প্রশ্নকর্তারা অবিকৃতভাবে ঠাকুরকে প্রচার করছেন, ঠাকুরের আলোচনাকে মুখ্য রেখে এগিয়ে চলেছেন! এই অবিকৃতভাবে এগিয়ে চলার মধ্যে দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা, ইষ্টভৃতি মন্ত্র, আচার্য সম্বোধন ইত্যাদি কয়েকটা বস্তাপচা অদ্ভুত বিষয়ের মত একটা অদ্ভুত 'বিষয়' হ'লো ঠাকুর ছাড়া আর কারও নামের আগে দুটো 'শ্রী' ব্যবহার করা যাবে না। তারা ঠাকুর ছাড়া আর কারও নামের আগে দুটো 'শ্রী' ব্যবহার করেন না। দুটো 'শ্রীশ্রী' শুধু ঠাকুরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ও বৈধ বাকী সব অপ্রযোজ্য ও অবৈধ! এরকম আরো অনেক ভিত্তিহীন প্রশ্নের ঝড় তুলে ঠাকুরের ফটো মাথায় নিয়ে ঠাকুরের মিশনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে এইসমস্ত গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল-এর দল আর গায়ে পড়ে অকারণ অশ্লীল বাক্য প্রয়োগে পায়ে পা লাগিয়ে ফেসবুকে মুখ ঢেকে ঝগড়া ক'রে চলেছে! সেই যে ঠাকুরের সামনে দিয়ে মাথায় ঠাকুরের ফটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলো ভন্ড কপট শক্ত ভক্তের দল আজ থেকে ৫০বছর আগে সেই মাথায় ফটো নিয়ে চলার ট্রাডিশন আজও সমানে চলেছে! সেই যে ঠাকুর শরীরী অবস্থায় থাকাকালীন ঠাকুরের শেষ বয়সে ঠাকুরকে কাঁদিয়ে চোখের জলে ভাসিয়ে ঠাকুরের সামনে দিয়ে ঠাকুরের ফটো মাথায় নিয়ে বিরাট ভক্ত সেজে 'বন্দে পুরুষোত্তমম' ধ্বনি তুলে বেরিয়ে গিয়েছিল ঠাকুরের সৃষ্ট সংগঠন 'সৎসঙ্গ'-কে ভেঙে নতুন দল তৈরি করবে বলে অর্থ ও ক্ষমতার লোভে সেই মাথায় ফটো নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার তিক্ত স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও অম্লান রাখতে মাথায় ফটো নিয়ে শোভাযাত্রার অতি ভক্তির ভণ্ডামির ও পাপের ট্র্যাডিশন আজও ব'য়ে চলেছে তারা, তাদের উত্তরসূরীরা শোভাযাত্রায় আর পায়ের তলার মাটি যে ধীরে ধীরে সরতে সরতে ভবিষ্যৎ গভীর অন্ধকার খাদের সৃষ্টি হ'য়ে চলেছে সেদিকে হুঁশ নেই! এই মাথায় ফটো নিয়ে শোভাযাত্রার ভন্ডামির পাপের স্মৃতি এরা বহন ক'রে চলেছে দয়ালের অমোঘ ভয়াল অঙ্গুলি হেলনে!!!!!! একেই বলে কর্মফল!!!!!! এটাই বোধহয় বিধাতার নিখুঁত বিচার!
যাই হা'ক, আমি তাদের বললাম, আপনারা নামের আগে 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার নিয়ে যে অযৌক্তিক যুক্তি তর্কের ঝড় তুলে বাজার গরম করতে চেষ্টা করছেন সাধারণ ভক্তদের মাঝে ৫০ বছর যাবৎ সেই ঝড়ে আপনাদের নিজের ঘরই ভেঙে চুরমার!!!!! ভালো ক'রে নিজেদের ঘরটার চারপাশে চোখ মেলে দেখুন কি এক ভয়ংকর বিপদ ঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসছে, দিচ্ছে অশনি সংকেত!!! ভন্ড, কপট সাধু সাবধান!
'শ্রীশ্রী' ব্যবহার সম্পর্কে আমার বোধ যতটুকু ততটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করলাম নিম্নে।
জীবনের পরতে পরতে যাদের চরিত্রে অসাধারণ ভগবদদত্ত গুণ প্রকাশিত হয়, যাদের জীবন ঠাকুরের শ্রীচরণে সমর্পিত, যাদের জীবনে ঠাকুর ছাড়া আর কিছু নেই, যাদের জীবনটাই যাজন, যাদের জীবন ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক, যাদের শত বাধা-বিপত্তি, আঘাত, নিন্দা, কুৎসা, গালাগালি, কুৎসিত সমালোচনা, বিত্ত-বৈভব, প্রশংসা, প্রচার ইত্যাদি কোনও কিছুই ইষ্টপ্রতিষ্ঠা এবং ইষ্টস্বার্থরক্ষা ও স্বার্থপ্রতিষ্ঠায়, তাঁর সেবায়, তাঁর আজ্ঞা পালনে থামাতে পারে না, লক্ষ্যচ্যুত করতে পারে না, লক্ষ্য বস্তুতে না পৌঁছনো পর্যন্ত যারা বিপরীত অন্য কিছু দেখতে পায় না, শুনতে পায় না, ঠাকুরের অসীম-অনন্ত জ্ঞান যাদের জীবনে, যাদের চরিত্রে সমাহিত সেই সমস্ত ঠাকুর অন্ত প্রাণ, ঠাকুরের কুকুররূপী সেবাপ্রাণ মানুষের ক্ষেত্রে নামের আগে দুটো 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বিশেষ বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বলাগুলি একবার তলিয়ে দেখা যেতে পারে!
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "কারও নামের আগে একাধিক 'শ্রী' দেওয়ার উদ্দেশ্য হ'লো------ওর দ্বারা তাঁর অসামান্যতা ও বিশেষ বিভূতি সূচিত করা। 'শ্রী' মানে সেবা। ভগ এসেছে ভজ-ধাতু থেকে, ভজ ধাতুর একটা প্রধান অর্থ হ'লো সেবা, তাই ভগবান মানে বলা যায় সেবাবান। সত্তাসম্বর্দ্ধনী সেবা অর্থাৎ পরিপালন, পরিপোষণ ও পরিরক্ষণই যাঁর জীবন,-বৈশিষ্ট্য, তিনিই ভগবান। যিনি এই সেবা-বৈশিষ্ট্য-সম্পন্ন, তিনিই হ'লেন মানুষের মুখ্য সেবনীয়, অর্ঘ্যণীয় মানুষ-ভগবান। তাই তাঁর নামের গোড়ায় একাধিক 'শ্রী' যোগ ক'রে জানিয়ে দেওয়া হয় যে তিনি আমাদের সেব্যপরম।"
তাই জন্য বলে ভক্ত-ভগবান সমার্থক! জন্মজন্মান্তরের সাধনার পরিক্রমা শেষে জীবাত্মা মহাত্মায় উত্তীর্ণ হয় তারপর যখন অদম্য অচ্যূত অস্খলিত অনুরাগ উদ্দীপনা উৎসাহ ভক্তি ভালোবাসা প্রেম একানুরক্তি নিয়ে পরোমাত্মায় বিলীন হ'য়ে যায় তখন ভক্ত ভগবান এক হ'য়ে যায়! তখন সেই ভক্তের মধ্যে অসামান্যতা ও বিশেষ বিভূতি সূচিত হয়। ভক্ত-ভগবান আর টাকার এপিঠ-ওপিঠ সমার্থক হ'য়ে পড়ে! এই প্রসঙ্গে একটা সুন্দর গল্প আছে।
পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্র যখন তাঁর পত্নী সীতা মাতা কে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন তখন তিনি তাঁর সঙ্গে আসা সাথী যারা সীতামা-কে উদ্ধারের জন্য দীর্ঘ কঠিন সময়ে পাশে থেকে সাহায্য করেছিলেন সেই পরম বন্ধু, পরম সাথীদের একে একে দেশবাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। এই পরিচয় চলাকালীন যখন হনুমানকে পরিচয় করাতে যান তখন আবেগ ভালোবাসা কৃতজ্ঞতায় প্রভু রামচন্দ্রের কথা বন্ধ হ'য়ে যায়, গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছিল না, শুধু দু'চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিল অশ্রুধারা! পরম মমতায় হনুমানের দিকে নির্বাক নিশ্চল তাকিয়ে কেঁদে চলেছিলেন রামচন্দ্র! সবাই অবাক হ'য়ে দেখছিল সেই দৃশ্য! অনেকক্ষন পর অনেক কষ্টে অশ্রু সজল চোখে কান্না ভেজা গলায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, এ আমার পরম ভক্ত হনুমান! হনুমানকে যে ভালোবাসে না সে আমাকে ভালোবাসে না! ভক্ত-ভগবানের অপূর্ব এক মিলনান্তক দৃশ্য! সেদিন উপস্থিত সবার চোখে ছিল জল! ঠিক একইরকমভাবে ত্রেতাযুগের পুনরাবৃত্তি দেখতে পায় আমরা ঘোর কলিযুগে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের নবরূপ পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবনে! শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর পরমভক্ত এ যুগের হনুমান শ্রীশ্রীবড়দা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বললেন, যে আমাকে প্রণাম ক'রে বড়খোকাকে প্রণাম করে না আমি তার প্রণাম গ্রহণ করি না। এস ওয়াজেদ আলীর বিখ্যাত উক্তি এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেলো, "সেই ট্র্যাডিশন সমানে ব'য়ে চলেছে।" একবার পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীকাজলদা ঠাকুরকে প্রণাম ক'রে বসার পর ঠাকুর কাজলদাকে বলেছিলেন, কি রে বড়দাকে প্রণাম করলি না!? উত্তরে সেদিন শ্রদ্ধেয় কাজলদা বলেছিলেন, বড়দা তো এখানে নেই! সেই কথা শুনে ঠাকুর কাজলদাকে বলেছিলেন, এখানে বড়দা নেই তো কি হয়েছে তার আসন তো আছে! সেখানে প্রণাম করবি। আর একবার ঠাকুর শ্রদ্ধেয় কেষ্টদা সহ অন্যান্য ভক্তদের বলেছিলেন, বড়খোকা যখন আমার এখানে আসে তখন আপনারা উঠে দাঁড়ালে আমার ভালো লাগে। আবার একবার কথাপ্রসঙ্গে ঠাকুর তাঁর জীবনী লেখা সম্পর্কে বলেছিলেন, আমার বায়োগ্রাফি লিখতে পারে দু'জন। একজন কেষ্টদা, অন্যজন বড়খোকা। সম্পূর্ণ বায়োগ্রাফি লিখতে পারে বড়খোকা।
এই সমস্ত ঘটনা প্রমাণ করে ভক্ত-ভগবানের সম্পর্ক একাকারের অন্তর্নিহিত কারণ। প্রমাণ হয় শ্রীশ্রীবড়দা কে!? প্রমান হয় শ্রীশ্রীবড়দা আর শ্রীশ্রীঠাকুরের গভীর সম্পর্ক আর তখনই ভগবানে সমাহিত প্রাণ পরম ভক্তের নামের আগে 'শ্রীশ্রী' ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়। কথায় আছে, বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার!!!!!
তাই বড়দা, অশোকদাদা, বাবাইদাদার নামের আগে কেন 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার হয় বা করা হবে তার মর্মার্থ বোঝে সে যার প্রাণ বোঝে।
( লেখা ২৪শে মার্চ'২০২২)
No comments:
Post a Comment