Powered By Blogger

Monday, March 18, 2024

প্রবন্ধঃ ইষ্টভৃতি কি ও কেন করবো, এর ফল কি ?

আমি জানি ইষ্টভৃতি নিয়ে বাইরের জগতে মানুষের ভুল ধারণাআছে, শুধু অদীক্ষিত মানুষের নয় দীক্ষিত মানুষও ইষ্টভৃতির বিরুদ্ধে কথা বলে এবং পয়সা দিয়ে ঠাকুর পুজো বিশ্বাস করে না এটা বেশ জোরের সঙ্গে বিজ্ঞের মতো বলে। কারণ তারা জানে না ইষ্টভৃতির মূল অর্থ ও উপকারীতা। আসলে তারা দীক্ষা নিয়েছিল হয় বাবা-মা, শ্বশুর শাশুড়ি, দীক্ষিত গুরুভাইবোনেদের চাপে, নতুবা ছেলেমেয়েদের চাকরী হবে, ব্যবসা হবে, বিয়ে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন কিছুর লোভে। সবাই ঠাকুরের কাছে এসেছিল ফোকটে অলৌকিক উপায়ে না ক’রে পাওয়ার আশায়। সে পাওয়া চটজলদি পাওয়া যখন ঘটে না তখন সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তার ওপর আছে বিরুদ্ধ অপপ্রচার, মিথ্যে প্রচার, মূর্খের প্রচার, আধাজ্ঞানী অল্পজ্ঞানীদের প্রচার। আর যারা ইষ্টভৃতি করে তারা প্রায়ই সবাই না বুঝেই করে, একটা ঈশ্বরভীতি, ধর্মভীতি, কিছুটা ভালোবাসা, কিছুটা বিশ্বাস, কিছুটা পাওয়ার আশা ইত্যাদি একটা খিচুড়ি মার্কা ভক্তি নিয়ে ইষ্টভৃতি করে। আর, এই যা যা বললাম এগুলিই ছিল, আছে ও থাকবে। যখন স্বয়ং ঈশ্বর নিজে নেমে এসেছিলেন তাঁর সন্তানদের বাঁচাতে, বাঁচবার ও বৃদ্ধি পাওয়ার পথ দেখাবার জন্য তখন তখনি তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেছে ধর্ম জগতের ঈশ্বর বিশ্বাসী তথাকথিত ধার্মিকেরাই, অধার্মিকদের ঈশ্বর বা ধর্ম্ম অবিশ্বাসীদের কথা ছেড়েই দিলাম। যা ক্ষতি করার ধর্ম জগতের ঈশ্বর বিশ্বাসী তথাকথিত ধার্মিকেরাই, করেছে ও ক’রে চলেছে ও আগামীতে করবে। আর তারা তো দিনের শেষে ধ্বংস হয়েইছে এবং তাদের কথা বিশ্বাস ক’রে তাদের অনুসরণকারীরা ধ্বংস হয়েছে ও ধ্বংস হচ্ছে ও আগামীতে হবে। সেই ধ্বংসের মাত্রা ক্রমশ ভয়ংকর ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আর ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। যাই হ’ক, ধ্বংস হ’ক, যা হবার হ’ক, কাঠ খেলে আলমারি, ড্রেসিং টেবিল হাগতেই হবে। এবার আসি মূল কথায়, আপনার ইষ্টভৃতির কথায়। সমাজের চারপাশের রিপু তাড়িত বৃত্তি- প্রবৃত্তির ধ্বংসাত্মক পরিবেশের মধ্যে, মোবাইলে নেট দুনিয়ার হাজারো ছড়ানো ছেটানো উলঙ্গ জীবন ধ্বংসকারী ভিডিওর মাঝে এই ভিডিওতে ইষ্টভৃতি সম্পর্কে বলা কথা যার ভালো লাগবে সে শুনবে, বুঝবে ও গ্রহণ করবে। কিংবা শুনবে না, বুঝবে না ও বর্জন করবে। গ্রহণ ও বর্জন ব্যক্তিগত। এবার আসুন ইষ্টভৃতি নিয়ে ঠাকুর কি বললেন শুনি। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, ইষ্টভৃতি হ'লো practical materialised condensed form of psycho - physical ascetic devotion (শারীর-মানস তপস্যাপরায়ণ ভক্তির কার্য্যকরী বাস্তব সংক্ষিপ্ত রূপ )।

এই যে ঠাকুর শরীর ও মনের তপস্যা পরায়ণ ভক্তির কথা বললেন সেটা কি? তপস্যা মানে তাপ থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, শরীরে-মনে সেই তাপ সৃষ্টির জন্য ও শক্তি অর্জনের জন্য গৃহীত বিশেষ যে কার্যক্রম তাই তপস্যা। তপস্যা মানে লক্ষ্য অর্জনের জন্য শৃঙ্খলার সঙ্গে যে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে ( Disciplined effort) সেই প্রচেষ্টাকেই তপস্যা বলা হ’য়ে থাকে। আর ঠাকুরের কথায় ডিসিপ্লিন কথার মধ্যে আছে ডিসাইপেল কথাটা। ডিসিপ্লিন থেকে ডিসাইপেল অর্থাৎ যে প্রকৃত শিষ্য সে শৃঙ্খলিত। এবার আপনারা দেখে নিন ধর্ম্ম জগতে ঈশ্বর বিশ্বাসীদের মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে, তাঁর পূর্ব পূর্ব রূপের বিরুদ্ধে, তাঁদের জীবন বৃদ্ধির কথার বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন তারা কে শৃঙ্খলিত, কার কথাবার্তা, আচার আচরণ, ব্যবহার শৃঙ্খলিত আর শৃঙ্খলিত নয়।

যাই হ’ক আমি তপস্যার কথা বললাম, এবার বলি তপস্যা পরায়ণের পরায়ণ মানে পরম গতি, চরম যে গতি, বা চরম অবলম্বন আর ভক্তি মানে ঈশ্বরের চরণে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের জন্য যে বিশেষ অনুরাগ বা প্রেম তাকে ভক্তি বলে। লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য বা লক্ষ্য বস্তু লাভ করার জন্য লক্ষ্য বস্তুতে সম্পূর্ণ আত্মসম্পর্ণের প্রয়োজন হয়। লক্ষ্য বস্তু লাভের পথে যে প্রতিবন্ধকতা বা যে বাধা আসে তা থেকে উদ্ধার পেয়ে লক্ষ্য বস্তুকে অর্জনের জন্য জীবন্ত ঈশ্বরের চরণে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রয়োজন। নতুবা লক্ষ্য বস্তু অর্জন প্রায়ই অধুরা রয়ে যায়। ঈশ্বরের চরণে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের জন্য যে শক্তি প্রয়োজন হয় সেই শক্তি অর্জনের জন্য গৃহীত বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে পরম চরম যে গতি, বা চরম যে অবলম্বন, প্রধান যে অবলম্বন তা হ’লো ভক্তি অর্থাৎ বিশেষ অনুরাগ বা প্রেম। আর এই ভক্তি অর্থাৎ পরম গতি, চরম গতির মধ্যে দিয়ে, চরম অবলম্বনকে অর্থাৎ ভক্তি পূর্ণ কার্যক্রম আশ্রয় করার ফলে যে তাপের সৃষ্টি হয়, সেই তাপ বা উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে শরীরের কোষে কোষে, দেহ কোষ ও জনন কোষে। যে বিশেষ অনুরাগ বা প্রেম অর্থাৎ যাকে ভক্তি বলছি, সেই পরম গতি, চরম যে গতি, বা চরম অবলম্বন গ্রহণ করার ফলে যে তাপ সৃষ্টি হয় সেই তাপ থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা শরীরে ও মনে ছড়িয়ে পড়ে। তখন শরীরের প্রতিটি কোষ, দেহের প্রতিটি কোষ, স্নায়ু কোষ, রক্ত কোষ, পেশী কোষ ইত্যাদি আবার জনন কোষ অর্থাৎ শুক্রানু ও ডিম্বানু কোষে সেই তাপ উদ্ভুত শক্তি প্রবেশ করে, শক্তি প্রবেশ করার ফলে কোষগুলিকে জীবন্ত, সক্রিয় ও শক্তিশালী ক’রে তোলে। এই যে ভক্তি পূর্ণ কার্যক্রমের কথা বললাম যে কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে তাপ সৃষ্টি হয় ও মহাশক্তির উদ্ভব হয় তার প্রথম ও প্রধান ( First & foremost) এক ও একমাত্র বিষয় হ’লো ইষ্টভৃতি।

শ্রীশ্রীঠাকুর এই ইষ্টভৃতি কে বললেন practical materialised condensed form of psycho - physical ascetic devotion (শারীর-মানস তপস্যাপরায়ণ ভক্তির কার্য্যকরী বাস্তব সংক্ষিপ্ত রূপ )। যা কোনও সাধারণ জীবকোটি মানুষের পক্ষে সে যতবড় যোগী, ধ্যানী, গোঁসাই, গোবিন্দ আধ্যাত্মিক জগতের মহাপুরুষ হ’ক না কেন তাঁর বা তাঁদের পক্ষে জানা, বোঝা সম্ভব নয়। জন্মজন্মান্তরের ঈশ্বরে সমর্পিত মহাত্মা ছাড়া ইষ্টভৃতির মহিমা, গুঢ় তত্ত্ব, পরম বিজ্ঞান বোঝা সমভব নয়। মহিমান্বিত তত্ত্বজ্ঞ পরমবিজ্ঞানী উপলব্ধিবান ঈশ্বরকোটি মানুষ ছাড়া ইষ্টভৃতির মূল মরকোচ অনুভব করা, অভিজ্ঞতা অর্জন করা, উপলব্ধি করা ধর্ম্ম, বিজ্ঞান, রাজনীতি, শিক্ষা কোনও ক্ষেত্রের তথাকথিত সাজা সাধু, সাজা সন্ন্যাসী, শরীরকে চন্দনে, গেরুয়া বসনে, আংটি, মাদুলি, তাবিজ, রুদ্রাক্ষের মালা, জটাজুটধারী মনুষ্য এবং স্বঘোষিত ভগবান, পরশ্রীকাতরতায় জর্জরিত, অন্যের ইষ্টকে নিন্দা করা, দু’পাতা বালখিল্য ধর্ম্ম কথা পড়া ধর্ম্মকথকের পক্ষে বা দু’পাতা বিজ্ঞান পড়া, ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করা এবং লেখাপড়াজানাওয়ালা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের পক্ষে সমভব নয়। এখন যদি উটেরও চিত হ’য়ে শোওয়ার ইচ্ছা হয় তাহ’লে যা হয়। তা উটও চিৎ হ’য়ে ঘুমোতে চাইতে পারে সে স্বাধীনতা সবার আছে। এখন নেটের যুগ। নেটে রঙ মেখে গেরুয়া কাপড়ে নিজেকে ঢেকে নিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে যে যা খুশী বলতে পারে, বলতে পারে তাঁর ইষ্টভৃতি সম্পর্কে কটু কথা দু’দিনের যোগী ভাতকে অন্ন বলার বালখিল্য জ্ঞান নিয়ে।

শ্রীশ্রীঠাকুর-- ইষ্টভৃতি করা খুব ভাল। ইষ্টভৃতি ঠিকমত ক'রলে insurance -- এর (বীমার) মতো হয়। ইষ্টভৃতির ফলে ভিতরেও শক্তি সংহত হয়। তাই-ই আমাদের আপদ-বিপদের সময় রক্ষা করে।

শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন-- ইষ্টভৃতি ক'ষে করবে। অমন মাল আর নেই। ওতে শক্তি ঠেলে বেরিয়ে পড়বে। কিছুতেই আটকাবে না। ভোরে উঠে সন্ধ্যা-আহ্নিক ও ইষ্টভৃতি ক'রে বেরুবে। আর, ভাবা ও করায় মিল রাখবে। এই motion (গতি)-- টুকু দিয়ে দিলে গাড়ি চলতে থাকবে।

শ্রীশ্রীঠাকুর-- ইষ্টভৃতির ফল অশেষ। ইষ্টভৃতি যারা উদগ্ৰ আগ্ৰহ নিয়ে করে, এমন কাম নেই যে তারা পারবে না- অবশ্য সম্ভাব্যতার ভিতর হ'লে।
একটা মানুষ রোজ ভোরে উঠে যদি শুদ্ধাচারে ভক্তিভরে ইষ্টভৃতি করে, তাহ'লে তার ভিতর-দিয়ে এতখানি extra - energy (অতিরিক্ত শক্তি) stored (সঞ্চিত) হয় যে, তার উপর দাঁড়িয়ে সে-সব বিপদ-আপদকে easily overcome (সহজে অতিক্রম) করতে পারে। অন্য মানুষ যেখানে ভেঙ্গে পড়ে, সেখানে সে অটল হ'য়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

কিন্তু Tempting attitude (প্রলুব্ধ করার মনোভাব) নিয়ে ইষ্টভৃতি করতে নেই।

Tempting attitude (প্রলুব্ধ করার মনোভাব) থাকলে সবই নিষ্ফল হ'য়ে যায়। বাইবেলে আছে- Do not tempt Lord thy God (তোমার প্রভু ঈশ্বরকে প্রলুব্ধ ক'রো না)।

ঠাকুর! রোজ আমি ইষ্টভৃতি করি, আমি তোমার অনুগত, তুমি আমার রোগটা সারিয়ে দাও। রোগ যদি সারে, তাহ'লে বুঝব তোমার দয়া আছে আমার উপর; ইষ্টভৃতির মাহাত্ম্য আছে। রোগ সেরে গেলে বেশী ক'রে ইষ্টভৃতি করব'--- এমনতর শর্ত কন্টকিত অবদানে Supreme Being (পরমপিতা) টলেন না, Satan (শয়তান) টলতে পারে। ঐ শর্ত ও প্রত্যাশাই তাঁর দয়া পাওয়ার পথে barrier (বাধা) সৃষ্টি করে।

ইষ্টভৃতির মহিমার কথা আমরা জেমসের কথার মধ্যে পাই। শ্রীশ্রীঠাকুর বলতেন, অ্যাই জেমস কি যেন কয়?
জেমস তাঁর সিলেক্টেড আর্টিকেলস-এ বলেছেন, "He will stand like a tower when everything rocks around him and when his softer fellow-mortals are winnowed like chaff in the blast." অর্থাৎ যখন সবকিছুর অস্তিত্ব টলায়মান হ’য়ে উঠবে, এবং শক্তিহীন নির্জীব লোকগুলি ঝড় আসার আগেই তুষের মত উড়ে যাবে, তখন সে একটা স্তম্ভের মতো নিজের শক্তিতে অটল হ’য়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। যে যে অবস্থায় যেখানেই থাকুক না কেন যদি সে নিজের খাওয়ার জন্য কিছুই না পায় গাছে ফল আছে, ফল না পায় ফুল আছে, ফুল না পায়, গাছের পাতা আছে, গাছ নেই মাটি আছে,মাটি নেই ধু ধু মরুভূমি, মরুভুমিতে বালু আছে যদি তাও না পায় মহাশূন্যে বাতাস আছে, শূন্য থেকে এক্মুঠো বাতাস নিয়ে দিনের শুরুতে আমার এই যে সত্ত্বা, সত্ত্বার সত্ত্বা পরম সত্ত্বা, এই যে আমার অস্তিত্ব ,অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম অস্তিত্ব, এই যে আমি, আমার আমির উৎস পরম উৎস, এই যে আমি ও আমার চারপাশে যে সৃষ্ট জগত সেই সমস্ত সৃষ্টির পিছনে যে কারণ আছে, সেই কারণের কারণ পরম কারণ সেই পরম সত্ত্বা, পরম অস্তিত্ব, পরম উৎস, পরমকারণের উদ্দেশ্যে কিংবা সেই যে বিজ্ঞানীরা সৃষ্টির উৎস খুঁজছিল যাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছিল ঈশ্বর কণা বিজ্ঞানের ভাষায় সেই ঈশ্বর কণার উদ্দেশ্যে আমার দিন শুরু করার আগে ব্রাহ্ম মুহুর্তে নিজের শরীরে কিছু খাবার বা জল দেওয়ার আগে সমপর্ণ করো। আর যদি সেই মহা ধ্বংসের সময়ও এসে থাকে যদি বাতাসও বন্ধ হ’য়ে যায় তবে মানস উপাচারে তুমি সেই পরম সত্ত্বা, উৎস, অস্তিত্ব, কারণ বা ঈশ্বর কণার উদ্দেশ্যে সমর্পণ করো। মোদ্দা কথা তুমি যে পরম সত্ত্বা, পরম উৎস, পরম অস্তিত্ব, পরম কারণ অর্থাৎ যে ঈশ্বর কণা থেকে এসেছো মানুষ রূপে মায়ের গর্ভে সেই মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়ার পরে আবার তুমি যখন সেই পরম সত্ত্বা, পরম উৎস, পরম অস্তিত্ব, পরম কারণ অর্থাৎ যে ঈশ্বর কণার যে জীবন্ত রূপ, সেই জীবন্ত রূপের কাছে ফিরে যাও জীবন্ত রূপের দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তখন হয় তোমার দ্বিতীয় জন্ম। আর এই যে তোমার দ্বিতীয় জন্ম হ’লো তখন তোমার সেই জীবন্ত রক্তমাংস রূপী পরমসত্ত্বা, পরমউৎস, পরমঅস্তিত্ব, পরমকারণ ও জীবন্ত রক্তমাংসের ঈশ্বর কণার বাস্তব ভরণপোষণের জন্য, বাস্তব ভোগের জন্য তুমি তাঁকে কিছু সমর্পণ ক’রো। তিনি রক্তমাংস সঙ্কুল জীবন্ত মঙ্গল। মঙ্গল শব্দ আমরা ডিকশেনারিতেই পাই, তাঁকে কি বাস্তবে দেখতে পাই? মঙ্গল শব্দ মূর্ত রূপে দেখতে পাই রক্তমাংসের জীবন্ত ঈশ্বরের মধ্যে। তিনি হলেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, হজরত মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মধ্যে। ঈশ্বর যখন রক্তমাংসের মানুষ হ’য়ে নেমে আসেন এই পৃথীবির বুকে মানুষ রূপে তখন আমার বেচে থাকার জন্য ও বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন হয় তাঁরও তাই তাই প্রয়োজন হয়। তাই তাঁর বাস্তব ভরণপোষণের জন্যই আমি আমার দিনশুরুর আগে ভোজ্যের অনুকল্প রূপে ভোজ্যের মূল্য অর্ঘ রূপে তাঁর উদ্দেশ্যে সমর্পণ করি। সমর্পণ করি আমার রক্ত জল করা, রক্ত ঘাম ঝড়ানো যে রোজগার সেই রোজগার থেকে স্বতঃস্বেচ্ছ, অনুরাগ-উদ্দীপী, আগ্রহ- উচ্ছল, অপ্রত্যাশী অর্ঘ্যাঞ্জলী তাঁর উদ্দেশ্যে তাঁর চরণতলে। দিয়ে বলি, হে প্রভু, হে দয়াল, হে ঠাকুর, হে জীবন বৃদ্ধির পরম উদ্ধাতা তুমি আমার ইষ্টভৃতি গ্রহণ করো। একেই বলে ইষ্টভৃতি। অর্থাৎ দিনের শুরুতেই আমার পরিবারের যিনি প্রধান সেই জীবন্ত ঈশ্বরকে আমার ও আমার পরিবারের প্রধান হিসেবে তাঁর বাস্তব সেবার মাধ্যমে তাঁর অর্থাৎ ইষ্টের ভরণ পোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা। তারপর সেই ইষ্টভৃতির মাধ্যেমে সঞ্চিত শক্তি বুকে, মাথায়, প্রাণে নিয়ে প্রাত্যহিক সমস্যা, বিপদ আপদকে সহজে অতিক্রম ক’রে প্রতিদিন কাজে সফল্ভাবে এগিয়ে যাওয়া। জাগতিক, মহাজাগতিক, ইহকাল পরকালের কোনও অশুভ শক্তি তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না, পারবে না তোমার গতি রুদ্ধ করতে, তোমাকে পরাজিত বা ব্যর্থ করতে। মৃত্যু তোমাকে প্রণাম ক’রে পথ ছেড়ে সরে দাঁড়াবে জীবন্ত বিষ্ণুর সঙ্গে অর্থাৎ বিস্তারের সাথে মানে শ্রীশ্রীঠাকুরের সাথে মিলিত হতে।


ইষ্টভৃতিকে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন নিকুম্ভিলা যজ্ঞ। আপনারা জানেন নিকুম্ভিলা যজ্ঞ ক’রে যখনই মেঘনাদ বেরোতেন যে কাজে সেই কাজেই তিনি সফল হতেন। কিন্তু যেদিন তিনি নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সম্পাদন করতে পারলেন না, ব্যর্থ হলেন সেদিন তিনি অসহায় নির্ম্মম মৃত্যু বরণ করলেন। আর এই মৃত্যু বরণ করলেন অধর্ম পথে জীবনে জয়ী হওয়ার জন্যে। এই নিকুম্ভিলা যজ্ঞ করে সৎসঙ্গীরা প্রতিদিন প্রত্যূষে এবং শ্রীশ্রীআচার্য্য সান্নিধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরকে জীবন্ত রাখে আমৃত্যু নিজেদেরকে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দরিদ্রতা থেকে রক্ষা করার জন্য।

যাই হ’ক, ইষ্টভৃতি নিয়ে যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমি আমার উপলব্ধি আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। মন দিয়ে একাগ্র চিত্তে শোনার অনুরোধ রইলো। শোনার পর বক্তব্য গ্রহণ ও বর্জন আপনাদের ব্যক্তিগত। নমস্কার, জয়গুরু।

No comments:

Post a Comment