Powered By Blogger

Sunday, June 25, 2023

প্রবন্ধঃ জাতের নামে বজ্জাতি ও একাকারকারীরা।

অন্যের ছোঁয়া বা রান্না খেতে পারা আর না খেতে পারার মধ্যে একই গুরুর শিষ্য হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। একই গুরুর শিষ্য হ'লেই যে একসঙ্গে খেতে হবে তার কোনও যুক্তি বেই, অযৌক্তিক। একসঙ্গে খেতে পারা আর না-পারার সঙ্গে জাত যাওয়া আর না-যাওয়া ব্যাপার বিষয়টা সম্পূর্ণ জাতের নামে বজ্জাতি ব্যাপার। এটা কোনও উচ্চবর্ণ বা নিম্নবর্ণের ব্যাপার নয়। একসঙ্গে খাওয়া আর অন্যের ছোঁয়া খাবার খাওয়া আর না-খাওয়ার মধ্যে সদাচারের বিষয় প্রধান। ব্যাপারটা হাইজিনিক অর্থাৎ clean, especially in order to prevent disease. এটা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। উঁচু জাত নীচু জাত ব'লে কোনও কথা নেই। প্রধান কথা জীবনচলনা। এই জীবনচলনার মধ্যেই সদাচারের ব্যাপার নিহিত। সদাচার অর্থাৎ যে আচার অর্থাৎ যে আচরণ, যে অনুষ্ঠান আমার সদ অর্থাৎ অস্তিত্বকে রক্ষা করে এবং ক্রমবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাই সদাচার।

আর, এই সদাচার শারীরিক-মানসিক ও আত্মিক সদাচার। এই তিন দিকের সমন্বয়ে সদাচার পালন সম্পূর্ণতা লাভ করে। এই সদাচার পালনের মধ্যে দিয়ে একজনের জীবনে শারীরিক-মানসিক-আত্মিক সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে এক উচ্চ অবস্থা গড়ে ওঠে। প্রতিটি স্নায়ু, প্রতিটি কোষ সাড়াপ্রবণ হ'য়ে ওঠে। রক্তের মধ্যে চৌম্বক শক্তির জাগরণ ঘটে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে তার প্রকাশ বা বিচ্ছুরণ ঘটে। এইখান থেকে বর্ণ অর্থাৎ কালার অর্থাৎ রঙের সৃষ্টি। কোন রঙে তুমি রাঙিয়ে নিয়েছো তোমাকে সেটাই হ'লো জাত। এই জাত থেকেই জাতির সৃষ্টি। এর মধ্যে ঘৃণার শিক্ষা নেই। একজন নিষ্ঠাবান শারীরিক-মানসিক-আত্মিক সদাচার পরায়ণ মানুষ এই সাধনার পথে চলতে চলতে যে সন্তান উৎপন্ন করে সেই সন্তানের রক্তের মধ্যে সেই গুণাবলী থাকে, শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে পিতার সাধনার কম্পন থাকে অর্থাৎ সেই সন্তানও পিতা যে রঙ্গে রাঙ্গিয়ে আছে সেই রঙের আধার হয় আর তখন তাকে সেই বর্ণের লোক বলা হয়। এটা সে পায় উত্তরাধিকার সূত্রে, রক্তের কারণে। আবার একইভাবে এর উল্টোটাও ঘটে অসদাচারী, অসংস্কৃত, ব্যাভিচারী রঙ্গে রাঙ্গিয়ে থাকা ব্যক্তির রক্তের বা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে।

কিন্তু যদি সে তার জীবনে এই সাধনার ব্যাঘাত ঘটায় অনুশীলনের অভাবে তাহ'লে তার পতন ঘটে যদিও তার রক্তের মধ্যে সেই গুণাবলী সুপ্ত আকারে থাকে। আস্তে আস্তে সেই গুণাবলী অর্থাৎ উন্নত জাতের ফলন যাকে পেডিগ্রি বলা হয় তা বংশপরম্পরায় অনুশীলনের অভাবে কিংবা বিবাহ বিভ্রাটের কারণে সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হয়। এই হ'লো জাতের ব্যাপার। এখানে যে কেউ নিজেকে বিহিত অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নতির পথে চালিত ক'রে নিজের জীবনকে উন্নত করতে পারে। উপরে তুলে নিয়ে যেতে পারে। এখানে ছোটো জাত, উঁচু জাত ব'লে কোনও ঘৃণ্য কথা নেই। স্বার্থপর ধান্দাবাজ মানুষ এই ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে নিজের মৌরসি পাট্টা বজায় রাখার জন্য।

তাই, এই বিজ্ঞান সম্মত সদাচার পালন অস্তিতের রক্ষা ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবশ্য পালনীয়। একজন উচ্চবর্ণের পুরুষ বা নারী যদি অসদাচারী, ব্যভিচারী হয়, নোংরা, অপরিস্কার ও অপরিছন্ন, ধ্বংসাত্মক খাদ্যখানা ও চিন্তাভাবনার মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করে সেক্ষেত্রে তার হাতেও খাওয়া বা সংস্পর্শ নিষিদ্ধ। কারণ সে একটা নেগেটিভ অরবিটের মধ্যে থাকে সবসময়। ফলে তার শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গে যে জীবাণু থাকে, রক্তে যে টক্সিন বইয়ে যায় এবং ক্রমাগত তার শরীর থেকে যে নেগেটিভিটির বিচ্ছুরণ হয় তা সেই ব্যক্তির সংস্পর্শে বা কাছাকাছি আসার ফলে বা তার হাতে তৈরী খাবার খাওয়ার ফলে আরেকজনের মধ্যে সংক্রামিত হয় অর্থাৎ সেই জীবাণু বা নেগেটিভ ফোর্স অন্যজনের মধ্যে সংক্রামিত হয়, প্রভাব বিস্তার করে। এমনকি মা যদি অসদাচারী, নোংরা, অপরিস্কার থাকে সেক্ষেত্রেও নিজের সন্তানকেও নিজের হাতে খাওয়ানো উচিত নয় এমনকি বুকের দুধ পর্যন্ত শিশুর ক্ষেত্রে তার জীবন সংশয় হ'য়ে উঠতে পারে।

সুতরাং আমাদের লড়াইটা জাতের বিরুদ্ধে নয় কারণ জাত ব'লে অর্থাৎ কোয়ালিটি ব'লে যদি কিচ্ছু না থাকে তাহ'লে সৃষ্টিই ধ্বংস হ'য়ে যাবে। লড়াইটা আসলে জাতের নামে বজ্জাতির বিরুদ্ধে, বিকৃতির বিরুদ্ধে, ব্যাভিচারী চলনের বিরুদ্ধে, মৌরসী পাট্টা বজায় রাখার বিরুদ্ধে, উদারতার ভঙ্গিতে সাম্যের নামে সব একাকার ক'রে খিচুড়ি বানিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে।

No comments:

Post a Comment