Powered By Blogger

Monday, March 11, 2024

প্রবন্ধঃ ভোট ও ঈশ্বর পুজো।

২রা মে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই চড়ছে পারদ। সবাই নিজের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য ঈশ্বরের দরজায় মাথা নোয়াচ্ছে। যদিও রাজনৈতিক দল ও নেতানেত্রীরা জনগণকেই ভগবান ব'লে মনে করে কিন্তু দিনের শেষে আবার সেই অমূর্ত ও বোবা ঈশ্বরের কাছেই আত্মসমর্পণ! তাহ'লে কোনটা ঠিক? জনগণ? নাকি অমূর্ত ও বোবা ঈশ্বর?

জনগণ যদি এক ও একমাত্র ঈশ্বর হয় তাহ'লে জনগণের আশীর্বাদে নেতার জয়লাভই এক ও একমাত্র সত্য। তাহ'লে বোবা ভগবানের কাছে যাওয়া কেন? কেন অমূর্ত ভগবানের ওপর নির্ভরতা? মানসিক দুর্বলতা? ঈশ্বর ভীতি? কিসের দুর্বলতা? কিসের ভীতি? সত্যিই কি তাঁর কোনও দয়া পাওয়া যায়?

ভোট এলেই এই সমস্ত ঈশ্বর পুজোর তৎপরতা দেখে প্রশ্ন জাগে ভোটে জয়লাভের ক্রাইটেরিয়া কি? পুজো মানে কি? ভোটে জিতবে তো একজন তাহ'লে ঈশ্বর কাকে জেতাবেন? ক্রাইটেরিয়া কি কে ঈশ্বর পুজো করলো আর কে করলো না? কার ডাক তাঁর কাছে পৌঁছবে? ঈশ্বরের আশীর্বাদ বা দয়া কে পাবে? যে কিছু করেনি মানুষের জন্য, যে সুযোগ ও ক্ষমতা পেয়েও সেই সুযোগ ও ক্ষমতাকে মানুষের সেবায় লাগায়নি, ব্যক্তি স্বার্থে প্রয়োগ করেছে তখন তার পুজো কি ঈশ্বর গ্রহণ করে? তার প্রার্থনা কি ঈশ্বরের কাছে পৌঁছোয়? যদি কোনও কাজ না করেও শুধু ঈশ্বর পুজো করেই সফলতার বৈতরণী পার হওয়া যায় তাহ'লে নেতা কাজ করবে কেন? কেন মানুষের জন্য নেতা কাজ করতে যাবে? বোবা ভগবানের পুজো করেই আর মানুষের প্রয়োজনের বেলা অন্ধ ও বোবা থেকেই সুযোগ ও ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থ-মান-যশ কামিয়েই বহাল তবিয়তে যদি থাকা যায়, ভগবানের দয়া, ভগবানের আশীর্বাদ পাওয়া যায় তাহ'লে সরল সাধারণ খেটে খাওয়া গরীব মানুষই বা ভগবানের পুজো করবে কেন?

পূজো মানে যদি ধূপ ধুনো চন্দন ফুল বেলপাতা ইত্যাদি হয় আর তাঁর মাধ্যমেই যদি মনে করি ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে যাবে আমার প্রার্থনা আর তৎক্ষণাৎ তা তথাস্তু ব'লে পুরণ ক'রে দেবেন ঈশ্বর তাহ'লে আর কেউ কাজ করতো না আর ন্যায়, নীতি, আদর্শ ইত্যাদির ধার ধারতো না। জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মতে পূজো মানে স্বাগতম! অর্থাৎ পুজ ধাতু থেকে এসেছে পুজো শব্দ। পুজ কথার অর্থ স্বাগতম, Welcome. যার পূজো করছি তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি স্বাগতম জানাচ্ছি আমার জীবনে, আমার চরিত্রে। কিন্তু বাস্তবে তার ধার ধারে না কেউ। জানলেও মানে না কেউ। তাই এই ঘোরতর পরিস্থিতিতে 'জিসকা লাঠি উসকা ভঁইষ-এর মত দলীয় প্রচার শক্তি, প্রচার কৌশল, সাংগঠনিক শক্তি, লোকবল, অর্থবল, দূরদৃষ্টি ইত্যাদি যার যত মজবুত, যত সংগঠিত সে ততই জয়লাভে নিশ্চিত তা সে যতই যোগ্য-অযোগ্য, সৎ-অসৎ, দক্ষ-অদক্ষ, ভালোমন্দ যাই-ই হ'ক না কেন।
আর যারা কাজ করে, জনগণের সেবায় আত্মত্যাগ করে আর তারপরে ভোটে হেরে যায় তাহলে কি তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ, ঈশ্বরের দয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলেই কি হেরে গেল? তাহলে মানুষ ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করবে কেন? তাঁর প্রতি নির্ভর করবে কেন? তাঁর পুজো করবে কেন? সৎ বা ঈশ্বর যদি সৎ কে আশ্রয় না দেয়, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেয়, রক্ষা না করে আর অসৎ কে সমর্থন করে, অন্যায়ের পাশে দাঁড়ায় তাহলে সাধারণ মানুষ ভগবানের পুজো করবে কেন?

তাহলে যারা জেতেন তারা যেহেতু ভোটে জেতেন তারা কি সবাই ভালো কাজ করেছেন ব'লেই জেতেন? তারা সবাই কি সৎ? আর যারা হারেন তারা মানুষের জন্য কোনও কাজ করেননি বা করেননা বা প্রার্থী হিসেবে যোগ্য নন? অসৎ? তাই হারেন? ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ, দলীয় ও সাংগঠনিক শক্তি ও প্রচার ক্ষমতা জেতার বা হারার ক্ষেত্রে কোনও ভুমিকাই গ্রহণ করেন না? যা ইচ্ছা তাই করবো, ভগবানকে নিয়ে খিল্লি করবো, অশ্লীল ব্যঙ্গ করবো, ফেসবুকে নোংরা কার্টুন বানিয়ে পোষ্ট ক'রে অশ্লীল আনন্দ নেবো আবার দিনের শেষে বোবা ভগবানের কাছে মাথা ঠোকাবো আর তাঁর দয়ায় সফলতার শিখরে পৌঁছে যাবো!? ব্যাস!? বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন,
"দেবতার পায়ে মাথা কুটিস, ফাঁকিতে বাগাতে চাস মাল?
ঠাকুর কি তোর এতই বেকুব, ফাঁকি দেখে নয় সামাল?"

তাই ওসব পুজো টুজো দিয়ে কিছুই হয় না। বোবা ভগবান বোবাই থেকে যান। বোবা ভগবান মা কালিকে জাগাতে হ'লে ঠাকুর রামকৃষ্ণ হ'তে হয়। ঠাকুর রামকৃষ্ণ হওয়া যায় না কিন্তু তাঁর মনের মত হওয়া যায় ইচ্ছে থাকলে কিন্তু তাও হওয়া যায় না বৃত্তি প্রবৃত্তির বিষাক্ত ছোবলে ক্ষতবিক্ষত বিষাক্ত হৃদয় নিয়ে। রণে বনে জলে জঙ্গলে যেখানেই বিপদে পড়ো না কেন ঈশ্বর বাঁচান না। চিটিংবাজী কথা তিনি বলেন না। আর বিপদে পড়লেও তিনি বাঁচান যদি আমরা তাঁকে, তার জীবন্ত রূপকে জীবনে গ্রহণ ক'রে নামময় হ'য়ে থাকি; নামময় থেকে ভাগ্যদোষে কর্মফল ভোগের জন্য যদি বিপদে পড়ি তিনি রক্ষা করেন। তখন তিনি কর্মফল হিসেবে এক মণ ওজনের বিপদকে এক সের ওজনের ক'রে দেন। ভক্ত প্রহ্লাদদের তিনি বাঁচান আগুন, সমুদ্র আর পাগলা হাতির পায়ের তলা থেকে। কিন্তু আমাদের মতন কপট ভক্তদের নয়।

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন,
" তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি। যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তা করলে রে চলবে না ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না।"
আজ নাহয় তো কাল, কাল নয়তো পরশু, পরশু নয়তো তরশু কর্মফল ভুগতেই হবে। আর তা দেশ-কাল-পাত্র সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে। সৎসঙ্গের আচার্যদেব শ্রীশ্রীঅশোকদাদা বললেন, "শেষের সেদিন ভয়ংকর! তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই শেষের সেদিন ভয়ংকর।" ( লেখা ১২ই মার্চ'২০২১)

No comments:

Post a Comment