আজ ২০শে ফেব্রুয়ারী আমার জন্মদিন! আজকের দিনে যারা যারা আমাকে আমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের সকলের জন্য এই দিনে আমি পরমপিতার রাতুল চরণে সর্বাঙ্গীন মঙ্গল প্রার্থনা করি। আজকের দিনে এই দিনে অবতরণ করেছি আমি এই পৃথিবীতে তাই সেই অর্থে আমিও অবতার! কিন্তু আমি অবতারি নই! এই পৃথিবীতে যে বা যারাই এবং যা কিছুই নেবে এসেছে মাটির বুকে সে বা তারাই এবং সবকিছুই অবতরণ অর্থে অবতার! আর যিনি আমাদের এই মাটির বুকে অবতরণের উৎস অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি অবতারি এবং অবতারি স্বয়ং ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তা! আর আমাদের মাঝে অর্থাৎ সৃষ্টির মাঝে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নিজেও অবতরণ করেছেন আর করেছেন মানুষ রূপে আট আটবার। সেই অবতরণ অর্থে আমাদের মত তিনিও অবতার। কিন্তু অবতার হয়েও তিনি অবতারের উর্দ্ধে। তাই তিনি অবতারি বা সৃষ্টিকর্তা! সেই মনুষ্য রূপী অবতার হয়েও অবতারি বা সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বর হলেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!! বাকি সব তা সে যে বা যেই হ'ক, জীবাত্মায় হ'ক আর মহাত্মায় হ'ক সে বা তারাই অবতার। অবতার আর অবতারির মধ্যে প্রভেদ জানলাম ঠাকুরের কাছে এসে। জীবন্ত ঈশ্বরকে অবতার বললে তাঁকে ছোটো করা হয়। এই বোধ, এই জ্ঞান যাঁর কাছে পাওয়া তিনি হলেন The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukul Chandra. এতদিন আমরা তাঁকে জেনেছি, বলেছি অবতার। ঠাকুর এসে আমাদের সূক্ষ্ম তফাৎ ধরিয়ে দিয়ে গেলেন। এরকম অনেক অনেক কিছুরই বহু হাজার হাজার বছরের ভুল বা অসম্পূর্ণ ধ্যান ধারণার সূক্ষ্ম অতি সূক্ষ্ম তফাৎ তিনি ধরিয়ে দিয়ে গেছেন, জ্ঞানের রাজ্যে চুলের মত ফাঁক তিনি ভরাট ক'রে দিয়ে গেছেন!!!!! তাই কথায় আছে, Knowledge rules the world.
আজ আমার জন্মদিন। আমার জন্মদিনে যারা যারা আমাকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়েছে, করেছে মঙ্গল প্রার্থনা তাদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু একটা সত্যি কথা না বললে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী ব'লে মনে হয়। প্রথমতঃ আজ আমার যে জন্মদিন সেই কথাটাই আমার মনে ছিল না। ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম কালকে রাতে, বারোটার পর। আর মনে থাকার কথাও না। কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নই যে জন্মদিন মনে থাকবে বা ধুমধাম ক'রে পালন করতে হবে। আর মনে না থাকার অনেক কারণ আছে।
যাই হ'ক এবারে আসল কথায় আসি। আসলে আমার জন্মদিন আজকে নয়। আমার প্রকৃত জন্মদিন ২৩শে অক্টোবর। কিন্তু এখন ২০শে ফেব্রুয়ারি হ'য়ে গেছে অফিশিয়াল জন্মদিন। ছোটবেলায় আমি খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলাম। আমার জনম কুষ্টির নাম পবনকুমার। আর সেই নাম অনুযায়ী আমার প্রকৃতি ছিল পবনকুমারের মত। সেইজন্য আমার মা আমাকে ছয় বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি ক'রে দেয়। তখনও আমার ছয় বছর পূর্ণ হ'তে আট মাস বাকি ছিল। যেহেতু আমি খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলাম সেইজন্য আমার মা আর আমাকে ঘরে বন্দী ক'রে রাখাকে যুক্তিযুক্ত মনে করেনি। স্কুলে ভর্তি ক'রে দেওয়ায় সঠিক মনে করেছিলেন। কয়েক ঘন্টা তো স্কুলে বন্দী থাকবো আর তাহ'লে সেই কয়েক ঘন্টা হনুমানি ভালোবাসা থেকে মার মুক্তি! আর সেই যে এগিয়ে এলো আমার আট মাস জন্মদিন তাই রয়ে গেল আজ পর্যন্ত অফিশিয়াল স্ট্যাম্প সহ। সেই যে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার সময় ফর্ম ফিল আপ করেছিলাম সেইখানে ওই এগিয়ে আসা জন্মদিন ২০শে ফেব্রুয়ারীর উপর অফিশিয়াল স্ট্যাম্প পড়ে গেছিল। এই হ'লো আমার একটা চাপা পড়া সত্য ও মনে না থাকার অনেক কারণের একটা কারণ।
এবার আসি অন্য কারণে। আচ্ছা এই যে আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনেকের ভালোবাসা আমি পেলাম তা আমি এই পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়ে কি করেছি? ছোট থেকে আজ এই পর্যন্ত কত বসন্ত পার হ'য়ে এই যে এই বছরের বসন্তের দরজায় এসে দাঁড়ালাম তা আমি এত বছর কি করেছি? মানুষ, সমাজ, দেশ কার জন্য কি করেছি!? অন্যদিকে আমি কি আমার বাবামায়ের ভালো ছেলে হ'তে পেরেছি!? হ'তে পেরেছি ভালো ভাই? ভালো স্বামী? ভালো পিতা? ভালো বন্ধু? ভালো প্রেমিক? (যদিও আমার মত কাঠখোট্টা লোককে কেউ প্রেম করেনি ও আমার দ্বারা প্রেম হ'য়ে ওঠেনি), সমাজ বা দেশের ভালো নাগরিক!? যদি এগুলোর একটাও কিছু হ'তে না পারি, একটারও উত্তর পজিটিভ না হয় তাহ'লে আমি কেন জন্মালাম!? কি হবে আমার জন্ম তারিখ দিয়ে!? আমার জন্মদিন পালন কেন করবো!? আমি কি এই সমাজের বোঝা নই!? আমাকে দিয়ে কার কি উপকার হয়েছে!? কারও কোনও কাজে, কোনও প্রয়োজনে আমি এসেছি!? কেউ কি আমার দ্বারা কোনোদিন উপকৃত হয়েছে!? আমার চারপাশের লোকজন কি আমাকে তাদের জীবনের নির্ভরযোগ্য একজন মনে করে!? আমি কি দিয়েছি আমার পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে!? আমি কি কারও স্বার্থ হ'য়ে উঠতে পেরেছি নাকি সকলকে নিজের স্বার্থে খালি পেতে চেয়েছি আর কাজে লাগিয়েছি? আচ্ছা আমি আমার নিজের জীবনকেই বা কি দিয়েছি!? আমার আমি আমাকেই ভয় পায় নাতো!? আমাকে নিয়ে আমার এই জীবন, আমার আমি বিরক্ত নয়তো!?
আজ আমার জন্মদিন! যখন ফেসবুকের মধ্যে দিয়ে জানতে পারলাম আজ আমার জন্মদিন তখন কেন জানি না নিজের অজান্তেই একটা হাসি খেলে গেল ঠোঁটের কোণে! কিন্তু বুঝতে পারলাম না হাসিটা কিসের! আনন্দের, হতাশার নাকি ব্যঙ্গ হাসি! ফেসবুক, ফোন ও সামনাসামনি জন্মদিনের শুভেচ্ছা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল কেন এরা আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে!? আমি কি সত্যি সত্যিই শুভেচ্ছা, ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য!? আমার জন্মদিনের তারিখ মনে না থাকার কারণ কি এইটাই যে আমি বিশেষ দিনের বিশেষ শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা পাওয়ার অযোগ্য!? আমি জন্মেছি কেন সেইটাই কি আমি জানি!? আমি কি সত্যি সত্যিই আমার এই জীবনটাকে প্রকৃত উপভোগ করতে পারছি!? আমি কি সকলের মাঝে মিশে গিয়ে সকলের সাথে একাত্ম হ'য়ে জীবনটাকে উপভোগ করছি!? আমি কি একবারও ভেবে দেখেছি আমার কেন জন্ম হয়েছে!? আমার জীবনে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য যা যা প্রয়োজন তা পাওয়ার জন্য কি আমি সচেষ্ট!? তা পেতে গেলে আমার চারপাশের যে বা যারা বা যা কিছু আছে সেই সবকিছুর সাথে মিলনের মধ্যে দিয়ে, কর্মের মধ্যে দিয়ে যে পেতে হবে তা কি আমি জানি!? আমার বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য যে চাহিদার ভিতর দিয়ে আমি যাই সেই চাহিদা পূরণ করার জন্য আমাকে সেই অনুযায়ী কর্মের অনুসরণ করা প্রয়োজন এবং সেই অনুসরণ কি আমি করি!? আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে, আমার পরিবেশকে কি আমি আমার অনুকূল ক'রে তুলে আমার জীবনের চাহিদাগুলিকে মেটাবার তাগিদে চাহিদা অনুযায়ী কর্মের ভিতর দিয়ে আমার জীবনকে পরিচালনা করি!? এই পরিচালনা করার সময় আমি জীবন বিধ্বংসী কোনও পথ অবলম্বন করি নাতো!? হিংসা, নিচতার পথ ধরে চলি নাতো!? কারও ক্ষতি করি নাতো!? কাউকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করি নাতো!? অন্যকে মেরে নিজে বাঁচতে চাই নাতো!? বড়োকে ছোটো আর ছোটোকে আরও ছোটো করি নাতো!? মনের অনুসরণ করি নাতো!? বিবেকের ডাক শুনিতো!? বিবেককে অনুসরণ করি তো!?
যদি উপরিউক্ত প্রশ্নগুলির উত্তর আমার বাঁচা-বাড়ার উল্টো পথে চলে তাহ'লে আমার জন্মদিন পালন করা তো দূরের কথা আমার জন্মদিন ব'লে কোনও দিন নেই!!!! শুধু সকলকে একটা কথায় বলতে পারি, এই যে আমি জন্মেছি এতে তো আমার কোনও হাত নেই তাই সব বন্ধুদের বলবো, মনে করো আমি নেই!
এই নেই আমি বিদায় নেবার আগে বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়কর পুরুষ পুরুষোত্তম জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী স্মরণ ক'রে এই লেখা শেষ করছি। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
"তুমি কেন জন্মেছ মোটা ভাবেও কি দেখেছো?
থাকাটাকে কি উপভোগ করতে নয়-----
চাহিদা ও কর্মের ভিতর দিয়ে----
পারস্পরিক সহবাসে----
প্রত্যেক রকমে?
(লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০২০)