উত্তরঃ আপনি প্রশ্ন করেছেন দেখে ভালো লাগলো। কিন্তু একইসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করেই ভন্ড আখ্যা দিয়ে বসলেন। যদিও আপনি আমার অন্যান্য ভিডিওতে অনেক অনেক গালিগালাজ ও কুৎসা ক'রে অবান্তর অর্থহীন প্রশ্ন করেছেন আমাকে শুধু গায়ের ঝাল মেটাবার জন্য। তবুও আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার আজ এই বিতর্কিত প্রশ্নটাকেই বেছে নিয়েছি। এই প্রশ্নে আপনি বললেন, ভন্ডদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আপনি প্রশ্ন করলেন একইসঙ্গে ভন্ড বললেন এবং প্রতিবাদের কথাও বললেন। যার প্রশ্নের উত্তর শোনার ধৈর্য নেই, মানসিকতা নেই, নেই শিক্ষা তার প্রতিবাদ বালখিল্য প্রতিবাদ। ঐ প্রতিবাদের কোনও সার নেই, নেই কোনও মূল্য। আর সময় যে সবসে বড়া বলবান এই জ্ঞানটাই আপনার নেই। তাই বলেছেন সময়ের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ। সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হ'লো আপনার প্রশ্ন যে অনুভূতিশূন্য, অসাড়, মৃত তা প্রমাণ হওয়া। সময় তা প্রমাণ ক'রে দেবে আমার বক্তব্যের শেষে। তখন বুঝবেন সময় সবসে বড়া বলবান কেন বলা হয়।
প্রশ্নঃ ঠাকুরের তিন সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তান প্রচেতারঞ্জন চক্রবর্তী এখনও আছেন। ঠাকুরের বড় ছেলে যাকে আপনারা বড়দা বলেন তাঁর অবর্তমানে প্রচেতারঞ্জন চক্রবর্তী যাকে কাজলদা ব'লে ডাকেন তিনি কেন বড়দার পরে 'সৎসঙ্গ'-এর আচার্য হ'লো না? আচার্য পরম্পরা অনুযায়ী কাজলদাকে তো আপনারা সৎসঙ্গের পরবর্তী আচার্য করতে পারতেন। করলেন না কেন? কেন বড়দার জেষ্ঠ্য পুত্র অশোকদাদাকে আচার্য পদে অভিষিক্ত করলেন? যদি বুঝিয়ে বলেন তবে উপকৃত হবো।
উত্তরঃ আপনার এই প্রশ্ন আমাকে ভাবালো। উন্নততর প্রশ্নের মধ্যে উন্নততর উত্তর নিহিত থাকে। এই যে আজ পর্যন্ত শ্রীশ্রীঠাকুর অভূতপূর্ব যা যা বলেছেন, তার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন জ্ঞানী, জিজ্ঞাসু ব্যক্তিদের উন্নত প্রশ্ন-ই ছিল সর্ব্বাধিক। যেসব বালখিল্য সনাতনী সাধু, একাল সেকাল মহাকালের মত সাজা যোগী, ধ্যানী, গোঁসাই, গোবিন্দ, দু'পাতা বিজ্ঞান পড়া ছেলেমানুষ বিজ্ঞের মত শ্রীশ্রীঠাকুরের সমালোচনা করে তাদের শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে বিশ্বের তাবড় তাবড় জ্ঞানী পন্ডিতরা যেসব প্রশ্ন রেখে গেছেন, সেইসব প্রশ্ন তুলে ধরুন তাদের কাছে দেখবেন মুহুর্তে তাদের কাপড় ভিজে গেছে, হ'য়ে গেছে হলুদ। যাই হ'ক আপনার প্রশ্ন আমাকে ভাবালো, গভীর ভাবে ভাবালো। আমি উত্তর দিতে চেষ্টা করবো। গালাগালি কুৎসা না করেও যে শুধু জানার জন্যও যে বিতর্কিত প্রশ্ন রাখা যায় তা আপনি আজ দেখালেন।আমাকে বিতর্কিত প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আসুন এখন আলোচনা করা যাক। শ্রোতা বন্ধুদের বলবো, আসুন একটু ধৈর্য নিয়ে শুনি।
উত্তরঃ আচ্ছা, প্রভু রামচন্দ্রের ক'জন সন্তান ছিলেন? দু'জন। লব ও কুশ, তাঁদের কোনও তেমন কোনও ইতিহাসের পাতায় অস্তিত্ব আছে?
প্রভু কৃষ্ণের কতজন সন্তান ছিলেন? কৃষ্ণের প্রধান ৮ জন স্ত্রী ছিলেন এবং তাঁদের প্রত্যেকের ছিল ১০জন ক'রে সন্তান। মোট ৮০জন সন্তান। ইতিহাসের বুকে তাদের কোনও পরিচিতি আছে নাকি তাঁদের নাম কেউ জানে?
প্রভু বুদ্ধদেবের পুত্র রাহুল সম্পর্কে কে কতটুকু জানে। জানে কেউ?
প্রভু যীশুর স্ত্রী পুত্রের নাম কেউই জানে না। উল্টোপাল্টা প্রচার আছে মেরী ম্যাগডালিন যীশুর স্ত্রী ও তাঁর পুত্রের নাম জুদা। কিন্তু কেউই জানে না, জোর দিয়ে বলতেও পারে না।
প্রভু হজরত মহম্মদের দুই ছেলের নাম ও তাদের সম্বন্ধে কেউ জানে? জানে না।
মহাপ্রভু চৈতন্যদেব ও ঠাকুর রামকৃষ্ণের কোনও সন্তান ছিল না।
বর্তমান সর্ব্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের তিন ছেলে, অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (শ্রীশ্রীবড়দা), ২) বিবেকরঞ্জন চক্রবর্তী (বিবেকদা), ৩) প্রচেতারঞ্জন চক্রবর্তী (কাজলদা) ীই যে আমি তথ্য তুলে ধরলাম যারা গবেষক তাঁরা জানেন এদের সম্পর্কে কিন্তু এই পুরুষোত্তমদের সাধারণ কোটি কোটি ভক্তকুল কিছু জানে না।
এখান থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শ্রীশ্রীঠাকুর এর আগে ৭বার এসেছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকবার তাঁর পুত্রদের কোনও একজঙ্কেও তাঁর ভক্তকুলের মধ্যে প্রধান ভূমিকায় দেখতে পাই না। প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের বেলায় দেখতে পাই প্রধান ও পরম ভক্ত শ্রীশ্রীহনুমানকে।
প্রভু শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বেলায় দেখতে পাই শ্রীশ্রীঅর্জুনকে।
প্রভু শ্রীশ্রীবুদ্ধদেবের বেলায় দেখতে পাই ভক্ত শ্রীশ্রীআনন্দকে।
প্রভু শ্রীশ্রীযীশুর বেলায় দেখতে পাই মেরী ম্যাকডালিনকে বা শ্রীশ্রীসেন্ট পলকে।
প্রভু শ্রীশ্রীমহম্মদের বেলায় দেখতে পাই শ্রীশ্রীআবু বকরকে।
শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর বেলায় দেখতে পাই শ্রীশ্রীনিত্যানন্দকে।
শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের বেলায় দেখতে পাই শ্রীশ্রীবিবেকানন্দকে।
এরা সবাই ছিলেন প্রভুর পরম ও প্রধান ভক্ত। কিন্তু এরা কেউ তাঁর ঔরসজাত সন্তান ছিলেন না, সবাই ছিলেন প্রভুর কৃষ্টিজাত সন্তান।
এই প্রথম প্রভু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অষ্টমবারের বেলায় তাঁর পরমভক্তকে একইসঙ্গে এক আধারে ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান ক'রে নামিয়ে নিয়ে এলেন তাঁর প্রথম সন্তান আদরের বড়খোকা, বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গ জগতের কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের বড়ভাই পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দাকে। এবারে শ্রীশ্রীঠাকুর কেন তাঁর পরমভক্তকে একইসংগে এক আধারে ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান ক'রে নামিয়ে আনলেন? কারণ তিনি সর্ব্বজ্ঞ। তিনি জানতেন এবারের তাঁর আসা একটা ট্রাঞ্জিশানাল পিরিয়ডে আসা। ঘোর কলি যুগ শেষ হ'য়ে সত্য যুগে প্রবেশ করবে তাঁর সৃষ্টি। এই ঘোর কলি যুগে ধর্ম থাকবে ১ ভাগ আর অধর্ম থাকবে ৩ ভাগ। মানুষের আয়ু হবে ১০০বছর। কলি যুগ হ'লো ৪ যুগের শেষ যুগ। এর আগে ছিল প্রথমে সত্য যুগ, তারপরে ত্রেতা যুগ, আর ত্রেতার পরে দ্বাপর যুগ। এই কলি যুগের শুরু হয়েছে শ্রীকৃষ্ণের দেহাবসানের পরে বুদ্ধদেবের শুরুতে। কলি যুগের ভয়াবহতা প্রবল ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক বলেই সৃষ্টিকর্তাকে এই কলি যুগেই বারবার আসতে হয়েছে বুদ্ধদেব রূপ নিয়ে প্রথমে আর তারপর কলিযুগের ভয়াবহতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ও তাঁর আসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য তাঁকে যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু ও রামকৃষ্ণ রূপে আসতে হয়েছিল। কলি যুগে ধর্ম সংকুচিত হ'য়ে অর্থাৎ একেবারে সঙ্কীর্ণ হ'য়ে গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাবে আর অধর্মের চরম বাড়াবাড়ি ঘটবে। এই বাড়াবাড়ি আমরা একটু চোখকান খোলা রাখলেই আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত কি ঘটছে তার মধ্যে দিয়েই আমরা চেষ্টা করলেই দেখতে পারি, বুঝতে পারি, অনুভব করতে পারি, পারি উপলব্ধি করতে। এই দেখতে পারা, বুঝতে পারা, অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারা এগুলি আজ সব হারিয়ে গেছে, উধাও হ'য়ে গেছে, নিরুদ্দেশ হ'য়ে গেছে, লুপ্ত হ'য়ে গেছে মানুষের জীবন থেকে তা সে যতবড় লেখাপড়াজানা বিদ্বান, বুদ্ধিমান, জ্ঞানবান, প্রজ্ঞাবান হ'ক না কেন। কারণ এইসমস্ত বিদ্বান, বুদ্ধিমান, জ্ঞানবান, প্রজ্ঞাবান ইত্যাদির পিছনে সেটে গেছে তথাকথিত শব্দের স্ট্যাম্প। এরা সব তথাকথিত লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ, কেউই শিক্ষিত নয়। এরা সব একটা একটা জ্ঞানের মোটা মোটা বই, কিন্তু বইয়ের এসেন্স এদের জীবনে চরিত্রে নেই। কলিযুগের চিহ্ন হ'লো মানুষ বোধবুদ্ধিহীন, অনুভূতি ও উপলব্ধিহীন এক একটা এক তাল মাংসের পোল্ট্রির মুরগী। এরা সত্য, ন্যায়, ধর্মের ধার ধারে না।
এই কলি যুগে পূণ্য ১ ভাগ ও পাপ ৩ ভাগ। তাই মানুষের আয়ু সত্য যুগের ৪০০ বছর কমে গিয়ে মাত্র ১০০ বছর হয়েছে। মানুষের উচ্চতা খুব বেশী হ'লে ৫-৬ ফুট। ব্যতিক্রম থাকবে। প্রাণ অন্নে। তাই শুধু মানুষের খায়, খায় আর খায়, খায় মনোভাব। মানুষ তপস্যা অর্থাৎঈশ্বর আরাধনার মধ্যে দিয়ে নিজের অতীতের কু-কর্মকে পুড়িয়ে ফেলে এবং নিজেকে মুক্ত করার জন্য কষ্ট করে না, শরীরকে ক্ষয় করে না, তপস্যা করা এবং ঈশ্বরের জন্য, ঈশ্বর প্রতিষ্ঠার জন্য নাম ধ্যান, পুজো পাঠ করে না। নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তির চাহিদা ও পছন্দ -অপছন্দ -অনুযায়ী ঈশ্বরের পুজা করে, সে পুজা ধান্দাবাজী পূজা। সেখানে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম-ভালোবাসা, ভক্তি-বিশ্বাস-নির্ভরতা ও আত্মত্যাগ ব'লে কিছু নেই। সেখানে সত্য বলে কিছু নেই, সত্য নিরুদ্দেশ। সেখানে মিথ্যার জয় জয়কার। এই যুগে রাজনীতি ভয়ংকর কুটিল ও জটিল, শাসক ধনলোভী, ব্রাহ্মণের ব্রহ্মজ্ঞান নেই, পুরুষ নারী অন্তপ্রাণ, পাপে ডুবে আছে। দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন এই হ'লো কলি যুগের নীতি। আরো ভয়ংকর ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটবে এই কলি যুগে আগামী দিনে। সবে কলি যুগ ৫০০০ বছরের কিছু অধিক পার হয়েছে, এখনও বহু লক্ষ বছর বাকী রয়েছে কলি যুগ শেষ হওয়ার। সেই আগামী বাকী দিনগুলির কথা ভাবলে গা শিউড়ে ওঠে। এর থেকে ব্লান্ট থাকা ভালো, মস্তিষ্ক কাজ না করা আরও ভালো।
যাই হ'ক, এইজন্যই এই ভয়াবহ কলি যুগের কথা তিনি জানতেন। কারণ তিনি সর্ব্বজ্ঞ। তিনি জানতেন এই যুগ বেইমান, অকৃতজ্ঞদের যুগ। এই যুগ কৃতঘ্নদের যুগ। নেমকহারাম দের যুগ। এ কথা তিনি ভালো করে জানতেন বলেই তিনি তাঁর সঙ্গে তাঁর পরম ভক্তকে, পরম কৃষ্টিজাত সন্তানকে তাঁর ঔরসজাত ক'রে নিয়ে এসেছিলেন এবার তাঁর প্রথম সন্তান রূপে। তিনি জানতেন এই কলি যুগ ইতিমধ্যেই ৫০০০ হাজার বছর পার হ'য়ে গেছে। এই ৫০০০ হাজারের অধিক বছরে নানা রক্তের মিশ্রণে বিষাক্ত হ'য়ে গেছে মানুষের রক্ত জন্ম বিজ্ঞানের ভুলে। অতএব বিশ্বাসের মৃত্যু ঘটেছে। আপন রক্তের মধ্যে ঢুকে গেছে বেইমানি, কপটতা, অকৃতজ্ঞতা, নেমকহারামী, কৃতঘ্নতা। আপনজনের আস্তিনের তলায় লুকোনো আছে খঞ্জর। যে কোনও মুহুর্তে আলিঙ্গনের নামে পেট চিড়ে নাড়িভুড়ি বের ক'রে দেবে, পিঠে বসিয়ে দেবে নির্ম্মমভাবে খঞ্জর। তাই কাউকেই বিশ্বাস নেই। আবার এই কাউকেই বিশ্বাস নেই এই কথার মধ্যেই রয়েছে মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। আজও বিশ্বাসী মানুষ, সৎ মানুষ, ভালো মানুষ আছে আর তাই আজও সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়। সৎ, দক্ষ ও শুভানুধ্যায়ী মানুষ আজও আছে অসৎ, অদক্ষ ও অশুভানুধ্যায়ী অর্থাৎ অমঙ্গলকামী মানুষের ভিড়ে। খুঁজে নিতে হবে তাঁদের। এই খুঁজে পাওয়া কঠিন, দুস্কর। কারণ একজন উত্তর মেরুতে তো অন্যজন দক্ষিণ মেরুতে। তিনি জানতেন তাঁকে বারবার আসতেই হবে, কারণ গর্ভ যন্ত্রণা যে তাঁর। এই সৃষ্টিকে বাঁচাতে, রক্ষা করতে তাঁকে আসতে হবেই। আর আসতে হবে ঘোর কলি যুগে যখন তিনি বিশ্বস্ত মানুষ পাবেন না মসৃণ ভাবে তাঁর মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। পঞ্চ ভুতের ফাঁদে যেমন ব্রহ্মা পড়ে কাঁদে ঠিক তেমনি তাঁর চারপাশে বিষাক্ত বিষধর মানুষ নিয়ে তাঁকে চলতে হবে, চলতে হবে তাঁর মত ও পথের অনুসারী অকৃতজ্ঞ বেইমান নেমকহারাম কৃতঘ্ন মন্ত্রশিষ্য দীক্ষিত মানুষের মাঝে। তাই তাঁর অবর্তমানে তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করার যে মিশন সেই মিশনের পতাকা ব'য়ে নিয়ে যেতে পারে, তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও নকল প্রতিষ্ঠানের মাঝে রক্ষা করতে পারে, শুদ্ধতা বজায় রাখতে, অরিজিনালিটি বজায় রাখতে পারে, তাঁর দীক্ষিত মন্ত্রপুত সন্তানদের আগলে রাখতে পারে, ধ'রে রাখতে পারে, একটা সুতোয় বাঁধা ফুলের মালার মতো বেঁধে রাখতে পারে, বেঁধে রাখতে পারে তাঁর শিষ্যদের একটা আদেশে, তাদের দিয়ে নোতুন সমাজ গড়তে পারে, বিশুদ্ধ রক্তের সাপ্লাই দেওয়াতে পারে, তাঁর কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে, তাঁর ইডিওলজিকে রক্ষা করতে পারে, তাঁর জীবনবাদ, অস্তিত্ববাদের তত্ত্ব ছড়িয়ে দিতে পারে বিশ্বময় ইত্যাদি ইত্যাদি এমন গুণাবলীর অধিকারী, এমন অসীম ক্ষমতার অধিকারী, এমন দিব্যদৃষ্টির অধিকারী সত্যদ্রষ্টা প্রচন্ড কঠিন কোমল ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। এই প্রয়োজন মেটাতে পারে এমন নিখুঁত কৃষ্টিজাত নেতা এই ঘোর কলি যুগে অসম্ভব। তাই তিনি সেই অপ্রিয় সত্য কথা ভেবেই নিজেই নিজের সন্তান ক'রে নিয়ে এলেন সেই নিখুঁত কৃষ্টিজাত সন্তানকে একইসঙ্গে ঔরসজাত সন্তান ক'রে। আর তিনিই হ'লেন তাঁর ব্রহ্মজ্ঞানের অধিকারী তাঁর প্রথম সন্তান প্রতীক গুরু শ্রীশ্রীবড়দা।
শ্রীশ্রীবড়দা হ'লেন "যুগাবতারের অবর্তমানে তাঁতে অচ্যুত-আনতি সম্পন্ন, ছন্দানুবর্তী, জীবন বৃদ্ধির আচরণসিদ্ধ তদবংশধর ইষ্টের প্রতীক, প্রতীক গুরু। শ্রীশ্রীবড়দা কোনও অবস্থায় চ্যুত বা স্খলিত হননি এমন সম্পূর্ণ ভাবে নত পুরুষ। শ্রীশ্রীবড়দা হলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, প্রেম-ভালোবাসা, দয়ামায়া, স্নেহমমতা, কঠোর-কোমল, দয়াল-ভয়ালের যে ছন্দ অর্থাৎ যে রকম ছাঁচ, যেরকম গড়ন, যেরকম ভংগী সেইরূপ ছন্দ অনুগামী অর্থাৎ ছাঁচ অনুযায়ী, গড়ন বা ভংগীর বশবর্তী ঈশ্বরকোটি ব্রহ্মজ্ঞানী পুরুষ। তিনিই শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতীক অর্থাৎ সেই প্রতীককে দেখলেই শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা মনে পড়ে। তাই তিনিই শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতীক গুরু।
শ্রীশ্রীবড়দা হলেন শ্রীশ্রীঠাকুরে অচ্যুত-আনতি সম্পন্ন, ছন্দানুবর্তী, জীবন বৃদ্ধির আচরণসিদ্ধ শ্রীশ্রীঠাকুরের বংশধর। ইষ্টের রাগে অর্থাৎ ইষ্টের প্রেমে, অনুরাগে, আসক্তিতে শ্রীশ্রীবড়দা অটুট, তিনি সত্তাপোষণী চলনে সাধনসিদ্ধ পুরুষ। ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠায় আচরণসিদ্ধ পুরুষই হয় জীবন্ত ইষ্টের অবর্তমানে আচার্য। এই সমস্তই ব্রহ্মজ্ঞানী পুরুষের নিদর্শন। আর, এই ব্রহ্মজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর নিজে। এই ব্রহ্মজ্ঞান তিনি দিয়ে গেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দাকে। এই ব্রহ্মজ্ঞান দেওয়া যায় একমাত্র জেষ্ঠ্যপুত্রকে। ব্রহ্মজ্ঞানের জন্য আধার চাই। পুরুষোত্তমের বংশধর হলেই ব্রহ্মমজ্ঞানের আধার হওয়া যায় না। তাঁরা এক একজন Fullfiller the great মহা পরিপূরণকারী হ'তে পারেন কিন্তু ব্রহ্মমজ্ঞানের অধিকারী নন, ব্রহ্মমজ্ঞানের অধিকারী একমাত্র শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং নিজে এবং তিনি যাকে সেই ব্রহ্মমজ্ঞানের মহা শক্তি দিয়ে যাবেন তিনি। তাই সেই শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে তাঁর ব্রহ্মজ্ঞান বহন করার আধার যিনি তিনিও একদিক দিয়ে তাঁর মিশনকে নিখুঁতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার ও তাঁর স্বপ্নগুলোকে পূরণ করার তাঁরই মতো Fullfiller the best।
যদি সবাই তাঁর সমস্ত সন্তানদের মধ্যে, বংশধরদের মধ্যে এই ব্রহ্মমজ্ঞান বহন করার শক্তি থাকতো, বহন করার আধার হ'তো তাহ'লে রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, মহম্মদের বংশধরেরা সবাই ব্রহ্মজ্ঞানের আধার হ'য়ে ইতিহাসে অমর হ'য়ে থাকতো। আমরা যেন ভুলে না যায় একথা যে, ব্রহ্মজ্ঞানের আধার কে হবে সেটাও ঠিক করেন স্বয়ং পুরুষোত্তম সৃষ্টিকর্তা জীবন্ত ঈশ্বর। বর্তমান পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নিজেই বলে গেছেন জেষ্ঠ্যপুত্রই একমাত্র ব্রহ্মজ্ঞানের অধিকারী। আর তা শাস্ত্রও অনুমোদন করেছে। আর, আমার শাস্ত্রজ্ঞানের কোনও প্রয়োজন নেই, নেই কোনও প্রমাণ দেবার। কারণ শাস্ত্রের স্বীকৃতির কোনও গুরুত্বই নেই আমার কাছে। জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তমের জীবন ও তাঁর মুখনিঃসৃত কথা, বাণীই আমার কাছে পরম ও চরম শাস্ত্র, এছাড়া আর কোনও শাস্ত্রজ্ঞানের আমার দরকার নেই। আর যেহেতু শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং এই কথা বলেছেন তখন পুরুষোত্তমের বংশপরম্পরায় এই ব্রহ্মজ্ঞান শক্তি জেষ্ঠ্যপুত্রই একমাত্র বহন করার আধার।
তাই বংশপরম্পরায় এই ব্রহ্মজ্ঞান বহন ক'রে নিয়ে চলেছে শ্রীশ্রীঠাকুরের পরে জেষ্ঠ্যপুত্র
শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীবড়দার পরে শ্রীশ্রীঅশোকদাদা, শ্রীশ্রীঅশোকদাদার পরে শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। আর এদের জীবনই বলে দেয় পুরুষোত্তমের এই ব্রহ্মজ্ঞানের শক্তি বহন করার এক ও একমাত্র উপযুক্ত আধার কিনা। ।
তাই, ঠাকুর যে বললেন, পুরুষোত্তমকে direct (সরাসরি) যারা না পায়, তারা তদনুবর্ত্তী আচার্য্য-পরম্পরার ভিতর দিয়ে পুরুষোত্তমের ভাবটাই কিছু-না-কিছু পায় l এই আচার্য পরম্পরা হ'য়ে চলে পিতাপুত্রের মধ্যে দিয়ে।
আর, ঐ পুরুষোত্তমের ভাব যখন মলিন বা ম্লান হয়ে যায়, উবে যাবার মত হয়, বিকৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে, তখন মানুষকে ঈশীস্পর্শে সঞ্জীবিত করে তোলবার জন্য তিনি আবার মানুষ হয়ে আসেন।"
এই যে কথাটা বললেন তিনি, এর থেকে প্রমাণ হয় পুরুষোত্তমের এই ভাব পিতাপুতের মধ্যে দিয়ে চলবে অন্তত ১০ হাজার বছর। কারণ তিনি নিজেই ব'লে গেছেন, যা দিয়ে গেলাম আগামী ১০ হাজার বছরের জন্য আর কিছুই লাগবে না। যদি দশ হাজার বছর পরে যে আচার্য আসবেন সেই আচার্যের ভেতর পুরুষোত্তমের ভাব মলিন বা ম্লান হয়ে যায়, উবে যাবার মত হয়, বিকৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে, তখন মানুষকে ঈশীস্পর্শে সঞ্জীবিত করে তোলবার জন্য তিনি আবার মানুষ হয়ে আসবেন। আর যদি আসেন তবে আসবেন, শুধু সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে, আর কোনও কিছু বলার জন্য তিনি আসবেন না। কারণ সব বলা তিনি শেষ ক'রে দিয়ে গেছেন, কোনও কিছু ক্লোজড ক'রে রাখেননি। তাঁর প্রমাণ, তিনি নিজেই বলে গেছেন, "ঠাকুর রামকৃষ্ণ এসেছিলেন, ক্লোজড ক'রে রেখেছিলেন, আমি এলাম, সব ডিসক্লোজড ক'রে দিয়ে গেলাম। আবার, শ্রদ্ধেয় শ্রী কেষ্টদাকে বলেছিলেন, কেষ্টদা, আমি যা দেওয়ার সব দিয়ে গেলাম। যা বলার সব ব'লে গেলাম। আর কিছু বলার বাকী আছে? যদি আর কিছু বলার থাকে তবে বলেন এই বেলা যাওয়ার আগে ব'লে দিয়ে যায়।"
এই কথার মধ্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে তিনি আর আসছেন না। কলি যুগের শেষ অবতার স্বয়ং অবতারী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। তাঁর বলে যাওয়া ২৪ হাজারের ওপর বাণী, সেই বাণীরর ওপর দাঁড়িয়ে আর আচার্য তথা প্রতীক গুরুর মধ্যে দিয়ে তিনি স্বয়ং নেতৃত্ব দেবেন কলিযুগ থেকে সত্যযুগে প্রবেশ করার জন্য।
আজ এই পর্যন্ত। জয়গুরু।
No comments:
Post a Comment