Powered By Blogger

Wednesday, March 27, 2024

প্রবন্ধঃ পর্ব---২/১ (নেতা ও জনতা)

আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস তাদের দলের বরিষ্ঠ নেতাদের পিছনে সরিয়ে নেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীকে বেছে নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে নেবে পড়েছে। আগামী নির্বাচনে কংগ্রেস যদি সরকার গঠন করে তাহলে রাহুল গান্ধী হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী! সেই নেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচনী ময়দানে নেতা নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে তাঁর বক্তব্য “Give me 60months at the centre; I'll give you a life of peace and happiness"-এর সমালোচনায় 'নেতা' শব্দের গুরুত্বকে নস্যাত ক'রে আরো এক ধাপ এগিয়ে বুক চেতিয়ে বললেন, "নেতা দেশ বদলতা নেহী, জনতা দেশ বদলতা হ্যায়”।

রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই কথার জাগলিং! কোন জনতা? তাহলে যে রাজ্যে জনতা যাকে খুঁজে নিয়েছে রাজ্য শাসন করার জন্য সে ঠিক! তাহলে জনতার দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে, সরকারের প্রধানকে এত সমালোচনা কেন? কেন তাঁর এত নিন্দা? কেন তাঁকে ব্যর্থতার প্রতীক হিসাবে সেঁটে দেওয়া হয়? তাহলে কি জনতা ভুল করল? আর জনতা কি দেশের বা রাজ্যের হাল ধরে? রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস দল যদি জিতে আসে আর সরকার গঠন করে তাহলে কি দেশের শাসনভার জনতার হাতে তুলে দেবেন রাহুল গান্ধী? এই যে ৩৪বছর জনতা সুযোগ দিল বামফ্রন্টকে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য চালাবার জন্য, সেই রাজ্য কার নেতৃত্বে চালিত হয়েছিল? জনগণের? ক্ষমতার চেয়ারে বসে রাজ্যটাকে বদলাবার সুযোগ কে পেয়েছিল? জনগণ? কেন জনতা সেই ফ্রন্টের ওপর, নেতার ওপর অখুশি হ’য়ে তাঁকে সরিয়ে দিল? কেন জনতা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান মনমোহন সিং-এর ওপর অসন্তুষ্ট? কেন জনতা দেশের ১৩জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী, অটল বিহারী বাজপেয়ীর মত গুটিকয়েক প্রধানমন্ত্রীকে নেতা হিসাবে মনে রাখে? কেন জনতা সুভাষ বোসের মত নেতাকে হৃদয়ে স্থান দেয় ও সারা দেশের মানুষ নেতাজী বলে সম্বোধন করে? কেন মানুষ চিত্তরঞ্জনকে দেশবন্ধু বলে সম্বোধন করে? কেন আজও পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে পশ্চিমবঙ্গের রুপকার বলে? কেন ৩৪বছর সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও অন্যরা সেই স্বীকৃতি পান না? কেন প্রমোদ দাশগুপ্তকে আজও স্বীকৃতি দেওয়া হয় অবিসংবাদিত সাংগঠনিক নেতা হিসাবে? কেন দলমত নির্বিশেষে ভারতবর্ষের সমস্ত দল ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জ্যোতি বসুকে মেনে নিয়েছিলেন তাদের নেতা হিসাবে? এরকম অজস্র উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে।

যাই হোক, জনতা যদি দেশ বদলাতো তাহলে ভারত ৬৬বছর পরেও এমন পঙ্গু হয়ে থাকতো? জনতা তো শুধু ভোট দেওয়ার অধিকারী। তাও দলীয় প্রার্থীদের! দল যাকে প্রার্থী করবে তাঁদের মধ্যে কাউকে বেছে নাও। দলতন্ত্র আজ গণতন্ত্রের বাবা, ঈশ্বর! দলীয় সীমানার বাইরে যাবার অধিকার, অনুমতি, সুযোগ, সুবিধা, সম্ভাবনা জনগণের নেই! হয় যে কোন একজনকে বেছে নাও আর না-হয় ভোট না দিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে থাকো! আমাদের দেশে ভোট একটা উৎসব। একটা চুলকানি। ঝড়-জল-তুফান হলেও মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রতিনিধির ক্ষমতা লাভের জন্য প্রতিনিধির পক্ষে ভোটাঞ্জলি দেবেই দেবে! জনগণ দেশ নামক গাড়িটার চেয়ারে দলের মনোনীত কাউকে বসাতে পারে কিন্তু গাড়ীটা চালাতে হবে তাঁকেই অর্থাৎ সেই দলের মনোনীত নেতাকেই। জনগণ তো ভারত নামক দেশ গাড়ীটা চালাবে না! তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই অপরিপক্কতা, অজ্ঞতা সাথে অভিজ্ঞতাবিহীন একজন মানুষ যিনি মহানুভবতার নামে জনতার দোহাই দিয়ে কথার তুবড়ির রংবেরঙের ফুলঝুড়িতে জনগণকে মাতিয়ে এতবড় ভারত নামক গাড়ীটার পাইলটের চেয়ারে বসবে?
এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে এই-ই জনগণ দেশ বদলাবে? কোন জনগন? জীবনের তথা দেশের নানা পরিস্থিতি ও পরিবেশের চাপে পড়ে প্রতিদিন নতুন নতুন অভিভুতির দ্বারা আক্রান্ত জনগন? কোন মানুষ দেশ বদলাবে? যে মানুষ নানা পরিস্থিতিতে পড়ে নানারকম ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রতিনিয়ত রাঙ্গিয়ে যাচ্ছে ; Mental Identity বলে কিছু থাকছে না যে মানুষের, সেই মানুষ? কোন জনতা দেশ বদলাবে? যে জনতা নেতার কথার সুড়সুড়িতে নিজেকে দেশ বদলাবার কারিগর ভাবে সেই জনতা? তাহলে কি ধরে নেব রাহুল গান্ধী মূর্খ না-কি রাজনীতির লড়াই-এর ময়দানে ক্ষমতা লাভের লোভে জনগণের সাথে কথার জাগলিং? কোনটা?
( লেখা ২৭শে মার্চ, ২০১৪)

No comments:

Post a Comment