিপিএম, বেশীরভাগ সময়ই দেশকে ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে শাসন করে এসেছে। কেন্দ্রে বেশীর ভাগ সময়টাই এককভাবে শাসন করে এসেছে কংগ্রেস; মাঝে বহু দল নিয়ে গঠিত ইউপিএ সরকারের মূল শক্তি ছিল কংগ্রেস। আবার রাজ্যেও কংগ্রেস শাসন করে এসেছে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই। সিপিএম কেন্দ্রে এই কংগ্রেস দল দ্বারা পরিচালিত ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়ে তাদের শক্তি জুগিয়েছে; আবার রাজ্যে কংগ্রেসকে পরাজিত করে সেই ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ৩৪বছর শাসন করে এসেছে। এদের মিত্রতা আজকের নয়, বহু পুরোনো। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সেই ১৯৭৭ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের জ্যোতিবাবুর সরকারকে কোনোদিনই ক্ষমতা থেকে সরাবার জন্য সচেষ্ট হয়নি। তুমি থাকো রাজ্য নিয়ে আর আমি থাকি কেন্দ্রে বা আমি থাকি রাজ্য নিয়ে তুমি থাকো কেন্দ্রে এই দর্শনে বিশ্বাসী কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্ব পরস্পর পরস্পরকে ক্ষমতাই থাকতে সাহায্য করে এসেছে। কারণ সিপিএম জানতো সর্বভারতীয় স্তরে কোনো সংগঠন বা গ্রহণযোগ্যতা নেই সিপিএমের নেই; আর কংগ্রেস জানতো পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতিবাবুর ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনিক প্রশ্নাতীত দক্ষতা, প্রমোদ দাশগুপ্তের সাংগঠনিক ক্ষমতা ও দক্ষতা এবং পরবর্তী সময়ে জ্যোতিবাবুর দলে ও সরকারে একছত্র আধিপত্য রাজ্যের এত গভীরে প্রবিষ্ট যে সেখানে কংগ্রেসের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য কোনো যোগ্য, দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নেই। আর নেতৃত্ব নেই বলেই রাজ্যে কংগ্রেসের পুনরায় ক্ষমতা লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতার ক্ষীরটুকু তো খেতে হবে না-কি! সুতরাং কংগ্রেস ও সিপিএম উভয়ে ‘তুমি থাকো রাজ্যে আর আমি থাকি কেন্দ্র নিয়ে কিম্বা আমি থাকি রাজ্যে আর তুমি থাকো কেন্দ্র নিয়ে’ এই দার্শনিক মতবাদে বিশ্বাসী হয়েই ক্ষমতা ভোগ করে এসেছে। তাই এরা বহু পুরোনো দোসর। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সুখে দুঃখে এরা পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। আর এখান থেকেই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব আইডেন্ডন্টিটি প্রতিষ্ঠার লড়াই। সেই লড়াইয়ে তিনি সফল।

আজকের এই গণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগীতার নামে সিপিএমের কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধতার ছাড়পত্র আরও একবার দিনের আলো মত প্রমাণ করলো যে দুই দলই যমজ দল। এই দুই দলই, কংগ্রেস ও সিপিএম, যথাক্রমে নেতাজীর প্রতি চরম অবিচার করেছেন, প্রণব মুখার্জী ও জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতবর্ষের প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি নেতাজীর অন্তর্ধান প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের কাছে থাকা সমস্ত গোপন ফাইল জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন যা স্বাধীনতার ৭০বছরে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতৃত্ব করে দেখাতে সাহস পাননি। তিনিই একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি রাজনীতির ময়দানে বিরোধী শিবিরের হয়েও, বাংলার প্রতি অসহযোগিতার কারণে মতভেদ ও অভিমান থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রণব মুখার্জীর রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াননি। তিনিই একমাত্র রজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি পশ্চিমবঙ্গের গতবারের বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের পটভুমিতে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট রাজনীতিতে নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠনে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রশ্নে প্রণব মুখার্জীর নাম বাংলার রাজনীতির আকাশে উঠে এলে তিনি সাদরে গ্রহণ ও স্বীকার করেছিলেন। এই হ’ল কংগ্রেস ও সিপিএম, অন্যদিকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক চরিত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন তাই স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘদিনের সিউডো পলিটিক্সে পোক্ত দুই দোসর কংগ্রেস-সিপিএম বনাম পাঁচ বছরের রাজ্য পরিচালনায় প্রশাসনিক প্রধানের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
(লেখা ২৫শে মার্চ'২০১৬)

প্রবন্ধঃ ভোটের কথা অমৃত সমান!!!!!!!! পর্ব----১/৫ (নীতি)

আজ ভারতবর্ষের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে শুধু একটাই কথা মনে হয়, দেশের, রাজনৈতিক দলের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষদের আজ এই পরিণতি কেন? সমাজের মোড়লদের যদি এই মানসিক অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কতটা শোচনীয় ভাবলেই শিউরে উঠি। আয়নায় নিজের মুখ নিজে দেখতে ভয় হয়! তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, কে কাকে বোকা বানাচ্ছে? নেতারা জনগণকে নাকি জনগণ নেতাদের। আজ নেতাদের সামনে সর্বজনগ্রাহ্য কোনো মানুষ নেই যে এতবড় দেশটাকে নেতৃত্ব দেবার অধিকারী বা ক্ষমতাসম্পন্ন! আর তাই তাঁদের আশ্চর্য সিদ্ধান্ত “নেতা নয়, দেশে বিকল্প নীতি প্রয়োজন! নীতির ভিত্তিতে সরকার গড়তে হবে”! সত্য ভারত! কি বিচিত্র এই নেতাগণ!!!!!!! নেতাদের এই আশ্চর্য সিদ্ধান্ত দেখে মনে হয়, হয় নেতারা অদূরদর্শী, অজ্ঞানী বা অল্পজ্ঞানী ও বাস্তব বোধবুদ্ধি রহিত আর না-হয় জনগণকে বোকা বানাবার, বিপক্ষকে আটকাবার, জনগণের মন থেকে বিপক্ষের ঘোষিত নেতাকে, নেতার নামকে মুছে দেবার রণকৌশল!
(;লে;খা ২৫শে মার্চ'২০১৪)



প্রবন্ধঃ ভোটের কথা অমৃত সমান!!!!!!! পর্ব-----১/৪ (নীতি)

এখন নেতা সম্পর্কে বামপন্থী নেতৃবৃন্দের মনোভাব কি? তারা বলছেন, নেতা নয়, দেশে বিকল্প নীতি প্রয়োজন। নীতির ভিত্তিতে সরকার গড়তে হবে। এখন প্রশ্ন, নীতি নাহয় নীতিশাস্ত্রে অভিজ্ঞ, ভালোমন্দ ন্যায়-অন্যায় বা কর্ত্যব্যাকর্তব্য বিষয়ে বোধসম্পন্ন মানুষ তৈরী করল কিন্তু সেই নীতি কার্যে পরিণত করবে কে বা কারা? সভ্যতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় অন্তিম লগ্নে এসে তাহলে কি মানুষ আবার পিছনের দিকে হাঁটতে শুরু করল? এটাই কি তাহলে সৃষ্টির নিয়ম? শুরু থেকে শেষ, শেষ থেকে আবার শুরু? তাহলে কমিউনিস্টরা কি প্রমাণ করল ঈশ্বরবাদীদের দর্শন সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগ-এর অস্তিত্ব? মানুষ কি অজ্ঞানতার অন্ধকার ভেদ করে জ্ঞানের আলো জ্বালাতে জ্বালাতে চারিদিক আলোময় করে আবার অন্ধকারের বুকে ফিরে যাচ্ছে? অসভ্যতার বেড়াজাল ভেঙ্গে সভ্য হতে হতে চারিদিকে সভ্যতার মশাল জ্বালিয়ে আবার অসভ্যতার অন্ধকার গহ্বরে ঢুকে যাচ্ছে? প্রগতির পথে চলতে চলতে অতি প্রগতির নেশায় দুর্গতিকে ডেকে আনতে চাইছে? নেতার প্রয়োজন নেই? নীতির প্রয়োজন? এ-প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল The greatest phenomenon of the world Sri Sri Thakur Anukul Chandra-এর কথা। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় শ্রী শ্রী ঠাকুর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে বলেছিলেন, “দাশদা ঘোড়া গাড়ী টেনে নিয়ে চলে না-কি গাড়ী ঘোড়া টেনে নিয়ে চলে? দেশ মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় না-কি মানুষ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়?” ঠিক তেমনি নীতি নিজে নিজে নিজেকে কার্যে পরিণত ক’রে দেশকে গড়ে তুলবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে না-কি কাগজের বুকে লেখা ভালো ভালো কথা হয়ে পড়ে থাকবে না-কি একজন নেতা তার চরিত্র দিয়ে, জীবন দিয়ে নীতিগুলিকে কার্যে পরিণত করে তুলবে, বাস্তবায়িত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সপারিরিপার্শিক বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার দিকে? কোনটা? শ্রী শ্রী ঠাকুর আরও বললেন, “বই পড়ে বই হ’য়ে যেও না, বই-এর essence (সার)-কে মজ্জাগত করতে চেষ্টা কর। Pull the husk draw to the seed, (তুষটা ফেলে শস্যটা নিতে হয়)”। তাহলে নেতাদের দ্বারা রচিত নীতিগুলিকে যদি নেতারা নিজেরাই চরিত্রগত করে না তোলে, মজ্জাগত না করে তাহলে সেই নীতি দিয়ে কি হবে? বই পড়ে বই হ’য়ে যাবার মত নীতিকথার তোতাপাখি হ’য়ে লাভ কি? ছোটবেলা থেকে তো কত ভালো ভালো কথা বইয়ে পড়লাম, শুনলাম ‘সদা সত্য কথা বলিবে, অহিংসা পরম ধর্ম, চুরি করা মহাপাপ, সততাই জীবন, গুরুজনকে শ্রদ্ধা করিও ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন আমরা কি দেখতে পাই? উল্টোটা নয় কি? তাহলে নীতি দিয়ে হবেটা কি? যদি না নীতিগুলিকে কার্যে পরিণত করার জন্য নেতা না থাকে? রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা, বড় বড় হস্তিরা, রাজনীতিই যাদের ধ্যান-জ্ঞান, মন-প্রাণ, রাজনীতিই যাদের জীবন-মরণ তাঁরা কেউ স্বাধীনতার ৬৬বছর পরেও এতবড় দেশটার জন্য তাঁদের মধ্যে থেকে দেশের হাল ধরার জন্য, বিকল্প নীতিকে রুপায়িত করার জন্য, ভারতকে বিশ্বের দরবারে শক্তিশালী এক রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরার জন্য কোনও ব্যক্তিত্ব খুঁজে পেল না? এত সেই গাড়ি আছে ঘোড়া নেই, দেশ আছে মানুষ নেই। গাড়িটা কে টেনে নিয়ে যাবে? দেশটাকে বিশ্বের দরবারে কে তুলে ধরবে? আনাড়ি হাতে গাড়ীটা যদি পড়ে তাহলে কি হবে? আধুনিক টেকনোলজিতে যদি তার জ্ঞান না থাকে, আধুনিক টেকনোলজি তার করায়ত্ত না থাকে তাহলে তার হাতে আধুনিক টেকনোলজিতে তৈরী গাড়ি কতটা নিরাপদ? দেশে যদি নীতিজ্ঞান সমৃদ্ধ, নীতি চরিত্রায়ত্ত নেতার মত নেতা না থাকে তাহলে কি হবে নীতিজ্ঞ দিয়ে তৈরী নীতিমালা দিয়ে? রাজভোগ, রাজঅন্ন কি ভিখিরির জন্য শোভা দেয়? সে তো সমস্ত অন্ন ঘেঁটে একাকার করে দেবে। এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ঠাকুর বললেন, ‘অপাত্রে করিলে দান, দাতা গ্রহীতা দুই-ই ম্লান’! দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে বললেন, “দেখুন, দেশে মানুষের মত মানুষের অভাব আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, অথচ এত তাড়াতাড়ি স্বরাজ পেতে যে আপনারা চাচ্ছেন, তা’তেই বোঝা যায় আপনারা স্বরাজ চান না। যদি চাইতেন তবে আমার মনে হয়, আগে মানুষ তৈরী করতেন। তা’ না-করে আপনারা পরের দোষ দিচ্ছেন, আর, ইংরেজের দোষই শুধু দেখছেন। ওদের দোষ দেখতে দেখতে ওদের কি কি গুণে আমাদের ওদের অধীনে থাকতে হচ্ছে তা’ আর নজরেই পড়ছে না”।
(লেখা ২৫শে মার্চ' ২০১৪)

প্রবন্ধঃ ভোটের কথা অমৃত সমান!!!!!!!!! পর্ব-----১/৩ (নীতি)

এখন প্রশ্ন এই নীতি তৈরী করবে কারা? নীতিশাস্ত্রে অভিজ্ঞরাই তো নীতি তৈরী করবে। ভালমন্দ ন্যায়-অন্যায় বা কর্তব্যাকর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান বা বিষয় সম্বন্ধে বোধসম্পন্ন ব্যাক্তিরাই নীতি তৈরী করবে। স্বাধীনতার ৬৬বছর পর দেশের ষোলতম সাধারণ (লোকসভা) নির্বাচন নীতির ওপর দাঁড়িয়ে লড়াই করবে বামপন্থীরা! নীতি যারা তৈরি করবেন তারা কি বামফ্রন্টে নতুন? নতুন তাজা বুদ্ধিদীপ্ত প্রজ্ঞাবান রক্ত কি এই নীতি তৈরী করবে? না-কি সেই যারা ৩৪বছর সুযোগ পেয়েছিল রাজ্যটাকে শাসন করার, যারা একটা রাজ্যকে গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে গোটা দেশকে পথ দেখাবার দীর্ঘ সুযোগ পেয়েছিল তারা তৈরী করবে নীতি? কমিউনিজম যে ফলিত বিজ্ঞান (applied, practical science), এই দর্শন যে সত্যরুপে প্রমানিত, এই মতবাদ যে পরীক্ষা বা গবেষনার দ্বারা সিদ্ধ মতবাদ, একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বহমান উন্নত নিখুঁত এক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির স্রোত যে এই সমাজ কো বদল ডালো নীতি সেটা প্রমাণ করার জন্য দীর্ঘ সময়ের দরকার এবং সেই দীর্ঘ সময়ের সুযোগ পেয়েছিল যারা তারা আজ তৈরী করবে নীতি? তারা এতদিন সুযোগ পেয়েও এই দর্শনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলো না? এতদিন কি তাহলে তাদের সামনে কোন নীতি ছিল না? বামপন্থী দলগুলোর নেতৃবৃন্দ নিজেদের প্রজ্ঞা সম্পর্কে কি মেসেজ পাঠালো সাধারণ জনগনের কাছে?
(লেখা ২৫শে মার্চ'২০১৪)

Sunday, March 24, 2024

প্রবন্ধঃ ভোটের কথা অমৃত সমান!!!!!!!! পর্ব-----১/২ (নীতি)

এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৬৬ বছর।এতদিন দেশকে বিভিন্ন দল এককভাবে কিম্বা যৌথভাবে চালিত করেছে। তাহলে কি এতদিন কোন নীতি ছাড়াই দেশ পরিচালিত হয়েছে? নীতিহীন কোন শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশকে বাঁচানোর কোন নীতি কি তাদের ছিল না? বামফ্রন্টও কখনো কখনো কেন্দ্রীয় সরকারে অধিষ্ঠিত শাসকশ্রেণীকে সমর্থন জুগিয়েছে। তাহলে তখন কি কেন্দ্রীয় সরকারে অধিষ্ঠিত শাসকশ্রেণীর কোন নীতি ছিল না? নিজেদের কোন নীতি ছাড়াই কি তারা কোন নীতিহীন শক্তিকে সমর্থন করেছিল? পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ৩৪বছর শাসন ক্ষমতায় ছিল। তখন কি কোনও নীতি ছিল না? কোন নীতির ভিত্তি ছাড়াই কি ৩৪বছর শাসন ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট? রাজ্যকে কোনও নীতি ছাড়াই কি বামফ্রন্ট ৩৪বছর পরিচালনা করেছিল? শিল্পনীতি, কৃষিনীতি, আর্থিকনীতি, শিক্ষানীতি ইত্যাদি নীতি ছাড়াই তারা কি রাজ্য পরিচালনা করেছিল? ৩৪বছরের মত দীর্ঘ একটা সময় রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় অতিবাহিত করার সুযোগ পাওয়ার পর একটা সুষ্টু দেশ গঠনের নীতির রুপরেখা তৈরী করতে কি পারেননি? গত বিধানসভা নির্বাচনে কি তাদের রাজ্য পরিচালনার জন্য কোন নীতি ছিল না? এরকম অজস্র প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই একজন নাগরিক হিসাবে মনে জাগে। কারণ নীতি যদি থাকবেই তাহলে হঠাৎ ভারতের ষোড়শ সাধারণ (লোকসভা) নির্বাচনে বামফ্রন্টের নীতি এত মুখ্য হয়ে উঠল কেন? দেশগঠনে নীতির প্রয়োজনীয়তা যেন প্রথম আবিস্কার হ’ল? সবাই যেন সমস্বরে নীতি নীতি বলে উচ্চকিত হ’য়ে উঠলো! নীতি ছাড়া অর্থাৎ ন্যায়সঙ্গত বা সমাজের হিতকর বিধান ছাড়া যে দেশ গঠন হয় না এটা তো understood subject! ন্যায়-অন্যায় বা কর্তব্যাকর্তব্য বিচার ছাড়া যে সমাজব্যবস্থা অচল এটা তো সর্বজনস্বীকৃত! তাহলে হঠাৎ নীতি নীতি বলে শোরগোল পড়ে গেল কেন বামপন্থীদের মধ্যে?
(লেখা ২৫শে মার্চ'২০১৪)

প্রবন্ধঃ! নেতা, জনতা, ব্যক্তি, দল ও নীতি!!!!!!!!! পর্ব----১/১ (নীতি)।



ভোটের কথা অমৃত সমান!!!!!!!! নেতা, জনতা, ব্যক্তি, দল ও নীতি!!!!!!!!!

পর্ব---১/১ (নীতি)
"নেতা নয়, দেশে বিকল্প নীতি প্রয়োজন। নীতির ভিত্তিতে সরকার গড়তে হবে"।
নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দল ব্যস্ত হয়ে পড়ল নির্বাচন যুদ্ধ নামক লড়াইয়ে নিজের নিজের শক্তি প্রদর্শনের জন্য। বিজেপি ও কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী পদে তাদের নেতা নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখে জোর কদমে লড়াইয়ের ময়দানে নেবে পড়েছে। অন্যান্য কয়েকটি দল নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদে বিভিন্ন নাম ভাসিয়ে রেখেছে রাজনীতির আকাশে। বামফ্রন্ট ও তথাকথিত থার্ডফ্রন্ট ঘোষণা করেছে তাদের কাছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশকে বাঁচাতে নেতার চেয়ে নীতির গুরুত্ব বেশী। তাই তারা নেতার ভিত্তিতে সরকার গড়ার লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়। এই মুহুর্তে দেশ নীতির অভাবে ভুগছে। বর্তমান শাসকশ্রেণীর নীতিহীনতায় দেশ ও দেশের মানুষ সর্বনাশের অতল গহ্বরে ডুবে যাচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে এই মুহূর্তে নেতা নয়, জবরদস্ত বিকল্প নীতির প্রয়োজন। তাই নির্বাচনী ময়দানে বামফ্রন্ট নেতা, প্রার্থীরা কোমর কষে নেবে পড়েছে জনগণের উদ্দেশ্যে তাদের বক্তব্য পৌঁছে দিতে যে, নেতা নয়, দেশে বিকল্প নীতি প্রয়োজন। নীতির ভিত্তিতে সরকার গড়তে হবে।
(লেখা ২৫শে মার্চ'২০১৪)


প্রবন্ধঃ উন্নত দেশের উন্নত মানুষ!

হে উন্নত দেশের উন্নত মানুষ! ভয়াবহ মারণাস্ত্র তৈরিতে সিদ্ধহস্ত তুমি; কামান, মিসাইল, পারমাণবিক বোমা ইত্যাদি তৈরিতে পারদর্শী তুমি; মঙ্গল, বৃহস্পতি ছাড়িয়ে শনিতে পৌঁছে যাবার স্বপ্ন দেখো তুমি অথচ আজ পর্যন্ত ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদির মত আবার একটা নতুন মারণ ব্যাধি করোনার ঔষুধ আবিষ্কারে ব্যর্থ তুমি! আবার বলো তুমি ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি!? যদি ঈশ্বর কোনও ভুল ক'রে থাকে তাহ'লো তাঁর নিজের অনুরূপ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ সৃষ্টি ক'রে! কোথায় সেই প্রাচীন কালের চরক, সুশ্রুতরা বর্তমানের চিকিৎসা বিজ্ঞানে!? কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছো মারণাস্ত্র আবিষ্কারে সেখানে আজ এত বিচলিত কেন তোমরা করোনার আক্রমণে!? এটাও তো তোমাদের হাতে তৈরি মারণাস্ত্রের মত সেই একই মারণাস্ত্র যা প্রকৃতির রোষে সৃষ্টি! তাহ'লে এত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত কেন!? এর থেকেও বীভৎস ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য যেদিন গোটা পৃথিবীটাই হ'য়ে যাবে এক মহাশ্মশান!!!!!! সেদিন সমাগত!
(লেখা ২৪শে' ২০২০)

প্রবন্ধঃ সৎসঙ্গীদের প্রতি!

"মৃত্যু আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না যদি মন তাঁতে ন্যস্ত থাকে। আমি কিন্তু কিছুই চাই না-রক্ষা চাই না, হতাশা কি তা জানি না, আনন্দও জানি না। আমি শুধু তোমাকে চাই তাই ছুটে চলেছি। এই যদি মন হয়, সব অবস্থায় তিনি আমাদের রক্ষা করবেন।"---শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

নাম, নাম আর নাম তাঁর সাথে যুক্ত থাকার এক ও একমাত্র উপায় ও পথ! তবেই শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কথা ফলবেই ফলবে!

বর্তমান বিশ্বে যে ভয়ঙ্কর মারণ ব্যাধি মানুষকে ভয়ঙ্কর ভাবে আক্রমণ করেছে সেই আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বর্তমান বিশ্বের কোনও পন্ডিতের জানা নেই। অহংকারী সবজান্তা জ্ঞানী মানুষের উপর প্রকৃতির এ ভয়ঙ্কর প্রত্যঘাত! ১০০ বছর পর পর এমন আঘাত ফিরে আসে বিগত দিনের ইতিহাস তাই বলছে। আর তারপরেই যখন প্রকৃতির ধ্বংসলীলা থেমে যায় তখন এই অহংকারী প্রজন্মের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূর্বসূরীদের এই ভুল, মহাভুল আর ঘেতমি মহা ঘেতমি ভুলে যায় আর আবার উলঙ্গ অহংকারের রথে চড়ে বসে! তখন তারা ঘুণাক্ষরে বুঝতে বা ধরতে পারে না পরবর্তী আরো বড় বিপদের কথা। এত উন্নত পৃথিবীর আসল রূপ নগ্ন ও কলঙ্কিত! কোথায় আজ বিশ্বের তাবড় তাবড় অহংকারী রাষ্ট্রনেতা, সমাজ সংস্কারক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী এককথায় সমস্ত এলিট সম্প্রদায়!? কেন আজ ভীত, সন্ত্রস্ত!? কোথায় বিশ্ব জুড়ে সমস্ত ইজমের মুখ্য কারিগরI? জীবনবাদ যে আজ দরজায় কড়া নাড়ছে! শুনতে পাচ্ছো জীবনবাদের আর্তনাদ! কোথায় গেল তোমার ....... জ্ঞান-বিজ্ঞান!? কোথায় তোমার .......মতবাদ!? আছে বাপের বেটা কেউ অভয় হস্ত হাতে এসে দাঁড়ায় মনুষ্যত্বের ভিত নড়ে যাওয়া মানবজাতির সামনে!? ধর্মাত্মারা কোথায় লুকিয়েছ মুখ!? ঈশ্বরের সিংহাসনে বসে চালিয়েছে রাজপাট যে ধর্মগুরুরা কোথায় তাঁরা আত্মগোপন ক'রে আছে আজকের এই কঠিন সময়ে!? জীবাত্মা তুমি মহাত্মা হয়েই বসে গেছো পরমাত্মার দরবারে পরমাত্মা সেজে!? তা এবেলা এসো, দূরে কেন আছো সরে, ব'লে যাও মৃত্যুপথযাত্রী মুমূর্ষু মানুষের কানের কাছে 'ভয় নাই, নাই ভয়, আমি আছি'!!!!! বালখিল্য যতসব ঈশ্বরের অহংকারী সন্তান!?

তাই বলি বন্ধু! কেউ নাই, নাই কেউ তোমার চারপাশে এই বিপদের দিনে বাড়াতে হাত! ঈশ্বর দয়া করবেন, করবেন দয়া, যতদিন না অহংকার ভেঙে চুরমার হ'য়ে তাঁর পদতলে এসে আত্মসমর্পণ না করছে অহংকারী মানুষ! আর তার নমুনা শুরু হ'য়ে দেশে দেশে রাষ্ট্রনেতাদের আচরণে! তারপর হয়তো তাঁর দয়ায় বিপদ যাবে কেটে, আবিষ্কার হবে ওষুধ হঠাৎ এক সুন্দর সকালে! ততদিনে ধ্বংশলীলায় শেষ হ'য়ে যাবে বহু বহু অসহায় নিরপরাধ মানুষ! প্রশ্ন, কে বা কারা এর জন্য দায়ী!? আর এই বিপদ, এই মারণ যজ্ঞ তো কিছুই নয় আগামী ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলার কাছে! যার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রী অনুকূলচন্দ্র! গঙ্গা দিয়ে সেদিন জল বইবে না, বইবে জলের পরিবর্তে রক্তের স্রোত! মাটির স্তুপ, পাহাড় নয় মরদেহের স্তুপ আর পাহাড় নজরে পড়বে চতুর্দিকে! এক মুঠো সোনা দিয়ে বাজারে এক মুঠো চাল পাবে না! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে! আগামী যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি আসছে তার কাছে এই ক্ষয় এই ক্ষতি কিছুই নয়! সামান্য মাত্র! --------কোনও বাদ, কোনও নেতা সেদিন বাঁচাতে পারবে না মানুষকে, রক্ষা করতে পারবে না এই সৃষ্টিকে! মানুষ যে কত হিংস্র, ভয়ঙ্কর জীব বা জন্তু হ'তে পারে তা তার শারীরিক ও মানসিক খাদ্যখানা, আচার-আচরণের দিকে নজর দিলেই বুঝতে পারা যায়! আমরা রাক্ষস-খোক্কসের গল্প পড়েছি আর আজ তার নমুনা দেখতে পারছি বিশ্ব জুড়ে! অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি এদের খাদ্যখানার দিকে আর ভাবি এরা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট উন্নত জীব, মানুষ!? এরাই আবার মানুষকে দেবে বাঁচা-বাড়ার সন্ধান! আর আবাল জনতা শুনবে এদের কথা!

যাই হ'ক এই ভয়ঙ্কর সময়ে ঈশ্বর যে একেবারে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকেন না তার নমুনা আমরা একটু ধ্যানস্থ হ'লেই দেখতে পায়! নামধ্যান পরায়ণ মানুষ তার সাড়া পায়! তিনি সাড়া দেন! সেই সাড়া ধরবার জন্য শারীরমানস সঙ্গতি চায়! শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সব সময় আউড়াতেন: আজও লীলা করে গৌরচাঁদ রায়, কোনও কোনও ভাগ্যবান দেখিবারে পায়!" সেই ইঙ্গিত আজ এই খতরনাক সময়ে আমাদের সামনে ধরা দিয়েছে! ধরা দিয়েছে ঠাকুরেরই বলা "ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম, প্রতীক গুরু বংশধর, রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর" বাণীকে ভিত্তি ক'রে। একেবারে প্রথমে বাবাইদাদার যে কথা লেখা হয়েছে তার মধ্যেই আছে বর্তমান ভয়ঙ্কর ভয়ের পরিবেশে বাঁচার ও শান্তির দিকনির্দেশনা! শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে রেত শরীরে সুপ্ত থেকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় বলে দিয়েছেন! আসুন আমরা বাবাইদাদার মধ্যে দিয়ে ঠাকুরের বলে দেওয়া কথাকে অনুসরণ ক'রে ঠাকুরের শ্রীচরণে, তাঁর শ্রীচলনে মন ন্যস্ত করি! আসুন আমরাও বাবাইদাদার মুখনিঃসৃত ঠাকুরের বলা মত কিছুই চাই না, রক্ষা চাই না, আমরাও তাঁর বলা মত হতাশা কি জানি না, আনন্দও কি জানি না! আমরাও বাবাইদাদার মুখনিঃসৃত শ্রীশ্রীঠাকুরের কথামত আমি শুধু ঠাকুর তোমাকেই চাই আর তাই ছুটে চলেছি এই কথাকে অকপট হৃদয়ে জীবনের ব্রত ক'রে তাঁর প্রতিষ্ঠায় জীবন সঁপে দিয়ে এই করোনা নামক মৃত্যুভয় থেকে নিশ্চিত নিস্তার লাভ করি। আর এই যদি আমাদের মানসিকতা হয় তাহলে ঠাকুর বাবাইদাদার মুখনিঃসৃত কথার মধ্যে পরিষ্কার ক'রে স্পষ্ট ভাষায় ব'লে দিয়েছেন যে তিনি সব অবস্থায় আমাদের রক্ষা করবেন! তাই বলি, মাভৈ! চায়না থেকে উদ্ভূত কোনও করোনা বা হায়না আমাদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। জয়গুরু।
(লেখা ২৪শে মার্চ'২০২০)

কয়েকটি প্রশ্নঃ খেলা হবে নাকি খিল্লি হবে স্লোগান!?

২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে 'খেলা হবে' স্লোগান নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নঃ
১) 'খেলা হবে' স্লোগানের অর্থ কি?
২) নির্বাচন কি খেলা নাকি?
৩) এক কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যে তৃণমূল কংগ্রেস দল মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপোষহীন লড়াইকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের
রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করেছিল তা কি খেলা ছিল?
৪) সিপিএমের ৩৪বছর দীর্ঘদিনের ক্ষমতার অচলায়তনকে সরিয়ে দিয়ে
দমবন্ধ করা পরিবেশ থেকে বাংলার আম জনগণকে মুক্তি দিয়ে
রাজ্যের শাসনভার হাতে নেওয়ার লড়াই কি খেলা ছিল!?
৫) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমরণ অনশন কি নিছক খেলা ছিল!?
৬) মমতা বন্দ্যোপাধ্যের উপর আক্রমণ, হামলা কি খেলা ছিল!?
৭) ১৯৯০ সালের ১৬ অগাস্ট হাজরা মোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মাথায় লালু আলম লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিলেন সেই মৃত্যু আঘাত
কি খেলা ছিল!?
৮) সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের তীব্র লড়াই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যের উপর আক্রমণ
কি খেলা ছিল!?
৯) মৃত্যুকে সামনে রেখে, মৃত্যুকে বাজি রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
রাজনৈতিক যে উত্থান তা কি খেলা ছিল!?
১০) যে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে রাজ্যের জনগণের ভবিষ্যৎ ভাগ্য নির্ধারণ
হবে তা খেলা নাকি!?
১১) এই যে নির্বাচনকে কেন্দ্র ক'রে সব দলের কর্মীদের ক্ষয় ক্ষতি মৃত্যু
সবই কি খেলা!?
১২) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মত্যাগ, লড়াই আজ খেলা!?
১৩) "খেলা হবে, খেলা হবে"-এর স্রষ্টা ২৫ বছরের যুবক দেবাংশু আজ
তৃণমূলের পলিসি মেকার!?
১৪) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার জন্য জীবন উৎসর্গ লড়াই আজ
'খেলা' আখ্যা পেল!?
১৫) "খেলা হবে, খেলা হবে" ক'রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হাতে নিয়ে
লড়াই-এর ইতিহাসকে খিল্লিতে পরিণত করলো না তো রাজনীতিতে
নবাগত দেবাংশু!?
১৬) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমানুষিক পরিশ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যাবসায়,
আনুগত্য, ক্লেশসুখপ্রিয়তা, ভালোবাসা ইত্যাদি সবই কি শেষমেশ
খেলা আখ্যা পেল!?!?!?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকপট ভক্তরা কি বলেন?
(লেখা ২৪শে মার্চ'২০২১)

প্রবন্ধঃ দেশের জনসংখ্যা ১২০ কোটি!?

দেবাংশু বললেন, দেশের ১২০ কোটি (?) জনগণকে মুর্গী বানিয়েছে বিজেপি দল! তাও আবার নাকি একটানা সেই ২০১৪ সাল থেকে!!! দেশের ১২০ কোটি (?) জনগণকে বোকা বানাতে পারে যে বিজেপি দল টানা ৭ বছর ধরে সেই দল তো অসীম ক্ষমতাশালী? তাই না দেবাংশু (বাবু বলতে পারলাম না কারণ আপনি বাবু সম্বোধনকে কটাক্ষ করেছেন)? বিজেপির এত ক্ষমতা যে দেশের ১২০ কোটি (?) জনগণকে মুর্গা বানাবার ক্ষমতা রাখে!? দেশে আপনার মত কেউ নেই যে বিজেপির মুর্গা বানাবার যন্ত্রকে থামায়, অচল ক'রে দিতে পারে!? একজন যুবকের এই বক্তব্য দেশের আত্মসম্মান বোধ নিয়ে বেঁচে থাকা ও বেঁচে থাকতে চাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে কি অসম্মান নয়!? হাবেভাবে চলাফেরায় একজন নব্য জ্ঞানী বিজ্ঞ যুবকের বক্তব্য রাখবার সময় দিশাহীন আলটপকা মন্তব্য তার কি ভবিষ্যৎ প্রমাণ করে? আর কিই বা আশা করে তার কাছ থেকে ভবিষ্যৎ বাংলা!? আর দেশের সেই ১২০ কোটির (?) মধ্যে আছে সমস্ত বিরোধী দল, দলের নেতানেত্রী; তাই তো? দেবাংশুবাবুও তো সেই ১২০কোটির (?) একজন মুরগি; তাই না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো তাহ'লে মুরগি বনেছেন বিজেপির কাছে; তাই না!? তাহ'লে যে নিজে মুরগি বনে সে অন্যদের মোরগ বা মুর্গী বনবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে? যে নিজে বোকা বনে সে রাজ্যের অন্য বোকাদের তার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে চালাক ক'রে তুলবে কি ক'রে? একটা অন্ধ কি আর একটা অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? আগে নিজে তো বাঁচুক বিজেপির হাত থেকে, নিজে তো আলো দেখুক তারপর না হয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে অন্যদের চোখ খোলার বা আলো দেখাবার ও বাঁচাবার দায়িত্ব নেবেন। কথায় আছে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা।

দেবাংশুবাবু তো ভবিষ্যৎ গণনার অঙ্কে টিভির জ্যোতিষ সম্রাটদের ছাড়িয়ে গিয়ে সম্রাটদের সম্রাট হ'য়ে গেলেন? শুভেন্দুর নিখুঁত ভবিষ্যৎ গণনা ক'রে দিলেন! পঞ্চাশ বছর পর নিজের কি হবে সে কথাও দেবাংশু নিজেই ব'লে দিলেন! সারাক্ষণ শুভেন্দু! শুভেন্দু!! শুভেন্দু!!! সমস্ত বক্তব্যে শুভেন্দু দেবাংশুর শরীর মন হৃদয় জুড়ে ছেয়ে গেছে!!!! দেবাংশু নিজে প্রমাণ দিলেন শুভেন্দু সমস্ত প্রচার নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন। এত ক্ষমতা শুভেন্দুর!? শুভেন্দু বাবুর উত্থান পতন সম্মান অসম্মান লাভ লোকসান নিয়ে বক্তব্য দিয়ে গেলেন সারাক্ষণ দেবাংশু কিন্তু একজন বর্তমান প্রজন্মের তরতাজা যুবক হ'য়ে রাজ্যের উন্নয়ন, রাজ্যের ভবিষ্যৎ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, রাজ্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্পর্কে কোনও বক্তব্যই রাখলেন না? এই আমাদের বর্তমান রাজনীতিবিদদের উত্তরসূরি!? আরে বাবা দেবাংশু শুভেন্দুকে নিয়ে রাজ্যের জনগণ এত ভাবেনি কখনো কোনদিন আর শুভেন্দু এত ভাবার মত ইম্পর্টেন্ট কি!? এত সময় খরচ শুভেন্দুকে নিয়ে!? শুভেন্দু কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও বড় জনমোহিনী নেতা!? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর তুলনা টেনে আপনিই বাধ্য করলেন শুভেন্দুকে নিয়ে ভাবতে পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে! আপনি তো একাই শুভেন্দুর টি আর পি বাড়িয়ে দিলেন? আপনি সত্যিই কি তৃণমূল পার্টির তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঙ্গল করলেন!? আপনার একটানা শুভেন্দু শুভেন্দু বলার জন্যে আবার শুভেন্দুবাবু (থুড়ি বাবু তো আর বলা যাবে না বাবু নিয়ে আপনার বক্তব্যে বাবুর মানেটাই আপনি পালটে দিয়েছেন) বিপুল ভোটে জিতে যাবেন না তো!? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আপনার কাছে শিশু হ'য়ে গেলেন বুদ্ধিতে, জ্ঞানে, অভিজ্ঞতায়, রাজনীতির দূরদৃষ্টিতে, বক্তৃতায়!? আপনি তো এলেন দেখলেন জয় করলেন!!!!! সত্যি সত্যিই জয় করলেন তো!? বাংলার একজন নতুন তরতাজা যুবক হ'য়ে আপনার এই রাজ্যের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা বিহীন অসাড় বক্তব্যে যদি সত্যি সত্যিই রাজ্যের নির্বাচনে তৃণমূল লাভবান হয় তাহ'লে ধ'রে নিতে হবে বাংলা ও বাংলার ভবিষ্যৎ যুবসমাজ তাই-ই চায়!!!!

২০১৮ সালের মুকুল রায়ের ঝাঁঝের কথা বললেন দেবাংশু; বললেন বর্তমানে মুকুল জিন্দা লাশ! দেবাংশুর ভবিষ্যতে এমন ঝাঁঝ থাকবে তো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে? দেবাংশুর এই ঘর থেকে ঐ ঘরে খেতে যেতে বিরক্ত লাগে? এতটাই লাটসাহেবিপনা!? মা কি এমনি এমনি দেবাংশুকে ডাকছেন, বাবা এইঘরে খেয়ে যা! ঐ ঘরে আবার খাবার নিয়ে যাবো!? খাবার টানাটানি করবো? আবার ঐ ঘর মুছতে হবে? এরকম নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে তাই না ডাকছে!? আর মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ঐ ঘরে গিয়ে খেতে বিরক্ত লাগে যে সন্তানের সে মায়ের কষ্ট বা মায়ের ডাকের কারণ বুঝবে কি!?? সমাজ, দেশ তো দূরের কথা!!!!!!!

দেবাংশু! আপনি আপনার বক্তব্যের শুরুতে এও বলেছেন যে, ঠাকুমা, দিদিমা, মায়েরা নাকি বলেন, মা বাদে আর বাকী সবার সাথে বেঈমানি, নেমকহারামি করলে ভগবান নাকি ক্ষমা ক'রে দেন! কিন্তু মায়ের সাথে বেঈমানি, নেমকহারামি করলে নাকি ভগবান ক্ষমা করেন না! তা দেবাংশু! বাংলার কোন ঠাকুমা, দিদিমা, মায়েরা এ কথা আপনাকে বলেছেন!? বাংলার ঠাকুমা, দিদিমা, মায়েদের আপনি এমন অজ্ঞ ও মূর্খ ভাবেন!? ঠাকুমা, দিদিমা, মায়েরা কি কারও সঙ্গে বেঈমানি করার, নেমকহারামি করার শিক্ষা বা প্রশ্রয় দেন!? নাকি ভগবান প্রশ্রয় দেন, ক্ষমা করেন!? বাংলার ঠাকুমা, দিদিমা, মায়েদের সম্পর্কে এত জ্ঞান!? ভগবান কাকে কখন কোন কাজে ক্ষমা করেন আর না করেন তাও জানেন!? ভগবানের গতিবিধিরও আপনি খবর রাখেন!? আর ভগবান কেন রাজনৈতিক শাস্তি দিতে যাবেন শুভেন্দুবাবুকে!? জনগণের কি হ'লো!? জনগণ শাস্তি দেবেন না শুভেন্দুবাবুকে!? জনগণের উপর আর আস্থা নেই!? শেষমেষ সেই ভগবান!? অবশেষে শুভেন্দুবাবুকে আটকাতে ভগবানের দ্বারস্থ হ'তে হ'লো!?? জনগণকে এই অপমান না করলেই পারতেন! কারণ ভগবান যদি সত্যি সত্যিই শাস্তি দিতে পারতেন তাহ'লে দেশের স্বাধীনতার সময় থেকে আজ পর্যন্ত ৭৪ বছর ধ'রে নেতাদের (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, আর ব্যতিক্রম ব্যতিক্রম আর সেই ব্যতিক্রম-রাই দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বেঁচে থাকার আশা ও প্রেরণা ঐ আশায় মরে চাষার মতন) যে বেঈমানি, নেমকহারামি, গদ্দারি দেখে এসেছে দেশের জনগণ তাতে ভগবানের শাস্তির ধার যেমন নেতানেত্রীরা ধারে না ঠিক তেমনি জনগণও ধারে না। কারণ জনগণ দেখেছে যে যতবড় বেঈমান, নেমকহারাম, গদ্দার সে ততবড় ক্ষমতার অধিকারী এবং সিংহাসনের দাবিদার ও সিংহাসনে বসেছে। আপনি দেবাংশু! এসব জানেন না!? নাকি দেখেননি চোখ মেলে কোনদিন!? ভগবানকে যদি শাস্তি দিতে হয় তাহ'লে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হ'য়ে যাবে ভগবানের!!!!!! আপনিও না পড়ে যান তাতে; এখন না হ'লেও শেষকালে! আপনার এই অল্প বয়সের ঔদ্ধত্যপূর্ণ অহংকারী কথাবার্তা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষতি না ক'রে দেয়। তাই সাধু সাবধানের মত বলি দেবাংশু সাবধান! জিভ বড় খতরনাক! ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যাবার মত জিভ থেকে ফস্কে কথা একবার বেড়িয়ে গেলে তা কিন্তু আর ফেরানো যায় না!
(লেখা ২৪শে মার্চ'২০২১)

কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন: ২০) 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার।

এইসমস্ত বারো হাত কাকুরের তেরো হাত বীচির মত বেঢপ প্রশ্নকর্তারা কেন শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীঅশোকদাদা ইত্যাদির নামের আগে শ্রীশ্রী ব্যবহার করা হয় তাই নিয়ে এরা জোঁকের মত পিছনে পড়ে গেল! মনে হচ্ছিলো যেন প্রশ্ন ক'রে ক'রে শরীরের সব রক্ত টেনে নেবে! কথাবার্তার মধ্যে কেমন একটা পাগলাটে ভাব! কথার মাঝে মাঝে তাল কেটে প্রসঙ্গের বাইরে চলে যায়, প্রশ্নের সঙ্গে উত্তরের কোনও মিল নেই, জিততেই হবে এমন একটা গোঁয়ার গোবিন্দ ভাব! মূল কেন্দ্রের সব ভুল! মূল কেন্দ্রের সব ঠাকুর নির্দেশিত পথের বিরোধী পদক্ষেপ! এদের অজ্ঞানতার ঔদ্ধত্ব এতদূর পৌঁছেছে যে তারা শ্রীশ্রীবড়দার তীব্র সমালোচনা করে!? শ্রীশ্রীবিবেকদাদা ও শ্রীশ্রীকাজলদাদাকে শ্রীশ্রীবড়দার উপরে স্থান দিয়ে প্রচার করে যে শ্রীশ্রীবড়দা শ্রীশ্রীঠাকুরের স্থলাভিষিক্ত হ'য়ে ব'সে পরিবার-পরিজনসহ শ্রীশ্রীঠাকুর বিরোধী, শ্রীশ্রীঠাকুরের নীতি বিরোধী কাজ ক'রে চলেছেন এবং ঠাকুরকে বিকৃত করছেন আর শ্রীশ্রীবিবেকদাদা ও শ্রীশ্রীকাজলদাদা ও তাঁদের উত্তরসূরীরা অবিকৃতভাবে ঠাকুরকে মাথায় নিয়ে প্রচার ক'রে চলেছেন!!!!!

প্রশ্নকর্তারা অবিকৃতভাবে ঠাকুরকে প্রচার করছেন, ঠাকুরের আলোচনাকে মুখ্য রেখে এগিয়ে চলেছেন! এই অবিকৃতভাবে এগিয়ে চলার মধ্যে দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা, ইষ্টভৃতি মন্ত্র, আচার্য সম্বোধন ইত্যাদি কয়েকটা বস্তাপচা অদ্ভুত বিষয়ের মত একটা অদ্ভুত 'বিষয়' হ'লো ঠাকুর ছাড়া আর কারও নামের আগে দুটো 'শ্রী' ব্যবহার করা যাবে না। তারা ঠাকুর ছাড়া আর কারও নামের আগে দুটো 'শ্রী' ব্যবহার করেন না। দুটো 'শ্রীশ্রী' শুধু ঠাকুরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ও বৈধ বাকী সব অপ্রযোজ্য ও অবৈধ! এরকম আরো অনেক ভিত্তিহীন প্রশ্নের ঝড় তুলে ঠাকুরের ফটো মাথায় নিয়ে ঠাকুরের মিশনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে এইসমস্ত গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল-এর দল আর গায়ে পড়ে অকারণ অশ্লীল বাক্য প্রয়োগে পায়ে পা লাগিয়ে ফেসবুকে মুখ ঢেকে ঝগড়া ক'রে চলেছে! সেই যে ঠাকুরের সামনে দিয়ে মাথায় ঠাকুরের ফটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলো ভন্ড কপট শক্ত ভক্তের দল আজ থেকে ৫০বছর আগে সেই মাথায় ফটো নিয়ে চলার ট্রাডিশন আজও সমানে চলেছে! সেই যে ঠাকুর শরীরী অবস্থায় থাকাকালীন ঠাকুরের শেষ বয়সে ঠাকুরকে কাঁদিয়ে চোখের জলে ভাসিয়ে ঠাকুরের সামনে দিয়ে ঠাকুরের ফটো মাথায় নিয়ে বিরাট ভক্ত সেজে 'বন্দে পুরুষোত্তমম' ধ্বনি তুলে বেরিয়ে গিয়েছিল ঠাকুরের সৃষ্ট সংগঠন 'সৎসঙ্গ'-কে ভেঙে নতুন দল তৈরি করবে বলে অর্থ ও ক্ষমতার লোভে সেই মাথায় ফটো নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার তিক্ত স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও অম্লান রাখতে মাথায় ফটো নিয়ে শোভাযাত্রার অতি ভক্তির ভণ্ডামির ও পাপের ট্র্যাডিশন আজও ব'য়ে চলেছে তারা, তাদের উত্তরসূরীরা শোভাযাত্রায় আর পায়ের তলার মাটি যে ধীরে ধীরে সরতে সরতে ভবিষ্যৎ গভীর অন্ধকার খাদের সৃষ্টি হ'য়ে চলেছে সেদিকে হুঁশ নেই! এই মাথায় ফটো নিয়ে শোভাযাত্রার ভন্ডামির পাপের স্মৃতি এরা বহন ক'রে চলেছে দয়ালের অমোঘ ভয়াল অঙ্গুলি হেলনে!!!!!! একেই বলে কর্মফল!!!!!! এটাই বোধহয় বিধাতার নিখুঁত বিচার!

যাই হা'ক, আমি তাদের বললাম, আপনারা নামের আগে 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার নিয়ে যে অযৌক্তিক যুক্তি তর্কের ঝড় তুলে বাজার গরম করতে চেষ্টা করছেন সাধারণ ভক্তদের মাঝে ৫০ বছর যাবৎ সেই ঝড়ে আপনাদের নিজের ঘরই ভেঙে চুরমার!!!!! ভালো ক'রে নিজেদের ঘরটার চারপাশে চোখ মেলে দেখুন কি এক ভয়ংকর বিপদ ঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসছে, দিচ্ছে অশনি সংকেত!!! ভন্ড, কপট সাধু সাবধান!

'শ্রীশ্রী' ব্যবহার সম্পর্কে আমার বোধ যতটুকু ততটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করলাম নিম্নে।
জীবনের পরতে পরতে যাদের চরিত্রে অসাধারণ ভগবদদত্ত গুণ প্রকাশিত হয়, যাদের জীবন ঠাকুরের শ্রীচরণে সমর্পিত, যাদের জীবনে ঠাকুর ছাড়া আর কিছু নেই, যাদের জীবনটাই যাজন, যাদের জীবন ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক, যাদের শত বাধা-বিপত্তি, আঘাত, নিন্দা, কুৎসা, গালাগালি, কুৎসিত সমালোচনা, বিত্ত-বৈভব, প্রশংসা, প্রচার ইত্যাদি কোনও কিছুই ইষ্টপ্রতিষ্ঠা এবং ইষ্টস্বার্থরক্ষা ও স্বার্থপ্রতিষ্ঠায়, তাঁর সেবায়, তাঁর আজ্ঞা পালনে থামাতে পারে না, লক্ষ্যচ্যুত করতে পারে না, লক্ষ্য বস্তুতে না পৌঁছনো পর্যন্ত যারা বিপরীত অন্য কিছু দেখতে পায় না, শুনতে পায় না, ঠাকুরের অসীম-অনন্ত জ্ঞান যাদের জীবনে, যাদের চরিত্রে সমাহিত সেই সমস্ত ঠাকুর অন্ত প্রাণ, ঠাকুরের কুকুররূপী সেবাপ্রাণ মানুষের ক্ষেত্রে নামের আগে দুটো 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বিশেষ বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বলাগুলি একবার তলিয়ে দেখা যেতে পারে!
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "কারও নামের আগে একাধিক 'শ্রী' দেওয়ার উদ্দেশ্য হ'লো------ওর দ্বারা তাঁর অসামান্যতা ও বিশেষ বিভূতি সূচিত করা। 'শ্রী' মানে সেবা। ভগ এসেছে ভজ-ধাতু থেকে, ভজ ধাতুর একটা প্রধান অর্থ হ'লো সেবা, তাই ভগবান মানে বলা যায় সেবাবান। সত্তাসম্বর্দ্ধনী সেবা অর্থাৎ পরিপালন, পরিপোষণ ও পরিরক্ষণই যাঁর জীবন,-বৈশিষ্ট্য, তিনিই ভগবান। যিনি এই সেবা-বৈশিষ্ট্য-সম্পন্ন, তিনিই হ'লেন মানুষের মুখ্য সেবনীয়, অর্ঘ্যণীয় মানুষ-ভগবান। তাই তাঁর নামের গোড়ায় একাধিক 'শ্রী' যোগ ক'রে জানিয়ে দেওয়া হয় যে তিনি আমাদের সেব্যপরম।"

তাই জন্য বলে ভক্ত-ভগবান সমার্থক! জন্মজন্মান্তরের সাধনার পরিক্রমা শেষে জীবাত্মা মহাত্মায় উত্তীর্ণ হয় তারপর যখন অদম্য অচ্যূত অস্খলিত অনুরাগ উদ্দীপনা উৎসাহ ভক্তি ভালোবাসা প্রেম একানুরক্তি নিয়ে পরোমাত্মায় বিলীন হ'য়ে যায় তখন ভক্ত ভগবান এক হ'য়ে যায়! তখন সেই ভক্তের মধ্যে অসামান্যতা ও বিশেষ বিভূতি সূচিত হয়। ভক্ত-ভগবান আর টাকার এপিঠ-ওপিঠ সমার্থক হ'য়ে পড়ে! এই প্রসঙ্গে একটা সুন্দর গল্প আছে।

পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্র যখন তাঁর পত্নী সীতা মাতা কে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন তখন তিনি তাঁর সঙ্গে আসা সাথী যারা সীতামা-কে উদ্ধারের জন্য দীর্ঘ কঠিন সময়ে পাশে থেকে সাহায্য করেছিলেন সেই পরম বন্ধু, পরম সাথীদের একে একে দেশবাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। এই পরিচয় চলাকালীন যখন হনুমানকে পরিচয় করাতে যান তখন আবেগ ভালোবাসা কৃতজ্ঞতায় প্রভু রামচন্দ্রের কথা বন্ধ হ'য়ে যায়, গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছিল না, শুধু দু'চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিল অশ্রুধারা! পরম মমতায় হনুমানের দিকে নির্বাক নিশ্চল তাকিয়ে কেঁদে চলেছিলেন রামচন্দ্র! সবাই অবাক হ'য়ে দেখছিল সেই দৃশ্য! অনেকক্ষন পর অনেক কষ্টে অশ্রু সজল চোখে কান্না ভেজা গলায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, এ আমার পরম ভক্ত হনুমান! হনুমানকে যে ভালোবাসে না সে আমাকে ভালোবাসে না! ভক্ত-ভগবানের অপূর্ব এক মিলনান্তক দৃশ্য! সেদিন উপস্থিত সবার চোখে ছিল জল! ঠিক একইরকমভাবে ত্রেতাযুগের পুনরাবৃত্তি দেখতে পায় আমরা ঘোর কলিযুগে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের নবরূপ পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবনে! শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর পরমভক্ত এ যুগের হনুমান শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বললেন, যে আমাকে প্রণাম ক'রে বড়খোকাকে প্রণাম করে না আমি তার প্রণাম গ্রহণ করি না। এস ওয়াজেদ আলীর বিখ্যাত উক্তি এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেলো, "সেই ট্র্যাডিশন সমানে ব'য়ে চলেছে।" একবার পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীকাজলদা ঠাকুরকে প্রণাম ক'রে বসার পর ঠাকুর কাজলদাকে বলেছিলেন, কি রে বড়দাকে প্রণাম করলি না!? উত্তরে সেদিন শ্রদ্ধেয় কাজলদা বলেছিলেন, বড়দা তো এখানে নেই! সেই কথা শুনে ঠাকুর কাজলদাকে বলেছিলেন, এখানে বড়দা নেই তো কি হয়েছে তার আসন তো আছে! সেখানে প্রণাম করবি। আর একবার ঠাকুর শ্রদ্ধেয় কেষ্টদা সহ অন্যান্য ভক্তদের বলেছিলেন, বড়খোকা যখন আমার এখানে আসে তখন আপনারা উঠে দাঁড়ালে আমার ভালো লাগে। আবার একবার কথাপ্রসঙ্গে ঠাকুর তাঁর জীবনী লেখা সম্পর্কে বলেছিলেন, আমার বায়োগ্রাফি লিখতে পারে দু'জন। একজন কেষ্টদা, অন্যজন বড়খোকা। সম্পূর্ণ বায়োগ্রাফি লিখতে পারে বড়খোকা।

এই সমস্ত ঘটনা প্রমাণ করে ভক্ত-ভগবানের সম্পর্ক একাকারের অন্তর্নিহিত কারণ। প্রমাণ হয় শ্রীশ্রীবড়দা কে!? প্রমান হয় শ্রীশ্রীবড়দা আর শ্রীশ্রীঠাকুরের গভীর সম্পর্ক আর তখনই ভগবানে সমাহিত প্রাণ পরম ভক্তের নামের আগে 'শ্রীশ্রী' ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়। কথায় আছে, বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার!!!!!
তাই বড়দা, অশোকদাদা, বাবাইদাদার নামের আগে কেন 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার হয় বা করা হবে তার মর্মার্থ বোঝে সে যার প্রাণ বোঝে। 
( লেখা ২৪শে মার্চ'২০২২)