প্রশ্নঃ Dr bidhan chandra roy যা করেছেন ঠিক করেছেন এই ভণ্ড কে জমি দেননি, জমি দিলে দেশের আরো ক্ষতি হত।
উত্তরঃ Dr Bidhan chandra roy যা করেছেন ঠিক করেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জমি দিলে দেশের ক্ষতি নয় বাংলার ক্ষতি হ'তো। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, বাংলা আরো বড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছে। ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের উপলব্ধি সঠিক। বাংলার এই ক্ষতির জন্য বাংলার শুভচিন্তক ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়কে ধন্যবাদ এবং আপনাদের মত বাংলার সচেতন যুবকদের স্যালুট জানাই। বাংলা থেকে লাথ খেয়ে ঝাড়খন্ডে গেছে, বেঁচে গেছে বাংলা, বেঁচে গেছে ঝাড়খন্ডও, লাভ হয়েছে ঝাড়খন্ডের। ঝাড়খন্ডের অর্থনীতি মজবুত হয়েছে। মজবুত হয়েছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ইত্যাদি। এসবের হাত থেকে বেঁচে গেছে বাংলা। এই ভয়ানক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবার জন্য ঝাড়খন্ডের কাছে কৃতজ্ঞ ও ঋণী বাংলা এবং বাংলার কাছে ঝাড়খন্ড কৃতজ্ঞ ও ঋণী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জায়গা না দেবার জন্য। বাংলায় জায়গা না দেওয়ার ফলে ঝাড়খন্ডের লাভ হওয়ার জন্য ও বেঁচে যাওয়ার জন্য ঝাড়খন্ডের জনগণ আজ কৃতজ্ঞ ও ঋণী বাংলার কাছে।
বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম বিহার রাজ্যের অন্তর্গত পাটনার বাঁকিপুরে। তাঁর পিতার আদিনিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে।
ডঃ বিধান চন্দ্র রায় বাঙ্গাল পিতার আদি নিবাস সূত্রে ।
আর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্মস্থান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুর গ্রামে।শ্রীশ্রীঠাকুর জন্মসূত্রে বাঙ্গাল ও বাঙালী।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও ডঃ বিধানচন্দ্র রায় উভয়েই ছিলেন বাঙ্গাল বাঙালী। উভয়েই ছিলেন ডাক্তার।
দু'জনেই ছিলেন রূপকার। একজন পশ্চিমবাংলার রূপকার আর ঠাকুরের ক্ষেত্রে কম ক'রে বললে বলা হয় তিনি পাবনা জেলার অখ্যাত অন্ধকারাচ্ছন্ন নরক সমান গ্রাম হিমাইয়েতপুরকে এবং জনশূন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শান্ত নিরিবিলি দেওঘরকে প্রাণচঞ্চল স্বর্গপুর বানাবার রূপকার। আর সত্য বললে হয় তিনি বিশ্বব্রহ্মান্ডের রূপকার।
দু'জনেই জনপ্রিয় প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় সসীম জ্ঞানের আধার আর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অসীম অনন্ত জ্ঞানের আধার, এককথায় তিনি সর্বজ্ঞ।
ডঃ বিধান চন্দ্র রায় যন্ত্রণাদায়ক অভিশপ্ত দেশভাগের ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রাণরক্ষা করার জন্য আগত শিশু বৃদ্ধ বৃদ্ধাসহ লক্ষ লক্ষ নরানারীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন মাথাগোঁজার ঠাঁই ও একমুঠো খাবারের ব্যবস্থা ক'রে দিয়েছিলেন।
আর, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন যাতে দেশভাগের মত অভিশপ্ত ঘটনার হাত থেকে দেশবাসীকে বাঁচানো যায়, হিন্দু মুসলমানের দাঙ্গা আটকানো যায় এবং সারাজীবন বিশ্বের সমস্ত আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী মানুষকে প্রকৃত বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার পথ দেখানো যায়।
কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দুই বাংলার কোথাও ঠাঁই পেলেন না।
যাই হক, সময়টা সাল ১৯৪৭- ৪৮, দেশভাগের ফলে বর্তমান বাংলাদেশ তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের পূর্ব বাংলা (ভারতভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তান) থেকে লক্ষ লক্ষ নারীপুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ বৃদ্ধা হিঁদু বাঙালি পশ্চিম বাংলায় অসহায় অবস্থায় শুধুমাত্র প্রাণ বাঁচাবার জন্য বহুবছরের বাস্তুভূমি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছে। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের ভয়াবহ অবস্থায় খাদ্য ও মাথাগোঁজার ঠাই দিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন দু'মুঠো খাবারের প্রতিশ্রুতি। ঠিক ভারত ভাগের একবছর আগে ১৯৪৬ সালে ২রা সেপ্টেম্বর হাওয়া পরিবর্তনের কারণে শ্রীশ্রীঠাকুর ভারতের তৎকালীন বিহার বর্তমান ঝাড়খন্ডের দেওঘরের গাছগাছালিতে ভরা শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে চলে আসেন। কিন্তু দেশভাগের ভয়াবহ পরিণতির কারণে তাঁর জন্মভূমি ওপার বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হ'য়ে যাওয়ায় নিজ জন্মভূমিতে আর ফিরে যাবার সুযোগ হয়নি। যখন তাঁর জন্মভুমি ওপার বাংলা ১৯৭১সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হ'য়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয় তাঁর ঠিক ২বছর আগে ১৯৬৯ সালে শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ ত্যাগ ক'রে অমরধামে চলে যান। তাঁর জন্ম সাল ১৮৮৮ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৮ বছর শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও প্রৌঢ়ত্বের দিনগুলি কাটিয়ে একেবারে খালি হাতে তাঁকে চলে আসতে হয় ভারতের বিহার রাজ্যে দেওঘর জেলায়। তারপর ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বাকী ২৩ বছর দেওঘরে কাটিয়ে ভগ্নহৃদয়ে নিজের বাপদাদার ভিটেমাটি, নিজের জন্মভূমি, শৈশব থেকে প্রৌঢ়ত্বের রঙ্গীন দিনগুলি, পদ্মার বুকে, পদ্মার পাড়ে ছোটোবেলা থেকে বড়বেলা পর্যন্ত কত সুখ দুঃখের স্মৃতি, বিশাল আশ্রম জুড়ে ঝমঝম ভরা সৎসঙ্গ সংসার, দেশ বিদেশের কত হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা ইত্যাদি অজস্র স্মৃতি বেদনাভরা হৃদয়ে অশ্রসজল চোখে হাতড়ে হাতড়ে চলে যান ইহলোকের লীলা শেষ ক'রে। অন্তত একবারের জন্য নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাবার ইচ্ছা তাঁর পূরণ হয়নি। পূরণ হয়নি কারণ দেশনেতৃত্ব ও দেশের প্রথিতযশা প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব তাঁকে চিনতেই পারেনি, অন্তত একবারের জন্য তাঁর পিতৃভূমি-মাতৃভূমিকে, তাঁর জন্মভুমিকে চোখে দেখার ইচ্ছাকে, তাঁর কান্নাকে কেউই বোধ করেনি। তারপর তাঁর ইচ্ছা ছিল বিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অর্থাৎ এ বাংলায় জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাবার। কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছাও পূরণ হয়নি। পূরণ হ'তে দেয়নি বাঙালি। নিরুপায়বশতঃ তাঁকে চলে যেতে হয় তৎকালীন বিহার বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগণা বিভাগের দেওঘর জেলায়। আজকের মত জমজমাট ছিল না তখন দেওঘর ঠাকুরবাড়ি অঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পরিবেশ। একদিকে দূরে ডিগড়িয়া পাহাড়, আর একদিকে দারোয়া নদী, গ্রীষ্ণকালে নদীর জল অপ্রতুল হ'লেও বর্ষাকালে ভরা নদীর কল্লোল ধ্বনিতে মন কেমন জানি ক'রে ওঠে। জন কোলাহল থেকে দূরে, বহুদূরে রাস্তার লাল মাটি, মহুয়া সারি, শুধুই আম আর ক্যালিপ্টাস গাছের সারি আর ধু ধু ফাঁকা জমিতে গা ছমছম করা শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশে ঠাকুর বসে থাকতেন পথের দিকে চেয়ে, কখন আসবে তাঁর হারিয়ে যাওয়া মেষ শাবকেরা। ঘোড়ার গাড়ির ঘোড়ার খুড়ের শব্দে সচকিত হ'য়ে উঠতো মনপ্রাণ! এই বুঝি এলো ফিরে তাঁর আপনজন মানুষেরা! এমনই ছিল তাঁর মানুষের জন্য ক্ষিধে, ছিল্ল কান্না। মহুয়ার ফুলের গন্ধে ভোরের হিমেল হাওয়ায় স্বপনপুরীর মত মনে হ'তো রহস্যময়তায় ঘেরা চারপাশ। মনে হ'তো কে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে, বলছে, আয়, আয়, আমার কাছে আয়, এখানে এলে জীবন খুঁজে পাবি। আনন্দে থাকার রসদ পাবি। ঠাকুর তাঁর মায়াময়, আলোময়, রূপময় চোখে মিষ্টি মধুর হাসি মুখে মেখে চেয়ে থাকতো ফাঁকা রাস্তার দিকে, কখন কে আসবে। বড় বেদনাময় ছিল সেই সদ্য ছিন্ন হওয়া নাড়ীর টানের মত নিজ বাসভূমি ত্যাগ ক'রে আসা দিনগুলি। বড় ফাঁকা লাগে চারপাশ! বড় একা লাগে! মানুষ পিয়াসী তিনি! মানুষ ছাড়া তিনি বাঁচতে পারেন না। মানুষই তাঁর বাঁচার রসদ, অক্সিজেন। মানুষ এলে শিশুর সারল্য নিয়ে আনন্দে ডগমগ ক'রে উঠতেন। মানুষের জন্য তিনি পাগল ছিলেন। নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতেন প্রায়ই। প্রচুর মানুষের মাঝে যখন আসর জমে উঠতো তখন সব নিয়ম ভেঙে যেত। তখন তাঁকে নাওয়া খাওয়ার সময় স্মরণ করিয়ে দিলে বা আগত মানুষজনকে চলে যেতে বললে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন। রসিক প্রভুর রসের মাঝে বেরসিকের মত কাজ করলে তিনি বিরক্ত হতেন। বলতেন, নিয়ম মেনে কি আর আড্ডা মারা যায়। যতক্ষণ মানুষ থাকতেন ততক্ষণ তিনি ঠাঁই বসে থাকতেন। মানুষের এক তীব্র নেশা সব নেশাকে হারিয়ে দেয়! এখনও সেই একই দৃশ্য আমরা দেখি শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা ক্লান্তিহীন শ্রান্তিহীন ঠাঁই বসে থাকেন যতক্ষণ মানুষ থাকে।
যাই হ'ক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জন্মভূমি ওপার বাংলা থেকে চলে আসার পর এ বাংলায় ঠাকুরের থাকার ও তাঁর ওপারের স্বাধীনতার সময়ের দেড় কোটি টাকা মূল্যের বিশাল আশ্রমকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ বাংলায় বর্ধমান জেলার পানাগড়ে ৬০০০ হাজার বিঘা জমি দিতে রাজী হয়েছিলেন কিন্তু তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীবিধান চন্দ্র রায়ের মানসিকতা ছিল তা কেটে ৮০০ বিঘে প্রদান করার। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর সেই প্রস্তাব বাতিল ক'রে দেন, কারণ তাঁর যে স্বপ্ন ছিল তা রুপায়িত করতে ৮০০বিঘা যথেষ্ট বিবেচিত ছিল না তাঁর কাছে। ১৯৪৬ সালে যখন তিনি ওপার বাংলায় তাঁর বিশাল আশ্রম যার তৎকালীন আজ থেকে ৭৮বছর আগে মূল্য ছিল দেড় কোটি টাকা সেই বিশাল সম্পত্তি ছেড়ে খালি হাতে চলে এসেছিলেন তখন এ বাংলায় ৮০০ বিঘা জমি তাঁর কাছে কোনও মূল্য ছিল না? কেন? ১ বা ২ বিঘা জমি নয় ৮০০ বিঘা জমি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন!? কেন?
মাত্র ৫৮ বছর তিনি কাটিয়েছিলেন বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুর গ্রামে। আর এই অল্প সময়ের ব্যবধানে অক্লান্ত অপরিসীম পরিশ্রমে "মানুষ আপন টাকা পর যত পারিস মানুষ ধর" এই নীতির ওপর দাঁড়িয়ে শুধু মানুষকে ভালোবেসে মানুষের কাঙ্গাল হ'য়ে মানুষকে বাঁচাবার জন্য ও বেড়ে ওঠার পথ দেখাবার জন্য ধীরে ধীরে শূন্য থেকে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক সৎসঙ্গ সাম্রাজ্য, যা ছিল মানুষ তৈরীর কারখানা। আর অপমান, অপবাদ, কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, মারদাঙ্গা, আগুন, কোর্ট কাছারি, হত্যার ষড়যন্ত্র ইত্যাদির হিমালয় সমান বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে এতদিনের ঘাম রক্ত দিয়ে গড়ে তোলা ছবির মত সুন্দর স্বপ্ননগরী সৎসঙ্গ আশ্রম ১৯৪৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এক সকালে তিনি বর্তমান মূল্য কোটি কোটি টাকার বিশাল সম্পত্তি পিছনে ফেলে রেখে এসে দাঁড়ালেন শূন্য হাতে একেবারে পথে, ফিরে গেলেন আবার সেই শূন্যতে।
কিন্তু সেদিন দেশ নেতারা কেউ ফিরেও তাকায়নি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বেদনাক্লিষ্ট মুখের দিকে। দেশনেতারা সবাই ব্যস্ত দেশ পুনর্গঠনে, ভাঙ্গা ঘর ঠিক করতে। কারও সময় নেই তাঁকে নিয়ে ভাবার। কে তিনি? সবার মত তিনিও একজন সাধারণ মানুষ। ব্যস এই তাঁর পরিচিতি। এতবড় সাজানো স্বপ্নপুরীর মত সংসার ছেড়ে চলে গেলেন তিনি কিন্তু কেউ তাকে তাঁর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবার জন্য প্রয়োজনই মনে করলো না। সব ধীরে ধীরে গ্রাস হ'তে লাগলো তাঁর মর্তে গড়ে তোলা স্বর্গপুরী সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে। আজও ১৩৬ বছরে নানা আইনী জটিলতায় আটকে আছে তাঁর বিশাল সম্পত্তি বাংলাদেশে।
কিন্তু এ বাংলায় যদি তিনি আশ্রয় পেতেন, আশ্রয় পেতেন পানাগড়ে পুনরায় তাঁর স্বপ্নের সাম্রাজ্য মানুষ তৈরীর কারখানা' গরে তোলার জন্য তাহ'লে আজ বাংলা সারা বিশ্বে মাথা উঁচু ক'রে দাঁড়াত। ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম বিহারে হ'লেও তিনি জন্মসূত্রে এ দেশী কিন্তু পূর্ব্ব পুরুষ সূত্রে বাঙ্গাল ছিলেন। তাই একজন হিন্দু বাঙ্গাল বাঙালী হ'য়েও, একজন প্রাজ্ঞ উচ্ছশিক্ষিত সমঝদার মানুষ হ'য়েও, এতবড় একজন বাংলার রূপকার হ'য়েও তিনি মানব শরীরে নেমে আসা বিশ্বব্রহ্মান্ডের রূপকার, নিদেনপক্ষে ওপার বাংলার নরক তুল্য হিমাইয়েপুর ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জন কোলাহল থেকে দূরে অনেকদূরে মহুয়ার গন্ধে ভরপুর, শাল নির্জন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে চিনতে পারেননি। দেশ ভেঙে দু'টূকরো হয়ে গেল, বর্তমানে তিন টুকরো, এতবড় ঘটনা ঘটে গেল ভারতের বুকে অথচ শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেশের উচ্চ নেতৃবৃন্দ কোনও আলোচনা পর্যন্ত করেননি। কি করলে স্বাধীনতা আন্দোলনকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া যায়, কি করলে দেশভাগ রোধ করা যেতে পারে, কি করলে হিন্দু মুসলিম ঐক্য অটুট থাকে, কিভাবে ব্রিটিশের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি কোনও আলোচনা করার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুরকে যোগ্য, দক্ষ মনে করেননি, প্রয়োজন মনে করেননি তৎকালীন দেশের নেতৃত্ব ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা। কিন্তু ততদিনে তিনি তিল তিল ক'রে বিশাল সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন দেশ স্বাধীন বা দেশ ভাগ হওয়ার আগেই। দেশস্বাধীন বা ভাগ হওয়ার অনেক অনেক আগেই দেশের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ ও দেশ বিদেশের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা তাঁর আশ্রম পরিদর্শন করেছেন, তাঁর সঙ্গে দেখে করেছেন, তাঁর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেছেন সার্বিক পরস্থিতি নিয়ে, রাজনীতি, ধর্ম, শিক্ষা, সাহিত্য, আইন, বিজ্ঞান, বিবাহ, স্বাধীনতা আন্দোলন, দেশভাগ, দেশের ক্ষমতা হস্তান্তর, ব্রিটিশদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন কিন্তু সমস্যা সমাধানে তাঁর পরামর্শকে কোনও গুরুত্বই দেননি তাঁরা দেশের মহাবীর মহাপন্ডিত ভীষ্ম পিতামহরা।
ঠিক তেমনি, ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় আসার ও থাকার এবং তাঁর মানুষ তৈরীর কারখানা বিশাল 'সৎসঙ্গ' পুনরায় বাংলার বুকে গড়ে তোলার একান্ত আন্তরিক ইচ্ছেকে গুরুত্ব ও পাত্তায় দেয়নি এ বাংলার রূপকার ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ও বাংলার তামাম প্রাজ্ঞ বুদ্ধিজীবিরা। অথচ কে না তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন দীর্ঘ সময়, তাঁর আশ্রম পরিদর্শন করেছেন, তাঁর প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর মিশন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কত্থা বলেছেন? বাংলা তথা দেশের প্রায় সমস্ত দিকপালেরা। কিন্তু বাংলায় তাঁর স্থান হ'লো না। তাঁকে এ বাংলায় রাখার জন্য কেউ সচেষ্ট হ'লো না। নেতাজী তাঁর কাছে এসেছেন, এসেছেন তিন তিনবার, কথা বলেছেন কিন্তু তাঁর পথ ও মোট গ্রহণ করেননি। মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন, দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, 'সৎসঙ্গ আশ্রম ' ঘুরে অপার বিস্ময়ে বলেছিলেন আমার স্বপ্নের ভারত ইতিমধ্যে এখানে গড়ে উঠেছে, শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, কথা বলেছিলেন, কিন্তু তাঁকে জীবনে গ্রহণ তো দূরের কথা দেশের উন্নতি বিধানে তিনি তাঁকে দেশের স্বাধীনতা, দেশভাগ ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর মতামতের প্রয়োজন মনে করেননি, ধর্ম জগতের লোক আখ্যা দিয়ে তাঁকে উপেক্ষা করেছেন, দেশের কঠিন জটিল বিতর্কিত সমস্যাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেনি। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যে সর্ব সমস্যার সমাধানী পুরুষ সেই ধারণাই দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছিল না। প্রথমত তাঁর কথা তাঁরা শোনার প্রয়োজন মনে করেননি, দ্বিতীয়ত, শুনলেও, বুঝলেও ঠাকুরের কথা শর্ট কার্টে যে হবার নয়, দীর্ঘ সুচিন্তিত নিখুঁত পরিকল্পিত ব্যাপার, তা তাঁরা বুঝেছিলেন তাই রাজনৈতিক ডামাডোল ও হৈ হট্টগোলের বাজারে তাঁর কথা তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। দেশ স্বাধীনতার পরে যদি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ বোস, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইত্যাদি এদের মত বিদগ্ধ, প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা বেঁচে থাকতেন তাহ'লে ভারতের পরবর্তী অবস্থা, পরিস্থিতি কি হ'তে পারতো তা আজ কল্পনার ব্যাপার। আর সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুরের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হ'য়ে উঠতো তা কল্পনার চোখে যদি দেখা যায় তাহ'লে ভাবলে বিস্ময়ে শিউড়ে উঠতে হয়। কারণ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ বোস, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এদের চারজনের সঙ্গে এবং আরো অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের পূর্ব পরিচয়, দেখা, কথাবার্তা হয়েছিল, সম্পর্ক ছিল মিষ্টি মধুর। কিন্তু বিধাতা বোধহয় অন্যরকম কিছু চেয়েছিলেন।
আর, ডঃ বিধানচন্দ্র রায় যদি শ্রীশ্রীঠাকুরের চাহিদা অনুযায়ী ৬০০০ হাজার বিঘা সৎসঙ্গের জন্য অনুমোদন ক'রে দিতেন তাহ'লে আজ বর্ধমানের পানাগড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশাল 'সৎসঙ্গ আশ্রম' গড়ে উঠতো আর বাংলা বিশ্বের মানচিত্রে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার ক'রে থাকতো। বাংলার অর্থনীতি এক শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হ'তো ভারতের অর্থনীতিতে। দেশবিদেশের নানা ভাষাভাষীর আগমনে এক মহামিলন ক্ষেত্র হ'য়ে উঠতো বাংলার পান্ডুয়া। যা আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি দেওঘরের বুকে। আজ যখন গাড়ীতে ক'রে বাই রোডে পানাগড়ের ওপর দিয়ে যাই তখন প্রতিবার রাস্তার দু'পাশের ধু ধু ফাঁকা জমিতে কল্পনার চোখে দেখি 'সৎসঙ্গ' আশ্রম ঠাকুর বাড়ির ছবি তখন বুকের ভেতরটা কেমন জানি ক'রে ওঠে, খামচে ধ'রে বসে থাকি চুপ ক'রে জানালা দিয়ে বাইরের দ্রুত বেগে চলে দৃষ্যের দিকে তাকিয়ে, চোখের সামনে জানালাটা ঝাপসা হ'য়ে ওঠে নিজের অজান্তে।
আগামী দিন দেওঘর সারা বিশ্বের আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু, জ্ঞানী মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র হ'য়ে উঠবে। যার ইঙ্গিত স্বয়ং ঠাকুর নিজেই দিয়ে গেছেন। তাঁর জবানীতে "এমন একদিন আসবে মানুষ জসিডি স্টেশনে নেমে ওখান থেকেই প্রণাম ক'রে ফিরে যাবে বাঁচা-বাড়ার রসদ সাথে নিয়ে আবার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে। জসিডি স্টেশন থেকে ভিতরে অতদূর ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার সুযোগ হবে না আর বাঁধ ভাঙ্গা মানুষের ভিড়ের কারণে। কি সাঙ্ঘাতিক ডেভ্লপমেন্টের ব্যাপার হ'য়ে দাঁড়াবে সেক্ষেত্রে সরকার ও আশ্রম কর্তৃপক্ষের। হয়তো জসিডির আশেপাশেই গড়ে উঠবে মূল আশ্রমের রেপ্লিকা অর্থাৎ হুবহু মূল আশ্রম। আজ থেকে বহু বছর পরে লাল-সাদা-কালো মানুষে ভরে যাবে মূল আশ্রম আর মূল আশ্রমের রেপ্লিকা। সেদিন ভারতীয় বিশেষ ক'রে হয়তো বাঙালীদের সুযোগই ঘটবে না। ১৯৪৬ সালে ডঃ বিধানচন্দ্র রায় ও বাংলার প্রাজ্ঞদের দ্বারা উপেক্ষিত ও স্বঘোষিত সনাতনীদের দ্বারা অপমানিত এবং আম বাঙ্গালীর একাংশের দ্বারা অশ্লীল গালাগালিতে জর্জরিত বাঙালী ঠাকুর, বাঙালী হ'য়ে জন্ম নেওয়া ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত স্থান 'সৎসঙ্গ আশ্রম, ঠাকুরবাড়ি' দর্শন লাভের সুযোগই ঘটবে না বাংলার বাঙালীদের। ঘোর কলি যুগের অবসান আর সত্য যুগে প্রবেশের ট্রাঞ্জিশানাল মুহূর্তে আগামী সৎসঙ্গের যে আন্দোলন তা' যে বাংলার বুক থেকে উঠবে না তারও ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন বিশ্বের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় The greatest wonder. the greatest phenomenon of the world, The incarnation of the formless Supreme power শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। এটা কি তাঁর অভিমান!? ঈশ্বরেরও অভিমান, দুঃখ হয়!? কি জানি। ঈশ্বরের কি হয় আর কি না হয় তা মানুষের জ্ঞানের বা দর্শনের বাইরে ও অতীত। জয়গুরু।
No comments:
Post a Comment