আমার 'একাডেমিক মিট ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদা' রচনায় আমার এক শ্রদ্ধেয় গুরুভাই ও পরম বন্ধু মানুষ তপন কর্মকারদা তার একটা অপূর্ব উপলব্ধির কথা আমাকে জানালেন। একে তো তিনি শিল্পী মানুষ, রঙ নিয়েই তার যত কারবার তার ওপরে পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত মানুষ। পরমপ্রেমময়ের সাদা আলোর রঙে রাঙিয়ে থাকা মানুষ রঙের VIBGYOR সুনামিতে ভাসতে ভাসতে ঠিক টের পায় কোথায় কখন সুনামি উঠছে। তাই তিনি আমাকে আমার লেখা প্রতিবেদনে বললেন, "পুজনীয় অবিন দাদা সৎসঙ্গ মহাসমুদ্রের সুনামী।"
আর, ঠিক এই কারণেই কম্পিউটারে আবার আমার আঙ্গুল সচল হ'লো।
সত্যিই তপনদা সুনামি বটেই!!!!! এ আপনার দারুণ উপলব্ধি। কিন্তু এ সুনামি উঠছে ও আগামীতে ভয়ংকর হ'য়ে উঠবে বাংলার বাইরে থেকে। আর, এ সুনামিতে ভেসে যাবে বাংলা। ভাসতে ভাসতে শুধু হাবুডুবু খেতে খেতে চেয়ে দেখবে এই সুনামির ভয়ংকর সৌন্দর্য বাংলা ও বাংলার ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গীরা।
কেন বললাম এই কথা? কেন এই কথা লিখি? এই নিয়ে অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন। কেউ কেউ বিরক্তও হন। পাল্টা নানা প্রশ্ন করেন। 'বাংলা জাগলে ভারত জাগবে, ভারত জাগলে বিশ্ব জাগবে'--এই কথা লিখে ও আমাকে কথার খোঁচা মেরে ফেসবুকে বাংলা ও ভারত জাগার কথার বিপ্লব ঘটিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন। আমরা বাঙ্গালিরা যে সব ঠান্ডা ঘরে বসে কম্পিউটারে, চায়ের দোকানে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। আর ব্যতিক্রম ব্যতিক্রম) কথার স্রোতে ভাসা মানুষ এই কথা বর্তমান সৎসঙ্গের সুনামি 'শ্রীশ্রীঅবিনদাদা' অনেক আগেই তাঁর যৌবনের শুরুতেই আমাদের বিরাশী সিক্কার এক থাপ্পর কষিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন স্বরচিত গানের কলির মধ্যে দিয়ে। তিনি বলেছিলেন, "দয়াল, তুমি বল জীবন দিতে আর আমরা ভাসি কথার স্রোতে।" সেই কথার স্রোতে ভাসা বাগ্মীপ্রবর বাঙালি বাংলার মাটিতে কথার স্রোতে ভাসার প্রমাণ রেখে চলেছে মন্দিরে মন্দিরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে কোন্দলের দামামা বাজিয়ে। ফল্গুনদীর মতো ব'য়ে চলেছে ভালোমানুষির আবরণে তলে তলে কথার স্রোতে ভাসা শয়তানি স্রোত।
এই যে ডি পি ওয়ার্কসের মধ্যে দিয়ে তাঁর অভূতপূর্ব আত্মপ্রকাশ অর্থাৎ প্রভু যীশুর বলা 'আমার হারনো ভেড়াগুলিকে ফিরিয়ে দাও,' শ্রীশ্রীঠাকুরের বারবার করুণ আর্তি 'আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও' যেন ফিরে এলো শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ডি পি ওয়ার্কসের মধ্যে দিয়ে! পুরনো সৎসঙ্গী যারা নিজের বা সৎসঙ্গীদের কারণে সৎসঙ্গ থেকে, ঠাকুর থেকে বিচ্যুত হ'য়েছিল তাদের সকলের প্রতি মমত্ববোধে সকলকে ফিরিয়ে এনে মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করার এই যে নিদ্রাহীন, বিশ্রামহীন, নিরলস অমানুষিক প্রয়াস, পরিশ্রম, নিষ্ঠা এ যেন সেই দয়ালের করুণ আর্তনাদ 'আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও' -এর প্রতিধ্বনি। শ্রীশ্রীঅবিনদাদার এই যে অতিমানবীয় শারীরিক, মানসিক পরিশ্রম, কষ্ট তা আমরা দেখতে পেয়েছিলাম শ্রীশ্রীআচার্যদেবের ১০০দিনের দীক্ষা পরিক্রমায়। কি অমানুষিক অভূতপূর্ব পরিশ্রম করেছিলেন তিনি সারা ভারত জুড়ে ১০০দিনের পরিক্রমায়! দিনরাত একাকার হ'য়ে গিয়েছিল সেই ১০০দিন! আজ পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে তো কাল মহারাষ্ট্রের মাটিতে, কাল মহারাষ্ট্রের মাটিতে পরশু আসাম। আজ পূর্বে তো কাল উত্তরে, কাল উত্তরে পরশু পশ্চিমে! অবাক করা কান্ড সংগঠিত হয়েছিল সেদিন। মাঝখানে একদিনের জন্য দেওঘরে এসে পরদিনই বেরিয়ে পড়েছিলেন দীক্ষা পরিক্রমা কাজে। সেদিন শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মায়ের যেমন কষ্ট হয়েছিল ছেলের এই অমানুষিক পরিশ্রম দেখে ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীঅবিনদাদার এই D P Works-এর জন্য অমানুষিক পরিশ্রম চোখের সামনে দেখে শ্রীশ্রীঅবিনদাদার মা বলেছিলেন, আপনারা তাড়াতাড়ি অবিনের এই দীক্ষা পত্রের কাজটা শেষ ক'রে ফেলুন সবাই মিলে হাতে হাত লাগিয়ে। রাতের রাতের পর এই কাজের জন্য ওর চোখে ঘুম নেই দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। আপনারাই পারেন ওকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে।
সৎসঙ্গীদের আজ সময় এসেছে তা অনুভব করার ও কেন তাঁরা এই অতিমানবীয় কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছিলেন ও হয়েছেন উপলব্ধি করার। নতুবা সৎসঙ্গীদের ঠাকুরের দীক্ষা নেওয়া, ঠাকুর ধরা, সৎসঙ্গ ও ইষ্টভৃতি করা বৃথা ও ব্যর্থ।
জীব, জগত ও জীবন কারণের এমন কোনও দিক নেই যা তিনি ব'লে যাননি। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, আইন, কমার্স ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্ত কিছু সম্পর্কে তিনি বলে গেছেন, দিয়ে গেছেন সমস্ত কিছুর সমস্যার সমাধান। আজ শুধু তা ইমপ্লিমেন্টেশনের সময়।
শ্রীশ্রীঠাকুর বিজ্ঞানের ওপর যা যা এককথায় ব'লে গেছেন তা অভাবনীয় ও অভূতপূর্ব! বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তিনি এত কিছু ব'লে গেছেন যা কল্পনার অতীত। কত আগে কত সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম অকল্পনীয় অভাবনীয় বিষয়ের ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন ঠাকুর যা তিনি বিশ্বের বিজ্ঞানীদের জানিয়ে যেতে পারলেন না শুধু মানুষের অভাবে। বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ভাবনা যে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছে নিয়ে যাবে, পৌঁছে দেবে সেই সমস্ত অজানা বিষয়ের ইঙ্গিত সেই মানুষ তিনি সারাজীবন মানুষের কাছে ভিক্ষা চেয়েও পাননি। আজ ভাবলে চোখে জল আসে এইভেবে যে তিনি মানুষকে চেয়েছিলেন দিতে তাঁর সুষ্ঠ ভাবে বাঁচার ও বেড়ে ওঠার পথের বিজ্ঞান ভিত্তিক পথের সন্ধান কিন্তু তা দিয়ে যেতে পারেননি বিজ্ঞান ভিত্তিক আবিস্কারের মাধ্যমে। শুধু পুস্তকাকারে সেই সমস্ত বিজ্ঞানের clue গুলি দেওয়া আছে। তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে clue গুলি দিয়েছিলেন কিন্তু সময়ের অভাবে তিনি সেই clue গুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ক'রে যেতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন, এই সমস্ত clue গুলির যদি বিশদে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন তাহ'লে volume after volume গ্রন্থ হ'য়ে যেত। কিন্তু তিনি তা ইচ্ছা থাকলেও বিশদে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ক'রে যেতে পারেননি শুধুমাত্র বিজ্ঞান মনস্ক মানুষের অভাবে, মানুষের অসহযোগীতা ও শত্রুতার কারণে এবং সাংগঠনিক অজস্র নানাকাজে ব্যতিব্যস্ত থাকার জন্য। তিনি বিজ্ঞানের ওপর দেখা তাঁর একটা স্বপ্নও পূরণ ক'রে যেতে পারেননি। কত আগে তিনি তাঁর তৈরী বিশ্ববিজ্ঞান গবেষণাগারে এটমের ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছিলেন এবং বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন যা বিশ্বের কাছে অধরাই থেকে গেল। যা পরবর্তীতে আবিস্কার হ'য়ে গেল কিন্তু তার স্বীকৃতি তিনি পেলেন না। মহাশূন্যে যে অফুরন্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে তাও তিনি তার দিয়ে ঘুড়ি ওড়াবার মধ্যে দিয়ে পরীক্ষা ক'রে প্রমাণ করেছিলেন। এবং বলেছিলেন মহাকাশের Central point-এর কথা; যেখানে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে চিরকালীন বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের কথা। মৃত মানুষের দেহে প্রাণ সঞ্চারের কথা সবাই জানে। সেই যন্ত্রের নাম তিনিই দিয়েছিলেন ভাইব্রোমিটার। সেই ভাইব্রোমিটার প্রকল্প বাস্তবায়ন তিনি জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেননি বিজ্ঞান মনস্ক মানুষের অভাবে, অর্থের অভাবে, সহযোগীতার অভাবে। আজও যা পড়ে রয়েছে অরক্ষিত ও অবহেলিত অবস্থায় অযত্নে শ্রীশ্রীকাজলদাদার বাড়ির মুখোমুখি অঙ্গনে।
একবার কোনও একটা আবিস্কারের জন্য রাশিয়ার পাঁচজন বিজ্ঞানীর নাম পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল সেইসময়। তখন তিনি দুঃখ ক'রে বলেছিলেন এই পাঁচজন বিজ্ঞানীকে যদি পেতাম তাহ'লে আমি দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়ে যেতাম। কিন্তু তা হয়নি। তার পরিবর্তে মানুষের কাছে পেয়েছিলেন কুৎসা, নিন্দা, গালাগালি, সমালোচনা, অশ্রদ্ধা, অপমান, উপেক্ষা, অবজ্ঞা ইত্যাদি। পেয়েছিলেন বাংলা থেকে বিতারণের টিকিট। আর শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন আমেরিকায় তাঁর আমেরিকান ভক্ত আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত হার্পার এন্ড ব্রাদার্স পাবলিশিং কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের প্রেসিডেন্ট ডঃ রাধাকৃষ্ণনের বন্ধু ইউজিন এক্সম্যান। বলেছিলেন, "আপনার মত লোক আমাদের আমেরিকাতে খুব দরকার। আপনি অনুমতি দান করুন। সব দায়িত্ব আমার।"
উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, আমি তো আপনার সাথে সাথেই আছি। আপনি আমায় মাথায় ক'রে নিয়ে চলুন। আপনার মধ্যে দিয়ে আমি দেশ হ'তে দেশান্তরে ঘুরবো।
ইচ্ছে হ'লে সেদিন চলে যেতেই পারতেন ঠাকুর আর অন্য সব বিদেশ পাড়ি দেওয়া ধর্মাত্মাদের মতন। কিন্তু যাননি। ইউজিন এক্সম্যানের আমন্ত্রণের উত্তরে ঠাকুর সেদিন যা বলেছিলেন তার মর্মার্থ সহজেই অনুমেয়।
এরকম বিজ্ঞানের ওপর কত কত অজানা বিষয়ের যে তিনি আলোকপাত ক'রে গেছেন তার সীমা পরিসীমা নেই। উদাহরণ দিতে গেলে আর্টিকেল অনেক বড় হ'য়ে যাবে।
গড পার্টিকেলস (ঈশ্বর কণা) খুঁজছিল বিশ্বের বিজ্ঞানীরা কিন্তু সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে কবেই বলে গেছেন তিনি। সৃজন প্রগতি সম্পর্কে তিনি বাংলা ও ইংরেজীতে দীর্ঘ বাণী দিয়ে গেছেন। সেইসময় বিজ্ঞানী নারলিকার সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে যা ব'লে গেছেন সে সম্পর্কে ঠাকুরকে জানানো হ'লে দেখা গেল ঠাকুরের বিজ্ঞান বিভূতির ৬১ নং বাণীতে বহু আগেই সেই বিষয় সম্পর্কে ঠাকুর ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয় ঐ বাণীতে আরও এমন এমন বিষয়ের ইঙ্গিত দেওয়া আছে যা এখনো বিজ্ঞান বের ক'রতে পারেনি। আমি সামান্য একজন মানুষ এই বিষয়ে যা পড়েছিলাম বহু আগে তা স্মৃতি থেকে বের ক'রে এনে লিখলাম পাঠকের জন্য। বিজ্ঞান সম্পর্কে কত কি দুরূহ বিষয় যে বলা আছে ঐ 'বিজ্ঞান বিভূতি' বইয়ে এবং অন্যান্য গ্রন্থে তা কি বোঝা সাধারণ মানুষের কাজ না সম্ভব!? ঠাকুরের বিজ্ঞানের ওপর বলা ঐ 'বিজ্ঞান বিভূতি' বইটি গবেষণা সাপেক্ষ।
তাই শ্রীশ্রীঠাকুরের পঞ্চম পুরুষ ইয়ং জেনারেশন থেকে শুরু ক'রে সত্তরোর্ধ ইষ্টপ্রাণ নারীপুরুষের Heart throb ( হৃদস্পন্দন) শ্রীশ্রীঅবিনদাদার যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বে শুরু হয়েছে সেই অভূতপূর্ব, অত্যাশ্চর্য, অকল্পনীয়, অভাবনীয় গ্রন্থ 'বিজ্ঞান বিভূতি'-র ওপর গবেষণার কাজ। সেইজন্যই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৮ই জুলাই'২৩ শনিবার সর্বভারতীয় একাডেমিক মিট। যেখানে হাজির হয়েছিল সারা ভারতবর্ষের হাজারের উর্ধ্বে শিক্ষা ও শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ইষ্টপ্রাণ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, প্রফেসর, গবেষকের দল! সেইখানে শ্রীশ্রীঅবিনদাদা বিজ্ঞান গবেষণার ওপর তাঁর পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। অতি সংক্ষিপ্ত ভাষণে বুঝিয়ে দেন তাঁর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই একবছর ধ'রে চলবে সেই কাজ। আবার মিলিত হবে সামনের বছর পরবর্তী একাডেমিক মিট-এ।
সেদিন স্বচক্ষে দেখলাম, বোধ ও বুদ্ধি দিয়ে জানলাম ও বুঝলাম কেন পুজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদা সৎসঙ্গ মহাসমুদ্রের সুনামী।------প্রবি। ( লেখা ১৩ই জুলাই, ২০২৩)
No comments:
Post a Comment