Powered By Blogger

Saturday, October 24, 2015

লালন ও সত্য!!!!!!!



দাদা, কবিতাটা কার? আপনার না লালন ফকিরের? খুব ভালো লাগলো আরো ভালো লাগলো আপনার কবিতাটা আলোচনার টেবিলে আমায় বসিয়ে দিল
লালনকে নিয়ে প্রগতিবাদীদের প্রচার, বিশ্লেষণ আমাকে ধন্দে ফেলে দেয়। লালনকে আধুনিক উদার দেখাতে গিয়ে মনে হয় লালনের লালনত্বটাই খতম করে দেওয়া হয়েছে। বহুদিন থেকে মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় লালন কি ঈশ্বর, ধর্ম, কূল, জাতি, গোত্র ইত্যাদি মানতেন না? আর্য্যকৃষ্টি-সংস্কৃতির কি লালন বিরোধী ছিলেন? না-কি অতিপ্রগতিবাদীরা লালনকে বিকৃত করে পরিবেশন করছে? একটা প্রবাদ আছে 'পঞ্চভুতের ফাঁদে, ব্রহ্মা পড়ে কাঁদে'; ঠিক তেমনি 'অতি প্রগতির ফাঁদে লালন ফকির কাঁদে' এই অবস্থা লালন ফকিরের নয়তো? কবিতাটা আপনার হোক কিম্বা লালনের লেখাই হোক আমার প্রশ্ন এমন সমাজ বলতে কোন সমাজের কথা আপনি বা লালন বলতে চেয়েছেন? বৈশিষ্ট্য হারা ক্লীবলিঙ্গের সমাজ? ডাল আর চালে মিশিয়ে খিচুড়ি সমাজ? ক্লীব আর খিচুড়ির বৈশিষ্ট্য কি? কোনও Individual identity আছে কি? খিচুড়ি বেশী খেলেই পেট ফেঁপে যায় আর প্রচুর জল টানে। কেন? আর ডাল দিয়ে ভাত মেখে খেলে সেই উপসর্গ দেখা দেয় না। কেন? আমির ফকির এক ঠাই হওয়াতে আপত্তি কোথায় বা কিসের? এখনও হতে পারে কিম্বা হয়, হ্যাঁ হয়। সে আমার আপনার মাঝে বহু উদাহরণ আছে। কিন্তু এক ঠাই মানে কি আমিরের আমিরত্ব বা ফকিরের ফকিরত্বকে দূরে ছুঁড়ে ফেলা? যে যার ............রত্ব নিয়ে পাশাপাশি বসতেই পারে এবং বসেও। অহংকারী 'আমির' যেমন আছে ঠিক তেমনি অহংকারী 'ফকির' আছে। কেউ কারও থেকে কম নয়। অহংকারের লড়াই তো সর্বত্র। এখানে কি আমির ফকির বলে আলাদা কোনও ব্যাপার আছে নাকি? বরং ফকির যখন আমির হয় তখন হীনমন্যতা প্রবল হয়ে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়। এই Inferiority complex তো রিপুতাড়িত ব্যাপার যা কিনা আদিম বৃত্তি-প্রবৃত্তি। এমন কোনও লালন আছে নাকি বা ছিল নাকি কখনও এই জগৎ সংসারে বিধির বিধানকে উলটে দেবে? এখানে তো লালনের কাঁদা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সব তো অর্থাৎ অমন সমাজ তো ইউটোপিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে হ্যাঁ রামরাজ্য ছিল বা যদি থেকে থাকে কোনদিন তাহলে সেটা ছিল রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে' আঙ্গিকে। এমনই রাজার কথা তিনি বলেছিলেন যাকে রাজা রামের সঙ্গে তুলনা করা যায়। যে রাজার শাসন ব্যবস্থায় সবাই রাজার ব্যাটা মহারাজা ছিল, যে রাজার শাসন ব্যবস্থায় ধর্মের নামে অধর্ম কখনো হয়নি, যে শাসন ব্যবস্থায় ধর্মকে রক্ষা করার জন্য অধর্মের প্রয়োজন হয়েছিল যাকে আপদধর্ম বলা হয়, যে শাসন ব্যবস্থায় বৈশিষ্ট্যকে কেউ লঙ্ঘন করেনি বা করতে সাহস করেনি, যে শাসন ব্যবস্থায় জাতের মৌলিকত্ব নিয়ে কারও প্রশ্ন তোলার প্রশ্নই ওঠেনি বা কেউ জাতের নামে বজ্জাতি করার আস্পর্ধা দেখায়নি, যদি কেউ হীনমন্যতায় ভুগে ভুগে বিজ্ঞান সম্মত সমাজ ব্যবস্থাকে ভাঙ্গার চেষ্টা করে থাকে তাকে কঠোর হাতে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন রাজা রাম, যে শাসন ব্যবস্থায় একজন ব্রাহ্মন সন্তানের অকালে মৃত্যু হয়েছিল বলে মৃত সেই সন্তানের পিতার কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়েছিল রাজা রামকে ইত্যাদি ইত্যাদি............ সেই রাজা রাম ছিল পুরুষোত্তম রাম। এমন রাজার রাজ্যে লালন থাকলে কি গান লিখতো কল্পনার চোখে দিব্যদৃষ্টি দিয়ে যেন দেখতে পাই। আপনি যদি এমন রাজা পেতেন? কি করতেন? কি বলতেন?
আর লালনের গান নিয়ে আমার মনে হয় অতিপ্রগতিবাদীরা যেটা বোঝাতে চান সেটা লালনের জন্য দুর্গতি ছাড়া আর কিছুই নয়, কেননা লালন কখনোই সৃষ্টির মৌলিকত্বকে কখনও আঘাত করেছেন বা উপড়ে ফেলতে চেয়েছেন বলে আমার মনে হয় না। বরং মনে হয় তাঁর লড়াই ছিল জাতের নামে বজ্জাতদের বজ্জাতির বিরুদ্ধে, ধর্মের নামে অধার্মিকদের অধর্মের বিরুদ্ধে, ঈশ্বরের নামে শয়তানদের শয়তানির বিরুদ্ধে। যা কিনা অতিপ্রগতিবাদীরা হয় ধরতেই পারেননি কিম্বা ইচ্ছাকৃতভাবেই নিজ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য, নিজ মতবাদকে প্রতিষ্ঠা দেবার জন্য সাপোর্ট হিসাবে ব্যবহার করেছেন আম আদমীর সরলতা অজ্ঞানতাকে কাজে লাগিয়ে।
এটা আমরা যেন মনে রাখি শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি, আর অতি প্রগতিই দুর্গতি। যা অর্থাৎ প্রগতিবাদীদের কর্মকান্ড আমরা পৃথিবী জুড়ে দেখে চলেছি প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
আর যদি সত্যি সত্যিই লালন ফকির সৃষ্টির মূলকে আঘাত করে থাকেন তাহলে কালের নিয়মেই তিনি একদিন মুছে যাবেন ইতিহাসের পাতা থেকে, হঠে যাবেন মানুষের জন্মের যে বৈধ জৈবী সংস্থিতি, তার বেঁচে থাকা বেড়ে ওঠার উপায় বা পথ সেই পথের সামনে থেকে।
অনেক অনেক ভালো থাকবেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এমন আলোচনার পথ তৈরী করবার জন্য। আপনার কবিতাটা আমি আমার Time Line- Post করলাম
এমন সমাজ কবে গো
সৃজন হবে
যেদিন হিন্দু-মুসলমান
বৌদ্ধ-খ্রিস্টান
জাতি- গোত্র
নাহি রবে ।।
শোনায়ে লোভের বুলি
নেবে না কাঁধে ঝুলি
ইতর আতরাফ বলি
দূরে ঠেলে না দেবে ।।
আমির ফকির 'য়ে এক ঠাই
সবার পাওনা খাবে সবাই
আশরাফ বলিয়া রেহাই কেঊ নাহি পাবে ।।
ধর্ম -কূল- গোত্র- জাতির
তুলবে না গো কেহ জিগীর
কেঁদে বলে
লালন ফকির
কেবা দেখায়ে দেবে ।।



Anil Biswas. দুঃখিত আমি কবি নই "লালন সাঁই - এর জীবন গান' " সম্পাদনায় , ফজলুল হক সৈকত নবরাগ প্রকাশনী খুলে দেখুন, ১৩৯ সংখক গান

Prakash Biswas
Anil Biswas আমার দূরের বন্ধু দায়মুক্ত হওয়ার জন্য আমি সত্যি সত্যিই খুশী হলাম আমার মতামতটা ছিল কবিতাটা ঘিরে সে কবি যেই হোক, আপনিও হতে পারেন কিম্বা লালনও হতে পারে কিন্তু মতামতটা একই রকম ছিল, আছে থাকবে তবে আমার আন্দাজটা ছিল লালনকে ঘিরেই হোলও তাই বিতাটা লালনেরই তাই আমার বই খুলে দেখবার কোনও দরকার আছে 'লে মনে করিনা আপনার প্রতি বিশ্বাস আমার আছে আর আমার নিজের বোধ, বুদ্ধি, শিক্ষা আর জ্ঞান-এর ওপর নির্ভরতা আমাকে সঠিক ভাবেই পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে বরাবর সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত লালন ফকিরকে নিয়ে আমার নেগেটিভ মানসিকতা রাখতে ইচ্ছা করে না তাই আমি লালনকে পজিটিভ দৃষ্টিতেই দেখতে চেয়েছি কিন্তু দেখতে গিয়ে যদি হোঁচট খেয়ে পড়ি, দৃষ্টি মিথ্যে হয়ে যায় তাহলে আমার কিছু করার থাকে না; আমি নিরুপায় লালনই হোক আর যেই হোক 'সত্য' কে অস্বীকার, অমর্যাদা যে করে সে 'মৃত্যু' পথপ্রদর্শক