Powered By Blogger

Wednesday, April 29, 2015

কবিতাঃ এইতো আমার চাওয়া!!!!!!!

জীবন মানেই মৃত্যু, আজ নয়তো কাল।
কিন্তু মৃত্যু মানেই কি জীবন? জীবনানন্দের মত   
আবার ফিরে আসা? ধানসিঁড়িটির তীরে
কিম্বা কাঁঠাল গাছে ঘেরা, লেবুর গন্ধে ভরা
আমার ছোট্ট স্বপ্ননীড়ে? কিম্বা অন্য কোথাও ?
মৃত্যুর পরেও মানুষের বুকের ভেতরে,
স্বপ্ন রঙ্গীন মনের কোণে আর ঢেউ তোলে
জীবন উথাল পাতাল চেতনার গভীরে।
সেও তো জীবন! সেও বেঁচে থাকা !
মৃত্যুর পরে আবার ফিরে আসা!
অনন্তকাল সৃষ্টি মাঝে অমর হয়ে বাঁচা!
কিন্তু এই আমার আমি অন্য কোনও রূপে,
অন্য কোনও বেশে আবার আসিব ফিরে
জীর্ণ শরীর ছেড়ে স্নিগ্ধ হয়ে পরম স্নেহে
আমার আঁচল ঘেরা মায়ের কোলে
এই বাংলায়, এই দেশে।  
এই-ই তো আমার চাওয়া!
জীবন খুঁজে পাবো হেথায়,
জরা মৃত্যু নাইকো সেথায়!
পরম পুরুষ ডাকছে আমায়, বলছে হেঁকে, 
দুঃখ কষ্ট জ্বালা ক্ষত, জীবন জুড়ে আছে যত   
আমার জীবনটারে ছাঁকনি ক’রে নাও ছেঁকে!  
বিপাক পথে না হারিয়ে ব্যস্ত থেকেও হাজার কাজে
জীবন সবাই নাও খুঁজে এই জীবন মাঝে!
এই-ই তো আমার পাওয়া।
এই জীবনে এই তো আমার চাওয়া।
*********************************

পরমেশ শেষমেশ!!!!!







জীবন আছে, আছে মৃত্যু, চিরসাথী হয়ে পাশে সাথে,
আছে দুঃখ, আছে সুখ, মিলেমিশে রেখে হাত হাতে 
প্রাণ পাখি তাই গান গেয়ে যায় সুর তোলে প্রাণে প্রাণে
রাধা রাধা নাম গেয়ে অবিরাম স্বামীর পরাণ মাতে।।
ফুল ফোটে, ঝরে ফুল, ওঠে ঢেউ-এর পরে ঢেউ,
প্রাণ জাগে, প্রাণ ঘুমায় তবু অন্তহীন প্রাণের ফেউ!
প্রাণময় প্রেমময় করে খেলা সারাবেলা হৃদয়ে চিরদিন
জীবন খুঁজে পাবে সেথায় যদি তাই পেতে চাও কেউ।।
শুরু আছে, আছে শেষ, মাঝে শোক তাপ জ্বালা দ্বেষ,
যায় দিন, থাকে রাত, জীবন জুড়ে শুধু অন্ধকারের রেশ!
বুক ভরা মধু, প্রেম ভরা প্রাণ, ভাল বাসায় আছে ভালবাসার গান
সেই ভাল বাসা জেনো পরমেশ! খুঁজে পেতে হবে শেষমেশ।।

Saturday, April 11, 2015

কেমন আছো হিন্দমোটর?


 
'কেমন আছো হিন্দমোটর' এই প্রশ্নের উত্তরে এশিয়ার একসময়ের বিখ্যাত অটোমোবাইল কোম্পানী হিন্দুস্তান মোটর্সের আকাশে বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় একটাই অস্ফুট কান্নার গোঙানি, 'আমি, আমরা ভালো নেই আমি, আমরা বাঁচতে চাই আমাদের বাঁচাও, বাঁচতে দাও'

২৪শে মে ২০১৪ হিন্দমোটর কারখানায়সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলানো হয় কারখানায়সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক' মানে সাময়িক কর্মবিরতি এই সাময়িক কর্মবিরতির নোটিস নামেসাময়িক' হলেও, আসলে অনির্দিষ্টকালের জন্য, হয়তো বা চিরকালের জন্যও এই কর্মবিরতির নোটিস কারণ, আজ প্রায় ১১ মাস হতে চলল ম্যানেজমেন্টের কারখানাকে খোলার কোনরকম চেষ্টাই চোখে পড়ল না বন্ধ কারখানার ভুক্তভোগী শ্রমিকমাত্রেই জানেন, সরাসরি লক আউট ঘোষণা না করে এই সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের বিজ্ঞপ্তি আসলে মালিকের নিজেদের পিঠ বাঁচানোর আইনি কৌশল৷ কিন্তু হিন্দমোটরের লাঞ্ছিত, অপমানিত, নিপীড়িত, শোষিত শ্রমিকের আম জনতার প্রতি, সরকারের প্রতি প্রশ্ন তারা কি দেশের নাগরিক নন? তাদের পাশে কি দেশের আইন দাঁড়াবে না? তাদের জন্য কি বাবা সাহেব আম্বেদকরের তৈরী সংবিধানে কোনও আইন নেই? দেশের আইন কি শুধু মালিকদের জন্য, শিল্পপতিদের জন্য? দেশের সমস্ত বন্ধ কলকারখানায় মালিক, শিল্পপতিদের ইচ্ছে, মর্জির ওপর শ্রমিক-কর্মচারিদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে? তবে কি সংবিধানে কোথাও ফাঁক থেকে গেছে? মালিক, শিল্পপতিদের হাত থেকে বাঁচবার জন্য শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য কি কোনও রক্ষা কবচের ব্যবস্থা করে যাননি দেশের সংবিধান রচয়িতা বাবা সাহেব আম্বেদকর? তাহলে কি স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরে শ্রমিক-কর্মচারিদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারিদের বেঁচে থাকা বেড়ে ওঠার পক্ষে মালিক, শিল্পপতিদের অনৈতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োজন? কি বলেন দেশের নেতৃবৃন্দ আইন প্রণেতাগণ? না-কি মালিক-শিল্পপতিদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচবার জন্য শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য রক্ষাকবচ হিসাবে আইন রচনার ক্ষেত্রে আইন রচয়িতার কোনও ফাঁক-ফোঁকর ছিল না বা নেই? যদি তাই হয় তাহলে কি আইন রক্ষকই আজ শ্রমিক-কর্মচারিদের কাছে জল্লাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে? কেন্দ্রের বা রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় শ্রম দপ্তর বা শ্রম মন্ত্রীর ভূমিকা, উপস্থিতি কি কার্যত লোকদেখানো? মালিক, শিল্পপতিরাই কি শ্রমিক-কর্মচারিদের বেঁচে থাকা, না থাকার শেষ কথা?

সেই কবে থেকে সম্ভবত ১৯৮০সাল মালিক সি কে বিড়লা হিন্দমোটরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই মালিক তার ম্যানেজমেন্ট কারখানার পরিকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, গাড়ির নূতন মডেল কারখানার আমূল সংস্কারের জন্য নানারকম আশার ঢাক পিটিয়ে এসেছে বছরের পর বছর আর শ্রমিকদের সাহায্য, সহযোগিতা চেয়ে এসেছে আর বিনিময়ে শ্রমিক-কর্মচারী সমস্ত ইউনিয়ন গুলির সহযোগিতা পেয়ে মুনাফার পাহাড় বানিয়েছে ম্যানেজমেন্ট কিন্তু মুখে এক আর কাজে আর এক এই ধোঁকাবাজির নীতির জন্য চলতি সময়ের গাড়ি বাজারের চাহিদা ইচ্ছাকৃতভাবে না মিটিয়ে একটি গাড়ি কারখানাকে টাকাপয়সার অভাব গাড়ির বাজার মন্দা এই অজুহাতে বন্ধ করে দিল, তার দায় কার? শ্রমিক-কর্মচারির? তার দায় এক একমাত্র কোম্পানীর তার দায় শ্রমিক-কর্মচারীর নয়, দায় মালিকের যে সংস্থা ৬০ বছর ধরে শুধু একটি মান্ধাতার আমলের গাড়ির মডেলকেই আঁকড়ে থাকল এবং বাজারে ট্রেকার, কন্টেসা, অ্যাম্বাসাডারের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সময়মতো যোগান না দেওয়ার জন্য বাজার হারানোর দায় স্রেফ তাদের নিজেদের, অন্য কারও নয়৷ বরং সন্দেহ করা যায়, ৬০ বছর ধরে একচেটিয়া গাড়ির বাজার দখল করে রাখার সুবাদে কোম্পানী হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফার পাহাড় সৃষ্টি করে এবং সেই মুনাফার পাহাড়কে নিরাপদে ঘরে ঢুকিয়ে নেবার জন্য এবং আধুনিক নূতন মডেলের গাড়ি তৈরি কম্পোনেন্ট তৈরির সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, যেমন বিশাল ফোর্জিং-ফাউন্ডারী, প্রেস শপ, মেসিন শপ, ইঞ্জিন প্ল্যান্ট ইত্যাদি সমস্ত রকম ইন্ট্রিগ্রেটেড নিখুঁত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এরা পরিকল্পিতভাবেই কারখানা বন্ধ করার জন্যে তৈরি ছিল আগে থেকেই৷ ৩১৪ একর সরকারি জমি দীর্ঘ ৬০ বছর ফাঁকা পড়ে থাকা সত্ত্বেও এখানে শিল্প না তৈরি রে হিন্দমোটর শ্রমিক-কর্মচারীর রক্ত ঘাম দিয়ে গড়ে তোলা মাদার প্ল্যান্ট হিন্দমোটরের মুনাফার পাহাড় থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে চেন্নাই, বরোদা, ইন্দোর বিভিন্ন জায়গায় লগ্নি করে হিন্দমোটরকে রুগ্ন করে তুলল শ্রীরাম গোষ্ঠীর মত কারও কাছে বেচে দেবে বলে এবং শিল্পের জন্য স্বাধীনতার সময়ে বিধানচন্দ্র রায়ের কাছ থেকে বিনা পয়সায় নেওয়া বাংলার জমিতে শিল্প তৈরী না করে সেই বাকী ৩১৪ একর জমি বেচে দিয়ে ফোকটে ২৮০ কোটি টাকা পকেটে ভরে নিয়ে শ্রমিককে আত্মহত্যার দিকে, অন্ধকারে বিদ্যুতস্পৃষ্ট য়ে মরার দিকে, আমার শ্রমিক ভাইয়ের মেয়েকে অন্ধকার জঙ্গল মহল তৈরি করে ধর্ষণ করার জন্য দুর্বৃত্তদের ঠেলে দিল আপনারা বলুন এর জন্য কে দায়ী? হিন্দমোটরের নিপীড়িত লাঞ্ছিত, অপমানিত, ভুখা শ্রমিক? আলো, বাতাস, জল থেকে বঞ্চিত অসহায় শ্রমিক? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী গরীব মানুষের এক একমাত্র আশা ভরসার স্থল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে সমস্ত অসহায় শ্রমিক-কর্মচারী তাদের পরিবারের সকরুণ প্রার্থনা আপনি হিন্দমোটরের কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করুন এর জন্য কি হিন্দমোটরের শ্রমিক-কর্মচারী যারা ৬০বছর ধরে হিন্দমোটরের জন্য মুনাফার পাহাড় তৈরী করে গেছে মুখ বুঝে তারা কি দায়ী? আপনি জিজ্ঞেস করুন মালিকের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে ব্যর্থতা, অটোমোবাইল ইন্ড্রাষ্ট্রি সম্পর্কে বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ, পরিশ্রমী ম্যানেজমেন্টকে সরিয়ে দিয়ে অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ অপদার্থ ম্যানেজমেন্টের ওপর অন্ধ নির্ভরতা আজকের এই অবস্থার জন্য কি মূলত দায়ী নয়? আপনি জিজ্ঞেস করুন কেন হিন্দমোটর কর্তৃপক্ষ ৬০বছর ধরে এই বাংলাকে শুষে নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফা তৈরী করে এই বাংলার কথা, বাংলার মানুষের কথা, নিজেদের শ্রমিক-কর্মচারী তাদের পরিবারের কথা ভাবা বন্ধ করে দিল এবং কি উদ্দেশ্যে? আপনি জিজ্ঞেস করুন মালিক সি কে বিড়লাকে বিধান চন্দ্র রায়ের আমলে শিল্পের জন্য নেওয়া মোট জমির পড়ে থাকা বাকি ৩১৪ একর জমির ওপর কেন শিল্প না গড়ে মাদার প্ল্যান্ট হিন্দমোটরের মুনাফার টাকা চেন্নাই, ইন্দোর, বরোদায় নিয়োগ করা ? আর সেই জায়গার লোকসানের বোঝা হিন্দমোটরের শ্রমিক-কর্মচারিদের যারা ৬০ বছর ধরে রক্ত জল করে, ঘাম ঝরিয়ে মালিকের জন্য মুনাফার পাহাড় তৈরী করেছে তাদের কেন বইতে ? কোন যুক্তিতে? কি অপরাধে? এর জন্য কে বা কারা দায়ী? কেন শ্রম আইনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কর্মচারিদের পক্ষে সুবিচারের ব্যবস্থা থাকবে না?

আজ প্রায় ১১মাস বন্ধ একসময়ের ভারতের একমাত্র এশিয়ার বৃহৎ মোটরগাড়ী তৈরীর কারখানা হিন্দুস্থান মোটর্স এই ১১মাসে আমরা বহির্জগতের সঙ্গে সম্পুর্ণ জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন হিন্দমোটরের শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন সম্পর্কে কি দেখলাম? আজ আমি আপনাদের সামনে হিন্দমোটরের অসহায় শ্রমিক-কর্মচারী তাদের পরিবারের ওপর দিয়ে শয়তানেরঅন্ধেরা কায়েম রহেপরিবেশে ঘটে যাওয়া সেই ভয়ংকর নির্ম্মম, নৃশংস, নারকীয় ঘটনাগুলি তুলে ধরার জন্য কলম ধরেছি আজকের একবিংশ শতাব্দীতেও চতুর্দিকে যখন মিডিয়ার ছড়াছড়ি, য়ে য়ে চ্যানেল প্রতিনিয়ত টিভি পর্দার বুকে ভেসে উঠছে ঠিক সেই সময় অদ্ভুতভাবে এই মিডিয়া, এই চ্যানেলগুলি নীরব এবং যখন আই এস আই এস-এর মত গোপন জঙ্গী সংগঠনের ভয়ংকর কার্যকলাপ পর্য্যন্ত বিভিন্ন মিডিয়া মারফত ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে সেই সময় পাশের বাড়ি হিন্দমোটরের নারকীয় ঘটনাগুলি আশ্চর্য্যভাবে সভ্য জগতের কাছে আজও অজানা, আপনারা কেউ তা জানেন না! আর তাই সভ্য জগতের ঘুমিয়ে থাকা সভ্য মানুষদের কাছে তা তুলে ধরার জন্য আমি কলম ধরেছি হিন্দমোটরের শ্রমিক-কর্মচারী আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছে,
বন্ধু বাড়িয়ে দাও তোমার, তোমাদের বলিষ্ঠ হাত; আমরা তোমার, তোমাদের হাত রে বাঁচতে চাই

আপনারা কেউ কেউ হয়তো বা জানেন.................... ...............
) হিন্দমোটরের শ্রমিক তপন রায় শর্মার মৃত্যুর কথা হিন্দমোটরের শ্রমিক তপন রায় শর্মার মৃত্যু আমাদের শিখিয়েছে আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েদেরআচ্ছে দিন রহি হ্যায়’-এর দেশে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখতে নেই ২৪শে মে ২০১৪ "সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিসের পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তপনবাবু প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন৷ মৃত্যুর দু'দিন আগে স্ত্রী এবং মেয়েকে বেলুড়ে বাপের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন তিনি৷ তারপর ২৭শে ডিসেম্বর বাড়িতে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি মৃত্যুর দিন সকালে বাড়ি এসেছিল তপনবাবুর কন্যা সেঁজুতি সকালে নিজের হাতে বাবাকে জলখাবার খাইয়ে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল তপনবাবুর কন্যা সেঁজুতি৷ পরে বাড়ি ফিরে আত্মহত্যার খবর জানতে পারে সে৷ ৮৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা আমার আপনার মত সাধারণ গরীব ঘরের মেয়ে সেঁজুতিকে মেডিকেলে পড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তপনবাবু, সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় আজ অন্ধকার ঘরের কোনে পিতৃহারা মেয়ে সেঁজুতি একমাত্র সম্বল অসহায় মা-কে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেআচ্ছে দিন রহি হ্যায়’-এর দেশে আমরা কি এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম? ‘আচ্ছে দিন রহি হ্যায়’-এর স্বপ্ন ফেরী করার ফেরিওয়ালা কি হিন্দমোটরের মালিককে, ম্যানেজমেন্টকে জিজ্ঞেস করবে না একসময়ের এশিয়ার বিখ্যাত স্বয়ংসম্পুর্ণ মোটরগাড়ি তৈরীর কারখানার শ্রমিককে কেন আত্মহত্যা করতে হয়? কেন শ্রমিক পরিবারের গরীব কন্যার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার য়ে যায়? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মালিক সি কে বিড়লা তার নেতৃত্বে তৈরী অটোমোবাইল ইন্ডাষ্ট্রী সম্পর্কে অযোগ্য, অপদার্থ, অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ম্যানেজমেন্টকে জিজ্ঞেস করুক কেন, কিসের জন্য, কার দোষে ১৯৮০ সালের পর কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীদের তাদের পরিবারের ওপর এমন অন্ধকার নেবে এলো? কেন নির্দোষ, নিরপরাধ শ্রমিক-কর্মচারি ন্যয্য ক্ষতিপূরণ পাবে না?

) ২৪শে মে ২০১৪ "সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিসের পর হিন্দমোটর কারখানার বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ফলে কোয়ার্টার শ্রমিক মহল্লার কয়েকশো মানুষকে আজ চূড়াম্ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিদ্যুৎ না থাকায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে হচ্ছে৷এই অন্ধকার গরমে কারও পরীক্ষা চলছিল, আবার কারও কারও সামনে পরীক্ষা ছিল আলোর অভাবে পড়াশুনার চরম ক্ষতির শিকার আজ অসহায় ছাত্রছাত্রী মিলছে না পানীয় জল৷জলের জন্য রান্নার অসুবিধে হচ্ছে স্নানের জল, কাপড় কাচার জলের অভাবে শ্রমিক মহল্লার মানুষ আজ দিশেহারা আলো, জল না থাকায় ঘরের বয়স্ক পুরুষ মহিলারা অনেকেই আজ অসুস্থ প্রতিদিন এই অবস্থা ভয়ংকর রুপ ধারণ করছে আজ আমরা কোথায় আছি? এর পরেও কি নরককুন্ড বলে অন্য কোথাও অন্য কোনও জায়গা আছে না-কি? বলতে পারেন আপনারা কেউ? এর কি কোনও সুষ্ঠ সমাধান নেই? কেউ কি নেই এদের পাশে দাঁড়াতে পারেন? এটাই কিআচ্ছে দিন রহি হ্যায়’-এর নমুনা?

) কারখানা বন্ধ হওয়ার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সন্ধ্যে নাবার সঙ্গে সঙ্গে নেবে আসে কারখানার বিস্তির্ণ অঞ্চল জুড়ে গাঢ় অন্ধকার ভয়ংকর ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা কলোনীর শ্রমিক পরিবার, যে শ্রমিক এই কারখানার জন্য একদিন তার জীবন যৌবন সঁপে দিয়েছিল সেই শ্রমিক পরিবারের ওপর নেবে এলো শয়তানের ছোবল হিন্দমোটর কারখানা চত্বরের শয়তানেরঅন্ধেরা কায়েম রহেপরিবেশে শ্রমিকের মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রীর ওপর গণধর্ষণ মেয়ের সন্মান বাঁচাতে গিয়ে নির্ম্মম ভাবে পেটানো বাবাকে হিন্দমোটরের জন্য, কারখানা মালিকের জন্য শ্রমিকের রক্ত জল করার এই প্রতিদান? কারখানা ম্যানেজমেন্টের ভুখা পেটে মেরে ফেলার চক্রান্তের সাথে সাথে ঘরের মা-বোনেদের ইজ্জৎ লুটে নেওয়ার জন্যই কি আমরা আচ্ছে দিন রহি হ্যায়’-এর অপেক্ষায় ছিলাম? শ্রমিকের ঘরের মেয়ের ইজ্জৎ আজ অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে লুটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্ত, কোন স্বর্গরাজ্যে আমরা বাস করছি? এর জন্য কে দায়ী? কেউ কি আছে জিজ্ঞেস করবে বেইমান অকৃতজ্ঞ ম্যানেজমেন্টকে, মালিককে? যে মালিকের জন্য এই শ্রমিক-কর্মচারী মালিকের সাহায্য সহযোগীতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মালিকের জন্য মুখ বুঝে বছরের পর বছর হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফার পাহাড় তৈরী করে দিয়েছিল, মালিক সি কে বিড়লার জন্য জীবন বাজী রেখেছিল সেই শ্রমিকের কন্যার অসহায় কান্না কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন মালিক সি কে বিড়লা? আপনি যে ভয়ংকর অন্ধকারের রাজত্ব তৈরী করেছেন আপনার হিন্দমোটরের শ্রমিক কলোনিতে সেই অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে আপনার জন্য জীবন সঁপে দেওয়া শ্রমিকের কন্যার আপনার দুর্বৃত্তদের দ্বারা লুট হয়ে যাওয়া ইজ্জৎ কি আপনি ফিরিয়ে দিতে পারবেন? সন্ধ্যে নেবে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ংকর ঘুটঘুটে অন্ধকারে গোটা কারখানা কলোনি চত্বর অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য য়ে ওঠে কথা আপনি আপনার ম্যানেজমেন্ট জানা সত্ত্বেও আপনারা আজ নির্মম নিষ্ঠুরভাবে নীরব! মানবিকতা, সহানুভূতি, দয়া, মায়া আজ আপনাদের বিত্ত, বৈভব, ঐশ্বর্যের পায়ের তলায় পিষ্ট আশ্চর্য কেউ নেই এর বিচার করার! কিন্তু আপনি আপনার ম্যানেজমেন্ট জেনে রাখুন শ্রমিক-কর্মচারিদের পাশে আজ কেউ নেই কথা ঠিক, কিন্তু একজন সব দেখছেন এর বিচার তাঁর দরবারের জন্য তোলা রইল আপনারা ঈশ্বর বিশ্বাসী তাই একথা বললাম

) হিন্দমোটর কলোনির প্রিন্স সিং (১৭) নামে হিন্দমোটর হাই স্কুলের ইলেভেন কমার্সের এক ছাত্র কারখানা চত্বরে ঘোর অন্ধকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বয়ান অনুযায়ী কারখানা চত্বরে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়আচ্ছে দিন রহি হ্যায়’-এর স্বপ্ন ফেরীর সময়ে সম্ভাবনাময় এক ছাত্র কি চেয়েছিল? সে কি চেয়েছিল জীবনের শুরুতেই তার জীবন প্রদীপ নিভে যাক? সে কি চেয়েছিল যেখানে যে আলো ঝলমলে পরিবেশে একদিন তার শৈশব, কৈশোর কেটেছে, শৈশব, কৈশোর কাটিয়ে যৌবনে পা দিয়েছে সেই খানেই সেই পরিচিত মাটির বুকেই গাঢ় ঘুটঘুটে অন্ধকারে বিদ্যুতে পা জড়িয়ে অসহায়ভাবে নির্ম্মম মৃত্যু বরণ করতে হবে? সে কি জানতো, যে কারখানার জন্য তার পিতা শ্রম দিয়েছে, ঝড়িয়েছে ঘাম রক্ত সেই কারখানার কর্তৃপক্ষ তার জীবনের ওপর সারা জীবনের জন্য চোর সীলমোহর দিয়ে দেবে? যদি সে মারা না যেত তাহলে ১৭বছর বয়সের অল্পবয়সী এক সম্ভাবনাময় ছাত্রের জীবনে পুলিশ, জেল, হাজত, কোর্টকাছারির ছোঁয়ায় নেবে আসতো ভয়ংকর ঘোর অন্ধকার! কে দিত তখন তাকে সাহারা? সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দিতে বাড়িয়ে দিত কি কেউ হাত? একজন নিরীহ সরলমতি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় ছাত্রকে মিথ্যা অপবাদে ভবিষ্যতের criminal বানাবার জন্য দায়ী কে? হিন্দমোটরের অমানবিক ম্যানেজমেন্ট কি এর দায় এড়াতে পারে? ১৭বছরের ছাত্র প্রিন্স সিং-এর মত ছেলে আমার, আপনার, ম্যানেজমেন্ট, পুলিশের ঘরে নেই? আর যদি সে চুরি করতে যাওয়ার কারণেই তার মৃত্যু ঘটে থাকে তাহলে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? দায় কার? দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ, বেতন অন্যান্য পাওনা বন্ধ, আলো বন্ধ, জল বন্ধ, স্কুলের ফিস বন্ধ, ঘরে খাবার বন্ধ অবস্থায়আচ্ছে দিন রহি হ্যায়স্বপ্নের ফেরিওয়ালার কাছে প্রশ্ন, ম্যানেজমেন্টের কাছে প্রশ্ন, সমাজের সচেতন, অনুভুতিসম্পন্ন, লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষের কাছে প্রশ্ন, সমস্ত রাজনৈতিক দল নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশ্ন আপনি, আপনারাই বলুন স্কুল, কলেজ, ভবিষ্যৎ উন্নত জীবন দূরে থাক যদি কেউ বেঁচে থাকার তাগিদে, একমুঠো অন্নের জন্য, একগ্লাস জলের জন্য চুরির পথ বেছে নেয় তাহলে সে চুরি কি চুরি? সে চুরি কি প্রাণ দানের মত মহৎ মহার্ঘ নয়? তাহলে যে বিদেশে পাচার হওয়া কালো টাকা রয়েছে সেই বিপুল টাকা কি চুরির টাকা নয়? সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির হিসেবে এর পরিমাণ ১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিজেপি নেতা সুব্র্যহ্মণম স্বামীর দাবি বিদেশে ১২০ লক্ষ কোটি কালো টাকা রয়েছে বাবা রামদেবের দাবি, কালো টাকার পরিমাণ ৪০০ লক্ষ কোটি টাকা অন্যদিকে, সরকারের হিসেবেও তারতম্য রয়েছে ২০০৬- কেন্দ্রের প্রকাশিত শ্বেতপত্রে জানানো হয়েছিল, বিদেশে ২৩ হাজার ৩৭৩ কোটি কালো টাকা রয়েছে ২০১০- এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় হাজার ২৯৫ কোটি টাকা এখন সুইত্জারল্যান্ডের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, সেদেশে ভারতীয়দের ১৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে ২০১২ তে সিবিআই প্রধান জানিয়েছিলেন, বিদেশের ব্যাঙ্কগুলিতে কালো টাকার পরিমাণ ২৯. লক্ষ কোটি টাকা একে কি বলা হবে? ‘আচ্ছে দিন রহি হ্যায়’-এর রুপকার, প্রবক্তারা কি বলবেন? এগুলি কি চুরির টাকা? এরা কি চোর? এরা আজ কোথায়? এরা কি চুরির অপবাদ নিয়ে ১৭বছরের ছাত্র প্রেম সিং-এর মত ভোরেই বিকেলের ফুলের মত ঝরে পড়েছে? প্রেম সিং-এর অতৃপ্ত আত্মা আজ এখানে আপনাদের মাঝে দাঁড়িয়ে জানতে চাইছে আপনাদের কাছে, এত তাড়াতাড়ি পৃথিবী থেকে চলে যাবার জন্য তার অপরাধ, দোষ কোথায়? আপনারা কি বলবেন কিছু? হে রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা, নজরুলের দুই ফুলের বাংলা, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, সুকান্তের প্রতিবাদী বাংলা, নেতাজীর বীর বাংলা তোমরা কি শুনতে পাচ্ছো কিশোর প্রেম সিং, কন্যা সেঁজুতি ইজ্জৎ হারানো মেয়ের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ? তোমরা কিছু বলবে না? তপন রায় শর্মা প্রেম সিং-এর আত্মা, ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যাওয়া তপন রায়ের কন্যা সেঁজুতি, কিশোর প্রেম সিং-এর মা-বাবা, জীবনের শুরুতেই ইজ্জৎ হারিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে কলোনীর জীবনের ঘোর অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে রাখা ধর্ষিতা কিশোরী সবাই জানতে চাইছে এটাই কি তোমাদের সোনার বাংলার ভবিতব্য, বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসভূমি? আর সাধারণ মানুষ মালিক সি কে বিড়লার কাছে জানতে চাইছে প্রেম সিং-এর অকাল মৃত্যুর জন্য, আত্মঘাতী শ্রমিক তপন রায়ের মৃত্যুর জন্য, কন্যা সেঁজুতির ডাক্তারি পড়ার স্বপ্নভঙ্গের জন্য, জীবনের শুরুতেই কিশোরীর ইজ্জৎ হারানোর জন্য বিচার কি হবে? কি হবে ক্ষতিপূরণ?

) হিন্দমোটরের পুঞ্জিভূত লোকসান নীট সম্পদের চেয়ে বেশী বলা হয়ে থাকে এই কারণে হিন্দমোটর কারখানা বিআইএফআর- চলে গিয়েছে তাহলে ১৫ই সেপ্টেম্বর ২৫শে ফেব্রুয়ারি পরপর দুদিন শুনানী থাকা সত্ত্বেও কেন হাজির থাকলো না কোম্পানী? কারখানাকে পুনরায় চালু করার জন্য সম্ভাব্য লগ্নীকারী যারা এই সংস্থায় টাকা ঢালতে পারবে, বাজারে নতুন মডেলের গাড়ী আনতে পারবে তার খোঁজ করছে কোম্পানী সেই ১৯৮০সাল থেকে এই খোঁজ কতদিন চলবে? এই খোঁজের নামে ধোঁকাবাজির গোঁজ কতদিন দিয়ে যাবে কোম্পানী? অ্যাম্বাসাডার গাড়ীর মাইলেজ বাড়াবার জন্য নতুন ইঞ্জিনের জন্য ফিয়াট কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তির কথা শুনিয়ে আসছে দিনের পর দিন এই চুক্তি কবে হবে? লগ্নীকারী খোঁজের নামে শ্রমিক-কর্মচারীকে খোঁজা করার নিষ্ঠুর চক্রান্ত কতদিন চলবে? কারখানা সংস্কারের অজুহাতে ৩১৪ একর সরকারি জমি বেচে দিয়ে ২৮০কোটি টাকা গায়েব করে, শ্রমিক-কর্মচারিদের কারখানা থেকে খেঁদিয়ে দিয়ে সেই কারখানা বা কারখানার জমি বেচে মুনাফা ঘরে তুলে নিয়ে যাবার চক্রান্ত নিশ্চিন্তে আর কতদিন সফল হবে? কেউ কি বলতে পারে বাংলার বুকে শ্রমিক নিধন যজ্ঞ আর কতদিন চলবে? কেউ বলতে পারে না আমরা সবাই কুম্ভকর্ণের মত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কারণ পুরাণ মতে এখন কলি, ঘোর কলি!!!!!!!!!!!!!!!!!