হে বাগ্মীপ্রবর,
অনেকদিন পর আপনাকে আবার চিঠি (৫) লিখতে বসলাম। এর আগে আপনাকে ১-৪ পর্যন্ত চিঠি লিখেছি। জানি না আপনি তার খবর পেয়েছেন কিনা। এবার বহুদিন পর আপনার ভিডিওতে বলা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় আপনাকে চিঠি লিখছি। এবারের চিঠির বিষয়বস্তু শ্রীশ্রীবড়দার পুত্র শ্রীশ্রীদাদাকে নিয়ে বলা কথাগুলি।
আপনি শ্রীশ্রীদাদার আচার্যপদে অভিষিক্ত হওয়াকে কেন্দ্র ক'রে শিক্ষাব্যবস্থার কথা টেনে এনেছেন। আপনি বলেছেন, শিক্ষাগুরু যার কাছে আপনি অ, আ শিখেছেন তাঁর ছেলে আপনাকে পড়ায় না। তারপরে স্কুল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষকতা করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই আপনার শিক্ষা আচার্য কিন্তু তাঁদের সন্তানেরা আপনার আচার্য হন না। অর্থাৎ আপনি আপনার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার ক'রে বলে দিলেন আপনি শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে যেহেতু দীক্ষা গ্রহণ করেছেন সেইহেতু আপনি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম সন্তান সৎসঙ্গের সবার বড়ভাই শ্রীশ্রীবড়দাকে আচার্য মানতে পারবেন না। শ্রীশ্রীদাদাকে তো নয়ই।
যাই হ'ক, মানা বা না-মানা এটা সম্পূর্ন ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি মানতেও পারেন আবার আচার্য হিসেবে অমান্য বা অস্বীকার করতেও পারেন। এটা আপনার অধিকারের মধ্যে পড়ে। আপনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে ছাড়া আর কাউকে আচার্য মানতে পারবেন না কারণ আচার্য একমাত্র শ্রীশ্রীঠাকুর। তাই অত অপ্রাসঙ্গিক ও অর্থহীন কথার অবতারণা করেছেন জিলিপির প্যাঁচের মতো ক্রমাগত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নানা রঙ্গিন শব্দের মালা গেঁথে আর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই এক কথার চাক্কি পিষিং অ্যান্ড পিষিং, পিষিং অ্যান্ড পুষিং ক'রে ক'রে আপনার কথার সমর্থনে প্রমাণ করতে চেয়েছেন আপনি সঠিক। আবার ভক্তির আতিশয্যে নিন্দা সমালোচনা না করার জন্য ও কারও দোষ ত্রুটি না ধরার জন্য ভালো, হৃদয়বান, ইষ্টপ্রাণ ও ঈশ্বরকোটি ভক্তের মতো ভুয়া কপট আবেগে চোখের জলও ফেলেছেন শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের দিকে তির্যক দৃষ্টিতে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে সৎসঙ্গীদের মাঝে ও জনসমাজে তাঁদের কলঙ্কিত ক'রে ও পায়ের তলায় ফেলে।
আচ্ছা হে বাগ্মীপ্রবর,
আচার্য প্রশ্নে শ্রীশ্রীঠাকুর অনেক বাণী দিয়েছেন। আপনি ও আপনারা সেগুলির থেকে খুঁজে খুঁজে বেছে বেছে বের ক'রে আপনাদের সমর্থনে সেই বাণীগুলি হাতিয়ার ক'রে সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসা, অপমান, অশ্রদ্ধার হামলা চালিয়েছেন শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের ওপর।
আর, এবার আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আচার্য সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর আরও যে বাণী দিয়েছেন সেই বাণীগুলির কয়েকটা আমি এখানে তুলে ধরছি; দয়া ক'রে আপনি সেগুলির ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের বিভ্রান্তি দূর ক'রে দেবেন। কারণ আপামর সাধারণ ভাঙাচোরা সৎসঙ্গী আজ এই প্রশ্নে বিভ্রান্ত। তাই আপনাদের মতো জ্ঞানী প্রজ্ঞাবান সাধক সৎসঙ্গীদের দ্বারস্থ সৎসঙ্গী সমাজ।
১) "আচার্যের আবির্ভাবে
স্বধ্যায়ী গুরুর গুরুত্ব অর্সে আচার্য্যে_____
যিনি আচরণ করে জেনেছেন;
আবার, পুরুষোত্তমের আবির্ভাবে
আচার্যের গুরুত্ব অর্সে পুরুষোত্তমে,
তিনি একাধারে গুরু, আচার্য
ও বৈশিষ্টপালী আপূরয়মান পুরুষোত্তম,
যখন আচার্য বা পুরুষোত্তম না থাকেন,
তখন স্বধ্যায়ী গুরুতেই
তাঁদের গুরুত্ব অর্সে থাকে;
যখন পুরুষোত্তম না থাকেন,
আচার্য্য থাকেন--
তখন আচার্য্যই গ্রহণীয়;
পুরুষোত্তমের অভ্যুদয়ে
আচার্য্য, গুরু প্রভৃতি সকলেই
তাঁতে
স্বতঃ-সন্দীপনায় সার্থক হয়ে ওঠেন--
পুরশ্চরনী অনুদীপনায়;
এক-কথায় পুরুষোত্তম যখন বর্তমান,
তখন তিনিই শরণীয়,
পুরুষোত্তমের অবর্তমানে
তঁনিষ্ঠ, তঁত্তপা আচার্য্যই শরণীয়,
আবার আচার্য্যও যখন না থাকেন
তখন পুরুষোত্তম-নিষ্ঠ স্বাধ্যায়ী গুরুই আশ্রয়নীয়,
ফলকথা, আচার্য্য ও স্বধ্যায়ী গুরুর
গুরুত্বের উৎসই হল --
পুরুষোত্তম-নিষ্ঠা,
এবং সর্বাবস্থায় পুরুষোত্তমই
উপাস্য ও ইষ্ট -- মানুষের ,
আর, পূর্বতন পুরুষোত্তম যাঁরা --
তাঁরা সবাই আপুরিত জীয়ন্ত হয়ে ওঠেন
সাম্প্রতিক পুরুষোত্তমে।"
--শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র (আদর্শ-বিনায়ক)।
২) প্রশ্নঃ গুরুর তিরােধানে আর গুরুর প্রয়ােজন আছে?
উত্তরঃ শ্রীশ্রীঠাকুর-গুরুর তিরােধান যদি হয় তখন তিনি মূৰ্ত্তি গ্রহণ করেন
আচার্য্যের ভিতর। আচাৰ্য্যদেবাে ভব’ না কী কয়! আচাৰ্য—যাঁর আচরণকে অনুসরণ করে আমরা সমৃদ্ধ হয়ে উঠি। (দীপরক্ষী ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২২)।
৩) শ্রীশ্রীঠাকুরঃ "গুরু-পুরুষোত্তমকে direct (সরাসরি) যারা না পায়, তারা তদনুবর্ত্তী আচার্য্য-পরম্পরার ভিতর দিয়ে তার ভাবটাই কিছু-না-কিছু পায়। ঐ ভাব যখন মলিন বা ম্লান হয়ে যায়, উবে যাবার মত হয়, বিকৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে, মানুষকে ঈশীস্পর্শে সঞ্জীবিত করে তোলবার জন্য তখন তিনি আবার মানুষ হয়ে আসেন ...............
(আলোচনা প্রসঙ্গে, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫৩, ৪/১২/১৯৪১)
হে বাগ্মীপ্রবর,
আপনার বক্তৃতা শুনেছি। আপনি বাকপটু। শব্দের মায়াজাল তৈরী ক'রে কথার জাল বিস্তারে আপনি পটু, দক্ষ। কিন্তু আপনি যে বাকসিদ্ধ নন এটা সম্ভবত আপনার অজানা আর তাই আপনার ঈশ্বর সাধনা ব্যার্থ। কারণ প্রকৃত ঈশ্বর সাধক বাকসিদ্ধ পুরুষ হয়। যেটা সম্প্রতি শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে প্রকট। যার জন্য দেশবিদেশের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ছুটে আসছেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদার দর্শনলাভের জন্য ও সমস্যা সমাধানের মোক্ষম সূত্র পাওয়ার জন্য। শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে রেত শরীরে মধ্যগগণের জ্বলন্ত সূর্যের মতো ভয়ঙ্করভাবে প্রকট আবার কখনো বা মন-প্রাণ-হৃদয় জুড়ানো পূর্ণিমার চাঁদের আলোর স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে শান্ত সমাহিত। সম্ভবত আপনি সে রূপ দেখেননি। এটা আপনার দুর্ভাগ্য। আপনি এটা মনে করবেন না আমি ভাতকে অন্ন বলা কালকের যোগী। আজ ৭০বছর হ'তে চললো এই অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির ভাঁড়ার। আমার এই অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি যে ভুল, ভ্রান্ত, মিথ্যা সেটা জানার জন্য আমি আপনার শরণাপন্ন। জীবন সায়াহ্নে এসে আমি এই মতবিরোধের সত্য জানার জন্য, উৎস জানার জন্য, কারণ জানার জন্য আপনা্র কাছে শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা 'আচার্য' সম্পর্কিত বাণী নিয়েই হাজির হয়েছি। আপনি আমাকে শ্রীশ্রীঠাকুরের উপরে উক্ত বাণীগুলি ব্যাখ্যা ক'রে দিন এবং আমাকে ও তামাম সৎসঙ্গীদের ভুল পথে চলা থেকে উদ্ধার করূন।
আজ এই পর্যন্ত। পরবর্তী চিঠিতে আপনার ভিডিওর শেষ অংশ তুলে ধরবো।
নমস্কারান্তে।
প্রকাশ বিশ্বাস।
উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী।
No comments:
Post a Comment