শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যে জীবন্ত ঈশ্বর তা প্রমাণ করতে শাস্ত্রের দ্বারস্থ হ'তে হবে কেন? তাঁর প্রশান্ত মহাসাগরের মত বিশাল অভূতপূর্ব সাহিত্য ভান্ডার কি যথেষ্ট নয় তিনি কে? শাস্ত্র অধ্যয়ন করার চেয়ে তাঁর বিশাল সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করলে কি প্রকৃত শিষ্য হওয়া যায় না? প্রায় সময়ই প্রায় সবাইকে দেখি সংস্কৃত শ্লোক আউড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের ঠাকুরত্ব বা ঈশ্বরত্ব তুলে ধরে তাঁদের বক্তৃতায়, লেখায়। তার মানে দাঁড়ালো ঐ শ্লোক যদি স্বীকৃতি দেয় তিনি ঈশ্বর তবে তিনি ঈশ্বর নতুবা তাঁর ২৪ হাজার বাণী ও হাজারো বিষয়ের ওপর কথোপকথন সমৃদ্ধ যে বিশাল অভূতপূর্ব ব্যাখা পূর্বক সাহিত্য সেই সাহিত্যের, সেই আলোচনার, সেই ব্যাখ্যার কোনও মূল্য নেই। অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বরের মানব জীবনের জন্য দীর্ঘ ৮০বছরের অভূতপূর্ব রহস্যময় জীবনের অবদানের কোনও মূল্য নেই। ইদানীং প্রায় সবাইকে দেখি তাঁদের বক্তৃতায়, লেখায় বেদ, পুরাণ, মহাভারত ইত্যাদি থেকে শ্লোক উদ্ধৃত ক'রে ঠাকুর বিরোধী সমালোচকদের কাছে, নিন্দুকদের কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ঈশ্বর, ভগবান। তিনি ঈশ্বর কি ঈশ্বর নন তার প্রমাণের কি দরকার? যারা বিকৃত প্রশ্ন ক'রে ক'রে ছড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুক জুড়ে তাদের বালখিল্য অসাড় প্রশ্ন, তার উত্তরে শাস্ত্রের শ্লোক, মহাভারত গ্রন্থের কোন খন্ডে কি বলা আছে, কোন মনিষী কি বলেছেন সেসব তুলে ধ'রে প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা চালাবার কোনও দরকার নেই। প্রশ্নের স্ট্যান্ডার্ড দেখে বোঝা যায় তারা আই কিউ লেবেলের কোন স্তরে বিচরণ করে। তাই বালখিল্য প্রশ্নকারীদের প্রশ্নের ও বটতলার ইউটিউবারের উত্তর দেওয়ার অর্থ নিজেকে ওদের লেবেলে নাবিয়ে আনা ও শ্রীশ্রীঠাকুরকে অপমান করা। আর যদি প্রশ্নের পিছনে যুক্তি থাকে তাহ'লে নিশ্চয়ই উত্তর দিন। আর, তিনি ঈশ্বর কিনা তা প্রমাণ দিতে হবে তা ঠাকু্র তো নিজেই চাননি। তার চেয়ে তিনি যা যা ব'লে গেছেন সেই বলে যাওয়া কথাগুলির ওপর অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা হ'ক, চর্চা হ'ক, গবেষণা হ'ক, তলিয়ে দেখা হ'ক করার বা আচরণের ভিতর দিয়ে, এইটাই তো ছিল তাঁর চাওয়া, তাই নয় কি? তিনি যা বলে গেলেন সেই বলে যাওয়া কথাগুলিকে যখন আমি জানলাম তখন সেই জানাগুলিকে নিয়ে
Exmine ও experiment-এর মধ্যে দিয়ে যাওয়া হ'ক, তারপর যে ফল বেরিয়ে আসবে সেটাই হবে আমার অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি, আর তাই-ই জ্ঞান। আর সেই জ্ঞানের ওপর দাঁড়িয়েই তো দুনিয়াকে রুল করবো, তাই নয় কি? জ্ঞানই তো শক্তি। জ্ঞানই তো সেই ডানা যার সাহায্যে আমি স্বর্গ ব'লে যদি কিছু থেকে থাকে সেখানে পৌঁছে যাবো এবং স্বর্গ ব'লে ও রামরাজ্য বলে যদি কিছু থাকে বা ছিল সেই স্বর্গে যাবার জন্য, সেই রামরাজ্য পুনরায় গড়ে তোলার জন্য তার প্রাণপাত করবো। তাই নয়কি? ঈশ্বরকে একমাত্র সর্ব্বজ্ঞ বলে। আর বিশ্বের কোনও পন্ডিত বা মহাপন্ডিতকে বলে না। তাঁরা যে কোনও একটা দিককে পরিপূরণ করতে পারে কিন্তু সবটা পারে না। জীবন্ত ঈশ্বরকে অন্তর্যামী বলা হয়, কিন্তু অন্তর্যামী আখ্যা তাঁর মহিমাকে, তাঁর বিশালত্বকে খাটো করে, ছোটো ক'রে দেখা হয়। অন্তর্যামী একটু চেষ্টা করলেই যে কেউ হ'তে পারে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। মায়েরা তাঁদের সন্তানের ক্ষেত্রে স্বভাবগত ভাবেই অন্তর্যামী। কারণ সে ১০মাস তার শরীরের মধ্যেই তাকে লালনপালন করেছে তারপর জন্মের পর নিজের হাতে তাকে প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ ক'রে ক'রে বড় ক'রে তুলেছে দীর্ঘ কষ্টকর পথ পাড়ি দিয়ে। তাই সেই মা স্বভাবগতভাবেই স্বভাবসিদ্ধ অন্তর্যামী। এরকম যে কেউ একটু চেষ্টা করলেই যে কোনও বিষয়ে অব্জার্ভেশনের মধ্যে দিয়ে অন্তর্যামী হ'তে পারে। কিন্তু ইচ্ছে করলেও, শত চেষ্টা করলেও, হাজারবার পন্ডিত মহাপন্ডিত হ'য়ে জন্মালেও তাঁরা সর্ব্বজ্ঞ হ'তে পারবে না। ঈশ্বর অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বর এক ও একমাত্র সর্ব্বজ্ঞ, এ ছাড়া আর কেউ সর্ব্বজ্ঞ নয়। এইযে সর্ব্বজ্ঞত্ব বীজের অধিকারী যিনি তাঁকে Fullfiller the best অর্থাৎ সর্ব্বোত্তম পরিপূরণকারী আর, অন্তর্যামীদের, মহাত্মাদের Fullfiller the great অর্থাৎ মহাপরিপূরণকারী বলা হয়। তাই যিনি ঈশ্বর, সর্ব্বজ্ঞ, যিনি পরমাত্মা তাঁর বিচার করবেন, তাঁর স্বীকৃতি দেবেন যিনি অন্তর্যামী, মহাত্মা? যিনি Fullfiller the great তিনি বিচার করবেন Fullfiller the best-এর!? সন্তান বিচার করবেন পিতার? যারা জীবাত্মা, যারা অশ্লীল, অশ্রাব্য ভাষায় কটু কথা, নোংরা কথা বলছে তারা বিচার করবে পুরুষোত্তম পরমপিতার? পিতার পিতৃত্ব যেমন পিতার পরিচয় ঠিক তেমনি ঠাকুরের ঠাকুরত্ব বা ঈশ্বরের ঈশ্বরত্ব ঠাকুরের বা ঈশ্বরের পরিচয়। যেমন শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের সমগ্র জীবনটাই তাঁর বাণী। শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর এরা সবাই হলেন জীবন্ত চলমান শাস্ত্র। তাঁরা জীবন্ত ঈশ্বর ও জীবন্ত বেদ। এই বিষয়টা বুঝতে হ'লে Examine ও Experiment-এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে মানুষকে।
Exmine ও experiment-এর মধ্যে তফাৎ কি?"examine বলতে বোঝায় কোনো কিছু যেমন আছে বা সেটা নিজের ইচ্ছামত পরিবর্তিত হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা। experiment বলতে বোঝায় কিছু পরিবর্তন করা, (সাধারণত একটি নির্দিষ্ট উপায়ে) এবং সেই পরিবর্তনগুলির প্রভাব পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা।" শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনতে হ'লে, বুঝতে হ'লে, জানতে হ'লে এরকমভাবে সৎসঙ্গীদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে নলেজ অর্থাৎ জ্ঞান করায়ত্ত হবে। ঠাকুর কে তা চিনতে, বুঝতে ও জানতে পারবে।
শ্রীশ্রীঠাকুর Knowledgeকে ভেঙে Know আর Ledge ক'রে বললেন Know মানে জানা আর Ledge মানে To draw near অর্থাৎ নিকটে আনা। অর্থাৎ যেটা জানলাম অর্থাৎ একটা Clue পেলাম সেটাকে examine ক'রে ক'রে experiment-এর মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে অর্থাৎ বাস্তবভাবে গবেষণাগারে পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে, গবেষণা করতে করতে যে অজানাটা আমার নিকটে এলো অর্থাৎ আমার কাছে জানাটা সম্পূর্ণরূপে সুক্ষ ভাবে ( Ins and outs) ধরা দিল, উন্মুক্ত হ'লো ফলে একটা অভিজ্ঞতা হ'লো, হ'লো বিরাট উপলব্ধি আর সেই যে বিরাট অভিজ্ঞতা, বিরাট উপলব্ধি হ'লো সেইটাই হ'লো সেই বিষয়ে (সম্পূর্ণ ) জ্ঞান অর্থাৎ
( Complete) Knowledge. Knowledge itself complete. তাই আলাদা ক'রে কমপ্লিট শব্দ ব্যবহার করতে হয় না, তবুও আমরা করি অভ্যাসবশত।
ঈশ্বর কলঙ্কিত হন তখনি যখন শাস্ত্র দিয়ে তাঁকে ও তাঁর কথাকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়। ঈশ্বর তো প্রতিষ্ঠত হয়েই আছেন। কে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করবে? জীবন্ত ঈশ্বর তিনি নিজেই যে জীবন্ত বেদ, তিনিই যে জীবন্ত শাস্ত্র এ কথা ভুলে যায় মানুষ। আটবারের মধ্যে ৬ বারই এসেছেন তিনি ভারতে তথাপি তাঁর মুখের কথা ও তাঁর নিখুঁত জীবন চলনার পরিবর্তে তাঁর সৃষ্ট সন্তান দ্বারা রচিত শাস্ত্রজ্ঞান দিয়ে তাঁকে পরিমাপ করতে হবে, তাঁকে স্বীকৃতি দিতে হবে এর থেকে অপমান ও লজ্জার আর কিছু নেই সৃষ্টিকর্তার।
জ্ঞানী, পন্ডিত, মহাপন্ডিত, যোগী, ধ্যানী, মহাত্মা অনেকেই শ্রীশ্রীঠাকুরকে চিনেছিলেন, বুঝেছিলেন কিন্তু পরমাত্মা ব'লে গ্রহণ করেননি তাঁকে। এর জন্য অজস্র উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। একটা দু'টো উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হ'য়ে যাবে ব্যাপারটা। যেমন বিদ্যাসগরের কাছে স্বয়ং জীবন্ত ঈশ্বর গিয়েছিলেন তাঁকে দেখতে, কথা বলতে। কিন্তু বিদ্যাসাগর অতি সাধারোন রামকৃষ্ণের গভীর জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হ'য়ে গিয়েছিলেন কিন্তু তাঁকে জীবনে গ্রহণ করেননি। আবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এক জীবনে দু'দুবার জীবন্ত ঈশ্বরের উপস্থিতির সন্ধান পেয়েছিলেন কিন্তু তাঁকে গ্রহণ করতে পারেননি। একজন শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ, অনুজন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। আর, যারা শ্রীশ্রীঠাকু্রের সংস্পর্শে এসেছেন, সঙ্গ করেছেন, তাঁর সম্পর্কে বড় বড় জ্ঞান গম্ভীর ভাষণ দিয়েছেন, উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন যা ঠাকুর থাকাকালীন হয়েছে এবং এখনও চলছে কিন্তু জীবনে তাঁকে গ্রহণে অসমর্থ হয়েছে এমন বহু বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন। তাদের পোঁছে কে? তাঁদের জ্ঞান যে অসাড় দিনের শেষে সেটা প্রমাণ হয়।
আমি তাঁর এমনই শিষ্য তাঁকে বোঝার জন্য আমাকে শাস্ত্রের দ্বারস্থ হ'তে হবে। কেন? মহাভারতের কোন শ্লোকে ভীষ্ম কি বলেছে সেই রেফারেন্স দিয়ে আমাকে খুঁজতে হবে তিনি পুরুষোত্তম কিনা, তিনি জীবন্ত ঈশ্বর কিনা? কেন? শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণকে কোন বেদ, কোন শাস্ত্র প্রতিষ্ঠা দিয়েছে? সাধারণ মানুষের কথা ছেড়ে দিলাম তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা অহংকারী বেদজ্ঞ, শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিতরা তাঁকে অপদস্ত করেছেন। তিনি যতবার এসেছেন ততবার তিনি লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েছেন, তিনি যতবার এসেছেন তাঁকে হত্যা করার জন্য ততবার চেষ্টা করা হয়েছে। কোন শাস্ত্র গ্রন্থ, কোন শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত তাঁকে রক্ষা করার গার্ড ওয়াল হ'য়ে দাঁড়িয়েছিলেন?
আর, একটা কথা আছে ব্যতিক্রম। আ্রর ব্যতিক্রম ব্যতিক্রম। বড় বড় শাস্ত্রজ্ঞ, বেদজ্ঞ ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজের মাথারা, তথাকথিত শিক্ষিতরা তাঁকে সমস্ত যুগেই তাঁদের পুঁথিগত বিদ্যার ওপর ভর ক'রে বই পড়ে মোটা মোটা বই হ'য়ে তাঁকে পরীক্ষা করতে চেয়েছে। তাঁদের জ্ঞানের কাছে পরাস্ত হ'য়েও শুধুমাত্র সূক্ষ্ম ও অনমনীয় ইগো বোধের কারণে তারা তাঁকে গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি যতবার এসেছেন ততবার কোনও তথাকথিত জ্ঞানী, পন্ডিত, বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ কোনও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি তাঁর পরম ভক্ত হননি। তাঁর পরম ভক্ত হয়েছে সাধারণ, অত্যন্ত সাধারণ মানুষ। প্রহ্লাদ, হনূমান, অর্জুন, আনন্দ, মেরী ম্যাগডালিন, সেন্ট পল, ওমর, আবু বকর, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ এবং সর্বশেষ শ্রীশ্রীবড়দা কেউই সমাজের উচ্চপর্যায়ের প্রতিষ্ঠিত কোনও বিজ্ঞাপিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন না প্রথম দিকে। তাঁরা সবাই ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ পর্যায়ের মানুষ। কেউই তাঁরা সমাজের বিখ্যাত ব্যাক্তি ছিলেন না। শুধুমাত্র প্রভুর প্রতি অস্খলিত, অচ্যুত, অটুট ও প্রশ্নাতীত ভক্তি, ভালোবাসা, প্রেম, নিষ্ঠা দিয়ে, নিজের জীবন সম্পূর্ণ রূপে প্রভুর পায়ে উৎসর্গ ক'রে দিয়ে প্রভুর স্বপ্ন, প্রভুর ইচ্ছাকে একমাত্র তাঁদের স্বপ্ন, তাঁদের ইচ্ছা ক'রে নিয়ে সারাজীবন নিজের জীবনের সমস্ত ব্যক্তিগত স্বপ্ন, ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে পাশে সরিয়ে রেখে জীবন কাটিয়ে দিয়েছিল। তাই আজ আজ যুগে যুগে পৃথিবীর বুকে কোটি কোটি মানুষের বুকে দাগ তাঁরা এঁকে দিয়েছেন। তাঁরাও হ'য়ে গেছেন প্রভুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে ভগবান। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে সম্মান, শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা, প্রেমের দাগ এঁকে দিয়েগেছেন। তাই মানুষ আজও কলি যুগের শেষে এসেও প্রহ্লাদ, হনূমান, অর্জুন, আনন্দ, উপগুপ্ত, মেরী ম্যাগডালিন, ওমর, আবু বকর, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ ও শ্রীশ্রীবড়দা ভোলেনি। তাঁরা প্রভুর পাশে তাঁদের স্থান ক'রে নিয়েছেন।
আর, আমি কোন গ্রন্থ পড়বো? কোন গ্রন্থকে আগে প্রাধান্য দেব? ধর্ম জগতে যদি আমি বিচরণ করি, ঈশ্বর আরাধনার সঙ্গে যদি নিজেকে যুক্ত রাখি তাহ'লে আমি কোন গ্রন্থ আগে পড়বো? ঈশ্বরের গ্রন্থ আগে পড়বো নাকি তাঁর ভক্তদের গ্রন্থ আগে পড়বো? যখন ঈশ্বর মানুষ রূপে এসে নিজের মুখে বাঁচা-বাড়ার কথা ব'লে গেলেন সেগুলি পড়বো নাকি পুরাণ, বেদ, উপনিষদ পড়বো? শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের সমগ্র জীবনটাই উৎকৃষ্ট বাণী। তাঁর সমগ্র জীবনকে অনুসরণ ক'রে চললে কোন শাস্ত্র গ্রন্থই পড়ার দরকার পড়ে না। তারপর শ্রীশ্রীকৃষ্ণের গীতা, শ্রীশ্রীবুদ্ধের ত্রিপিটক, শ্রীশ্রীযীশুর বাইবেল, শ্রীশ্রীমহম্মদের কোরান,শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর চৈতন্য চরিতামৃত, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃত এবং সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শুধুমাত্র সত্যানুসরণ গ্রন্থ (২৪হাজার বাণী ও কথোপকথন সমৃদ্ধ সমগ্র গ্রন্থের কথা বাদ দিলাম,) পাঠ করলেই পরম সত্যকে জানা যায় এবং অনুসরণ ক'রে চললে জীবন শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত পরম সার্থকতায় ভরে যায়। সাধারণ মানুষের জন্য আর কিছু লাগে না। আর যারা উচ্চপর্যায়ের শিক্ষাবিদ, গবেষক তাঁদের কথা বাদ দিলাম তাঁরা তাঁদের মতো পড়ুক, জানুক, বুঝুক তামাম শাস্ত্র গ্রন্থ কিন্তু জীবন্ত ঈশ্বরকে পরীক্ষা করার নামে সাধারণ আম ভক্তকূলকে যেন বিভ্রান্ত না করেন। তাই বুঝি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র গান গেয়ে বললেন,
আমি বেদ বিধি ছাড়ি বেদনা হারি
হরিনাম সদা গাহিরে
হয় হোক মম লক্ষ জনম
তাহে কোনো ক্ষতি নাই রে।।
ঘনাম্বু নিন্দিত শান্ত সুনীল
মূর্তি যেন ভুলি নাকো তিল
নিত্য নৃত্য করে যেন মোর
চিত্ত যমুনা পুলিনে রে।।
সন্ধা আমার বন্ধা হোক
তাহে নাহি কোনো শোক
তর্পণ জল অর্পণ বিনা
রোধুক পিতৃ লোক
ঘোষুক জগতে নিন্দা খ্যাতি
তোষুক রোধুক স্বজন জ্ঞাতি
আমি কিছুতেই বিমল ভাতি
ভুলিতে নারিব ভাইরে।।
ক্ষুব্দ পরান চাহে গোবিন্দ নামামৃতে সদা ভাসিতে
মুগ্ধ মানসে আত্ম ভুলিয়ে হরি হরি বলে নাচিতে হরি বোল_ _ _
চাহে নাকো আর শৌর্য বীর্য
চাহে না পরান বিশাল রাজ্য
ধর্ম অর্থ কাম সকলি ত্যাজ্য
মোক্ষের মুখে ছাইরে।।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তিনি কি বলতে চাইলেন এখান থেকে পরিস্কার হ'য়ে যায়।
এখন প্রশ্ন হ'তে পারে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাহ'লে কে?
তিনি কি মুনি? ঋষি? সাধক? ধর্মগুরু? দীক্ষাগুরু? পন্ডিত? মহাত্মা? মহাপুরুষ? কবি? সাহিত্যিক? শিল্পী? গীতিকার? গায়ক? নাট্যকার? অভিনেতা? শিক্ষাবিদ? চিন্তাবিদ? গণিতজ্ঞ? শিক্ষক? ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ, ডাক্তার? বিজ্ঞানী? জ্যোতিষী? সমাজসেবী? সমাজ সংস্কারক? বিপ্লবী? নেতাজী? দেশপ্রেমী? মানবপ্রেমী? কি তিনি? কে তিনি?
মাঝে মাঝে ঠাকুরকেই জিজ্ঞেস করি কে তুমি ঠাকুর!?
তুমি মানুষ? তুমি দেবতা?? তুমি ঈশ্বর???
আমার প্রশ্নের উত্তরটা আমিই দিচ্ছি! আমার বোধ বুদ্ধি দিয়ে তাঁকে স্টাডি ক'রে যা বুঝেছি তাই আমি এখানে তুলে ধরছি। তা' কারও ভালো লাগতে পারে, নাও লাগতে পারে। তা'তে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। যারা শুনছেন তারা গ্রহণ করতে পারেন আবার বকোয়াস ব'লে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারেন। তবে সবচেয়ে বড় ডাস্টবিন কিন্তু আমাদের মন। ডাস্টবিনে ফেলার আগে মনের ডাস্টবিন পরিষ্কার ক'রে আমার কথাগুলিকে সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে বিচার ক'রে তারপর যদি মনে হয় ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন একজন মানুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ!
তিনি হ'লেন একজন বিস্ময়। বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়!
তিনি হ'লেন আদর্শ। আদর্শের আদর্শ সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ!
তিনি হ'লেন পুরুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ! উত্তম পুরুষ!! পুরুষোত্তম!!!
তিনি হ 'লেন তমসার পার অচ্ছেদ্যবর্ণ ইষ্টপ্রতীকে আবির্ভুত মহান পুরুষ!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন একজন নেতা। নেতার নেতা বিশ্বনেতা! ওয়ার্ল্ড লিডার!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন বিপ্লবী! হ্যাঁ বিপ্লবী! তিনি হ'লেন অমৃতবর্ষী বিপ্লবের দিশারী!
তিনি হ'লেন বাঁচা-বাড়ার অনুকূল ভাবধারায় সারা দেশ তথা বিশ্বকে ভাসিয়ে দেওয়ার পথিকৃৎ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন বিশ্বজুড়ে সমস্ত মত ও পথের সর্ব্বোত্তম পরিপুরণকারী!
তিনি হ'লেন একজন বৈদ্য। বৈদ্যের বৈদ্য পরম বৈদ্য!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীর বিজ্ঞানী পরম বিজ্ঞানী!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন একজন শিক্ষক, টিচার! ওয়ার্ল্ড টিচার!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন শেষের শুরু! যেখানে বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডার শেষ অর্থাৎ কাব্য, দর্শন, সাহিত্য, আইন, প্রকৌশলবিদ্যা, বিজ্ঞান ইত্যাদি শেষ সেখান থেকে শুরু তাঁর বলা!
তিনি হ'লেন কারণপুরুষ। সমস্ত কারণের কারণ পরমকারুণিক তিনি!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হলেন আত্মা। সমস্ত আত্মার আত্মা পরমাত্মা!
জীবাত্মা মহাত্মায় পরিণতি লাভ ক'রে অবশেষে যে পরমাত্মায় লীন হ'য়ে যায় সেই পরমাত্মা হলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!
তিনি হ'লেন সবার স্বামী। জীবনস্বামী! জীব জগৎ জীবন কারণ করুণাময় স্বামী!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন গুরু। গুরুর গুরু মহাগুরু! পরমগুরু! বিশ্বগুরু! জগতগুরু!
এই বিশ্বে যত ধর্মের যত দেবদেবী আছে সমস্ত দেবদেবীর আধার হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র! যেমন সূর্য আর সূর্যের কিরণ!
শ্রীশ্রীঠাকুর যদি হন সূর্য তেত্রিশ কোটি দেবদেবী হ'লো তাঁর কিরণ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-ই হ'লেন ব্রহ্মা! তিনিই হ'লেন বিষ্ণু! তিনিই জীবন্ত মহেশ্বর!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন বাইবেলে কথিত In the beginning there was sound, and sound was GOD!- এর সেই সাউন্ড! অর্থাৎ একই সঙ্গে শব্দ ও শব্দের প্রাণ হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সৃষ্টি-স্থিতি-লয় এই তিনের মূল মরকোচ!
তিনিই ভগবান! তিনিই ঈশ্বর!! তিনিই আল্লা!!! তিনিই গড!!!!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন স্বয়ং রক্তমাংসসংকুল জীবন্ত নারায়ণ!
তিনি অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-ই হ'লেন সেই ওঙ্কার ধ্বনি!
তিনি হ'লেন ওঙ্কার ধ্বনির প্রাণ যে রাধাস্বামী সেই রাধাস্বামী হ'লেন তিনি!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রই হলেন বিশ্বজুড়ে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগে আবির্ভুত মুনি, ঋষি, যোগী, ধ্যানী ও লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সাধক ও ভক্তকুলের আরাধ্য জীবন্ত ঈশ্বর রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ-এর যুগোপযোগী নবরূপে আবির্ভুত কলিযুগের শেষ অবতার অর্থাৎ স্বয়ং অবতারি পুরুষ!!!
তিনি হ'লেন ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তার মনুষ্য রূপে আট আটবার আবির্ভুত রূপের সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় পূর্ণ রূপ!
তিনি সর্বশক্তিমান! তিনি সর্বব্যাপী! সর্বভূতে বিরাজমান!
তিনি সর্বনিপুণ! তিনি সর্বজ্ঞ! সর্ববেত্তা! সর্ববিদ্যাবিশারদ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সমস্ত অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম অস্তিত্ব!
তিনি সমস্ত উৎসের উৎস পরম উৎস!
তিনি হ'লেন সমস্ত গন্তব্যের পরম গন্তব্য স্থল!
তিনিই হ'লেন ডিভাইন ডিক্টেশন-এর কলাকার!
শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই মুনি ঋষি যোগী ধ্যানী যখন ধ্যানস্থ অবস্থায় যে আকাশবাণী প্রাপ্ত হয়, সাড়া পায়, ঈপ্সিত বস্তু লাভ করে সেই আকাশবাণী, সেই সাড়া বা সেই ঈপ্সিত বস্তুর দানকারী ব্যক্তি!
তিনিই ওঙ্কার ধ্বনি! তিনিই ব্রহ্ম! পরম ব্রহ্ম! তিনিই কুল অর্থাৎ এই মহাকাশে যত লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে আমাদের যে ব্রহ্মান্ড সেই ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে আরও একটা ব্রহ্মান্ড, তার বাইরে আরও একটা, আরও একটা, আরও একটা এমনিভাবে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড সমূহ ( যা বিজ্ঞানীরা কল্পনা করেছেন মাত্র) নিয়ে অন্তহীন বিশাল যে ব্যাপ্তি, যে বিস্তৃতি, যে কুল সেই কুলের যিনি মালিক, যিনি সৃষ্টিকর্তা, যিনি----সেই যখন 'ছিল না'-র অস্তিত্ব ছিল, অর্থাৎ সেই যখন কোনও কিছুই ছিল না তখনও তিনি ছিলেন অর্থাৎ ছিল সেই অস্তিত্ব অর্থাৎ সাউন্ড বা শব্দ 'ওঙ্কার', শব্দের প্রাণ 'রাধাস্বামী' আর সেই তিনি অর্থাৎ 'রাধাস্বামী' হ'লেন রক্তমাংসসঙ্কুল জীবন্ত সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত কুলমালিক, পরব্রহ্ম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র!!!
তিনিই একমাত্র উপাস্য! তিনিই পূজ্য!
তিনিই এক ও একমাত্র আরাধ্য দেবতা! ঈশ্বর! আল্লা! গড বা যে যে নামেই তাঁকে ডাকুক না কেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই রহস্যময় অস্তিত্ব!!!!!!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন অখন্ডমন্ডলাকারে ব্রহ্মাণ্ডের পর ব্রহ্মান্ড জুড়ে যিনি পরিব্যাপ্ত তাঁর জীবন্ত রূপ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকা বিশ্বজুড়ে মানুষের বন্ধ চোখ জ্ঞানের কাঠি দিয়ে খুলে দেবার এক ও একমাত্র নিখুঁত মানুষ!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই চেতন পুরুষ যিনি স্বর্গ-মর্ত-পাতাল তিন লোক জুড়ে চেতনার নিদর্শন স্বরূপ পরিব্যাপ্ত!
শ্রীশ্রীঠাকুর ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা কোটি কোটি ব্রহ্মার উৎপত্তি স্থল! যেখান থেকে জন্ম নিয়েছে কোটি কোটি ব্রহ্মা ও ব্রহ্মান্ড!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই নারায়ণ আর নারায়ণ মানে হ'লো বিশাল বিস্তৃতি! অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই বিশাল বিস্তৃতি! আর নারায়ণের নাভিপদ্ম বা নাভিদেশ মানে সেই বিশাল বিস্তৃতির মধ্যবিন্দু বা কেন্দ্রবিন্দু! আর সেই মধ্য বা কেন্দ্রবিন্দুকে বিজ্ঞানে বলা হয় সেন্ট্রাল জোন! যেখান থেকে সব কিছুর সৃষ্টি! চরম পরম উৎস! শ্রীশ্রীঠাকুর হ'লেন সেই চরম পরম উৎস!!! সেই সেন্ট্রাল জোন। সেই চরম পরম উৎসের, সেই সেন্ট্রাল জোনের আধার!
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন সেই বাইবেলে কথিত রক্তমাংসসঙ্কুল 'ঈশ্বর পুত্র' হ'য়েও ঈশ্বর! সর্বশক্তিমান পরমকারুণিক সর্ব্বানুস্যুত ব্যাপ্ত প্রাক প্রথমবাক সর্ববস্বর্গ সর্ব্বহৃদয় প্রাণনপরিমল অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর! জীবন্ত রক্তমাংস সঙ্কুল নররূপী ঈশ্বর! সৃষ্টিকর্তা!!
সেই চরম পরম উৎস রক্তমাংসসঙ্কুল জীবন্ত ঈশ্বরকে জানাই আভুমি হৃদয় কম্পিত শত-লক্ষ-কোটিকোটি প্রণাম!
No comments:
Post a Comment