Powered By Blogger

Friday, June 9, 2023

প্রবন্ধঃ জীবকোটি ও ঈশ্বরকোটি পুরুষ।

আমরা সাধারণ মানুষ যারা বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে ঘুরে মরি, রিপু তাড়িত জীবনের অধিকারী হ'য়ে এই ছোট্ট অল্প দিনের জন্য আসা জীবনে সমস্যা জর্জরিত হ'য়ে শরীরে-মনে-আত্মায় ক্ষতবিক্ষত হ'য়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করি তারা আমরা জীবকোটি মানুষ। অর্থাৎ জীবত্মায় শুরু জীবাত্মায় শেষ। বৃত্তি-প্রবৃত্তির আঠায় লেপ্টে থাকে আমাদের ছোট্ট মন ও হৃদয় তা আমরা ব্যবহারিক জীবনে যে যত বড় ও সফল আর ছোটো ও অসফল হ'ই না কেন। ফলে আমরা জ্ঞানের আলোক প্রাপ্ত হওয়া থেকে বঞ্ছিত হ'ই। আর তাই জীবাত্মার অর্থাৎ জীবের আত্মা থেকে মহান আত্মা অর্থাৎ মহাত্মায় উত্তরণ ঘটে না।
পরিশেষে পরমাত্মায় বিলীন হয় না জীবাত্মা থেকে উদ্ভুত মহাত্মারও। জীবের আত্মায় অর্থাৎ রিপুতাড়িত বৃত্তির বৃত্তে ঘুরপাক খেয়ে অন্তিম লাভ করে জীব। এমনকি মহাত্মারও জীবন সুক্ষ্ম ইগোর কারণে জীবন্ত রক্তমাংসের পরমাত্মায় আত্মসমপর্ণ করতে পারে না। তাই ঈশ্বরকোটি পুরুষ হওয়া থেকে বঞ্চিত হয় কোনও কোনও জীবন উচ্চমার্গের আধ্যাত্মিক জীবনের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও।
আর, জীব যখন বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে ভেদ ক'রে ষড়রিপুকে জয় ক'রে তার জীবনের গতিকে ঊর্ধ্বপানে এগিয়ে নিয়ে যায়, বৃত্তিভেদী টানে বৃত্তি-প্রবৃত্তির অধীশ্বর হ'য়ে প্রকৃত বাঁচা-বাড়ার লক্ষ্যে মহান গতির দিকে ধাবিত হয় ইষ্টকে বা প্রেষ্ঠকে লক্ষ্য ক'রে তখন অবশেষে জীবাত্মা মহাত্মায় পরিণত হয়।
এই যে বৃত্তি-প্রবৃত্তির অধীশ্বর হ'য়ে রিপুকে কন্ট্রোল ক'রে করায়ত্ত করে, তা হয় একমাত্র আদর্শের প্রতি অটুট টানের ফলে। এই আদর্শ আমার হ'তে হবে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ অর্থাৎ আমার জীবন্ত ইষ্ট বা প্রেষ্ঠ। এই জীবন্ত ইষ্ট বা প্রেষ্ঠের প্রতি অচ্যুত অস্খলিত অটুট টানের ফলে খেয়াল মাফিক উচ্ছৃঙ্খল উদভ্রান্তের মতো ছুটে চলা বৃত্তি-প্রবৃত্তির সুন্দর সমাহার ঘটে। বৃত্তি-প্রবৃত্তির অধীশ্বর হয় সে। ষড়্ররিপু তার প্রভু হয় না, ষড়রিপুর প্রভু হয় সে। তার কথায় ষড়রিপু ওঠে বসে। বৃত্তি-প্রবৃত্তির লাগাম থাকে তাঁর হাতে। তাঁর আত্মা জীবাত্মার স্তর পেরিয়ে মহাত্মায় উত্তীর্ণ হ'য়ে পরমাত্মায় মিলিয়ে যায়।
আর, তখন তাকেই বলে ঈশ্বরকোটি পুরুষ। আর এ এক জন্মের ব্যাপার নয়। বহু জন্ম সাধনার ফলে ও ব্রহ্মে অর্থাৎ বৃদ্ধিতে বিচরণের ফলে ঈশ্বরকোটি পুরুষরূপে জন্মলাভ করে। যে কেউ ঈশ্বরকোটি পুরুষ হ'তে পারে না। আবার ঈশ্বরকোটি পুরুষ নেবে আসার জন্যেও সেইরূপ আধার চাই। আর এই ঈশ্বরকোটি জনমই শ্রেষ্ঠ জনম।
ঈশ্বরকোটি মানুষ কর্মফল ভোগ করে না। আর জীবকোটি মানুষকে কর্মফল ভোগ করতেই হয় জন্মজন্মান্তর।
এবার দেখি শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর-----ঈশ্বর অনুগামী পুরুষ যারা তারা ঈশ্বরকোটি ৷ তাঁরা সব কাজের মধ্যে ঈশ্বরকে নিয়ে চলেন ৷ আর , কাম , ক্রোধ , লোভ , মদ , মোহ , মাৎসর্য্য , ইত্যাদির অনুবর্তী হয়ে যারা চলে তারা জীবকোটি মানুষ ৷
"বৃত্তি-আঠায় লেপটে থাকে
ছোট্ট হৃদয়খান,
জীবকোটি তুই তা'রেই জানিস
অজানাতেই স্থান।"
আবার,
"প্রেষ্ঠনেশার অটূট টানে
বৃত্তি-সমাহার,
ঈশ্বরকোটি তাঁকেই জানিস্
শ্রেষ্ঠ জনম তাঁ'র।"---শ্রীশ্রীঠাকুর।
শ্রীশ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ বললেন — "অবতার বা অবতারের অংশ, এদের বলে ঈশ্বরকোটি আর সাধারণ লোকদের বলে জীব বা জীবকোটি। যারা জীবকোটি তারা সাধনা করে ঈশ্বরলাভ করতে পারে; তারা সমাধিস্থ হয়ে আর ফেরে না।
আর, “যারা ঈশ্বরকোটি — তারা যেমন রাজার বেটা; সাততলার চাবি তাদের হাতে। তারা সাততলায় উঠে যায়, আবার ইচ্ছামতো নেমে আসতে পারে।
জীবকোটি যেমন ছোট কর্মচারী, সাততলা বাড়ির খানিকটা যেতে পারে ওই পর্যন্ত।” যারা জীবকোটি, তারা মনে করলেই মুক্ত হতে পারে না I জীবেরা কামিনীকাঞ্চনে বদ্ধ I ঘরের জানালা স্ক্রু দিয়ে আটা, বেরুবে কেমন করে?"
চেষ্টা করলাম ঈশ্বরকোটি ও জীবকোটি পুরুষ ব্যাখ্যা করার।
আসুন আমরা সেই সাধনায় ব্রতী হ'ই। জয়গুরু।
প্রবি।
উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী,
হুগলী।
( ঈশ্বর ও ঈশ্বরকোটি পুরুষ হ'লেন শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা। )

No comments:

Post a Comment