তিয়াসা সোস্যালিষ্ট ব’লে কি
ক্যাপিটালিষ্টকে ঘৃণা করতে হয়, না-কি ঈর্ষা!?
ঈর্ষা একটা ব্যাধি! এই ব্যাধি কতটা কার কি ক্ষতি করতে পারলো না পারলো সেটা যতটা না বড়
তার থেকেও বড় কথা
যার ভেতরে এই ব্যাধি বাসা বাধে সে নিশ্চিত অন্তরে জ্বলে পুড়ে
খাক হ’য়ে যায় এবং নিজের
প্রিয়জনদেরও পুড়িয়ে খাক ক’রে ফেলে নিজের
অজান্তে! সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্র আজ পর্যন্ত সমাজের যতটা না উপকার করেছে, ভালো করেছে তার থেকে গোটা পৃথিবী জুড়ে ক্ষতি করেছে অনেক বেশী। সাম্যবাদ অর্থাৎ উচুনিচু বা নারীপুরুষ
নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সমস্ত মানুষের সমান অধিকার প্রাপ্য, এবং সমাজতন্ত্র
অর্থাৎ সমাজের সমস্ত মানুষের প্রয়োজন, উপকার বা
কল্যানের জন্য যা কিছু উৎপাদন
হয় এবং সেই উৎপাদন ও উৎপাদনের সাহায্যকারী ভূমি, কলকারাখানা সমস্ত কিছুই রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত হওয়া উচিত এই মতবাদমূলক
রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থায়
বিশ্বাসী আমার কট্টর সমালোচক। আমি জানি না এই মতবাদে বিশ্বাসী আমার সমালোচক কতটা হাতে কলমে প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে,
কতটা সরাসরি মাটির কাছাকাছি নেবে এসে, কতটা জীবনকে বাজী রেখে, কতটা এবং ক’জন সমাজতন্ত্রে বা
সাম্যবাদে বিশ্বাসী (!) মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে,
কলে-কারখানায় লড়াই ক’রে এই মতবাদ এবং এর সঙ্গে ক্যাপিটালিষ্ট ও বামপন্থীনেতা কর্মীদের সম্পর্কে
অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন! আজ বাংলার বুকে
প্রতিটি ছোট বড় কারখানায় শ্রমিকের প্রতিনিধি বামপন্থী (ডানপন্থীদের কথা বাদ দিলাম) শ্রমিক নেতারা কাদের পৃষ্টপোষকতা করেছেন সে খবর
রাখেন কিনা জানি না। যে ক্যাপিটালিষ্টদের বিরুদ্ধে সাধারণ অজ্ঞ শ্রমিক কৃষক মানুষের মনে ঘৃণা, রাগ, হিংসা জাগিয়ে
দিয়ে অসম লড়াই-এ তাতিয়ে দিয়ে
শ্রমিকের জন্য দাবী আদায়ের লড়াইয়ে সামিল হ’ন বামপন্থী শ্রমিক নেতারা তারা পরবর্তী সময়ে ক্যাপিটালিষ্টদের প্রতিনিধির সঙ্গে
রুদ্ধদ্বার কক্ষে কার
প্রতিনিধি হ’য়ে যান, কি চুক্তির রফা করেন আমার সোশ্যালিস্ট সমালোচক কি তা জানেন? কেন তারা এমন হ’য়ে যান, সে সম্পর্কেও কি
কোন ধারণা আছে আমার
সোশ্যালিস্ট সমালোচকের? আছে না-কি এমন
শ্রমিক-মালিক, মালিকের প্রতিনিধি ও
শ্রমিক প্রতিনিধির জটিল রহস্যময় বৃত্তি-প্রবৃত্তির ক্রিয়াকলাপের ভয়ংকর ঘৃণ্য অভিজ্ঞতা?
পৃথিবীর ইতিহাস কি বলে? শুরুর দিনগুলিতে এই মতবাদের গ্রহণযোগ্যতার পারা যে ঊর্ধ্বগতিতে ছুটে চলেছিল এখন তার পরিণতি কি? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এই মতবাদের ইতিহাস কি বলে? কারা এই মতবাদকে বুকে আঁকড়ে ধ’রে মেতে উঠেছিল বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার নেশায়? কারা এই মতবাদকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল? কেন ছুঁড়ে ফেলে দিল? নিজের দেশের দিকেই যদি তাকানো যায় তাহ’লে কি দেখব? সত্তর দশকের নকশালি আন্দোলন কি দেখেছে আমার কট্টর সমালোচক? কত বয়স ছিল তখন তাঁর আমি জানি না। তবে সেই সময়ের (পুরুষদের কথা বাদ দিলাম) আমার সমালোচকের মত এক নিমেষে ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেওয়া, ‘সমাজ কো বদল ডালো’ ব’লে উর্ধ্বে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে তারস্বরে চীৎকার করা, সমস্ত কিছুর মধ্যে ধনতন্ত্রের উৎকট তীব্র গন্ধ পাওয়া, পথে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, স্কুল-কলেজে ‘এ আজাদি ঝুটা হ্যায়’ ‘সমাজতন্ত্র জিন্দাবাদ’ বলে নাড়া লাগানো সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী নারী বিপ্লবীদের কার কি অবস্থা হয়েছে, কে কি অবস্থায় আছেন, জীবনের কঠিন বাস্তব ও সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কে কি অবস্থান বদল করেছেন তার খবর কি একটুও জানেন বা রাখেন কিনা আমার কট্টর সমালোচক আমি তাও জানি না।
দশকটা ছিল সত্তর, ‘উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বরযুক্ত কল্পনা’য় যারা পরিবর্তনটা চেয়েছিল অতি সত্বর; নকশালী আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে তাদের সম্পর্কে, তাদের জীবন দর্শন সম্পর্কে কতটুকু জানা আছে আমার সমালোচকের তাও আমি জানি না। যারা সেদিন আপনার মত সমাজতন্ত্র পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মতবাদ ব’লে মায়ের কোল থেকে, ঘরের নিরাপদ আশ্রয় থেকে, তরুণ যুবকদের ভবিষ্যত জীবনের বুকে কুঠারাঘাত ক’রে তরুণ সমাজকে, যুবসমাজকে টেনে বের ক’রে নিয়ে এসেছিল চোখে এক অলীক সমাজ গঠনের রামধনুর সাতরঙা রঙ লাগিয়ে আফিমের মত তীব্র নেশায় ডুবিয়ে দিয়ে সেই পথ প্রদর্শক মানুষগুলো আজ কোথায়? তাঁদের কার কি পরিণতি হয়েছে আর কে কি অবস্থান বদল ক’রে দ্রুত নিজের পায়ের তলার মাটিকে শক্ত ক’রে নিয়েছেন তা-কি জানেন আমার সমালোচক? তাঁদের কাছে যে হাহাকার ভরা শুন্য বুকে হাজার চুরাশির মায়েরা, বোনেরা, স্ত্রীরা জবাব চাইছেন? তারা জবাব দেবেন না? আর দিলেও কি দেবেন তাও জানি। সমাজ জীবন ও মানব জীবনের বৃহত্তর স্বার্থে এরকম ক্ষয়ক্ষতি স্বাভাবিক ও অবশ্যম্ভাবী এবং কাজের মধ্যে দিয়েই মানুষের ভুল হয়। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই ভুল প্রজন্মের পর প্রজন্ম হয়েই চলে আর ভুল থেকে শিক্ষালাভ করার প্রক্রিয়া এদের মতে জীবন বলিদানের ক্ষেত্রে খাটে না! বাঃ চমৎকার অজুহাত!
আজ শুধু এটুকু জানি আর এটুকু বুঝতে পেরেছি আজকের জীবন সায়াহ্নে জীবন মোহনায় দাঁড়িয়ে যে, ‘উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত কল্পনা’ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এ-প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত জেনারেশানের পর জেনারেশনকে! আর কর্মহীন চূড়ান্ত তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা দিশাহীন শৃঙ্খলাহীন ষোলো আনির এক আনি পূর্ণতাহীন বৃত্তি প্রবৃত্তিতে সম্পুর্ণ ডুবে থাকা কিছু তথাকথিত রিপুতাড়িত লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ কলমের নীল মুত্রপাত ক’রে চলেছে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের পক্ষে অহরহ কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, ছবি ইত্যাদি সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে! আর এদের দেখানো পথের ওপর বিশ্বাস ক’রে হৈ হৈ ক’রে সরল মনে ছুটে চলেছে অনভিজ্ঞ বেকুব তরুন দল রিপু তাড়িত হ’য়ে পাশ্চাত্য দর্শনে বুঁদ হ’য়ে বাংলা তথা ভারতের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে নির্মমভাবে বলাৎকার ও পদদলিত ক’রে অশ্রদ্ধার চাষ করতে করতে ‘উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত কল্পনায়’ ভর ক’রে সমাজতন্ত্র আর সাম্যবাদের সৌধ গড়বে বলে! তারপর কিছুদিন পর মুখ থুবড়ে ব্যঞ্জনবর্ণের ‘দ’ হ’য়ে পড়ে থাকছে সমাজের এক কোণায় আস্তাকুড়ের জঙ্গালের মত! তখন কেউ এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছে না, ‘এসো সমাজের মূল স্রোতে আবার ফিরে এসে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে মূলধন ক’রে মাথা উঁচু ক’রে দাঁড়াও’। সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ দর্শন আজ মুড়ি মুড়কির মত সস্তা হ’য়ে গেছে। শরীরে, মনে, আত্মায় আপাদমস্তক সম্পুর্ণ ভাঙাচোরা মানুষের হাতের খেলনা হ’য়ে গেছে আজ সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ দর্শন! সবাই আজ সমাজতন্ত্রের পূজারী! যার নিজের জীবনের কোন দিশা নেই, নেই কোন শৃঙ্খলা; অহংকার, অমান্যতা, অজ্ঞানতা, নিন্দা, নীচতা, রাগ, ঘৃণা, ঈর্ষা ইত্যাদি যার জীবনের মূল মন্ত্র তার কাছ থেকে নিতে হবে সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের পাঠ!? সুরার সুরে উন্মত্তের কাছে জেনে নিতে জীবনের দিশা, নিতে হবে মনুষ্যত্ব, শৃঙ্খলা ও ‘সমাজ কো বদল ডালো’ র পাঠ! তরুণ সমাজ, যুব সমাজ নিজের জীবনকে বাজি রেখে দেশকে শাসন করার সমস্ত ক্ষমতা তুলে দেবে তার হাতে! মানবজাতির ভবিষ্যৎ এবং সমাজ বা দেশকে গঠন বা বিকাশের পথে নিয়ে যাবার চাবিকাঠি তুলে দেবে এইসব আপাদমস্তক ভাঙাচোরা মানুষের হাতে নিজের জীবন, নিজের ভবিষ্যত, নিজের পরিবারকে চিতায় তুলে দিয়ে!? জানি না আমার লেখার কট্টর সমালোচক ৩৪বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বামপন্থীদের ক্ষমতায় আসার আগের লড়াইয়ের দিনগুলি দেখেছেন কিনা বা বিন্দুমাত্র জানেন কিনা কিম্বা ৩৪বছর ধরে রাজ্য শাসন করার সুযোগ পাওয়ার ফয়দা সাম্যবাদীরা কিভাবে ও কাদের জন্য কাজে লাগিয়েছেন, সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ কতটুকু রাজ্যের এই খেতে না পাওয়া একটা অংশের মানুষদের জীবনে আলো ফেলেছে তা’ সংশ্লেষন ও বিশ্লেষন দৃষ্টি দিয়ে বিচার করেছেন কিনা?
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment