শ্রীশ্রীঠাকুর যখন দেহরূপে ছিলেন তখনও তিনি সব দেখেছিলেন কে ঠিক আর কে বেঠিক আর আজও সুক্ষ্মদেহে, লিঙ্গশরীরে তিনি ৫৫ বছর ধ'রে দেখছেন। আমরা যেন ভুলে না যায় তাঁর ভয়াল রূপকে। আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের পূর্ব রূপ শ্রীশ্রীবুদ্ধের শান্ত রূপ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু ও শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের চরম প্রেম-ভালোবাসার বাৎসল্য রূপ দেখে যেন না ভাবি তিনি শুধু দয়াল, দয়াময়। প্রেম-ভালোবাসার মূর্ত রূপ প্রেমিক পুরুষ শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের, শ্রীশ্রীকৃষ্ণের ও শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদের অধর্ম, অন্যায় ও দুস্কৃতি দমনে ভয়ংকর ভয়াল রূপও যেন আমরা ভুলে না যায়। সময় সবসে বড়া বলবান। আমরা দেখেছি শ্রীকৃষ্ণের শিশুপালের ১০০টা অপরাধ ক্ষমা করতে, কিন্তু ১০১-এর বেলায় দেখেছি ভয়ংকর রূপ। আমরা দেখেছি মহাভারতের যুদ্ধ শুরুর ঠিক পূর্বমুহুর্তে যুদ্ধ ঠেকাতে, ধ্বংসের হাত থেকে কৌরব পক্ষকে রক্ষা করতে দুর্যোধনের কাছে পাঁচ ভাইয়ের জন্য শুধু পাঁচটি গ্রাম ভিক্ষা চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘর শত্রু দুর্যোধন দেননি এবং অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের ও দুর্যোধনের শেষ অবস্থা আমরা দেখেছি, আমরা দেখেছি তাবড় তাবড় প্রাজ্ঞ অর্থাৎ পন্ডিত, জ্ঞানী, বিজ্ঞ মহাযোদ্ধাদের শেষ পরিণতি।
আবার বলি, সময় সবসে বড়া বলবান সে তার শক্তি বা ক্ষমতা সময় মতো দেখিয়ে দেবে এবং Time is the great healer, অর্থাৎ সময় মহান নিরাময়কারী।
যাই হ'ক এবার আসি ইষ্টভৃতি ও ইষ্টভৃতি মন্ত্র পরিবর্তন সম্পর্কে।
ইষ্টভৃতি মানে কি? কথাপ্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন- ইষ্টভৃতি হ'লো practical materialised condensed form of psycho - physical ascetic devotion (শারীর-মানস তপস্যাপরায়ণ ভক্তির কার্য্যকরী বাস্তব সংক্ষিপ্ত রূপ )।
ইষ্টভৃতি মানে কি? কথাপ্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন- ইষ্টভৃতি হ'লো practical materialised condensed form of psycho - physical ascetic devotion (শারীর-মানস তপস্যাপরায়ণ ভক্তির কার্য্যকরী বাস্তব সংক্ষিপ্ত রূপ )।
শরীর ও মনকে স্থির ক'রে একজায়গায় এনে লক্ষ্যবস্তুকে অর্জনের জন্য শৃঙ্খলিত ভাবে অতিশয় আসক্ত বা অনুরক্ত হ'য়ে, একনিষ্ঠভাবে বাস্তব সেবার মাধ্যমে ইষ্টদেবতার প্রতি যে বিশেষ অনুরাগ বা প্রেমপূর্ণ যে প্রচেষ্টা, সেই প্রচেষ্টাই হ'লো পরম গতি, পরম অবলম্বন ভক্তি। এই প্রচেষ্টার ফলে শরীরে মনে যে তাপ সঞ্চারিত হয় সেই তাপ সঞ্চারিত ভক্তিকে তপস্যাপরায়ন ভক্তি বলে। আর তপস্যাপরায়ণ ভক্তির মধ্যে যে মূল বাস্তব সেবার কথা বলা আছে, তাই ইষ্টভৃতি।
এই যে ইষ্টভৃতির কথা বললাম,
এখানে ইষ্টভৃতি করার মধ্যে আছে শরীর-মনকে স্থির করা ও একবিন্দুতে আনার কথা, আছে লক্ষ্যবস্তু অর্জনের কথা, আছে একনিষ্ঠতার কথা, আছে বাস্তব সেবার কথা, আছে বিশেষ প্রেমের কথা, আছে তাপ সঞ্চারণের কথা ও ভক্তির কথা। এখানে পরিষ্কার ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুর psycho - physical ascetic devotion-এর যে কথা বলেছেন সেই devotion বা ভক্তির মধ্যে তিনি practical materialised condensed form অর্থাৎ কার্যকরী বাস্তব সংক্ষিপ্ত রূপের কথা অর্থাৎ বাস্তব সেবার কথা বলেছেন। সেই ্বাস্তব সেবা হ'লো আমার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁচার জন্য প্রতিদিন যা যা লাগে তাই তাই-ই আমার জীবন্ত ইষ্টদেবতার জন্যও লাগে। আমার জীবন্ত ইষ্টদেবতা আমার পরিবারের প্রধান, আমার ও আমার পরিবারের সবার অভিভাবক। তাই তাঁকে দিনের শুরুতে তাঁর যথেচ্ছ ভরণপোষণের জন্য অর্থাৎ তাঁর ইচ্ছামত, ইচ্ছানুসারে ব্যয় করার জন্য তাঁকে যে ভোজ্যের অনুকল্প রূপ অর্ঘ্য দান করা হয়, সেই অর্ঘ্যকে ইষ্টভৃতি বলে। এই ইষ্টভৃতির অর্ঘ্য তিনি কি করবেন আর না-করবেন সেখানে কৈফিয়ত চাওয়া চলবে না, সেটা তাঁর ইচ্ছাধীন। এই ইষ্টভৃতির অর্ঘ্যাঞ্জলী আমার স্বতঃস্বেচ্ছ অর্ঘ্যাঞ্জলী, এই ইষ্টভৃতি আমার অনুরাগ-উদ্দীপী অর্ঘ্যাঞ্জলী, এই ইষ্টভৃতি আমার আগ্রহ-উচ্ছল, অপ্রত্যাশী অর্ঘ্যাঞ্জলী যা আমার ইষ্টদেবতা শ্রীশ্রীঠাকুরকে আনন্দিত করে।
আর ইষ্টভৃতি শুধু ইষ্টদেবতাকেই সমর্পণ করা হয়; অর্থাৎ সমস্ত স্বত্ব ত্যাগ করে দান করা হয়, উৎসর্গ করা হয়। এই অর্ঘ্য তখন তাঁর, একান্তই তাঁর। তিনি যা ভালো বুঝবেন তিনি তাই করবেন এই অর্ঘ্য দিয়ে। তিনি এই ভক্তিপূর্ণ অর্ঘ্য তিনি নিজের ভোগের জন্য ব্যবহার করবেন কি অন্যকে দিয়ে দেবেন, বিলিয়ে দেবেন, নিজের কাছে রাখবেন কি অন্যের কাছে রাখবেন বা অন্যকে দেখভাল করার দায়িত্ব দেবেন বা এই অর্ঘ্য সমুদ্রে ফেলে দেবেন সেখানে সেটা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার; সেখানে আমার অর্থাৎ যিনি ইষ্টভৃতি করছেন তার কোনও হাত নেই। আর যদি আমার ইষ্টদেবতা এই অর্ঘ্য কি করছেন এই প্রশ্ন কিঞ্চিৎ সামান্য আঁশের মতোও মনে উদয় হয় তাহ'লে তিনি এই ইষ্টভৃতি গ্রহণ করেন না। ইষ্টভৃতি মানে শুধু ইষ্টকেই ভরণ করা অর্থাৎ প্রতিপালন করা, এখানে এই ভরণ করা বা প্রতিপালনের সময় তাঁর সৃষ্টির অন্য কেউ বা এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের অন্য কোনও কিছু সামনে থাকবে না বা আসবে না। যদি মনের মধ্যে আসে তাহ'লে সেই অর্ঘ্য তিনি গ্রহণ করেন না, উচ্ছিষ্ট হ'য়ে যায়। এই ম্যান টূ ম্যান কন্টাক্টের মতো অর্থাৎ ভক্ত আর ভগবানের মাঝে, সৃষ্টিকর্তা আর তাঁর ইন্ডিভিজুয়াল সৃষ্টির সঙ্গে ইষ্টভৃতির সময় সংযোগ স্থাপনের মাঝখানে তিনি কোনও কিছুকেই এলাও করেন না। ঐ যে তাঁর বাণী আছে, " You are for the Lord, Not for others"-- অর্থাৎ "তুমি একমাত্র ইষ্টের জন্য আর কারও জন্য নও" এই বাণী ইষ্টভৃতি করার সময়ে স্মরণ করার জন্য বাণী।
আর, ইষ্টভৃতি করার পরে তুমি পারিপার্শ্বিকের চিন্তা ক'রো। কিন্তু ইষ্টিভৃতি করার আগে এমনকি ইষ্টভৃতি করার সময়ও যেন পারিপার্শ্বিকের চিন্তা আমার মনে না আসে। তা সে আমার পিতা হ'ক, মাতা হ'ক, ভ্রাতা হ'ক, ভগ্নী হ'ক বা আমার চারপাশের সে যেই হ'ক বা যাই-ই হ'ক কেউই ইষ্টভৃতি সমর্পণের সময় আমার মনোজগতে তো দূরের কথা, আমার চারপাশে যেন ঠাঁই না পায়। ইষ্টভৃতি করার সময় আদি নেই, অন্ত নেই শুধু তুমি আর আমি, পিতা নেই, মাতা নেই শুধু তুমি আর আমি, ভাই নেই, বোন নেই, স্বামী নেই, স্ত্রী নেই, পুত্র নেই, কন্যা নেই, বন্ধু, বান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী কেউ নেই, কিচ্ছু নেই শুধু তুমি আর আমি, আমি আর তুমি। আর এরকম শারীমানস তপস্যাপরায়ণ ভক্তির কার্যকরী বাস্তব সংক্ষিপ্ত রূপ ইষ্টভৃতি করার পরে পারিপার্শ্বকের জন্য চিন্তা ক'রো। তাই তিনি ঐ ইংরেজী বাণীর পরবর্তী লাইনে বললেন, "You are for the Lord, And so for others." অর্থাৎ তুমি ইষ্টের জন্য বলেই তুমি সবার জন্য। তাই তিনি ইষ্টভৃতি করার পর ভ্রাতৃভোজ্য ও ভূতভোজ্য দেওয়ার কথাও বলেছেন। আর এই যে ভ্রাতৃভোজ্য ও ভূতভোজ্য এবং ইষ্টভৃতি সেটাও ইষ্টপ্রীতিকে লক্ষ্য করেই অর্থাৎ আমার জীবন্ত ইষ্টদেবতাকে প্রীত করার জন্যই করা। আর এই সবটা মিলেই হয় ইষ্টভৃতি। কারণ তাঁর বাস্তব সেবা করার পর তাঁর সৃষ্টির অন্য সব কিছুর জন্যও বাস্তব সেবার প্রয়োজন। কিন্তু কখনোই একই সঙ্গে নয়। আগে তিনি, এক ও একমাত্র তিনি অর্থাৎ আগে সৃষ্টিকর্তা তারপরে তাঁর সৃষ্টি।
তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, ইষ্টভৃতি ঠিক-ঠিক ভাবে করতে গেলে তা' অর্থ ভাবনা-সহ জপও আনে, সঙ্গে-সঙ্গে আনে ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠামূলক মনন সমন্বিত ধ্যান। ইষ্টের ভরণ-পূরণ করতে গেলে কায়মনোবাক্যেই তা' করতে হয়। শরীরটা মানুষের বড় জীবন্ত বাস্তব জিনিস, কোন ব্যাপারে আগ্ৰহ-সহকারে শরীরটাকে নিয়োজিত করলে মন, বাক্যও তার পিছু-পিছু ছোটে। একটা মানুষ রোজ ভোরে উঠে যদি শুদ্ধাচারে ভক্তিভরে ইষ্টভৃতি করে, তাহ'লে তার ভিতর-দিয়ে এতখানি extra - energy (অতিরিক্ত শক্তি) stored (সঞ্চিত) হয় যে, তার উপর দাঁড়িয়ে সে-সব বিপদ-আপদকে easily overcome (সহজে অতিক্রম) করতে পারে। অন্য মানুষ যেখানে ভেঙ্গে পড়ে, সেখানে সে অটল হ'য়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
জেমসও তাঁর সিলেক্টেড আর্টিকেলস-এ বলেছেন, "He will stand like a tower when everything rocks around him and when his softer fellow-mortals are winnowed like chaff in the blast." অর্থাৎ যখন সবকিছুর অস্তিত্ব টলায়মান হ’য়ে উঠবে, এবং শক্তিহীন নির্জীব লোকগুলি ঝড় আসার আগেই তুষের মত উড়ে যাবে, তখন সে অর্থাৎ যে ইষ্টভৃতি করে সে একটা স্তম্ভের মতো নিজের শক্তিতে অটল হ’য়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেনঃ ইষ্টভৃতি ধর্ম্মের অর্থাৎ জীবন-বৃদ্ধির একটা corner stone ( প্রধান ভিত্তি-প্রস্তর)। ইষ্টভৃতি হিসাবে নিত্য ভোজ্য বা নৈবেদ্য উৎসর্গ করাই বিধি, তবে তা রাখা এবং ঐ জিনিষই মাসান্তে ইষ্টস্থানে পৌঁছে দেবার বাস্তব অসুবিধা আছে। তাই ভোজ্যের অনুকল্পে পয়সা রাখা চলে।
এই ইষ্টভৃতি করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, Tempting attitude (প্রলুব্ধ করার মনোভাব) অর্থাৎ কোনও কিছু পাওয়ার মনোভাব নিয়ে ইষ্টভৃতি করলে সেই ইষ্টভৃতি কিন্তু তিনি গ্রহণ করেন না। সেটা তাঁর কাছে অপমানজনক, অশ্রদ্ধাপূর্ণ ইষ্টভৃতি।
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, Tempting attitude (প্রলুব্ধ করার মনোভাব) থাকলে সবই নিষ্ফল হ'য়ে যায়। বাইবেলে আছে- Do not tempt Lord thy God (তোমার প্রভু ঈশ্বরকে প্রলুব্ধ ক'রো না)। ঠাকুর! রোজ আমি ইষ্টভৃতি করি, আমি তোমার অনুগত, তুমি আমার রোগটা সারিয়ে দাও। রোগ যদি সারে, তাহ'লে বুঝব তোমার দয়া আছে আমার উপর। ইষ্টভৃতির মাহাত্ম্য আছে। রোগ সেরে গেলে বেশী ক'রে ইষ্টভৃতি করব'--- এমনতর সর্ত্তকন্টকিত অবদানে Supreme Being (পরমপিতা) টলেন না, Satan (শয়তান) টলতে পারে। ঐ সর্ত্ত ও প্রত্যাশাই তাঁর দয়া পাওয়ার পথে barrier (বাদা) সৃষ্টি করে। ভগবান ভালবাসেন সকলকে equitably (যথোপযুক্তভাবে), কিন্তু আমরা প্রত্যাশাহীন হ'য়ে তাঁকে যতখানি ভালোবাসি, ততখানি আমাদের তাঁকে পাওয়া মানে স্ববৈশিষ্ট্য-অনুযায়ী তাঁর রকমে রূপান্তরিত হওয়া। ঐ চরিত্র যেখানে মজুত হয়, সেখানে জীবনীয় লওয়াজিমার অভাব হয় না।
এই ইষ্টভৃতি করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, Tempting attitude (প্রলুব্ধ করার মনোভাব) অর্থাৎ কোনও কিছু পাওয়ার মনোভাব নিয়ে ইষ্টভৃতি করলে সেই ইষ্টভৃতি কিন্তু তিনি গ্রহণ করেন না। সেটা তাঁর কাছে অপমানজনক, অশ্রদ্ধাপূর্ণ ইষ্টভৃতি।
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, Tempting attitude (প্রলুব্ধ করার মনোভাব) থাকলে সবই নিষ্ফল হ'য়ে যায়। বাইবেলে আছে- Do not tempt Lord thy God (তোমার প্রভু ঈশ্বরকে প্রলুব্ধ ক'রো না)। ঠাকুর! রোজ আমি ইষ্টভৃতি করি, আমি তোমার অনুগত, তুমি আমার রোগটা সারিয়ে দাও। রোগ যদি সারে, তাহ'লে বুঝব তোমার দয়া আছে আমার উপর। ইষ্টভৃতির মাহাত্ম্য আছে। রোগ সেরে গেলে বেশী ক'রে ইষ্টভৃতি করব'--- এমনতর সর্ত্তকন্টকিত অবদানে Supreme Being (পরমপিতা) টলেন না, Satan (শয়তান) টলতে পারে। ঐ সর্ত্ত ও প্রত্যাশাই তাঁর দয়া পাওয়ার পথে barrier (বাদা) সৃষ্টি করে। ভগবান ভালবাসেন সকলকে equitably (যথোপযুক্তভাবে), কিন্তু আমরা প্রত্যাশাহীন হ'য়ে তাঁকে যতখানি ভালোবাসি, ততখানি আমাদের তাঁকে পাওয়া মানে স্ববৈশিষ্ট্য-অনুযায়ী তাঁর রকমে রূপান্তরিত হওয়া। ঐ চরিত্র যেখানে মজুত হয়, সেখানে জীবনীয় লওয়াজিমার অভাব হয় না।
এই ইষ্টভৃতি দয়াল প্রভুর চরণে সমর্পণ করার সময় আমরা যে মন্ত্র উচ্চারণ করি সেই মন্ত্র নিয়ে এখন আলোচনা করা যাক।
ইষ্টভৃতির পুরোনো মন্ত্র ১৯৩৮ সাল অক্টোবর মাসে চালু হয়। সেই মন্ত্র হ'লো,
"ইষ্টভৃতির্ময়াদেব কৃতা প্রীত্যে তব প্রভো! ইষ্টভ্রাতৃ-ভূতযজ্ঞেস্তৃপ্যন্তু পারিপার্শ্বিকাঃ।"
অর্থাৎ, "হে দেব, হে প্রভু, তোমারই প্রীতি-পোষণার্থ আমি ইষ্টভৃতি নিবেদন করিলাম। ভ্রাতৃভোজ্য-ভূতভোজ্য রূপ যজ্ঞ দ্বারা পারিপার্শ্বিক তৃপ্ত হউক।"
ইষ্টভৃতি নোতুন মন্ত্র ১৯৬৪ সাল ২৭শে মে চালু হয়। জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুদিন।
ইষ্টভৃতির সেই নোতুন মন্ত্রঃ
"জীব জগত জীবন কারণ করুণাময় স্বামী তোমার দয়ায় লভেছি জনম সকলি পেয়েছি আমি। আজি এ প্রভাতে কর্মারম্ভে তোমারি ভোগের লাগি ইষ্টভৃতির অর্ঘ্য দিতেছি শ্রীচরণে কৃপা মাগি।"
দু'টো মন্ত্রের মধ্যে তফাৎ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। ১৯৩৮ সালের অক্টোবর মাসে চালু হওয়া প্রথম মন্ত্রের মধ্যে আমরা দেখতে পাই ইষ্টকে অর্ঘ্য সমর্পণ করার সময় শুধু ইষ্টকে অর্ঘ্য সমর্পণ করছি না, একই সঙ্গে তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্যেও অর্ঘ্য দিচ্ছি। অর্থাৎ তাঁর ভরণপোষণের সময় তাঁর বাণী "You are for the Lord, Not for others" বাণী খাটছে না। ইষ্টভৃতি সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর যে psycho - physical ascetic devotion-এর কথা বলেছেন সেই devotion বা ভক্তির মধ্যে 'একভক্তি বিশিষ্যতে' ভক্তির কথা আছে। ভক্তি এক ছাড়া দুই হয় না। তিনি বলছেন ঈশ্বর কখনও এক ছাড়া দুই হয় না।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র practical materialised condensed form অর্থাৎ কার্যকরী বাস্তব সংক্ষিপ্ত রূপের কথা অর্থাৎ বাস্তব যে সেবার কথা বলেছেন সেই সেবার মধ্যে psycho - physical ascetic devotion-এর (ভক্তির কথা) বলেছেন। ইষ্টভৃতির মাধ্যমে সেই ভক্তি প্রদর্শনের সময় যে মন্ত্র উচ্চারণ করা হয় তা যেন এক ও একমাত্র ইষ্টকেই উদ্দেশ্য ক'রে করা হয়।
কিন্তু আমরা যখন ইষ্টভৃতির পুরোনো মন্ত্র যা ১৯৩৮সালে প্রথম চালু হয়েছিল তা ইষ্টভৃতির সময় উচ্চারণ করি তখন ইষ্টের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাতৃভোজ্য-ভূতভোজ্য নিবেদনের মাধ্যমে পারিপার্শ্বিকও এসে পড়ে। যা ইষ্ট ও পারিপার্শ্বিক একাকার হ'য়ে যায়, খিচুড়ি পাকিয়ে যায়। সেই সময়ের ইষ্টভৃতির মন্ত্রে আমরা বলি,
"ইষ্টভৃতির্ময়াদেব কৃতা প্রীত্যে তব প্রভো! ইষ্টভ্রাতৃ-ভূতযজ্ঞেস্তৃপ্যন্তু পারিপার্শ্বিকাঃ।"
অর্থাৎ, "হে দেব, হে প্রভু, তোমারই প্রীতি-পোষণার্থ আমি ইষ্টভৃতি নিবেদন করিলাম। ভ্রাতৃভোজ্য-ভূতভোজ্য রূপ যজ্ঞ দ্বারা পারিপার্শ্বিক তৃপ্ত হউক।"
এখানে ইষ্টকে ইষ্টভৃতি উৎসর্গের সময় একভক্তি বিশিষ্যতে (এক = only ভক্তিঃ = in devotional service বিশিষ্যতে = is special) একভক্তি ভাব বাধা পেল। তাই ইষ্টভৃতি করার সময় ইষ্টভৃতি যাতে শুধু ইষ্টকেই সমর্পণ করা যায় সেই কারণেই একটা ইষ্টভৃতি মন্ত্রের কথা শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রীশ্রীবড়দাকে বলেছিলেন। শ্রীশ্রীবড়দা বহুদিন ধ'রে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে ও ভোজনে এই বিষয়ে ধ্যানস্থ থাকার ফলে গদ্যাকারে তিনি একটা ইষ্টভৃতি মন্ত্রের খসড়া তৈরী করেন এবং শ্রীশ্রীদাদা তা ছড়ার আকারে রূপ দেন। এবং সেই তৈরী করা নূতন মন্ত্র শ্রীশ্রীঠাকুরকে শ্রীশ্রীবড়দা দেখান। সেদিনটা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহুরুর মৃত্যুদিন। ইষ্টভৃতি নোতুন মন্ত্র ১৯৬৪ সাল ২৭শে মে শ্রীশ্রীঠাকুরকে দেখানো হ'লে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর কারণে গভীর শোকাহত শ্রীশ্রীঠাকুর সেই মন্ত্র দেখে ও পড়ে আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন ও মুহুর্তে সমস্ত শোক তাঁর চলে যায়। সেই ইষ্টভৃতির মন্ত্র তিনি অনুমোদন করেন।
ইষ্টভৃতির পুরোনো মন্ত্র ১৯৩৮ সাল অক্টোবর মাসে চালু হয়। সেই মন্ত্র হ'লো,
"ইষ্টভৃতির্ময়াদেব কৃতা প্রীত্যে তব প্রভো! ইষ্টভ্রাতৃ-ভূতযজ্ঞেস্তৃপ্যন্তু পারিপার্শ্বিকাঃ।"
অর্থাৎ, "হে দেব, হে প্রভু, তোমারই প্রীতি-পোষণার্থ আমি ইষ্টভৃতি নিবেদন করিলাম। ভ্রাতৃভোজ্য-ভূতভোজ্য রূপ যজ্ঞ দ্বারা পারিপার্শ্বিক তৃপ্ত হউক।"
ইষ্টভৃতি নোতুন মন্ত্র ১৯৬৪ সাল ২৭শে মে চালু হয়। জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুদিন।
ইষ্টভৃতির সেই নোতুন মন্ত্রঃ
"জীব জগত জীবন কারণ করুণাময় স্বামী তোমার দয়ায় লভেছি জনম সকলি পেয়েছি আমি। আজি এ প্রভাতে কর্মারম্ভে তোমারি ভোগের লাগি ইষ্টভৃতির অর্ঘ্য দিতেছি শ্রীচরণে কৃপা মাগি।"
দু'টো মন্ত্রের মধ্যে তফাৎ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। ১৯৩৮ সালের অক্টোবর মাসে চালু হওয়া প্রথম মন্ত্রের মধ্যে আমরা দেখতে পাই ইষ্টকে অর্ঘ্য সমর্পণ করার সময় শুধু ইষ্টকে অর্ঘ্য সমর্পণ করছি না, একই সঙ্গে তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্যেও অর্ঘ্য দিচ্ছি। অর্থাৎ তাঁর ভরণপোষণের সময় তাঁর বাণী "You are for the Lord, Not for others" বাণী খাটছে না। ইষ্টভৃতি সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর যে psycho - physical ascetic devotion-এর কথা বলেছেন সেই devotion বা ভক্তির মধ্যে 'একভক্তি বিশিষ্যতে' ভক্তির কথা আছে। ভক্তি এক ছাড়া দুই হয় না। তিনি বলছেন ঈশ্বর কখনও এক ছাড়া দুই হয় না।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র practical materialised condensed form অর্থাৎ কার্যকরী বাস্তব সংক্ষিপ্ত রূপের কথা অর্থাৎ বাস্তব যে সেবার কথা বলেছেন সেই সেবার মধ্যে psycho - physical ascetic devotion-এর (ভক্তির কথা) বলেছেন। ইষ্টভৃতির মাধ্যমে সেই ভক্তি প্রদর্শনের সময় যে মন্ত্র উচ্চারণ করা হয় তা যেন এক ও একমাত্র ইষ্টকেই উদ্দেশ্য ক'রে করা হয়।
কিন্তু আমরা যখন ইষ্টভৃতির পুরোনো মন্ত্র যা ১৯৩৮সালে প্রথম চালু হয়েছিল তা ইষ্টভৃতির সময় উচ্চারণ করি তখন ইষ্টের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাতৃভোজ্য-ভূতভোজ্য নিবেদনের মাধ্যমে পারিপার্শ্বিকও এসে পড়ে। যা ইষ্ট ও পারিপার্শ্বিক একাকার হ'য়ে যায়, খিচুড়ি পাকিয়ে যায়। সেই সময়ের ইষ্টভৃতির মন্ত্রে আমরা বলি,
"ইষ্টভৃতির্ময়াদেব কৃতা প্রীত্যে তব প্রভো! ইষ্টভ্রাতৃ-ভূতযজ্ঞেস্তৃপ্যন্তু পারিপার্শ্বিকাঃ।"
অর্থাৎ, "হে দেব, হে প্রভু, তোমারই প্রীতি-পোষণার্থ আমি ইষ্টভৃতি নিবেদন করিলাম। ভ্রাতৃভোজ্য-ভূতভোজ্য রূপ যজ্ঞ দ্বারা পারিপার্শ্বিক তৃপ্ত হউক।"
এখানে ইষ্টকে ইষ্টভৃতি উৎসর্গের সময় একভক্তি বিশিষ্যতে (এক = only ভক্তিঃ = in devotional service বিশিষ্যতে = is special) একভক্তি ভাব বাধা পেল। তাই ইষ্টভৃতি করার সময় ইষ্টভৃতি যাতে শুধু ইষ্টকেই সমর্পণ করা যায় সেই কারণেই একটা ইষ্টভৃতি মন্ত্রের কথা শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রীশ্রীবড়দাকে বলেছিলেন। শ্রীশ্রীবড়দা বহুদিন ধ'রে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে ও ভোজনে এই বিষয়ে ধ্যানস্থ থাকার ফলে গদ্যাকারে তিনি একটা ইষ্টভৃতি মন্ত্রের খসড়া তৈরী করেন এবং শ্রীশ্রীদাদা তা ছড়ার আকারে রূপ দেন। এবং সেই তৈরী করা নূতন মন্ত্র শ্রীশ্রীঠাকুরকে শ্রীশ্রীবড়দা দেখান। সেদিনটা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহুরুর মৃত্যুদিন। ইষ্টভৃতি নোতুন মন্ত্র ১৯৬৪ সাল ২৭শে মে শ্রীশ্রীঠাকুরকে দেখানো হ'লে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর কারণে গভীর শোকাহত শ্রীশ্রীঠাকুর সেই মন্ত্র দেখে ও পড়ে আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন ও মুহুর্তে সমস্ত শোক তাঁর চলে যায়। সেই ইষ্টভৃতির মন্ত্র তিনি অনুমোদন করেন।
ইষ্টভৃতির সেই নোতুন মন্ত্রঃ
জীবনং করুণাসিন্ধো! জগতস্ত্বং জগৎপথে। ভবতঃ কৃপয়া লব্ধং জীবনং সফলং মম।। প্রাগেব সর্ব্বকার্য্যেভ্য স্তবৈব ভোগ-তৃপ্তয়ে। ইষ্টভৃতি কৃতাস্মাভি কৃপয়া গৃহ্যতাং প্রভো।"
"জীব-জগত-জীবন -কারণ করুণাময় স্বামী। তোমার দয়ায় লভেছি জনম, সকলি পেয়েছি আমি। আজি এ প্রভাতে কর্মারম্ভে তোমারি ভোগের লাগি ইষ্টভৃতির অর্ঘ্য দিতেছি-শ্রীচরণে কৃপা মাগি।"
এই মন্ত্রে আমরা কি দেখতে পাই? এই মন্ত্রে আমরা দেখতে পাই ইষ্টভৃতি মন্ত্র পাঠ করার সময় এই মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে একমাত্র ইষ্টকেই ইষ্টভৃতি উৎসর্গ করা হচ্ছে। এই অর্ঘ্য সমর্পণের সময় কেউ আমার সামনে নেই। আমার সামনে শুধু আমার ইষ্ট, আর ইষ্ট, ইষ্ট আর ইষ্ট। এছাড়া আর দ্বিতীয় কেউ নেই। ইষ্টকে অর্ঘ্য সমর্পণের সময় কোনও ভ্রাতৃভোজ্য ও ভূতভোজ্য নিবেদন নয়। এই নিকুম্ভিলা রূপ ইষ্টভৃতি মহাযজ্ঞ শেষ হওয়ার পর তাঁর সৃষ্টিকে তুমি যা হ'ক নিবেদন ক'রো। কিন্তু কখনোই ইষ্টকে ভোজ্য বা ভোজ্যের অনুকল্প অর্ঘ্য সমর্পণের সময় নয়। এ সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরের পরিষ্কার বলা আছে, "কেউ যদি ভ্রাতৃভোজ্য ও ভূতভোজ্য রোজ না রাখে এবং মাসের শেষে নিবেদিত ইষ্টার্ঘ্য পুরোপুরি ইষ্টস্থানে পাঠিয়ে আলাদা ক'রে ঐটে দেয়, অর্থাৎ ভ্রাতৃভোজ্য ও ভূতভোজ্য দেয়, তাহ'লেও চলতে পারে।"
তাই ইষ্টভৃতি মন্ত্র পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়েছিল। আর হয়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দেশেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই নোতুন ইষ্টভৃতি মন্ত্র চালু হয়েছিল ১৯৬৪ সালে ২৭শে মে অর্থাৎ ঠাকুরের দেহ রাখার সাড়ে ৪ বছর আগে। ১৯৩৮ সালে চালু হওয়া ইষ্টভৃতির মন্ত্র সবাই সমস্ত সৎসঙ্গীরাই করতেন। আবার ১৯৬৪ সালে যখন নোতুন মন্ত্র চালু হ'লো তখন তো শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং ছিলেন এবং তিনি সেই মন্ত্র অনুমোদন করেছিলেন। তাহ'লে কি সেই মন্ত্র স্বয়ং শ্রীশ্রীঠাকুর ইষ্টভৃতি করার সময় করতেন না? শ্রীশ্রীঠাকুরের দ্বিতীয় সন্তান শ্রদ্ধেয় পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবিবেকদাদা ও তাঁর পরিবার নোতুন মন্ত্রে ইষ্টভৃতি করতেন না? শ্রীশ্রীঠাকুরের কনিষ্ঠ সন্তান শ্রদ্ধেয় পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীকাজলদাদা, শ্রীশ্রীছোটোমা এবং শ্রীশ্রীকাজলদাদার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নোতুন ইষ্টভৃতি মন্ত্রোচ্চারণে ইষ্টভৃতি করতেন না? শ্রীশ্রীঠাকুর থাকতেই যে নোতুন ইষ্টভৃতি মন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল তাহ'লে কি তখন শ্রীশ্রীবিবেকদাদা ও শ্রীশ্রীকাজলদাদা সহ তাদের পরিবারের সবাই শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দেশ ও অনুমোদিত নোতুন ইষ্টভৃতি মন্ত্র অস্বীকার করেছিলেন ও অস্বীকার ও অমান্য ক'রে পুরোনো ইষ্টভৃতি মন্ত্রেই ইষ্টভৃতি করতেন? আর শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবার নোতুন মন্ত্রে ইষ্টভৃতি করতেন? তৎকালীন শ্রীশ্রীঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিশিষ্ট ভক্তমন্ডলী যারা আজও বেঁচে আছেন তাঁরা সেইসময় সেই নোতুন ইষ্টভৃতি মন্ত্র উচ্চারণ ক'রে ইষ্টভৃতি করতেন? নাকি শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দেশ অমান্য ক'রে পুরোনো ইষ্টভৃতি মন্ত্রেই ইষ্টভৃতি করতেন? এ সম্পর্কে পুরোনো ইষ্টপ্রাণ বিশিষ্ট সৎসঙ্গীরা সবার সুবিধার্থে কিছু বলবেন? তামাম সৎসঙ্গীরা কোন মন্ত্রে ইষ্টভৃতি করতেন তখন? তখন তো শ্রীশ্রীঠাকুর দেহরূপে সুস্থাবস্থায় বিদ্যমান। আমি যতটুকু জানি, আমার দীক্ষা হয়েছিল ১৯৬৬সালে ১২ বছর বয়সে। আমার যিনি ঋত্বিক ছিলেন তাঁর নাম ছিল শ্রী হরপ্রসন্ন মজুমদার। আমার পিতা-মাতা ও আমার বড়দার ঋত্বিক ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথম ৬জন যতি ঋত্বিকের একজন শ্রদ্ধেয় যতি ঋত্বিক শ্রীনরেন্দ্রনাথ মিত্র। আমার আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই ছিলেন শ্রীনরেন্দ্রনাথ মিত্রের যজমান। সেইসময় আমাকে যখন দীক্ষা দিয়েছিলেন আমার ঋত্ত্বিক শ্রীহরপ্রসন্ন মজুমদার তখন তিনি আমাকে যে ইষ্টভৃতি মন্ত্র পাঠ করিয়েছিলেন তা হ'লো আমার দীক্ষার দু'বছর আগে ১৯৬৪ সালে প্রবর্তিত নোতুন ইষ্টভৃতি মন্ত্র। কিন্তু আমার পিতামাতা ও বড়দা ১৯৬৪ সালের নোতুন মন্ত্র প্রবর্তিত হওয়ার বহু আগেই দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তখন তাঁরা পুরোনো ইষ্টভৃতি মন্ত্রে ইষ্টভৃতি করতেন। পরে নোতুন মন্ত্রে ইষ্টভৃতি করেন। এবং বহু আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত জনেরা পুরোনো ইষ্টভৃতি মন্ত্রে ইষ্টভৃতি করার পর নোতুন মন্ত্রে ইষ্টভৃতি শুরু করেন।
যাই হ'ক। এর থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার হয় সেইসময় অর্থাৎ ১৯৬৪ সালে তামাম সৎসঙ্গী শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবদ্দশায় নোতুন ইষ্টভৃতি মন্ত্রে ইষ্টভৃতি করতেন। যত গন্ডগোলের সূত্রপাত হয় শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহাবসানের পরে। এতে মুখ্য ভুমিকা নিয়েছিলেন সেইসময়ের ইষ্টপ্রাণ বিশিষ্ট ভক্তমন্ডলী। শুরু হয় শ্রীশ্রীবড়দার কঠোর, দৃঢ়, মজবুত, বলিষ্ঠ, পাহাড় সমান উচ্চতায় অবতীর্ণ পাথুড়ে ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংঘাত। শুরু হয় ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও Vested interest- এর লড়াই। ক্ষমতা দখল, কায়েমী স্বার্থ রক্ষা ও মৌরসী পাট্টা বজায় রাখা, সঙ্গে ব্যক্তি স্বার্থে ঘা লাগার লড়াই। শ্রীশ্রীবড়দার কঠোর বলিষ্ঠ আপোষরফাহীণ ভয়ংকর ব্যক্তিত্বের কাছে হার মেনে ব্যর্থ হ'য়ে শেষে শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে প্রার্থনা, ইষ্টভৃতি মন্ত্র, বাণী বদল, ফটো রাখা ইত্যাদির ইস্যুকে হাতিয়ার ক'রে নেয়। তামাম সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুরের সৃষ্টি মূল 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিকৃত ও অবিকৃত ইষ্টপ্রচারের পতকা উড়িয়ে নেমে পড়ে ময়দানে, যে লজ্জাস্কর, দুঃখজনক, ট্রাডিশান আজও ৫৫বছর ধ'রে চলছে।
আর একটা কথা, বিরোধীরা পুরোনো ইষ্টভৃতি মন্ত্রে যে ইষ্টভৃতি করেন সেখানে দ্বিতীয় লাইনে আছে , "-----ইষ্টভ্রাতৃ-ভূতযজ্ঞেস্তৃপ্যন্তু পারিপার্শ্বিকাঃ।" অর্থাৎ ভ্রাতৃভোজ্য-ভূতভোজ্য রূপ যজ্ঞ দ্বারা পারিপার্শ্বিক তৃপ্ত হউক।"
আমার জিজ্ঞাস্য, যেভাবে শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রাখার পর থেকে আজ পর্যন্ত ৫৫ বছর ধ'রে ঠাকুর পরিবারের বিরুদ্ধে প্রার্থনা, ইষ্টভৃতি মন্ত্র, শ্রীশ্রীঠাকুরের পাশে অন্যান্যদের ফটো রাখা, বাণী পরিবর্তন ইত্যাদি মিথ্যা অভিযোগে একের পর এক আক্রমণ হ'য়ে চলেছে, কুৎসা, নিন্দা, কটু সমালোচনা, অপমান, অশ্রদ্ধা প্রদর্শন হ'য়ে চলেছে প্রকাশ্যে উৎসবে ও মিডিয়ায় একের পর এক ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে তখন ঐ পুরোনো ইষ্টভৃতি মন্ত্র "ইষ্টভ্রাতৃ-ভূতযজ্ঞেস্তৃপ্যন্তু পারিপার্শ্বিকাঃ" অর্থাৎ ভ্রাতৃভোজ্য-ভূতভোজ্য রূপ যজ্ঞ দ্বারা পারিপার্শ্বিক তৃপ্ত হউক" উচ্চারণে পারিপার্শ্বিক তৃপ্ত হচ্ছে তো? কথাটা একবার ভেবে দেখবার জন্য অনুরোধ রইলো পুরোনো ইষ্টভৃতি মন্ত্র উচ্চারণে ইষ্টভৃতি করা বিরোধীদের।
আর একটা কথা, বিরোধীরা একভক্তি বিশিষ্যতের কথা তুলে শ্রীশ্রীঠাকুরের পাশে শ্রীশ্রীবড়মা, শ্রীশ্রীবড়দা ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবের ফটো রাখার তীব্র নিন্দা ক'রে বিরোধীতা করেন এবং তাঁরা মন্দিরে শ্রীশ্রীঠাকুরের মূর্তি ছাড়া আর কোনও ফটো রাখেন না। তাঁরা এক ও অদ্বিতীয়ের নাকি আরাধনা করেন আর তা ঢাক পিটিয়ে মঞ্চে, ফেসবুকে, ইউটিউবে ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার ক'রে প্রমাণ করেন তারাই একমাত্র অবিকৃত ভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রচার করেন আর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান শ্রীশ্রীবড়দার নেতৃত্বে বিকৃত ভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রচার করেন। যদি তাই হয়, তাহ'লে ইষ্টভৃতি মন্ত্রের সময় তাদের একভক্তি বিশিষ্যতে ফিলসপি কোথায় থাকে? তখন বিরোধীরা ইষ্টভৃতি পুরোনো মন্ত্রোচ্চারণের সময় যখন ইষ্টের সঙ্গে সঙ্গে একই মন্ত্রের মধ্যে দিয়ে ভাতৃভোজ্য ও ভূতভোজ্য নিবেদন করেন তখন ইষ্টের সঙ্গে যোগসূত্র নষ্ট হয় না? তখন একভক্তি বিশিষ্যতে আঘাত পায় না? কোথায় থাকে তখন এক ও অদ্বিতীয়ের আরাধনা? ইষ্টদেবতাকে ভোজ্যের অনুকল্প রূপ অর্ঘ্য দেওয়ার সময় ইষ্টের সঙ্গে একই আসনে ভ্রাতৃগণ ও ভূতগণ সব একাকার হ'য়ে খিচুড়ি হ'য়ে বসে পড়েন একই লাইনে ভোজ্য নেওয়ার জন্য? তখন কোথায় থাকে তাঁর কেউ শরীক নয়, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তিনিই আচার্য, তিনিই ইষ্ট, তিনিই গুরু, তিনিই পুরুষোত্তম এই বোধ? এক ও অদ্বিতীয় ইষ্টদেবতাকে ভোজ্য সমর্পণের সময় গোয়াল ঘর বানাতে তখন চৈতন্য জাগ্রত হয় না মহাপন্ডিত, মহাজ্ঞানী, মহাত্মা ইষ্টপ্রাণ বিশিষ্ট ভক্তপ্রবরদের?
নমস্কার। আজ এই পর্যন্ত। পরবর্তী ভিডিওতে যারা আমাকে আমার ভিডিওতে প্রশ্ন করেছেন তাদের সেই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব নিয়ে আসবো। জয়গুরু।
No comments:
Post a Comment