যারা ঠাকুরের বড় আদরের বড় খোকাকে মানে না, ঠাকুরের প্রথম সন্তানকে অপমান অবহেলা অবজ্ঞা অশ্রদ্ধা অমান্য করে তারা এই সংগঠনের পরিচালক। তারা সৎসঙ্গী? তারা ঠাকুরের মন্ত্র শিষ্য? তারা ঠাকুরের মিশনের পতাকাবাহী? তারা ঠাকুরকে মানে? একজন লিখেছেন "'আসলে তারা ঠাকুরকে মানে কিন্তু...............।" 'কিন্তু' শব্দের পরে লেখক যা লিখেছেন তাতে তিনি ঐ সমস্ত ধান্দাবাজদের বিরোধিতা করেছেন এটা ঠিক; কিন্তু 'ঠাকুরকে মানা' প্রসঙ্গে একটা ভুল বার্তা দিয়ে ফেলেছেন। সেই সম্পর্কে বলি, আচ্ছা এটা কি ক'রে হয় যারা ঠাকুরকে মানে অথচ তাঁর ভালোলাগা আর ভালোবাসার মানুষকে, জিনিসকে মানে না!? এটা ঠাকুরের সত্যানুসরণে ব'লে যাওয়া বাণীর মত হ'য়ে গেল না-কি? ঠাকুর সত্যানুসরণে কি বললেন? " ভারতের অবনতি সেদিন থেকে শুরু হয়েছে যেদিন থেকে ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদের আরাধনা শুরু হয়েছে।" আর ঘোর কলি যুগের সৎসঙ্গীদের অবনতি সেদিন থেকে শুরু হয়েছে যেদিন থেকে 'ঋষিবাদ' অর্থাৎ ঋষির কথা বা ঠাকুরের কথা, ঠাকুরের ভালোলাগা, ঠাকুরের পছন্দ, ঠাকুরের ইচ্ছা, ঠাকুরের স্বপ্ন, ঠাকুরের মিশন ইত্যাদি সব বাদ দিয়ে শুধু ঋষি বা ঠাকুরের আরাধনা শুরু হয়েছে। তাই এরা সৎসঙ্গী নয়, এরা অসৎ সঙ্গী। এরকম সব যুগে সব কালে হয়েছে। যেমন স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় দেশবন্ধুর অনুগামীরা দেশবন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমরা দেশবন্ধুকে মানি কিন্তু তাঁর ফিলজফি বা দর্শন মানি না। ঠাকুর সেই কথার উত্তরে বলেছিলেন , আমি একটা মানুষের অর্ধেক মানি আর এক অর্ধেক মানি না, এ কেমন কথা? এমন হয় না-কি? এতে কপটতা ও ভন্ডামির চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে যেমনটা হয়েছে এই সমস্ত মূল কেন্দ্র বিরোধী অসৎসঙ্গীদের। তারা ঠাকুর মানে, ঠাকুরের সত্যানুসরণ নিয়ে বিকৃতভাবে প্রকাশ করে কিন্তু ঠাকুরের জীবন্ত চলমান সত্যানুসরণ শ্রীশ্রীবড়দাকে মানে না। সেই সময়ের এই সমস্ত ভন্ড কপট অসৎ সঙ্গীরা জানতো ঠাকুর প্রয়াণের পর সাময়িক অস্থিরতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যদি না আখের গুছিয়ে নিতে পারি তাহ'লে কঠিন কঠোর শ্রীশ্রী বড়দার হাতে রাশ চলে গেলে এ জন্মে আর হবে না। তাই 'দে মা লন্ডভন্ড করে, লুটে পুটে খায়' তত্ত্বে বিশ্বাসী হায়েনার দল আচার্য্য পরম্পরা তত্ত্বের শিকলে বাঁধা পড়বে তা কখনো হয়? রক্তে যাদের দোষ আছে, বায়োলজিক্যাল মেক আপ-এ যাদের গন্ডগোল হ'য়ে আছে এই পরাধীনতা তারা কি মেনে নিতে পারে? কখনো পারে না। এই সমস্ত ঘর শত্রু দুঃশাসনরা বড়দাকে মানবে কি ক'রে? অনুসন্ধান ক'রে দেখুন দেখতে পাবেন এরা নিজেদের জীবনেই নিজের বড়দাকে সম্মান করতে পারেনি কোনোদিন, শ্রদ্ধার আসনে কোনোদিন নিজের বড় ভাইকে বসাতে পারেনি। আরও অনুসন্ধান করলে দেখতে পাবেন হয় এরা সন্তানহীন/ সন্তানহীনা নাহয় এরা নিজের প্রথম সন্তানকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারেনি। এরা এতটাই জন্মবিকৃত যে জীবনে 'কিন ফিলিংস' ব'লে, সুক্ষ্ম অনুভুতি বা তীক্ষ্ণ বোধ ব'লে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ আছে সেটাই মৃত। তাই এদের সন্তান থাকলেও প্রথম সন্তানের গুরুত্বই বোঝে না, বোঝার ক্ষমতাই জন্মগত ভাবে এদের নেই। তাই এদের নিয়ে আলোচনা করা মানে নিজেকে এদের বিকৃত মানসিকতার পর্যায়ে নামিয়ে আনা।
তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে এরা কোনোদিনই ঠাকুরকে মানে নি; ঠাকুরকে শুধু মানার ভান করেছে আখের গুছিয়ে নিতে বংশ পরম্পরায়।
আর বাংলাদেশ সরকার এদের হাতে ঠাকুরের জন্মস্থান হস্তান্তর করার পিছনে একটা গভীর রাজনৈতিক কৌশল কাজ করেছে। কিছুদিন আগে 'শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ' আখড়ার একজন অসৎ সঙ্গী নির্ম্মম ভাবে খুন হয়েছিল। এই নিয়ে অনেক রাজনৈতিক, সামাজিক চাপানউতোর হয়। বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। কায়েমিস্বার্থরক্ষাকারী সুযোগসন্ধানীরা মিশনারী অসৎ সঙ্গীদের সঙ্গে জোট বেঁধে আসরে নেবে পড়ে ঘোলা জলে মাছ ধরবার আশায়। কিন্তু তাদের সেই আন্দোলন, প্রচেষ্ঠা সার্থক হয়নি, সফল হয়নি সংবিধান বহির্ভূত ক্ষমতার উৎস হ'য়ে ওঠার দম্ভে, লোভে। আর এই বিশৃঙ্খল প্রবনতাকে চাপা দেবার মানসিকতায়, হিন্দুদের খুশি করবার তাগিদেই চটজলদি বাংলাদেশ সরকারের ধর্মনিরপেক্ষতার তকমা বজায় রাখার তাগিদেই বাংলাদেশ সরকার রাতারাতি আগুপিছু কিছু না ভেবেই ভারতের দেওঘরে অবস্থিত ঠাকুরের মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ'-এর সাথে কোনোরকম আলোচনা, তদন্ত না ক'রেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা কিনা আজ না হয় কাল বাংলাদেশ সরকারকে তাদের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ পুনর্বিবেচনা করতেই হবে। কারণ ইতিহাস বড়ই নির্ম্মম।
(লেখা ১৪ই মার্চ'২০১৭)
No comments:
Post a Comment