Powered By Blogger

Friday, May 3, 2024

প্রবন্ধঃ বাংলা ও বাঙ্গালিঃ বাংলা পক্ষকে প্রবি।

বাংলা পক্ষর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়। ঘটি বাঙ্গাল বাঙালি নিয়ে তাঁর মিলেমিশে থাকার কথা ভালো লাগলো, ভালো লাগে আরও অন্যান্য বিষয়ে তাঁর বক্তব্য।
বাংলা পক্ষকে একজন বাঙালি হিসেবে কিছু মনের কথা তুলে ধরছি এই ভিডিওর মাধ্যমে।

বাংলা দেশে জন্ম মার, এ বাংলায় জন্ম আমার
দু'বাংলায় দু'জনার জন্ম ছিন্ন হ'ইলো বন্ধন কার?
এ পারেতে রাম রহে ওপারেতে রহিম
ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরে সর্ব্বনাশা একি দিন।

গঙ্গা আর পদ্মার পাড়ে এক খন্ড জমি আছে
দুই দিকের দুই নদীর ঢেউ রাম রহিমের চোখে নাচে।
একই আশা একই ভাষা হৃদয় জুড়ে ভালোবাসা
এপারেতে রাম কাঁদে ওপারেতে রহিম একা।

এপার বাংলা ওপার বাংলা আমার তোমার একই বাংলা
ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরে সর্ব্বনাশা একি খেলা।
গঙ্গা আর পদ্মার হাওয়া এপার ওপার বাংলায় নাচে
মায়ের ছেলের হৃদয় আশঙ্কাতে কেন কাঁপে?

জল্ভরা নয়ন দেখেছিলাম মায়ের
নাড়ীর টান ওপারেতে জীবন কাটে এপারে
স্মৃতিকথায় হৃদয় কাঁপে জল ভরে চোখে।
এপারেতে বৈধব্য বেশ ওপারেতে কৈশোর নাচে।

এর আগেও একবার বাংলা পক্ষকে ইস্কনের সাধু অমোঘ লীলা দাসের শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবিবেকানন্দকে অপমান করার জন্য ও হিন্দুধর্মের সম্পর্কে ঘৃণা, আক্রোশ, বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘৃণ্য ক্ষমাহীন অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে একটা খোলা চিঠি লিখেছিলাম। জানি না সেই চিঠি তাঁরা পড়েছেন কিনা। কারণ কোনও সাড়া পাইনি। হয়তো চোখে পড়েনি কিংবা চোখে পড়লেও হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ব'লে মনে করেনি। পড়লে ভালো না পড়ে থাকলেও কোনও আপত্তি বা অসুবিধা নেই। আমার বক্তব্য আমি জানিয়েছি। এখানেও আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরছি বাংলা পক্ষের উদ্দেশ্যে তাঁদের বাংলা রাজ্য, বাংলা ভাষা ও বাঙালী কৃষ্টি-সংস্কৃতির পক্ষে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে পূর্বের ঐ চিঠির মত এখানেও কয়েকটি আমার একান্তই মনের ভাবনা-চিন্তা তুলে ধরার মধ্যে দিয়ে।

বাংলা চিরকাল বঞ্চিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগের কথা ছেড়ে দিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ ৭৬বছর হয়েছে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার সময় থেকেই বাংলা ও বাঙ্গালীকে বঞ্চিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হ'তে হয়েছে। দেশ স্বাধীনতায় বাঙালীদের অবদান দেশ মনে রাখে না। মনে রাখে না বাঙ্গালীই। মাঝে মাঝে একটু রাজনৈতিক কারণে কিংবা জন্মদিন টন্মদিনের কারণে একটু বাংলা ও বাঙালি ব'লে একটু স্মৃতির অম্ল ঢেঁকুর তোলে তারপর আবার সেই জে কে স্টীল। দেশভাগে সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বাংলা ও পাঞ্জাবের, বাঙালী ও পাঞ্জাবীর। আর কারও কোনও রাজ্যের রাজ্যবাসীর এমন নির্ম্মম নিষ্ঠুর বেদনাদায়ক প্রাণঘাতী রক্তক্ষয়, জীবনক্ষয়, সম্পদ ক্ষয় হয়নি, হ'তে হয়নি বাস্তুহারা। এর জন্যে যার বা যে জাতের হাত বা প্ররোচনা থাকুক না কেন, দায়ী দেশী-বিদেশী যে বা যারাই হ'ক না কেন এর জন্য প্রধান দায়ী ছিল বাংলার জন্য বাঙ্গালীরাই। দেশ স্বাধীনতার সময়েও বাঙালী বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে ছিল। কোনও বাঙালী যখনই বৃহত্তর কোনও মঙ্গল কার্যে এগিয়েছে তখনই পিছন থেকে ছুরি মেরেছে বাঙালি। অসযোগীতার হাত বাড়িয়ে ভন্ডুল ক'রে দিয়েছে মঙ্গল যজ্ঞ বাঙালি। সৃজনশীল বাঙ্গালীকে টিকতে দেয়নি বাঙালী বাংলার বুকে। বাংলার সমস্ত মনীষীি অপদস্ত হয়েছে বাংলার বুকে বাঙ্গালীর দ্বারাই। মহাপরিপূরণকারী বাঙ্গালীকে অশ্রদ্ধা অপমান অসম্মান করেছে বাঙালি। আর তা চেয়ে চেয়েও দেখেছে বাঙালি। ধর্ম একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে ও করেছিল সেইসময়। ধর্মপ্রাণ ঈশ্বরবিশ্বাসী বাঙালী যারা তাঁরাই ঈশ্বরের জীবন্ত রূপকে মানতে চাননি, স্বীকৃতি দেননি। তা অন্যরা মানবে না এটা হ'তেই পারে। ধর্ম মানে না ও ঈশ্বর অবিশ্বাসী প্রতিষ্ঠিত প্রাজ্ঞ, বিদ্বান, পন্ডিত বাঙালী উপেক্ষা করেছে, অবহেলা করেছে, অবজ্ঞা করেছে তাঁদের অর্থাৎ বাঙালী পুরুষোত্তম জীবন্ত ঈশ্বরকে। তারা ওসব জীবন্ত ঈশ্বর টিশ্বর, ভগবান টগবান, পুরুষোত্তম টোত্তম মানে না, ধার ধারে না। আর যারা প্রাজ্ঞ, বিদ্বান, পন্ডিত বাঙালী ধর্ম ঈশ্বর মানে তো ধর্মের নামে অসাড় কিছু ক্রিয়াকলাপ মানে যার সঙ্গে চরিত্র গঠনের কোনও সম্পর্ক নেই, আর ঈশ্বর বা ভগবান মানলেও ঐ আকাশের ঈশ্বর বা ভগবান, বোবা বা অমূর্ত ভগবান মানে।

তাই এই ধর্মের দেশে তিনি যতবার এসেছেন ততবার তিনি অপমানিত ও লাঞ্ছিত হ'য়েছেন ধর্ম্ম ও ঈশ্বর অবিশ্বাসী বাঙালীদেরদের হাতে এবং সবচেয়ে দুঃখের, অপমানের ও লজ্জার বিষয় অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়েছেন এখনও হ'য়ে চলেছেন ধর্ম্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাসী বাঙালীদের হাতে। বিশেষ ক'রে বাংলার বুকে The greatest phenomenon, The greatest wonder of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে থাকতে দেয়নি, টিকতে দেয়নি, সাহায্য করেনি তাঁর মাতৃভূমি বাংলাদেশে দেশনেতারা ও তৎকালীন ও বাংলার বিশিষ্ট বাঙ্গালিরা। এবং এ বাংলায় থাকতে চেয়েছিলেন তিনি কিন্তু থাকার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি এ বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা এমনকি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায়। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জন্মভূমি ওপার বাংলা থেকে চলে আসার পর এ বাংলায় ঠাকুরের থাকার ও তাঁর ওপারের স্বাধীতার সময়ের দেড় কোটি টাকা মূল্যের বিশাল আশ্রমকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ বাংলায় পান্ডুয়ায় ৬০০০ হাজার বিঘা জমি দিতে রাজী হয়েছিলেন কিন্তু তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীবিধান চন্দ্র রায়ের মানসিকতা ছিল তা কেটে ৮০০ বিঘে প্রদান করার। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর সেই প্রস্তাব বাতিল ক'রে দেন, কারণ তাঁর যে স্বপ্ন ছিল তা রুপায়িত করতে ৮০০বিঘা যথেষ্ট বিবেচিত ছিল না তাঁর কাছে। ১৯৪৭ সালে যখন তিনি ওপার বাংলায় তাঁর বিশাল আশ্রম যার তৎকালীন মূল্য ছিল দেড় কোটি টাকা সেই বিশাল সম্পত্তি ছেড়ে খালি হাতে চলে এসেছিলেন তখন এ বাংলায় ৮০০ বিঘা জমি তাঁর কাছে কোনও মূল্য ছিল না? কেন? ১ বা ২ বিঘা জমি নয় ৮০০ বিঘা জমি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন!? কেন? যখন তাঁকে নিয়ে এখনও এপাড় বাংলা ও ওপাড় বাংলার বুকে বাঙ্গালীরা অকথ্য কুকথ্য অশ্লীল ভাষায় প্রতিদিনই ফেসবুকে গালাগালি ক'রে চলেছে, ক'রে চলেছে নানারকম দৃষ্টিকটু অশ্লীল ছবি পোষ্ট, মিমস ইত্যাদি। মিম বানানোর জন্য নাকি সৃজনশীল বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হয়। মিম ভালমত বোঝার মাধ্যমে আপনার চিন্তাশীলতার গভীরতা যেমন প্রকাশ পায় তেমনি যিনি meme বানাচ্ছেন তার চিন্তাধারা এবং বুদ্ধির পরিচয়ও পাওয়া যায়। মিমের মাধ্যমে Sence of humour বা হাস্যরস ধারণা করা যায়। মিম এখন জনপ্রিয় বিষয় যা জাগতিক কিংবা দৈনন্দিন বিষয় থেকে শুরু করে সমালোচনামূলক জীবন এবং বিশ্বের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার উপর তৈরী করা হয়। যাই হ'ক, কাউকে আঘাত ক'রে, মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে, মিথ্যে অপবাদ দিয়ে, কুৎসা ক'রে, কারও চরিত্র হনন ক'রে মিম তৈরী করাকে যদি সৃজনশীল সৃষ্টি আখ্যা দেওয়া হয়, চিন্তাশীলতার গভীরতা ব'লে ধরা হয়, উৎকৃষ্ট Sence of humour বা হাস্যরস ধারণা ব'লে তকমা দেওয়া হয় তাহ'লে তার ফলে যদি সমাজ, সভ্যতার বিকাশ ব্যাহত হয়, প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিক্ষা ও রুচির মান নষ্ট হয়, বোধের মৃত্যু ঘটে, বুদ্ধি বন্ধ্যা হ'য়ে যায়, ব্যক্তিত্ব বিনষ্ট হয়, সস্তা ও হালকা মানসিকতার অধিকারী হ'য়ে ওঠে, মানুষের সিরিয়াস চিন্তা করার শক্তি নষ্ট হয়, ভারসাম্যহীন চরিত্র গড়ে ওঠে, শুধু নিম্নমানের প্রবৃত্তিমুখী রিপুতাড়িত হাস্যরসের মধ্যে ডুবে থেকে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্রেন সেলকে কোলাপ্সড ক'রে দেওয়া হয় আর এটাই যদি বাক স্বাধীনতার নামে উচশৃঙ্খলতার প্রশ্রয় দেওয়া হয় আর তা' যদি সমাজের পন্ডিত, জ্ঞানী, বিজ্ঞ এককথায় প্রাজ্ঞদের দ্বারা স্বীকৃত হয় ও সাংবিধানিক অধিকার হয় তাহ'লে মানব সভ্যতা ধ্বংস অনিবার্য। সেদিন এমন একদিন আসবে ঠাকুরের কথায় মনুষ্বত্বের মুল বুনিয়াদ লোপ পেয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছুই নয়। মনুষত্বের মূল বুনিয়াদ নষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে চারপাশের ঘটনা তার প্রমাণ। আম আদমী থেকে অসাধারণ আদমী সবাই চুপ। মহাভারতের কৌরবের রাজসভার মহাবলী প্রাজ্ঞ ভীষ্মদের কানে আঙ্গুল, চোখে আঙ্গুল, মুখে আঙ্গুলের যুগ ফিরে এলো বুঝি!

যাই হ'ক বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ট বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের ৬০০০ হাজার বিঘার পরিবর্তে ৮০০ বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন! কারণ তিনি নিজের জন্য এই জমি কখনো চাননি। ওপার বাংলায় পাবনা হিমায়েতপুর গ্রামে বিশাল জনবসতি তিনি গড়ে তুলেছিলেন পারিপার্শ্বিক সহ সবাইকে নিয়ে বাঁচা-বাড়ার উদ্দেশ্যে। যা তৎকালীন প্রায় সমস্ত দেশবরেণ্য দেশনেতারা দেখে এসেছিলেন। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় সম্ভবত শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশাল আশ্রম ও তাঁর বহুমুখী বিশাল কর্মকান্ড সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলেন না বলেই তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে অন্ধকারে ছিলেন। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর এ বাংলা ছেড়ে চলে গেলেন তৎকালীন বিহার বর্তমানে ঝাড়খন্ডের দেওঘরে। আজ বর্ধমানের পান্ডুয়ায় যদি গড়ে উঠতো ৬০০০ হাজার বিঘের ওপর শ্রীশ্রীঠাকুরের নব বৃন্দাবন আশ্রম তাহ'লে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থান ও বাংলার পরিচিতি বিশ্বের দরবারে কোথায় পৌঁছে যেত তা অকল্পনীয়। কিন্তু সেদিন তা বুঝতে চায়নি সমাজের অন্ধ মহাপন্ডিত, মহাজ্ঞানী, মহাবীর রথী মহারথী আজকের বুদ্ধিজীবী ভীষ্মরা। সেদিনও ছিল ও আজও ঘুমিয়ে আছে মহাত্মা ভীষ্মেরা। অথচ ১৯৪৭ সালের তিন বছর পরেই ১৯৫০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ডঃ বিধান চন্দ্র রায়কে প্রবল প্রতিদ্বন্ধী কম্যুনিষ্ট নেতা মহম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে জয়ী করাবার জন্য শ্রদ্ধেয় প্রবল পরাক্রমী বালকৃষ্ণ কাপুর দা যিনি পূর্বে ছিলেন প্রভু রাম ভক্ত ও হনূমান ভক্ত পরে শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিত হলেন সেই ভক্তপ্রবর বাল্কৃষ্ণ কাপুরদা তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে বিধান চন্দ্র রায়ের আপত্তি ও বিরক্তি সত্ত্বেও শুধুমাত্র ঠাকুরের নির্দেশকে বাস্তবায়িত করবার তাগিদেই নিজের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও বিশাল সৎসঙ্গী মহলে প্রচার করতে থাকেন। সেদিন বালকৃষ্ণ কাপুরদাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে অফিসে ডেকে শ্রদ্ধেয় ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের বলা, "Why are you creating problems in my campaign? I do not need your help." ( আমার নির্বাচনী প্রচারে তোমরা অসুবিধা সৃষ্টি করছো কেন? তোমাদের কোনও সাহায্যের আমার প্রয়োজন নেই।) এই কথা বলার উত্তরে সেদিন শ্রদ্ধেয় বালকৃষ্ণ কাপুরদা ঘুরে দাঁড়িয়ে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন, "I am not here to serve you, but to follow the order of my Lord and I shall do so to fulfil fis command, whether you like it or not." ( আমি আপনাকে সাহায্য করার জন্য আমি এখানে আসিনি। এসেছি গুরুর আদেশ পালন করার জন্য। এবং তাঁর সেই আদেশকে পূর্ণ করার জন্য আমার যা যা করণীয় আমি তাই তাই করবো, তা আপনি পছন্দ করুন বা নাই-ই করুন।) ভোটের রেজাল্ট বেরোলে দেখা যায় মাত্র ৪০০ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। বাংলার নবরূপকার হলেন ডঃ বিধান চন্দ্র রায়। বালকৃষ্ণকাপুরদা যখন দেওঘরে ফিরে আসেন নির্বাচন শেষে তখন শ্রীশ্রীঠাকুর কাপুরদাকে দেখেই আনন্দে হাসতে হাসতে ব'লে উঠেছিলেন, "ঐ দ্যাখ কিং মেকার আসছে, বাংলা বেঁচে গেল। সেদিন সৎসঙ্গীদের ভোট যদি যুক্ত না হ'তো বাংলার পরিণতি কি হ'তো তা একমাত্র জীবন্ত বিধাতাই জানতেন। শ্রীশ্রীঠাকুর কিন্তু বাংলার বুকে থাকতে না পারার, পান্ডূয়ায় ৬০০০ হাজার বিঘা জমি না পাওয়ার যন্ত্রণা মনে রাখেননি। বিধান চন্দ্র রায়কে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। কিন্তু সেদিনও ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় শ্রীশ্রীঠাকুরকে বুঝতে পারেননি।

কিন্তু বাঙালী যারা আজও শ্রীশ্রীঠাকুরের কুৎসা করেন, ঠাকুরকে নোংরা গালাগালি করেন, নিন্দা, অপবাদ, অপমান, অশ্রদ্ধা করেন তারা এরকম অনেক অনেক অপ্রকাশিত ঘটনা আছে যা জানেন না। তাদের শুধু একবার ভেবে দেখতে বলবো আছে কেউ এমন ব্যক্তিত্ব, আছে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আছে কোনও ধর্মীয় নেতা বা সাধারণ কোনও কেউ যিনি ৮০০ বিঘা জমি পাওয়ার কথা ছেড়ে দিলাম বিনা পয়সায় এক কাঠা জমি যদি পান ছেড়ে দেবেন? আছেন কেউ? অথচ শ্রীশ্রীঠাকুরকে গালাগালি ক'রে যাবেন এর পরেও বাংলার বুকে বাঙ্গালীরা। ইদানীং নোতুন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে একশ্রেণীর নিকৃষ্ট বাচ্চা থেকে বুড়ো স্বঘোষিত গেরুয়াধারী সনাতনী নামধারী বাঙালীকে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, সমালোচনা, অপমান, অশ্রদ্ধা করতে ও অপবাদ দিতে। অবাক কান্ড! স্বঘোষিত সনাতনীদের হঠাৎ এই গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। ভালোই হয়েছে সবাই দেখুক স্বঘোষিত সনাতনী হিন্দু বাঙ্গালীদের আচরণ। আরও অবাক লাগে যখন ঠাকুর রামকৃষ্ণের কিছু বাঙালী দীক্ষিত শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত এবং অদীক্ষিত বাঙালী ঠাকুর রামকৃষ্ণের হ'য়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে সীমাহীন অশ্লীল কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মত গালাগালি করে। এর মধ্যে কিছু কৃষ্ণপ্রেমীদের মন্তব্য আপনারা আমার ভিডিওগুলির মন্তব্যে দেখতে পাবেন। আর, ঠাকুর সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ না জেনে, না পড়ে, গবেষণা না ক'রে শুধু কুৎসিত লোকের পাল্লায় পড়ে কুৎসিত মানসিকতায় রটানো রসালো ঘৃণ্য মুখের কথা শুনে শুনে একই গালাগালি ক'রে চলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ।


যাই হ'ক, বাঙালী কখনোই ঐক্যবদ্ধ ছিল না। বাঙালী কখনোই শিক্ষা, সাহিত্য, ধর্ম্ম ও রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর বিশ্বাসী ও আস্থাশীল ছিল না। বাঙালী কখনোই নিজের মানব সম্পদ অর্থাৎ বাঙালীর অভূতপূর্ব মস্তিষ্কের সম্মান শ্রদ্ধা করেনি। সাধারণ বাঙালী ও অসাধারণ বাঙালী মস্তিষ্কের অধিকারীরা কখনোই অন্য বাঙালী অসাধারণ মস্তিষ্কের কদর করেনি। নিজেকে নিয়েই ছিল তাঁরা ব্যস্ত। বাঙালি নিজ কৃষ্টি, নিজ সংস্কৃতি, নিজ ঐতিহ্যের প্রতি ছিল উদাসীন ছিল, পাশ্চাত্যের প্রতি প্রেমে মশগুল। বাঙ্গালীর কাছে বাঙ্গালি মনীষী, তাদের দর্শন, তাঁদের সাহিত্য, তাঁদের মতবাদ, তাঁদের চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদির চেয়ে অবাঙালী ও বিদেশী মনিষী, বিদেশী সাহিত্য, বিদেশী দর্শন, বিদেশী মতবাদ, বিদেশী চিন্তা-ভাবনা বেশী গ্রহণযোগ্য ছিল। যা আজও আছে। এতে একটা আলাদা আভিজাত্য বোধ করতো বুদ্ধিজীবী বাঙালী। যা আজও করে। ঐ বিদেশী ভাষা ইংরাজী ভাষার মতো। যা এখন ভয়ঙ্করভাবে গ্রাস করে ফেলেছে একেবারে আষ্টেপৃষ্টে অজগর বা অক্টোপাশের মতো বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে বাঙালী অভিভাবকদের মনেপ্রাণে, একেবারে মস্তিষ্কের ব্রহ্মতালুতে ছোবল মেরে দিয়েছে।


এই যে বাঙ্গালীর কাছে বাঙ্গালি মনীষী, তাদের দর্শন, তাঁদের সাহিত্য, তাঁদের মতবাদ, তাঁদের চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদির চেয়ে অবাঙালী ও বিদেশী মনিষী, বিদেশী সাহিত্য, বিদেশী দর্শন, বিদেশী মতবাদ, বিদেশী চিন্তা-ভাবনা বেশী গ্রহণযোগ্য ছিল সেটা কোন বাঙালীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিল? সাধারণ বাঙালী? নাকি বুদ্ধিজীবী খ্যাত অসাধারণ বাঙালী? সাধারণ বাঙালী চিরকাল না ঘরকা, না ঘাটকা। এরা ঐ রুপোর কাঠি আর সোনার কাঠির যাদুতেই বশীভূত। বুদ্ধিজীবীদের ইমিটেশন সোনার রঙের সোনার কাঠির ছোঁয়ায় এরা জেগে ওঠে আবার রুপোলি রঙের নকল রুপোলি কাঠির ছোঁয়ায় এরা ঘুমিয়ে পড়ে। এরা বুঝতেই পারে না এদের সোনার কাঠি ছুঁইয়ে ঘুম ভাঙ্গানো হয়নি, এদের নকল ইমিটেশন সোনার কাঠি দিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে আবার যখন দরকার পড়েছে মিথ্যে রুপোলি রঙের নকল রুপোর কাঠি বানিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। এদের শেখানো হয়েছে জনগণের বাণীই ঈশ্বরের বাণী। এরা নিজেদের মৌরসী পাট্টা জমিয়ে রাখার স্বার্থে, ক্ষমতা দখলের স্বার্থে ঈশ্বরের উপস্থিতিকে উপেক্ষা করে, জীবন্ত ঈশ্বরকে কলঙ্কিত ক'রে, কালিমালিপ্ত ক'রে সীমাহীন ভাঙাচোরা, রিপু তাড়িত বৃত্তি- প্রবৃত্তিতে আপাদমস্তক ডুবে থাকা কুসংস্কারাছন্ন ধর্ম্মভীরু, মূর্খ, বোকা, সহজ, সরল, সাধারণকে তাদের বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে সুড়সুড়ি দিয়ে বুঝিয়েছে তাদের কথায় ঈশ্বরের কথা, তাদের বাণীই ঈশ্বরের বাণী অর্থাৎ জনগণের কথায় ঈশ্বরের কথা, জনগণের বাণী ঈশ্বরের বাণী। এছাড়া ঈশ্বর ব'লে কিছু নেই, নেই তাঁদের কোনও জীবনীয় বাণী, নেই কোনও বাঁচা-বাড়ার মতবাদ। ধর্ম ও ঈশ্বর সবটাই আফিম। বিদেশী মনিষীরাই এক ও একমাত্র দ্রষ্টাপুরুষ। তাঁদের কথার মধ্যেই আছে মুক্তির পথ। তাঁরাই একমাত্র শেষ কথা জানে ও জানে নিখুঁত। এ ছাড়া বাকী সব বকোয়াস। বাঙালী কখনোই নিজের ঘরের সম্পদকে, নিজের বাগানের ফুলকে দেশ বা রাষ্ট্রগঠনের কাজে, সমাজ গঠনের কাজে এবং রাজনৈতিক কাজে গুরুত্ব, সম্মান দেয়নি সে যে যতবড়ই বুদ্ধিজীবী তাত্ত্বিক বাঙালী নেতা হ'ক না কেন। চোখের সামনে রত্ন বাঙালী রত্ন বাঙ্গালীকে করেছে উপহাস, উপেক্ষা, অস্বীকার। বাঙালী মত্ত ছিল "আজ বাংলা যা ভাবে কাল গোটা ভারত তা ভাবে" এই অহংকারে। তাই আজ গোটা ভারত যা ভাবে বাংলা তা কালও ভাবতে পারে না। বাঙালী বাঙালী মাতব্বরদের কারণে নিজেদের মধ্যে লড়াই ক'রে বাঙালী সত্ত্বাকে, বাঙালী ঐক্যকে, বাঙালী একপ্রাণকে, বাঙালী এক হৃদয়কে, বাঙালী এক মনকে, বাঙালী এক শরীরকে দ্বিখন্ডিত করেছে হিন্দু আর মুসলমান বাঙালী ক'রে দিয়ে, হিন্দু আর খ্রীষ্টান বাঙালী ক'রে, মুসলমান আর খ্রীষ্টান বাঙালী ক'রে দিয়ে। এমনিভাবে সমস্ত বাঙ্গালীর ঐক্যের শরীরকে ভেঙে টুকরো টুকরো ক'রে দিয়েছে নানান সংখ্যাগরিষ্ঠ, সংখ্যালগিষ্ঠ ধর্ম্মের নামে নানান মতের হাতুড়ি দিয়ে। ধর্ম্ম যে বহু হয়না সব যে মত হয় বাঙালী মাতব্বর নেতৃত্ব বোঝেনি; না বুঝে এমন সর্ব্বনাশা মৃত্যু ডেকে এনেছে নিজেদের জন্য নিজেরাই। নতুবা বুঝেও ইচ্ছাকৃতভাবে বুঝতে চায়নি শয়তানী মনোবৃত্তির কারণে। ফল ভোগ করতে হয়েছে আম জনতার। আম জনতাকে ফল ভোগ করতে হবে, যতদিন না এদের ফাঁদ থেকে আম জনতা মুক্ত হবে।

তাই, বাংলা পক্ষের যারা বাঙালী জাগো ব'লে মহান যজ্ঞ শুরু করেছেন তাঁদের বলি, আপনারা আপনাদের বলিষ্ঠ সংগঠন দিয়ে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার মনিষী, বাংলার শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ইত্যাদির ওপর দাঁড়িয়ে অবাঙ্গালীদের বোঝান আপনারা বাংলার বুকে আছেন, বাংলা আপনাদের কর্মস্থল, আর কর্মস্থল মন্দির তুল্য, স্বর্গ সমান। এই বাংলার মাটি আপনাদের অন্ন রোজগারের মাটি, এই মাটি আপনাদের মা অন্নপূর্ণা। এই মাটিকে শুধু বৈধ বা অবৈধ যে উপায়েই হ'ক অর্থ রোজগারের পথে শুধু বলাৎকার ক'রে ক'রে মাকে ক্ষতবিক্ষত করবেন না। বাংলার এই মন্দির সমান, স্বর্গ সমান, মা অন্নপূর্ণা সমান বাংলার মাটিকে আপনারা সম্মান করুন, পূজা করুন, ভক্তি করুন, শ্রদ্ধা-সম্মান করুন বাংলা ভাষা, বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম সবকিছুকে আপন ক'রে নিন। এর জন্যে নিজের ধর্ম, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি কোনও কিছুকেই ত্যাগ করতে হবে না, ছাড়তে হবে। মা অন্নপূর্ণা আপনাদের এই কর্ম্মস্থল বাংলায় আপনাদের ঘরে ঘরে অক্ষুণ্ণ থাকবে, স্থির থাকবে। হরিহরের গোয়াল ঘরের কারণে ঘর থেকে একদিন মা অন্নপূর্ণা যেমন একদিন হরিহরের গৃহ ত্যাগ ক'রে চলে গেছিল ঠিক তেমনি যেন আপনাদের অপমানে অশ্রদ্ধায় অসম্মানের কারণে ক্রোধান্বিত হ'য়ে বেরিয়ে না যান মা অন্নপূর্ণা আপনাদের ঘর থেকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। উনাদের বোঝান আপনারা যে অর্থ বাংলার বুক থেকে রোজগার ক'রে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের নিজের রাজ্যে তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন বাংলার মাটির কাছে। তাদের বোঝান আপনাদের পরিবারের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই বাংলায় জন্ম নিচ্ছে ও এই বাংলার মাটিতেই মিশে যাচ্ছে কিন্তু আপন ক'রে নিতে পারেনি এই বাংলাকে, বাংলার মাটিকে। বছরের পর বছর বাংলার বুকে থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষা শিখতে পারেননি এখনো ভালো ক'রে। কারণ আপনারা বাংলাকে গোরুর বাট থেকে দুধ দুইয়ে নিয়ে যাবার মত দুধ দুইয়ে দুইয়ে বাট থেকে রক্ত বের ক'রে দিচ্ছেন কিন্তু গরুকে মায়ের মতো বুকে ক'রে লালন পালন করেননি, করছেন না।


তাই বাংলায় থেকেও বাঙ্গালীর সঙ্গে একটা বিরাট দূরত্ব নিয়ে অবস্থান করছেন। যা যে কোনও মুহুর্তে অস্তিত্বের পক্ষে ক্ষতিকর। এই বাংলায় আপনাদের কত সন্তানসন্ততি বাঙালির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে, তাদের পরবর্তী সন্তানসন্ততি না ঘরকা, না ঘাটকা হ'য়ে দিশাহীন হয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে এই জটিল পরিবেশে। ভিতরে ভিতরে তারা মায়ের দিকে যাবে না বাবার দিকে যাবে এই চিন্তায় অস্থির হয়ে হতাশ হয়ে অবসাদ্গ্রস্থ হ'য়ে পড়ছে। বুঝতে পারছে না কে ঠিক, কে বেঠিক। কখনো কখনো তারা পথ খুঁজে না পেয়ে উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বরযুক্ত চিন্তায় ভুল ক'রে বসছে ও নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ ক্ষতির কারণ হ'য়ে দাঁড়াচ্ছে। আপনাদের এসব ভাবতে হবে। হ্যাঁ, ভাবতে হবে। বাংলা ও বাঙালিকে যখন বাঁচাতে নেমেছেন তখন আপনাদের আরও আরও গভীরে ডুব দিয়ে ভাবতে হবে, নতুবা বাংলার বুকে এর আগের সব হটকারী আন্দোলনের মত, সব সব গোড়া কেটে আগায় জল দেবার ব্যর্থ আন্দোলনের মতো আজ নয়তো কাল মুখ থুবড়ে পড়তে হবে, হবেই হবে। উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত চিন্তার ওপর দাঁড়িয়ে আন্দোলন অসিদ্ধির আন্দোলন। আপনারা মানুন আর নাই মানুন। এর আগে বাংলার বুকে বহু রাজনৈতিক আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়েছে, ব্যর্থ হয়েছে ও অন্তসারশূন্য আন্দোলন ব'লে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই, আপনারাও আপনাদের আন্দোলনের গভীরতা নিয়ে ভাবুন, আন্দোলনের মুখকে ঠিক রাখুন, ডিরেইল্ড হ'তে দেবেন না, সব বাঙালি যাতে আপনাদের পাশে থাকে, আপনাদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য বুঝতে তাই করুন। বাঙ্গালীকে আর বৃথা অসাড় স্বপ্ন দেখাবেন না। বাঙালি উদ্দেশ্যহীন, দিশাহীন, লক্ষ্যহীন, বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত আন্দোলনে বলাৎকার হ'তে হ'তে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। চটজলদি, ভাসাভাসা মিথ্যে কপট অবাস্তব বৃত্তি-প্রবৃত্তির সুড়সুড়ি আন্দোলন দেখে দেখে অভ্যস্ত বাঙালী এখনো প্রকৃত আন্দোলন দেখেনি। আন্দোলন কা'কে বলে এই বাংলার বাঙালী দেখবে, তবে এই বাংলা থেকে নয়। আন্দোলন উঠবে বাংলার বাইরে থেকে অন্য রাজ্য থেকে। সেই আন্দোলনের শীর্ষভাগে থাকবে বাঙালী, খাঁটি বাঙালী, যার মধ্যে দিয়ে ব'য়ে যাচ্ছে এখনো খাঁটি আর্য রক্ত। সেই খাঁটি আর্য রক্ত ব'য়ে যাওয়া খাঁটি বাঙালী কেমন ক'রে সব বাঙালী, অবাঙালী, হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি সব মতের সব জাতের সব দলের মানুষদের নিয়ে নিখুঁত চলতে হয় সর্ব্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত আদর্শকে মাথায় নিয়ে তা দেখিয়ে দেবে। যেমন স্বাধীনতার সময় আমরা একবার দেখতে পেয়েছিলাম নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে সারা ভারতবর্ষের সমস্ত জাত ও ধর্মের মানুষদের আজাদ হিন্দ ফৌজের ফৌজি হিসেবে। শুধু অপেক্ষা সেদিনের।

তাই আপনাদের কাছে আমার বিনীত আবেদন এই ভিডিওর মধ্যে দিয়ে আপনাদের এই প্রচেষ্টা সঠিক পদ্ধতিতে এগিয়ে চলুক সার্থকতার দিকে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে হাসি আনন্দের মধ্যে দিয়ে যাতে বিগত দিনগুলির মত আপনাদের আন্দোলনও ব্যর্থ হ'য়ে আর একটা সংখ্যা না বাড়ায়। যাতে আপনাদের আন্দোলনের সারবত্তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে ও দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে। ঐ যে রবীন্দ্রনাথের গানঃ
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল--
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান ॥
বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ--
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান ॥
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা--
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান ॥
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন--
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান ॥


আবার ঐ যে আর একটা গান আছে কাজী নজরুল ইসলামের,
মোরা একি বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।
মুসলিম তার নয়ণ-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ॥
এক সে আকাশ মায়ের কোলে
যেন রবি শশী দোলে,
এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান॥
এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল,
এক সে মায়ের বক্ষে ফলে একই ফুল ও ফল।
এক সে দেশের মাটিতে পাই
কেউ গোরে কেউ শ্মশানে ঠাঁই,
মোরা এক ভাষাতে মাকে ডাকি, এক সুরে গাই গান॥
চিনতে নেরে আঁধার রাতে করি মোরা হানাহানি,
সকাল হলে হবে রে ভাই ভায়ে ভায়ে জানাজানি।
কাঁদব তখন গলা ধরে,
চাইব ক্ষমা পরস্পরে,
হাসবে সেদিন গরব ভরে এই হিন্দুস্থান॥


আবার আছে,
নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান
নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান
দেখিয়া ভারতে (বাংলায়) মহা জাতিরও উত্থান
জগজন মানিবে বিস্ময়
জগজন মানিবে বিস্ময়।


তাই আসুন সবাই মিলে গেয়ে উঠি, বলি,
ও ও ও মন হারিয়ে যায় রে
মন হারিয়ে যায়।
বন্ধুরে তোর পাখনা উড়িয়ে দিয়ে আয় রে
উড়িয়ে দিয়ে আয়।
বাংলা মায়ের চরণ তলে
এসো সবাই পরাণ খুলে২
মিলেমিশে থাকি সবাই,
হাসি হাসি, নাচি নাচি, বাঁচি-বাড়ি
গান গেয়ে যাই।
জয়গুরু।

No comments:

Post a Comment