পরবর্তী অংশঃ
সত্যিই কাল আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে আমি জানি না। রাজার ছেলে রামকে যদি ১৪ বছর বনবাসে কাটাতে হয়, পরমপিতা শ্রীরাম যার স্বামী তাঁকে যদি বনবাসে কাটাতে হয়, রাবণের হাতে নিগৃহীত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হ'তে হয়, অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করেও যার কপালের লিখন পুড়ে খাক হয় না, যে নারীর পাঁচ পাঁচটা শক্তিমান মহাবীর স্বামী, যার বন্ধু স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ সেই নারী দ্রৌপদীকেও অপমানিত হ'তে হয় দুঃশাসনের মত লম্পটের হাতে আর পুত্রকে হারাতে হয়, আর মহারাজা হরিশচন্দ্রকে জীবন সায়াহ্নে শ্মশানের ডোম হ'য়ে কাটাতে হয়েছিল সেখানে আমার আপনার ভাগ্যে কি লেখা আছে তা আমরা জানবো কি ক'রে!?
গান শুনতে শুনতে খালি মনে হচ্ছিলো ঠাকুরের কথা,
"দয়া করা হিসাবে দান অহংকারের পরিপোষক। দান কর, কিন্তু দীন হ'য়ে প্রত্যাশা না রেখে। তোমার অন্তরে দয়ার দরজা খুলে যাক। যিনি কাতরভাবে তোমার দান গ্রহণ করেন, গুরুরূপে তিনি তোমার হৃদয়ে দয়াভাবের উদ্বোধন করেন;, অতএব কৃতজ্ঞ হও। যাকে দান ক'রবে, তার দুঃখ অনুভব ক'রে সহানুভূতি প্রকাশ কর, সাহস দাও, সান্তনা দাও; পরে যা'সাধ্য, যত্ন-সহকারে দাও;, প্রেমের অধিকারী হবে------দান সিদ্ধ হবে। দান ক'রে প্রকাশ যত না কর ততই ভাল, অহংকার থেকে রক্ষা পাবে।"
এগুলি কার কথা!? ঠাকুরের!? আমার প্রিয়পরমের!? আমার দয়ালের!? বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মালিক সৃষ্টিকর্তা আমার গুরু পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের!? এই কথাগুলি যদি তাঁর হয় তাহ'লে আজকের এই করোনা মহামারীর সময়ে অন্যদের কথা বলতে চাই না, যারা সাহায্যের ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে আমাদের সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা তাদের কি দয়ালের এই কথাগুলি জানা আছে!? হয়তো আমার এই কথায় গুরুভাইবোনরা আমায় ভুল বুঝতে পারে কিন্তু একটু মনের কথায় সায় না দিয়ে বিবেকের কথা কান পেতে যদি শুনি তাহ'লে সত্যানুসরণে বলা ঠাকুরের কথাগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারব!
এখন নিজেকে, নিজের বিবেককে যদি ঠাকুরের বলাগুলির উপর প্রশ্ন করা যায়:
১) আমি কি দান করার নামে দুর্গত মানুষকে দয়া করছি?
২) আমি দান করার সময়ে দীন হ'য়ে দান করেছি?
৩) দান করার সময়ে আমার কোনও প্রত্যাশা ছিল?
৪) দান করার সময়ে আমার অন্তরে কি দয়ার দরজা খুলেছিল?
৫) দান করার সময়ে কখনো কি মনে হয়েছে যিনি আমার দান গ্রহণ করছেন তিনি সেই মুহূর্তের জন্য আমার গুরু?
৬) আমার মধ্যে দয়া ভাব জাগিয়ে দিল যে দুর্গত ব্যক্তি তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ?
৭) যাকে দান করেছি তার দুঃখ অনুভব করেছি? দুঃখ অনুভব ক'রে সহানুভূতি প্রকাশ করেছি? তাকে সাহস দিয়েছি? সান্তনা দিয়েছি? যখন তাকে দান করেছি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাকে দিয়েছি? সেই দান যত্ন সহকারে করেছি? আর দান করার পর তা প্রকাশ করিনি তো?
৮) আর সর্বশেষ প্রশ্ন, সত্যি সত্যিই কি আমার মধ্যে দান করার সময়ে দয়ার ভাব জেগেছিল? নাকি সবটাই নাটক? সবটাই গিভ এন্ড টেক পলিসি?
ঠাকুরের বাণী এবং পরবর্তী এসব প্রশ্ন মনে আসার পরে মনে হ'লো এসব কথা রাজনৈতিক দল, নেতা বা ক্ষমতাদখলকারীর জন্য প্রযোজ্য নয়! ওরা এসবের ধার ধারে না। কিন্তু সৎসঙ্গীদের জন্য? সৎসঙ্গীদের জন্য কি প্রযোজ্য নয়?
এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্থির মন আরও কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল আমাকে!
১) করোনার জন্য সাহায্যের সময় এটা কি আমার মনে ছিল যে
আমার নিজের ইচ্ছে ব'লে কিছু নেই, ঠাকুরের ইছেই আমার
ইচ্ছে?
২) মনে ছিল "ইচ্ছেমতো ভজলি গুরু, হ'তে মানুষ
হ'লি গরু" ঠাকুরের এই বাণী?
৩) করোনার আক্রমণেই হ'ক আর যেই কারণেই হ'ক বিধ্বস্ত মানুষের
পাশে কি নিজের ইচ্ছেমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবো নাকি
ঠাকুরের ইচ্ছেমতো!?
৪) আচার্য্য নির্দেশ মানবো নাকি নিজের নির্দেশে চলবো!?
৫) ঠাকুর কি প্রচার পছন্দ করতেন? ঠাকুর কি তাঁর বি-শা-ল কর্মযজ্ঞ
কোনদিনই প্রচার করেছিলেন?
যেমন তিনি সেই দেশ ভাগের আগে (১৯৪৭ সাল) চলে আসার সময় সেই সময়ের বাজার মূল্য হিসেবে কোটি টাকার সম্পত্তি অবহেলায় অবলীলায় ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলেন সেই বি-শা-ল সম্পত্তি ও তার সামাজিক কর্মকান্ড সম্পর্কে কোনও প্রচার ছিল? ছিল না! কেন!? কেন প্রচার ছিল না!? কেন নীরবে এতবড় কর্মকান্ড গড়ে গেল অথচ কাকপক্ষী পর্যন্ত টের পেল না!? কেন দেশের সেইসময়-এর তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ টের পেল না দেশের অখ্যাত অনুন্নত গ্রাম্য পরিবেশে গড়ে ওঠা বি-শা-ল সাম্রাজ্য, গান্ধীজির স্বপ্নের ভারত!?!? কোনোদিনও সেই সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সৎসঙ্গীরা কি ভেবে দেখেছে এমন কথা!?
৬) আচার্য্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের ইচ্ছেটা যেহেতু আমাদেরই তাই আমাদের ইচ্ছের ডানা মেলে আমরা উড়বোই!?
৭) কেন্দ্র (সৎসঙ্গ, দেওঘর) অনুমতি ব্যতিরেকে মানুষের মধ্যে
সৎসঙ্গীদের ত্রাণ বন্টন কেন্দ্রকে অমান্য করা নয়!? ইচ্ছেমতো
গুরু ভজা নয়!?
৮) আমি সৎসঙ্গী নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালিত হবো ও পরিচালনা
করবো নাকি কেন্দ্রের নির্দেশ মতো চলবো ও সবাইকে চালিত
করবো!?
ঠিক এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আচার্য্য পরম্পরার প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা!
পুরোনো সৎসঙ্গীরা জানে ঠাকুরের মহাপ্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে কি ভয়ঙ্কর ঝড় উঠেছিল সৎসঙ্গ জগতে। ক্ষমতাদখলের নির্লজ্জ্ব উল্লাসে ফেটে পড়েছিল সৎসঙ্গী নামধারী একদল প্রতিষ্ঠিত ধান্দাবাজ মানুষ। চতুর্দিক থেকে ঠাকুরের প্রাণপ্রিয় 'এ আমার সৎসঙ্গ' (ঠাকুর সবসময় আবেগভরে বলতেন)-কে টুকরো টুকরো ক'রে দিতে কোমর বেঁধে উঠেপড়ে লেগেছিলেন সেইসময়ের নামীদামী প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গীরা! চতুর্দিক থেকে ধেয়ে আসছিল সাধারণ সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করার মেসেজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ঋত্বিকদের মাধ্যমে তাদের যজমানদের কাছে ঠাকুর সৃষ্ট ফিলান্থথ্রফি অফিসে ইষ্টভৃতি না পাঠিয়ে তাদের ব'লে দেওয়া জায়গায় পাঠাতে। ঠাকুরের আসনে নাকি 'আচার্য্য' নাম নিয়ে ব'সে পড়ছেন ঠাকুরের আত্মজ, প্রাণাধিক, চোখের মণি, ঠাকুরের প্রথম সন্তান সৎসঙ্গ জগতের সৎসঙ্গীদের প্রাণের বড়ভাই শ্রীশ্রীবড়দা! শ্রীশ্রীবড়দা-র হাত থেকে সৎসঙ্গের ব্যাটন ছিনিয়ে নেবার জন্য শুরু হ'য়ে গেছিল ভয়ানক গোষ্ঠীদ্বন্ধ! শ্রীশ্রীবড়দা-র বিরুদ্ধে শুরু হ'য়ে গিয়েছিল ক্ষমতাদখলের জন্য লিফলেট বিলির মাধ্যমে কুৎসার ঘৃণ্য পদক্ষেপ! তামাম সৎসঙ্গীরা বিভ্রান্ত হ'তে লাগলো! সত্যি-মিথ্যে বোঝার উপায় নেই, নেই সাধারণ সৎসঙ্গীদের সেই ক্ষমতা। কিছুদিন প্রচার হ'তে লাগলো ঠাকুর নাকি শ্রীশ্রীবড়দা-র এইসব নোংরামি দেখে আবার ধরাধামে অবতীর্ণ হ'য়েছেন তাঁর পূর্ব নির্ধারিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী! আর তা ছাপার অক্ষরে বেরিয়েও গেল বাজারে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য! আম সৎসঙ্গীদের মাঝে বিশ্বাসযোগ্য ক'রে তোলার জন্য কলম ধরলেন তৎকালীন বিহার হাইকোর্টের কোনও প্রধান বিচারপতি! আচার্য্য প্রথার বিরোধিতায় ঠাকুরের গ্রন্থ ঘেঁটে ঘেঁটে বের করা হ'তে লাগলো ঠাকুরের বাণী, ছড়া, আলোচনা আর তা ছাপিয়ে ছাপিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হ'তে লাগলো প্রতিষ্ঠিত ঋত্বিকদের মাধ্যমে যজমানদের কাছে! যাজকদের মাধ্যমে! রাতারাতি পাঞ্জা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হ'য়ে গেল যাকেতাকে! যেন মরণপণ এক লড়াই! লড়াই শুরু হ'য়ে গেল সৎসঙ্গ জগতে সৎসংগীদাদা-মায়েদের গোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে! শুরু হ'য়ে গেল পাল্টা প্যারালালভাবে শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধিতায় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়াস! অস্তিত্বের খুঁটি গাঁড়তে ও মজবুত করতে শুরু হ'য়ে গেল প্রার্থনার দ্বিজাতিকরণ!!!!! সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা নিয়ে, আচার্য্য প্রথা নিয়ে, ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণের ব্যর্থতার তীব্র হাওয়া তুলে ও আরো অনেক রকম মনগড়া বিষয় নিয়ে শুরু হ'য়ে গেল শ্রীশ্রীবড়দা-র বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অভিযান! ধীরে ধীরে কায়েমীস্বার্থ রক্ষাকারীদের সম্মিলিত শক্তি একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়লো ঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের উপর! প্রবল ধাক্কায় নড়ে উঠলো সৎসঙ্গীকুল! কুল রাখি না মান রাখি, নাকি কুলমান দু'টিই রাখি বা বিরুদ্ধ শক্তির সাহারা হ'য়ে উঠি এইরকম টালমাটাল অবস্থায় সৎসঙ্গীরা দিকভ্রান্ত! এই কঠিন সময়ে, যখন চতুর্দিকে ভয়ঙ্কর ঝড় ঝঞ্ঝার ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে উঠেছে 'সৎসঙ্গ'-এর আকাশে তখন দেখা গেল ধ্যানস্থ ঋষির মত গভীর ধ্যানে মগ্ন, ধীরস্থিরভাবে বিকারহীন অটল হ'য়ে বসে আছেন শ্রীশ্রীবড়দা ঠাকুরকে বুকে নিয়ে। মনে পড়ে গেল হনুমানের বুক চিরে প্রভু রামকে দেখানোর গল্প! সেদিনের যারা সাক্ষী আজও বেঁচে আছেন তাঁরা জানেন সেদিনের শত লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান, অপবাদ, নিন্দা, গালাগালি, গভীর চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, মামলা মোকদ্দমা, আশ্রমের উপর আক্রমণ, মৃত্যু ইত্যাদি নানা অসহনীয় তীব্র যন্ত্রণাদায়ক বিরোধিতার মাঝে অটল স্তম্ভের মত, বি-শা-ল ছাতার মত ঠাকুরের প্রাণপ্রিয় সৎসঙ্গ ও সৎসঙ্গীদের বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা!!!!!! তখন মনে পড়ে গেছিল ঠাকুরের ইষ্টভৃতি-র তাৎপর্য!
ঠাকুর বললেন, "ইষ্টভৃতি, স্বস্তয়নী করার দরুন যার ভেতর যে energy (শক্তি) মজুত হয়েছে, বিপদের সময় তাই-ই তাদের ত্রাণ আনবে।"
এই প্রসঙ্গে প্রায় তিনি জেমস-এর কথা বলতেন। জেমস তার সিলেক্টেড এসেস গ্রন্থে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এই দান সম্পর্কে বলেছেন, "যখন সবকিছুর অস্তিত্ব টলায়মান হ'য়ে উঠবে, এবং শক্তিহীন নির্জ্জীব লোকগুলি ঝড়ের আগে তুষের মত উড়ে যাবে, তখন সে একটা স্তম্ভের মত নিজের শক্তিতে অটল হ'য়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।"
এই কথা প্রমাণ করে পাহাড় প্রমাণ সমস্যা, বাধা যখন ঠাকুরের অনুপস্থিতিতে শ্রীশ্রীবড়দার পথরোধ ক'রে দাঁড়ালো, যখন সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টলে উঠলো তখন ঠাকুরের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' ও তাঁর সোনার সৎসঙ্গীদের রক্ষা করার জন্য শ্রীশ্রীবড়দা স্তম্ভের মত নিজের শক্তিতে অটল হ'য়ে বুক টান টান ক'রে দাঁড়িয়ে রইলেন ক্ষমতা দখল ও কায়েমীস্বার্থ রক্ষাকারীদের সামনে! তুষের মত উড়ে যেতে লাগলো যত ধান্দাবাজ নির্জ্জীব তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গীবৃন্দ! বড়দার বিরোধিতা, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, নিন্দা, সমালোচনা, গালাগালি আর কুৎসার প্রচন্ড ঝড় মুখ বুজে নীরবে সহ্য করতে লাগলেন বড়দা এই গভীর বিশ্বাসে যে ঠাকুর বলেছেন ঝড় ঝঞ্ঝা যতই আসুক মনে জোর রাখতে হবে এই ভেবে যে মাথায় যখন দয়াল ঠাকুর আছেন তখন আমাদের আর ভাবনা নেই!
ঠাকুরের বাণী: ঝড় ঝঞ্ঝা যতই আসুক মনেতে রাখিস জোর
মাথায় আছেন দয়াল ঠাকুর ভাবনা কি বা তোর।
আর তা ক্রমে ক্রমে সত্য হ'য়ে উঠলো! মেঘ কেটে আবার সূর্য উদয় হ'লো। শ্রীশ্রীবড়দার নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো সারা বিশ্বজুড়ে ঠাকুরের নাম, দিকে দিকে ভারতের সমস্ত রাজ্য ছুঁয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠতে লাগলো পরমদয়ালের মন্দির, লক্ষ লক্ষ লোক ছুটে আসতে লাগলো দূর দূরান্ত থেকে ঠাকুরের চরণে! বিরোধিতার ঝড়কে উপেক্ষা, তাচ্ছিল্য ক'রে এগিয়ে যেতে লাগলো নিজের লক্ষ্যে পরমপিতার রথ শ্রীশ্রীবড়দার বলিষ্ঠ, কোমল-কঠোর নেতৃত্বে! ঠাকুরের বলা নিখুঁত ইষ্টভৃতি ও স্বস্তয়নী করার ফলে যে সীমাহীন energy স্টোর হয় তার জলজ্যান্ত নিদর্শন বা উদাহরণ শ্রীশ্রী বড়দা! আজ সেই বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ব্যাটন যোগ্য ও দক্ষ হাতে ধরা রয়েছে! সৎসঙ্গ ও সৎসঙ্গী কুল আজ নিশ্চিন্ত! সেদিন দয়ালের মহাপ্রয়াণের পর সুযোগসন্ধানী সৎসঙ্গী যে যেমন ইচ্ছা চলতে চেয়েছিল, চেয়েছিল যেখানে যেখানে কেন্দ্র মন্দির আছে সেখানে সেখানে মৌরসি পাট্টা জমিয়ে বসতে! 'আমি, আমি আর আমি প্রধান, আমি প্রধান' রোগ ঘিরে ধরেছিল কেন্দ্র, মন্দিরে! বড়দার দক্ষ ও বলিষ্ঠ হাত রুখে দিয়েছিল সেই 'আমাদের ইচ্ছেটা আমাদেরই, আমাদের ইচ্ছের ডানা মেলে আমরা উড়বোই' এই উচ্শৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল মানসিকতা। সেই যে কেমন ক'রে দয়ালকে, দয়ালের প্রতিষ্ঠানকে, মিশনকে, স্বপ্নকে, ইচ্ছাকে রক্ষা করতে হয়, পূরণ করতে হয়, এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তা হাতে কলমে নিজে আচরণ ক'রে করিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন সেই ক্রুশিয়াল পিরিয়ডে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর প্রচন্ড পরিশ্রমে দিনরাত একাকার ক'রে! কে বুঝবে সেই ব্যাথা, কষ্ট, যন্ত্রণা!? বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার! সেদিন বড়দা না থাকলে কি হ'তো আজ ভাবলেও শিউড়ে ওঠে অন্তরাত্মা! তাই এবার এই ঘোর কলিযুগে শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম ভক্ত সেই মহাবীর, মহাশক্তিশালী হনুমানকে নিজের ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান ক'রে নিয়ে এসেছিলেন ঠাকুর, নিয়ে এসেছিলেন যুগে যুগে তাঁর পরমভক্ত অর্জুন, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ ইত্যাদিকে তাঁর প্রথম সন্তান রূপে! কারণ তিনি জানতেন তাঁর অবর্তমানে কি হবে তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের, তাঁর দর্শন, তাঁর মিশনের! তিনি যতবার এর আগে এসেছিলেন তাঁর মহা প্রয়াণের পর তাঁর সাধের সংগঠন ভেঙে টুকরো টুকরো হ'য়ে গেছে আর এবারের সময় হ'লো ঘোর কলিযুগের সময়!
ক্রমশঃ
( লেখা ৭ই মে' ২০২০)
( লেখা ৭ই মে' ২০২০)
No comments:
Post a Comment