হে বাগ্মীপ্রবর,
আপনি ইউ টিউবে প্রচারিত আপনার 'আচার্য পরম্পরা'-র ভিডিওর মাধ্যমে তামাম সৎসঙ্গী কুলকে আপনি বলেছেন, "আমাদের যখন প্রথম অ,আ,ক,খ শেখানো হয় যিনি শেখান তাঁকে শিক্ষাচার্য বলা হয়। শিক্ষাগুরু যার কাছে আপনি অ, আ শিখেছেন তাঁর ছেলে আপনাকে পড়ায় না। তারপরে স্কুল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষকতা করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই আপনার শিক্ষা আচার্য কিন্তু তাঁদের সন্তানেরা আপনার আচার্য হন না।" অর্থাৎ আপনি আপনার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার ক'রে বলে দিলেন আপনি শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে যেহেতু দীক্ষা গ্রহণ করেছেন সেইহেতু শ্রীশ্রীঠাকুরই একমাত্র আচার্য। আপনি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম সন্তান সৎসঙ্গের সবার বড়ভাই শ্রীশ্রীবড়দাকে আচার্য মানতে পারবেন না। শ্রীশ্রীদাদাকে তো নয়ই।
আপনার এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটা কথা মনে এলো তাই এখানে তুলে ধরছি। একে তর্ক ব'লে কেউ ভাববেন না। যেমন আপনার মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে ঠিক তেমনি আমার মনের প্রশ্ন আপনার কাছে নিম্নে তুলে ধরলাম।
১) শ্রীশ্রীঠাকুর যখন ডাক্তারি পড়তেন তখন মেডিকেল স্কুলে তাঁর যিনি শিক্ষাগুরু ছিলেন পরবর্তী সময়ে সেই মাষ্টামশাই শ্রীশ্রীঠাকুরকে গুরুপদে বরণ ক'রে নিয়েছিলেন। একসময়ের ছাত্র পরবর্তী সময়ে তাঁর শিক্ষাগুরুর গুরু রূপে আবির্ভূত হলেন! এটা কি করে সম্ভব হ'লো?
২) শ্রীশ্রীঠাকুরের শিক্ষাগুরু যিনি ঠাকুরকে মেডিকেল শাস্ত্রের অ, আ, ক, খ শিখিয়েছেন পরবর্তী সময়ে আপনার কথামতো তাঁর সন্তান সন্ততির ঠাকুরকে পড়ানো তো দূরের কথা সেই শিক্ষাগুরু নিজেই ছাত্রকে গুরু পদে বরণ ক'রে নিয়েছিলেন জীবনের অ, আ, ক, খ বা জীবন অঙ্কের ফর্মুলা শিখবেন ব'লে। এটা কি বার্তা বহন ক'রে আনে আমাদের মাঝে?
৩) শ্রীশ্রীবড়দা কি শ্রীশ্রীঠাকুরের মন্ত্রশিষ্যদের কোনও জীবন দর্শনের পাঠ দিতেন? জীবনে বাঁচাবাড়ার পথে কেমনভাবে চলতে হবে তার শিক্ষা বা তুক গুলি ধরিয়ে দিতেন?
৪) নাকি পুরুষোত্তম পরমপিতা সদ্গুরু সৃষ্টিকর্তা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুরকে কেমনভাবে ভালবাসতে হবে, কেমনভাবে তাঁকে জীবনের মুখ্য ক'রে চলতে হবে, কেমন ক'রে তাঁর ব'লে যাওয়া বাণীগুলিকে নিজের জীবনে, চরিত্রে, নিজের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জীবনে মূর্ত ক'রে তুলতে হবে সেই করণীয়গুলি নিজের হাতে কলমে আচরণ ক'রে ক'রে আমাদের দিয়ে তা' করিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর হ'য়ে ওঠার শিক্ষা দিতেন? কোনটা?
৫) আমার আরাধ্য দেবতা শ্রীশ্রীঠাকুরকে কেমন ক'রে ভালোবাসবো কে আমাকে শিখিয়ে দেবে? কে সেই শ্রীশ্রীঠাকুরে অচ্যুত-আনতিসম্পন্ন, ছন্দানুবর্তী, জীবন-বৃদ্ধির আচরণসিদ্ধ ইষ্টপ্রতীক্ স্বরূপ ঈশ্বরকোটি পুরুষ? কে সেই তঁনিষ্ঠ, তঁত্তপা শরণীয় ব্যক্তিত্ব? আপনি? একটা নাম বলুন সৎসঙ্গ জগতে যিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর সৎসঙ্গী। আর কোনও দ্বিতীয় ব্যক্তি আছেন সৎসঙ্গ জগতে যিনি নিজেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর বলেছেন? আর এই শিক্ষায় তিনি দিয়ে গেছেন তাঁর পরিবার সহ সৎসঙ্গ পরিবারের সমস্ত সৎসঙ্গীদের।
শ্রীশ্রীঠাকুর এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরের জীবন্ত মূর্ত রূপ। আর সেই এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরের পুর্ববর্তী রূপ শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণকে কেমন ক'রে নিজের জীবনে ও পারিপার্শ্বিকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাঁর বলে যাওয়া জন্মবিজ্ঞান ও নিখুঁত বাঁচাবাড়া ও জীবন লাভের যে তুক তা কেমন ক'রে জীবনে, চরিত্রে রপ্ত করতে হবে তা নিজে আচরণ ক'রে ক'রে আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন এবং তা প্রায় ২৪ হাজার বাণীতে ও নানা কথোকথনের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হ'য়ে আছে।
আর, শ্রীশ্রীবড়দা শ্রীশ্রীঠাকুরের যে ভাব সেই ভাবকে, তাঁর সমস্ত বলাগুলিকে এবং এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরের বর্তমান জীবন্ত রূপকে এবং কেমন ক'রে তাঁকে ভালোবাসতে হবে সেই সমস্ত কিছু নিজের জীবনে, নিজের চরিত্রে, আচারে আচরণে, কথাবার্তা, চালচলনে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর আচরণসিদ্ধ মূর্ত জীবন্ত রূপ। শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন্ত সত্যানুসরণ। শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর প্রাণ ভোমরা। শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে শ্রীশ্রীঠাকুর সদা সর্বদা প্রকট হ'য়েছিলেন, জীবন্ত হ'য়েছিলেন, প্রকাশমান ছিলেন শ্রীশ্রীবড়দার প্রতিটি মুহূর্তের চলন বলন, আচার আচরণের মধ্যে। শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন আচরণসিদ্ধ ঈশ্বরকোটি পুরুষ। তাই তাঁকে আচার্য বলা হয়।
আর, শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা হ'লেন আচার্য পরম্পরা। অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুরকে কেমনভাবে ভালোবাসবো, শ্রীশ্রীঠাকুরের বলাগুলিকে কেমনভাবে নিজ জীবনে, নিজ চরিত্রে ফুটিয়ে তুলবো শ্রীশ্রীবড়দার জীবন দিয়ে দেখিয়ে যাওয়া ট্র্যাডিশানের যোগ্য, দক্ষ, উত্তরসূরি, ব'য়ে চলা ধারা হলেন শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। শ্রীশ্রীদাদা ও বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুরে অচ্যুত-আনতিসম্পন্ন, ছন্দানুবর্তী, জীবন-বৃদ্ধির আচরণসিদ্ধ ইষ্টপ্রতীক্ স্বরূপ শ্রীশ্রীঠাকুরের বংশধর। যারা ত'দ্ভাবভাবিত, তৎচলননিরত তাঁরা আচার্য। এই আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরার ধারা চলবে। যেদিন এই ধারা ব্যহত হবে, যেদিন শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাব মলিন ও ম্লান হ'য়ে যাবে, উবে যাবার মতো হবে, বিকৃতিতে আচ্ছন্ন হ'য়ে উঠবে, মানুষকে ঈশীস্পর্শে সঞ্জীবিত ক'রে তুলবার জন্য তখন তিনি আবার মানুষ হ'য়ে আসবেন, মানুষের মধ্যে তাদেরই একজন হয়ে বিচরণ করবেন, আর নিজের আচরণ দিয়ে প্রতি পদক্ষেপেই দেখিয়ে দেবেন কেমন ক'রে মানুষ ঈশ্বরেরই হ'য়ে চলতে পারে সব কিছুর মধ্যে। আর এই যে বললাম এই কথাগুলি এই কথাগুলিও শ্রীশ্রীঠাকুরের।
আমি আমার উপলব্ধি ব্যক্ত করলাম ও মনের মধ্যে জেগে ওঠা প্রশ্নগুলি আপনার কাছে রাখলাম। দয়া ক'রে উত্তর দিয়ে আমায় বাধিত করবেন এবং আমার প্রশ্নের অবসান ঘটাবেন।
নমস্কারান্তে,
প্রকাশ বিশ্বাস।
উত্তরপাড়া, হুগলী।
No comments:
Post a Comment