Powered By Blogger

Monday, March 25, 2024

প্রবন্ধঃ ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন

তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় কমিটি পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতাদের ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের নাম মুখে আনতে পারছে না। রাজ্যের সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতা চাইবার নামে ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচের মত নেচে নেচে ‘আজ হোলী খেলবো শ্যাম তোমার সনে, একলা পেয়েছি তোমায় নিধু বনে’ গান গাইতে গাইতে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রেম জমাবে কিন্তু সরাসরি মুখে বলবে না ‘এসো হে কংগ্রেস! এসো এসো!’ এই গোপন লুকোচুরির খেলা বামপন্থীদের মজ্জাগত। এরা কখনোই বুক ফুলিয়ে বলতে পারে না, “প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা, প্যার কিয়া কোঈ চোরি নেহি কি, ছুপ ছুপ কে মন মরনা ক্যা; প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা!” সিপিএমের এই রকম হাস্যকর গা সওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই রাজ্যের মানুষ ৩৪বছর ধরে দেখতে অভ্যস্ত। এই জোট না-কি সমস্ত মানুষের জোট, কোনো দলীয় জোট নয়; এই অজুহাতে আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে এরা কোনো লজ্জা অনুভব করে না। ‘আদর্শ’ শব্দ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অভিধানের একটা শব্দ মাত্র। ওগুলো শুধুমাত্র আউড়ানোর জন্য, ক্ষমতা দখলের চাবিকাঠি মাত্র; করার বা আচরণের জন্য নয়। কম্যুনিস্টরা কোনদিনই চ্যালেঞ্জ নিতে পারেনি। দেশের সংকটের সময়ে এরা দায়িত্ব নিয়ে দেশকে সংকট মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যাবার মত হিম্মৎ দেখাতে পারেনি। সর্বভারতীয় স্তরে রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি না থাকা সত্ত্বেও আঞ্চলিক দল হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারে যোগদানের সুযোগ পাওয়া এমনকি দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র তত্ত্বকথার অজুহাতে জনগণের দেওয়া দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে, সরকারে যোগদান করে জনগণের ন্যুনতম চাহিদা পালনের দায়িত্ব নেওয়ার হিম্মৎ দেখাতে সাহস করেনি। জনগণকে এরা চিরকালই আন্ডারএস্টিমেট করে, বোকা ভাবে। এরা জানে জনগণের স্মৃতিশক্তি বড়ই দুর্বল। এরা কোনকিছুই বেশীদিন মনে ধরে রাখতে পারে না। সময়ের প্রবল স্রোতে এদের মাথার সব ঘিলু ভেসে যায়। অতএব হে দুর্বল স্মৃতিশক্তি জিন্দাবাদ।
বামপন্থীদের পরিস্থিতির অবস্থান সম্পর্কে বলা হয় এরা তত্ত্বগত অবস্থান আঁকড়ে থাকে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব ও মূল্য এরা বোঝে না। কথাটা ভুল। অন্য অনেকের তুলনায় কম্যুনিস্টরা ধান্দাবাজির রাজনীতির ময়দানে শক্তপোক্ত। রাজনৈতিক গুরুত্ব ও মূল্য এরা খুব ভালো বোঝে। জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার পিছনে এদের কোনো তত্ত্বগত অবস্থান ছিল না; ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের প্রশ্নে বাংলার আলিমুদ্দিনের অনৈক্য ও পলিটব্যুরোর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর জ্যোতিবাবুকে না পসন্দ মনোভাব এবং যেটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রাদেশিক মনোভাব। তাই এরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব ও মূল্য বোঝা সত্ত্বেও সীমিত সামান্য শক্তি নিয়ে ভারতবর্ষকে শাসন করার সুযোগ পেয়ে সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত হীনমন্যতার কারণে।

বাংলা, বাঙ্গালী ও বাঙ্গালীর মেধাকে কোনোদিনই ভারতবর্ষের রাজনৈতিক নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেনি। তাই নেতাজী থেকে শুরু করে প্রণব মুখার্জী, জ্যোতি বসু কেউই ভারতবর্ষকে শাসন করার সুযোগ পায়নি। বাঙালি ও বাঙালির মেধাকে শুধু ভারতবর্ষের নেতৃত্ব নয় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বও মেনে নিতে পারেনি। তাই ভারতবর্ষ হারিয়েছে একের পর এক যোগ্য নেতৃত্ব। আর বলতে দ্বিধা নেই ভারতবর্ষের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৌড়ে এই অসাধারণ যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন বাঙালি নেতৃত্বকে পিছন থেকে ছুরি মারার এই অশুভ খেলায় সেই সিরাজের আমল থেকে বিদেশি থেকে স্বদেশী সকলের সঙ্গে চিরকাল হাত মিলিয়েছে বুদ্ধিমান লেখাপড়াজানাওয়ালা ধান্দাবাজ বাঙালি। সিরাজের সঙ্গে বেইমানী করেছিল সিরাজের আস্থাভাজন মীরজাফর বিদেশীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে। সেই প্রথম শুরু হয়েহিল দেশের ভিতর থেকেই বাঙালির হাত ধরে বাঙালি নিধনের জঘন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

নেতাজিকে দেশের বাইরেই থেকে যেতে হ’ল সেই স্বাধীনতার স্বর্ণমুহূর্তে রহস্যজনক অন্তর্ধানের তকমা নিয়ে। স্বাধীনতার আনন্দে মশগুল সাধারণ ভাঙ্গাচোরা বাঙালি ভুলেই গেল এই স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত প্রাণ দেশের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিতর্কিত মহান ব্যক্তিত্বকে। দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রথম শ্রেণীর বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি নেতৃবৃন্দ সেই স্বাধীনতার সময় থেকে আজ পর্যন্ত এক রহস্যজনক(?) কারণে নেতাজির রহস্যজনক অন্তর্ধান বিষয়ে নিশ্চুপ! এমনকি তাঁর নিজের হাতে তৈরী দল ফরওয়ার্ড ব্লক তাঁর নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার ছিটেফোঁটা ভোগ করে চলেছে বছরের পর বছর কিন্তু নেতাজীর অন্তর্ধান সম্পর্কে কোনো উচ্চবাচ্য নেই! আর অশোক ঘোষ মহাশয়তো ক্ষমতা ভোগের টানা রেকর্ড করে ফেলেছেন, যা কিনা গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছে। দেশে ফিরে এলে নেতাজীই হতেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। আর তিনি ছিলেনও তাই। আজাদ হিন্দ সরকার আর আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রধান ছিলেন নেতাজী। তৎকালীন গোটা বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতৃবৃন্দ জানতেন ভারতবর্ষের অবিসংবাদিত নেতা জাতি-বর্ণ-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে আপামর সাধারণ মানুষের প্রাণভোমরা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস-ই হবেন স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তাঁরা জানতেন তিনি ফিরে এলে তাদের ধর্মের ভিত্তিতে বিশাল ভারতবর্ষকে ভাগ এবং বাংলা ও বাঙ্গালীকে চিড়ে ফেলে দু’ভাগ করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সফল হবে না, বানচাল হয়ে যাবে। আর জানতেন বলেই বিশ্বযুদ্ধের জয়ী সমর নায়করা কেউই তাঁকে, তাঁর অসাধারণ দেশপ্রেমকে, তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ, অস্খলিত আত্মবিশ্বাস ও কঠোর-কোমল নির্মল ব্যক্তিত্বকে মেনে নিতে পারেননি। তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার মুহূর্তেই দেশের ভিতর থেকেই শুরু হয়েছিল বিদেশীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাঙালি নিধনের খেলা। একমাত্র নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ছিলেন দেশ-কাল পেরিয়ে বিশ্বের আপামর সাধারণ মানুষের নেতা, জনগণমনঅধিনায়ক, আন্তর্জাতিক নেতা। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেস দেশকে শাসন করেছে বছরের পর বছর কিন্তু কোনোদিনও দেশের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব, দুরন্ত দেশপ্রেমিক, অবিসংবাদিত উদারমনাঃ নেতাজীকে, নেতাজীর রহস্যজনক অন্তর্ধানকে লজ্জা ও অপমানের ঘোর অন্ধকার থেকে আলোর জগতে মুক্তি দেয়নি। দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গিত মহান প্রাণেদের সম্মিলিত অরাজনৈতিক বিশাল মঞ্চকে ক্ষমতা দখল ও ভোগ এবং ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার স্বার্থে দলীয় সঙ্কীর্ণ সুবিধাবাদী মঞ্চে রুপান্তরিত করে নেতাজীকে চরম অবমাননা করেছে স্বাধীনতা পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন কংগ্রেস দল ও তার নেতৃবৃন্দ। কংগ্রেস দল পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান আর নেতাজীর প্রতি চরম অবহেলা, ঔদাসিন্য প্রদর্শন কংগ্রেস দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নেতাজীর প্রতি মানসিকতা কোন পর্যায়ের তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়; দুধকে দুধ আর পানিকে পানি আলাদা করে দেয়।
আর এই কম্যুনিষ্টরা নেতাজীকে কি চোখে দেখতো তা’ ভারতের সমস্ত রাজ্যের সমস্ত সম্প্রদায়ের লোক জানত ও জানে। আর বিজেপি নির্বাচনে সেই নেতাজীকে মই করে নির্বাচন পাড়ি দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়েই নেতাজী চ্যাপ্টার ক্লোজড করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক্ খারাপ হওয়ার ভয়ে। আর পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালে মাত হয়ে ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তা হারাবার ভয়ে মমতার নেতাজীর ফাইল প্রকাশের পথ অনুসরণ করেছে। আর তাই-ই আমরা সাধারণ বাঙালি তথা ভারতবাসী তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। আমরা সাধারণ মানুষ ভারত তথা বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতৃত্বের হীনমন্যতার শিকার হলাম।

দেশের আর এক সঙ্কট মুহূর্তে বাংলার মুখাপেক্ষী হয়েছিল গোটা দেশ। নেতৃত্বের অভাবে ভুগছিল মহান ভারতবর্ষ। সেই সঙ্কট মুহূর্তে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ খুঁজে নিয়েছিল আরও এক বাঙালিকে দেশকে নেতৃত্ব দেবার জন্য। তিনি বাংলার জ্যোতি বসু। কিন্তু সেই বাঙ্গালীও দেশকে নেতৃত্ব দেবার সুযোগ পায়নি। সুযোগ পায়নি ঘরে-বাইরের রাজনীতির নোংরা খেলার জন্য। তত্ত্বগত অবস্থানকে সামনে রেখে সিপিএম পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাঙালী জ্যোতি বাবুকে বলি চড়িয়েছিলেন। বলি চড়িয়েছিলেন তাঁর ২৪বছরের টানা প্রশাসনিক দক্ষতার চূড়ান্ত সফলতার রুপ দেখে। আলিমুদ্দিন আজকের মমতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রশ্নে দ্বিধাহীন প্রশ্নাতীত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মত মানসিকতা সেদিন দেখাতে পারেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আজকের মত সেদিন যদি আলিমুদ্দিনের বাঙালি কম্যুনিস্টরা জোটবদ্ধভাবে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বাঙালির রক্তের উষ্ণতার স্বাদ চাখাতে পারতো তাহলে সেদিন ভারতের আকাশে লেখা হ’ত নূতন ইতিহাস। বাঙালির তেজ টের পেয়েছিল গ্রীক সম্রাট থেকে শুরু করে ভারতের মাটিতে পা রাখা বিদেশী শক্তির শক্তিমানরা; টের পেয়েছিল বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশনেতারা আর্য্য বাঙালির উষ্ণ রক্তের নোনতা স্বাদ। আজ বাংলাদেশ বাঙালির রাষ্ট্র গঠন করে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে প্রমাণ দিচ্ছে বাংলা ও বাঙালির শৌর্য্য বীর্যের ঐতিহ্যের। কিন্তু পশ্চিমবাংলার বাঙালি কম্যুনিস্টরা প্রমাণ দিয়েছে তাদের রক্তে আর্য্য রক্তের অনুপস্থিতির। সেদিন পার্টির তত্ত্বগত অবস্থানের ছদ্মবেশের আড়ালে ছিল সেই বহু পুরোনো বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি মানসিকতা, ছিল বাংলা ও বাঙালির মনন ও মেধা, প্রশাসনিক দক্ষতা, প্রশ্নাতীত নেতৃত্বের সহজ ও স্বাভাবিক গুণাবলিকে মানতে না পারার জন্মগত নীচ মানসিকতা। অথচ এই জ্যোতিবাবুর নেতৃত্বেই টানা ২৪বছরের শাসনকাল-ই ছিল ভারতের মাটিতে সিপিএম পার্টি ও তার পলিটব্যুরো নামক সর্বশক্তিমান কমিটির অস্তিত্বের প্রাণভোমরা। সেদিন বাংলার বুকে মমতার তুফানের গতিতে উত্থান যতটা না বিড়ম্বনায় ফেলেছিল জ্যোতিবাবুকে তার থেকে বেশী, অনেক বেশী বিড়ম্বনার আবহাওয়া তৈরী করেছিল জ্যোতিবাবুর নিজের দলের ভিতরের পরিবেশ। জ্যোতিবাবুকে রাজনীতির ময়দান থেকে সরাবার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিল সেদিন পলিটব্যুরো নামক সিপিএমের সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। মমতাই ছিল সেদিন অপ্রতিদ্বন্দ্বী জ্যোতিবাবুর বিজয় রথকে থামাবার একমাত্র শক্তিমানরুপী পলিটব্যুরোর তুরুপের তাস। সেদিন জ্যোতিবাবুর ২৪বছরের শাসনে পরিপুষ্ট শক্তিমান পলিটব্যুরো জ্যোতিবাবুকে সরিয়ে রাতারাতি জনমানসে হাজির করেছিলেন অনভিজ্ঞ ক্লিন ইমেজের অধিকারী বুদ্ধদেববাবুকে। সেদিন ২৪বছরের টানা শাসন ব্যবস্থায় টিকে থাকা ও সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সিপিএমের গুরুত্বকে বজায় রাখা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে থাকা ও তার ফলে টানা ২৪বছরের রাজ্য শাসন আর সেই শাসনের ফল ভোগ করা ইত্যাদির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ জ্যোতিবাবুর পাশে দাঁড়ায়নি তাঁর পার্টি। বুদ্ধদেববাবুকে সামনে এনে পলিটব্যুরো সেদিন যে রাজনৈতিক চাল দিয়েছিল সেই চালে বাজিমাত হয়নি সেদিন, বাজিমাত হয়েছিল মমতার বদান্যতায়। মমতার সেদিনের অস্বাভাবিক বিস্ময়াতীত পরপর ভুল সিদ্ধান্ত বুদ্ধবাবুকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করেছিল আর মিথ্যে কৃতিত্ব নিয়েছিল পলিটব্যুরো নামক শক্তিমান ঈশ্বর আর বুদ্ধবাবুর ক্লিন ইমেজ। সেদিন সেই প্রবাদের সত্যতা প্রমানিত হয়েছিলঃ ‘ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে’। সেদিন যদি জ্যোতিবাবু আগাম মমতার মানসিকতা জানতে পারতেন, মমতার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার পরবর্তী পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে পারতেন সত্যদ্রষ্টা ঋষির মত তাহলে হয়তো জ্যোতিবাবুকে অসুস্থতার অজুহাতে সরানো যেত না। আর সরাতে গেলেও মানসিক সংঘাতের তীব্রতায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতো যা সামাল দেওয়া শক্তিমান পলিটব্যুরোর কাছে কঠিন ও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতো।

মমতা সেদিন কি ভুল করেছিলেন যার জন্য বুদ্ধদেববাবুর ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছিল আর শক্তিমান পলিটব্যুরো ফকিরের কেরামতির মত কৃতিত্ব কুড়িয়ে নিয়েছিল?
ভুলঃ ১) কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ।
২) কেন্দ্রীয় বিজেপি জোট থেকে বেরিয়ে আসা।
৩) রাজ্যে যখন বিরোধী জোটের তীব্র হাওয়া ঠিক সেই মুহূর্তে
রাজ্য বিজেপি জোট থেকেও সম্পর্ক ছিন্ন।
৪) সিপিএমের বি টিম বলে ঘোষিত রাজ্যে সাইনবোর্ডে পরিণত ও পশ্চিমবঙ্গের জনগণ দ্বারা উপেক্ষিত কংগ্রেসের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে জোট বাঁধা।

প্রশ্ন জাগে মনেঃ
১)মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র লক্ষ্য ছিল কি শুধু ক্ষমতা থেকে জ্যোতিবাবুর অপসারণ, সিপিএমের অপসারণ নয়?
২)জ্যোতিবাবুকে সরিয়ে বুদ্ধদেববাবুকে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার লক্ষ্যেই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছাকৃতভাবেই এই ভুলগুলি করেছিলেন?
৩)মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎকালীন চারপাশের একান্ত কাছের লোকেরাই কি তাঁকে এই সমস্ত একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরামর্শ দিয়েছিলেন পলিটব্যুরোর এজেন্ট হিসাবে?
প্রশ্ন অনেক কিছুই জাগে মনে, তাই প্রশ্নের অস্ত যাক।
পরবর্তী সময়ে আমরা কি দেখলাম? দেখলাম ভারতবর্ষকে নেতৃত্ব দেওয়ার তীব্র সংকট। আর সেই তীব্র সংকটে সেই অসুস্থ জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আবেদন জানালো নেতৃত্বের সংকটে অবস্থানকারী দেশের সেই সময়ের জোটবদ্ধ অবাঙ্গালী রাজনৈতিক শক্তিবৃন্দ। তাহলে কেন বলা হচ্ছে বাঙ্গালীকে কোনোদিন মেনে নেয়নি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশের অবাঙ্গালী নেতৃত্ব ও বিদেশী শক্তি? একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, দিনের আলোর মত স্পষ্ট দেখা যাবে সেদিন কেন দেশের অবাঙ্গালী নেতৃবৃন্দ জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন। মেনে নিয়েছিলেন শুধুমাত্র এই কারণে যে সেই সময় দেশের জোটবদ্ধ বিরোধী তথাকথিত সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দের মধ্যে এমন কেউ ছিলেন না যে বা যিনি দেশের জনগনের কাছে এবং নিজেদের ভিতরে পরস্পর পরস্পররের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। নিজেদের কায়েমি স্বার্থেই জোটবদ্ধ নেতৃবৃন্দ জ্যোতিবাবুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। জ্যোতিবাবুর দীর্ঘ ২৪ বছরের বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা ও প্রশ্নাতীত প্রশাসনিক দক্ষতাকে মূলধন করে টানা পাঁচ বছরের নিশ্চিত কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার সুখ ভোগ করার লোভে মত্ত হয়েই তারা জ্যোতিবাবুকে তাদের নেতা নির্বাচন করেছিলেন। জ্যোতিবাবুকে মেনে নিতে তারা বাধ্য হয়েছিলেন ক্ষমতা দখলের নেশায়; ভালোবেসে নয়, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য নয়। কিন্তু বাঙালি জ্যোতিবাবুর দেশের সেই সর্বোচ্চ আসনে বসার সোনার সুযোগে ছাই ঢেলে দিয়েছিল সেই সিপিএমের সর্বশক্তিমান পলিটব্যুরোর শক্তিমান অবাঙ্গালিরা আর তাতে রসদ যুগিয়েছিল সেই ঘর শত্রু বাঙালি। এবারের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে গণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতার আড়ালে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পার্টির পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্তকে গৌতম দেব, শ্যামল চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্যেরা ‘ঐতিহাসিক ও ইতিবাচক’ আখ্যা দেন। কিন্তু সেদিনের জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার পলিটব্যুরোর তত্ত্বগত অবস্থানের আড়ালে নেওয়া নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যমূলক ভুল সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক ভুল ও নেতিবাচক সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিতে পারেননি। স্বয়ং জ্যোতিবাবুকেই সেদিন পার্টির সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত’ বলতে হয়েছিল।
সেদিন যদি জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার জন্য এবং পরমাণু চুক্তির বিরোধিতায় ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার জন্য তত্ত্বগত অবস্থানের নামে মিথ্যে আদর্শকে আঁকড়ে ধরে রাখার গোয়ার্তুমি করতে পারেন তাহলে আজ এমন কি মহাভারত অশুদ্ধ হ’ল যে একটা রাজ্যে পায়ের তলায় জমি ফিরে পাওয়ার জন্য, অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য তত্ত্বগত অবস্থান থেকে ১৮০ডিগ্রি ঘুরে আদর্শকে বলাৎকার করতে শীর্ষ নেতৃত্বের বোধে বাধল না? কি জবাব দেবে আগামী প্রজন্মকে তাঁরা? নাকি যেনতেনপ্রকারেণ ক্ষমতা দখল করাই, ক্ষমতাতে টিকে থাকাই দলীয় আদর্শ ও একমাত্র তত্ত্বগত অবস্থান; আর এটাই শিখিয়ে যাচ্ছেন কম্যুনিস্ট নেতৃত্ব আগামী প্রজন্মকে? মোদী বা মমতা নয়, সমাজ পরিবর্তন বা গঠন নয়; ক্ষমতা দখলই একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র আদর্শ, একমাত্র তত্ত্বগত অবস্থান। এটাই সত্য, এটাই নীতি। ক্ষমতা দখলের জন্য নিজের আদর্শকে ঘায়েল করে একেবারে বিপরীত মেরুর আদর্শের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চুক্তি রফা করে দল বাঁধতে এদের নীতিতে বাধে না, লজ্জা লাগে না, অস্বস্তি বোধ হয় না; তা’তে ভবিষ্যতে যা হবার হবে। সমাজ বা দলের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার সময় নেই। বর্তমান এতটাই গুরুত্বপুর্ণ যে একমুহূর্ত ক্ষমতার বাইরে থাকা সম্ভব নয়। এতটাই ড্যাম কেয়ার মনোভাব। জনগণকে এরা চার অক্ষর ভাবে।

এবার আর এক বাঙালী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথা যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখব ইন্দিরা জমানায় প্রণব মুখার্জী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর একেবারে কাছের লোক, বিশেষ আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব। দলে ও সরকারে তিনি ছিলেন নাম্বার টু। ইন্দিরা পরবর্তী সময়ে রাজীব গান্ধীর জমানায় তাঁকে সরে যেতে হয়েছিল সেই অবাঙালি লবির বাঙালি বিদ্বেষের কারণে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দলের সংকট মুহূর্তে তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণেই তাঁকে দলে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। শুধু দলে ফিরিয়ে নেওয়াই নয় আবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর যোগ্য স্থান। রাজীব গান্ধীর আস্থাভাজন হয়ে আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছিলেন সেই নাম্বার টু হিসাবে। রাজীব গান্ধী পরবর্তী সময়ে নরসীমা রাওয়ের আমলে তিনিই ছিলেন দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, সংকোটমোচনকারী নাম্বার টু। সীতারাম কেশরীর তিনি বিশেষ আস্থাভাজন ছিলেন তাই নয়, তাঁর ওপরই সীতারাম কেশরী নির্ভরশীল ছিলেন। এর পরবর্তী ঘটনা সকলেরই জানা। বিদেশিনী হাওয়া তুলে সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার থেকে দূরে সরিয়ে রাখার খেলায় বিজেপি সফল হ’লেও চেয়ার কিন্তু পেলেন না দলের একমাত্র দাবীদার এবং দল ও সরকারের নাম্বার টু এবং ততদিনে কংগ্রেস দলের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসাবে চিহ্নিত ও প্রতিষ্ঠিত প্রণব মুখার্জী। প্রণব মুখার্জী যে শুধু কংগ্রেস দলের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ ছিলেন তাই নয়, দেশের সংকট মুহূর্তে যে দলই সরকারে থাকুক না কেন সেই দলের, সেই সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর মেধা ও মননকে স্মরণ করে দেশকে সংকট মুহূর্ত থেকে উদ্ধার করতে তাঁর সহযোগীতা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারেননি। পারেননি সেই একই কারণে, তিনি ছিলেন বাঙালি। কংগ্রেস তাঁকে চেয়ারে বসতে দেয়নি কারণ তিনি ছিলেন দল ও সরকারের অলিখিত প্রধান ও ক্রাইসিস ম্যানেজার; আর তিনিই যদি সরকারের প্রধান হয়ে যান তাহলে দলের অন্য গুরুত্বপূর্ণদের কোনো গুরুত্ব থাকে কি? তাই তিনি কোনোদিনই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারলেন না। আর তাই বাঙালী সেন্টিমেন্টকে বশে রাখতে, তাঁর যোগ্যতা ও দক্ষতাকে অস্বীকার করতে না পেরে, তাঁর প্রতি দলীয় অবিচারের ঘায়ে প্রলেপ দিতে খেসারত স্বরুপ তাঁকে রাষ্ট্রপ্রতি হিসাবে মান্যতা দিল তাঁর দল কংগ্রেস।

এইভাবে বাংলা ও বাঙ্গালীর প্রতি চিরকালীন বঞ্চনা হয়ে এসেছে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে দেশের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে।

এই দুই দলই, কংগ্রেস ও সিপিএম, বেশীরভাগ সময়ই দেশকে ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে শাসন করে এসেছে। কেন্দ্রে বেশীর ভাগ সময়টাই এককভাবে শাসন করে এসেছে কংগ্রেস; মাঝে বহু দল নিয়ে গঠিত ইউপিএ সরকারের মূল শক্তি ছিল কংগ্রেস। আবার রাজ্যেও কংগ্রেস শাসন করে এসেছে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই। সিপিএম কেন্দ্রে এই কংগ্রেস দল দ্বারা পরিচালিত ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়ে তাদের শক্তি জুগিয়েছে; আবার রাজ্যে কংগ্রেসকে পরাজিত করে সেই ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ৩৪বছর শাসন করে এসেছে। এদের মিত্রতা আজকের নয়, বহু পুরোনো। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সেই ১৯৭৭ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের জ্যোতিবাবুর সরকারকে কোনোদিনই ক্ষমতা থেকে সরাবার জন্য সচেষ্ট হয়নি। তুমি থাকো রাজ্য নিয়ে আর আমি থাকি কেন্দ্রে বা আমি থাকি রাজ্য নিয়ে তুমি থাকো কেন্দ্রে এই দর্শনে বিশ্বাসী কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্ব পরস্পর পরস্পরকে ক্ষমতাই থাকতে সাহায্য করে এসেছে। কারণ সিপিএম জানতো সর্বভারতীয় স্তরে কোনো সংগঠন বা গ্রহণযোগ্যতা নেই সিপিএমের নেই; আর কংগ্রেস জানতো পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতিবাবুর ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনিক প্রশ্নাতীত দক্ষতা, প্রমোদ দাশগুপ্তের সাংগঠনিক ক্ষমতা ও দক্ষতা এবং পরবর্তী সময়ে জ্যোতিবাবুর দলে ও সরকারে একছত্র আধিপত্য রাজ্যের এত গভীরে প্রবিষ্ট যে সেখানে কংগ্রেসের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য কোনো যোগ্য, দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নেই। আর নেতৃত্ব নেই বলেই রাজ্যে কংগ্রেসের পুনরায় ক্ষমতা লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতার ক্ষীরটুকু তো খেতে হবে না-কি! সুতরাং কংগ্রেস ও সিপিএম উভয়ে ‘তুমি থাকো রাজ্যে আর আমি থাকি কেন্দ্র নিয়ে কিম্বা আমি থাকি রাজ্যে আর তুমি থাকো কেন্দ্র নিয়ে’ এই দার্শনিক মতবাদে বিশ্বাসী হয়েই ক্ষমতা ভোগ করে এসেছে। তাই এরা বহু পুরোনো দোসর। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সুখে দুঃখে এরা পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। আর এখান থেকেই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব আইডেন্ডন্টিটি প্রতিষ্ঠার লড়াই। সেই লড়াইয়ে তিনি সফল।

আজকের এই গণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগীতার নামে সিপিএমের কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধতার ছাড়পত্র আরও একবার দিনের আলো মত প্রমাণ করলো যে দুই দলই যমজ দল। এই দুই দলই, কংগ্রেস ও সিপিএম, যথাক্রমে নেতাজীর প্রতি চরম অবিচার করেছেন, প্রণব মুখার্জী ও জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতবর্ষের প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি নেতাজীর অন্তর্ধান প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের কাছে থাকা সমস্ত গোপন ফাইল জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন যা স্বাধীনতার ৭০বছরে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতৃত্ব করে দেখাতে সাহস পাননি। তিনিই একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি রাজনীতির ময়দানে বিরোধী শিবিরের হয়েও, বাংলার প্রতি অসহযোগিতার কারণে মতভেদ ও অভিমান থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রণব মুখার্জীর রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াননি। তিনিই একমাত্র রজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি পশ্চিমবঙ্গের গতবারের বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের পটভুমিতে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট রাজনীতিতে নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠনে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রশ্নে প্রণব মুখার্জীর নাম বাংলার রাজনীতির আকাশে উঠে এলে তিনি সাদরে গ্রহণ ও স্বীকার করেছিলেন। এই হ’ল কংগ্রেস ও সিপিএম, অন্যদিকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক চরিত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন তাই স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘদিনের সিউডো পলিটিক্সে পোক্ত দুই দোসর কংগ্রেস-সিপিএম বনাম পাঁচ বছরের রাজ্য পরিচালনায় প্রশাসনিক প্রধানের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
(লেখা ২৫শে মার্চ'২০১৬)

No comments:

Post a Comment