সম্প্রতি একটা পোষ্ট ভীষণভাবে ভাইরাল হ'য়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংগীতশিল্পী লীর ( পুরো নাম মনে নেই)-র গানের অনুষ্ঠান মঞ্চে অপ্রকৃতিস্থ নাচের ভংগীতে প্রবেশের দৃশ্যের সঙ্গে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে মিম বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
আর, উচ্চমার্গের ব্যাপার উচ্চমার্গে অবস্থানকারী কোনও কোনও ক্ষমতাবান ব্যক্তির গায়ে বুমেরাং হ'য়ে যখন ফিরে আসে তখন তাদের ইজ্জতে লাগে। আর তখনি 'টেক অ্যাকশান' ব'লে রেড অ্যালার্ট জারী হ'য়ে যায়। তার আগে বা পরে কোনও সম্মানীয় বিখ্যাত জনপ্রিয় ব্যাক্তিদের নিয়ে কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার বা মিম তৈরী ক'রে কুৎসা, নিন্দা, চরিত্র হনন হ'লে প্রশাসন সক্রিয় হওয়া দূরের কথা ঐ ব্যাপারে নাক গলায় না, তখন সেটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ব্যাপার, শিল্পের ব্যাপার, উচ্চমার্গের কৃষ্টি-সংস্কৃতির ব্যাপার।
এর আগে একবার প্রয়াত প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ আর প্রখ্যাত রেডিও জকি, অভিনেতা এবং উপস্থাপক মীরকে নিয়ে এরকম একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষ আহত হয়েছিলেন তাঁর দূর্বলতাকে নিয়ে ক্যারিকেচার করার জন্য। কিন্তু ঋতুপর্ণ ঘোষের ব্যক্তিগত আঘাত লাগা অনেকের পছন্দ হয়নি, তারা মীরের পক্ষ অবলম্বন করেছিল।
কারও ব্যক্তিগতভাবে আঘাত লাগতেই পারে, সে এর জন্য মানসিক ব্যালান্স হারাতেই পারে কিন্তু যার জন্যে সে আঘাত পেল বা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হ'লন ভিতরে ভিতরে সে ব্যাপারে কার্টুন বা ব্যাঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার বা মিম তৈরিকারীর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই, নেই কোনও হেলদোল। সে সৃষ্টির নেশায় মশগুল। তা সে সৃষ্টি বা অনাসৃষ্টি যাই-ই হ'ক।
এই সমস্ত উচ্চমার্গের শিল্পকলা যেমন মিম, ক্যারিকেচার, কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র এগুলি বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটিদের মুখের আদল, বিশেষ কোনো লক্ষ্যনীয় অভ্যাস ইত্যাদি বিষয়বস্তু নিয়ে ক্যারিকেচারের মাধ্যমে যে সৃষ্টি হয় তা নিছক নির্মল হাসির উদ্রেক করার জন্য করা হ'য়ে থাকে। এখন এর উন্নত রূপ মিম। এরকম কার্টুন আমরা আগে প্রতিটি সংবাদপত্রে আগে দেখতে পেতাম। চন্ডী লাহিড়ী, কুট্টি ইত্যাদি ব্যক্তিত্বদের কার্টুন আমরা দেখেছি। যেমন, একজন মোটা ও অন্যজন মুটকি গায়কগায়িকার কার্টুন বানিয়ে তা'তে ক্যাপশান ছিল "গান ধরেছে মোটা, তান ধরেছে মুটি, কে গাইছে, কেমন গাইছে? গাইছে মোটামুটি" এরকম বেশ বুদ্ধিদীপ্ত মজার কার্টুন দেখেছি সেই কুট্টি নাকি চন্ডীলাহিড়ীর কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র তা আজ আর মনে নেই। আর একটা ছিল, ঘোড়ার গাড়ি চড়ে আসা যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির সময় গাড়োয়ানের সেই বিস্ময়কর মজার হাসি ও আনন্দের ব্যাংগত্মক উক্তি, " ইশ-স-স-স আস্তে আস্তে কন, ঘোড়ায় শুনবো আর হাসবো। আস্তে কন, আস্তে কন দাদা!"
যাই হ'ক, কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার, মিম মানুষের নিছক মজার বিষয়, হাসির বিষয় হ'লেও এর আড়ালে যে নিষ্ঠূর মানসিক সফিস্টিকেটেড যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে সেটা আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের বোঝা সম্ভব নয়। আবার অনেকে হয়তো এতে যন্ত্রণা পান না, আনন্দ পান। এই পাওয়া না-পাওয়া, সহ্য করা বা না-করতে পারা কিংবা এই মাধ্যমকে নিজের ফেভারে কাজে লাগানো ইত্যাদি মানসিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। আর নেগেটিভ ভাবে হ'লেও এই শিল্পকলা জনপ্রিয়তার প্রতিফলনে কাজ করে।
যাই হ'ক মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি কে কিভাবে এই কার্টুন কাণ্ড বা মিমকে গ্রহণ করবেন সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সোশাল মিডিয়ায় মমতাকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেখে নোটিস জারি কলকাতা পুলিশের এটাও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। কারও ভাবমূর্তি, কারও চেহারা নিয়ে যদি মজা করা স্বাধীনতা হয় তাহ'লে রাষ্ট্রপ্রধানের ভাবমূর্তি নিয়ে, চেহারা নিয়ে, চরিত্র নিয়ে মজা মস্করা করা শিল্পের নামে সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এটাও তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। আবার প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজীর পোষ্টাদাতাকে প্রশংসা করা সেটাও তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁর উচ্চ মানসিকতার ব্যাপার বা সহ্য শক্তির ব্যাপার কিংবা এই ধরণের পোষ্টকে প্রশ্রয় দানের ব্যাপার বা রাজনৈতিক ফয়দা লাভে সঠিক বা বেঠিক সিদ্ধান্ত যে কোনও একটা হ'তে পারে আর তা একান্তই ব্যক্তিগত।
এখন প্রশ্ন, পোস্ট ঘিরে কেন অতি সক্রিয় কলকাতা পুলিশ? কেন নীরব মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কেন সরব প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ভিডিওটি দেখে অনেকেই খুবই আনন্দিত এবং একই সঙ্গে দুঃখিত।
যাই হ'ক, কিছুদিন আগে The greatest wonder, greatest phenomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়েও এই নাচের ভিডিওর ওপর মিম করা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গীদের পক্ষ থেকে বা 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও প্রতিবাদ আসেনি। যদিও হিন্দু ভগবান বা ঈশ্বরের ওপর বা কোনও ধর্ম গুরুর ওপর কুতসা হ'লে কোনও প্রতিবাদ দেখা যায় না হিন্দুদের পক্ষ থেকে। হয়তো একটু বসন্তের হাওয়ার মত মৃদু নড়ে উঠে আবার স্থির হ'য়ে যায়। এটা হিন্দুদের ক্ষেত্রে সহনশীলতার পরিচয় বলা হ'য়ে থাকে। আবার বিভিন্ন ইউটীউবের ভিডিওয় দেখা যায় এই হিন্দুরাই আবার হিন্দু ধর্মগুরু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রচন্ড উগ্রতার সঙ্গে বিরোধীতায় সামিল। তবে সেখানেও সৎসঙ্গীরাও প্রচন্ড মাত্রায় সহনশীল। তবে এ সহনশীলতা অনন্ত, অসীম যা আবার অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিপদের কারণ হ'য়ে থাকে। কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে রসুলের ওপর কটুক্তি রসুল ভক্তেরা সহ্য করতে পারে না। এটা রসুলের প্রতি, তাদের প্রিয়পরমের প্রতি ভক্তির পরিচয়, ভালোবাসার পরিচয়, প্রেমের পরিচয়। রসুলকে নিয়ে কোনরকম কটু কথা, অসম্মানজনক, অশ্রদ্ধাজনক কোনওরকম উক্তি তারা শুনতে রাজী নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কখনও কখনও এই যে তীব্র ভক্তি, রসুলকে নিয়ে কখনও কখনও এই তীব্র ভক্তি, তীব্র অসহিষ্ণুতা ভয়ের ও ক্ষতির কারণ হ'য়ে দাঁড়ায়। এই অতিরিক্ত তীব্র সহিষ্ণুতা ও তীব্র অসহিষ্ণুতা দু'টোই ঈশ্বর বা ভগবান বা পুরুষোত্তমের প্রতি অপমান ও দুঃখের বিষয়।
এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, "স্পষ্টবাদী হও, কিন্তু মিষ্টভাষী হও। সত্য বল, কিন্তু সংহার এনো না। বীর হও, সাহসী হও কিন্তু তাই ব'লে হিংস্র হ'য়ে বাঘ, ভাল্লুক সেজে ব'সো না। তেজ মানে ক্রোধ নয়কো, বরং বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তা। অন্যায় ক'রো না, কিন্তু অন্যায়কে প্রশ্রয় দিও না। নিজের প্রতি অন্যায়কে সহ্য কর, কিন্তু অন্যের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ ক'রো" ইত্যাদি নানাভাবে তিনি মূল কথা ব'লে গেছেন।
তাই সহ্য কর, সহ্য কর, সহ্য কর!!! ঐ যে পুরুষোত্তম ঠাকুর রামকৃষ্ণ ব'লে গেছেন বাংলা বর্ণমালায় তিনটে বর্ণ আছে। ঐ তিনটে শ, ষ ও স-এর মূল প্রকৃত অর্থ সহ্য করো, সহ্য করো, সহ্য করো। আসুন আমরাও সহ্য করি।
এর আগে একবার প্রয়াত প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ আর প্রখ্যাত রেডিও জকি, অভিনেতা এবং উপস্থাপক মীরকে নিয়ে এরকম একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষ আহত হয়েছিলেন তাঁর দূর্বলতাকে নিয়ে ক্যারিকেচার করার জন্য। কিন্তু ঋতুপর্ণ ঘোষের ব্যক্তিগত আঘাত লাগা অনেকের পছন্দ হয়নি, তারা মীরের পক্ষ অবলম্বন করেছিল।
কারও ব্যক্তিগতভাবে আঘাত লাগতেই পারে, সে এর জন্য মানসিক ব্যালান্স হারাতেই পারে কিন্তু যার জন্যে সে আঘাত পেল বা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হ'লন ভিতরে ভিতরে সে ব্যাপারে কার্টুন বা ব্যাঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার বা মিম তৈরিকারীর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই, নেই কোনও হেলদোল। সে সৃষ্টির নেশায় মশগুল। তা সে সৃষ্টি বা অনাসৃষ্টি যাই-ই হ'ক।
এই সমস্ত উচ্চমার্গের শিল্পকলা যেমন মিম, ক্যারিকেচার, কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র এগুলি বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটিদের মুখের আদল, বিশেষ কোনো লক্ষ্যনীয় অভ্যাস ইত্যাদি বিষয়বস্তু নিয়ে ক্যারিকেচারের মাধ্যমে যে সৃষ্টি হয় তা নিছক নির্মল হাসির উদ্রেক করার জন্য করা হ'য়ে থাকে। এখন এর উন্নত রূপ মিম। এরকম কার্টুন আমরা আগে প্রতিটি সংবাদপত্রে আগে দেখতে পেতাম। চন্ডী লাহিড়ী, কুট্টি ইত্যাদি ব্যক্তিত্বদের কার্টুন আমরা দেখেছি। যেমন, একজন মোটা ও অন্যজন মুটকি গায়কগায়িকার কার্টুন বানিয়ে তা'তে ক্যাপশান ছিল "গান ধরেছে মোটা, তান ধরেছে মুটি, কে গাইছে, কেমন গাইছে? গাইছে মোটামুটি" এরকম বেশ বুদ্ধিদীপ্ত মজার কার্টুন দেখেছি সেই কুট্টি নাকি চন্ডীলাহিড়ীর কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র তা আজ আর মনে নেই। আর একটা ছিল, ঘোড়ার গাড়ি চড়ে আসা যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির সময় গাড়োয়ানের সেই বিস্ময়কর মজার হাসি ও আনন্দের ব্যাংগত্মক উক্তি, " ইশ-স-স-স আস্তে আস্তে কন, ঘোড়ায় শুনবো আর হাসবো। আস্তে কন, আস্তে কন দাদা!"
যাই হ'ক, কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার, মিম মানুষের নিছক মজার বিষয়, হাসির বিষয় হ'লেও এর আড়ালে যে নিষ্ঠূর মানসিক সফিস্টিকেটেড যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে সেটা আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের বোঝা সম্ভব নয়। আবার অনেকে হয়তো এতে যন্ত্রণা পান না, আনন্দ পান। এই পাওয়া না-পাওয়া, সহ্য করা বা না-করতে পারা কিংবা এই মাধ্যমকে নিজের ফেভারে কাজে লাগানো ইত্যাদি মানসিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। আর নেগেটিভ ভাবে হ'লেও এই শিল্পকলা জনপ্রিয়তার প্রতিফলনে কাজ করে।
যাই হ'ক মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি কে কিভাবে এই কার্টুন কাণ্ড বা মিমকে গ্রহণ করবেন সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সোশাল মিডিয়ায় মমতাকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেখে নোটিস জারি কলকাতা পুলিশের এটাও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। কারও ভাবমূর্তি, কারও চেহারা নিয়ে যদি মজা করা স্বাধীনতা হয় তাহ'লে রাষ্ট্রপ্রধানের ভাবমূর্তি নিয়ে, চেহারা নিয়ে, চরিত্র নিয়ে মজা মস্করা করা শিল্পের নামে সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এটাও তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। আবার প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজীর পোষ্টাদাতাকে প্রশংসা করা সেটাও তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁর উচ্চ মানসিকতার ব্যাপার বা সহ্য শক্তির ব্যাপার কিংবা এই ধরণের পোষ্টকে প্রশ্রয় দানের ব্যাপার বা রাজনৈতিক ফয়দা লাভে সঠিক বা বেঠিক সিদ্ধান্ত যে কোনও একটা হ'তে পারে আর তা একান্তই ব্যক্তিগত।
এখন প্রশ্ন, পোস্ট ঘিরে কেন অতি সক্রিয় কলকাতা পুলিশ? কেন নীরব মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কেন সরব প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ভিডিওটি দেখে অনেকেই খুবই আনন্দিত এবং একই সঙ্গে দুঃখিত।
যাই হ'ক, কিছুদিন আগে The greatest wonder, greatest phenomenon of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়েও এই নাচের ভিডিওর ওপর মিম করা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গীদের পক্ষ থেকে বা 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও প্রতিবাদ আসেনি। যদিও হিন্দু ভগবান বা ঈশ্বরের ওপর বা কোনও ধর্ম গুরুর ওপর কুতসা হ'লে কোনও প্রতিবাদ দেখা যায় না হিন্দুদের পক্ষ থেকে। হয়তো একটু বসন্তের হাওয়ার মত মৃদু নড়ে উঠে আবার স্থির হ'য়ে যায়। এটা হিন্দুদের ক্ষেত্রে সহনশীলতার পরিচয় বলা হ'য়ে থাকে। আবার বিভিন্ন ইউটীউবের ভিডিওয় দেখা যায় এই হিন্দুরাই আবার হিন্দু ধর্মগুরু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রচন্ড উগ্রতার সঙ্গে বিরোধীতায় সামিল। তবে সেখানেও সৎসঙ্গীরাও প্রচন্ড মাত্রায় সহনশীল। তবে এ সহনশীলতা অনন্ত, অসীম যা আবার অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিপদের কারণ হ'য়ে থাকে। কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে রসুলের ওপর কটুক্তি রসুল ভক্তেরা সহ্য করতে পারে না। এটা রসুলের প্রতি, তাদের প্রিয়পরমের প্রতি ভক্তির পরিচয়, ভালোবাসার পরিচয়, প্রেমের পরিচয়। রসুলকে নিয়ে কোনরকম কটু কথা, অসম্মানজনক, অশ্রদ্ধাজনক কোনওরকম উক্তি তারা শুনতে রাজী নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কখনও কখনও এই যে তীব্র ভক্তি, রসুলকে নিয়ে কখনও কখনও এই তীব্র ভক্তি, তীব্র অসহিষ্ণুতা ভয়ের ও ক্ষতির কারণ হ'য়ে দাঁড়ায়। এই অতিরিক্ত তীব্র সহিষ্ণুতা ও তীব্র অসহিষ্ণুতা দু'টোই ঈশ্বর বা ভগবান বা পুরুষোত্তমের প্রতি অপমান ও দুঃখের বিষয়।
এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, "স্পষ্টবাদী হও, কিন্তু মিষ্টভাষী হও। সত্য বল, কিন্তু সংহার এনো না। বীর হও, সাহসী হও কিন্তু তাই ব'লে হিংস্র হ'য়ে বাঘ, ভাল্লুক সেজে ব'সো না। তেজ মানে ক্রোধ নয়কো, বরং বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তা। অন্যায় ক'রো না, কিন্তু অন্যায়কে প্রশ্রয় দিও না। নিজের প্রতি অন্যায়কে সহ্য কর, কিন্তু অন্যের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ ক'রো" ইত্যাদি নানাভাবে তিনি মূল কথা ব'লে গেছেন।
কিন্তু এই যে তিনি প্রেমের কথা, ভালোবাসার কথা বারবার ব'লে গেছেন সেই ভালোবাসার কথা, প্রেমের কথার মধ্যে তিনি প্রতিবাদের কথাও ব'লে গেছেন। ব'লে গেছেন বিভিন্ন রকম ভাবে, ছড়ার মাধ্যমে, কথোপকথনের মাধ্যমে ব'লে গেছেন। সেই মূল কথার মধ্যে তিনি এও বলে গেছেন প্রেম ভালোবাসা যদি থাকে একটা প্রতিবাদও তো থাকবে। তিনি বলছেন যে বিদ্রোহ ভালো না, বিপ্লব ভালো, অমৃতবর্ষী বিপ্লব, বাঁচা ও বাড়ার বিপ্লব, ভালোবাসার বিপ্লব, প্রেমের বিপ্লব, তো সেই প্রতিবাদ মিষ্টি ভাবে হ'তে পারে, দৃঢ়তার সঙ্গে, বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তার সঙ্গে যেটাকে মানে তেজকে অনেকে ক্রোধ মনে করে, তা নয়, তেজ আর ক্রোধ এক নয়, বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তার কথা ঠাকুর যে বললেন, সেই বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তার সঙ্গে, যারা ঠাকুরকে নিয়ে মিম তৈরী করেছে, ওরকম একটা নাচের ভঙ্গিতে যে মঞ্চে প্রবেশ করছে তাঁর শরীরের মধ্যে বিশ্বব্রহ্মান্ডের যিনি মালিক, সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত ঈশ্বর যিনি তাঁকে যিনি নাচ করছেন তাঁর শরীরের সংগে সেঁটে দিয়ে ম্যাচ খাইয়ে, ঠাকুরের মুখাব্যব তার মুখের মধ্যে বসিয়ে দিয়ে মিম তৈরী করা হচ্ছে। সেটার বিরুদ্ধে মিষ্টি ভাবে হলেও বলা যেতে পারে, আমার ভালো লাগছে না, আমার পছন্দ হয়নি এটা খুব দৃঢ়তার সঙ্গে, গাম্ভীর্যের সঙ্গে এই মিষ্টি প্রতিবাদটুকু করা যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে এই যে মূল কথা বলে গেছেন, এই মূল কথার মধ্যে যে প্রেম, ভালোবাসা তার সঙ্গে বারবার বলেছেন এই যে হিংসা করো না, হিংসাকে হিংসা করো, সেই হিংসা করার মধ্যে প্রেম থাকে, ভালোবাসা থাকে, দৃঢ় মজবুত চরিত্র থাকে, একটা প্রতিবাদী কন্ঠ থাকে, একটা ভয়ংকর ভালোবাসার একটা তীব্র বহির্প্রকাশ থাকে, যে বহির্প্রকাশের মধ্যে তারও বাঁচাবাড়ার কথা থাকে, তুমিও বাঁচো, আমিও বাঁচি। আমরাও বাঁচি, তুমিও বাঁচো কিন্তু তোমার স্বভাব, তোমার কথা বলা, তোমার চরিত্র, তোমার অপমান, অশ্রদ্ধা করার অভিসন্ধি তা বন্ধ করো। এ কথাও বলা যেতে পারে মিষ্টি বলিষ্ঠ ভাবে কোনরকম শারীরিক বা মানসিক আঘাত না করেও। কিন্তু সেক্ষেত্রে এই কথার প্রতিফলনও দেখা যায় না সৎসঙ্গী বা অন্য কারও মধ্যে।
অতএব হয় ক্যারিকেচার, কার্টুন বা ব্যাঙ্গ চিত্র বা মিম ইত্যাদির মাধ্যমে এই আনন্দ, মজা বা দুঃখ, যন্ত্রণা উভয়ই মেনে নাও নতুবা উন্নতমানের শিল্পসৃষ্টির মাধ্যমে নিছক আনন্দ, মজা পাওয়ার নামে কিংবা নির্মল হাসির উদ্রেক করার জন্য বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটিদের মুখের আদল, বিশেষ কোনো লক্ষ্যনীয় অভ্যাস ইত্যাদি বিষয়বস্তু নিয়ে কার্টূন বা ব্যাঙ্গ চিত্র, ক্যারিকেচার বা মিম তৈরীর মাধ্যমে যে যন্ত্রণাদায়ক সৃষ্টি হয় তা বন্ধ হ'ক। নতুবা সব সহ্য হ'ক। সব সহ্য হ'ক। মানে, ভাঁড় মে যায় অন্যের দুঃখ, যন্ত্রণা, আঘাত। নিপাত যাক আনন্দ ও মজা লাভের বিরোধীরা।
তাই সহ্য কর, সহ্য কর, সহ্য কর!!! ঐ যে পুরুষোত্তম ঠাকুর রামকৃষ্ণ ব'লে গেছেন বাংলা বর্ণমালায় তিনটে বর্ণ আছে। ঐ তিনটে শ, ষ ও স-এর মূল প্রকৃত অর্থ সহ্য করো, সহ্য করো, সহ্য করো। আসুন আমরাও সহ্য করি।
No comments:
Post a Comment