কোরান হনুমান মূর্তির পায়ের কাছে ছিল। কে রেখেছিল? জানা নেই। হিন্দু রেখেছিল? জানা নেই। মুসুলমান রেখেছিল? জানা নেই। তাহ'লে কে রেখেছিল? উত্তরঃ কিছু দুষ্কৃতিকারী। কেন রেখেছিল? উত্তরঃ ঘটে যাওয়া নির্ম্মম শোচনীয় করুণ ঘটনাবলী ঘটার জন্য রেখেছিল। গীতা কে পোড়ালো? মুসলমান? হিন্দু? উত্তরঃ কিছু দুষ্কৃতিকারী। তাহ'লে কোরান মূর্তির পায়ের কাছে কে বা কারা রেখেছিল? এরা কি মুসলমান? এরা না মুসলমান, না হিন্দু, না খ্রিষ্টান, না বৌদ্ধ, না কোনও ধর্মাবলম্বী। এরা দুষ্কৃতিকারী। এরা নরাধম। দুষ্কৃতিকারীদের কোনও জাত বা পরিচয় নেই। কোনও ধর্ম বা কোনও সম্প্রদায়ের পরিচয়ে তাদের পরিচয় নয়। তাদের একটাই পরিচয় তারা দুষ্কৃতিকারী। এদের বিরুদ্ধে কেন কোনও কঠিন, কড়া, নির্ম্মম পদক্ষেপ নেওয়া হয় না? উত্তর কি? উত্তরঃ ধর্মকে রক্ষা করার জন্য, সভ্যতাকে, সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠাকে বজায় রাখার জন্য কঠোর ক্ষমাহীন পদক্ষেপ নেওয়ার মত নিরাশী নির্ম্মম সৎ কোনও ধর্মগুন্ডা প্রশাসক নেই। আর এই নরাধম দুষ্কৃতিকারীদের কার্যকলাপে তাহ'লে কেন সাধারণ 'মানুষ' পক্ষে বিপক্ষে প্রভাবিত হয়!? আর তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে তামাম সাধারণ মানুষের ওপর। কেন? কেন মুষ্ঠিমেয় দুষ্কৃতিকারীর জন্য সমগ্র সম্প্রদায় কলঙ্কিত হয়!? সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে ঘৃণার বাতাবরণ তৈরী হয়!? সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে দাঙ্গা বাধে!? এই মুষ্ঠিমেয় দুষ্কৃতিকারী বজ্জাত বেজাতের দল কি ক'রে এত শক্তিশালী হয়!? সব সম্প্রদায়ে এরা তো সংখ্যালঘু!? নাকি!? তাহ'লে এদের এত শক্তি, এত সাহস, এত পরাক্রম কি ক'রে সম্ভব!? প্রকাশ্যে এরা কি ক'রে সভ্যতা বিরোধী, ধর্ম বিরোধী, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিরোধী, ঈশ্বর ও ঈশ্বরের বিধান বিরোধী চড়া উঁচু গলায় মৃত্যু উপত্যকা বানাবার আওয়াজ তোলে!? কে বা কারা এদের মদতদাতা!? তাহ'লে ধরে কি নিতে হবে সংখ্যাগুরুরাই এদের পিছনে আত্মগোপন ক'রে থাকে!? আর প্রশাসন এই সংখ্যালঘুদের পৃষ্টপোষক!? তাহ'লে সব সম্প্রদায়ের আম আদমীর কোনও মূল্য নেই!? আম আদমী ভেড়ার পালের মত কিম্বা বলীর পাঁঠার মত!? পেছনে লাঠি উঁচিয়ে হ্যাট হ্যাট ক'রে যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যাবার মত!? কেন!? কেন!? কেন!?
কারণ, কোরাণ বা গীতা বা বাইবেল ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা তামাম সাধারণ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটা পবিত্র 'বই' মাত্র! বইয়ের মর্ম্মবাণী পালন করার জন্য নয়, নয় চরিত্রগত ক'রে তোলার! শুধু সাজিয়ে গুছিয়ে ধূপ ধুনো দিয়ে কুলুঙ্গির গহ্বরে রেখে দাও! ব্যাস! এর বাইরে আর কিছুই নয়। তাই আজ আমাদের, এই ধর্মভীরু ভাঙাচোরা মূর্খ মানুষ জাতের নির্ম্মম করুণ শোচনীয় অবস্থা।
এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সত্যানুসরণ গ্রন্থে বলা বাণী স্মরণ করা যেতে পারে। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "বই পড়ে বই হ'য়ে যেও না। তার essence (সার)-কে মজ্জাগত ক'রতে চেষ্টা কর। Pull the husk draw to the seed. (তুষটা ফেলে শস্যটা নিতে হয়)।"
এই একটা বাণীর মধ্যে ধর্মগ্রন্থ পায়ে রাখা, আগুনে পোড়ানো ইত্যাদির মানসিকতা বা প্রতিক্রিয়ার মূল অর্থ নিহিত আছে। আমরা কি হিন্দু, কি মুসলমান, কি খ্রিষ্টান ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষেরা পুরুষোত্তমদের ব'লে যাওয়া বাণী সম্বলিত এইসমস্ত গ্রন্থের মূল এসেন্সকে মজ্জাগত করেছি নাকি বই পড়ে বই হ'য়ে গেছি? আসলে গভীরভাবে ভেবে দেখলে দেখবো কেউ এইসব বই পড়েই দেখিনি!
আমার মা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সত্যানুসরণ' গ্রন্থ সম্পর্কে বলতেন, বইটা একবার পড়েই দ্যাখ না ভিতরে কি আছে। বাঘ আছে না ভাল্লুক আছে, হাতি আছে না ঘোড়া আছে কি আছে পড়েই দ্যাখ না একবার!
আমরা পড়িইনি। আর পড়লেও মানে বুঝিনি। মানে বুঝলেও পালন করিনি, করিনি চরিত্রগত। শুধু আমিত্ব ফলানো আর অর্থ-মান-যশ কামানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
( লেখা ১৯শে অক্টোবর ২০২১)
No comments:
Post a Comment