এম্বুলেন্স ছুটে চলেছে তার সাইরেন দিতে দিতে দ্রুতগতিতে যেন মরণ সংকেত জানান দিয়ে চলেছে আশেপাশের সবাইকে। ভালো লাগে না এই তীব্র আওয়াজ। এক তো ভীষণ তীব্র তদুপরি আওয়াজটা বুকের মধ্যে ভয়ের ভয়ঙ্কর হাতুড়ি পিটিয়ে যায়! চারিদিকে গরম হলকার মাঝে দিয়ে আমরাও ছুটে চলেছে পিছন পিছন বাইকে। মনে হচ্ছে বোধহয় আমরাও অসুস্থ হ'য়ে পড়বো এই তীব্র গরমে আর যানজটে। সহিষ্ণুতার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে ছুটে চলেছি আমরা অসহায় জীবের মতো! মনে পড়লো ঠাকুরের কথা, সহ্য করো, সহ্য করো, সহ্য করো। যেতে যেতে চারপাশের সবকিছু দেখতে দেখতে মনের মধ্যে ভেসে উঠলো আর জি কর হাসপাতালের ছবি। ডাক্তারদের ব্যবহার খুব ভালো লাগলো। দেখলো, প্রেসক্রিপশন করলো খুব আন্তরিক ভাবেই পরামর্শ দিলো কিন্তু তাৎক্ষণিক হাই টেম্পারেচার নাবাবার কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ হ'লো না কেন!? ভাবলাম, কি জানি ভর্তি না করাবার কারণেই হয়তো চিকিৎসা হ'লো না! বেড না পাওয়া, নোংরা মাটিতে বাড়ির চাদর বিছিয়ে সেখানে সেরিব্রাল অপারেশন ও প্যারালাইজড পেশেন্টকে শুয়ে রাখা, ইনফেকশন হওয়ার ভয়, বিড়ালের যত্রতত্র সর্বসময় সর্বময় উজ্জ্বল উপস্থিতি, ডাক্তারের সৎ পরামর্শ ইত্যাদি ইত্যাদির কারণে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার জন্য পেশেন্টকে নিয়ে আসার কারণে হয়তো চিকিৎসার সুযোগ ঘটেনি! এ তো রোগীর পরিবারের একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত! এই অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ডাক্তারদের কি ত্রুটি বা ভূমিকা থাকতে পারে!? সত্যিই তো আমরা তো পেশেন্টকে মাটিতে ফেলে রাখতে পারলাম না। এইভাবেই কেটে গেছিল কয়েক ঘন্টা বিনা চিকিৎসায় প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যাওয়া পেশেন্টকে নিয়ে।
একে কি বলবো? তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম? পরিস্থিতি আর পরিবেশের কারণে বিভ্রান্ত? ভয়, মৃত্যুভয়? ডাক্তারদের সৎ পরামর্শে প্রভাবিত? আরো অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো! কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটা মাথায় বারবার এতসব প্রশ্নের মাঝেও খোঁচা মারছিল তা হ'লো, তাহলে 'ইমারজেন্সি' ও 'ইমারজেন্সি ওয়ার্ড' শব্দের অর্থ কি!!!!!!!?
এইভাবে চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতে দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিয়ে আবার ফিরে এলাম নিজের এলাকায় উত্তরপাড়া জেনারেল হাসপাতালে।
ক্রমশঃ
( ১৩ই জুন' ২০১৯)
No comments:
Post a Comment