'সৎসঙ্গ' মানুষ তৈরির কারখানা। এই কারখানায় মানুষ তৈরি হয় দুই উপায়ে। একটা প্রিভেন্টিভ মেথড আর একটি কিউরেটিভ মেথড অর্থাৎ নিরোধক নিয়ম বা ধারা অন্যটি আরোগ্যদায়ক বা রোগনিরাময়কারী পন্থা। মানুষ তৈরি হয় এই কারখানায় কিভাবে? প্রিভেন্টিভ মেথড অর্থাৎ শিশু জন্মাবার আগেই যে নিয়ম অনুসরণ করলে শিশু বায়োলজিক্যালি ডিফেক্ট না হয় অর্থাৎ নিখুঁত জৈবি সংস্থিতি সম্পন্ন শিশু জন্মগ্রহণ করে অর্থাৎ এককথায় যাকে বিবাহ বিজ্ঞান বলে। কার সংগে কার বিবাহ হ'লে অর্থাৎ কোন নারীর সংগে কোন পুরুষের মিলন হ'লে এবং শারীরিক, মানসিক কোন অবস্থায় কখন মিলন হ'লে দেব সন্তানের আবির্ভাব হয় তার বিজ্ঞানকে অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞান অর্জনের পর নারী পুরুষের মিলিত হওয়াকেই প্রিভেন্টিভ মেথড বলে। আর, জন্মে যাবার পর যে পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশে জন্মেছি, বড় হয়েছি, পরিবারের নিজের লোকেদের কাছ থেকে যে শিক্ষা অর্জন করেছি তা আমার জীবনকে ভবিষ্যৎ জীবনে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার পথে কতটা অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে স্বচ্ছন্দে থাকা থেকে বঞ্ছিত করলো তা জীবন্ত সর্বশ্রেষ্ট আদর্শকে জীবনে গ্রহণ করার পর তার নির্দেশিত পথে চলে জীবনের সমস্ত ভুলগুলিকে ধীরে ধীরে জানার পর সেই ভুলগুলিকে শুধরে নিয়ে এগিয়ে চলার পথই হ’লো কিউরেটিভ মেথড বা আরোগ্যদায়ক বা রোগনিরাময়কারী পন্থা।
তাই, এই সৎসঙ্গ কারখানায় আমরা যারা জন্মাবার পর এসেছি তাদের জন্য জীবনকে শুধরে নেবার পন্থা হ’লো কিউরেটিভ মেথড। কিন্তু আমারা কি দেখছি? আমরা কি শুধরেছি? গুরুভাইবোনেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের আজ দীর্ঘ ৫০ বছর ধ’রে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি তা’তে হতাশায় একমাত্র সম্বল। অবাক হ’য়ে দেখেছি কি অবলীলায় একজন একজনকে গালাগালি করে, কুৎসা করে, নিন্দা করে, প্রতিবাদের নামে, মজা দেখাবার নামে একজন একজনকে চরম লাঞ্ছনা করে, অবহেলা করে তখন ভাবি আমরা গুরুভাই, আমরা গুরুবোন!!?? The greatest phenomenon of the world SriSriThakur AnukulChandra-এর আমরা দীক্ষিত!? দীক্ষা নেবার পর আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো কেউ আমরা ঠাকুর নির্দেশিত পথে চ’লে ঠাকুর যেমন যেমন আমায় দেখতে চেয়েছিলেন তেমন তেমন ভাবে নিজের ভুলগুলিকে শুধরে নিয়ে নিজেকে ঠাকুরের পূজার ফুল ক’রে তুলতে পেরেছি? তাঁর চলন আমার চলন করতে পেরেছি? তাঁর চোখ দিয়ে আমার চারপাশের জগতটাকে দেখেছি বা দেখছি কিম্বা দেখতে শিখেছি বা শিখছি?
তাই যখন দেখি ঠাকুরকে নিয়ে কেউ যা ইচ্ছা তাই করছে, ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ ক’রে নিয়ে দিব্যি ইষ্টপ্রাণ সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ভুল ভাল যা ইচ্ছা তাই ঠাকুর সম্পর্কে মানুষকে বোঝাচ্ছে, যাজন করছে, ঠাকুর ভক্ত সেজে সাধারণ, সাধাসিধা মানুষদের উপর, সহজ সরল দীক্ষিতদের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে , প্রণাম, প্রণামী আর প্রসাদ অর্থাৎ p3 কে মুখ্য ক’রে নিয়ে সৎসঙ্গকে আখড়া বাজিতে পরিণত ক’রে চলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু যখন ঠাকুরকে চরম বদনাম ক’রে তোলে, ঠাকুর সৃষ্ট সৎসঙ্গকে কলঙ্কিত ক’রে তোলে তখন মনে হয় এর তীব্র প্রতিবাদ করি কিন্তু পারি না।
যাই হ’ক আমার মত একজন সাধারণ দীক্ষিতের ইচ্ছা তো করতেই পারে এসবের তীব্র প্রতিবাদ করার কিন্তু মাথায় রাখতে হবে আমি যেদিন ঠাকুরকে আমার জীবনে আদর্শ ব'লে গ্রহণ করেছি সেদিন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম "মানুষের জীবন ও বৃদ্ধির পরম উদ্ধাতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে প্রতিষ্ঠা করাই এইক্ষণ হইতে আমার জীবনের যজ্ঞ হউক।" তীব্র প্রতিবাদ যদি করতেই হয় এই প্রতিজ্ঞার কথা মাথায় রেখে কোনওদিকে না তাকিয়ে উদ্দাম বেগে ঠাকুরকে নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে কোনোদিকে না তাকিয়ে অন্তহীন কর্মযজ্ঞের ভিতর দিয়ে। ঠাকুরকে প্রতিষ্ঠা করবো কেমন করে? তাঁর বলা কথাগুলি যেন আমার মধ্যে জীবন্ত হ'য়ে ওঠে। যেমন, "বিচারের ভার আপন হাতে নিতে যেও না.........", “নিজের ত্রুটির ধার না ধেড়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপায়............”, “যে করে বেশী বলে কম.........” সাধু সেজো না, সাধু হ’তে চেষ্টা করো” ইত্যাদি ইত্যাদি বাণী যেন আমার জীবনে জীবন্ত হ’য়ে ওঠে, চরিত্রে চরিত্রগত হ’য়ে ওঠে। যদি তা না হয় তাহ'লে তাঁকে ধরা আর না ধরা একই ব্যাপার। প্রতিবাদের ভাষা বা লাইন কিম্বা মজা দেখানোর রাস্তা কিন্তু পাল্টা ঝগড়া, মারামারি, নিন্দা, কুৎসা, বদনাম, অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপবাদ বা ইষ্টকাজে বাধা ইত্যাদি নয়। ভাষা বা লাইন কিম্বা রাস্তা কিন্তু আমাদের সামনে জীবন্ত হ'য়ে লীলা করছেন। সেটা কি? সেটা হ'লো বংশ পরম্পরায় তাঁর আত্মজদের জীবন্ত উপস্থিতি। শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা, শ্রীশ্রীঅবিনদাদা আমাদের সামনে উদাহরণ হ'য়ে আমাদের প্রতিমুহূর্তে নিজেদের জীবন দিয়ে শিখিয়েছেন ও শেখাচ্ছেন প্রতিবাদের ভাষা বা লাইন কিম্বা মজা দেখাবার রাস্তা কেমন হ'তে পারে!!!!!! আমাদের মহাসৌভাগ্য তাঁদের মধ্যে দিয়ে ঠাকুর এখনও আমাদের চলন শেখাচ্ছেন। আসুন আমরা সেই পথ অনুসরণ করি। কথায় আছে, মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন। আসুন আমরা সেই পথে চলি আর তাঁর চলন পূজায় নিজেদের নিমগ্ন করি। জয়গুরু।
( লেখা ১১ই মে' ২০১৮ )
Souvik Mandal নামে একজন আমার এই 'সৎসঙ্গ মানুষ তৈরির কারখানা' লেখাটা নিজের লেখা ব'লে নিজের প্রোফাইলে পোষ্ট করেছে। আমি অবাক হ'য়ে যায় সৎসঙ্গী হ'য়ে কি ক'রে এই কাজ করে!? যার লেখা তাকে স্বীকৃতি না দেওয়ার শিক্ষা এরকম বহু সৎসঙ্গীর মধ্যে ইদানিং দেখা যাচ্ছে। কেউ সরাসরি নিজের নামে পোষ্ট করছে অন্যের লেখা, কেউ কেউ বা এমনভাবে পোষ্ট করে যেখানে লেখার নীচে 'তথ্যসূত্র' লিখে পাঠককে বোকা বানিয়ে এলাকার সাধারণ সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত ক'রে নিজেকে মহান সাজাতে চায় এবং ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ ক'রে তোলে। এছাড়া কিছু গ্রুপ ব্যাঙের ছাতার মতন গজিয়ে উঠেছে। এরা এইসমস্ত পরজীবি সৎসঙ্গীদের লেখা খোঁজখবর না নিয়ে নিজেদের গ্রুপ প্রোফাইলে পোষ্ট ক'রে দেয়। সৎসঙ্গীরা এমন হ'ক তা কি ঠাকুর আমাদের শিখিয়েছেন? ঠাকুর বললেন, সাধু সেজো না, সাধু হওয়ার চেষ্টা করো।" আর আমরা কি করছি!? ®®®
No comments:
Post a Comment