উপরের বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র ক'রে কেউ কেউ আমাকে বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বলছেন যার যার নিজের ভাবনা, বিশ্বাস আর যিসকি য্যায়সি সোচ ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি বলি, যিসকি য্যায়সি সোচ উসকি ঐসি করম, আউড় যিসকি য্যায়সি করনি উসকি ঐসি ভরনি।
এটা ঠিক, নিজের নিজের ভাবনাই ঠিক। যেমন একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে। একটা দেওয়ালে লেখা আছে " এখানে প্রস্রাব করিবেন না"। তো একজন এসে সেই লেখাটার 'না'- এর জায়গাটা মুছে দিল নিজের মত ক'রে। আর তারপর যেটা দাঁড়ালো তা হ'লো "এখানে প্রস্রাব করিবেন।" তারপর সে নিজে ওখানে প্রস্রাব তো করলোই তারপর থেকে সবাই পেচ্ছাপ করতে করতে সেই নিষিদ্ধ জায়গা অবশেষে প্রসিদ্ধ পেচ্ছাপখানায় পরিণত হ'য়ে গেল।
এছাড়া আমরা অফিস ও ফ্ল্যাট বাড়িতে সিড়ির ধাপে ধাপে দেওয়ালের কোনায় এবং রাস্তার ধারে বাড়ির বাউন্ডারি দেওয়ালের নীচে লাইন দিয়ে দূর্গা, কালী, শিব, বিষ্ণু, গণেশ, হনুমান ইত্যাদি যত হিন্দু দেবদেবীর ফটো আছে তা সিমেন্ট দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় যাতে কেউ সিড়ির দেওয়ালে কিম্বা বাউন্ডারি দেওয়ালে পেচ্ছাপ করতে না পারে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে যখন কেউ বা কোনও মাতাল সেখান দিয়ে যায় আর যাওয়ার সময় সুযোগ বুঝে ফাকা সিড়িতে বা রাস্তার ধারের দেওয়ালের জায়গায় পানের পিক ফেলে দিয়ে যায় কিম্বা পেচ্ছাপ করে তখন ব্যাপারটা কতটা ঈশ্বরের কাছে দুঃখজনক তা বোধের ঘরে ধরা পড়ে না। বোধের ঘর যদি মানুষের স্ট্রং হ'তো তাহ'লে ঠাকুর দেবতা নিয়ে তথাকথিত ভক্তরা ভক্তির বালখিল্য ফাজলামো করতো না। আর যদি রাতের অন্ধকারে বেহুশ হ'য়ে কোনো মাতাল পেচ্ছাপ করে সেই দেওয়ালে, সেই দেওয়ালে সিমেন্ট দিয়ে আটকে দেওয়া দেবদেবীর মূর্তির মুখের ওপর পেচ্ছাপ করে দেয় তাহ'লে এটা কার দোষ? যে পানের ফিক ফেললো বা পেচ্ছাপ করলো দেওয়ালে সাটানো দেবদেবীর মুখের ওপর তার বা তাদের নাকি যারা ওখানে ভক্তির বালখিল্য আতিশয্যে ছবিগুলো লাগিয়েছে তাদের? এক্ষেত্রে তাহ'লে কি বলবো? বলবো যার যার নিজের ভাবনা? ঠিক আছে আর ভাবনা অনুযায়ী কর্ম।
আবার কেউ কেউ (এর মধ্যে মায়েরাও আছে) যুক্তি সাজাতে গাছ সবজি ফল ইত্যাদির প্রসঙ্গ টেনে এনে নিজের বৃত্তি প্রবৃত্তির স্বার্থে রিপুর ফেভারে কথা বলে, টেনে আনে নানা বেলাইনি যুক্তি। বলে, তাহ'লে রক্তের বেলায় দোষ কি!? তাই রক্তের কথা নিয়ে বলা কথাতে বলতে পারি গাছেরও প্রাণ আছে এই সস্তা যুক্তিতে মায়ের পূজার নামে একটা নিরীহ প্রাণীকে হত্যা করতে যখন একজন মায়ের কোনও কষ্ট হয়না তখন কিছু বলার নেই। মাংস যদি খেতেই হয় এমনিই খাও না, মায়ের পুজোর অজুহাত দেওয়ার কি আছে? সারা মাস, সারা বছর মাছ, মাংস খাওয়ার যখন সুযোগ আছে তখন মায়ের পুজোর নামে পবিত্র দিনে প্রাণী হত্যা করার কোনো যুক্তি আছে কিনা সেটা ভেবে দেখার বিষয় ছিল। ভোগের বিলাসিতার জন্য পুজোর অজুহাতে আমার মাকে কলঙ্কিত করছো কেন? কেন জগজ্জননী মাকে রক্তপিপাসু রাক্ষসী বানাচ্ছো!? হাড়, মাংস, রক্তের বীভৎসতা আর গাছপালার দৃশ্য একই রকম ব্যাপার? সব্জী ফল মানুষের ভোগের জন্য ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন আর তা গাছের থেকে আপনা আপনিই তার অন্তরস্থ বৈধানিক অবস্থান অনুযায়ী ঝ'রে পড়ে। গাছ কাটলে গাছের বৃদ্ধি আছে। আর তা বৃদ্ধির জন্যই কাটার বিধান। কিন্তু জীবের বেলায় আলাদা বিধান। জীবকে কেটে ফেললে জীবের বৃদ্ধি আছে? জীবের মৃত্যু ঘটে। গাছ কাটা আর রক্তমাংসের জীবন্ত প্রাণীকে কাটা একইরকম মনের ওপরে প্রভাব পড়ে? বিশেষত শিশু মনে? মাংস খাও কেউ বারণ করেনি তোমার মনের মত ক'রে খাও, যত খুশি তত খাও, শরীর বিধান মেনে খাওয়া আর না খাওয়া তা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু তা অর্থাৎ জিভের এই উদগ্র লোভকে সৃষ্টিকর্তার পুজোর অজুহাতে বলী প্রথার নামে খাওয়া নয়। আর, মাংস কাটা হ'ক কিন্তু তা কাটা হ'ক লোকচক্ষুর আড়ালে ঘেরা জায়গায়, উন্মুক্ত স্থানে নয়।
তাই ভাবি কি সহজেই একজন মা ব'লে দিতে পারে " গাছপালা কাটলে রক্তে ক্ষতি কি"? ক্ষতি কিছুই নেই। এটাও সেই যার যার নিজের ভাবনা। বাঃ! কি সহজ সরলীকরণ!!!!!
বারবার প্রশ্ন উঠছে এক আর উত্তর আসছে বেলাইনে বিকৃত। ঐ দেওয়ালের "এখানে প্রস্রাব করিবেন না" লেখার "না" মুছে দেবার মত অবস্থা আর দেওয়ালে দেবদেবীর ফটো লাগিয়ে নিজের বাড়িকে নোংরা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা। দেবদেবীকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার মত নিম্ন মানসিকতা যদি ঈশ্বর আরাধনা হয় তাহ'লে সেই আরাধনাকারীদের বিচার স্বয়ং ঈশ্বরের উপরেই তুলে দিলাম।
ক্রমশঃ
( ২রা মে ২০২২)
No comments:
Post a Comment