রবীঠাকুর বলেছেন, "ঘরের মধ্যে তুমি যত খুশী কাঁদো। কিন্তু, দরজা সবসময় হাসি মুখে খুলবে । কারণ যদি কেউ দেখে নেয় যে তুমি ভেঙে পড়েছো তবে সে তোমায় আরো ভেঙে দিয়ে যাবে।"
আমি কাঁদবো কি হাসবো কার বাপের কি? আমি কারও খাই, না পড়ি যে কারো তোয়াক্কো করবো? আমি যৌবন থেকে এই বয়স পর্যন্ত অনেক কেঁদেছি, প্রকাশ্যে কেঁদেছি একটু সাহায্যের জন্য, না, আমার লজ্জা করেনি। লজ্জা কেন করবে? আমি তো আমার সঙ্গীসাথী, প্রিয় ও পরিচিতজনদের অকপট ভালোবাসতাম। বিলিয়ে দিয়েছিলাম আমার যৌবন, আমার জীবন, জীবনকে বাজি রেখে। নিঃশর্তে তুলে নিয়েছিলাম নিজের কাঁধে অন্যের বোঝা, সিঁড়ি হ'য়েছিলাম প্রত্যেকের জীবনের যারা যারা আমার সংস্পর্শে এসেছিল, আর আজও যারা আসে। কঠিন সেইদিনগুলির কথা মনে পড়লে চোখের কোণা খচখচ ক'রে ওঠে, ভিজে যায়, নীরবে ঝাপসা হ'য়ে আসে দৃষ্টি। যাকে ভালোবাসি তার কাছে সাহায্য চাইতে লজ্জা লাগবে কেন? তবে কোনওদিন কারও কাছে টাকাপয়সা সাহায্য চাইনি। চাইতে হয়নি পরমদয়ালের দয়ায়। কঠিন আর্থিক মুহূর্তগুলি কেমন রহস্যজনকভাবে পার হ'য়ে গেছে। আজও তা' রহস্য। কেউ হাত বাড়িয়ে দেয়নি্ একটু উঠে দাঁড়াবার, সামান্য সহানুভূতিটুকু দেখায়নি অকারণ কষ্টের সেই দিনগুলিতে কেউ, হাতি গাড্ডায় পড়লে যেমন হয় তেমনি আরো ভেঙে দিতে চেয়েছে শরীরে-মনে সেই সমস্যার দিনগুলিতে, কিন্তু কেউ ভাঙতে পেরেছি কি? পারেনি, আরো শক্তিমান করেছে। আমি আমার শিক্ষা, ক্রীড়া, ধর্ম, রাজনীতি, অভিনয়, চাকরী ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রের উদ্দাম অপ্রতিরোধ্য যৌবনের দিনগুলি থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত আমার কাঁদার যারা কারণ হ'য়ে ছিল, তারা আজ অনেকেই বেঁচে নেই, অনেকেই আছে, আমি তাদের প্রত্যেকের খবর রাখি, খবর পাই। মনে পড়ে প্রত্যেকের মুখ, প্রত্যেকের সাথে সু'দিন ও দুর্দিনের মুহূর্তগুলির। মনে পড়ে পিছন থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে ছুরি মারার প্রত্যেকের প্রতিটি মুহুর্ত। যাদের জন্যই সিঁড়ি হয়েছিলাম নিঃশর্তে সেই ছোটোবেলা থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে, শিক্ষা, ক্রীড়া, ধর্ম, রাজনীতি, অভিনয়, চাকরী ইত্যাদি ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে সহপাঠী, ক্রীড়াসঙ্গী, গুরুভাই, সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, সহকর্মী, বন্ধু প্রত্যকের জন্য শ্রীশ্রীঠাকুরের "ছোটোকে বড় করও, বড়কে আরও বড় করো" দর্শনের ছাত্র হ'য়ে সেইখানেই পদাঘাতে ফেলে দিয়েছে সেই সিঁড়ি----যে সিঁড়ি দিয়ে এসেছে উঠে উপরে----কাজ ফুরিয়ে যাওয়ার পরমুহুর্তে, দাবিয়ে রাখতে চেয়েছে ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছে। অথচ কারও সঙ্গে ছিল না, আজও নেই আমার কোনও বৈরিতা। কোনওদিনও কার সঙ্গে হয়নি আমার কলহ, বচসা। যখনই দেখেছি সবাইকে ছেড়ে দিয়েছিলাম এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা নিজেকে পিছনে সরিয়ে এনে। প্রতিযোগিতা, লড়াই আমার চির অপ্রিয়। প্রত্যেকের জন্য আমার দয়ালের কাছে সুস্থতা প্রার্থনা করি, মঙ্গল কামনা করি।
যারা আজ নেই, আর যারা আছে তাদের সকলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তোমরা আমাকে ভেঙে দিয়েছো আমি আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। বারবার ভেঙে দিতে চেয়েছো আর ভেঙে দিয়েও ভেঙে দিতে পারোনি, নিজেরাই ভেঙে চুড়মার হ'য়ে হয় চলে গেছো নতুবা আজও আছো বেঁচে। আমি আছি, আজও বেঁচে আছি সেই ৭০ দশকের বাপি একইরকমভাবে টানটান হ'য়ে আকাশের দিকে মাথা উঁচু ক'রে শরীরে-মনে-আত্মায় পরমাত্মায় মিলিত হবো ব'লে আর তোমাদের দেখবো বলে। আজ আমার ৭০বছর বয়স, আমি বুড়ো হ'য়ে যাইনি, আমি ৭০বছরের এক যুবক। আমি দেখতে চাই, সেদিন কে ঠিক ছিল আমি না আমার বিগত দিনগুলির সঙ্গীসাথী ও পরিচিতজনেরা।
কারণ I am spring of might.
আমি জানি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত চরম দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার কথা। তাঁর শৈশবের, কৈশোরের, যৌবনের ও বার্ধক্যের একাকীত্বের দিনগুলি, একের পর এক প্রিয়জনদের মৃত্যুর কষাঘাতে জর্জরিত যন্ত্রণাময় দিনগুলির কথা, তাঁর চারপাশের আপন ও পরজনদের নিষ্ঠুর আচরণ, বেইমানীর কথা ভাবলে বুঝতে পারি কেন তিনি এই কথা লিখেছিলেন!!!! কি এক অসম্ভব অব্যক্ত ব্যথা বুকে নিয়ে তিনি বেঁচেছিলেন শৈশব থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত। তাঁর কষ্টের কাছে আমার কষ্ট মহাসমুদ্রের মাঝে একটা ছোট্ট বুদবুদ।
আমি আমার বন্ধুর পাঠানো পোষ্টটাকে সামনে রেখে শুধু স্মরণ করেছিলাম অতীত আর বলতে চেয়েছিলাম, কে যেন বলছে কানের কাছে ফিস ফিস ক'রে, ডর কিস বাত কি, হাম হ্যাঁয় না! ম্যায় হু না।
যারা আজও বেঁচে আছো আমার উদ্দাম যৌবন ও প্রৌঢ়ত্বের দিনের সঙ্গীসাথী, পরিচিতজনেরা তোমরাও শক্তির তনয়, এসো আমার সাথে সর্বশক্তিমানের সাথে মিলিত হ'ই। তিনি যে তোমার আমার সবার অপেক্ষায় ব'সে আছেন, হাত বাড়িয়ে দিয়ে ডাকছেন, আয়, আয়, আয়।
( লেখা ১১ই ফেব্রুয়ারী'২৪)।
No comments:
Post a Comment