কিছু মনে করবেন না আপনি সৎসঙ্গী? আপনি রাজনীতি করেন? যদি প্রকৃত সৎসঙ্গী হ'য়ে থাকেন, যদি ঠাকুরের মিশনের পতাকা বহনকারী হ'য়ে থাকেন আর সংগে রাজনীতি ক'রে থাকেন তাহ'লে কোনরকম রাজনৈতিক দলের হ'য়ে দলের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব বা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি সৎসঙ্গী আর তাই সৎসঙ্গ কি চায় নিশ্চয়ই জানেন? না জানলে জেনে নিন আর জেনে নিয়ে কিম্বা যদি জেনে থাকেন তাহ'লে তা অর্থাৎ সৎসঙ্গের ভাবধারা নিজের জীবনে প্রতিফলিত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হ'ন। আর যদি কোনও দলের প্রতিনিধিত্ব ক'রে থাকেন বা কোনও দলের মতবাদে বিশ্বাসী হ'য়ে থাকেন আর সংগে ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য হ'য়ে থাকেন তাহ'লে ঠাকুর রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী সম্পর্কে কি বলেছেন, কেমন হ'তে বলেছেন এবং মানুষ, দেশ, সমাজের একজন সুনাগরিক হিসাবে কেমনতর আচরণসিদ্ধ হ'য়ে উঠতে বলেছেন তা সিরিয়াসলি জানুন এবং জেনে ঠাকুরের বলা অনুযায়ী রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর মত আচরণ করুন। আর যদি রাজনীতি বা কোনও রাজনৈতিক মতবাদ আপনার প্রধান বা মুখ্য হ'য়ে থাকে আর ঠাকুরের আপনি শিষ্য অথচ ঠাকুর ও ঠাকুরের মতবাদ, দর্শন হয় গৌণ তাহ'লে আপনি প্রচলিত রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীর মত আচরণ করতে পারেন তবে অবশ্যই সৎসঙ্গ প্ল্যাটফরম থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে করুন। আপনি সৎসঙ্গের প্ল্যাটফরমের সামনে দাঁড়াবেন, সাদা জামা কাপড় পড়ে ঠাকুরের পারিপার্শ্বিক বেঁচে থাকা ও বেড়ের ওঠার মতবাদ বা দর্শন আউড়াবেন আবার রাজনৈতিক ছাতার তলায় ঠিক ঠাকুর বিপরীত অন্য আচরণে ডুবে থাকবেন তা যেন না হয়; তা থেকে বিরত থাকুন। আপনার আচরণ যেন ঠাকুরকে, ঠাকুরের ভাবমূর্তিকে, এমনকি অদূর ভবিষ্যতে এখন যে সংস্কৃতি চলছে দেশের মহাত্মাদের মূর্তি ভাঙা বা মূর্তির মুখে কালিমা লিপ্ত করার ঠিক তেমন আপনার ভুলের জন্য এবং ঠাকুরের নীতি বিরুদ্ধ আপনার অনৈতিক ও অমানবিক আচরণের ফল স্বরূপ অদূর ভবিষ্যতে ঠাকুরের মূর্তি নিয়ে ভাঙা বা কালিমা লিপ্ত করার এমনতর আচরণ করার যেন কেউ সুযোগ না পায়। মূর্তি ভাঙা বা কালিমালিপ্ত করা তো দূরের কথা এমন ভাবনা করার মত আস্পর্ধা বা অবকাশ বা সুযোগ যেন না পায় সুযোগ সন্ধানীরা। এর জন্য দায়ী থাকবেন আপনি এবং আপনার বিশৃঙ্খল চিন্তাভাবনা ও উচ্ছৃঙ্খল জীবন। এতটাই সতর্ক, সচেতন হ'য়ে চলার কথা বলে গেছেন ঠাকুর সারাজীবন মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত। আর ভাবের ঘুঘু বা তাত্ত্বিক আমেজে ভর করে শক্ত ভক্ত হ'য়ে বসে থাকার সময় নেই। তাই ঠাকুর ও ঠাকুরের মিশন আর রাজনৈতিক মতবাদ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক আচরণ যেন মিশে গিয়ে একাকার হ'য়ে খিচুড়ি না পাকিয়ে বসে। রাজনীতি করলে রাজনীতি করুন আর সৎসঙ্গী হ'লে সৎসঙ্গ, ঠাকুর, ঠাকুরের মিশনকে বুঝুন, জানুন এবং তাঁর ও তাঁর মিশন প্রচারে খাঁটি কর্মী হ'য়ে উঠুন। মাথায় রাখতে হবে আমি যেন ঝোলের লাউ আর অম্বলের কদু হ'য়ে না উঠি। আমার ঠাকুরও আছে আবার ঠাকুর মতের বিরোধী রাজনৈতিক চলা, বলা দুই-ই আছে এমন গাধা ও ঘোড়ার মিশ্রণে তৈরি খচ্চর যেন হ'য়ে না উঠি আমি। রাজনীতি যদি করি আর যদি ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য অনুগামী হ'ই আর রাজনীতি যদি আমার পেশা, নেশা বা লক্ষ্য হয় আর তা' হ'তেই পারে এতে আশ্চর্য বা অন্যায্য কিছু নেই তাহ'লে ঠাকুরের মনের মত, চাহিদা মত রাজনীতিবিদ হ'য়ে উঠুন যাতে আপনাকে দেখে লোকের ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, প্রেমে মাথা নত হ'য়ে আসে, ঠাকুরকে জীবনে গ্রহণ করার প্রয়োজন অনুভব করে। দেশের মানুষ যেন আপনার মধ্যে দিয়ে ঠাকুরকে, ঠাকুরের জীবনকে, ঠাকুরের দর্শনকে বুঝতে পারে, জানতে পারে। ঈশ্বরের সৃষ্টির বুকে যখন জন্মেছি তখন এই সৃষ্টিকে রক্ষা করবার দায়বদ্ধতা আপনার আমার প্রত্যেকের আছে বিশেষ ক'রে প্রতিটি সৎসঙ্গীর আছে এটা যেন ভুলে না যাই আমরা সৎসঙ্গীরা। ঠাকুর যা চাননি তা যেন কখনো না করি তা আমি যে পতাকার তলায় থাকি না কেন আর দলীয় স্বার্থ পুরণে যেন আমার ঠাকুরের স্বার্থে আঘাত না লাগে। ঠাকুর যেন আমার রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের এবং আমার রাজনৈতিক দলের শ্রীবৃদ্ধির উপকরণ হ'য়ে না ওঠে। ঠাকুর যা চেয়েছেন তাই যেন আমি করি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তা আমার দলীয় স্বার্থে আঘাত লাগুক আর নাই লাগুক এবং দলীয় অনুমোদন থাকুক বা নাই থাকুক। যদি আমি রাজনীতি করা প্রথম সারির সৎসঙ্গী হ'ই তাহ'লে যেন এইকথাগুলি ভুলে না যাই, মনে যেন রাখি আমৃত্যু। জয়গুরু।
( লেখা ১২ই মার্চ' ২০২১)
No comments:
Post a Comment