Powered By Blogger

Saturday, October 28, 2023

কবিতাঃ এইভাবে কি বেঁচে থাকা যায়।

এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই মিথ্যের বেসাতি,
শুধুই কথার হাই।
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই সেজে চলা রঙচঙে সাজে ,
শুধুই বাঁ হাতের খোলতাই!
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই মরার মতন বেঁচে থাকা!
যেন বাহারি প্লেটে সাজানো ফিস্ফ্রাই!
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই লোভ লালসার বিষাক্ত নিঃশ্বাস
শুধুই জীবন করে আইঢাই।
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই বিশুরা মরে শিশুপালেদের হাতে
বিচার নীরবে কাঁদে হায়।
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই ঝগড়াঝাটি কথা কাটাকাটি
শুধুই ঘরে বাইরে ইগোর লড়াই।
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই মিথ্যে প্রেম, মিথ্যে ভালবাসা
শুধুই গিরগিটির মতো রঙ বদলায়!
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই ঘরেবাইরে স্কুল-কলেজে
অশিক্ষা কুশিক্ষা;
শুধুই মিথ্যে শিক্ষার বড়াই।
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই নীতিকথা, কথার স্রোতে ভাসা
আচারে আচরণে করার বেলাতে কেউ নাই।।
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
শুধুই বেইমানি আর নেমকহারামি
পদে পদে অকৃতজ্ঞতার দূষিত হাই।
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
তবুও বেঁচে আছি বেঁচে থাকবো বলেই
একদিন কালাপাহাড় হ'য়ে আসবো ফিরে
এই বিশ্বাসে।

Friday, October 27, 2023

প্রবন্ধঃ শুরু হ’ল পথ চলা, পাশাপাশি শুরু হ’ল কথা বলা!

বিদেশের ব্যাঙ্কে কালো টাকা গচ্ছিত রাখা আটজনের নামের তালিকা প্রকাশ করল কেন্দ্র। সরকারের দাবি, একে একে সব নামই প্রকাশ্যে আনা হবে। লোকসভা ভোটের প্রচারপর্বে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনা হবে। সেই পথে একধাপ এগোল মোদী সরকার। সামনে এল আটটি নাম। কালো টাকা মামলায় ওই আটজনের নাম সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে কেন্দ্র। এর মধ্যে আছেন, ডাবর গ্রুপের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী অধিকর্তা প্রদীপ বর্মণ, ব্যবসায়ী পঙ্কজ চিমনলাল লোধিয়া, এবং রাধা এস টিম্বলো সহ টিম্বলো পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য।
বিদেশে পাচার হওয়া কালো টাকার পরিমাণ সম্পর্কেই বিতর্ক রয়েছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির হিসেবে এর পরিমাণ ১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। বিজেপি নেতা সুব্র্যহ্মণম স্বামীর দাবি বিদেশে ১২০ লক্ষ কোটি কালো টাকা রয়েছে। বাবা রামদেবের দাবি, কালো টাকার পরিমাণ ৪০০ লক্ষ কোটি টাকা। অন্যদিকে, সরকারের হিসেবেও তারতম্য রয়েছে। ২০০৬-এ কেন্দ্রের প্রকাশিত শ্বেতপত্রে জানানো হয়েছিল, বিদেশে ২৩ হাজার ৩৭৩ কোটি কালো টাকা রয়েছে। ২০১০-এ এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৯ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এখন সুইত্জারল্যান্ডের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, সেদেশে ভারতীয়দের ১৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। ২০১২-তে সিবিআই প্রধান জানিয়েছিলেন, বিদেশের ব্যাঙ্কগুলিতে কালো টাকার পরিমাণ ২৯.৫ লক্ষ কোটি টাকা।
বিদেশে পাচার হওয়া কালো টাকার পরিমাণ যাই হোক না কেন সাম্প্রতিক টিভি সাক্ষাৎকারে কালো টাকা সম্পর্কিত এক আলোচনায় বিশেষজ্ঞদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে কালো টাকা উদ্ধার হ’লে দেশের মোট জনগণের মাথা পিছু এক একজনের ভাগে পড়বে মোট ১৫লক্ষ টাকা! যদি সত্য হয়!!!!!!!!!!!!!
হে ঈশ্বর! একদিন সুন্দর সকালে ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে যদি দেখে আম চাষার দল তাদের প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ক’রে জমা পড়েছে তাহ’লে আঁতকে উঠে হার্ট ফেল করবে না-তো চাষার দল! কেননা আম চাষার মনে সুপ্ত এক বিশ্বাস জমা হয়েছে তাহ’লে কি এই জন্যই দেশের প্রতিটি পরিবারকে ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৮শে আগস্ট’১৪ নতুন দিল্লিতে শুরু করেন উচ্চাকাঙ্খামূলক ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’? এইজন্যই কি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রতিটি পরিবারকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা ও দূর দুরান্তের দুর্গম এলাকার মানুষকেও ব্যাংক পরিষেবার আওতায় আনার কথা ঘোষণা করেছিলেন!? যদি সত্যই এমন কখনো হয় তাহ’লে এর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি চাষার শারীরিক সুস্থতার কথাও চিন্তা করতে হবে মোদী সরকারকে যাতে ১৫ লক্ষ টাকার খবরে প্রতিটি হৃদয় যেন অক্ষত থাকে।
যদিও আশায় মরে চাষা তবুও তো আশা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে চাষারা! ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে দেখতে যদি কেটে যায় আম চাষার জীবন যাক না, ক্ষতি কি!? এমনিতেই তো জ্যান্ত মড়া হ’য়ে বেঁচে আছে আম চাষার দল দেশ জুড়ে, আর স্বপ্ন ফেরী ক’রে যায় বছর বছর রাজনীতির ফেরীওয়ালারা রং বেরঙের স্বপ্ন নিয়ে জ্যান্ত মড়াদের দরজায় দরজায়! হয় সুইসাইড নয় রঙ্গীন স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া আম চাষারতো আর দ্বিতীয় কোন অপশান নেই! যে কোন একটা তো বেছে নিতে হবে! সুইসাইড তো জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া তাই ১৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে না হয় থাকুক আম চাষার দল, যদি কোনদিন বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে!
একদিকে যেমন কালো টাকা ফিরিয়ে আনা নিয়ে শুরু হ’ল পথ চলা, পাশাপাশি শুরু হ’ল কথা বলা! তালিকা সামনে আসতে না আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। দেখা যাক বিড়ালের ভাগ্যে কবে শিকে ছেঁড়ে!
ক্রমশ।
(লেখা ২৮শে অক্টোবর'২০১৪)

কবিতাঃ দিও না মোরে তাড়া।

তুমি সৃষ্টি তুমি স্থিতি তুমিই জানি লয়!
ইহকাল পরকাল সবকালে
প্রভু তুমিই যে আমার আলয়।
আঁধার রাতে ঘরের কোণে
ঘুম আসে না,
তাই তো জেগে রই
পরাণ মাঝে নিশি ডাকে
নিঝুম রাতের ফাঁকে ফাঁকে
কোথায় তুমি সই!?
রাত যত বাড়ে তত বাড়ে ভয়
মন বলে, কি জানি কি হয়! কি হয়!
কোথায় তুমি প্রভু? ডাকি নাই কভু
এই কি জীবন!?
দিন হয় গত পাপ হয় ক্ষয়।
কত ডাকি তোমারে দাও না তবু সাড়া
দিন যায় ঢলে পশ্চিমার কোলে
মন বলে, একেলা যেতে লাগে ভয়
তুমি ছাড়া ওগো দয়াময়
আমি যে দিশেহারা। তুমি যে অভয়!
পরাণ বলে, ওগো তুমি যেও না,
যেও না সজনী বাকী আছে রজনী
থাকো মোর সাথে, ধরা দাও মোরে
যাবার তরে দিও না মোরে তাড়া,
ওগো দিও না মোরে তাড়া।
(লেখা ২৭শে অক্টোবর ২০১৭)




Tuesday, October 24, 2023

প্রবন্ধঃ ভয়ংকর ধ্বংসের দিন সমাগত।

বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মের উপর আঘাত একটা সত্য উন্মোচিত করলো! প্রকৃত হিন্দু, প্রকৃত মুসলমান, প্রকৃত খ্রিষ্টান ইত্যাদির মধ্যে কোনও বিরোধ নেই, ছিলও না কোনদিন তা আবার প্রমাণ করলো। প্রমাণ করলো ধর্ম্মের নামে অধর্ম্ম আজ কতটা শক্তিশালী! ক্ষমতা দখলের লোভ আজ ধর্ম্মকে কি প্রচন্ডভাবে গ্রাস করেছে! অনেক হিন্দুর মধ্যে প্রকৃত হিন্দু, প্রকৃত মুসলমান, প্রকৃত খ্রিষ্টান ইত্যাদির মধ্যে যে কোনও বিরোধ নেই, ছিলও না কোনদিন এই জ্ঞান যে নেই তা নয়, আছে কিন্তু তারা সত্য জানা সত্ত্বেও এই পথে হাঁটে না কারণ ক্ষমতা দখল, অর্থ লোভ, কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখা ইত্যাদি তাদের উন্মাদে পরিণত ক'রে রেখেছে আর তাই হিন্দু নয় তারা। ঠিক তেমনি এই একই বিষাক্ত বিষয় বা কথা মুসলমান, খ্রিষ্টান ইত্যাদি সব ধর্ম নয় সব সম্প্রদায়কে বিষাক্ত ক'রে তুলেছে। আর তাদের প্রতিনিধিরাও এই একই দোষে ভয়ংকর রকমের দুষ্ট। তাই এরাও কেউ মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ নয়। আর সব সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ এর জন্য দায়ী। এরা কোনওদিনই চায় না প্রকৃত জ্ঞান লাভ ক'রে প্রকৃত হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, ইত্যাদি ধর্ম্ম মতের যিনি প্রবক্তা অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বর যে বারবার আসেন মানুষের শরীরে এটা জানতে ও তাঁর মনের মত হ'য়ে উঠতে। এবং যারা জীবন বাজি রেখে এই 'সত্য' প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধেই এই সাধারণ সীমাহীন ভাঙাচোরা মানুষই সত্য প্রচারে বাধার শক্ত ঢাল হ'য়ে দাঁড়ায়। আর তাই সুযোগ হ'য়ে দাঁড়ায় ধর্ম্মের নামে, ঈশ্বরের নামে হামলাকারী, দুষ্কৃতকারী দাঙ্গাকারীদের। বরং এই সাধারণ মানুষ যুগ যুগ ধরেই চায় শরীরে-মনে-প্রাণে অন্তরে বাহিরে সীমাহীন অজ্ঞ ও ভাঙ্গাচোরা হ'য়ে থাকতে। তারা চায় 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতার অদ্ভুত জীব হ'য়ে থাকতে। কিন্তু তা যে হয় না, গায়ে আঁচ যে লাগবে শুধু নয় একদিন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক ক'রে দেবে পরিবার পরিজন সহ সমস্ত পরিবেশ। সেই সামান্য সহজ কথাটাও কি হিন্দু, কি মুসলমান, কি খ্রিষ্টান, কি বৌদ্ধ কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ বুঝতে পারে না। যুগ যুগ ধ'রে কুসংস্কার এদের হাতেপায়ে বেড়ি পড়িয়ে রেখেছে বংশপরম্পরায়। তাই আগামী ভয়ংকর ধ্বংসের দিন সমাগত। সীমাহীন বিকৃত হিংস্র মস্তিষ্কের হানাহানি কাটাকাটিতেই মনুষ্যজাতি বিলুপ্ত হ'য়ে যাবে একদিন।
(২৪শে অক্তোবর' ২০২১)

সৎসঙ্গীদের প্রতি ---------

 

(লেখা ২৪শে অক্টোবর'২০১৭)

Sunday, October 22, 2023

আওয়াজঃ গণতন্ত্র কা চৌথা স্তম্ভ!

দেশ মে হো রহা হ্যায় ক্যা!? মিডিয়াবালো আপস মে লড় রহা হ্যায়!? সরকার আউর মিডিয়া কে বিচ মে লড়াই কিউ!? কৌন সচ হ্যায়!? কৌন সহি আউর কৌন ঝুটা হ্যায়!? গণতন্ত্র কা চৌথা স্তম্ভ মিডিয়াবালো আপসমে লড় কর আজ গণতন্ত্র কা, সচ কা গলা দাবা রহা হ্যায়!? কিস কো বিশোয়াস কঁরু আউর কিস কো ভরসা!? সচ কো কৌন উগোলবায়েগা!?
আজ সবসে বড়া সওয়াল ইয়ে হ্যায় কি দেশমে সচমুচ গণতন্ত্র কা চার স্তম্ভ 1.আইনসভা, 2.বিচার বিভাগ, 3.আমলাতন্ত্র, 4.গণমাধ্যম কৈ স্তম্ভ মে এক ভি 'আদমি' নেহি হ্যায়!? দেশ সচমুচ 'আদমি' শূন্য হো গ্যায়া!? গণতন্ত্র কা চার স্তম্ভ মিলকর খাট্টা মিঠা, অমৃত-জহর জো খিলায়েগা ওহী খাউনগা!? জো দিখায়েগা ওহী দেখুঙ্গা!? জো শুনায়গা ওহী শুনুঙ্গা!? আপনা আপনা সোচ, বিচার, বুদ্ধি, শিখসা সব খতম!?
ইসে কহেতি হ্যায় কলযুগ!?!?!?
আজ দেশভর স্কুল, কলেজ, শিখসা প্রতিষ্ঠান সে হর সাল লাখো করোর ছাত্র পাস করকে নিকলতে হ্যাঁয়, উসমে বহুত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ভি হ্যাঁয় তো সব ক্যা কানাইয়ালাল বন গ্যায়া!? বনো তুম সব, জো মন চাহতা হ্যায় লেকিন ৭০সাল তক ল্যাংড়া রহা হুয়া দেশ কো আপনে পায়ের পর খাড়া হোনে কে লিয়ে কমসে কম মিনিমাম সহায়তা করো! কিউকিঁ ভারতবাসী হোনে কে নাতে তুমকো থোড়া বহুত ডিউটি হ্যায়! বাস! ইয়হী মাঙ্গ হ্যায় তুমসে ল্যাংড়া দেশবাসী কা!
(লেখা ২৩শে অক্টোবর'২০২০)

কবিতাঃ হে মানব...............

কি এক অসম্ভব দ্রুতগতিতে, তোমরা কেউ কখনো
দেখেছো কি, কি নোংরা হয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ পৃথিবীটা?
ময়লার মোটা চাদর জড়িয়ে সর্ব্বাঙ্গে, দেখেছো কি,
কি নির্বিকার নিশ্চলতায় দাঁড়িয়ে আছে নির্বাক
সুকান্তের ‘অবাক পৃথিবী’! আমার আর্য ভারতবর্ষ!
নির্লজ্জতার ধ্বজা উড়িয়ে পৃথিবী এগিয়ে চলেছে
সভ্যতা আর মানবতাকে ধ্বংস করবে বলে চিরতরে
দারুণ আহাম্মক এক দৃঢ়তায়; দেখেছো কি তুমি
সেই পৃথিবীর আহাম্মক দৃঢ়তার স্থূল কদর্য রুপ!?
আর আর্য ভারতবর্ষ? তার অতীত ঐতিহ্য, উৎকর্ষ
ক’রে বলাৎকার এগিয়ে চলেছে কৃত্রিম দৃপ্ত ভঙ্গিমায়!
এগিয়ে চলেছে প্রজ্ঞার ঔদ্ধত্বে টলোমলো পায়
সর্বজ্ঞকে অস্বীকার, জীবন্ত ঈশ্বরকে ক’রে উপেক্ষা
বিজ্ঞান নির্ভর এক মানব সভ্যতা গড়ে তুলবে বলে;
দেখেছো কি সেই কৃত্রিম দৃপ্ত ভঙ্গিমায় হেঁটে চলা
টলোমলো পদক্ষেপ? দেখেছো কি তার অতীত গরিমা
হারানো বিমর্ষ মলিন ফেসিয়াল মুখ? চাকচিক্যে ঢাকা,
সেদিনের ইস্পাতসম বজ্র কঠিন, আজকের কঙ্কাল বুক?
হয়তো দেখেছো, হয়তো দেখোনি কিম্বা হয়তো বা
দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছো গভীর এক
আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ‘আমার গায়ে আঁচ না লাগে
ফুরিয়ে যাবে মামলা’ ভয়ংকর স্বার্থপর মানসিকতায়!
কিন্তু যা তুমি নিশ্চিত দেখোনি, বোঝোনি, জানোনি
‘না মানার’ দাম্ভিক অম্ল মানসিকতায় দগ্ধ হয়ে, যা’
ফল্গু ধারার মত বয়ে চলেছে পৃথিবীর বুকের গভীরে,
সৃষ্টির গর্ভে, তা’ মানব জাতি ধ্বংসের কৃষ্টি-সংস্কৃতি!
দেখেছো কি তা’ কখনো মনশ্চক্ষে? কান পেতে কখনো
শুনেছো কি সেই ধ্বংসের কলধ্বনি যেখানে জীবন
হারিয়ে জীবন মৃত্যুকে করেছে সাথী? টের পেয়েছো কি
কখনো, অপূর্ণ প্রজ্ঞার ভারে ন্যুব্জ হে দিকশূন্যপুরের
মানব, মৃত্যুর অট্টহাস্যে কম্পিত পৃথিবীর কম্পন?
অনুভব করেছো কি অহংকারী প্রজ্ঞার উন্মত্ত রুপ!?
‘কল্পনা’ কখনো ডানা মেলে ধরা দিয়েছে কি তোমার
প্রজ্ঞার আঙিনায়? ‘ডাইনোসর’ হবার স্থির নিশ্চিত
সম্ভাবনা নিয়ে যে এগিয়ে চলেছে মানব জাতি হায়!
হে মানব! প্রজ্ঞার অহংকারের জামাটা খুলে উদোম
দাঁড়াও এসে একটিবার, বসো পুর্ণতার পায়, করজোড়ে
নতজানু হয়ে প্রার্থনায় চেয়ে নাও বহির্মুখীন প্রবৃত্তি
মুক্তির চাবি! বৃত্তিভেদী টানের উপায়! পূর্ণতা লাভের
অভীষ্ট পথ! পূর্ণতার জীবনে রেখে নিজের অপূর্ণ জীবন
অর্থ, মান, যশে মদমত্ত হে অসম্পূর্ণ মানব একটিবার
শুধু একটিবার দেখে নাও নিজেকে আর নিজের অবস্থান!
আর খুঁজে নাও, চিনে নাও, জেনে নাও শ্রদ্ধাবনত মস্তকে
পূর্ণতার তকমা নিয়ে নেবে আসা তথাগত ‘সর্বজ্ঞ’কে
‘জানা-মানা’ আর ‘মানা-জানা’র তত্ত্বে রেখে বিশ্বাস।
হে অপূর্ণ! ‘জীবন’ খুঁজে পাবে সেথায় যেথায় আছে 'পূর্ণ'।
(লেখা ২২শে অক্টোবর'২০১৫)

Wednesday, October 18, 2023

প্রবন্ধঃ বতের ভাত ওরফে ব্রতের ভাত।

আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়
যে বর মাঙ্গে সেই বর পায়।
আজ আশ্বিনের শেষ দিন, কাল আসছে কার্তিকের প্রথম দিন।
এই ব্রত সম্পর্কে নীচে বিস্তারিত দেওয়া আছে। চলতি কথায় আমরা বলতাম বতের ভাত। আমরা পূর্ব বাংলার চট্টগ্রামের লোক। মা-বাবা চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতো নিজেদের মধ্যে। আর আত্মীয়স্বজন সবসময় দিনেরাতে কেউ না কেউ আসতো বাড়িতে। সবসময় ঘর গমগম করতো। এত দেশ থেকে আসা আত্মীয়স্বজন ছিল এলাকায়। তারা সবসময় চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতো। যখন এই ব্রতের ভাত নিয়ে কথা বলতো তখন তারা এমনভাবে কথা বলতো শুনলে মনে হ'তো বতের ভাত বলছে। আর তা শুনে শুনে আমরাও কখন শিখে গেছি ব্রতের ভাতের বদলে বতের ভাত। আসলে কথাটা ব্রতের ভাত। আর এই ব্রত স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনীকুমারের উদ্দেশ্যে ব্রত।
স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরেই মানুষ বাঁচতে চায়। বাঁচেও; যদি স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে কোনও না কোনওভাবে। স্মৃতি আনন্দের হ'লেও সাথে এক বুক দুঃখ নিয়ে আসে। এমনি আনন্দ আর দুঃখ মেশানো এক স্মৃতি হ'লো বতের ভাত ওরফে ব্রতের ভাত। এই ব্রত অনুষ্ঠান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের অনুষ্টান। আমরা চট্টগ্রাম জেলার লোক। যদিও এ বাংলায় আমার জন্ম। আমার বাবা দেশভাগের আগে চলে আসেন এ বাংলায়। বাবারা ছিলেন পাঁচ ভাই আর বাবা ছিলেন সবার ছোটো। ও বাংলায় ছিল বিশাল যৌথ পরিবার। বাবা আর এক জ্যাঠা ও তার পরিবার সঙ্গে অন্যান্য জ্যাঠার ছেলেরা চলে আসে এই বাংলায় বাবার হাত ধ'রে। বাকীরা থেকে যায় ও বাংলায়।
যাই হ'ক, যখন একটু বড় হ'লাম তখন থেকে বাবার মৃত্যু পর্যন্ত (১৯৭৯) পর্যন্ত প্রতি বছর বড় ক'রে এই বতের ভাত অনুষ্ঠান হ'তো। তারপর মা যতদিন বেঁচে ছিলেন (১৯৯২) ততদিন শেষের দিকে কয়েক বছর বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান হ'তো, ছোটো ক'রে নিয়ম রক্ষার্থে হ'তো। যদিও আজ আর স্পষ্ট ক'রে সব মনে পড়ে না। তারপর মা চলে গেলে সব বন্ধ হ'য়ে যায়। চট্টগ্রামের রীতিনীতি সব বন্ধ হ'য়ে ওলটপালট হ'য়ে যায়। কারণ চট্টগ্রামের কোনও মেয়ে এ বাড়ির বউ হ'য়ে আসেনি যারা জানবে চট্টগ্রামের নিয়ম। যদিও বৌদিরা শিখে গিয়েছিল মোটামুটি কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর অনেকবার ইচ্ছা হ'লেও পুজো পদ্ধতির ভুল ত্রুটির ভয়ে আর করা হ'য়ে ওঠেনি। তবে আমি চেয়েছিলাম অন্তত শ্রদ্ধাভক্তিকে অবলম্বন ক'রে প্রসাদ নিবেদন করা হ'ক আর তারপর ঐ অদ্ভুত সদাচার সমৃদ্ধ পবিত্র সাত্ত্বিক প্রসাদ সবাই গ্রহণ করুক। কিন্তু কেন জানি প্রতিবার হবো হবো ক'রে আর হয়নি।
এবার আসল কথায় আসি। এই একই রকমের ব্রত পশ্চিবঙ্গে অর্থাৎ এ দেশীদের মধ্যেও চল আছে। যাকে এ দেশীরা রান্না পুজো বলে। তারা ভাদ্র মাসের শেষ দিনে রাঁধে আর আশ্বিনের প্রথম দিনে খায়। আর বাঙ্গালদের অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের লোকেদের ছিল আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায় প্রথা অর্থাৎ আশ্বিন মাসের শেষ দিনে রাতের বেলায় রান্না ক'রে অশ্বিনীকুমারের উদ্দেশ্যে নিবেদন করবে আর ১লা কার্তিক সকালবেলায় সেই প্রসাদ গ্রহণ করবে। তবে দুই বাংলার পুজোর উদ্দেশ্য ও প্রসাদের ছিল আসমান জমিন ফারাক। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোন জেলায় এই ব্রত পালন করা হয়, কিভাবে হয় তা আমার জানা নেই। আর এই প্রসাদ রূপী আহার ছিল একেবারে সাত্ত্বিক আহার। প্রচন্ড সদাচার সম্পন্ন গোঁড়ামি ছিল এই প্রথা পালনে। আগের দিন সারাদিন উপোস থেকে বতের ভাতের উপকরণ প্রস্তুত করা হ'তো। সকালে নারকেল কুড়িয়ে গুড় জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হ'তো নারকেলের পুর। তারপর হাতের তালুতে সেই পুর নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করা হ'তো নাড়ু। সবচেয়ে যেটা বিস্ময় ছিল নারকেল নাড়ু তৈরি হ'তো এক একটা ক্যাম্বিস বলের সাইজের, যেন লাল ক্যাম্বিস বল! তারপর যেখানে এই ব্রত অনুষ্ঠান পালন হবে অর্থাৎ ঠাকুর ঘরে সেখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ক'রে রাখা হ'তো আগে থেকে। সেখানে এনে রাখা হ'তো থরে থরে সাঝানো ক্যাম্বিস বল সমান নারকেল নাড়ু থালায় ক'রে ক'রে কাপড় দিয়ে ঢাকনা দিয়ে। পাশে রাখা হ'তো ইয়া বড়া বড়া কাঁদি কাঁদি সিঙ্গাপুরি কলা। কয়েক হাঁড়ি মিষ্টি দই। গামলা ক'রে রাখা হ'তো কয়েক রকমের মিষ্টির প্যাকেট। থাকতো হাঁড়ি ভর্তি খাঁটি আখি গুড়। খাঁটি গুড়ের গন্ধে ম ম করতো ঠাকুর ঘর। আর থাকতো নারকেল। পরের দিন সকালে ভেঙ্গে গোল গোল ক'রে কাটা হবে নারকেলের টুকরো। সবশেষে কাজ গুছানো হ'য়ে গেলে রান্না হ'তো বতের ভাত। গোবিন্দ ভোগ চালের ভাত। রান্না হ'তো মাটির হাঁড়িতে। রান্নার সময় সারা ঘর বাহির ম ম করতো চালের গন্ধে! আর এখন গোবিন্দ ভোগ রান্না হ'লে রান্নাঘরে গন্ধ পাওয়া যায় না, বাইরে তো দূরের কথা। ভাত রান্না হ'য়ে গেলে সেই ভাতের হাঁড়ি এনে রাখা হ'তো ঠাকুর ঘরে যেখানে পুজোর সামগ্রী, উপকরণ পরপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। হাঁড়ির ভাতের মধ্যে ঢেলে দেওয়া হ'তো ঠান্ডা জল। তারপর সাদা পরিস্কার নোতুন কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়া হ'তো মাটির হাঁড়ির মুখ। এরকম আরো একটা বড় হাঁড়িতে ক'রে রাঁধা হ'তো বতের ভাত। কারণ আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশী আমাদের ভাইবোনেদের ঘনিষ্ট বন্ধু বান্ধব অনেক নিমন্ত্রিত থাকতো। তারপর সব কাজ শেষ হ'লে ঠাকুর ঘরে সব সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার পর আরো একবার ঘর মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হ'য়ে এসে ধুপ জ্বালিয়ে দিয়ে অশ্বিনীকুমারদের উদ্দেশ্যে সেই বতের ভাত ও অন্যান্য প্রসাদ নিবেদন ক'রে প্রণাম ক'রে ঠাকুর ঘর বন্ধ ক'রে দিত মা।
পরের দিন মা অতি প্রত্যুষে উঠে ঘর দ্বোর ঝাড় দিয়ে মুছে পরিস্কার ক'রে স্নান ক'রে পুজোর কাপড় পড়ে এসে বসতো ঠাকুর ঘরে। মা আমার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মন্ত্রশিষ্যা ছিলেন। সারা বছর সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে ঘর দ্বোর পরিস্কার ক'রে চলে যেত গঙ্গা স্নানে। প্রতিদিনকার মত কাজ শেষে গঙ্গা স্নান ক'রে এসে প্রথমে ইষ্টভৃতি, প্রার্থনা ক'রে তারপর বতের ভাত পুজানুষ্ঠান শুরু করতো। এইভাবে সময় গড়িয়ে যেত। আমরা ঘরের লোকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন পুজো শেষ হবে আর আমরা সেই অদ্ভুত অভুতপূর্ব পবিত্র সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করবো। আর পুজো চলাকালীন একে একে এসে উপস্থিত হ'তো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব একে একে।
মা যখন পুজোর প্রসাদ স্বরূপ হাঁড়ির কাপড় খুলে গোবিন্দ ভোগ চালের ভাত, ঢাকনা খুলে খাঁটি ঝোলা খেজুর গুড়, চাক চাক দই, ক্যাম্বিস বল, গোল গোল ক'রে কাটা নারকেলের টুকরো, কয়েক রকমের মিষ্টি দিয়ে সাজিয়ে রাখতো থালা গুলি তখন দেখতে এত সুন্দর লাগতো প্রসাদের থালাগুলি এবং সেই সমস্ত আলাদা আলাদা প্রসাদের গন্ধ মিলিত হ'য়ে এমন এক মোহময়ী সুগন্ধির সৃষ্টি হ'তো যে মনে হ'তো এই বতের ভাতের অর্থাৎ ব্রতের ভাতের আরাধ্য দেবতা স্বর্গ থেকে নেবে এসেছে এই ঘরে। পবিত্র স্বর্গীয় সাত্ত্বিক পরিবেশে সবাই এক ঐশ্বরিক অনুভূতি উপভোগ করতাম। তারপর যারা যারা এসে যেত তাদের আসন দিয়ে বসিয়ে প্রসাদের থালা অর্থাৎ বতের ভাতের থালা এগিয়ে দেওয়া হ'তো। সবাই স্বর্গীয় অনুভূতিতে নিমগ্ন হ'য়ে গ্রহণ করতো সেই অদ্ভুত পবিত্র প্রসাদ। এমনিভাবে চলতো দুপুর পর্যন্ত। তারপর অতিথি আপ্যায়ন শেষ হ'লে মা আর দিদিমা মায়েমেয়ে মিলে গ্রহণ করতো সেই ব্রতের প্রসাদ পরম তৃপ্তিভরে।
ভুলে গেছিলাম সব। হঠাৎ চোখে পড়ে গেল এই পোষ্ট। আর অমনি স্মৃতির দরজা জানালা খুলে হুড়মুড় ক'রে বেরিয়ে এলো সব চাপা পড়া স্মৃতি। অনেক অনেক কিছু একের পর এক ভেসে উঠতে লাগলো স্মৃতি। সব লিখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু লিখলাম না কারণ এক, লেখা দীর্ঘ হ'য়ে যাবে আর দুই, স্মৃতিগুলো থেকে দুঃখ ঝ'রে প'ড়ে বুকটাকে ভারাক্রান্ত ক'রে তুলছে। বতের ভাতকে কেন্দ্র ক'রে আশ্বিনের শেষের দিন অর্থাৎ সকাল থেকে শুরু ক'রে কার্তিকের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত সমস্ত ছবি, সবার ছবি একে একে ভেসে উঠছে চোখের সামনে আর বুকের ভেতরটা ব্যথায় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম তাই আর না এগিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভাবেই একবুক কষ্ট নিয়ে এখানেই স্মৃতির ঝাঁপি বন্ধ করলাম। কারণ আমায় বাঁচতে হবে। দুঃখ একটাই যদি একটা মায়ের হাতের সাজানো বতের ভাতের ছবি এখানে দিতে পারতাম।
(লেখা ১৮ই অক্টোবর'২০২২)



SND Devotional
October 18, 2022

আশ্বিনে রাধে-কার্তিকে খায় (ব্রতের ভাত)
আশ্বিন-কুমারের-ব্রত।
বুধবার (১৯-অক্টোবর)


স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনী কুমারদ্বয় সূর্যদেব ও সংজ্ঞা'র পুত্র। অভিশাপগ্রস্ত সংজ্ঞা জগজ্জনী পার্বতীর কাছে নিজের দুর্দশা থেকে মুক্তি চাইলে পার্বতী এক মুষ্টি চাল দিয়ে তাকে বলছিলেন-আশ্বিন মাসের শেষ তারিখ পূর্বরাত্রে শেষ দিবসে রেখে এই চাল ভক্তিপূর্বক রন্ধন শেষে মহাদেবের অর্চনা করতে হবে এবং কার্তিক মাসের ১ম দিবসে সেই অন্ন ভক্ষণে মনস্কামনা পূর্ন হবে।সে নিয়মে মেনে রোগ ও অভিশাপমুক্ত হয়েছিলেন দেবী সংজ্ঞা।
অশ্বিনী কুমারদ্বয় হলেন-নাস্যতা ও দস্র। ঋগ্বেদ এবং সংস্কৃত সাহিত্যে ও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের নাম এসেছে। মহাভারতের আদিপর্বের পৌষ্যপর্বাধ্যায়ে উপমন্যোপাখ্যানে দেব-চিকিৎসক হিসাবে তাদের ভূমিকার কথা জানা যায়।
"আশ্বিনে রাঁধে, কার্তিকে খায়
যেই বর মাগে,সেই বর পায়।)

Sunday, October 15, 2023

প্রবন্ধঃ পাকিস্তান না পাপীস্থান!?

সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশের চুক্তির বিষয়কে নিয়ে বাংলাদেশে জল ঘোলা করতে নেবে পড়েছে পাকিস্তানী এজেন্টরা। বাংলার মাটিতে এই এজেন্টদের অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। এরা বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষদের ভারতের দালাল আখ্যা দিয়ে সেই ১৯৪৭ সালের ভারতের স্বাধীনতার সময় থেকে শুরু ক'রে ৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং আজও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে! এদের একটাই লক্ষ্য ভারত বিরোধীতা! ভারতের দুর্বল নেতৃত্বের সুযোগে এরা শিকড় চালিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের মাটির গভীরে। এরা পাপীস্থানের পাপের পূজারী! দেশভাগ থেকে শুরু ক'রে ৭১-এর বাংলাদেশে এবং তৎপরবর্তী সময়ে পাপের পূজার যজ্ঞে আহুতি দিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে করতে চেয়েছে কাঙালদেশ! কিন্তু বাংলাদেশের জগৎ বিখ্যাত টাইগারদের থাবায় এরা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বারবার তবু মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছে পাপীস্থানের সহযোগিতায়! এখন এসেছে নির্মূল করার সময়। ভারতের শক্তিশালী নেতৃত্ব আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এশিয়া তথা বিশ্বের শক্তিশালী নেত্রী হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে নুতন ভারতের মত নুতন বাংলাদেশ!
 
এই পাপীস্থানের পাপী এজেন্টদের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে বাংলাদেশকে শক্তিশালী ক'রে গড়ে তোলার জন্য চাই সম্প্রদায় নিরপেক্ষ আর্য্য বাঙালিদের কিছু দৃঢ়, বলিষ্ঠ, কঠিন, কঠোর, আপোষহীন, পরিকল্পিত, অকপট-অস্খলিত-অটুট-অদম্য পদক্ষেপ!!!!

সূর্যকে যেমন মেঘ ঢেকে রাখতে পারে না কিছু সময় পরে নিয়মের অমোঘ বিধানে সরে যেতে হয় ঠিক তেমনি ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচার ক'রে ক'রে সত্যকেও মিথ্যে দিয়ে চাপা দেওয়া যায় না; শুধু দরকার প্রজন্মের পর প্রজন্ম নুতন প্রজন্মকে ৭১-এ মা-বোনেদের উপর ভয়াবহ নৃশংস নারকীয় পাকিস্তানি অত্যাচারের কথা তুলে ধরার, দরকার শিশু থেকে বৃদ্ধ পুরুষদের উপর নৃশংস হত্যালীলার ছবি তুলে ধরা। এমনভাবে তুলে ধরা যাতে নুতন প্রজন্ম যেন চোখের সামনে সেই দানবীয় পাকিস্তানি দরিন্দাদের হত্যালীলা, মা-বোনেদের শরীরের উপর অকল্পনীয় নির্ম্মম পশু ভয় পেয়ে যায়, নরক শিউড়ে ওঠে এমন চূড়ান্ত ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক ফুর্তির লীলা দেখতে পায়, অনুভব করতে পারে, তাদের শিরায় শিরায়, মস্তিষ্কের কোষে কোষে, রক্তের প্রতি কণায় কণায় ফুটে ওঠে, আন্দোলিত হয় সেদিনের মা-বোনেদের অসহায় বুক ফাটা আর্তনাদের কন্ঠস্বর! বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে, গাছেগাছে, পাতায়পাতায়, গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে, বনে-বাদারে, পাহাড়ে-পর্বতে, নদীতে-সমুদ্রে সমস্ত জায়গায় বাংলাদেশিদের উপর পাকিস্তানি দৈত্যদের ৭১-এর নৃশংস অত্যাচার, মা-বোনেদের নিয়ে লোফালুপির ছবি ভেসে উঠুক,আঁতকে উঠুক নব প্রজন্ম, রাতের বিলাসিতার ঘুম ছুটে যাক, নব প্রজন্মের গর্জনে কেঁপে উঠুক বাংলাদেশ, সেই ভয়ঙ্কর গর্জন গিয়ে আছড়ে পড়ুক পাকিস্তানের মাটিতে, শিউড়ে উঠুক অত্যাচারী পাকিস্তান! যতদিন পর্যন্ত না আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তান তাদের বাংলাদেশের উপর---- নারকীয়, দানবীয় বললে দানব লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলবে, নরক বলবে এ আবার কোন স্থান যা আমাদেরও তুচ্ছ ক'রে দেয়,------ এমন অত্যাচারের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবে ততদিন পর্যন্ত কোনও আপোষ নেই পাকিস্তান নয়, মানবতাবিরোধী পাপীস্থানের সঙ্গে! আর ক্ষমা চাওয়ার পরও তুমি তোমার মত থাকো, আমি আমার মত থাকি! কোনও ঝগড়াও নেই, নেই কোনও প্রেম! দরিন্দা পাপীস্থান হবে "রিয়াসৎ-ই-মদিনা"!!!!!!!!!!! আল্লা প্রভু মহম্মদও শিউড়ে উঠবে এই কথায়!!!!! আর বাংলাদেশের চিরপ্রসিদ্ধ কুট্টিদের বিখ্যাত হিউমার: "আস্তে কন দাদা ঘোড়ায়ও হাসবো"!!!!!!!
(লেখা ১৫ই অক্টোবর'২০১৯) -

প্রবন্ধঃ কর, হও, পাও আর সুন্দর জীবন লাভ করো।




একবার যদি এরকম ভালোবাসা এসে যায় তাহ'লে কি ক'রে সংসার চলবে, কি ক'রে সমস্যা থেকে মুক্ত হবো, কি ক'রে বিপদ থেকে উদ্ধার পাবো, কি ক'রে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাবো তার জন্য আর চিন্তা করতে হয় না। ভুতের মত কে যেন প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে সামনে হাজির হ'য়ে যাবে। বিপদের সময় একটা অদৃশ্য হাত এসে তোমাকে সযত্নে কোলে তুলে নেবে।

বন্ধু! আমার কথা মেনে একবার বিশ্বাস ক'রে কষ্ট ক'রে আকুল আগ্রহ নিয়ে প্রত্যুষে, পারলে অতি প্রত্যুষে বিছানা থেকে নাবার আগে কিছু মুখে দেবার আগেই আর না পারলে সকালে কোনও কাজ শুরু করার আগে ইষ্টভৃতি করো আর চলতে ফিরতে শয়নে, স্বপনে, জাগরণে একটু নাম ক'রে দেখো, আর রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নির্জনে একাকী একটু চোখ বুঝে তাঁর সামনে বসো আর মধ্যরাতে যদি ঘুম ভেঙে যায় তাহ'লে নিশুতি রাতে তাঁর সামনে এসে বসো আর চোখ বুঝে আজ্ঞা চক্রে মন ন্যস্ত ক'রে তাঁর নাম করতে থাকো তুমি যতক্ষণ পারো এবং পরবর্তী সময়ে দেখো ধীরে ধীরে কেমন ম্যাজিকের মতো সব যা ছিল কাল অসম্ভব, যা মনে হ'তো অবাস্তব, গাঁজাখুরি আর অবৈজ্ঞানিক তা আজ সব তোমার ফেভারে হ'য়ে যাচ্ছে, হাতের মুঠোয় চলে আসছে, সব হ'য়ে যাচ্ছে সম্ভব, হ'য়ে যাচ্ছে সব বাস্তব আর বৈজ্ঞানিক। অদ্ভুত এক রহস্য। কুল কিনারা পাবে না। ঠাকুর সবসময় শেক্সপিয়ারের একটা কথা বলতেন যেটা তাঁর অন্যতম প্রিয় কোটেশন ছিলঃ "There are more things in heaven and earth, Horratio, than are dreampt of in your philosophy" অর্থাৎ " স্বর্গ আর পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।"

বন্ধু! হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান ইত্যাদি যে যেখানে আছো বন্ধু আমার তোমরা তোমার ইষ্টদেবতার উদ্দেশ্যে যা বললাম করো, বিশ্বাস ক'রে দেখো আর তোমার শিশু সন্তানকে তার ছোট্ট বয়স থেকে ধীরে ধীরে রপ্ত করাও। দেখবে, শয়তানি শক্তির বাপের কোনও ক্ষমতা হবে না তোমায় স্পর্শ করে। শয়তান ভবিষ্যতে তোমার সন্তানের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চিন্তে চোখ বুঝে শেষ জীবন কাটাতে পারবে। বন্ধু! কর, হও, পাও।
(লেখা ১৫ই অক্টোবর'২০২২)

Thursday, October 12, 2023

খোলা চিঠিঃ শ্রদ্ধেয় মনোজ কুমার নন্দী দাদাকে (১)



দাদা,
আপনি আমার ভালোবাসা ও ভক্তিপূর্ণ জয়গুরু নেবেন। আপনাকে হঠাৎ খোলা চিঠি লেখার কারণ মানুষ যখন হতাশার তীব্র স্রোতে ভেসে যায় তখন তার সামনে সামান্য একটা খড়কুটোর মত একটা সামান্য হাত বিরাট শক্তি হ'য়ে দেখা দেয়। আর তাই-ই এই চিঠি লেখা।
আপনার কালনা সৎসঙ্গ মন্দির সংক্রান্ত বিষয়ে একটা লেখা পড়লাম। এছাড়া ঠাকুরকে নিয়ে কোনও একজন মানবাকৃতি অদ্ভুত জীবের মেসেঞ্জারে করা উৎকট কথার বাণ, কুৎসা আপনাকে যারপরনাই এতটাই ব্যথিত করেছে যে আপনি মর্মাহত, মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত। আমিও ঠাকুর সম্পর্কিত লেখাটা পড়ে ব্যাথিত ও যারপরনাই ক্ষুব্ধ। আর এর উত্তর দেবার জন্য আপনার আমার উপর নির্ভরতা, ভরসা আমাকে বিচলিত ক'রে তুলেছে! আপনার লেখা দু'টো বিষয়েই অবগত হ'লাম। আমি দু'টো বিষয়েই আমার মতামত জানাবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে ইনবক্সে আমার মতামত জানাতে পারতাম। কিন্তু তা করলাম না। করলাম না ইচ্ছাকৃতভাবেই। কারণ তা'তে আপনার মধ্যেই মতামত সীমাবদ্ধ থেকে যেত। পাঠককুল জানতে পারতো না। পাঠককুল একতরফা জানবে তা তো হ'তে পারে না। পাঠককুল দেখুক, পড়ুক, জানুক, বুঝুক তারপর না হয় গ্রহণ বা বর্জন করবে। গ্রহণ বর্জন ব্যক্তিগত।

যাই হ'ক, আপনার মন্দির সংক্রান্ত লেখা পড়ে অবাক হ'য়ে গেলাম! যদিও এখন সব গা সওয়া হ'য়ে গেছে। অবাকটবাক এখন হ'ই না আর। সেই যে কোন ছোটোবেলা থেকে এসব দেখছি তবুও অভ্যাসবশতঃ মাঝে মাঝে কুত্তার বাঁকা ল্যাজের মত চরিত্র হ'য়ে যাই। আপনি আপনার অবর্তমানে মন্দিরের গাছ কেটে ফেলার ব্যাপারে যা লিখেছেন সে সম্পর্কে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এর জন্য আপনি দায়ী।
কারণ,
আপনি মন্দির ছেড়ে চলে এলেন কেন!? কেন আপনি সুযোগ দিলেন তাদের!? মন্দির কার? মন্দির কি কারও পৈত্রিক সম্পত্তি!? মন্দির রঙ হওয়ার ছবি তুলে নিয়ে কে দেখিয়েছিল দেওঘরে!? আপনি, না যারা গাছ কেটেছে তারা!? দেওয়ালের ধার ঘেঁষে বড় বড় নিম গাছ রাখা না রাখা সংক্রান্ত সমস্যা নিবেদন কে করেছিল!? আপনি, না গাছ কাটা দলেরা!? কার কাছে নিবেদন করা হয়েছিল? যার কাছে করা হয়েছিল তিনি 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের কে? তিনি সব শুনে কি সমাধান দিয়েছিলেন? যখন গাছ রাখা না রাখা সংক্রান্ত প্রশ্ন নিবেদন করা হয়েছিল তখন কি যারা গাছ কেটে ফেলেছে তারা তখন সেইসময়ে দেওঘরে তাঁর সম্মুখে উপস্থিত ছিলেন? নাকি আপনি মন্দির থেকে সরে আসার পর ফোকটে পাওয়ার মত মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওঘরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দেওঘরের পরামর্শ মতো গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? গাছ কাটা সংক্রান্ত দেওঘরের নিষেধাজ্ঞা কি তারা জানতেন?

এইসমস্ত প্রশ্নের একটাই উত্তর যদি তাই-ই হ'য়ে থাকে যারা মন্দিরের দায়িত্বে এসেই গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের মত দেওঘরকে উপেক্ষা ক'রে আচার্যদেবের উপস্থিতিকে অমান্য ক'রে ও পূজ্যপাদ বাবাইদাদাকে অপমান, অসম্মান ও অস্বীকার ক'রে, বাবাইদাদার নির্দেশকে বাটিল ক'রে নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছেমতো মন্দির পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা আর যাই-ই হ'ক সুকেন্দ্রিক না, তারা বিকেন্দ্রিক। তারা মন্দির দখল ক'রে আত্মপ্রতিষ্ঠার লোভে ইষ্টকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে নিয়েছে। আর পথে, ঘাটে শুধু 'জয়গুরু' বলা নিস্ক্রিয় আবেগ জর্জরিত আম সৎসঙ্গী 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায় আবদ্ধ থেকে ঠাকুর বিরোধী কাজে পরোক্ষে সহযোগীতা করেছে। যারা গাছ কাটার নেতৃত্ব দিয়েছিল, হুকুম দিয়েছিল তারা জানেই না পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবাবাইদাদা গাছ না কাটার কি পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং কি ক'রে মন্দিরের পাঁচিলকে বড় বড় নিম গাছের শেকড়ের চাপে ফাটল হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায় তার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং সেইমত যে কাজও হয়েছিল তাও তারা জানেন না!!!!! এই যদি সত্য হয় তাহ'লে একরকম ব্যাপার আর জানা সত্ত্বেও যদি কেটে ফেলে গাছ!? তাহ'লে!? তাহ'লে তো ঘোর দুর্দিন আগামীদিনে মন্দিরে!!!! পূজ্যপাদ বাবাইদাদার Direct observation-এ বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গের সমস্ত কাজকর্ম যে পরিচালিত হয় তা যারা জানে না বা জানলেও 'আপনা গলি মে কুত্তা ভি শের হ্যায়'-এর মতন মানসিক গঠন যাদের তারা করবে মন্দির দেখভাল!? তারা নেবে মন্দির পরিচালনার ও মন্দির রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব!? যারা ঠাকুরের রেত শরীরের জ্যান্ত উপস্থিতিকেই মানে না, স্বীকার করে না, তাঁর নির্দেশকে অমান্য করে তারা মন্দিরের হর্তাকর্তাবিধাতা!? এ তো ঘোর পাপ! এ তো শেষের সেদিনের অশনি সঙ্কেত! আর আম সৎসঙ্গী তাদের মেনে চলছেন!?
আর তারা অর্থাৎ যারা ঠাকুরবাড়িকে না জানিয়ে গাছ কেটেছেন, সিঁড়িতে মার্বেল বসাচ্ছেন তারা যদি গুরুর প্রকৃত শিষ্য হয়, যদি তারা সঠিক হয় তাহ'লে দেওঘরে গিয়ে মাথা উঁচু ক'রে বুক ফুলিয়ে বাবাইদাদার মুখোমুখি হ'য়ে বাপের বেটার মত সত্য উন্মোচনে দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি ফয়শালা ক'রে নিয়ে সাধারণ সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্তি দূর করুন ও অদীক্ষিতদের হাসাহাসি আর নোংরা সমালোচনার মুখ বন্ধ করুন।

আচ্ছা মনোজদা, আপনি যে লেখা ফেসবুকে লিখেছেন তাতে কালনা সৎসঙ্গীরা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না কেন!? কেন তাদের মতামত জানাচ্ছে না!? কালনা মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত গুরুভাইবোনেরা কি ফেসবুক করেন না!? নাকি যার মাথা তার ব্যথা সে বুঝুক গে, এ রকম ব্যাপার!? কেন আপনি সেদিন রুখে দাঁড়াননি!? পূজ্যপাদ বাবাইদাদা গাছ কাটার খবর শুনলে কষ্ট পাবেন ঠিক কথা তার থেকেও বেশী কষ্ট পাবেন আপনি যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না ক'রে মন্দির ছেড়ে চলে গেছিলেন শুনে। পূজ্যপাদ বাবাইদাদার আদেশ, নির্দেশ, নিদেশ, সম্মান ইজ্জৎ কেন বুক দিয়ে আগলে রাখেননি!? কেন রক্ষা করেননি!? আপনি জানেন না বাবাইদাদা কে!? "ইষ্ট স্বার্থ প্রতিষ্ঠা প্রাণ গেলেও তুই ছাড়িস না, সব পাপেতেই উৎরে যাবি, ঋষির বাণী ভুলিস না"---এই বাণী আপনি ভুলে গেছেন?

আপনি লিখেছেন, বর্তমানে মন্দিরে কাজ হচ্ছে, মন্দিরের সিঁড়িতে পাথর বসানো হচ্ছে অথচ ঠাকুরবাড়ি জানে না, নির্মাণকাজে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তা সেই কাজ কি ক'রে হচ্ছে!? কে টাকা পয়সা দিচ্ছে!? টাকাপয়সা কালেকশান হচ্ছে কোন নিয়মে!? এই নির্মাণ কাজ তো অবৈধ!? এই নির্মাণ কাজের আয় ও ব্যায়-এর হিসাব কে রাখবে বা রাখছে!? নির্মাণ কাজে সংগৃহীত অর্থ তো প্রথমে সৎসঙ্গের নিয়ম অনুযায়ী দেওঘরে 'সৎসঙ্গ ব্যাঙ্কে' কালনা মন্দির অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে আর তারপর ঠাকুরবাড়ির প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ও তত্বাবধানে মন্দির নির্মাণ কাজে অর্থ অনুমোদন হবে এবং প্রতিটি খরচখরচার নিখুঁত পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রক্ষিত হবে। এমনটা কি নিয়ম মেনে হচ্ছে!? যদি হ'য়ে থাকে আমার কিছু বলার নেই আর যদি না হ'য়ে থাকে তা কেন্দ্র বিরোধী অন্যায় পদক্ষেপ। আপনি তো বলছেন এইসব বিষয়ে কোনও খবর বাবাইদাদার কাছে নেই!!!! এ তো অদ্ভুত নৈরাজ্য!!!!! আপনি কেন তাদের বোঝালেন না যে এটা কেন্দ্র বিরোধী পদক্ষেপ!? কেন আপনি তাদের সকলকে বললেন না চলুন সবাই বাবাইদাদার কাছে যাই!? কেন আপনি বাবাইদাদার গোচরে পুরো বিষয়টা আনলেন না!? নিদেনপক্ষে মাঝিদার থেকে পরামর্শ নিয়ে তাঁর মাধ্যমে বাবাইদাদার কাছে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি তুলে ধরতে পারতেন। আপনি কেন দেওঘরে গিয়ে সব জানালেন না!? পূজ্যপাদ বাবাইদাদার কাছে গিয়ে কেন সব জানালেন না!? ঠাকুরবাড়িকে অমান্য করা, আচার্যদেবের উপস্থিতিকে অস্বীকার করা, বাবাইদাদাকে অপমান, অশ্রদ্ধা করা এ তো সবার জন্য অভিশাপ!!!! যারা করছে অন্যায় আর যারা কালনা মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত সৎসঙ্গী হ'য়েও জেনে শুনে মুখ বুঝে আছে ও এদের কাজের প্রতিবাদ করছে না 'গায়ে আঁচ না লাগার জন্য ও ঝুট ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে' তাদের উভয়ের ক্ষেত্রেই এ ঘোর অভিশাপ!!!!!

মনোজদা, আপনি চিন্তা করবেন না, দয়াল চিরজাগ্রত! তিনি সব দেখছেন!!!! দয়ালের ভয়াল রূপ অন্যায়কারীরা দেখেনি!!!!! যদি কেউ অন্যায় ক'রে থাকে দয়ালের দুনিয়ায় ও দয়ালের কাজে তাকে এই জীবনেই তার ভয়ংকর খেসারত দিয়ে যেতে হবে।

আর, সব জানার পর যদি বাবাইদাদা আপনাকে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বলতেন তাহ'লে তা 'রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর'-এর অমোঘ বিধান হ'তো! আর তা মাথা পেতে মেনে নিয়ে আপনি সরে যেতেন তখন। সেইটা মঙ্গল হ'তো।

নেগেটিভ চাপে আত্মবিশ্বাসে টান ধরেছিল আপনার। এটা আমাদের মত সরল দুর্বল লোকেদের স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। গাছ যাতে না কাটে তা প্রাণপণে বোঝাবার পরও যদি গাছ কাটার সিদ্ধান্তে অনড় থাকতো গাছ কাটা ভক্তেরা তাহ'লে কেন সাধারণ গুরুভাইদের কাছে সমস্ত বিষয়টা তুলে ধরলেন না!? যদিও সাধারণ গুরুভাইবোন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদাসীন ও 'ঝুট ঝামেলায় নীরব থেকে, প্রাণ দেব না সঁপে' মানসিকতার। তবুও চেষ্টা ক'রে দেখতে হয়। নাহ'লে কি আর করা। দয়ালের ওপর তখন ছেড়ে দিতে হয়।

মনোজদা, ভালো ভালো লোকেরা উচ্ছেদ হ'য়ে যাচ্ছে সব মন্দির থেকে সুযোগসন্ধানী মানুষের কারণে। এই ট্রাডিশন সমানে চলছে ঠাকুরের সময় থেকে। এই নিয়ে ঠাকুর দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। তাই প্রাণপণে আঁকড়ে ধ'রে থাকুন ঠাকুরকে আর আচার্য পরম্পরাকে আর চলতে থাকুন ঠাকুরের বাণীকে মাথায় রেখে,
"প্রশ্ন তোমার অস্ত যাউক, রহুক যুক্তি সরে
তোমার আজ্ঞা করবো পালন মরণ স্তব্ধ ক'রে।"

দাদা! ভয় পাবেন না। আপনার মাথায় ঠাকুর আছেন, শ্রীশ্রীবড়দা আছেন, আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা আছেন, আছেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদা, আছেন শ্রীশ্রীঅবিনদাদা ও ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য দাদারা। দয়ালের ওপর নির্ভর করুন। শালা! ডর কিস বাত কি!? কান পেতে আকাশবাণী শুনুন মনোজদা! দয়াল বলছেন, ডর কিস বাত কি!? ম্যায় হু না!!!!!!!!

আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও জয়গুরু জানবেন।
ইতি,
প্রবি।
ক্রমশঃ
( ঠাকুরকে কুৎসার বিষয় পরবর্তী চিঠিতে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।)
(১৩ই অক্টোবর' ২০২১)

প্রার্থনাঃ মহা অষ্টমীর মহা অঞ্জলি।

আমার চরিত্র, আমার চিন্তা, আমার ভাবনা, আমার মনোভাব, আমার মন ও মানসিকতা, আমার স্বভাব, আমার স্বপ্ন, আমার মন্ত্র, আমার ইচ্ছা, আমার প্রার্থনা, আমার লোভ, আমার ভুল, আমার জ্ঞান, আমার শিক্ষা, আমার রক্ত, আমার কর্ম যাবতীয় ( নিম্নে উল্লেখিত) যা কিছু দিয়ে মহা অষ্টমীর পূণ্য প্রভাতে দিলাম মায়ের রাঙা চরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অঞ্জলির উপকরণঃ
রক্তমাংসের ঈশ্বর ছেড়ে শুধু মাটির পুতুল বোবা ঈশ্বর নিয়ে যেন না থাকি মেতে।
------- এই আমার প্রার্থনা।
টাকা আপন মানুষ পর যত পারিস টাকা ধর।
-------- এমন অমানবিক কথা যেন আমার জীবনের মূল মন্ত্র না হয়।
বড়কে ছোট করো, আর ছোটোকে আরও ছোটো ক'রে লাথি মেরে পাতালে ঢুকিয়ে দাও।
------- এমন ঘৃণ্য মানসিকতা যেন না হয় মা!
যার ঘর পুড়ছে তার মাথাব্যাথা; আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা।
------ এত ছোটো মন যেন আমার না হয়।
অন্যের দুঃখের কারণ আমি হবো কিন্তু আমার দুঃখের কারণ অন্য কেউ হ'লে হ'য়ে যাবে মহাভারতের কুরুক্ষেত্র।-
------ এমন বিষাক্ত ইচ্ছা যেন জীবনকে গ্রাস না করে।
কপট হও আর নিজে ঠকো না কিন্তু অন্যকে ঠকাও।
------ এমন নোংরা মনোভাব যেন বাসা না বাধে মনের মাঝে।
নিজের দোষ দেখো না, কিন্তু অন্যের দোষ দূরবিন দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করো আর ফালাফালা ক'রে দাও মলদ্বার, অন্ডকোষ।
------ এত নিকৃষ্ট ঘৃণ্য স্বভাব থেকে যেন মুক্ত রাখতে পারি নিজেকে।
অর্থ, মান, যশ ইত্যাদি যা আছে সবটাই নিয়ে নাও নিজে যেনতেন প্রকারে, অন্যের জন্য কিছু রেখো না।
-------- এত ভয়ংকর লোভী যেন না হ'ই জীবনে।
সব রকম সংস্কারে আবদ্ধ থাকো আর পরমপুরুষের সংস্কার থেকে নিজেকে দূরে রাখো।-
------ এমন বিরাট ভুল যেন না হয় জীবনে।
সেবা করা বা সেবা দেওয়ার ধার ধেরো না কিন্ত সেবা নিতে উন্মুখ থাকো।
-------এমন ঘৃণ্য স্বভাবের মানুষ যেন না হ'ই।
নিজের দুঃখে কাঁদ আর অন্যের দুঃখে নজর দিও না বরং হাসো, মজা নাও।
------- এমন কুটিল নির্ম্মম চরিত্রের মানুষ যেন না হ'ই মা।
নিজের কষ্ট ও দুঃখের বেলায় সংসারী সাজো আর অন্যের কষ্ট, দুঃখ, যন্ত্রনার বেলায় ব্রহ্মজ্ঞানী সাজো।
------ এমন বিষাক্ত জ্ঞানের অধিকারী যেন না হ'ই।
স্পষ্টবাদী হও, কিন্তু উগ্রভাষী হও; সত্য বলো আর সংহার আনো; সাধু সাজো, সাধু হ'তে চেষ্টা কর না।
-------এমন কুশিক্ষায় যেন শিক্ষিত না হ'ই।
মুখে প্রেমের ঢাক পেটাও কিন্তু বাস্তবে প্রেম করতে যেও না।
---------এমন কপট শয়তান প্রেমিক পুরুষ হওয়ার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো।
দান করো আর তা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করো। দান করো কিন্তু ছলে বলে কৌশলে তাকে বুঝিয়েও দাও যেন সে তোমার দয়ায় বেঁচে আছে।
--------এমন বিষাক্ত দান করার ইচ্ছা যেন স্বপ্নেও না আসে।
শয়তানের আদেশ পালনের মত জীবনে রাতারাতি বড় হওয়ার, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মন্ত্র আর কিছু নেই।
-------এমন মন্ত্র যেন আমি কানে না শুনি মা।
বেইমানির মত সিদ্ধি আর কিছু নেই। চোখের পলকে বৃদ্ধি, উত্থান।
------এমন বিষাক্ত ঘৃণ্য দোষী রক্তের অধিকারী না হ'ই কোনও জীবনে।
যে আগে ঝাঁপ দিয়েছে সে বোকা, নির্বোধ। নেতাজী হ'তে যেও না।
---------এমন চিন্তা, এমন ভাবনা জন্মজন্মান্তরেও যেন না আসে মগজে।
অকৃতজ্ঞতা, বেঈমানি, আর নেমকহারামি শয়তানের তিন মূল মন্ত্র।
---------এমন রক্তবাহিত সংক্রামক মারণ ব্যাধির যেন শিকার না হ'ই মা।
এই-ই আমার তোমার রাঙা চরণে মহা অষ্টমীর অঞ্জলি। ঘরে বসেই একা একা নিভৃতে ঠাকুরের সামনে ব'সে ঠাকুরের মধ্যেই তোমায় দেখলাম আর দিলাম অঞ্জলি। তুমি আমার অঞ্জলি গ্রহণ ক'রো।
(লেখা ১৩ই অক্টোবর'২০২১)

কবিতাঃ অভিমান নরক কি মূল’!



তুমি কোথায়? ব্যর্থতার ঘুণ বাসা বাঁধে
শরীর বীণায়, বিধ্বস্ত করে যন্ত্র।
ভাগ্যের বিষ নিঃশ্বাসে
নীল হ’য়ে মন হ’তে চায় মলিন,
ছিন্ন হ’তে চায় যত তন্ত্র। তবুও জানি
তুমি আছো, আছো আমার সত্তা জুড়ে!
মন পাখি সুর তোলে ঐ ছিন্ন তারে!
বলে, জীবন খুঁজে পাবি হেথায়,
তাঁর জীবন বীণার তারে! তবুও
অভিমানে ভ’রে যেতে চায় মন,
ডুবে যেতে চায় আমার আমি
ঐ মন্দাকিনীর তীরে!!!!!!
তখন আমার দৃঢ়তা
স্মরণ করিয়ে দেয় তোমাকে
করতে গিয়ে ভুল!
কানে ভেসে আসে তোমার সেই কথা
‘অভিমান নরক কি মূল’!
মৃত্যুর খুব কাছাকাছি অথচ কত কাজ বাকি!
তুমিই আমার আশা ভরসা,
ভেঙ্গে পড়া জীবনে জীবনসাথী!
বারবার শয়নে-সপনে-জাগরনে
শুধু তোমায় দেখি আর শুনি
ভেসে আসা তোমার ঐ দৈববাণী,
‘নির্ভর কর, কখনো ভয় পাবে না’,আর
চলে আয়, ছুটে আয়! হেথায় জীবন খুঁজে পাবি!!!!
(লেখা ১৩ই অক্টোবর'২০১৪)

প্রবন্ধঃ ব্যাভিচারী ভক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

শ্রীশ্রীঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীদের ইতিহাস সৃষ্টি করা ক্ষমতা দখলের ও মৌরসী পাট্টা বজায় রাখার ব্যভিচারী ভক্তির নমুনা দেখুন বাংলাদেশে। তারা বুঝে গেছিল শ্রীশ্রীঠাকুর আর বেশীদিন নেই ধরাধামে। তাঁর সময় এসে গেছে বিদায় নেবার। আর বাংলাদেশেও কেউ নেই ঠাকুর পরিবারের। এই মোক্ষম সুযোগ। হিন্দি চলচিত্র 'শোলে'-র গব্বর সিং-এর বিখ্যাত ডায়লগ 'মার হাতোড়া' শালা বাংলাদেশী ভক্তেরা অনেক আগেই বুঝে গিয়ে প্রয়োগ করে দিয়েছিল। এই সুযোগ হাতছাড়া করলে চলবে না। বড় বড় ঋত্ত্বিকরা জড়িয়ে ছিল এই নোংরা কাজের সঙ্গে। তাদের বুকে এতটুকু ব্যথা লাগেনি বা মনের মধ্যে জাগেনি যে শ্রীশ্রীঠাকুর এখনও জীবিত আছেন। তারা মেনে নিতে পারেনি শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম আদরের ধন তাঁর প্রথম সন্তান, তাঁর প্রিয় বড়খোকা শ্রীশ্রীবড়দাকে। এত বড় বড় এক একজন ভক্ত ইষ্টপ্রাণ ঋত্বিক ছিলেন তারা।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনেক আগেই ব'লে ছিলেন
"সিদ্ধ নয় মন্ত্র দেয়,
মরে মারে করেই ক্ষয়।"
আর তাদের অপবিত্র হাতেই না বুঝে সহজ সরল সাধারণ মানুষ দীক্ষিত হচ্ছে অভিশাপগ্রস্থ অবৈধ পাঞ্জার ছোঁয়ায়।
সেই মাথায় ফটো নিয়ে ভক্তির সীমাহীন নাটকবাজির ট্রাডিশান সমানে চলেছে উত্তরাধিকার সূত্রে!!!!!!!!! এই ব্যাভিচারী ভক্তির অধিকারীরা শ্রীশ্রীঠাকুরের ১৩৬ তম জন্মতিথি পালন করছে কপট হৃদয়ে আর তা দেখে চলেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর আজ ৫৪ বছরের অধিক সময় ধ'রে। বিচারের ভার তাঁরই হাতে। তিনি তাঁর সত্যানুসরণ গ্রন্থে নিজের হাতে বিচারের ভার তুলে নিতে তাঁর সোনার সৎসঙ্গীদের বারণ ক'রে গেছেন। তাই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন ক'রে চলেছে এই দীর্ঘ ৫৪ বছর শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এক ও একমাত্র অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান দেওঘর 'সৎসঙ্গ'-এর কর্ণধার অটুট অচ্যুত অস্খলিত নিষ্ঠায়। কারণ শ্রীশ্রীঠাকুরের নিদেশ (নির্দেশ নয়) মানতে হবে আমৃত্যু তাঁর ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তানদের।

সেই যে ১৯৬৯ সালে শ্রীশ্রীঠাকুরের মহাপ্রয়াণের আগে শ্রীশ্রীঠাকুর জীবিত অবস্থায় তাঁর সামনে দিয়ে তাঁকে ত্যাগ ক'রে তাঁর মূর্তি মাথায় নিয়ে বন্দে পুরুষোত্তমম ধ্বনি দিয়ে তাঁর বুকে পদাঘাত ক'রে তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' আশ্রম ও প্রতিষ্ঠান বয়কট ক'রে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিল কিছু তথাকথিত ধান্দাবাজ সাজা সৎসঙ্গী। শ্রীশ্রীঠাকুরকে অশ্রুজলে ভাসিয়ে দিয়ে তাঁর চোখের সামনে পাল্টা গড়ে তুলেছিল তাদের মৌরসী পাট্টাকে বজায় রাখবার জন্য মিশনারী নাম নিয়ে যা বর্তমানে নাম পাল্টে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ হয়েছে। এটা তারা করেছিল যাতে শ্রীশ্রীঠাকুরের মহাপ্রয়াণের পর শ্রীশ্রীবড়দার অধীনে তাদের থাকতে না হয়। সেই সময়ের তথাকথিত বিশিষ্ট ভক্তেরা বুঝে গেছিল শ্রীশ্রীবড়দার নেতৃত্বে তাদের মৌরসী পাট্টা চলবে না। তারা শ্রীশ্রীঠাকুরকে অশ্রদ্ধা অপমান ক'রে তাঁর জীবিত অবস্থায় তাঁকে পায়ের তলায় ফেলে তাঁর ফটো মাথায় নিয়ে বেরিয়ে আসার ব্যভিচারী ভক্তির ইতিহাস রচনা করেছিল যার ট্রাডিশান চলছে আজও সেই তাঁর ফোটো মাথায় নিয়ে। এখানে কাউকে মানামানির ব্যাপার নেই। যে যা ইচ্ছা করবার জন্য স্বাধীন। যা দেওঘরের মূল 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানে অকল্পনীয়। শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত দেওঘরের 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান শ্রীশ্রীঠাকুরের "এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়ে সমাজ গড়া" বাণীর উজ্জ্বল জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
(লেখা ২৪শে সেপ্টেম্বর'২৩) 
https://www.facebook.com/sujanchandra.das.92/videos/847178380417093

সাচ্চা মুসলমান। সাচ্চা আল্লাপ্রেমী।

খুব সুন্দর সহজ সরল একেবারে প্রাঞ্জল ব্যাখা করেছেন উনি। কোনও জটিলতা বা বিতর্কের অবকাশ নেই। একেবারে সুবোধ্য; স্বচ্ছ ব্যাখ্যা। এর পরেও যদি কোনও কথা আসে ইনার কথার বিরুদ্ধে তাহ'লে যিনি বিরুদ্ধতা করবেন তার উদ্দেশ্য understood.
The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra বলেছেন,
"আমি যা জীবনে করেছি তাই বলেছি। আমি যা করিনি তা আমি বলিনি। আমার সব বলাগুলি, করা কথা ও করার কথা।"
অর্থাৎ উনি যা করেছেন তাই-ই বলেছেন, যা করেননি তা কখনো বলেননি। তাই উনি যা করেছেন তাই আমাদের করতে হবে, যা করেননি তা আমরা সৎসঙ্গীরা করবো না।
শ্রীশ্রীঠাকুরের এই কথার সঙ্গে এই রসুল প্রেমী নারীর কথার মিল খুঁজে পাই। তাই এই রসুল প্রেমী নারীর বক্তব্যের সঙ্গে আমিও সহমত পোষণ করি। তাঁর এই কথার প্রতি আমি সম্মান প্রদর্শন করি।
পরমপ্রেমময় রসুলও সারাজীবন যা করেছেন তাই বলে গেছেন কোরাণের মধ্যে দিয়ে। আর তাই-ই করতে হবে রসুল প্রেমীদের। এর বাইরে যদি কিছু তাঁর বলার সাথে অসঙ্গতি থাকে তাহ'লে তা ভুল বা অসম্পূর্ণ। তাই রসুলকে বুঝতে হ'লে কোরাণ পড়তে হবে। আর কোরাণের প্রকৃত অর্থ যদি বুঝতে হয় তবে মূল আরবিতে লেখা কোরাণ পড়তে হবে। অনুবাদ অনেক সময় অসঙ্গতিতে ভরা থাকে।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ব'লে যাওয়া বাণী ও যাবতীয় কথা বিশাল হিমালয় সদৃশ। তাঁর বাণীর সংখ্যা ২৪ হাজার ও কথোপকথন সমৃদ্ধ গ্রন্থ অজস্র। যা পৃথিবীর বুকে Unprecedented. এই বিশাল হিমালয় সদৃশ গ্রন্থরাজির রচনার সাথে শ্রীশ্রীঠাকুরের এই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি অন্য কারও কোনও ব্যাখ্যার প্রয়োজন সৎসঙ্গীদের পড়বে না; শুধু শ্রীশ্রীঠাকুরের কথাকে অনুসরণ করা ছাড়া। অন্ধের মতো, মূর্খের মতো তাঁর কথা যে মেনে চলে সে অন্ধ হ'য়েও প্রবল দৃষ্টিশক্তির অধিকারী এবং মূর্খ হ'য়েও মহা পন্ডিত।
আর যদি কেউ শ্রীশ্রীঠাকুরকে ও তাঁর ব'লে যাওয়া কথা গুলিকেই পরিবেষণ করে সকলের মাঝে নিজের জীবনে নিখুঁত ফুটিয়ে তোলার মধ্যে দিয়ে, জীবন্ত ক'রে রাখে নিজের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে তাঁকে শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে আমার চলার পথে আচার্য ক'রে রাখবো। কারণ তিনিই একমাত্র আমার সামনে জীবন্ত উদাহরণ ঠাকুরকে কেমনভাবে ভালোবাসবো, কেমনভাবে ঠাকুরকে জীবনে এক ও অদ্বিতীয় ক'রে নিয়ে চলবো, কেমনভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে তাঁর পূর্বের রূপকে অনুভব করবো, কেমন ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া
"স্রষ্টা এক অদ্বিতীয়
অনন্ত সৃজন,
দেব-দেবী প্রকট বীর্য্য
তাঁ'রই বিলক্ষণ।"-------- এই বাণীর মর্মার্থ বুঝতে পারবো সেই সব বিষয়গুলি নিজের জীবনে হাতে কলমে আচার আচরণের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলে আমাদের দেখিয়ে দিয়ে যান, শিখিয়ে দিয়ে যান একমাত্র তাঁকেই শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে তাঁরই embodiment আচার্য ক'রে রাখবো আমার জীবনে।
আমি একজন সৎসঙ্গী। আমি মনে করি, শ্রীশ্রীঠাকুরের কথানুযায়ী,
রসুলের জীবন ও তাঁর বাণী সম্বলিত কোরাণ সমার্থক। এর বাইরে যা কিছু বা অসঙ্গতি সব ভুল বা অসম্পূর্ণ।
২৫শে সেপ্টেম্বর'২৩)
https://www.facebook.com/reel/1355910201943494

উপলব্ধিঃ কাল কে দেখেছে?

কাল কে দেখেছে? একমুহূর্ত পরে কি হবে যখন জানি না তখন প্রতিটি মুহূর্তকে এনজয় করতে হয়।

সম্প্রতি গত শনিবার (৩০শে সেপ্টেম্বর'২৩) শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সম্মুখে সকালবেলা বসেছিলাম। সময় তখন সাড়ে দশটা। অনেকক্ষণ বসার পরে মেয়ে জামাই তাদের Little Buddha International Pre-school নিয়ে কথা বললো। তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ শ্রীশ্রীআচার্যদেব স্কুলের ফাউন্ডেশন, স্কুলের পরিবেশ, শিক্ষা পদ্ধতি, ক্যারিয়ার, বাচ্চাদের স্বাস্থ্য, বাবা-মায়েদের মানসিকতা, হিলিং সেকশান, স্কুল ও হিলিং সেকশানের নামকরণ, ইনভেষ্টারের সঙ্গে চুক্তি ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন।

তাদের কথা শেষ হ'লে অন্যদের নিবেদন শেষে আমার স্ত্রী ফ্ল্যাটের কঠিন সমস্যার বিষয় উত্থাপন করলে পরে আমি আচার্দেবকে সবিস্তারে বিষয় ব্যাখ্যা করলাম। পূর্ব কমিটির মেইন্টেন্যান্সের লক্ষ লক্ষ টাকার হিসাব না দেওয়া, মেইন্টেন্যান্সের টাকা বন্ধ ক'রে দেওয়া, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাকে নির্বাচন করা সত্ত্বেও পূর্ব কমিটির যোগ সাজসে বর্তমান কমিটির সদস্যদের আমাকে সহযোগীতা না করা ও পদত্যাগ করা, বিল্ডিংয়ের ইলেক্ট্রিক বিল জমা না পড়া, সুইপারের টাকা না দেওয়া, সম্প্রতি পূর্ব কমিটির অদূরদর্শিতার কারণে মোটর পাম্প নষ্ট হওয়া এবং নোতুন ক'রে বোরিং করা ও মোটর পাম্পের পিছনে দেড় লক্ষ টাকার অধিক খরচা হওয়া ও পুনরায় ফিল্টার পরিষ্কার না করা ইত্যাদি ইত্যাদি নানা সমস্যার কথা শুনে এবং উদ্বেগ দেখে শ্রীশ্রীআচার্যদেব বললেন,
"দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সবাই মানে? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সবাই মানে? সবাই আপনাকে মানবে এটা কোথায় লেখা আছে? আপনার নাক মুখ যদি কেউ চেপে ধ'রে তখন আপনার কি হবে?" আমি চুপ ক'রে থাকায় তিনি দ্বিতীয়বার বললেন, কি হবে? আমি দমবন্ধ কষ্টকর পরিস্থিতির কথা বলায় তিনি বললেন, "ঠিক তেমনি তাদেরও হবে। ফ্ল্যাটের লাইট চলে গেলে দরকার হ'লে ইনভার্টার কিনে নেবেন, জল না থাকলে জল কিনে খাবেন, বাইরে থেকে নিয়ে আসবেন। সমস্যা আপনার একার না। সমস্যা হ'লে সবার হবে। আপনি বিন্দাস থাকুন, পরিস্থিতি এনজয় করুন। দেখুন কি হয়।" এ কথা ব'লে আমার দিকে মিষ্টি হাসি হেসে চেয়ে রইলেন।

এরপরেও যখন আমি উদ্বেগে দুশ্চিন্তায় ভবিষ্যৎ ফ্ল্যাটের খারাপ অবস্থার কথা বললাম তখন তিনি পরিষ্কার ভাষায় বললেন, "আর যদি না পারেন তাহ'লে আপনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে রিজাইন দিন।" পরে কিছুক্ষণ উভয়পক্ষই চুপ থাকার পর অন্যান্যদের নিবেদনের মাঝে আমায় হাসি মুখে বললেন, "আনন্দে থাকুন, সিচুয়েশন এঞ্জয় করুন।"

একলহমায় আমি যা বোঝার, যা ইঙ্গিত পাওয়ার বুঝে গেলাম, পেয়ে গেলাম। মনের ওপর থেকে বিরাট একটা চিন্তার বোঝা নেমে গেল নিমেষে। নিজেকে বিরাট হাল্কা বোধ হ'লো। আমি চুপ ক'রে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। তারপরে স্ত্রী বাড়ি ফেরার আশীর্বাদ চাইলো। তিনি হাত দিয়ে দেখিয়ে বললেন, গাড়িতে এসেছেন? স্ত্রী হ্যাঁ বলায় তিনি বললেন, "ঠিক আছে। সাবধানে যাবেন।"

ততক্ষণে সময় হ'য়ে এসেছে নিবেদন শেষ হওয়ার। আমি প্রণাম ক'রে ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বেরিয়ে আসার সময় তাঁর আলোময়, রূপময় চোখের দিকে চেয়ে আর মধুময় মুখের মিষ্টি হাসিতে কি আর্শীবাদ ও অভয় যে পেলাম তা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব!

এখন আমি নিশ্চিন্ত। প্রতিটি মুহুর্ত এনজয় করছি।
কারণ, কি অদ্ভুতভাবে পরিস্থিতি ঘুরে যাবার পরিচয় পেলাম। দেওঘর থেকে ফিরে এলাম শনিবার রাতে। কলকাতায় বেহালার গ্রীণ ফিল্ডের ফ্ল্যাটে রাত কাটিয়ে পরদিন রবিবার সকালে জলযোগ সেরে ফিরে এলাম উত্তরপাড়ায় নিজের ফ্ল্যাটে। পরেরদিন ২রা অক্টোবর গান্ধী বার্থ ডে উপলক্ষে ছুটি। সকাল দশটার সময় ফ্ল্যাটের দু'জন এলেন দেখা করতে। জলট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার প্রয়োজনের কথা বললেন। তারা সবার সঙ্গে কথা বলেছেন বললেন। জলের ট্যাঙ্ক ইমিডিয়েট সেদিনই পরিষ্কার করার কথা বললেন। বললেন যে কোনও মুহুর্তে যে কারও শরীর খারাপ হ'তে পারে। বাড়িতে বাচ্চারা রয়েছে। বাড়ির মহিলারা ভয় পেয়েছে। তাই আমাকে জানাতে এসেছেন, আমার অনুমতি চাইলেন।

আমি অনুমতি দিলাম। অনেক কথা হ'লো। আমি বিক্ষিপ্ত ইন্টারেস্ট ছেড়ে টোটাল বিল্ডিং ইন্টারেস্টের কথা বললাম। বললাম, 'আমরা এক নৌকোর যাত্রী। নৌকো ফুটো হ'লে সবাই একসঙ্গে ডুবে মরবো। বিল্ডিংয়ের অবস্থা খুব খারাপ। বিল্ডিংয়ের ভালোর জন্য যা আপনাদের ইচ্ছা হয় করুন। আমি অনেকবার মিটিং ডেকেছি আপনারা একটা গ্রুপ আসেননি। আমাকে কোনও সহযোগীতা আপনারা করেননি। অথচ আমি আপনাদের সবসময় সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আপনারা ইমিডিয়েট মিটিং ডাকুন, আমায় আগের আয় ব্যায়ের হিসাব দিন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার হিসাব নিয়ে নিন। নোতুন কমিটি করুন। যাকে ইচ্ছা আপনারা কমিটিতে রাখুন। আমি 'ডাল রোটি খাও আর প্রভুকা গুণ গাও' মেন্টালিটির লোক। আমি রিজাইন দিয়ে দিচ্ছি। আপনারা বিল্ডিং পরিচালনা করুন।

তারা চুপ ক'রে রইলো। কোনও কথা বললো না। সমস্যা সমাধানের জন্য মিটিংয়ে বসার কথা স্বীকার করলো। ফান্ড শূন্য। কি ক'রে ট্যাঙ্ক পরিস্কারের টাকা দেবে সে কথা বললো না। আমিও কোনও কথা বললাম না। মিটার রুমের চাবি চাইলে দিয়ে দিলাম। তারা একরাশ উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা নিয়ে চলে গেল।

আমি আমার ড্রয়িং রূমে চুপ ক'রে বসে আসনে বসানো শ্রীশ্রীঠাকুরের ফটোর দিকে চেয়ে রইলাম, চেয়ে রইলাম ফটোয় শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মুখের দিকে। মনে পড়ে গেল শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কথা। আমার দু'চোখ ছলছল ক'রে উঠলো।

আমি বিন্দাস তাদের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা এনজয় করলাম।
(লেখা ৩রা অক্টোবর'২৩)

প্রবন্ধঃ আমার আচার্য শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

ইদানীং প্রায়ই শ্রীশ্রীআচার্য প্রসঙ্গ নিয়ে ফেসবুকে সৎসঙ্গীদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে তীব্র বাদানুবাদ হ'তে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের নানা বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝুক বা না বুঝুক তুলে ধরা হয়। শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী পড়ে নিজের মন মতো তার ব্যাখ্যা ক'রে শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে ইষ্ট হিসেবে তুলে ধরার অন্ধ প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব এ প্রসঙ্গে বহুবার নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাষায় তুলে ধরেছেন। যারা প্রায়শই দেওঘর যান, শ্রীশ্রীআচার্দেবের সম্মুখে নাটমন্ডপে বসেন এবং বিভিন্ন জনের মনোবাসনা, শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, পারিবারিক, চাকরী, ব্যবসা, পড়াশুনা, রোগ, শোক, অভাব, বাস্তু ইত্যাদি নানা সমস্যা, প্রশ্ন নিবেদনের সময় তাঁর সমাধান বাণী শোনেন তারা তাঁর বক্তব্য পেশের সময় তাঁর শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে অভিব্যক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু আবেগ তাড়িত ভক্ত সরাসরি শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখে নিজের মন মতো কথা 'আমার অবর্তমানে আচার্য্য রইবে এবং আচার্য্যই ইষ্ট' বসিয়ে দিয়ে শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে ইষ্ট বানিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁকে বিরোধীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ক'রে তুলেছেন এবং সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করছেন। আর শ্রীশ্রীঠাকুরের রেফারেন্স বা বিশদভাবে এ সম্পর্কে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখা জানতে চাইলে, জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে বিরক্ত হ'য়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন ও অযৌক্তিক তর্কে লিপ্ত হচ্ছেন। এই অতি আবেগতাড়িত ভক্তদের মধ্যে যাজক ও কিছু সহ প্রতি ঋত্ত্বিকও আছেন।

এছাড়া আর এক শ্রেণী সৎসঙ্গী আছে যারা ইউ টিউবে শ্রীশ্রীআচার্যদেব এই বলেছেন, শ্রীশ্রীঠাকুর ঐ বলেছেন সকালে-বিকেলে করতে ও ফটোগ্রাফির কলাকৌশলে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের হাত কাটা ছবি বানিয়ে তা প্রকাশ ক'রে হাতকাটা জগন্নাথের সঙ্গে তুলনা ক'রে শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে জ্যান্ত জগন্নাথ বানিয়ে জোর গলায় প্রচার ক'রে ভিডিও বানিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে নিয়েছে; এমন রোজগারের দল আজ সৎসঙ্গ প্ল্যাটফর্মে ভয়ঙ্কর ভাবে সক্রিয়।

এরা, যারা দূর্বল, ভীরু, কুসংস্কারাছন্ন, না ক'রে পাওয়ার মানসিকতা সম্পন্ন সৎসঙ্গীদের শ্রীশ্রীঠাকুরের চলনপুজোর পরিবর্তে মূর্তি পুজোর মতো চরণপুজো ও অলৌকিকত্বের উপর নির্ভরশীল ক'রে তুলে নিজেদের আয়ের নোংরা মানসিকতাকে পোষণ দিয়ে চলেছে। এদের ইউ টিউবে ভিউয়ারদের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায় এদের উদ্দেশ্য।

আর কিছু চালাক বুদ্ধিমান ধান্দাবাজ সৎসঙ্গী নাম নিয়ে নিজেরাই শ্রীশ্রীঠাকুরের নাম দিয়ে সংগঠন বানিয়ে নিজেরাই শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' ও ইষ্টভৃতি জমা রাখার প্রতিষ্ঠান 'ফিলান্ত্রপি' কে উপেক্ষা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরের বাঁচার এক ও একমাত্র মহা কৌশল, মৃত্যু নামক মহাভীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রতিকার, উপায় নিকুম্ভিলা যজ্ঞ স্বরূপ 'ইষ্টভৃতি' সাধারণ অজ্ঞ সৎসঙ্গীদের (?) কাছ থেকে আদায় ক'রে নিজেদের হেফাজতে রাখতে দ্বিধা করছে না বা ভয় পাচ্ছে না। শ্রীকৃষ্ণের চেতাবনিকে যেমন ভয় পায়নি শিশুপালের দল ঠিক তেমনি দয়ালের ভয়াল রূপকেও এরা ভয় পায় না। এরা আজকের শিশুপাল। এরা সিদ্ধ না হ'য়েও স্বঘোষিত ঋত্বিক হ'য়ে কাঁধে স্বনির্মিত ঋত্বিকের দন্ড নিয়ে মানুষকে 'সৎসঙ্গ' বিরোধী কথা ব'লে, শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নামে কুৎসা ও মিথ্যা রটনা ক'রে বিভ্রান্ত ক'রে অবৈধ দীক্ষা দিয়ে চলেছে। এরা সিদ্ধ না হ'য়ে নিজেরাও মরছে ও অন্যদেরও মারছে আর ক'রে চলেছে সমাজের ক্ষয়।

যাই হ'ক, এ প্রসঙ্গে বহুবার আলোচনা করেছি। আবারও যৎসামান্য তুলে ধরছি।
প্রশ্নঃ ইষ্টানুসরণে ধ্যান করতে হয় কা’র?
শ্রীশ্রীঠাকুরঃ যুগাবতার ছাড়া অন্য কেউ ধ্যেয় নন।
প্রশ্নঃ তাঁর অবর্ত্তমানে কি হবে?
শ্রীশ্রীঠাকুরঃ যুগাবতারের অবর্ত্তমানে তাঁতে অচ্যুত-আনতিসম্পন্ন, ছন্দানুবর্ত্তী, জীবন-বৃদ্ধিদ আচরণ-সিদ্ধ তঁদ্ বংশধর ইষ্ট-প্রতীকস্বরূপ থাকতে পারেন। পরবর্ত্তী এসে গেলে তখন তিনিই হবেন ধ্যেয়। [আ.প্র.১/৮.১.১৯৪০]

"ইষ্ট গুরুপুরুষোত্তম
প্রতীক গুরু বংশধর
রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর। "-------শ্রীশ্রীঠাকুর।

সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর যুগ শেষে ঘোর কলিযুগের যুগাবতার হ'লেন পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন যুগাবতার রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ-এর পরবর্তী রূপ। তাঁকে যুগাবতার না ব'লে বলা উচিৎ যুগাবতারী। তিনি যুগাবতারী। অর্থাৎ যিনি যুগাবতারদের প্রেরণ করেন অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা। সেই অর্থে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ প্রত্যেকেই হ'লেন যুগাবতারী। অর্থাৎ তিনি নিজেই নিজেকে প্রেরণ করেন। তিনি নিজেই যুগাবতার ও যুগাবতারী।

আর যত জীবকোটি ও ঈশ্বরকোটি মানুষ আছে সবাই অবতরণ করেছে এই ধরাধামে। সেই অর্থে সবাই অবতার।

আর, পরবর্তী যুগাবতারী যতক্ষণ না আসছেন ততক্ষণ শ্রীশ্রীঠাকুরই ধ্যেয়। পরবর্ত্তী যুগাবতারী এসে গেলে তখন তিনিই হবেন ধ্যেয়। আর শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা হ'লেন যুগাবতারী দয়াল ঠাকুরের অবর্তমানে তাঁতে অচ্যুত-আনতিসম্পন্ন, ছন্দানুবর্ত্তী, জীবন-বৃদ্ধিদ আচরণ-সিদ্ধ তঁদ্ বংশধর ইষ্ট-প্রতীকস্বরূপ। যাকে আমরা আচার্য বলি। তিনি হলেন শ্রীশ্রীঠাকুর কথিত প্রেষ্ঠটানে মাতাল প্রবৃত্তিভেদী normally adjusted solved man, ঈশ্বরকোটি পুরুষ।

শ্রীশ্রীঠাকুর ইষ্ট, পুরুষোত্তম, পরমপিতা, জীবন্ত ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তা, এক ও অদ্বিতীয়, সদ্গুরু, পরম কারণ, সর্ব্বশক্তিমান, সর্বসর্শী, সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী, পরমপ্রেমময় ও শ্রীশ্রীঠাকুরই আচার্য। শ্রীশ্রীঠাকুরই আচার্য কারণ তিনি জীবন সম্পর্কে, জীব, জগত সম্পর্কে, বাঁচা ও বাড়া সম্পর্কে, ধর্ম, ইষ্ট, কৃষ্টি সম্পর্কে যা যা ব'লে গেছেন তাঁর হাজার হাজার বাণী, লক্ষ লক্ষ কথার মধ্যে সবটাই তিনি আচরণ ক'রে ও করিয়ে দেখিয়ে, শিখিয়ে, বুঝিয়ে, চিনিয়ে, জানিয়ে দিয়ে গেছেন। আর এইভাবে আট আটবারই তিনি ক'রে করিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আচার্য পরম্পরা নিয়ে বিতর্ক যদি হয়েই থাকে শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশূ, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ আর সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর এরাই হলেন সেই অর্থেই আচার্য পরম্পরা।

কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরকে কেমন ক'রে ভালোবাসবো? শ্রীশ্রীঠাকুরের বলে যাওয়া বাণীর মূর্ত রূপ কে? শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে তাঁর প্রতিফলন, প্রতিবিম্ব কার মধ্যে দেখতে পাবো যতদিন না তিনি আবার আসবেন? এই সমস্ত কিছুর উত্তর যার জীবনের মধ্যে, চরিত্রের মধ্যে প্রকাশমান সেই মূর্ত বিগ্রহ হলেন আমার আচার্য। তিনি আমাদের দেখিয়ে দেন ক'রে ও করিয়ে কেমন ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ভালোবাসবো, কেমন ক'রে তাঁর ব'লে যাওয়া বাণীকে নিজের জীবনে, চরিত্রে মূর্ত ক'রে তুলবো, কেমন ক'রে আমার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রকাশ ঘটাবো। তাই তিনি আচার্য। প্রভুর অবর্তমানে প্রভুকে মাথায় নিয়ে নামময় হ'য়ে কেমন ভাবে চলবো সে চলনা যিনি আমায় দেখিয়ে দেন সেই তিনিই আমার প্রেমিক সুজন, আমার চালক আচরণ সিদ্ধ শ্রীশ্রীআচার্য। তিনি হ'লেন আমার আচার্য শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

তাই আবার বলি, বারবার বলি, শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা হ'লেন এক ও একমাত্র প্রেষ্ঠটানে মাতাল প্রবৃত্তিভেদী normally adjusted solved man, ঈশ্বরকোটি পুরুষ।

প্রভুর অবর্তমানেঃ
"ধরুন, আমি প্রভুকে দেখিনি, কিন্তু তাঁকে আমি ভালোবাসতে চাই। এজন্য আমার এমন একজনের সঙ্গ লাভ করা প্রয়োজন, যে তাঁকে কায়মনোবাক্যে ভালোবাসে ও অনুসরন করে। এই প্রেমী সুজনের সান্নিধ্য লাভ তাই সৌভাগ্যের কথা। তবে যাকে তাঁকে চালক হিসাবে নির্বাচন করা ঠিক নয়। দেখতে হবে প্রবৃত্তিভেদী প্রেষ্ঠটান তাঁকে normally adjusted solved man এ পরিনত করেছে কিনা।"
------শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র
(আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫০)

তাই, সাকার ঈশ্বর অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বর ছাড়া যেমন নিরাকার ঈশ্বরের কাছে পৌছোনো যায় না, ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীআচার্যদেব ছাড়া জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ সাকার ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কাছে পৌছোনো যায় না, অনুভব ও উপলব্ধি করা যায় না।

যদি ভন্ডামি না হ'য়ে থাকে, কপটতা জীবনকে ঘিরে না রাখে, ছল চাতুরী ও ব্যভিচারী ভক্তির অধিকারী না হ'য়ে থাকে, যদি সময় নষ্ট না ক'রে, অল্প দিনের জন্য আসা মহার্ঘ জীবনকে জন্ম জন্মান্তরের জন্য নরকের দ্বারে বসাতে না চায়, বসাতে না চায় নিজেকে ও পরিবারের সবাইকে ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের এবং সত্যি সত্যিই প্রকৃতই সাকার ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে পৌঁছোতে চায় সৎসঙ্গীরা তাহ'লে 'সৎসঙ্গ'-এর বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার শরণাপন্ন হ'তেই হবে। নতুবা শ্রীশ্রীঠাকুর গ্রহণ বৃথা ও ব্যর্থ হবে জীবন। আর শেষের সেদিন ভয়ংকর।

Wednesday, October 11, 2023

প্রবন্ধঃ বিরোধীতার ছবি ও ফেসবুক।

বাংলাদেশে ভারত বিরোধীতার ছবি প্রায় সময় দেখতে পায় ফেসবুকে। এখন ফেসবুক গঠনমূলক কাজের চেয়ে সম্পর্ক ভাঙার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বেশী! ধর্ম, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, খেলা, পরিবার ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই সম্পর্ক ভাঙার চক্রান্তের খেলা চলছে আর তার প্রচারের বলিষ্ঠ হাতিয়ার বা মাধ্যম রূপে আবির্ভুত হয়েছে ফেসবুক! ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো দায় বা দায়িত্ব আছে ব'লে মনে হয় না! ফেসবুকের এমন একটা ভাব যেন একটা প্ল্যাটফর্ম খুলে দিয়েছি যার যেমন ইচ্ছে, যেমন খুশি তেমন একে অপরের বিরুদ্ধে বমি করতে পারবে তা সে টক-মিষ্টি-ঝাল-তেতো, অশ্লীল, কুশ্লীল যাই-ই হ'ক না কেন! 

রকমই কিছু নোংরা খেলা ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে নষ্ট করার জন্য সংগঠিতভাবে হ'য়ে চলেছে! ফেসবুকের মধ্যে দিয়ে সেখানে পাকিস্তানকে এমনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যেন পাকিস্তান একটা উন্নত সভ্য মানবতাবাদী দেশ আর ভারত একটা সাম্রাজ্যবাদী শোষণকারী প্রতিবেশী দেশ! বাংলাদেশের এইভাবে পাকিস্তান প্রেম আর ভারত বিরোধিতা ও ঘৃণার বীজ বপন করা যায় না। ৭১-এর ইতিহাস যারা ভুলে যায় তারা অকৃতজ্ঞ, গদ্দার, বেঈমান!!!!!!!! পাকিস্তানের মহানতা সেদিন বাংলাদেশের মাটিতে কি রূপ নিয়েছিল সম্ভবত সেদিনের প্রজন্ম আজও ভোলেনি। যে ভারত সেদিন আন্তর্জাতিক হুমকি উপেক্ষা ক'রে, আমেরিকার ভারতের উপকূলে ভারতের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর চোখ রাঙানিকে পরোয়া না ক'রে দরিন্দা পাকিস্তান কিলবিসের হাত থেকে বাংলার মা-বোনেদের ইজ্জৎ, আব্রু রক্ষা করার জন্য, ভয়ঙ্কর নর সংহারের হাত থেকে দেশবাসীদের রক্ষা করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বলিষ্ঠ কঠিন নেতৃত্বে ভারত যে ভূমিকা পালন করেছিল আমার স্থির বিশ্বাস সেই সাহায্য সহযোগিতা ভোলেনি প্রকৃত বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক! হাজার হাজার মা-বোনেদের ইজ্জৎ নষ্ট করার, চরম অত্যাচার করার, জানোয়ারের মত ভোগ করার পর নির্মমভাবে হত্যা করার ভয়ঙ্কর ইতিহাস, ইতিহাসের নায়কদের যারা ভুলে যায় তারা যে ঘর শত্রু দরিন্দা এতে সন্দেহ নাই।

বাংলাদেশের মানুষ এখনও এতটা চার অক্ষর হ'য়ে যায়নি যে অকৃতজ্ঞ, বেঈমান, গদ্দার পাক দালালদের প্রচারে প্রভাবিত হবে, প্রভাবিত হ'য়ে সত্যকে অস্বীকার করবে। বেঈমান, অকৃতজ্ঞ, নেমকহারাম, গদ্দাররা যেন ভুলে না যায় বাঙালির রক্তে এখনও খাঁটি আৰ্য্য রক্ত বইয়ে চলেছে! এই খাঁটি বাঙালী আর্য্য জাতির রক্তে হিন্দু-মুসলমান নেই, নেই নোংরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ! এই খাঁটি আর্য্য রক্তে আছে সম্প্রদায় নিরপেক্ষতা, আছে পরস্পর পরস্পরকে ধ'রে রাখার মন্ত্র, আছে সম্প্রদায় নিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থায় বাঁচা-বাড়ার দিশা! ভারতের পক্ষ থেকে যদি অন্যায়-অত্যাচার হ'য়ে থাকে তাহ'লে তা তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ সহ ভারত সরকারের কাছে অভিযোগ দায়ের হ'ক, আন্দোলন হ'ক কিন্তু মিথ্যা কপট প্রচারে পাকিস্তানের ক্ষমাহীন পাপ ভুলে গিয়ে পাক প্রশংসার দামামা বাজানো আর ঘর শত্রু দুর্যোধনের কাজ সমার্থক!!!!

বাংলাদেশকে মনে রাখতে হবে বাস্তব ও সত্য! ভারতের সঙ্গে বিরোধিতা বাংলাদেশের পক্ষে কখনোই মঙ্গলজনক হবে না! মনে রাখতে হবে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণকে যে সেদিন ৭১ সালের ভয়ঙ্করতম দিনগুলিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মত কেউ ছিল না, কোনও দেশ ছিল না সেদিন! ছিল ভারত! ছিল ভারতমাতা সেদিন। ছিল সেদিন নাড়ি ছেঁড়া টানের প্রকৃত অভিব্যক্তি!!!! এই নাড়ি ছেঁড়া টানের যন্ত্রণা বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার! আশা করি বাংলাদেশের দূরদৃষ্টি ও অনুভূতিসম্পন সচেতন মানুষ, প্রকৃত জ্ঞানী মানুষ, দেশভক্ত মানুষ এই নাড়ি ছেঁড়া টানের মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারবেন! (লেখা ১২ই অক্টোবর'২০১৯)

প্রবন্ধঃ ঈশ্বরের বিদায়!!!!!!

অবশেষে! সচিন অবসর ঘোষণা করলেন। আর ক্রিকেট ব্যাট হাতে মাঠে দেখা যাবে না তাঁকে। হয়তো দেখা যাবে অন্য কোন রুপে। ক্রিকেট মাঠে, দর্শকের হৃদয়ে, ইতিহাসের পাতায় রেখে গেলেন অবিশ্বাস্য একটা মোটা দাগ। যে দাগ জুড়ে গেল সৃষ্টির আয়ুর সঙ্গে। এরকম ভাগ্য ক’জনের হয়? প্রতিভা অনেকের থাকে কিন্তু এমন উজার ক’রে দেওয়া ভাগ্যের দয়া ক’জন পায়? ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়! ষোল বছর বয়স থেকে শুরু ক’রে আজ পর্যন্ত ক্রিকেট ইতিহাসে লিপিবদ্ধ ঘটনাগুলি তার প্রমাণ। অভিধানের সব বিশেষণ তাঁর ক্রিকেটীয় জীবনের বিশ্লেষণের জন্য কম পড়ে গেল। এরকম প্রতিভা আর ভাগ্যের সংমিশ্রণ কোটিকে গোটিক! অনেক অনেক বছর অপেক্ষা ক’রে থাকতে হবে ভারত তথা বিশ্বকে আবার এমন বিস্ময়ের জন্মের জন্য। ভারত ভাগ্যবান, ভাগ্যবান সচিন; ক্রিকেটের ডন ‘ডন ব্র্যাডম্যান’-এর পরে বা আগে কিম্বা একসঙ্গে আর কারও নাম উচ্চারিত হ’তে পারে! পেলে আর মারাদোনা নিয়ে বিতর্ক হ’তে পারে, চুলচেরা বিচার হ’তে পারে সমর্থক কিম্বা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে; কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও পেলেকে বলা হয় ফুটবলের সম্রাট আর মারাদোনাকে বলা হয় ফুটবলের রাজকুমার। কিন্তু ব্র্যাডম্যান আর সচিন এর মধ্যে এমন কিছু এখনও পেলাম না। হয়তো আরও পরে বিতর্ক বা চুলচেরা বিচার হবে। এবং হবেও। এটাই ইতিহাসের নিয়ম। ভাঁটার টানে সব হয়। ইতিহাস উল্টো দিকে হাঁটে। নতুন ক’রে ইতিহাস লেখা হয়। তা’ না’হয় যখন হবার হবে। কিন্তু এখন ক্রিকেটের ঈশ্বর বা ভগবান-এর নাম সচিন তেন্ডুলকর। 

কিন্তু এত কিছুর পর একটা দুঃখ থেকে যায় ঈশ্বরের জন্য। ক্রিকেট মাঠে তিনি যেমন বোলারদের বিরুদ্ধে রাতের ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন হ’য়ে দেখা দিতেন ঠিক তেমনি বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাদাগিরির বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে, ক্রিকেট খেলোয়ারের প্রতি অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে তাঁর vocal bat কোনোদিনই ঝলসে ওঠেনি, গর্জে ওঠেনি। তিনি বোধহয় ভাবতে পারেননি তাঁর vocal bat যদি গর্জে উঠত তা’হলে আজকের বোর্ডের এই চরম নোংরামি ভারতকে কলঙ্কিত করত না। হয় তিনি নিজের সম্পর্কে এতটা confidence ছিলেন না আর না’ হ’য় টিকে থাকার theory ‘keep shut your mouth’ ভালো ভাবেই রপ্ত করেছিলেন এই শয়তানের যুগে টিকে থাকার জন্য; যা’ পরবর্তী প্রজন্মকে ক্রিকেট বিশ্বে পথ চলতে সাহায্য করবে। এই যুগে সবচেয়ে অপ্রিয় হলেও সবচেয়ে বড় সত্য ‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড় ধরা,’ আর। আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা।‘
(লেখা ১১ই অক্টোবর'২০১৩)

No photo description available.

Monday, October 9, 2023

গানঃ আলো জ্বলে

আলো জ্বলে চরণ তলে ডুবলো পোড়া মন!
ঘুম আসে না, মন বসে না, প্রাণ যে উচাটন!!
চরণ তলে পরান আমার সদাই করে বাস
ধিকি ধিকি বুকে আগুন জ্বলছে বারোমাস!


বৃত্তি সুখের উল্লাসে প্রাণ তাই পাখনা মেলেছি
রিপুর টানে ঘর ভেঙেছি এখন কাঁদলে হবে কি
আলোর মালা দিচ্ছে দোলা মিটিমিটি চায়
দেখি প্রভুর নয়ন জোড়া ডাকছে যে আমায়!


যাদবপুরে লিখন পড়ন খড়্গপুরে শিক্ষা
যতন ক'রে পড়লি ওরে তাও মেরুদন্ড বাঁকা!
দিল্লিওয়ালা রতন তুমি দেশের সেরা উপহার
দিনে দিনে বাড়ছে দেখো কেমন দেশের বাহার!


ঘরে ঘরে দাও উলুধ্বনি শঙ্খ সবাই বাজা
দয়াল আমার দেয় দরশন আসন তাঁরই সাজা!
হৃদমাঝরে রাখলে তাঁরে হৃদয় খুলি খুলি যায়
ঝিরি ঝিরি প্রেম নদী বুকের মাঝে বায়।

মাতাল আমি তোমার প্রেমে আজ অন্ধ হয়েছি
তোমার রঙে রাঙিয়ে আমায় পাগল করেছি। 
নাম মদের নেশা জমেছে খাসা ভাবনা আমার কি? 
নেশা বলছে আমায় ভালোবাসায় তোমায় পাগল ক'রে দিই।

(লেখা ১০ই অক্টোবর'২০১৯/ কালো জলে কুচলা তলে গানে সুরে।)

প্রবন্ধঃ ধর্ম ও ধর্মান্তর ৬

(পরবর্তী ও শেষ অংশঃ)

অনেকে বলেন, বুক বাজিয়ে বলেন, স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হ'তে চাইলে সমস্যা কোথায়?
তখন বলতে ইচ্ছে করে, স্বেচ্ছায় তো বিশ্বজুড়ে ঘরেবাইরে, সমাজে, রাজ্যেরাজ্যে দেশেদেশে স্বেচ্ছাচারিতার বীজ বপন হ'য়ে চলেছে। ধর্ম্ম, শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই যা ইচ্ছা তাই-ই হ'য়ে চলেছে। আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমি স্বাধীন তাই আমার অধিকার রয়েছে আমার বোধবুদ্ধি মতো যা ইচ্ছা তাই-ই করার, যা ইচ্ছা তা বলার। আমি/আপনি করছিও তাই। সমস্যা কি? সমস্যা আছে কিছু?
যে কেউ যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে, যেখানে ইচ্ছা খেতে পারে, যেখানে ইচ্ছা শুতে পারে, বসতে পারে, থাকতে পারে। কারও কিছু বলার নেই। যদি অবশ্য সে স্বেচ্ছায় তা করে। কারণ আমার স্বাধীনতা, আমার স্বাধীন ইচ্ছা একান্তই আমার। স্বেচ্ছাচারিতা ও উশৃংখলতার প্রশ্রয় পাওয়া আমার জন্মগত অধিকার। তাই নয় কি?

ঠিক তেমনি যে কেউ নিজের ইচ্ছায় নিজের ধর্ম্ম ত্যাগ করতেও পারে, অন্য ধর্ম্ম গ্রহণ করতে পারে। আবার ধর্ম্ম আফিম ব'লে ধর্ম্মকে নাও মানতে পারে। আবার যেদিন ভালো লাগবে না ধর্মগুরু ধ'রে প্রায়শ্চিত্ত ক'রে পুরোনো ঘরে ফিরে আসতেও পারে। যস্মিন দেশে যদাচার!

আর যদি তা না হয়? উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উসকে দিয়ে উদারতার ভঙ্গী নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে সাধারণ সীমাহীন ভাঙ্গাচোরা লেখাপড়া না-জানাওয়ালা অশিক্ষিত মধ্যবিত্ত গরীব প্রান্তিক মানুষগুলোর অসহায় অবস্থা ও দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অর্থ মান যশ পাওয়ার লোভ দেখিয়ে মগজ ধোলাই ক'রে যদি মানুষগুলোর মুহূর্তের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজ কার্য সিদ্ধ করার খেলা হবে খেলা হবে স্লোগান তুলে ঘৃণ্য খেলায় মাতে তখন তাকে পাঠক আপনি কি বলবেন? স্বেচ্ছায় ধর্মান্তর? আর এই যে কার্যসিদ্ধির খেলার কথা বললাম এই খেলার শিকড় কত গভীরে তা কি পাঠক আপনার জানা আছে? জানার কথা ছেড়ে দিলাম আদৌ কি ধারণা করতে পারেন এর পিছনে কোনও গভীর ভয়ংকর সর্ব্বনাশা চক্রান্তমূলক ষড়যন্ত্র আদৌ আছে কিনা? কি বলবেন পাঠক আপনি?

আচ্ছা এই যে দশ হাজার হিন্দু ধর্মান্তরিত হ'লো এতে লাভ হ'লো কার? নিঃসন্দেহে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মুরুব্বীদের। তাদের সংখ্যা বাড়লো। তাই তো? যারা ধর্ম্মান্তরিত হ'লো তাদের কি লাভ হ'লো? তারা কি জাতে উঠলো? রাতারাতি আর্থিক, সামাজিক উন্নতি হ'লো? ট্রাডিশনাল জীবনযাপনের ধারা বদলে গেল? যা হিন্দুধর্মে পায়নি। আচ্ছা তারা কি হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি, হিন্দুধর্মের জাতপাত, হিন্দুধর্মের কুসংস্কার, অত্যাচার ইত্যাদি খারাপ দিক থেকে চিরতরে মুক্ত হ'য়ে গেল? বৌদ্ধধর্ম্ম কি ওয়াশিং মেশিন? ওখানে সব ভালো, উন্নত, পবিত্র ও স্বর্গীয় ভাবধারা ও আচার আচরণ, রীতিনীতি? ওখানে গেলেই মানুষ ঝকঝকে তকতকে হ'য়ে যাবে?

আচ্ছা এর আগেও যারা ধর্ম্মান্তরিত হয়েছে তারা কি ভাল আছে? তারা কি সবাই ঝকঝকে তকতকে হ'য়ে গেছে বৌদ্ধধর্মের ওয়াশিং মেশিনের ধাক্কায়? খোঁজ নিয়েছেন কেউ? ধর্ম্মান্তরিত হ'লেই কি সামাজিক, আর্থিক ভালো থাকা যায়, সুখে থাকা যায়? ধর্মান্তর কি সুখে থাকার, শান্তিতে থাকার, মানব সভ্যতা বিকাশের চাবিকাঠি? আচ্ছা হিন্দুধর্ম না হয় খারাপ তা বৌদ্ধধর্ম ভালো হ'লো কি কি গুণের অধিকারী হ'য়ে? কিছুদিন আগে আমরা কি দেখেছি? রোহিঙ্গাদের কারা নির্ম্মমভাবে মেরে, অমানুষিক অত্যাচার ক'রে দেশ ছাড়া করেছিল? যারা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করলো তাদের সামনে কি বৌদ্ধদের এই অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়েছিল?

আচ্ছা অনেকে আবার প্রায়শ্চিত্ত ক'রে পুনরায় অনুতপ্ত হৃদয়ে পুরোনো নিজ ধর্মে ফিরে আসেই বা কেন?

আচ্ছা হিন্দুধর্মের বা বৌদ্ধধর্মের কিম্বা অন্য যে কোনও ধর্মের ভগবান ঈশ্বররা কি এই অত্যাচারের কথা বলেন বা ধর্মান্তরিত হওয়া অনুমোদন করেছেন? সনাতন ধর্মের বা হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থের কোথাও এই ধর্মের নামে উচ্চবর্ণের আরো পরিস্কার ক'রে বলা যেতে পারে ব্রাহ্মণদের দ্বারা নিম্নবর্ণের মানুষকে অত্যাচারের কথা বলা আছে? স্বীকৃতি আছে? তাহ'লে ধর্মের নামে উচ্চবর্ণের মানুষের দ্বারা নিম্নবর্ণের মানুষের ওপর এই মানসিক শারীরিক অত্যাচার যা শাস্ত্র দ্বারা অনুমোদিত নয় কে বা কারা সৃষ্টি করেছে?

তাহ'লে কায়েমী স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বা নিজের মন মতো মৌরসি পাট্টা বজায় রাখার বিরুদ্ধে কি প্রতিবাদ মানেই নিজ ধর্ম ত্যাগ করা ও অন্য ধর্ম গ্রহণ করা? আবার অন্য ধর্ম গ্রহণ করার পর সেই ধর্মেও যখন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের রমরমা পরিলক্ষিত হয় তখন কি অবস্থা হয়? সাপের ইঁদুর মনে ক'রে ছুঁচো গেলার অবস্থা। ছুঁচোর দূর্গন্ধে সাপ না পারে ছুঁচোকে গিলতে আবার না পারে উগলাতে! টাকরায় আটকে প্রাণ ওষ্টাগত হওয়ার অবস্থা। প্রাণ যায়ও চলে কখনো কখনো। ধর্মান্তরিদের অবস্থাও তথৈবচ।

এখন এই পর্যন্ত। পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে যদি আলোচনা এগোয়।
(লেখা ১০ই অক্টোবর'২০২২)

প্রবন্ধঃ ধর্ম ও ধর্মান্তর ৫

( ধর্ম ও ধর্মান্তর ১, ২, ৩, ৪ এর পরবর্তী অংশঃ )

দিল্লীতে রাজনৈতিক নেতার হাত ধ'রে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পর ধর্ম জগতে প্রবেশ ক'রে প্রকাশ্যে হিন্দু দেবদেবী ও পুরুষোত্তমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে তাঁদের না মানার শপথ গ্রহণ ক'রে 'বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি' বলতে পারে হিন্দুধর্ম ত্যাগী দলিত হিন্দুরা। প্রশ্ন জাগে মনে, বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ না ক'রে প্রকাশ্যে বুদ্ধং শরং গচ্ছামি বলতে অসুবিধা কোথায়? আমিও একজন হিন্দু হ'য়ে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ্যে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক অকৃত্রিমভাবেই বলছি 'বুদ্ধং শরং গচ্ছামি'। এর সঙ্গে আরও বলছি, ধর্ম্মং শরণং গচ্ছামি, সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি'। এতে বাহাদুরির কি আছে? আর ভুল বা পাপ বা অন্যায় ও দোষেরই বা কি আছে? কেন একজন হিন্দু বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি বলতে পারবে না? কেন একজন বৌদ্ধ জয়শ্রী রাম বলতে পারবে না? ঠিক তেমনি মুসুলমান, খ্রিষ্টানদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হিন্দু ধর্মে পুরুষোত্তম রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, রামকৃষ্ণ, সৎসঙ্গের ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র, খৃস্টান ধর্মে পুরুষোত্তম যীশু, মুসলমান ধর্মে পুরুষোত্তম মহম্মদ তিনারা কি বলেছেন অন্য কোনও ধর্মের পুরুষোত্তমদের নামে জয়ধ্বনি দেওয়া যাবে না? তাঁরা কি বলেছেন পরস্পর পরস্পরকে ঘৃণা করো? তাঁরা কি বলেছেন অন্য ধর্মের ইষ্টদেবতাকে ঘৃণা করো, কুৎসা করো, ভাঙচুর করো আর দাঙ্গা করো? এগুলি কারা শেখাচ্ছেন? কেন শেখাচ্ছেন?
(লেখা ১০ই অক্টোবর'২০২২)
ক্রমশ

কবিতাঃ পাবিই পাবি।

মিষ্টি মুখ! মিষ্টি মন!!
মিষ্টি হৃদয়! মিষ্টি জীবন!! তবুও
হৃদয় মাঝে হচ্ছে বৃষ্টি!
শুধুই বৃষ্টি সারাক্ষণ!!
কথার বৃষ্টি! বৃষ্টির কথা!!
কথা তো নয় অশ্রুধারা
ধারা মাঝে আছে মিশে’
আনন্দ আর দুঃখ, ব্যথা।
কিসের ব্যথা, কিসের দুঃখ
কিসের কষ্ট, যন্ত্রণা অনুক্ষণ?
জীবন মাঝে ঘুমিয়ে যিনি
জাগাও তাঁরে, জাগাও বন্ধু!
তিনি আনন্দধারা চিরন্তন!
ভালোবাসা হারিয়ে জীবন তুমি
ভালো বাসা গড়তে চাও!
শেষের দিনে দেখলে শুধুই
বিনিময়ে বাসা আছে প’রে
দুঃখ-কষ্ট-জ্বালা-যন্ত্রণায় ভ’রে
মণিমাণিক্যে হায় জ্বলছে বাসা
তোমার জ্বলছে জীবন নাও।
তাই তো বলি, জীবন তুমি
যদি ভালো বাসাই গড়তে চাও
ভালোবাসার সমুদ্র ঐ ডাকছে তোমায়
এসো বন্ধু! অবগাহনে জীবন জুড়িয়ে নাও।
বুক ফাটিয়ে বলছি তোমায়
জীবন খুঁজে পাবে হেথায়
‘ভালো’র মাঝে ডুবিয়ে জীবন
জীবন! তুমি জীবন খুঁজে পাও।
‘ভালো’ তে বাস করলে পরে
ভালোবাসা আসবে উড়ে
মেঘের মত থরে থরে
শরত আকাশ আসবে নেমে
থাকবে না আর জীবন থেমে
দখিনা হাওয়ায় থাকবে ভ’রে ঘর
দেখবে ভালো বাসা কেমন উঠছে গড়ে
আর থাকবে না সেথায় দুঃখ-ব্যথা-ডর।
আয় ছুটে আয় আয়রে সবাই
সমুদ্রেতে যাবি; বুক ফাটিয়ে বলছি
আবার, বন্ধু সেথায় জীবন খুঁজে পাবি।
পাবি বন্ধু! বলছি, পাবি-পাবি-পাবিই পাবি!!
(লেখা ৯ই সেপ্টেম্বর' ২০১৭)

উপলব্ধি সত্য ও মিথ্যা।

আমি মরে গেছি, আমার দেহে আর প্রাণ নেই, প্রাণ থাকার আর কোনও এতটুকুও সম্ভাবনা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে অবশিষ্ট নেই যার সাক্ষ্য বহন করে আমার শরীরের প্রতিটি অর্গান তার অর্থ আমি সত্যি সত্যিই মরে গেছি। আর আমার এই স্পন্দনহীন মরে যাওয়া মৃত শরীরটা হ'লো সত্য।

আর আমার শরীরের প্রতিটি অর্গান অক্ষত থাকা সত্বেও যদি হৃদয়ের প্রাণ স্পন্দন বেরিয়ে যায় আর ডাক্তাদের ডাইমেনশান পেরিয়ে অনন্তলোকে অবস্থানরত শরীর, যে শরীর মৃত না হওয়া সত্ত্বেও ডাক্তারদের সীমিত জ্ঞান দ্বারা মৃত ঘোষণা করা হয় আর সেই বেরিয়ে যাওয়া স্পন্দন বা কম্পনকে যদি কোনও অতি উন্নত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ভাইব্রোমিটারের সাহায্য কোনওদিন ডাক্তারদের দ্বারা কথিত সেই তথাকথিত মৃত শরীরের হৃদয় মাঝে আবার প্রবেশ করিয়ে দেওয়া যায় আর আমি আবার আমার প্রিয়জনদের মাঝে ফিরে আসি তাহ'লে এটা হবে সত্য, মহাসত্য।

(মহাজাগতিক অলৌকিক জগতের ধারণাকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লৌকিক জগতের বুকে বাস্তবায়িত হওয়ার পথে মহাচমৎকারী গবেষণালব্ধ অসম্পূর্ণ আবিস্কার মৃত মানুষের দেহে প্রাণ সঞ্চার প্রকল্প বিজ্ঞানীর বিজ্ঞানী পরম বিজ্ঞানী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'ভাইব্রোমিটার'।

আর, আমি বেঁচে থেকেও মৃত, আমি জীবিতের মাঝে জীবিত হ'য়েও মরে আছি, আমার প্রতিটি কোষ, প্রতিটি শিরা, প্রতিটি স্নায়ু এই জ্যান্ত জড়বৎ শরীরে মৃত অবস্থায় বিদ্যমান আর প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে অন্তরে ও বাহিরে আমি একটু একটু ক'রে মরে যাচ্ছি এই মহামানবের মিলন তীরে, এই বেঁচে থাকা মিথ্যা, মহা মিথ্যা।
(লেখা ৯ই অক্টোবর'২০১৭)

কবিতাঃ হে দয়াল!

যত তোমার থেকে দূরে গেছি তত মন বলেছে,
'ফিরে চল মন! ফিরে চল নিজ নিকেতন!'
কবিতায় যত ডুব দিই তত পঙক্তি বলে,
ছলে বলে কৌশলে এ আবর্জনা ফেলে
ফিরে চল, ফিরে চল মন নিজ নিকেতন!
যেথা আছে আমার বড় প্রিয়, বড় আপনজন!!'
যত হ'ই একেলা প্রিয়জন ছেড়ে দূরে
অবহেলায় ভরা রিক্ত জীবন বলে,
ফিরে চল, ফিরে চল মন আপন কেতন
যেও না দূরে মরীচিকায় ঘেরা রঙিন নীড়ে
যেথা আছে ঘিরে রিপুর ভিড়ে লুকিয়ে শাতন!
হে দয়াল!
পারি না ফিরিতে, কিছু পারি না বলিতে, পারি না সহিতে আর.........
বিচ্ছেদ ব্যাথায় কাতর মাখিয়ে যন্ত্রণার আতর
বোবা আমি একা হ'য়ে বোকা
স্মৃতি নিয়ে আছি শুধু আজ বেঁচে!
হে দয়াল! হে সখা আমার!
স্মৃতি নিয়ে চাই চলে যেতে প্রভু তোমার!!
কিন্তু কেন জানি বলে মন যখন তখন
থাক চাপা যত ভাল মন্দ পুরাতন.........,
ঝাঁপি খুলে যাক আর চাই না এখন!
স্মৃতির যাতনা ভুলে যেতে চাই
মনে করি ছিল না কিছু কখনও, এখনও নাই।
চাহি না করিতে মনে আর
বিগত দিনের ছবি বারবার
চাই স্মৃতিভ্রংশ শেষ জীবন!
চাই এক শান্ত শান্তিময় নিরালা নিকেতন!
দয়াল! চাই সুখময় শান্তিময় নিভৃত এক জীবন!
শুধু তুমিময় এক জীবন!
(৯ই অক্টোবর'২১)

কবিতাঃ কেন!? কেন!?

কেন দয়াল হও না তুমি প্রকট!?
দয়াল! তুমি প্রকট হও! ধ্বংস ক'রে দাও সব!
কি হবে এই অনাসৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রেখে!?
শুধু শয়তানই সব করবে ভোগ!?
অর্থ মান যশ ইত্যাদি যত সুখ
তা সে যে ক'দিনই হ'ক না কেন
শুধু শয়তানই করবে উপভোগ!?
যারা তোমাকে মানে না, করে না বিশ্বাস
যারা তোমার বিরুদ্ধে করে কুৎসা, ছাড়ে
অবিরাম বিষাক্ত নিশ্বাস, যারা প্রতিনিয়ত
পরিবেশকে ক'রে ক্ষতবিক্ষত করছে বিকট উল্লাস,
যারা তোমায় সাজায় পেটিকোটে, ব্লাউজে, অন্তর্বাসে
রঙ দিয়ে আঁকিবুঁকি করে তোমার মুখ,
রক্তিম ঠোঁট আরও করে রক্তিম উগ্র
তারাও সবাই করবে ভোগ বিন্দাস সুখ!?
যারা ধর্মের ঠেকা নিয়ে অধর্মের ওড়ায় ধ্বজা
তোমার জীবন্ত উপস্থিতিকে করে না স্বীকার,
করে অনবরত কুৎসা, নিন্দা, করে অপপ্রচার
ভন্ডামির মুখোশ প'ড়ে তারা দিকে দিকে
মন্দিরে মসজিদে গির্জায় করবে তোমার পুজা!?
যারা তোমার জীবন্ত উপস্থিতি মাঝে ভক্তকুলে
আনে বিভেদ ক্ষমতা দখলের লোভে ভক্ত সেজে,
যারা তোমার নেবে আসা আটবারের রূপের মাঝে
সৃষ্টি করে বিরোধ, করে অস্বীকার তোমার নবরূপকে,
বালখিল্য জ্ঞানে সনাতন ধর্ম্মের নামে তোমার জীবন্ত
উপস্থিতিকেই যারা করে উপহাস, উপেক্ষা, অবহেলা
পুরাণ, বেদের ডঙ্কা বাজিয়ে তোমার বাণীকে
পা দিয়ে মাড়িয়ে করে নির্ম্মম খেলা,
তারা সব বেড়াবে দাপিয়ে দুনিয়া কাঁপিয়ে
তোমার নামে নানা ধ্বনি তুলে হ'য়ে তোমার চেলা!?
যারা বালখিল্য পান্ডিত্যের ডঙ্কা বাজিয়ে
মহাপন্ডিত সেজে তোমাকে করে বিকৃত
কলমের নীল মুত্রপাতে কবিতা গল্পে অনবরত
তারা অর্থ মান যশ করবে চুটিয়ে ভোগ!?
তা সে যে ক'দিনই হ'ক!
বাকি কোটি কোটি অসহায় প্রাণ ভুগবে!? ভোগাবে
নির্ম্মম দারিদ্রতা আর রোগ শোক গ্রহদোষ!?
এই তোমার প্রেম ভালোবাসা বোধ!?
কেন তুমি একশোটা ভয়ংকর অপরাধ
করবে ক্ষমা!? কেন তোমার এমন আশ্বাস পাবে
শয়তানের মা!? দিকে দিকে যারাই মারণাস্ত্র করছে
তৈরী তোমার সৃষ্টিকে ধ্বংস করবে ব'লে,
যারাই বিকট উল্লাসে তোমার জীবনবাদকে
উপেক্ষা ক'রে নানা মতবাদের গাইছে মরণ গান,
আর যারা তোমার দীক্ষিত ভক্ত সেজে
পিছন থেকে মারছে তোমায় ছুরি,
করছে খুল্লমখুল্লা দিনদুপুরে চুরি
তাদের অনাসৃষ্টিকে ধ্বংস ক'রে দিতে,
তাদের মরণ গানে জাগাতে প্রাণ,
ভক্ত প্রাণে আনতে সুঘ্রাণ
কেন ভয়াল হ'য়ে উঠছো না দয়াল!?
কেন!? কেন!? কেন!? কিসের জন্য!?
এত প্রেম!? এত ভালোবাসা কেন তাদেরি জন্য!?
(লেখা ৯ই অক্টোবর ২০২১)

কথার স্রোতে ৭

মহাত্মা যখন চিনতে পারেনি পরমাত্মাকে তখন আমরা জীবাত্মারা কোন ক্ষেত কা মূলী? তিনি আশ্রমে এলেন, কলকাতায়ও এসেছিলেন, দেখলেন, কথা বললেন, আশ্রম পরিদর্শন করলেন, তাঁকে বুঝলেন এবং বললেন I have seen many great men in this world but never seen a man with such an extra ordinary power in all respects and as lovely as Sri Sri Thakur Anukulchandra" কিন্তু গ্রহণ করতে পারলেন না তাঁকে। ভারতের স্বাধীনতার ব্যাপারে, দেশভাগের ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলেন না, গ্রহণ করলেন না তাঁর মতামত। দেশভাগের হাত থেকে, বাংলা ভাগের হাত থেকে বাঁচাতে তাঁর আগাম সতর্কবাণী এবং স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রশ্নে তাঁর মতামত তৎকালীন নেতৃবৃন্দ কেউই গ্রহণ করেননি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। শুধু কথার স্রোতে ভেসেছে সবাই। মহাত্মাজীও কথার স্রোতে ভাসিয়েছেন পরমাত্মাকে।
(লেখা ৯ই অক্টোবর'২২)



Saturday, October 7, 2023

Anxiety & Stress.

 


কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন ১৮) আচার্য ও অধ্যক্ষ!

প্রশ্নকর্তা তেড়েমেরে ঝাঁঝিয়ে উঠে আমাকে বললেন, "আপনাদের মত আমাদের কোনও আচার্য নেই, আছেন অধ্যক্ষ! শ্রদ্ধেয় কাজলদা ও শ্রদ্ধেয় বিদ্যুৎদা আমাদের অধ্যক্ষ! আচার্য একজনই! আমাদের আচার্য স্বয়ং ঠাকুর! আচার্য দু'জন হয় না। আপনারা ঠাকুর ছাড়া অন্যকেও আচার্য কেন মানেন, কেন ঠাকুর ছাড়া অন্যের নামের পূর্বে শ্রীশ্রী ব্যবহার করেন, সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা কেন, ইষ্টভৃতির মূল মন্ত্র পালন কেন করেন না, সপ্তার্চ্চি-পঞ্চবর্হি কেন মানেন না, স্বস্তয়নীর তিন টাকা বাদে বাকি টাকা কি করেন" ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কৌতূহলী প্রশ্নের অনধিকার চর্চার ঝড় বইয়ে দিয়ে মিথ্যে আনন্দের সুখ সাগরে ভাসতে থাকে! আর মনে মনে মনকলা খেতে খেতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ভাবে: আহা! কি দিলাম! একেবারে ঠেসে দিয়েছি! গলা পর্যন্ত দিয়েছি! আর এই সমস্ত আবাল প্রশ্নের বান ছোঁড়ে মেঘনাদের মত প্রোফাইলে মুখ লুকিয়ে! আর উত্তর দিলেই হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া ক'রে তেড়ে আসে একসঙ্গে অনেকগুলি কলিযুগের মেঘনাদ! আর এসেই ঠাকুরবাড়ির বিরুদ্ধে এলোপাথাড়ি বহুদিনের পুরোনো দুর্গন্ধযুক্ত মলরুপী প্রশ্নের বাতকর্ম শুরু ক'রে দেয়! এত দুর্গন্ধ যে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসবে! আর প্রশ্নের উত্তরে উত্তর সহ পাল্টা প্রশ্ন যখন ধেয়ে যায় তখনই শুরু হ'য়ে যায় অশ্লীল ব্যক্তি আক্রমণ! এই-ই প্রশ্নকর্তাদের ঠাকুর প্রেমের, ভক্তির ও ভালবাসার জীবন্ত চরিত্র! এই-ই ঠাকুরকে আচার্য মানার এদের পরিচয়!! এই-ই এদের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা করার নমুনা!!! এই-ই এদের ইষ্টভৃতি, স্বস্তয়নী, সপ্তার্চি, পঞ্চবর্হি পালনের জীবন্ত জ্বলন্ত উদাহরণ!!!!
যাই হ'ক এদের বক্তব্যকে সামনে রেখে আমি বললাম,
কোন স্কুলে বা কলেজে পড়েন যে স্কুল বা কলেজের অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রী কাজলদা এবং শ্রদ্ধেয় শ্রী বিদ্যুৎ রঞ্জন চক্রবর্তীদাদা একসঙ্গে দু'জনই!? আপনার কথামত বর্তমানে অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় শ্রীবিদ্যুৎ রঞ্জন চক্রবর্তীদা তাহলে শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীকাজলদা কি পদে আছেন? আপনাদের সংগঠনে দুইজন অধ্যক্ষ!? আপনারা ঠাকুর পরিবারের বাইরে ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের চেয়েও অনেক উচ্চমার্গীয় দক্ষ, যোগ্য, জ্ঞানী ভক্তমণ্ডলী আছেন ব'লে নিজের ঢাক নিজে পেটাবার মত ঢাক পিটিয়ে শ্রীশ্রীবড়দাকে ছোট করবার, নিচা দেখাবার দুঃসাহস দেখিয়েছেন! তা' ঠাকুর পরিবারের বাইরে ঐরকম যোগ্য ও দক্ষ ভক্তপ্রাণ থাকা সত্ত্বেও ঠাকুর পরিবারের লোককে অধ্যক্ষ হিসাবে মনোনীত করেছেন কেন!? আপনারা যে না-মানা ও না-জানার গর্ভজাত তা আপনাদের আচরণই ফুটিয়ে তোলে! এই না-মানার সংস্কার আপনাদের কোথায় টেনে নাবিয়েছে তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই।
আপনি ও আপনারা এমনই ঠাকুরকে মানেন যে না-মানার সাধনা করতে করতে আপনাদের ঠাকুর যে ব্যবহার, যে চরিত্র, যে আচরণ, যে কথা, যে ভাষা অপছন্দ করতেন সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে আপনারা ভুলে গেছেন কাকে কি সম্বোধন করতে হয়! দেখুন, আপনি/আপনারা শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীকাজলদাকে ও শ্রীবিদ্যুৎ রঞ্জন দাদাকে একবার শ্রদ্ধেয় কাজলদা ও বিদ্যুৎদা বলেছেন আর একবার বিদ্যুৎ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন!!!!! শ্রদ্ধেয় কেষ্টদাকে শ্রদ্ধেয় কৃষ্ণ প্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেছেন, লিখেছেন! নামের আগে যে 'শ্রী' ও নামের শেষে যে দাদা সম্বোধন করতে হয় সেই বোধটুকু পর্যন্ত লুপ্ত হ'য়ে গেছে!!!!!! শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নামের আগে একটা 'শ্রী' যারা ব্যবহার করার শিক্ষা পায়নি, যারা সৎসঙ্গ সমাজের যে রীতি দাদা ও মা সম্বোধন সেই রীতি অনুযায়ী দাদা সম্বোধন করার ঐতিহ্য বহন ক'রে চলে না তারা দুটো 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার নিয়ে কূটকচালির তুলকালাম করবে এতে আর আশ্চর্যের কি আছে! এটাই তো স্বাভাবিক! এটাই তো সত্য! এটা আর কিছু নয় ফাঁকিবাজি ও কপটতা-র চরম নিদর্শন! কর্মহীন অতি ঠাকুর প্রেমের পরিণাম! ছেঁদো স্বভাব নিয়ে শুধু ৫০ বছর ধ'রে কথার কূটকচালিতে থেকে গেলেন আর ছেঁদা খুঁজে গেলেন মানুষের আর দিনের শেষে হ'য়ে গেলেন মস্তবড় আপনারা এক একজন ছেঁদা বিজ্ঞানী!!!!
যাই হ'ক আলোচ্য বিষয়ে আসি।
আপনি/আপনারা ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করবার জন্য, বিভ্রান্ত ক'রে ক'রে বইয়ে যাওয়া পবিত্র গঙ্গার জলের মত ঠাকুরের 'বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা'-র সৎসঙ্গ আন্দোলনের বইয়ে যাওয়া মূল স্রোত থেকে সরিয়ে এনে গঙ্গার মূল ধারা থেকে বেরিয়ে আসা বদ্ধ খালের স্রোত হীন পচা গঙ্গার জলের মত স্রোত হীন, আন্দোলনহীন, বদ্ধ পচা প্রাণহীন আন্দোলনের গন্ডির মধ্যে ফেলতে চাইছেন আর কলুর বলদের মত ৫০বছর ধ'রে ঐ এক বস্তাপচা গ্রহণযোগ্যতাহীন বুলি "আচার্য, শ্রীশ্রী, সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা" ইত্যাদির ভিত্তিহীন অস্তিত্বহীন লেজ ধ'রে ঘুরে ঘুরে মরছেন চাক্কি পিসিং এন্ড পুশিং ক'রে ক'রে!
আচ্ছা আপনার/আপনাদের কথামত আচার্য সম্পর্কিত প্রশ্নে জিজ্ঞেস করি, ঠাকুর শ্রদ্ধেয় শ্রী কেষ্টদাকে কেন ঋত্বিকাচার্য করলেন? ঠাকুর একমাত্র যদি ইষ্ট হন, ঠাকুর যদি আচার্য হন, গুরু হন তাহ'লে তিনিই যে ঋত্বিক সেটা জানেন কি!? দীক্ষা যে তিনিই দেন সেটা জানা আছে কি? ঋত্বিক নামধারীরা যে শুধুমাত্র তাঁর নির্বাচিত প্রতিনিধি তা জানা আছে কি? তাঁর অনুমোদিত পাঞ্জাধারী ও পাঞ্জাদানকারীরাই একমাত্র দীক্ষা দেওয়া ও দীক্ষা দেওয়ার অধিকার দেওয়ার অধিকারী তা জানেন তো!? তাহ'লে ঠাকুরই ইষ্ট, আচার্য, গুরু যদি হন সেইমত ঠাকুরই হ'লেন আমার ঋত্বিক! তাহ'লে ঠাকুরই যদি আমার ঋত্বিক হন আর যদি তাঁর সাহায্যকারীরা পি. আর ও এস. পি. আর হন তাহ'লে কেন শ্রদ্ধেয় কেষ্টদা ঋত্বিকাচার্য অর্থাৎ ঋত্বিকদের আচার্য হবেন!? তাহলে ঠাকুর ভুল করেছিলেন!? ঠাকুর ভুল!? ঠাকুর পাগল!? ঠাকুর নেশাগ্রস্ত ছিলেন!? অবশ্য আপনারা, আপনাদের পূর্বসূরীরা ঠাকুরের শেষের দিনগুলি নিয়ে এইরকম প্রচারও করেছিলেন যে ঠাকুরের নাকি মাথা কাজ করছে না!!!!!!! এতটাই অস্পর্ধা, ঔদ্ধত্ব ছিল আপনাদের পূর্বসূরীদের!!!! আর যে অস্পর্ধা ও ঔদ্ধত্বের পরিচয় দিয়ে চলেছেন আজও! এসব করেছিলেন আপনাদের পূর্বসূরীরা পরম পূজ্যপাদ আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের কায়েমী স্বার্থকে বজায় রাখতে, ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ'-এর দখল নিতে, ক্ষমতার দখল নিতে! ৫০ বছর ধ'রে কলুর বলদের মত এই ক্ষমতা দখল লাভের ঘানি টেনে যাবার ফল কি ফললো আপনার/আপনাদের স্টাডি কি বলে!?
শ্রদ্ধেয় শ্রী কৃষ্ণ প্রসন্ন ভট্টাচার্যদা যদি ঋত্বিকদের আচার্য হন তাহ'লে শ্রীশ্রীবড়দার সৎসঙ্গীদের আচার্য হ'তে দোষ কোথায়!? শ্রদ্ধেয় কেষ্টদাকে ঋত্বিকাচার্য কেন করেছিলেন তা' ঠাকুর জানেন। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে আমি যতটুকু বুঝি, ঋত্বিকদের কেমন হওয়া উচিত, ঋত্বিকদের আচার-আচরণ-ব্যবহার কেমন হবে, ঋত্বিকদের জ্ঞান-গরিমা, যজমান দের সঙ্গে সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত এককথায় ঠাকুর ঋত্বিক সম্প্রদায়কে যেমন দেখতে চেয়েছিলেন তেমন হ'য়ে ওঠার জন্য যা যা দরকার তেমন তেমন ঠাকুর নিজে ক'রে দেখিয়ে ও করিয়ে কেষ্টদাকে তৈরি করেছিলেন আর তাই কেষ্টদা ক'রে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ক'রে গেছেন, হ'য়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন নিরন্তর, জীবনভর! পরিণতিতে ঠাকুর সমস্ত ঋত্বিকদের পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন ঋত্বিকদের আচার্য ক'রে। তাই তিনি ছিলেন ঋত্বিকাচার্য!
ঠিক তেমনি ঠাকুর পরবর্তী ঠাকুর সৃষ্ট এই বিশাল সংগঠন 'সৎসঙ্গ'-কে, ঠাকুরের মিশনকে, ঠাকুর দর্শন, ঠাকুরের 'সৎসঙ্গ' আন্দোলনকে সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষভাবে রক্ষা করা, বৃদ্ধি করা, বিশ্বব্যাপী সমস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের ঠাকুরের ভাবে ভাবিত ক'রে তোলার জন্য, প্রয়োজনানুপাতিক কঠোর-কোমল হাতে হাল ধ'রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ঠাকুরের আচরণে আচরণসিদ্ধ, জ্ঞানে সমৃদ্ধ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন মানুষ দরকার বা নেতা দরকার অর্থাৎ একজন ঠাকুরের জীবন্ত চলমান 'সত্যানুসরণ' দরকার যাকে আমরা আচার্য বলি সেই তিনি হলেন ঠাকুরের পরমপ্রিয় আদরের প্রথম সন্তান প্রাণের বড়খোকা, সৎসঙ্গ জগতের কোটি কোটি সৎসঙ্গীর চোখের মণি, ভালবাসার মানুষ, সবার বড়ভাই সৎসঙ্গ জগতে স্বীকৃত 'শ্রীশ্রীবড়দা'!!!!! সেই শ্রীশ্রীবড়দা-ই আমাদের আচরণ ক'রে ক'রে প্রতিমুহূর্তে নিজে ঠাকুরের কুকুর হ'য়ে শিখিয়েছেন কেমন ক'রে ঠাকুরকে ভালোবাসতে হয়, আমাদের শিখিয়েছেন কেমন ক'রে ইষ্টের মানুষ হ'য়ে উঠতে হয়, কেমন ক'রে ঠাকুরের কুকুর হ'য়ে উঠে প্রকৃত মানুষ হ'য়ে উঠতে হয়, কেমন ক'রে ঠাকুরের ইচ্ছা, স্বপ্নকে বাস্তবায়িত ক'রে তুলতে হয়, কেমন ক'রে তীব্র অনুভূতিসম্পন মানুষ হ'য়ে উঠতে হয়, কেমন ক'রে তীব্র ভয়ঙ্কর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধীর স্থির হ'য়ে নেতৃত্ব দিতে হয়, কেমন ক'রে ধৈর্য ধ'রে সহ্য করতে হয় নিন্দা, ঘৃণা, কুৎসা, গালাগালি, সমালোচনা, কেমন ক'রে মাথা ঠান্ডা রেখে প্রতিপক্ষের কাছে ঢাল হ'য়ে উঠে নিজেকে ও সবাইকে রক্ষা করতে হয়, কেমন ক'রে ভালোবাসাময় মানুষ হ'য়ে উঠতে হয়!!!!!!! ঠাকুরের বাণী " ঈশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় বাঁধা, ডাকলে তুমি কাছে আসো নইলে থাকো দূরেই খাড়া"---র মূর্ত রূপ শ্রীশ্রীবড়দা! তিনি শিখিয়েছেন কি ক'রে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, শক্তিশালী ক'রে তুলতে হয়! তিনি শিখিয়েছেন কেমন করে ইষ্টস্বার্থ রক্ষার্থে ও ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠায় আপ্রাণ হ'য়ে উঠতে হয়, কৌশলী হ'য়ে উঠতে হয়, হ'য়ে উঠতে হয় নিরাশী-নির্মম! আরো আরো অনেক কিছু শিখিয়েছেন! ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠায় কেমন ক'রে আপোষহীন লড়াইয়ের উদাহরণ হ'য়ে উঠতে হয় হাতে কলমে করে করিয়ে সমগ্র সৎসঙ্গ সমাজকে শিখিয়েছেন এ যুগের হনুমান, অর্জুন, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দরূপী শ্রীশ্রীবড়দা!!!!! তাই তিনি আমাদের আচার্যদেব! আর তিনি তাঁর জ্বলন্ত জীবন্ত উদাহরণ রেখে গেছেন আমাদের কাছে আচার্যদেব শ্রীশ্রীঅশোকদাদাকে আমাদের সামনে! আচার্য পরম্পরার মধ্যে দিয়ে এবার ঠাকুর লীলা করছেন, করবেন ঘোর কলিযুগের শেষ দিন পর্যন্ত, যতদিন পর্যন্ত না কলিযুগ শেষে সত্যযুগে প্রবেশ করছে তাঁর সৃষ্ট সৃষ্টি!!!!!
এরপর পরবর্তী প্রশ্ন। ( লেখা ৮ই অক্টোবর ২০১৯)

Thursday, October 5, 2023

কবিতাঃ দান ও প্রতিদান!

ঈশ্বর তো তোমায় সব দিয়েছে অর্থ, মান আর যশ!
তবুও রিপুর রঙে রাঙিয়ে নিয়ে
লাগাম ছাড়া জীবন উড়িয়ে
বৃত্তি-প্রবৃত্তির তীব্র টান তোমায় করেছে বশ!
আর, তুমি দেখাও ক্ষমতার হাতযশ!

দেখাও মানব! দেখাও! 
যতপার দেখাও তোমার কষ!
ঈশ্বর তোমায় কি দেয়নি!? কি পাওনি!?
দিয়েছে বিপুল অর্থ, দিয়েছে ক্ষমতা,
দিয়েছে প্রভাব প্রতিপত্তি!
সব পেয়েও আরও পাওয়ার নেশায়
পাগল তুমি মিথ্যেকে করেছো সাথী,
কপটতার নামাবলী জড়িয়ে গায়ে গোদা পায়ে
মেরেছো, মারছো সত্যের বুকে লাথি ফেলে দিয়ে সত্যি!

ঈশ্বর তোমায় যা দিয়েছে তা কি যাবার সময়
পারবে তুমি নিয়ে যেতে সাথে? হাত মুঠো ক'রে
যা চাইবে ধরতে তা পারবে কি ধরতে হাতে?
সবই ফেলে যেতে হবে চলে একদিন নির্মম রাতে
সকালে, দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায় কিম্বা অতি প্রাতে!
যা রেখে যাবে যাবার সময় দেখো ভেবে একবার
তাতে কিসের গন্ধ আছে লেগে? 
কিসের পরশ বয় সে সাথে? আলোর নাকি অন্ধকার!?
ঈশ্বর তোমায় সব দিয়েছে! দিয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা!
ক্ষমতা দিয়েছে! ক্ষমতার পাহাড় দিয়েছে!
তবুও মান, সুখ-শান্তির ঘর কেন ফাঁকা!?
টাকা তো নয় কতকগুলি বান্ডিল বান্ডিল কাগজ!
ক্ষমতা তো নয় অলীক মায়ায় ভরা ফাঁপা মগজ!
দিন শেষে দেখবে তুমি কেউ নেই তোমার পাশে
অর্থ নেই, মান নেই, যশ নেই, নেই তিলমাত্র ক্ষমতা
তোমার শেষের সেদিনের আশেপাশে!
সেদিন তুমি একা!
একা তুমি আগেও ছিলে! আজও একা!
দেখতে তুমি পাওনা তা বোকা চাটুকারের ভিড়ে;
ঈশ্বর যে তোমার বাপের নয় চাকর সে কথা
বিপুল অর্থ আর ক্ষমতার অলীক মোহে গিয়েছিলে ভুলে।

ঈশ্বর তোমায় 
সব দিয়েছে। কি দেয়নি?  তবুও
সারাজীবন ব'য়ে বেড়িয়েছো হয়রানি! কেন!?
আছে আমাপা অর্থ, আছে বাড়ি, গাড়ি,
ঘরে-বাইরে বৈধ-অবৈধ নারী!
রাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, ধর্ম ইত্যাদির আঙিনায়
কেউকেটা সেজে অন্যের ভেঙেছো ঘর,
সমাজ, সভ্যতার বর্তমান-ভবিষ্যত করেছো তছনছ
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ করেছো নড়বড়।
ডঙ্কা বাজিয়ে লঙ্কার গরিমা প্রচারে ফাঁপা অহঙ্কারে
ভেঙেছো নিজেই নিজের মিথ্যে শান্তির ঘর!
ভেবেছিলে তুমি চালাক, চতুর, মহাপন্ডিত!
কিন্তু বাস্তবে ছিলে মূর্খ, বেকুব, আনাড়ি লেন্ডিত!
হাত পেতে নিয়েছো নির্লজ্জের মত শুধু হরিয়ালি সুখ!
বিনিময়ে কি দিয়েছো তাঁরে? দিয়েছো চরম অবহেলে
কৃপণ ভিখারির মত ছোট্ট ভাঙা একটুকরো খুদ!
আর যদি দিয়েও থাকো তাকে দিয়েছো আত্মপ্রতিষ্ঠার মোহে
নিস্বার্থ নয় সে দান; তা কড়ায় গণ্ডায় নিয়েছো বুঝে প্রতিদানে!
বিপদে পড়লেই বোবা ভগবানের পায়ে চড়িয়েছো ডালি,
গলায় চড়িয়েছো মালা, কখনো বা মুক্তি পেতে চড়িয়েছো
বাঁ হাতি রোজগারে উপচে পড়া মণিমুক্তোয় ভরা সোনার থালি!
তবুও শেষের সেদিন দুঃসহ যন্ত্রনায় ভরা অন্ধকার রাত্রি
ফেলে আসা বিষাক্ত নিশ্বাস পচা দুর্গন্ধ বাতাস তোমার যাত্রী
কেউ নেই পাশে জীবন জুড়ে হাহাকার হাহাকার খালি।
জীবননাথকে করে অবহেলা জগন্নাথ গণপতি তিরুপতিকে
চরণপুজায় ভরিয়ে চড়িয়েছো যে মালা জীবননাথের
চলনপুজোকে বাতিল ক'রে সে মালা আসেনি ফিরে
হ'য়ে মোক্ষ মুক্তির হালা। ভেট চড়িয়েছো তুমি
ঈশ্বরকে মনে ক'রে লোভি
যা তুমি করেছো বা ক'রে রেখেছো
এখন শুধু ফিরে পাবার পালা।
(লেখা ৬ই অক্টোবর'২০২১)

কবিতাঃ যাচাই-বাছাই।

যাচাই ক'রে বাছাই নাকি বাছাই ক'রে যাচাই!?
কোনটা রাখবে কোনটা ফেলবে
কোনটা নেবে না আর কোনটা নেবে
জীবন মাঝে যাই-ই করো না যাচাই-বাছাই
আর যতই করো চলার পথে ঝাড়াই মাড়াই
নও গো তুমি মানুষ দ্রষ্টা, নও গো তুমি স্রষ্টা
যে আগাম তুমি পারবে বুঝতে, পারবে ধরতে
হাত দিলে কোনটা হবে আর কোনটা হবে না ছাই।
যতই করো না কেন ঝাড়াই-বাছাই আর যতই করো যাচাই!
চলার পথে জীবন মাঝে সকাল থেকে রাত্রি
হে আমার সহযাত্রী নয়তো কিছুই নিখুঁত
শৈশব কৈশোর যৌবন পেরিয়ে আজ
মাথায় প্রৌঢ়তার তাজ চলতে গিয়ে দেখি সবতেই খুঁত!
জীবনভর চেয়েছি অনেক কিছুই করেছি ঝাড়াই বাছাই
মঙ্গল-অমঙ্গল কি হবে না হবে তা করিনি যাচাই!
মনের মাঝে নানা ইচ্ছে উঠেছিল যা আলটপকা জেগে
সেই ইচ্ছের ডানায় চেপে নিজেকে দিয়েছি উড়িয়ে
উড়তে উড়তে কোথায় যাবে জটায়ু হবো কিনা শেষে
বৃত্তি বেহুঁশ মাতাল জীবন দেখেনি তা ভেবে!
তাই তো বলি, হে আমার বন্ধু! হে আমার সহযাত্রী!
পরমপিতাকে রাখলে ধ'রে চলনপুজো করলে পরে
তাঁর দয়াতে সব পাওয়া যায় জীবন জুড়ে যা আমি চাই!
গহীন রাত্রি শেষে যেমন ফোটে ভোরের আলো
ঠিক তেমনি দেখতে পাবে তাঁর দয়াতে জীবন জুড়ে তোমার
সব গিয়েছে মুছে যা ছিল তোমার চরিত্রে আলকাতরা কালো!
বুক ভরা কফ! ঘন জমাট হলুদ কফ দুর্গন্ধ খাসা!
ফেঁপড়া গিয়েছে ঢেকে বিপদ আসছে ঝেঁপে
নেই তাতে একরত্তি ভালো বাসার আশা! আর ভালোবাসা দুরাশা!!
তাঁর স্পর্শে খারাপ বাসা যায় হ'য়ে যে ভালো
ভালোবাসায় ঘর ভরে যায় দখিনা বাতাস যায় ব'য়ে যায়
আঁধার ঘিরে আছে যে জীবন জ্বলে সেই জীবনে আলো!
(লেখা ৬ই অক্টোবর'২৩)


প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুরের ১৩৬তম জন্মদিন ও আমরা সৎসঙ্গীরা।(১)

আজ ৩১শে ভাদ্র' ১৪৩০, রবিবার। শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মমাসের শেষ দিন। গতকাল ছিল শনিবার ৩০শে ভাদ্র শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মদিন। প্রতিটি কেন্দ্র-মন্দিরে জন্মদিন পালন করা হয় খুব উৎসাহ আনন্দের সাথে। সৎসঙ্গীরা প্রায় প্রত্যেকেই ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে তাঁর জন্মদিন পালন করেছে। প্রত্যেকের জন্য, যারা পালন করেছে বা পালন করেনি, করতে পারেনি নানা অবাঞ্ছিত কারণে, সকলের জন্য পরমপিতার রাতুল চরণে মঙ্গল প্রার্থনা করি, হে দয়াল, তুমি সকলকে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দরিদ্রতা থেকে রক্ষা ক'রো, মুক্ত করো।

আমরা যারা সৎসঙ্গী পরমপিতার ১৩৬তম জন্মদিন পালন করেছি তারা প্রায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঘরে নিজের ও নিজেদের আপনজনের জন্মদিন পালন ক'রে থাকি সাধ্যের মধ্যে থেকে কিংবা কখনও কখনও সাধ্যের বাইরে গিয়েও। কেন করি? নিজের একান্ত প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে।

তেমনি আমাদের পরমপ্রিয়, পরম আপনজন, পরম গুরু, পরম উদ্ধাতা, পরম উৎস, পরম সত্ত্বা, পরম অস্তিত্ব, পরম কারণ, পরম বন্ধু, পরম আত্মীয়, পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্মদিনও আমরা প্রায় সৎসঙ্গী পরিবার পালন ক'রে থাকি পরম আনন্দে, পরম ভালোবাসায়, পরম গুরুত্ব সহকারে।

কিন্তু আমরা যারা শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মদিন পালন করি তারা কি সবাই ঠাকুরকে আমাদের জীবনের কেন্দ্রে এক ও একমাত্র ভালোবাসার মানুষ ব'লে মনে ক'রে তাঁকে ভালোবেসে তাঁর জন্মদিন পালন ক'রে থাকি?

আমাদের ঈশ্বররূপে ভালবাসার কেন্দ্রে কি তিনি একাই থাকেন, আরও অনেকে থাকেন না? দুনিয়ার হাজারো দেবদেবী থাকেন না? আমাদের ভালোবাসার মধ্যে কি একটা পাঁচমেশালি ভাব থাকে না? ভয়, ভালোবাসা, সংস্কার, প্রথা, নিয়ম ইত্যাদি নানারকম মানসিকতার লতানো ডালপালা আমাদের মনকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে রাখে না? সাপের মতো জড়িয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে গিলে খায় না? আমরা আমাদের ছোট্ট সন্তানের জন্মদিন, কিংবা আমাদের প্রিয়জন পিতামাতার ভয়ে ভক্তি আর ভালোবাসায় ভক্তি কি এক?

আচ্ছা, সংস্কার, প্রথা ও নিয়ম জোর ক'রে মেনে চলার পারিবারিক চাপ ও তাগিদ এবং তাকে বারো মাসে তের পার্বণের মত বাৎসরিক অনুষ্ঠানে পরিণত করার ঐতিহ্য হিসেবে তাঁর জন্মদিন পালন করা আর তিনি আমার ও আমার পরিবারের বেঁচে থাকা ও শ্রীবৃদ্ধির এবং রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দরিদ্রতা থেকে মুক্তির এক ও একমাত্র কান্ডারি স্বরূপ কি তাঁকে পরিবারের প্রধান মনে ক'রে তাঁর জন্মদিন পালন করা কি এক অর্থ বহন করে?

আবার অনেকে আমরা সৎসঙ্গীরা তাঁর জন্মদিন কবে সেটাই জানি না। আর জানলেও পরিবারে বংশ পরম্পরায় তাঁর জন্মদিন পালন করার চর্চা না থাকার কারণে আমরা পালন করি না। ফলে আমাদের পরবর্তী বংশধরেরাও এই বিষাক্ত আবহাওয়ায় শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক ভাবে বিষাক্ত হ'য়ে জন্মজন্মান্তর নষ্ট হ'য়ে যায় ও ভুগতে থাকে।

যারা তাঁর জন্মদিন পালন করি ও করি না, তাঁকে এই বিশেষ দিনে স্মরণ করি ও স্মরণ করি না তাদের সকলের জন্য পরম দয়ালের কাছে প্রার্থনা করি, হে দয়াল, তুমি যে আগেরবার ঠাকুর রামকৃষ্ণ হ'য়ে এসেছিলে আর বলেছিলে, "তোদের চৈতন্য হ'ক", ঠিক তেমনি তোমার ধার করা কথা নিয়ে বলি, তুমি এদের চৈতন্য দান করো, চেতনা জাগ্রত ক'রে দাও।

কি সেই চৈতন্য বা চেতনা? (পরবর্তী পর্বে)
ক্রমশঃ
(লেখা ১৭ই সেপ্টেম্বর'২৩)

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুরের ১৩৬ তম জন্মদিন ও আমরা সৎসঙ্গীরা।(৩)

আজ ২৪শে সেপ্টেম্বর'২৩ (৭ই আশ্বিন'১৪৩০) রবিবার শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মতিথি।

গত ১৬ই সেপ্টেম্বর'২৩ (৩০শে ভাদ্র'১৪৩০) শনিবার আমরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১৩৬ তম জন্মদিন পালন করেছিলাম। সেই জুন্মদিন উপলক্ষে এর আগের লেখা "শ্রীশ্রীঠাকুরের ১৩৬তম জন্মদিন ও আমরা সৎসঙ্গীরা ( ২ )" পর্বে লেখা শেষ করেছিলাম আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের ১৩৬তম জন্মদিন পালন করছি কিন্তু "আমরা কেন আমি জন্মেছি, কেন ঠাকুর জন্মেছিলেন, কেন ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি ক'রেছিলেন তা আর জানা হ'লো না"। এবার আসুন দেখা যাক এই বিষয়ে কি আলোকপাত করা যায়।

প্রথমে আমরা ওই সব প্রশ্নে যাওয়ার আগে জেনে নিই একঝলকে যার জন্মদিন আমরা পালন করলাম তিনি কে?

আমরা যার ১৩৬তম জন্মদিন পালন করলাম তিনি একজন মানুষ। এককথায় যদি বলি, তিনি হ'লেন বর্তমানে সর্বশেষ যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। তিনি হ'লেন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের রক্তমাংসসঙ্কুল জীবন্ত রূপ। তিনি হ'লেন সদ্গুরু, পরম অস্তিত্ব, পরম কারণ, পরম সত্ত্বা, পরম জ্ঞান, পরম বিজ্ঞান, পরম প্রাণ, পরমপিতা, পরমপ্রেমময়। তিনি হলেন অস্বাভাবিকভাবে স্বাভাবিক, জাঁকজমকপূর্ণ সহজ ও বিজ্ঞভাবে বোকা একজন মানুষ। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী, সর্বদর্শী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বোত্তম একজন মানুষ।

আর, আমরা বাকী মানুষেরা? আমরা পৃথিবীর বাকী সাধারণ-অসাধারণ, মূর্খ-জ্ঞানী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গরীব-বড়লোক ইত্যাদি শেষ গণনা অনুযায়ী ৭৮৮,৮৪ কোটি মানুষ হ;লাম হয় জীবকোটি নতুবা ঈশ্বরকোটি মানুষ।

জীবকোটি মানুষ অর্থাৎ রিপু তাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে আকন্ঠ ডুবে থাকা মানুষ। যার শরীর-মন-প্রাণ-হৃদয় রিপুর অধীন, রিপু দ্বারা চালিত অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ (অহংকার) ও মাৎসর্য (পরশ্রীকাতরতা) এই ৬টা রিপু্র প্রবল টানের বৃত্তে অর্থাৎ গন্ডীতে আঠার মতো আষ্টেপৃষ্টে লেপটে থাকে ও ঘুরতে থাকে বৃত্তির বৃত্তে যার জীবন তার ভারসাম্য হারিয়ে, সেই ছোট্ট হৃদয় বা জীবনের অধিকারী মানুষকে বলা হয় জীবকোটি।
উদাহরণস্বরুপ, আমি ও আমার মতো মানুষেরা।

আর, যার শরীর-মন-প্রাণ-হৃদয় তার ইষ্টের টানে, তার প্রিয়পরম প্রেষ্ঠের প্রতি অটুট, অচ্যুত, অস্খলিত বৃত্তিভেদী টানে তাঁর স্বার্থে স্বার্থান্বিত হ'য়ে তাঁর প্রয়োজন পূরণে জীবন উৎসর্গ করে, তাঁরই কক্ষপথে ঘুরতে থাকে অর্থাৎ তাঁর জীবনকে কেন্দ্র ক'রে তাঁর চলনপুজায় মগ্ন হ'য়ে নেশারুর মতো চলতে থাকে ও জীবন উপভোগ করে পারিপার্শ্বিক সকলকে নিয়ে সেই মানুষই হ'লেন ঈশ্বরকোটি পুরুষ।
উদাহরণস্বরূপ, শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত এক ও অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ'-এর বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

এই জীবকোটি ও ঈশ্বরকোটি মানুষ সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
১) "বৃত্তি-আঠায় লেপটে থাকে
ছোট্ট হৃদয়খান,
জীবকোটি তুই তা'রেই জানিস
অজানাতেই স্থান।"
২) "প্রেষ্ঠনেশার অটুট টানে
বৃত্তি-সমাহার,
ঈশ্বরকোটি তাঁ'কেই জানিস্
শ্রেষ্ঠ জনম তাঁ'র।"

এইবার এই ঈশ্বরকোটি ও জীবকোটি সৎসঙ্গীরা আমরা যারা শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মমাস ও জন্মদিন পালন করেছি আবার ২৪শে সেপ্টেম্বর জন্মতিথি পালন করবো তাঁরা একবার দেখে নিই যে এই যারা আমরা তাঁর জন্মদিন পালন করেছি সেই তিনি ও আমরা কেন জন্মেছি?

এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে দেখে নিই স্বয়ং জীবন্ত ঈশ্বর তিনি কি বলেছেন এই ব্যপারে। 
তিনি বললেন,
" তুমি কেন জন্মেছ মোটাভাবেও কি দেখেছ ? থাকাটাকে কি উপভোগ ক'রতে নয় ---- চাহিদা ও কর্ম্মের ভিতর - দিয়ে পারস্পরিক সহবাসে ----- প্রত্যেকরকমে ?
আর, ভগবান কেন সৃষ্টি করেছেন সেই ব্যাপারেও তিনি স্পষ্টভাষায় পরিষ্কার সহজ সরল ভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি বললেন,
"তেমনি বুঝছ না ভগবান কেন সৃষ্টি ক'রেছেন ? উত্তর কি এখন ?----- নিজেকে অনুভব ক'রতে , উপভোগ ক'রতে ---- বিশ্বে ,প্রত্যেক অনুপাতে --- দেওয়ায় , নেওয়ায় -- আলিঙ্গনে , গ্রহণে , কর্ম্মবৈচিত্রে , ----- নয় কি ? "

শ্রীশ্রীঠাকুরের এই বাণী আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা কেন জন্মেছি আর কেনই তিনি সৃষ্টি করেছেন। আমাদের ঠাকুর সূক্ষ্মভাবে ভেবে দেখতে বলেননি। আমাদের বলেছেন আমরা কেন জন্মেছি সেটা মোটাভাবে অন্তত ভেবে দেখতে। তিনি বললেন, আমরা প্রত্যেকেই জন্মেছি আমাদের এই জন্মটাকে অর্থাৎ আমার এই অস্তিত্ব বা থাকাটাকে উপভোগ করবার জন্য। কিভাবে উপভোগ করবো? আমাদের নারীপুরুষের প্রত্যেকের নানারকম চাহিদা আছে। পুরুষের চাহিদা হচ্ছে অর্থ, মান, যশ, ক্ষমতা, বাড়ি, গাড়ি, নারী ইত্যাদি। আবার নারীরও চাহিদা প্রায় সেই একই অর্থ, মান, যশ, সোনা-গয়না, পুরুষ, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সমস্ত চাহিদা পূরণ করতে হ'লে চাই কর্ম। কর্ম ছাড়া কোনও চাহিদাই পূরণ করতে পারবে না, হবে না। ফোকটে কিছু পাওয়া যাবে না আর আকাশ থেকেও কোনও ভগবান কিছু আমার চাওয়া মত ফেলবে না। আমি যা কিছুই চাই না কেন তার জন্য আমাকে করতে হবে। দু'নাম্বারি বা একনাম্বারি যে কোনও একটা পথে কর্ম করতে হবে আমাকে। তবে এই কর্ম করার সঙ্গে উপভোগ ও প্রকৃত উপভোগ আলাদা বিষয়। দু'নাম্বারি পথে ভোগ বা উপভোগ কোনওটাই প্রকৃতপক্ষে হ'য়ে ওঠে না। হ'লেও তা সাময়িক মদের তীব্র নেশার মতো। কেটে গেলেই অবসাদ, আর অবসাদ কাটাতে আবার পান। আর শেষের সেদিন হয় ভয়ংকর।

আর, একনাম্বারি পথেও ভোগ, উপভোগ কোনওটাই প্রকৃত অর্থে হ'য়ে ওঠে না। লোকে যেটাকে সুখ মনে করে আজ, কাল রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধিবিপর্যয় ও দরিদ্রতা কোনও একটার আচমকা আক্রমণে বা ছোবলে মানুষের জীবন, পরিবার ধ্বংস হ'য়ে যেতে পারে। তখন জীবনে আর ভোগ বা উপভোগ হয় না। ভোগ বা উপভোগের মধ্যে আছে চাহিদা ও কর্মের যৌথ উপস্থিতি। চাহিদা ও কর্মের পারস্পরিক মিলন, পরিবারের প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের মধুর সম্পর্ক, আমার পরিবেশ পারিপার্শ্বিকের প্রত্যেকের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ হাসিখুশি সম্পর্ক ইত্যাদি সবরকমভাবে সহবাস বা মিলনের মাধ্যমে মানসিক শান্তি ও সুখ লাভ ক'রে আমি জীবনকে, আমার থাকাটাকে প্রকৃত উপভোগ করতে পারি।

ঠিক তেমনি, মা যেমন সন্তানকে জন্ম দেওয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেকে অনুভব করে, উপভোগ করে ঈশ্বরও সৃষ্টি করেছেন নিজেকে এই সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে অনুভব করতে, উপভোগ করতে। আর এই অনুভব বা উপভোগ করে বিভিন্ন রকম ভাবে নানা বৈচিত্রের মধ্যে দিয়ে তাঁর সৃষ্টির প্রতিটি অস্তিত্বের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবে দেওয়া নেওয়া ও আলিঙ্গন-গ্রহণের মধ্যে দিয়ে।

শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে আসাকে চুটিয়ে নিংড়ে ভোগ করার জন্য আমাদের প্রকৃষ্ট পথের কথা বলবার জন্যই তিনি জন্মেছিলেন।
প্রকাশ বিশ্বাস।
উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী।
(২৪শে সেপ্টেম্বর'২০২৩)