Powered By Blogger

Thursday, March 28, 2024

প্রবন্ধঃ গ্যারান্টি!

আমি কয়েকদিন আগে একটা পোষ্ট করেছিলাম আমার প্রোফাইলে। প্রোফাইলের বিষয় ছিল নিম্নরূপ।
'ইষ্টভৃতি ও নামধ্যান পরায়ণ সক্রিয় সৎসঙ্গীদের করোনা ভাইরাসের আক্রমণে কোনও ভয় নেই! সৎসঙ্গী ভাইবোন নিশ্চিন্ত থাকো। গ্যারান্টি। সময় প্রমাণ করবে।--প্রবি।'

এই পোস্টের উত্তরে এক গুরুভাই জানতে চেয়ে একটা প্রশ্ন করেছিল আমায়; সঙ্গে ভাইরাসের ধর্ম্ম সম্পর্কে অবহিত করেছিল। মন্তব্যটা ছিল নিম্নরূপ।

"ওয়ারেন্টি আর গ্যারান্টি কোথা থেকে আসছে? ভাইরাস ধর্ম্ম আর জাত চেনে না, সতর্ক থাকা প্রয়োজন।"
গুরুভাইয়ের এই মন্তব্য সম্পর্কে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি,

অবশ্য অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সতর্ক তো হতেই হবে। ঠাকুরের যা কিছু বলা সব অসতর্কতার বিরুদ্ধেই বলা। অসতর্কতার কারণেই তো এইরকম মারণ ভাইরাস হানা দিচ্ছে বারবার! আজকের এই যে পৃথিবী জুড়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে, আমার গুরুভাইও যে সতর্কতার কথা বললো বুক বাজিয়ে এই সমস্ত সতর্কতা তো আজ মরণ কালে হরির নামের মত! জীবনের সমস্ত দিকের সমস্ত বিষয়ে সতর্কতার ঢাক তো ঠাকুর প্রাণপাত ক'রে বাজিয়ে গেছেন দীর্ঘ ৮২ বছর! কে শুনেছে তাঁর কথা!? কেউ শুনেছি!? তবে কেন আজ এত সতর্কতার উপর জোর দিচ্ছি? কোন সতর্কতার কথা বলতে চেয়েছে আমার গুরুভাই?

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচার উপায় স্বাস্থ্য ও সদাচার বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রাখা। আর এই স্বাস্থ্য ও সদাচার সম্পর্কিত বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বহু বাণী ও ছড়া দিয়ে গেছেন। কিন্তু এই সতর্ক থাকার বিষয় শুধু শারীরিক সদাচার সম্পর্কে সতর্ক থাকা নয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। মানসিক ও আত্মিক সদাচার বলে আরও গভীর বিষয় আছে। সতর্ক থাকতে হবে সেদিকেও! সতর্ক আছি কি আমরা সৎসঙ্গীরা!? ঐ যে একটা কথা আছে 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর', ব্যাপারটা এক্ষেত্রেও তাই। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সদাচার পালনীয় অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কেন অসতর্ক হচ্ছি আমরা!? কেন ঠাকুরের উপরে বিশ্বাস ভেঙে যায় সামান্য ছোটখাট বিষয়ে!? কেন এই করোনা নামক মহাভীতি আমাদের তাঁর উপর বিশ্বাস ভেঙে দিচ্ছে!? সৃষ্টিকর্তার চেয়ে করোনা শক্তিশালী!? বিশ্বাস যাতে কোনও সময়েই, তা সে যতই ভয়ঙ্কর বিপদ আসুক না কেন কোনও অবস্থায় যেন ভেঙে না যায়, আঘাত প্রাপ্ত না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর দিতে হবে। সেদিকে সতর্ক আছি তো আমরা!? তাঁর প্রতি আমাদের গভীর বিশ্বাস আছে!? প্রতিমুহূর্তে মানসিক কপটতা আমাদের চরম আধ্যাত্মিক অসদাচারী ক'রে তুলছে না তো!? ভক্ত হনুমান, অর্জুন, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ, শ্রীশ্রীবড়দা, প্রহ্লাদের মত ভক্তদের করোনার বাপও কিছু করতে পারে না। কারণ তাঁদের তাঁর সঙ্গে লাগাও-এর ইমিউনিটি পাওয়ার এত স্ট্রং!!!.!
ভাইরাস ধর্ম্ম আর জাত মানবে কেন? তারও তো একটা ধর্ম্ম আছে, তাই নয়কি? তাই সে তার ধর্ম্ম অনুযায়ী কাজ করবে আর মানুষ মানুষের ধর্ম্ম অনুযায়ী কাজ করবে, সৃষ্টির বুকে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ধর্ম্ম পালন করবে এটাই প্রতিটি প্রাণের মূল ধর্ম্ম। গুরুভাইয়ের কথাটা ও জানতে চাওয়া ভালো লাগলো। এইরকম জানতে চাওয়ার কৌতূহল বা ইচ্ছা আমাদের সত্য সন্ধানে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা ঠাকুরের আরো আরো কাছাকাছি আসতে পারি, তাঁকে জানতে ও বুঝতে পারি। আলোচনার মধ্যে দিয়ে মানুষ ঠাকুর সম্পর্কে বাস্তব ধারণা করতে পারে। ঠাকুর যে নিছক কোনও মহাত্মা বা মহাপুরুষ বা ধর্ম্মগুরু নন, তিনি যে স্বয়ং পরমাত্মা তা বোধে আনতে পারি, পারি দীক্ষা গ্রহণ ও এই জীবনকে, এই জীবনের আসাকে সার্থক ক'রে তুলতে। তাই আমি আমার পোস্টের উত্তরে লেখা গুরুভাইয়ের কথাটার বিশ্লেষণ করার জন্য আমার এই কলম ধরার প্রয়াস।

গুরুভাইয়ের করা প্রশ্ন ওয়ারেন্টি আর গ্যারান্টি প্রসঙ্গে বলি। ওয়ারেন্টি নয়, ওয়ারেন্টি তো বর্তমান ঘোর কলির জালি ব্যবসায়ীদের কথা। আগে কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরাসরি গ্যারান্টি দিত। কিন্তু আজ তারা জানে যে তারা গ্যারান্টি রাখার মর্যাদা হারিয়েছে। তাই তারা আজ আর গ্যারান্টির কথা বলে না, আর বলবার মত তাদের সেই সততা নেই। তাই ব'লে কি 'গ্যারান্টি' শব্দ তার মর্যাদা হারিয়েছে? 'গ্যারান্টি' শব্দ তার মর্যাদা হারায় নি, মানুষ মানুষকে, ব্যবসায়ী তার ক্রেতাকে গ্যারান্টি দেবার জন্য যে সততা, ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন সেই সততা, ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে এক তাল মাংসে পরিণত হয়েছে আজ; আর তা হয়েছে জৈবি সংস্থিতিতে! তাই আজ ডিকশনারী থেকে 'কুল রাখি না মান রাখি' গোছের শব্দ 'ওয়ারেন্টি' বের ক'রে এনেছে সুযোগসন্ধানী মানুষ। তাই এক্ষেত্রে অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দরবারে কোনও স্থান নেই 'ওয়ারেন্টি'-র; স্থান ছিল, আছে ও থাকবে 'গ্যারান্টি' শব্দের তা যতদিন তাঁর ও তাঁর সৃষ্ট সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকবে। তাই আমি 'গ্যারান্টি' শব্দ সচেতন ভাবেই ব্যবহার করেছি আবারও করছি। আর বারবার বলছি সৎসঙ্গীদের, হ্যাঁ গ্যারান্টি! ১০০তে ২০০ভাগ গ্যারান্টি যে ইষ্টভৃতি ও নামধ্যানপরায়ণ সৎসঙ্গীদের কোনও ভয় নেই করোনার।

এবার প্রশ্ন হচ্ছে, আমার 'গ্যারান্টি' শব্দ প্রয়োগের মধ্যে গুরুভাইয়ের সন্দেহ, অবিশ্বাস এলো কোথা থেকে?
 
এইটা আর কিছুই নয়, তাঁর প্রতি অবিশ্বাস। এই মানসিকতা তাদের, যাদের জীবনে ঠাকুর আছে নাম কা ওয়াস্তে। ঠাকুরও আছে, বৃত্তি-প্রবৃত্তির উচ্শৃঙ্খল বিশৃঙ্খল চলনও আছে। যেখানে বৃত্তি-প্রবৃত্তি বাধা পায় সেখানে ঠাকুরকে পাশে সরিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে চুমু খায়, আর যেখানে বিপদে পড়ে সেখানে ঠাকুর, ঠাকুর করে! আর বিপদে পড়ে ঠাকুরের দয়া না পেলে তখন 'দূর দূর ঠাকুর টুকুর ব'লে কিছু নেই, ওসব ফালতু।' না ক'রে পাওয়ার অসুস্থ বুদ্ধি!

আর বিশ্বাস ও নির্ভরতা এতই ঠুনকো যে, বিরুদ্ধ ভাব সেই ঠুনকো বিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার ক'রে দেয়, তখন নির্ভরতা ব'লে জীবনে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। যারা ঠাকুরকে ধরেছে তারা মনে করে জীবনে যখনই যা দরকার হবে তাই-ই ম্যাজিকের মত পেয়ে যাবে আর জীবনে কোনও দুর্ভোগ নেবে এলে তার দায় নিতে হবে ঠাকুরকে! তলিয়ে দেখবে না এই বিপর্যয় কেন নেবে এলো জীবনে, সংসারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নেগেটিভ অরবিটের (লোকজন, আলাপ-আলোচনা, চিন্তাভাবনা, খাদ্যখানা ইত্যাদি) মধ্যে কাটাতে কাটাতে শরীরে-মনে-আত্মায় যে কম্পনের সৃষ্টি হয় তারই বহির্প্রকাশ ঘটে কথাবার্তায়, কাজকর্মে। তখন ঈশ্বরের লীলা, ক্ষমতা বোঝে এমন বালখিল্য ঋষির বারো হাত কাঁকুর-এর তেরো হাত বিচির দশা প্রাপ্ত জীবন দিয়ে সম্ভব নয়। এইসব মানুষ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখবে, লীলা বুঝবে এইকথাও যা কুঁজের চিৎ হ'য়ে শোওয়ার ভাবনাও তা, একই। অথচ এরাই আবার ঈশ্বর নিয়ে, ঈশ্বরের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে!
 
ঈশ্বর যে আছেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব যে আছে, তিনি মানুষের জন্য, মানুষের মাঝে মানুষের রূপ নিয়ে যে নেবে আসেন আর নেবে আসেন বারবার যুগের উপযোগী হ'য়ে আর তিনি যে সব দেখছেন এসব কথা ঈশ্বর অবিশ্বাসী ও ঈশ্বর মানে না এমন মানুষ স্বীকার করে না। স্বীকার করতে নাই পারে তারা কিন্তু ঈশ্বর বিশ্বাসী, ঈশ্বর মানে এমন মানুষ কি ক'রে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হয়!? তারা গাছেরও খায় আবার তলারও কুড়োয় স্বভাবের। যেই ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষকে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করার কথা বললাম অমনি চলে এলো নানা প্রশ্ন ও যুক্তির সম্ভার সাজিয়ে! ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করার কথা বলতে এরা না ক'রে পাওয়াকেই বোঝে! কোনও কিছু না ক'রে এরা ঈশ্বরের দর্শন, দয়া সব কিছু পেতে চায়! পেতে চায় ফোকটে! তাই পাওয়াও ঘটে না! শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, "বিশ্বাস না থাকলে দর্শন হবে কি ক'রে? যদি বিশ্বাস না কর, তোমার দেখাও হয় না, অনুভব করাও হয় না। আবার, ঐ দেখা ও অনুভব করা বিশ্বাসকেই পাকা ক'রে দেয়।"
তাই এইসমস্ত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ভক্তমণ্ডলীর কাছে গ্যারান্টি শব্দ ফেক ব'লে মনে হয়। যেখানে মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি, পান্ডিত্য শেষ সেখান থেকে শুরু হয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার অভিযান! ঈশ্বর কি করতে পারে আর না পারে তা কি ঈশ্বরের সৃষ্ট সৃষ্টির পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব!? যেখান থেকে অর্থাৎ যে উৎসমুখ থেকে সমস্ত কিছুর উদ্ভব, যিনি সমস্ত কিছুর অধিপতি---বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে সেন্ট্রাল জোন বলা হয়----সেখানে যখন মানুষ যুক্ত হ'য়ে যায় তখন আর তাকে কেউ ছুঁতে পায় না, কিছু করা তো দূরের কথা! চায়নার করোনা-ই হ'ক আর হায়না হ'ক বা আগামী পৃথিবী ধ্বংসের ভয়াবহ যে ধ্বংসাত্মক কারণ-ই হ'ক সৃষ্টির মূল মরকোচ যে নাম, বীজনাম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দিয়ে গিয়েছেন সেই নামের সঙ্গে যুক্ত একাত্ম যে জীবন তাকে কেউ টলাতে পারবে না!
 
শ্রীশ্রীঠাকুরের অভয় বাণী:
ঝড় ঝঞ্ঝা যতই আসুক
মনেতে রাখিস জোর
মাথায় আছে দয়াল ঠাকুর
ভাবনা কিবা তোর।

তাই বলি, গ্যারান্টি দিয়ে বলি, নামময় হ'য়ে থাকুন আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা। সকালে ইষ্টভৃতি করুন, তাঁর নির্দেশ মত থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেয়ে জল খান! সকাল বিকাল প্রার্থনা করুন! শারীরিক-মানসিক-আত্মিক সদাচার পালন করুন! নেগেটিভ সঙ্গ, চিন্তা-ভাবনা, কাজকর্ম থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন, কোনও ভয় নেই! দয়াল আছেন, তিনি সব দেখছেন। যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি পরিপালনের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করুন। চলতে, ফিরতে, উঠতে, বসতে ২৪ঘন্টা নাম করুন, শুধু নাম আর নাম! ভুলে যাচ্ছেন নাম করতে? মনে পড়লেই করুন। সমস্ত কাজের মধ্যে করুন, মনে মনে করুন, করার অভ্যাস করুন। রাত্রিবেলা ঘুমোবার আগে একটু তাঁর সামনে বসুন, নাম করুন, তারপর ঘুমান, ঘুমাতে ঘুমাতে নাম করুন, নাম করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম ভাঙলেই নাম করুন, তারপর ইষ্টভৃতি ক'রে বিছানা ছাড়ুন। কোনও ভয় থাকবে না। করোনা ভীতি কেন আরও আরও ভয়ানক মহাভীতিও তাঁর দয়ায় কেটে যাবে, দূর হ'য়ে যাবে জীবন থেকে! তাই তো শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে গিয়েছিলেন,
 
যজন যাজন ইষ্টভৃতি
করলে কাটে মহাভীতি! জয়গুরু। ( লেখা ২৮শে মার্চ, ২০২০)

No comments:

Post a Comment