ঠাকুরের চাওয়া ও আমরা সৎসঙ্গীরা।
শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী, ছড়া, কথোপকথন পোষ্ট করা নিয়ে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেন। কেউ পোষ্ট করেন ঠাকুরের বাণী বা ছড়া মুখে মুখে শোনা থেকে, কেউ পোষ্ট করেন অসম্পূর্ণ, কেউ করেন উল্টে পাল্টে শব্দ পরিবর্তন ক'রে শোনা কথার ওপর ভিত্তি ক'রে। কেউ বা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন ইত্যাদি বাদ দিয়ে। কারও বা অজস্র বানান ভুলে ভরা পোষ্ট, (হয়তো বা তা কখনো কখনো কম্পিউটারের ওপর দখল না থাকার কারণে হয়) কারও কারও পোষ্টে ইনভার্টেড কমা বা ঠাকুরের নাম থাকে না। মনে হয় লেখাটা যিনি পোষ্ট করছেন তার!!!! আর আম সাধারণ সৎসঙ্গী ভাবেও তাই। অথচ যিনি পোষ্ট করেন তিনি এমনভাবে----ইচ্ছাকৃতই হ'ক আর অনিচ্ছাকৃতই হ'ক-----পোষ্ট করেন যেন মনে হয় লেখাটা তারই!!! ধরিয়ে দিলেও নিজেকে শুধরে নেয় না। আবার সরাসরি অন্যের লেখা নিজের ব'লে দ্বিধাহীন চিত্তে অবলীলায় অবহেলায় চালিয়ে দেওয়ার মত ঘৃণ্য কাজও করে কেউ কেউ। আসল লেখকের নাম ছেপে লেখককে ক্রেডিট দেয় না, সংগৃহীত কথাও লেখে না। কখনো কখনো কেউ কেউ পোষ্টের শেষে 'সূত্র' লিখে চালিয়ে দেয় তবুও লেখার ওপরে লেখকের নাম দেয় না!!! অনেকে আছে রেফারেন্স দেয় না।
এরফলে অনেকের মতে বিভিন্ন সুযোগ সন্ধানী কুচক্রী সৎসঙ্গ বিরোধী মানুষ, জনগোষ্ঠী সুযোগ পেয়ে যায় নিজেদের ইচ্ছেমত যা খুশী লিখে সেখানে ঠাকুরের ফটো বসিয়ে সাধারণ সৎসঙ্গী ও আম জনতাকে বিভ্রান্ত করার।
যাই হ'ক কথাটা একশত ভাগ সঠিক। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের লেখা পোষ্ট করা সম্পর্কে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা আমাদের প্রত্যেকের উচিত। উচিত তীক্ষ্ণ ও তৎপরতার সঙ্গে সজাগ থাকা। আমরা যেন ব্যাপারটা গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখি ও যতটা সম্ভব চেষ্টা করি।
তবে এটাও ঠিক, একশত বারের অধিক হাজারবার, লক্ষ-কোটি বার সঠিক যে, ঠাকুরের কথার তা সে বাণী, ছড়া, কথোপকথন যাই-ই হ'ক তার একটা স্মেল আছে, আছে তাল, লয়, ছন্দ আর মাদকতার পরম্পরা!!!!! বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার! তাই এই পরম্পরা সম্পর্কে যে অল্পবিস্তর স্টাডি করে, যার বিন্দুমাত্র ধারণা আছে, ঠাকুরকে যে বুঝেছে, ঠাকুরের জীবন সম্পর্কে যে জানে, ঠাকুর দর্শন, ঠাকুরের মিশন, ঠাকুরের আসার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, গন্তব্যস্থল সম্পর্কে যার সামান্যতম জ্ঞান আছে, আছে তাঁর নির্দেশিত পথে একটু হ'লেও পবিত্র অকপট চলা তাকে বোকা বানানো, ঠকানো সম্ভব নয়। তবে অল্পবিস্তর স্টাডিকে, বিন্দুমাত্র ধারণাকে, সামান্যতম জ্ঞানকে, একটু হ'লেও চলাকে তাঁকে ভালোবেসে আরো গভীরতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেলে তথাকথিত আবাল জনগোষ্ঠী কিছু করতে পারবে না, বিন্দুমাত্র দাগ কাটতে পারবে না। তবে হ্যাঁ ঠাকুরের কাজে বাধার সৃস্টি করে মাত্র আর ঠাকুরকে সীমাহীন কষ্ট দেওয়া হয়; এছাড়া এইসমস্ত জনগোষ্ঠী ঝড়ের আগেই তুষের মত উড়ে যাবে এবারের দয়ালের ভয়াল রূপের কাছে!!!!
তাই সৎসঙ্গীদের ঐ দেখা হ'লেই মেকী, শুকনো, কথার কথা, কর্ম্ম বিহীন, আবেগ সর্বস্ব, তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে শুধু 'জয়গুরু' বলার সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বেরিয়ে আসতে হবে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে শুধু ফেসবুকে বিপ্লব করা থেকে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী কোথায় কি বললো না বললো, ঠাকুরকে কে কোথায় কি বিকৃত করলো না করলো, কে কোথায় গালাগালি, কুৎসা করলো এসব নিয়ে ঠাকুরের ভাবনা চিন্তা করার অবসর ছিল না। এই পৃথিবীকে রক্ষা করা, পৃথিবীর সবাইকে রক্ষা করাই ছিল তাঁর বুকের ব্যাথা, আমাদের সবার ভালো থাকা, সুস্থ থাকা নিয়েই ছিল তাঁর যত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। জীবনের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আমাদের জন্য শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারেননি। শুধু শঙ্কায়, আতঙ্কে তাঁর দিন কেটেছে আমাদের নিরাপত্তা, আমাদের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য। আমরা কেউ তাঁকে একদিনের জন্য শান্তি দিতে পারিনি।
আমাদের জন্যই, আমাদের বাঁচাবার জন্য ও বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যই তিনি এসেছিলেন বারবার। কিন্তু আমরা তা বুঝিনি, ফিরে তাকায়নি তাঁর দিকে।
তাই, আমাদের সৎসঙ্গীদের ঠাকুর যা চান তাই হ'তে হবে। এছাড়া আর কিছু তাঁর চাওয়া ছিল না আমাদের কাছে।
( ২২শে জুন' ২০২১ )
No comments:
Post a Comment