Powered By Blogger

Saturday, February 10, 2024

প্রবন্ধঃ চকচক করলেই সোনা হয় না। (২)

চকচক করলেই সোনা হয় না (১) -এ লেখা শেষ করেছিলাম "সাজানো বাগানে ফুল সবাই ছিঁড়তে আসে, একজন দু'জন বাগান প্রেমী ছাড়া।" তাই আসুন বাগান প্রেমী হ'ই।"

এখন লেখা শুরু করছি এই কথা ব'লে, আসুন বাগান সাজাই। আর বাগান সাজাতে গিয়ে নিজেকে আমি আগে একজন বাগানের মালি ক'রে তুলতে গিয়ে নিজের বিবেকের আয়নায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে যা যা প্রশ্ন করেছি এবং সেই সেই প্রশ্নের সমাধানের যে যে উত্তর পেয়েছি তাই আমি এখানে লেখার মাধ্যমে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি নিজেকে দেখবো আর শুধরে নেবো ব'লে আর আগামী বাকি দিনগুলিতে সতর্ক থাকার প্রচেষ্টায়। এই লেখা সম্পূর্ণ আত্মকথন। পাঠক কেউ নিজের ওপর এই লেখার ছায়া নেবেন না এই-ই আমার বিশেষ অনুরোধ।

শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আসাম যাত্রাকালীন প্রায় ১৫০-এর অধিক গাড়ির মিছিল স্বচক্ষে ও মিডিয়ায় দেখে গোটা বিশ্বের দীক্ষিত-অদীক্ষিত দর্শককুল স্তম্ভিত! আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা সৎসঙ্গ জগতে এবং দেশে-বিদেশে কোথাও ঘটেনি। এতবড় গাড়ির র‍্যালি নাকি বিশ্বে এই প্রথম।
এই দৃশ্য মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৎসঙ্গীদের মধ্যে যেমন আনন্দ, উৎসাহ, উল্লাসের ঝড় ওঠে ঠিক তেমনি অদীক্ষিত ও সৎসঙ্গ বিরোধীদের মধ্যে এই সফরের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসা, গালাগালির ঝড় ব'য়ে যায় মিডিয়ায়।

শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আসাম সফরের ঘটনায় আবেগে আপ্লূত সৎসঙ্গীরা। সীমাহীন আনন্দে বুকের জমাট বাঁধা উচ্ছ্বাসের বরফ গলে একেবারে ঝরণা হ'য়ে যাচ্ছে! তাদের নাকি বুক ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে 'আমি সৎসঙ্গী'!!!! এই বার্তা ফেসবুকে সুনামির আকার নেয়। এই অভূতপূর্ব সফরের ভিডিও ভাইরাল হ'য়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সৎসঙ্গীর প্রোফাইলে শেয়ার হয় এই ভিডিও এবং এই উচ্ছ্বাস পূর্ণ বার্তা।

আবার এই ভিডিও বিরোধীদের মনে অখুশির তুফান তোলে। বিরোধীরা সোচ্চার হ'য়ে ওঠে এর বিরুদ্ধে। কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, অপবাদ, অশ্রদ্ধা, অপমানে ও কটু সমালোচনায় ভরিয়ে দেয় নেট দুনিয়া। যা এখনও হ'য়ে চলেছে। হিংসার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ভ'রে যাচ্ছে আকাশ বাতাস।

কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মতো এই সমস্ত গালাগালি সৎসঙ্গ ও সৎসঙ্গীদের কাছে অতি পরিচিত। বিশেষ ক'রে একেবারে পুরোনো ও সক্রিয় সৎসঙ্গীদের কাছে। পুরোনো সৎসঙ্গীদের কাছে এইসব কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, সমালোচনা, অপমান ইত্যাদি গা সওয়া হ'য়ে গেছে। একেবারে শুয়োরের বা গন্ডারের চামড়ার মতন হ'য়ে গেছে পুরোনো সৎসঙ্গীদের গায়ের চামড়া। শ্রীশ্রীঠাকুর ও সৎসঙ্গের বিরোধীতা তো আজ নোতুন নয়। শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরোধীতা তাঁর যৌবনকাল থেকেই। তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ'-এর তীব্র বিরোধীতা বাংলাদেশে সৎসঙ্গ সৃষ্টির শৈশব অবস্থা থেকেই। তাঁর ও তাঁর পরিবার এবং তাঁর সৃষ্ট সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের ওপর মর্মান্তিক ঝড় ঝাপটা বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়েইতপুরের আকাশ বাতাসকে কলুষিত ক'রে আছড়ে পড়েছিল ভারতের বর্তমান ঝাড়খন্ডের দেওঘরের বুকে এবং সেই ঝড় আজও ব'য়ে চলেছে ঠাকুর পরিবার ও সৎসঙ্গের ওপর দিয়ে। কত নির্ম্মম যন্ত্রণাদায়ক ক্ষয়ক্ষতির নিদর্শন বুকে নিয়ে আজও মুখ বুজে সৎসঙ্গ এগিয়ে চলেছে ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে মানুষ ও মানব সভ্যতাকে বাঁচাবার তীব্র আকুতিতে। আগামী ভয়ঙ্কর সর্বনাশের হাত থেকে পৃথিবীকে ও মানবজাতিকে রক্ষা করতে শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' বদ্ধপরিকর। মনুষত্বের ভিত আজ ধ্বংস হ'তে হ'তে প্রায় লুপ্ত হওয়ার মুখে। সেই অবস্থা থেকে মনুষত্বের ভিতকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধার ক'রে সৃষ্টিকে বাঁচাতে আজ 'সৎসঙ্গ' মরীয়া। শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্ন পূরণে আজ 'সৎসঙ্গ' সদা জাগ্রত। তাই শত হাজার ব্যক্তিগত লাঞ্ছনা, কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, অপবাদ, অপমান, অসম্মান, কটু ও ঘৃণ্য মিথ্যা সমালোচনাকে মাথায় নিয়ে ঠাকুর পরিবার অচ্যুত, অস্খলিত, অটুট শান্ত, ধীর, স্থির সুকেন্দ্রিক চলনে এগিয়ে চলেছে বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য, মানুষকে বাঁচাবার জন্য ও মানুষের বেড়ে ওঠার জন্য।

তাই শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আসাম সফরকে কেন্দ্র ক'রে কুৎসা, গালাগালির ঝড় ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচড় কাটে না। তাঁরা প্রশংসা ও নিন্দা উভয় ক্ষেত্রেই নির্বিকার। বিশ্বজুড়ে প্রশংসার বন্যায় তাঁরা যেমন ভেসে যান না, তাঁদের আচরণে কোনও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না ঠিক তেমনি তাঁদের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বিরোধীতার ক্ষেত্রেও একইরকম তাঁদের আচরণ।

আমরা যেমন পুরাতন সক্রিয় সৎসঙ্গীরা জানি কি নির্মম মানসিক শারীরিক অত্যাচার হয়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীঠাকুর পরিবার, শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবার এবং সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও আশ্রমিকদের ওপর ঠিক তেমনি নূতন সক্রিয় সৎসঙ্গীরাও জানি বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ওপর কি ধরণের ঘৃণ্য কুৎসার আক্রমণ হ'য়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। এই আক্রমণ ভয়ঙ্কর হ'য়ে উঠেছে বিজ্ঞানের দৌলতে। নেট দুনিয়া আজ সক্রিয় অকারণ বিরোধীতায়। ফেসবুক ও ইউটিউব আজ কুৎসাকারীদের আঁতুড় ঘর। ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে নারীপুরুষ নির্বিশেষে বিরোধীরা ও কুৎসাকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মতো অশ্লীল শব্দের নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কুৎসা, অপবাদ, সমালোচনায় বিদ্ধ করবে ব'লে। ঠাকুর পরিবারের মায়েরাও বাদ যায় না কুৎসাকারীদের নোংরা ক্ষত ও দুর্গন্ধযুক্ত বিকৃত মানসিকতায় ভরা আক্রমণ থেকে।

তাই বলতে ইচ্ছে হয় বুক ফাটিয়ে হে সৎসঙ্গী! চকচক করলেই সোনা হয় না। কুৎসাকারী বিরোধীদের প্রতিনিয়ত আগ্নেয়গিরির লাভার মত বেরিয়ে আসা হিংসার সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা কি ভয়ঙ্কর গরল পান ক'রে চলেছে বর্তমান আচার্যদেব ও তাঁর পরিবার সহ ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা তা কল্পনা করলেও আঁতকে উঠতে হয়, শরীরে ভূমিকম্পের মতো তীব্র কম্পন জাগে। বিশ্বজুড়ে বিশাল প্রতিষ্ঠানের ভার মাথায় নিয়ে, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের ভালোবাসার প্রেমের বাঁধনে একসূত্রে বেঁধে নিয়ে আর সারা ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ'য়ে শ'য়ে মন্দির-এর দায়িত্ব মাথায় নিয়ে নিখুঁত ভাবে চলা যে কি কঠিন, কি দুঃসহ তা তাঁরাই জানেন। আর জানে, বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার। হে সৎসঙ্গী! আমাদের প্রাণ কি তা জানে, বোঝে?

কিন্তু তাঁদের বাহ্যিক শান্ত সৌম্য ধীর স্থির সুন্দর মিষ্টি রূপ আর কঠিন কোমল ব্যবহারে বিন্দুমাত্র তার ছাপ-ই পড়ে না!!!!! শ্রীশ্রীঠাকুর যেন মূর্ত হ'য়ে রয়েছেন প্রতিমুহূর্তে তাঁদের চলনে, বলনে, আচারে-আচরণে!!!!! তাঁদের বাইরের ঝলমলে আলোময়, রূপময়, মধুময় রূপ দেখলে বোঝাই যায় না তাঁদের মাথার চাপ! শ্রীশ্রীদাদার মহাপ্রয়াণের পর বোঝাই গেল না 'সৎসঙ্গ'-এর কতবড় নক্ষত্র পতন হ'য়ে গেল! এতটুকু বিন্দুসম বোঝা গেল না কম্পন!!! মসৃণভাবে মাখনে ছুরি চলার মত 'সৎসঙ্গ'-এর পরবর্তী আচার্যদেব হ'য়ে আমাদের কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের অভিভাবখীন হ'তে দিলেন না পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। রক্তমাংসের মানুষ তো নয় যেন একতাল সোনা! এ সোনা ১০ক্যারেট, ১৪ক্যারেট, ২২ক্যারেট সোনা নয় একেবারে খাদহীন ২৪ক্যারেট সোনা।

তাই বুক ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, হে সৎসঙ্গী! আমরাও অনেকে ঝলমলে, চকচক করি। কিন্তু চকচক করলেই সোনা হয় না। দেখতে হয় তা'তে আদৌ সোনা আছে কিনা আর থাকলেও তা'তে কত ক্যারেট সোনা আছে!!!!

আসুন এবার পরবর্তী লেখায় দেখে নিই, আমার মধ্যে আদৌ সোনা আছে নাকি পুরোটাই ইমিটেশন।

প্রকাশ বিশ্বাস।
ভদ্রকালী, হুগলী।
পরবর্তী শেষ অংশ 'চকচক করলেই সোনা হয় না (৩)' প্রকাশের অপেক্ষায়।
ক্রমশঃ
( লেখা ৯ই ফেব্রুয়ারী'২০২৩)

No comments:

Post a Comment