Powered By Blogger

Wednesday, May 10, 2023

খোলা চিঠি' ( ৩য় পর্ব) গুরুভ্রাতা কমল নাইডু ও দেবব্রত সোমকে।

বন্ধু! আমার ভালোবাসা ও জয়গুরু নিও।
চিঠির শেষ পর্বে এসে আমার দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের আশংকার কথা তুলে ধরছি। চিঠির দ্বিতীয় পর্ব শেষ করেছিলাম ইতিহাস কি বলে দিয়ে।
এসো সংক্ষেপে দেখে নিই ইতিহাস কি বলে।
ইতিহাসের পাতা উলটে যদি দেখি দেখতে পাবো হিন্দু ধর্মে হাজারো দেবদেবী নিয়ে হাজারো দল, হাজারো মতবাদ।
এইরকম আমরা দেখতে পাবো মুসলমান ধর্মে সুন্নী, শিয়া, খারেজী, ওয়াবী, আহমাদিয়া, মুতাজিলা ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক দল উপদলের সৃষ্টি হয়েছে।
খ্রিষ্টান ধর্মে প্রোটেষ্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক মন্ডলী, পূর্বদেশীয় ও প্রাচ্যদেশীয় সনাতনপন্থী মন্ডলী, ইঙ্গ মন্ডলী ইত্যাদি ইত্যাদি মতবাদ আছে।
বৌদ্ধধর্ম তিনটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত: থেরবাদ, বজ্রযান এবং মহাযান।
জৈন ধর্মে আমরা দেখতে পায় দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর দলের আবির্ভাব।
এরকম প্রত্যেক ধর্মে বা যতবার তিনি এসেছেন ততবারই নানা দল উপদল, গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে ব্যক্তিগত ইগোর কারণে। কালের নিয়মে এবারও কি তাই হ'লো!? এ সব কি পূর্ব থেকেই স্থির হ'য়ে আছে!? এমন তো হবার কথা ছিল না বা হবার কথা নয়! বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কি তাই চেয়েছিলেন? সত্যিই কি তিনি চেয়েছিলেন এমন হ'ক!? নাকি সব দায় তাঁর উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের অজুহাত নামক শক্তিশালী হাতের সাহারা নিয়ে নিজেদের পাপ কাজকে ঢেকে রাখার প্রয়াস!? কোনটা?
এই যে আজ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী এক ও একমাত্র সংগঠন 'সৎসঙ্গ' অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি নানা ধর্মের, নানা সম্প্রদায়ের মানুষ আগুন খেকো পোকার মত 'সৎসঙ্গ' পতাকার তলায় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পায়ের কাছে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে; কেন?
উত্তর একটাই। সহজ উত্তরঃ বাঁচার জন্য।
সারা পৃথিবীর মানুষকে বাঁচার জন্য যদি বাঁচতে চায়, বাড়তে চায়, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় তাহ'লে তাদের আসতেই হবে আজ নয় তো কাল তাঁর অভয় চরণতলে। আর যদি না আসে তাহ'লে আগামী ভয়াবহ আগুন পৃথিবীতে কেউ নেই পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে, রক্ষা করতে। একটাই রাস্তা বেছে নিতে হবে বিশ্বের সমস্ত সম্প্রদায়ের সমস্ত ধর্মের মানুষকেঃ হয় বাঁচো নয়তো মরো, জাহান্নাম নরকে যাও। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিকল্প কোনও পথ, কোনও নীতি, কোনও বাদ নেই। কারণ ঈশ্বর স্বয়ং নেবে এসেছেন এবার আবার নতুন নামের তিলক নিয়ে সবার কপালে পড়িয়ে তাঁর সৃষ্টিকে বাঁচাবে ব'লে তাঁর 'সৎসঙ্গ' নামের নৌকো নিয়ে ভয়ংকর দুর্যোগের রাতে। ঘোর কলি যুগ থেকে সত্য় যুগে এ ট্রাঞ্জিশনের সময়! এ এক ট্রাঞ্জিশনাল পিড়িয়ড! মানা আর না-মানা ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁতে কারও কিচ্ছু আসে যায় না। প্রকৃতি আপন গতিতে তার কাজ ক'রে চলে যাবে। কারও ধার সে ধারে না। বাঁচলে বাঁচো নইলে তফাৎ তফাৎ তফাৎ যাও!
এ তো গেল অন্য ধর্মের, অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের কথা। কিন্তু যারা সৎসঙ্গী তাদের ক্ষেত্রে কি এ কথা খাটে? তারা তো সৎসঙ্গী! তাদের ক্ষেত্রে কি হবে? তারা তো বেঁচে যাবে তাই না?
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল দয়াল ঠাকুর শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্রের ভয়াল কথাঃ আমার গায়ে তো মশা মাছিও বসে তারা কি তাহ'লে আমার সঙ্গে স্বর্গে যাবে? যারা আমার গাড়ু গামছা বও, আমার কাজ নিয়ে থাকো তারা আমার বলাগুলি যদি সময়মতো না করো তাহ'লে তারাও কি মুক্তি পাবে?
এ কথায় পরিস্কার হ'য়ে যায় আমাদের অজুহাত নামক শক্তিশালী হাতটাকে তিনি কি দয়ামায়াহীন নির্ম্মমভাবে প্রতিহত করেছেন, সমূলে ছেঁটে দিয়েছেন! এর পরেও কি আমাদের চোখ খুলছে না!? এমনই আমাদের অন্ধ বা জন্ডিসাক্রান্ত অন্তর ও বাহিরের চোখ!? আমাদের ভয় হয় না ভয়াবহ শেষের সেদিনের পরিণতি নিয়ে!? দয়াল তো কোনও কিছু লুকিয়ে রেখে যাননি এবার। তিনি তো পরিস্কার ব'লে দিয়েছেন,
"তুমি যা করছো বা ক'রে রেখেছো ভগবান তাই-ই গ্রাহ্য করবেন আর সেগুলির ফলও পাবে ঠিক তেমনি। যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি তা করলে রে চলবে না ভালো ছাড়া মন্দ করলে পরিস্থিতি ছাড়বে না।"
তা সত্বেও আমরা সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা কি করছি!? ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার নামে প্রকান্তরের জ্ঞাতে ও অজ্ঞাতে আত্মপ্রতিষ্ঠার চুলকানিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে মন্দিরে মন্দিরে কি করছি আমরা!? সত্যি কি আমাদের বিবেক ব'লে আর কিছু অবশিষ্ট নেই!? হারিয়ে গেছে!? সত্যি কি আমরা আর দয়ালের ভয়াল চোখকে ভয় পায় না!?
এই যে আমরা সৎসঙ্গীরা কেন্দ্রে মন্দিরে এবং 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে না মানা সৎসঙ্গীরা (?) সবাই মিলে 'সৎসঙ্গ'-এর বিরোধিতা ক'রে বিশ্ববাসীর কাছে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছি, তুলে ধরছি সে ছবি কি সত্যিই সুখকর, প্রাণদায়ক!? ঠাকুর কি তাই চেয়েছিলেন? আমাদের এমন দেখতে চেয়েছিলেন? পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা কি প্রেমের ঠাকুর শিখিয়েছিলেন? তিনি কি ব'লে গেছিলেন তোরা কোন্দল কর? এই যে এত প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে সৎসঙ্গে এত দল উপদলের সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কি ব'লে গেছেন?
তিনি কথাপ্রসঙ্গে স্বাধীনতার ঢামাঢোল যখন তুঙ্গে তখন এক রাজনৈতিক কর্মী তথা ভক্তকে নানা দলের উৎপত্তিতে কোন দলে অংশগ্রহণ করবেন প্রশ্নে বলেছিলেন, "কোন্দল ক'রো না মণি, কোন্দল ক'রো না।" কিন্তু আমরা কি বুঝতে পেরেছি বা পালন করেছি বা করছি তাঁর মনের ভিতরে বুকের অভ্যন্তরে চাপা পড়ে থাকা ব্যথা বুকের কথা?
ক্রমশঃ ( লেখা ১১ইমে' ২০২২ )

No comments:

Post a Comment