Powered By Blogger

Wednesday, April 24, 2024

প্রবন্ধঃ করোনা ও আমি।



কি ভাবছি? ক'দিন ধ'রে একটা বিষয় ঘুরে ফিরে আসছে মাথার ভিতরে সকাল সন্ধে রাতে! বিব্রত বোধ করছি। বিষয়টি হ'লো করোনার প্রত্যাবর্তন। ২০২০-র পর ২০২১ শুরু হ'য়েছিল মোটামুটি স্বস্তি নিয়ে। করোনার ভয়াবহ ভয় আতংক দূরে সরিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছিল মানুষ, সহজ হ'য়ে উঠছিল পরিস্থিতি। কিন্তু হঠাৎ করোনার গ্রাফ বাড়তে লাগলো হুড়মুড়িয়ে। টেলিভিশনের খবর তাই বলছে। আর সঙ্গে সঙ্গে আবার ভীত সন্ত্রস্ত হ'য়ে পড়ছে মানুষ। আচ্ছা এই যে করোনার গ্রাফ বেড়ে গেল তাড়াতাড়ি, রাতারাতি বদলে গেল রাজ্যের পরিস্থিতি এটা কেন হ'লো? এর জন্য কি বা কে দায়ী? মনে
জাগে এর জন্যে কি ভোট দায়ী? তাহ'লে আগাম কেন ব্যবস্থা নেওয়া হ'লো না? কেন আগের থেকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন, রাজ্য প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, দেশের বা রাজ্যের চিকিৎসক মহল, বিচার ব্যবস্থা কেউ না কেউ বা সবাই মিলে দূরদৃষ্টি দিয়ে গম্ভীর বিষয়কে গম্ভীরভাবে পর্যালোচনা করলো না!? আর এরকম কঠিন জটিল অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আপদ্ধর্ম হিসেবে যদি ভোট না ক'রে রাষ্টপতি শাসন জারি করা হ'তো তাহ'লে কি ভুল হ'তো? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হ'য়ে এলে পরে রাষ্টপতি বা তদারকি সরকারের মাধ্যমে ভোট করা যেত। অবশ্য হাওয়া ব'লেও একটা কথা আছে। তবুও মনে হয় রাষ্টপতি বা তদারকি সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সরকারের বিগত বছরগুলির সাফল্য ও ব্যর্থতার উপর দাঁড়িয়ে পুংখানুপুংখ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভোট যজ্ঞ সম্পন্ন করা যেত এবং জনগণকেও যুগোপযোগী পরিণত মানসিকতা প্রকাশ করার সময় ও সুযোগ দেওয়া যেত।

যাই হ'ক, আমার আলোচনার বিষয় করোনা। দ্বিতীয় দফায় করোনা কতটা বিস্তার লাভ করেছে, কতটাই বা ভোটের চতুর্থ দফার পর করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে আর কতটাই বা রাজনীতিকরণ করা হয়েছে বা অন্য কোনও ছুপা রুস্তমি আছে কিনা কিম্বা ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী বা দেশব্যাপী বা রাজ্যব্যাপী করোনার ভয়াবহতা ও তার মোকাবিলায় সামগ্রিক প্রস্তুতির পরিসংখ্যান কি বলছে সেগুলি নিয়ে চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করা যেতেই পারে। বিচার করা যেতে পারে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালের মানুষের মানসিক দুর্বলতা ও ভয়ের তাপমাত্রা। বিচার করা যেতে পারে ভারতবর্ষের মত বিশাল জনবহুল দেশে যেখানে জনসংখ্যা প্রায় ১৩৫কোটি, সেই তুলনায় করোনায় আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর হার (%) কতটা?

এখন প্রশ্ন ভয়! ২০২০ সালে যখন করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করেছিল তখন কোনও দেশই এই অজানা ভয়ংকর ভাইরাস সম্পর্কে, ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি, চরিত্র, গঠন ইত্যাদি কোনও কিছু সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল ছিল না। ছিল না তাকে মোকাবিলা করার মত ভ্যাক্সিন ও চিকিৎসার পরিকাঠামো। গোটা বিশ্বকে রগড়ে দিয়েছিল একটা ছোট্ট মারণ পোকা। তাবড় তাবড় পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোকে বালখিল্য দেশে পরিণত ক'রে দিয়েছিল একটা ছোট্ট অথচ ধানি লংকা বা পটকার মত পেছন জ্বালিয়ে দেওয়া বা কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ার মত ছোট্ট ধানি পোকা!!!! কিন্তু তবুও এই অসহায় অবস্থার মধ্যেও দেশ সামলে নিয়েছিল পরিস্থিতি, মহামারীর ভয়ংকর তীব্রতাকে রুখে দিয়েছিল দেশ, তৈরি করেছিল করোনা ভ্যাক্সিন এবং দেশের অভ্যন্তরে রাজ্যে রাজ্যে ও বিদেশেও সাপ্লাই দিয়েছিল ও দিয়ে চলেছে করোনা মোকাবিলায় করোনা কিট ও ভ্যাক্সিন। এখন আমার দেশে করোনা তীব্রতাকে মোকাবিলার জন্য দেশ মোটামুটিভাবে তৈরী এবং বিশ্বের বহু দেশকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। অথচ আজ আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মানুষ এমতাবস্থায় সমস্তদিক দিয়ে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি। ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছি! দূর্বল ভীরু হ'য়ে যেন করোনার কাছে সারেন্ডারের মানসিকতাকে শরীরে মনে সঞ্চারিত ক'রে চলেছি। গেল গেল রব উঠছে দিকে দিকে! মানুষ নাকি করোনায় মরছে দিকে দিকে রাজ্য জুড়ে! একটু জ্বর, সর্দি, কাশি,গা হাতপা ব্যথা হ'লেই আর বয়সজনিত কারণে মারা গেলেই তাকে করোনা আখ্যা দেওয়া হচ্ছে! মানুষ ভয় পাচ্ছে ডাক্তার দেখাতে! ডাক্তার দেখালেই যদি ব'লে দেয় করোনা টেষ্ট করো আর টেষ্টে পরীক্ষায় সত্যি মিথ্যা হ'ক, ঠিক বা ভুল হ'ক যদি ব'লে দেয় পজিটিভ তাহ'লে হ'য়ে গেল; না ঘরকা, না !
২০২০ সালে করোনা মোকাবিলায় সবাই ঝাপিয়ে পড়েছিল করোনা মোকাবিলায়। তখন সব বন্ধ!জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব বন্ধ! আর এখন!? এবারে ততটা সেই পরিমাণে দেখা যাচ্ছে না। কারণ অভিজ্ঞতা ও গা সওয়া মনোভাব। ২০২১-এ একটু হ'লেও কোমর শক্ত পূর্বের তুলনায়। কিন্তু কোথায় যেন রহস্য রহস্য গন্ধ! গতবছরের দেশ তথা বিশ্বজুড়ে করোনা তীব্রতার মাঝে দেশের মধ্যে বিহারে, বিদেশে আমেরিকায় ভোট হয়েছিল। তখন ভোটের আবহে ঢেকে গেছিল চাপা পড়েছিল করোনা সেই নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি আর এবার ২০২১শের ভোটে প্রথমদিকে করোনার ধারও ধারেনি, পাত্তায় দেয়নি কেউ আর এখন উদবেগ উৎকন্ঠায় বিভোর সমস্ত দল, প্রশাসন, সরকার, কমিশন, চিকিৎসা মহল সব্বাই!!! কেন!? কি এর কারণ!? আদৌও কোনও রহস্য আছে!? কেন হঠাৎ দেশজুড়ে বিশেষতঃ পশ্চিমবঙ্গে কাগজে, টিভিতে, নেটে সব জায়গায় সবাই করোনার বৃদ্ধি নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে, সুস্থতার হার নিয়ে, ওষুধের যোগান নিয়ে মতামত দিয়ে আতংকের পরিবেশ তৈরিতে ঝাপিয়ে পড়েছে!? নাকি দেশজুড়ে সবটাই অপরিপক্ক ও অদূরদর্শিতার ফলাফল!?
এমতাবস্থায় কি করণীয়? কেমন ক'রে বাঁঁচবো ও বাঁচাবো? বাঁঁচবার ও বাঁচাবার উপায়!?
করণীয় নির্দেশাবলীঃ ১) সদাচার ২) সদাচার ৩) সদাচার।
আর আমি যেহেতু সৎসঙ্গী (?) সেইহেতু সৎসঙ্গীদের (?) উদ্দেশ্যে এর সঙ্গে বলতে পারিঃ
১) যজন ২) যাজন ৩) ইষ্টভৃতি ৪) নাম-নাম-নাম, ক্রমাগত অনবরত নাম ৫) ইষ্টের উপর নির্ভরতা। ৬) কপটতা, বেইমানি ও অকৃতজ্ঞতা ত্যাগ।
আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা সবসময় বলছেন, সদাচার মানুন, সরকারি নির্দেশ মানুন, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখুন আর বললেন, ভয় কি! আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা আমাদের মাথার ওপর দয়াল আছেন, পরমপিতা আছেন। মাভৈ!!!! পরমপিতার উপর নির্ভর করুন। নির্ভর করুন!! নির্ভর করুন!!! ( লেখা ২৪এপ্রিল, ২০২১ )

No comments:

Post a Comment