Powered By Blogger

Wednesday, October 19, 2022

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা ও আমরা বাঙালি!

বাংলাদেশের কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদ উৎসবের (২০২১) পুজো প্যান্ডেলে দুর্গা মূর্তি ভাঙচুর ও মারদাঙ্গার মত দুঃখজনক ঘটনা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ভাঙ্গা, লুটপাট, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় একবার দু'বার নয় বারবার ধর্মের নামে মানুষে মানুষে নৃশংস হানাহানি কোনওদিনই বন্ধ হবার নয়। হবেও না। কারণ কোনও দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় কেউই চায় না হিন্দু-মুসলমানের এই নির্ম্মম বর্বরোচিত হিংস্র মারামারি বন্ধ হ'ক। যদি চাইতো তাহ'লে বলা হ'তো না এইসব ঘটনা যে দেশে ঘটছে সেইসব ঘটনা সেইদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার!! যদি চাইতো তাহ'লে ধর্মের নামে নারকীয় বর্বরোচিত সাম্প্রদায়িক হানাহানির মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষ ভাগ হ'তো না আর ভাগ হওয়ার ৭৫ বছর পরেও এবং বাংলাদেশের পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হওয়ার ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক নারকীয় অভিজ্ঞতার ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশের কুমিল্লায় দূর্গা মন্ডপ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর হিংস্র আক্রমণ হ'তো না। যদি চাইতো তাহ'লে এ বাংলা এবং ও বাংলায় সমাজ সচেতন হিন্দু-মুসলমান এলিট সম্প্রদায় প্রতিবাদে সরব হ'তো! চুপ ক'রে থাকতো না। যদি চাইতো তাহ'লে ও বাংলার হিন্দু ভাইবোনেরা যখন পুজোর সময় চক্রান্তের শিকার তখন এ বাংলার হিন্দু ভাইবোনেরা পুজোর আনন্দে মত্ত থাকতো না! যদি চাইতো তাহ'লে ঘটনা ঘটে যাবার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি চ্যানেল সোচ্চার হ'তো প্রতিবাদে; বহু পড়ে মিডিয়া চিরাচরিতভাবে লোকদেখানো সরব হ'তো না। খবর যে প্রশাসনের কাছে, মিডিয়ার কাছে ছিল না, থাকে না তা নয় ছিল, থাকে কিন্তু খবর চেপে রাখা হয়েছিল। মিডিয়া, প্রশাসন ও উদ্যোক্তারা সব ব্যস্ত ছিল 'এইসব ঘটনা সেই দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়' এবং 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায়। প্রশ্ন আসতেই পারে তখন কি করা যেত? কিছু করি আর না করি, তাতক্ষণিক নীরব প্রতিক্রিয়া দেওয়া যেতেই পারতো। আর এখন চলছে নেতানেত্রীদের পারস্পরিক নির্লজ্জ চাপান উতোর! সহজ সরলভাবে নৃশংস নারকীয় ঘটনার নিন্দা করতে পারে না কোনও দল, কোনও নেতানেত্রীবৃন্দ!! কেন!? কোথায় হাত বাঁধা থাকে!? কার কাছে এমন কি মাথা বিক্রি হ'য়ে যায় যে সামান্য প্রতিবাদটুকু করতে দশ বার ভাবতে হয়, ডাইনে বাঁয়ে তাকাতে হয়, অন্তরাত্মা কাঁপতে থাকে অলীক ভয়ে!?

যাই হ'ক, দেশ স্বাধীন হওয়া ও ভাগ হওয়ার আগে ও পরে সেই যে বিশ্বের তথাকথিত সভ্য উন্নত জাত ব'লে পরিচিত বৃটিশ নিজেদের কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখতে অন্তরস্থিত লুকোনো নোংরা বিষ উগলে দিয়েছিল ভারতবর্ষ ছেড়ে যাবার আগে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ডিভাইড এন্ড রুল (ভাগ করো ও শাসন করো) প্রয়োগের মাধ্যমে আর সেই উগ্র নীল বিষে সর্বাঙ্গ জর্জরিত একটা দেশ ভেঙ্গে তিন টুকরো হওয়া তিন দেশের মানুষ আজ পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে ক্ষতবিক্ষত হ'য়ে চলেছে দেশভাগের পর থেকে। সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে আর চলবেও আগামী দিনে। কোনদিনও এই ধর্মীয় হানাহানি বন্ধ হবে না। কারন, এই ভাগে নেতৃত্ব দিয়েছিল দেশের সেইসময়ের ভীষ্মরা! আর তাকে সযত্নে লালন পালন ও পোষণ দিয়ে চলেছে সেইসময়ের ভীষ্মদের উত্তরসূরি আজকের ভীষ্মেরা!!! এই প্রসঙ্গে দেশভাগের অশনিসংকেত আগাম বুঝতে পেরেই The greatest phenomenon of the world SriSri Thakur Anukulchandra বলেছিলেন, "Dividing compromise is the hatch of animosities." অর্থাৎ "ভাগ ক'রে সমাধান করার অর্থ তা দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো।" আজ তা প্রমাণিত।
সেদিন হিন্দু-মুসলিম ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল ক্ষমতা দখলের লোভে। তারপর আবার ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হ'য়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। এ ভাগ হওয়ারই কথা ছিল ন্যায্য দাবীতে। এ ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। তথাকথিত সভ্য ও উন্নত জাত বৃটিশ দ্বারা তৈরি তৎকালীন পাকিস্তান নামক একটা দেশের ভৌগলিক ম্যাপ যে অদ্ভুত বিকৃত হ'তে পারে তা গোটা বিশ্ব দেখেছে ও হজম করেছে। তাই সময় যত গড়িয়েছে ততই প্রকট হ'য়ে উঠেছে পশ্চিম আর পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থান ভিত্তিক ক্ষমতা দখল ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এবং জোর ক'রে উর্দু ভাষা চাপানো ও বাংলা ভাষা রক্ষার লড়াই। আর স্বাভাবিকভাবেই জন্ম হয়েছিল জোর ক'রে বৃটিশের মদতে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পুর্বের জুড়ে দেওয়া অংশ বাংলাদেশের।


ফলস্বরুপ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে সে সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার সংখ্যাটিকে ৩০,০০,০০০ হিসেবে অনুমান করে থাকে। বাংলাদেশে ধারণা করা হয় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি সৈন্য দ্বারা প্রায় ৪,০০,০০০ নারী ধর্ষিত হয় ও হত্যা করা হয়।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ পরিবারের বহুসংখ্যক মেয়েদের ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে পাকিস্তানি সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়ে যুদ্ধ চলাকালীন নিজেদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করে। আজও যা বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অসহায় নারীদের যন্ত্রণাদায়ক ভয়ার্ত করুণ কান্না কান পাতলে শোনা যায়! সেইসব ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক ভয়ার্ত দিনগুলির কথা আজ ভুলে গিয়েছে বাঙালি! যদি ঢাকা সেনানিবাসকে অসহায় অত্যাচারিতা ৪,০০,০০০ লক্ষ মায়েদের যন্ত্রণার স্মৃতি সৌধ ক'রে রাখতো বাংলাদেশ সরকার তাহ'লে হয়তো কিছুটা আজকের প্রজন্ম সেই স্মৃতি সৌধ দেখে চোখের জল ফেললেও ফেলতে পারতো। কিন্তু না! তা হয়নি!
সেই কান্না কি শুধু বাঙ্গালী হিন্দু নারীদের ছিল? প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ যে সেদিন প্রাণ হারিয়ে ছিল তারা কি শুধু হিন্দু বাঙালি ছিল? মুসলমানরা মুসলমানদের নির্ম্মম হত্যা করেনি সেদিন? মুসলমান নারীদের যৌনদাসী ক'রে বেঁধে রেখে নৃশংস পশুসুলভ যৌন উপভোগ ক'রে পরিশেষে হত্যা করেনি সেদিন ইসলাম ধর্ম্মের অনুসারী নৃশংস পাকিস্তানী মুসলমান সেনা? ভুলে গেছে সেদিনের নির্ম্মম অত্যাচারের কথা ওপারের মুসলমান বাঙালি ও মুসলমান বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজ!? সেদিন প্রায় ৩০০ বুদ্ধিজীবীকে নির্ম্মমভাবে হত্যা করা হয়নি!? কেন করা হয়েছিল!? করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে যাতে বাংলাদেশ মস্তিষ্ক শূন্য হ'য়ে যায়! তারই কি প্রমাণ আজকের বাংলাদেশ!? সত্যি কি বাংলাদেশ মস্তিষ্ক শূন্য হ'য়ে গেছে!?
সেদিন বাংলাদেশের মানুষের চরম ভয়ংকর দুঃখের দিনে জাতিসংঘের নীরবতা, অবহেলা ও নিস্পৃহতা ছিল অবাক ক'রে দেবার মত! সঙ্গে আমেরিকা, চিন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, শ্রীলঙ্কা, আরব বিশ্ব, ইরান ইত্যাদি দেশের সেদিন বাংলাদেশের নারকীয় বিপদের দিনে পাশে না থাকা ও সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করা বুঝিয়ে দিয়েছিল কোনও দেশের সরকারের চরিত্র কি! কিন্তু সেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা ক'রে, বিন্দুমাত্র আমল না দিয়ে এবং উপরিউক্ত সমস্ত দেশের পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থানকে তাচ্ছিল্যে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে সমস্তরকম ভাবে সাহায্যের হাত উজাড় ক'রে বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
আর আজও বাংলাদেশের নির্ম্মম ঘটনায় রাষ্ট্রসংঘ ও বিশ্বের উন্নত সমস্ত দেশ সেই ট্রাডিশন ব'য়ে চলেছে সযত্নে! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যায় রাষ্ট্রসংঘ নামক পক্ষপাত বিশিষ্ট নিষ্ক্রিয় পুতুল প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজন কি!?
ঠিক তেমনি আজকের বাংলাদেশে গত ১৩ই অক্টোবর'২১ হিন্দু বাঙালিদের উপর কি আক্রমণ হ'লো তাতে কারও কিছু আসে যায় না। যদি যেত তাহ'লে তার বাস্তব প্রয়োগ দেখা যেত। এমন ঘটনা বহু বছর ধরেই চলে আসছে মাঝে মধ্যে। সব দেশের সব সরকারের একটাই চিন্তা, মানসিকতা, 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা।' আর আমরা তাই দেখেছি ও দেখছিও। সেই যে মহাভারতের যুগে দেখেছিলাম, কৌরবের ভরা রাজসভায় দ্রৌপদীকে যখন বস্ত্র হরণ করা হচ্ছিল দুর্যোধনের নেতৃত্বে দুঃশাসনের দ্বারা তখন সেই ভরা রাজসভায় শৌর্য বীর্য ও জ্ঞানের অধিকারী ভীষ্মের মত দেশের মহা শক্তিশালী বীরেরা চুপ ক'রে মাথা নীচু ক'রে বসেছিল! আর আজও সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে! আজও বাংলাদেশের নির্ম্মম দুঃখজনক ঘটনায় দুই দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও এলিট সমাজের সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গেরা চুপ ক'রে আছে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা মনে ক'রে! বুদ্ধিজীবীদের কলমে আজ আর প্রতিবাদের ভাষা শব্দ হ'য়ে কবিতা, গান, গল্প,, প্রবন্ধ ইত্যাদিতে ঝরে পড়ছে না! তাদের গলায় প্রতিবাদ সুর হ'য়ে পড়ছে না আজ ঝ'রে!! ক'দিন আগেও দেখেছি দেশজুড়ে কত সরকার বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ, ভাংচুর, মৃত্যু! কিন্তু আজ সব চুপ! সবাই হিসেব নিকেশ করছে, অংক কষছে একটা ছোট্ট অথচ সাধারণ কথা ব'লতে 'এ অন্যায়, এ অমানবিক'। কারণ বাংলাদেশে হিন্দুধর্মের ওপর আঘাত, দুর্গা মূর্তি ও অন্যান্য মন্দির ভাঙার ঘটনা সেই দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার; এ দেশের নয়!!!!
আর সব যখন থেমে যাবে, শান্ত হ'য়ে যাবে অশান্তির নারকীয় ঝড় তখন সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর উঠবে দিকে দিকে অবস্থানুযায়ী প্রতিবাদের ঝড়!!!! আর ঠিক এক সপ্তাহ পর শুরু হয়েছে সেই নিয়ম ক'রে সর্বস্তরে অল্পবিস্তর প্রতিবাদ। আর দেরীতে হ'লেও প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদের প্রথম কথা, হিংসার বদলা যেন হিন্দুদের হিংসা দিয়ে না হয়!!!!! ওয়াও!!! সাবাস বুদ্ধিজীবী! সাবাস!! এদের কথায় কোথায় যেন উদারতার ভঙ্গির আড়ালে একচক্ষু হরিণের মত পক্ষপাতিত্বের উগ্র বিষ নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে ঝ'রে পড়ে!
যাই হ'ক, তাই বলি এই সাম্প্রদায়িক হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি, খুন, জখম, ধর্ষণ যদি বন্ধ না করা যায়, যদি হিন্দু-মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা সবাই মিলেমিশে নাই থাকতে পারি এক দেশে একসঙ্গে তাহ'লে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সরকার ও সমস্ত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ হিন্দু-মুসলমান ও অন্যান্য সংখালঘু সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মারামারি, রক্তপাত, হত্যা, লুটতরাজ, মৃত্যু ইত্যাদি বন্ধ হ'ক আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে ধর্ম অনুযায়ী যার যার ঘরে তার তার ফিরে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। মুসলমানেরা ফিরে যাক তাদের ইসলামিক দেশে। হিন্দুরা ফিরে আসুক তাদের হিন্দু ঘরে। খ্রিষ্টান ফিরে যাক তার ঘরে। এমনভাবে হিংসার বাতাবরণের মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হ'য়ে মরার মত পারস্পরিক সন্দেহ নিয়ে বেঁচে থাকার থেকে যে যার ঘরে নাহয় বাস করলো আর মরলে মরলো নিজেদের ধর্মের লোকের হাতে! তবুও তো প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত না মরেও সন্দেহ অবিশ্বাস নিয়ে মরার মত কেন্নো হ'য়ে বেঁচে থাকতে হবে না।
আর যদি তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে উদারতার ভঙ্গীতে এই প্রস্তাব ঘৃণ্য ব'লে মনে হয় তাহ'লে তিন দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ধর্মীয় আধ্যাত্মিক জগতের গুরুকুল সমাজ সচেতন বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, সমস্ত বিভাগের শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্কের অধিকারী মানব আপনারা সবাই মিলে চিরকালীন সমস্যার একটা পথ বের করুন। আর যদি না পারেন তাহ'লে আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে আসা একটা বোধের কথা বলতে পারি। গ্রহণ ও বর্জন ব্যক্তিগত।
হে ধর্মীয় ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ!
আপনারা যদি সত্যি সত্যিই অকপটভাবে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধর্ম মানেন ও পালন করেন, ঈশ্বর বিশ্বাস করেন ও ঈশ্বরের জীবন্ত উপস্থিতি বিশ্বাস করেন অর্থাৎ বিশ্বাস করেন যে, তিনি মানুষ রূপে মানুষের মাঝে মানুষের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য এই পৃথিবীর বুকে নেবে আসেন এবং আসেন বারেবারে তাহ'লে তাঁর নেবে আসার জীবন্ত রূপকে কপটতা আর ভন্ডামি ত্যাগ ক'রে স্বীকার করুন, ধর্মের অন্তর্নিহিত অর্থকে মানুন। জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে বেঈমানি, নেমকহারামি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। জীবন্ত ঈশ্বর কোনও সম্প্রদায়ের একক পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। সাধারণ মানুষ, ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের সঙ্গে জীবন্ত ঈশ্বর বিশ্বাসী আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ও উপলব্ধিবান মানুষের সঙ্গে ফারাক আছে।
তাই জীবন্ত ঈশ্বর বিশ্বাসী আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন ও উপলব্ধিবান ঈশ্বরকোটি পুরুষ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ঈশ্বর বারবার নেবে এসেছেন মানুষের মাঝে মানুষ রূপে কিন্তু মানুষ সেই সেই জীবন্ত ঈশ্বরের অনুগামীরা সেই সেই জীবন্ত ঈশ্বরকে নিজেদের সম্প্রদায়ের কিম্বা অনুগামীদের একক সম্পত্তি ব'লে মনে করেছেন এবং সেইভাবে তাঁকে প্রচার করেছেন। কক্ষনো তারা বলেননি যে ঈশ্বর যুগে যুগে মানুষ রূপে এসেছেন সমস্ত মানুষের জন্য এবং এসে পরিস্কার ক'রে তাঁর স্বরুপ উদ্ঘাটিত ক'রে বলেছেন, যতবার প্রয়োজন হবে ততবারই তিনি যুগে যুগে আসবেন এমনকি একযুগেও তিনি প্রয়োজনভিত্তিক বারবার আসবেন, আর আসবেন তাঁর সৃষ্ট বিশ্বের ৮০০ কোটি সন্তানের জন্য এবং বহুবার এসেছেনও। কিন্তু আপনারা তাঁর অনুগামীরা তা মানেননি বা মানতে চাননি। ফলে জীবন্ত ঈশ্বরের আসাকে কেন্দ্র ক'রে বারেবারে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ধর্মের। এমনকি তাঁর এক একটা রূপকে কেন্দ্র ক'রে বিভিন্ন দল, উপদলের সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই সেই জীবন্ত ঈশ্বরকে নিয়ে তৈরী দল, উপদলের মধ্যে হয়েছে মর্মান্তিক সংঘাত! যেমন হয়েছে তাঁর বারেবারে আসা রূপকে নিয়ে বিভিন্ন রূপের অনুগামীদের মধ্যে ধর্মীয় নারকীয় বীভৎস সংহার! যেমনটা আমরা দেখতে পাই হিন্দু-মুসলমান, মুসলমান-খ্রিষ্টান, খ্রিষ্টান-হিন্দু ইত্যাদি ইত্যাদি সংঘাত ও সংহার। আজ যদি আমরা প্রতিটি সম্প্রদায় নিজ নিজ সম্প্রদায়কে অক্ষুন্ন রেখে নিজ নিজ ধর্ম মতকে পালন ক'রে জীবন্ত ঈশ্বরের রূপ শ্রীশ্রীরামচন্দ্রকে মাথায় নিয়ে শ্রীশ্রীকৃষ্ণকে গ্রহণ করতাম, শ্রীশ্রীকৃষ্ণকে মাথায় নিয়ে শ্রীশ্রীবুদ্ধকে জীবনে গ্রহণ করতাম আর এমনিভাবে তাঁর নব নবরূপ যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণকে ও বর্তমান সর্বশেষ রূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জীবনে গ্রহণ ক'রে তাঁকে মাথায় ব'য়ে নিয়ে তাঁর যুগোপযোগী নির্দেশ মত চলতাম তাহ'লে আজ তাঁর সৃষ্ট এই স্বর্গভুমিতে এমন ভয়ংকর নরক কুন্ড রচনা হ'তো না। আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ এমন ভয়ংকর হিংস্র বীভৎস কুটিল জীবে পরিণত হ'তাম না।
আমরা হিন্দুরা যারা পুরুষোত্তম প্রভু রামকে মানি তারা পুরুষোত্তম প্রভু কৃষ্ণকে মানলেও পুরুষোত্তম প্রভু বুদ্ধকে মানি না, আবার পুরুষোত্তম প্রভু বুদ্ধকে মানলেও পুরুষোত্তম প্রভু যীশু ও পুরুষোত্তম প্রভু মহম্মদকে মানি না ঠিক এমনিভাবেই পুরুষোত্তম প্রভু রামকৃষ্ণকে মানলেও রামকৃষ্ণের মধ্যে মহাপ্রভুকে উপলব্ধি করতে পারি না। একই কথা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ক্ষেত্রেও। রামকৃষ্ণকে মানলেও তিনিই যে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তা মানি না। এরকম গোঁড়া একগুঁয়ে অবিশ্বাসী মনোভাব জীবন্ত ঈশ্বরের প্রায় সব অনুগামীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাঁরা যে একজনই বারবার নতুন রূপে যুগে যুগে যুগের প্রয়োজনে যুগ অনুযায়ী আমাদের বাঁচাতে, পথ দেখাতে আসেন তা আমরা ধান্ধাবাজ ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানি না! সমস্ত সম্প্রদায়ের ধর্মব্যবসায়ীরা জীবন্ত ঈশ্বরকে তাঁদের আয়ের উপকরণ বানিয়ে নিয়েছে আম আদমীর ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে অজ্ঞানতা, দুর্বলতা ও ভীরুতাকে মূলধন ক'রে।
আসুন, যদি নিজেদের রক্ষা করতে চাই, বাঁচাতে চাই, মনুষত্বের ভিতকে নষ্ট ক'রে সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে না চাই তাহ'লে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ পূর্ববর্তী জীবন্ত ঈশ্বর রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশূ, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ পুরুষোত্তমকে মাথায় নিয়ে পরবর্তী বর্তমান সর্বশেষ জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জীবনে গ্রহণ করি ও কোথায় বিশ্বের ৮০০ কোটি মনুষ্য জীবনের সামগ্রিক জটিল সমস্যার সমাধান সে সম্পর্কে তিনি তাঁর হাজার হাজার বাণীর মধ্যে যা যা ব'লে গেছেন তাঁর সেই ব'লে যাওয়া নির্দেশ গুলি শুনি, জানি, পড়ি ও পালন করি। পরমপিতার সংস্কার ছাড়া বাকী সব বন্ধনকে ছিন্ন ক'রে তাঁর আলোর দিকে ছুটে চলি।
আর যদি ধর্ম জগতের, আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ হ'য়েও তা না মানি, তাঁর বারবার আসাকে অস্বীকার ও অমান্য করি এবং তাঁর বিভিন্ন রূপের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করি, একমেবাদ্বিতিয়ম জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তমের নির্দেশ ও নিদেশ অস্বীকার করি, জীবন্ত ঈশ্বর মানুষের মাঝে মানুষ হ'য়ে নেবে আসা সত্ত্বেও তাঁকে অস্বীকার ক'রে তার সঙ্গে বেঈমানি নেমকহারামী ক'রে নিজে গুরুর আসন অলংকৃত ক'রে রাখি তাহ'লে ধ্বংস অনিবার্য এবং সেই ভয়ংকর ঘন অন্ধকার পূর্ণ দুর্যোগের দিন ক্রমশঃ আগত এবং তার অশনি সঙ্কেত আমরা প্রতিদিনই টের পাচ্ছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের তা সে হিন্দু , মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ যে সম্পদায়ের প্রজন্ম হ'ক না কেন জেনেশুনে বিষ পান করার মত আমরা জেনেশুনে তাদের জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর কবর খুঁড়ছি।
আর যদি তাই হয় তাহ'লে তাই স্বাগতম!
No photo description available.
( লেখা ১৯শে অক্টোবর' ২০২১)

No comments:

Post a Comment