Powered By Blogger

Saturday, June 3, 2023

প্রবি সমাচার ১৯

ঈশ্বর ও মানবতা।

গল্পটা চোখে পড়লো। ভালো লাগলো, সঙ্গে একটা খটকা লাগলো মনের মাঝে। তাই লেখাটা পড়ে মনের মধ্যে লাগা খটকা একবার খোলা মনে বিশ্লেষণ ক'রে লেখার মধ্যে দিয়ে মেলে ধরলাম নিজের কাছে। 
"গল্পটা হচ্ছে বাবা তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে মন্দিরে গেছে। মন্দিরে প্রবেশ পথের দু'দিকে দু'টো পাথরের সিংহ দেখে ভয় পেয়ে যায়। সে কিছুতেই সেই মন্দিরে প্রবেশ ক্রতে চায় না। তাই তার বাবা তাকে বলে যে, ঐ দু'টো পাথরের তৈরী সিংহ, ওরা কোনও ক্ষতি করতে পারে না। তখন সেই কথা শুনে মেয়েটি তার বাবাকে বলে যে, পাথরের তৈরী সিংহ যদি কোনও ক্ষতি করতে না পারে, তাহ'লে পাথরের তৈরী ঈশ্বর কিভাবে আশীর্ব্বাদ দেবে? উত্তর শুনে বাবা আর কিছু বলতে পারলো না। পরে সেই ঘটনা সে ডায়রিতে লিখে তার নীচে লিহে রাখলো, আমার মেয়ের উত্তরে আজও আমি বাক্রুদ্ধ। সেদিন থেকেই আমি মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরকে খুঁজেছি, পাথরের মূর্তিতে নয়। কিন্তু আজও আমি ঈশ্বর খুঁজে পাইনি, পেয়েছি মানবতা।" 

বাঃ!!!!! অপূর্ব!!!!!! শেখার আছে। "সেদিন থেকে আমি মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর খুঁজেছি, পাথরের মূর্তিতে নয়।"------ এই পর্যন্ত শেখার আছে। কিন্তু তারপরে আছে অসম্পূর্ণতা।

তারপরে কি আছে? তারপরে আছে, "আমি ঈশ্বর খুঁজে পাইনি, পেয়েছি মানবতা।"
এইখানেই অসম্পূর্ণতা! এইখানেই উদারতার ভঙ্গি! এইখানেই তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকা! এইখানেই লোকদেখানো ভাবালুতা! এইখানেই ভালো মানুষ সাজার প্রবণতা! এইখানেই অজ্ঞানতা! এইখানেই মিথ্যের বেসাতি! এইখানেই বেঈমানি! এইখানেই অস্বীকার! এইখানেই ভন্ডামি! এইখানেই কপটতা! এইখানেই নেমকহারামি! এইখানেই নরক!!!!!!
ঈশ্বর আর তথাকথিত মানবতা এক নয়। ঈশ্বর আর মানবতা সমার্থক! ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া হাতের মোয়া নয় ঠিক তেমনি মানবতাও সস্তা বাজারি শব্দ মাত্র নয়! ঈশ্বর ঈশ্বর ক'রে চিৎকার করলেই ঈশ্বর এসে ধরা দেবেন আর মানবতা মানবতা ক'রে বাজার গরম করলেই মানবতা প্রকট হ'য়ে উঠবে তা নয় কিন্তু। এটা যেন আমরা ভুলে না যাই, জনম জনম সাধনা ক'রেও ঈশ্বরকে খুঁজে পায়নি কত তথাকথিত সাধক, মুনি, ঋষি, সন্ন্যাসী!!!! আর অনেক অনেক অ-নে-ক পূর্ব জন্মের সুকৃতি না থাকলে তথাকথিত মানবতা নয় মানবতার প্রকৃত আসল রূপ ঈশ্বরকে মানুষের মধ্যে মানুষ রূপে খুঁজে পাওয়া যায় না। ঈশ্বর আমার বাপের চাকর বা পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যে চাওয়া মাত্র, ডাকা মাত্র, তুড়ি দেওয়া মাত্র এসে হাজির হবে আমার সামনে। কঠিন ভয়ংকর পরীক্ষায় ফেলে নিরখ পরখ ক'রে দেখে নেবে, চিনে নেবে, বাজিয়ে নেবে ঈশ্বর নিজের মালকে নিজে! এখানে ভায়ার কোনও ব্যাপার নেই। এর জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে ভক্তকেই।
প্রকৃত মানব প্রেমিক যে সে ঈশ্বরকে খুঁজে পাবেই পাবে মানুষের মাঝে। ঈশ্বর অনেকবার মানুষ রূপে মানুষের মাঝে এসেছেন, লীলা করেছেন আবার চলে গেছেন চোখের জলে তাঁর সন্তানদের 'আমার কাছে আয়, আমার কাছে আয়' ব'লে ডাকতে ডাকতে কিন্তু বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আপাদমস্তক ডুবে থাকা মানুষ তথাকথিত মানবতার পূজারী তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি, মুখ ঘুরিয়ে থেকেছে, চলে গেছে তাঁকে অবজ্ঞা ক'রে রিপু তাড়িত হৃদয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির তীব্র টানে অহঙ্কার পূর্ণ আমিত্ব নিয়ে আর পাথরের বা মাটির মূর্তি বা কাগজের ছবির মধ্যে ঈশ্বরকে পুজো করেছে নিজের, শুধুমাত্র নিজের কামনা বাসনাকে, চাহিদাকে পূরণ করবার জন্যে কিছু না ক'রে পাওয়ার তাগিদে।
আর কেউ কেউ উদারতার ভঙ্গিতে তথাকথিত মানবতার ঢাক পিটিয়ে মানবতা মানবতা ব'লে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে ভন্ডামির ঢেঁকুর তুলে নিজেকে ঈশ্বরের প্রকৃত পূজারী ব'লে ঘুরিয়ে সেই আকাশের অমূর্ত ভগবানকেই প্রতিষ্ঠা দিতে সচেষ্ট থেকেছে। সেজেছে রঙচঙে সাধু!
তাই মানুষ রূপে মানুষের মাঝে ঈশ্বর জীবন্ত রক্তমাংস শরীরে থাকা সত্ত্বেও মেয়েটির বাবা ঈশ্বরকে খুঁজে পায়নি কারণ বাবা মেয়ের কাছে জ্ঞানী মহান সাজতে চেয়েছিল! কারণ মেয়ের মহামূল্যবান প্রশ্নের প্রকৃত, সঠিক, নির্ভুল, নিখুঁত উত্তর দেওয়া বাবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ বাবার সেই আধার ছিল না মেয়ের সেই গূঢ় প্রশ্নের জবাব দেয়। আর জীবন্ত ঈশ্বরের কাছে আছে চরিত্র গঠনের মরকোচ! ফুল বেলপাতা চন্দন ইত্যাদি দিয়ে জীবন্ত ঈশ্বরের পুজো হয় না অমূর্ত ঈশ্বরের মত। জীবন্ত ঈশ্বরের পূজোর উপকরণ ভক্তের জীবন, ভক্তের চরিত্র! অমূর্ত ঈশ্বর অর্থাৎ পাথরের ঈশ্বর, মাটির ঈশ্বর বা ছবির ঈশ্বরের সামনে ওসব সুন্দর পবিত্র জীবন, চরিত্র ফরিত্র উপকরণের দরকার পড়ে না, ওসব বকোয়াস! ফুল, বেলপাতা, ধূপ, ধূনো, প্রদীপ, কাঁসর, ঘন্টা, ঢাক ঢোল, ভুল উচ্চারণে উৎকট কন্ঠে মন্ত্র পাঠ, পাঁঠাবলি, মোষবলি, আলোর ঝলকানি, মাইকের চিৎকার ইত্যাদিই অমূর্ত ঈশ্বর বা পাথর, মাটি দিয়ে তৈরী বা কাগজে আঁকা ঈশ্বর পূজোর উপকরণ! তাই মেয়েটির বাবা নিজের কাছে 'ঈশ্বর খুঁজে পাইনি' ব'লে পাশ কাটিয়ে মানবতার দোহাই দিয়ে মহান সাজতে চেয়েছে।
এরকম ধর্ম্মের ধ্বজা ওড়াবার বা ঈশ্বর আরাধনার আনাড়ি ভন্ড পুজারী যারা তাঁরা কোনোদিনই ঈশ্বরকে খোঁজেনি। উপরন্ত তারা ঈশ্বরকে আয়ের আর সমাজে আত্মপ্রতিষ্ঠার মজবুত উপকরণ বানিয়ে মৌরসি পাট্টা সাজিয়ে বসেছে। আর ঈশ্বর নেই, ঈশ্বর নেই ব'লে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে মানবতার ধ্বজা উড়িয়ে রক্তমাংসের মানুষ রূপে মানুষের বাঁচা ও বাড়ার প্রকৃত পথ, সত্য পথ, সঠিক নিখুঁত ও নির্ভুল পথ দেখাবার জন্য নেবে আসা ঈশ্বরের পথকে করেছে অবরুদ্ধ। আর সাধারণ মানুষ, ভাঙাচোরা মানুষ, বেকুব মানুষ, সরল সাদাসিধা মানুষ, মূর্খ মানুষ এদের কথায় বিশ্বাস ক'রে জীবন্ত ঈশ্বরকে করেছে, করছে অস্বীকার আর নিজেদের জীবনকে ক'রে তুলেছে ও তুলছে তীব্র সংকটময়।

আর তথাকথিত মানবতার ধ্বজাধারীদের জন্য শেষের সেদিন ভয়ংকর!








No comments:

Post a Comment