আর, বাধাকে বাধ্য যে করতে পারে, সে-ই কৃতকর্মা।" শ্রীশ্রীআচার্য্যদেব।।
আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার এই অমৃত কথা জীবন সায়াহ্নে এসে নোতুন ক'রে ভাবতে শেখালো ও প্রেরণা দিল। অফুরন্ত জীবনী শক্তির সন্ধান দিয়ে গেলেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব। বাধা পেতে পেতে যখন মানুষ বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত, ক্ষতবিক্ষত ঠিক তখনি এক ঝলক দখিনা বাতাসের মতো জীবনকে জুড়িয়ে দিয়ে গেল এই অমৃত বাণী। আবার উত্তপ্ত হৃদয়ের কারও কারও মনে হ'তে পারে এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে।
আজ সময়ের কষাঘাতে মানুষ ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণেই হ'ক কিম্বা সামাজিক-রাষ্ট্রিক ব্যবস্থার কারণেই হ'ক মানুষ আজ ভালো নেই। ভালো থাকার অভিনয় ক'রে বেড়াচ্ছে ঘরে-বাইরে। যদিও মানুষ প্রকৃত ভালো থাকতে চায় না। শুধু মদের নেশার মত সাময়িক হৈ হুল্লোরবাজির মধ্যে দিয়ে ভালো থাকতে চায়, আনন্দে থাকতে চায়। নেশা কেটে গিয়ে নকল আনন্দ শেষ হওয়ার মত হুল্লোরবাজি শেষ, ভালো থাকাও শেষ। আবার সেই হ্যাঙ ওভার।
জীবনে প্রাপ্য বস্তু তা সে যুক্তিযুক্ত হ'ক বা না হ'ক তা না পেতে পেতে মানুষ ভিতরে ভিতরে আজ ক্ষিপ্ত। অসহিষ্ণুতা, না ক'রে পাওয়ার বুদ্ধি, চটজলদি ও সীমাহীন অতিরিক্ত প্রত্যাশা, অব্যবস্থা, হিংসা ইত্যাদি নানাভাবে নানারূপে বাধা তা সে নিজের কারণে হ'ক বা অন্যের কারণেই হ'ক মানুষের জীবনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলার পথে এসে দাঁড়িয়ে মানুষকে অতিষ্ঠ ক'রে তুলছে। আর সেখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে জমাট বাঁধা চাপা ক্ষোভ, জন্ম নিচ্ছে মানসিক ও শারীরিক বিকৃতি। তৈরি হচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক অশান্তি। মানুষ কাজে সফল হ'তে পারছে না নানা কারণে। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রকট যে মুখ্য কারণ তা হ'লো সরকারী প্রশাসনিক চূড়ান্ত সীমাহীন লাগামছাড়া উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল অব্যবস্থা। সফল হ'তে পারছে না মানুষ নিজের চারিত্রিক ত্রুটির কারণে। জৈবি সংস্থিতিতে এত অব্যবস্থা যে মানুষ কিছুতেই সফলতার স্বাদ পাচ্ছে না। ফলে মানুষ আজ যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। সুক্ষ্ম বোধ, তীক্ষ্ণ অনুভূতি হারিয়ে গেছে মানুষের জীবন থেকে। আর যাদের আছে তারা এই ক্ষমতাকে মূলধন ক'রে মানুষের মাঝে ক'রে চলেছে চরম ভন্ডামি নিজের স্বার্থ পরিপূরণের জন্য। ফলে জীবনীয় অক্সিজেনের অভাবে মানুষ আজ হ'য়ে আছে জ্যান্তমরা।
ঠিক এইসময় আচার্যদেবের " বাধার জন্যই তো জীবন সুস্বাদু হয় !
আর, বাধাকে বাধ্য যে করতে পারে, সে-ই কৃতকর্মা।"--- এমন বাণী নানারকম প্রশ্ন তুলে দেয় মানুষের মনে। সত্যিই কি বাধার জন্য্ জীবন সুস্বাদু হয়!? এ এক আজব কথা! বাধা যেখানে জীবনকে অস্থির ক'রে তুলছে, পুড়িয়ে খাক ক'রে দিচ্ছে, ক'রে তুলছে বিস্বাদ সেখানে কেমন ক'রে বাধা জীবনকে সুস্বাদু ক'রে তোলে!? এ তো পাগলের প্রলাপ!?
আমরা যারা সৎসঙ্গী তাদের প্রত্যেকের ভিতর ঠাকুরের কাছে একটা ভীষণ তীব্র প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আর এ প্রত্যাশা উচ্ছৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল প্রত্যাশা, নিজের মনের মতো পাওয়ার প্রত্যাশা, ফোকটে, না ক'রে পাওয়ার প্রত্যাশা, সস্তায় পাওয়ার প্রত্যাশা, পরিশ্রম বিহীন প্রত্যাশা, চটজলদি পাওয়ার প্রত্যাশা, অবাস্তব প্রত্যাশা।
প্রথমে বুঝতে হবে, মাথায় রাখতে হবে আমরা কেউই পারফেক্ট নই। আর পারফেক্ট শুধু না; জন্মজন্মান্তরের ভুল, অনভ্যাস, বদভ্যাস, কুসংস্কার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনের ধারা, বিভিন্ন প্রজাতির রক্তের মিশ্রণ, নিজের ত্রুটি, নিজের দোষ, নিজের ভুল ইত্যাদিকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা, স্বীকার না করার মতো ব্যভিচারী চরিত্র আমাদের পারফেক্ট হওয়ার পথে ভয়ঙ্কর বাধা।
আমাদের যে প্রত্যাশা পূরণ হয় না তার পিছনে তো নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে, নাকি? তা, আমরা প্রত্যাশা পূরণের আগে কিম্বা পূরণ না হওয়ার জন্য নিজের স্বভাব, চরিত্র, বদভ্যাস ইত্যাদিকে চিহ্নিত করতে পেরেছি কিনা, প্রত্যাশা যুক্তিযুক্ত কিনা, প্রত্যাশা পূরণের জন্য যা যা করণীয় তা আমি গভীর নিষ্ঠায় সঠিকভাবে করছি কিনা, প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিজেকে তৈরি করছি কিনা, প্রত্যাশা পূরণের জন্য সামাজিক, রাষ্ট্রিক, প্রশাসনিক, পারিবারিক পরিবেশ সহায়ক কিনা, প্রত্যাশা পূরণের পথে যে যে বাধা আসতে পারে, কার দিক থেকে, কোন দিক থেকে তা আসতে পারে সে সম্পর্কে আমার ধারণা আছে কিনা, বাধা আমি নির্ধারণ করতে পারছি কিনা, তার মোকাবিলায় আমি শারীরিক, মানসিকভাবে প্রস্তুত কিনা, আমি ঠাকুরের দীক্ষিত আমার ঠাকুরের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও নির্ভরতা আছে কিনা, ঠাকুরের জন্য, ঠাকুর ও ঠাকুরের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য আমি নিজেকে নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তির উর্ধ্বে তুলে ধরতে পেরেছি কিনা বা পারছি কিনা, বৃত্তি ভেদী টানে ঠাকুরকে ভালবাসতে পেরেছি কিনা বা পারছি কিনা ইত্যাদি নানা অপ্রিয় প্রশ্নকে যদি অস্বীকার করি, আমার মনের মতো নয়, আমার বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে পোষণ না দিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির ল্যাজে পা পড়ছে এমন বিরক্তিকর প্রশ্নের থেকে যদি চোখকে সরিয়ে রাখি, নিজের ঝুলে ভরা ত্রুটিকে যদি প্রশ্রয় দিই তাহ'লে এ জীবনে কেন হাজারবার জন্মালেও, ঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের কোলে বসে থাকলেও আমার প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার যে যন্ত্রণা সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি ঘটবে না। জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিনের এ সমস্ত বাধাকে আমার নিজের চরিত্র সংশোধনের মধ্যে দিয়ে, প্রায়শ্চিত্তের মধ্যে দিয়ে, কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে মোকাবিলা ক'রে বাধাকে অতিক্রম ক'রে ইপ্সিত বস্তুকে লাভ করতে হবে। শারীরিক, মানসিক, আত্মিক সব দিক দিয়েই প্রস্তুত হ'তে হবে বা থাকতে হবে। অন্যথায় প্রাপ্তির ঘর শুধু শূন্যতায় ভরে থাকবে জনম জনম।
বাধার জন্য জীবন সুস্বাদু হয় না এমন কথা যে ভুল তা গভীর উপলব্ধির ব্যাপার আর সেই উপলব্ধি হয় কর্মযোগের মাধ্যমে, আর ইষ্টকে বাদ দিয়ে, ইষ্টের উপস্থিতিকে অস্বীকার ক'রে, ইষ্ট প্রতিষ্ঠাকে উপেক্ষা, অবহেলা ক'রে উদারতার ভঙ্গীতে, মানবতার নামে বা অছিলায় জেনে হ'ক বা না-জেনেই হ'ক যে কর্মযজ্ঞ বা কর্মযোগ তা আত্মপ্রতিষ্ঠার যজ্ঞ বা যোগ, শয়তানী বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে যত্নে লালন পালন করার যজ্ঞ বা যোগ। আর যজ্ঞের বা যোগের পরিণতি দক্ষযজ্ঞ।
বাধা জীবনকে সুস্বাদু করার একটা মোক্ষম উপায়। তাই এই মোক্ষম উপায় বাধাকে বাধ্য করার মধ্যে দিয়ে জীবন সুস্বাদু হয়। আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার এই যে কথা,
"বাধার জন্যই তো জীবন সুস্বাদু হয়। আর, বাধাকে বাধ্য যে করতে পারে, সে-ই কৃতকর্মা।"
এ যে কতবড় উপলব্ধি তা মুখে ব'লে, লিখে, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এ ঈশ্বরকোটি পুরুষের উপলব্ধি। এ বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার। ইষ্টকে মাথায় নিয়ে প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে দিয়ে, অমানুষিক পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যে যায় সে তার কর্মে সফল হয়, হয়, হয়। ব্যর্থ সে কখনোই হয়নি, হয়না। এই যে দীর্ঘ কষ্টের রাস্তা, পরিশ্রমের রাস্তা সে যে হেঁটে এসেছে, সফল হয়েছে সেই দীর্ঘ, কষ্ট যন্ত্রণাময় রাস্তায় যে পায়ের ছাপ রয়েছে সেই পায়ের ছাপ তো তার নয়, সে ছাপ তো ঈশ্বরের, কর্মযোগী পুরুষের নয়, তার ইস্টের, দিন দুনিয়ার মালিক পরমপিতার। ঐ যে কথা আছে ভক্তের বোঝা ভগবানে বয়।
কিন্তু কোন ভক্তের বোঝা ভগবানে বয়? প্রহ্লাদরূপী ভক্তের বোঝা ভগবানে বয়। যাকে কোনও বাধা টলাতে পারে না, যাকে গভীর জলে, আগুনে, হাতির পায়ের নীচে, পাহাড় থেকে ফেলে দিলেও পরমপিতার ধ্যান ভঙ্গ হয় না। সেই প্রহ্লাদরূপী ভক্ত হ'লেন বিশ্বজুড়ে বিশাল সৎসঙ্গের কর্ণধার আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। যার কাছে বাধা জীবনকে সুস্বাদু করার মুল মন্ত্র, মহৌষধ। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীর পরম সৌভাগ্য আমরা আমাদের সামনে আচার্যদেবকে পেয়েছি নিখুঁত লক্ষ্যে ঠাকুরের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্যে।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকুলচন্দ্র হ'লেন নিরাকার ঈশ্বরের জীবন্ত রূপায়ন, মূর্তকরণ, প্রতিরূপ; সাকার ঈশ্বর।
আর, শ্রীশ্রীআচার্যদেব হ'লেন জীবন্ত ঈশ্বরেরর অবর্তমানে জীবন্ত ঈশ্বরের জীবন্ত অভিব্যক্তি, জীবন্ত উদ্ভাস। শ্রীশ্রীঠাকুরকে যারা সরাসরি পায়নি, পাচ্ছে না শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা হ'লেন তাদের কাছে এবং সকল সৎসঙ্গীর কাছেই ঠাকুরের অবর্তমানে ঠাকুরের জীবন্ত প্রকাশ, জীবন্ত প্রতিভাস, জীবন্ত আবির্ভাব, পূর্ণবিকাশ।
SriSriTHakur Anukulchandra is the Living manifestation of GOD. HE is Living Supreme Being, Living Supreme cause, Living Supreme Father. SriSriTHakur Anukulchandra is the Living embodiment of Unseen GOD, i.e SEEN GOD. He is the form, embodied of formless, shapeless, incorporeal; bodiless; un-body GOD.
SriSriAcaryadeb Babaidada is the living manifestation in the absence of the living God, Living Supreme Father, Living Supreme Cause, Living Supreme Being SriSriThakur Anukulchandra.
( লেখা ২৮শে এপ্রিল'২০১৩ )
আজ সময়ের কষাঘাতে মানুষ ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণেই হ'ক কিম্বা সামাজিক-রাষ্ট্রিক ব্যবস্থার কারণেই হ'ক মানুষ আজ ভালো নেই। ভালো থাকার অভিনয় ক'রে বেড়াচ্ছে ঘরে-বাইরে। যদিও মানুষ প্রকৃত ভালো থাকতে চায় না। শুধু মদের নেশার মত সাময়িক হৈ হুল্লোরবাজির মধ্যে দিয়ে ভালো থাকতে চায়, আনন্দে থাকতে চায়। নেশা কেটে গিয়ে নকল আনন্দ শেষ হওয়ার মত হুল্লোরবাজি শেষ, ভালো থাকাও শেষ। আবার সেই হ্যাঙ ওভার।
জীবনে প্রাপ্য বস্তু তা সে যুক্তিযুক্ত হ'ক বা না হ'ক তা না পেতে পেতে মানুষ ভিতরে ভিতরে আজ ক্ষিপ্ত। অসহিষ্ণুতা, না ক'রে পাওয়ার বুদ্ধি, চটজলদি ও সীমাহীন অতিরিক্ত প্রত্যাশা, অব্যবস্থা, হিংসা ইত্যাদি নানাভাবে নানারূপে বাধা তা সে নিজের কারণে হ'ক বা অন্যের কারণেই হ'ক মানুষের জীবনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলার পথে এসে দাঁড়িয়ে মানুষকে অতিষ্ঠ ক'রে তুলছে। আর সেখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে জমাট বাঁধা চাপা ক্ষোভ, জন্ম নিচ্ছে মানসিক ও শারীরিক বিকৃতি। তৈরি হচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক অশান্তি। মানুষ কাজে সফল হ'তে পারছে না নানা কারণে। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রকট যে মুখ্য কারণ তা হ'লো সরকারী প্রশাসনিক চূড়ান্ত সীমাহীন লাগামছাড়া উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল অব্যবস্থা। সফল হ'তে পারছে না মানুষ নিজের চারিত্রিক ত্রুটির কারণে। জৈবি সংস্থিতিতে এত অব্যবস্থা যে মানুষ কিছুতেই সফলতার স্বাদ পাচ্ছে না। ফলে মানুষ আজ যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। সুক্ষ্ম বোধ, তীক্ষ্ণ অনুভূতি হারিয়ে গেছে মানুষের জীবন থেকে। আর যাদের আছে তারা এই ক্ষমতাকে মূলধন ক'রে মানুষের মাঝে ক'রে চলেছে চরম ভন্ডামি নিজের স্বার্থ পরিপূরণের জন্য। ফলে জীবনীয় অক্সিজেনের অভাবে মানুষ আজ হ'য়ে আছে জ্যান্তমরা।
ঠিক এইসময় আচার্যদেবের " বাধার জন্যই তো জীবন সুস্বাদু হয় !
আর, বাধাকে বাধ্য যে করতে পারে, সে-ই কৃতকর্মা।"--- এমন বাণী নানারকম প্রশ্ন তুলে দেয় মানুষের মনে। সত্যিই কি বাধার জন্য্ জীবন সুস্বাদু হয়!? এ এক আজব কথা! বাধা যেখানে জীবনকে অস্থির ক'রে তুলছে, পুড়িয়ে খাক ক'রে দিচ্ছে, ক'রে তুলছে বিস্বাদ সেখানে কেমন ক'রে বাধা জীবনকে সুস্বাদু ক'রে তোলে!? এ তো পাগলের প্রলাপ!?
আমরা যারা সৎসঙ্গী তাদের প্রত্যেকের ভিতর ঠাকুরের কাছে একটা ভীষণ তীব্র প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আর এ প্রত্যাশা উচ্ছৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল প্রত্যাশা, নিজের মনের মতো পাওয়ার প্রত্যাশা, ফোকটে, না ক'রে পাওয়ার প্রত্যাশা, সস্তায় পাওয়ার প্রত্যাশা, পরিশ্রম বিহীন প্রত্যাশা, চটজলদি পাওয়ার প্রত্যাশা, অবাস্তব প্রত্যাশা।
প্রথমে বুঝতে হবে, মাথায় রাখতে হবে আমরা কেউই পারফেক্ট নই। আর পারফেক্ট শুধু না; জন্মজন্মান্তরের ভুল, অনভ্যাস, বদভ্যাস, কুসংস্কার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনের ধারা, বিভিন্ন প্রজাতির রক্তের মিশ্রণ, নিজের ত্রুটি, নিজের দোষ, নিজের ভুল ইত্যাদিকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা, স্বীকার না করার মতো ব্যভিচারী চরিত্র আমাদের পারফেক্ট হওয়ার পথে ভয়ঙ্কর বাধা।
আমাদের যে প্রত্যাশা পূরণ হয় না তার পিছনে তো নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে, নাকি? তা, আমরা প্রত্যাশা পূরণের আগে কিম্বা পূরণ না হওয়ার জন্য নিজের স্বভাব, চরিত্র, বদভ্যাস ইত্যাদিকে চিহ্নিত করতে পেরেছি কিনা, প্রত্যাশা যুক্তিযুক্ত কিনা, প্রত্যাশা পূরণের জন্য যা যা করণীয় তা আমি গভীর নিষ্ঠায় সঠিকভাবে করছি কিনা, প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিজেকে তৈরি করছি কিনা, প্রত্যাশা পূরণের জন্য সামাজিক, রাষ্ট্রিক, প্রশাসনিক, পারিবারিক পরিবেশ সহায়ক কিনা, প্রত্যাশা পূরণের পথে যে যে বাধা আসতে পারে, কার দিক থেকে, কোন দিক থেকে তা আসতে পারে সে সম্পর্কে আমার ধারণা আছে কিনা, বাধা আমি নির্ধারণ করতে পারছি কিনা, তার মোকাবিলায় আমি শারীরিক, মানসিকভাবে প্রস্তুত কিনা, আমি ঠাকুরের দীক্ষিত আমার ঠাকুরের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও নির্ভরতা আছে কিনা, ঠাকুরের জন্য, ঠাকুর ও ঠাকুরের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য আমি নিজেকে নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তির উর্ধ্বে তুলে ধরতে পেরেছি কিনা বা পারছি কিনা, বৃত্তি ভেদী টানে ঠাকুরকে ভালবাসতে পেরেছি কিনা বা পারছি কিনা ইত্যাদি নানা অপ্রিয় প্রশ্নকে যদি অস্বীকার করি, আমার মনের মতো নয়, আমার বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে পোষণ না দিয়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির ল্যাজে পা পড়ছে এমন বিরক্তিকর প্রশ্নের থেকে যদি চোখকে সরিয়ে রাখি, নিজের ঝুলে ভরা ত্রুটিকে যদি প্রশ্রয় দিই তাহ'লে এ জীবনে কেন হাজারবার জন্মালেও, ঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের কোলে বসে থাকলেও আমার প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার যে যন্ত্রণা সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি ঘটবে না। জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিনের এ সমস্ত বাধাকে আমার নিজের চরিত্র সংশোধনের মধ্যে দিয়ে, প্রায়শ্চিত্তের মধ্যে দিয়ে, কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে মোকাবিলা ক'রে বাধাকে অতিক্রম ক'রে ইপ্সিত বস্তুকে লাভ করতে হবে। শারীরিক, মানসিক, আত্মিক সব দিক দিয়েই প্রস্তুত হ'তে হবে বা থাকতে হবে। অন্যথায় প্রাপ্তির ঘর শুধু শূন্যতায় ভরে থাকবে জনম জনম।
বাধার জন্য জীবন সুস্বাদু হয় না এমন কথা যে ভুল তা গভীর উপলব্ধির ব্যাপার আর সেই উপলব্ধি হয় কর্মযোগের মাধ্যমে, আর ইষ্টকে বাদ দিয়ে, ইষ্টের উপস্থিতিকে অস্বীকার ক'রে, ইষ্ট প্রতিষ্ঠাকে উপেক্ষা, অবহেলা ক'রে উদারতার ভঙ্গীতে, মানবতার নামে বা অছিলায় জেনে হ'ক বা না-জেনেই হ'ক যে কর্মযজ্ঞ বা কর্মযোগ তা আত্মপ্রতিষ্ঠার যজ্ঞ বা যোগ, শয়তানী বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে যত্নে লালন পালন করার যজ্ঞ বা যোগ। আর যজ্ঞের বা যোগের পরিণতি দক্ষযজ্ঞ।
বাধা জীবনকে সুস্বাদু করার একটা মোক্ষম উপায়। তাই এই মোক্ষম উপায় বাধাকে বাধ্য করার মধ্যে দিয়ে জীবন সুস্বাদু হয়। আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার এই যে কথা,
"বাধার জন্যই তো জীবন সুস্বাদু হয়। আর, বাধাকে বাধ্য যে করতে পারে, সে-ই কৃতকর্মা।"
এ যে কতবড় উপলব্ধি তা মুখে ব'লে, লিখে, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এ ঈশ্বরকোটি পুরুষের উপলব্ধি। এ বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার। ইষ্টকে মাথায় নিয়ে প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে দিয়ে, অমানুষিক পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যে যায় সে তার কর্মে সফল হয়, হয়, হয়। ব্যর্থ সে কখনোই হয়নি, হয়না। এই যে দীর্ঘ কষ্টের রাস্তা, পরিশ্রমের রাস্তা সে যে হেঁটে এসেছে, সফল হয়েছে সেই দীর্ঘ, কষ্ট যন্ত্রণাময় রাস্তায় যে পায়ের ছাপ রয়েছে সেই পায়ের ছাপ তো তার নয়, সে ছাপ তো ঈশ্বরের, কর্মযোগী পুরুষের নয়, তার ইস্টের, দিন দুনিয়ার মালিক পরমপিতার। ঐ যে কথা আছে ভক্তের বোঝা ভগবানে বয়।
কিন্তু কোন ভক্তের বোঝা ভগবানে বয়? প্রহ্লাদরূপী ভক্তের বোঝা ভগবানে বয়। যাকে কোনও বাধা টলাতে পারে না, যাকে গভীর জলে, আগুনে, হাতির পায়ের নীচে, পাহাড় থেকে ফেলে দিলেও পরমপিতার ধ্যান ভঙ্গ হয় না। সেই প্রহ্লাদরূপী ভক্ত হ'লেন বিশ্বজুড়ে বিশাল সৎসঙ্গের কর্ণধার আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। যার কাছে বাধা জীবনকে সুস্বাদু করার মুল মন্ত্র, মহৌষধ। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গীর পরম সৌভাগ্য আমরা আমাদের সামনে আচার্যদেবকে পেয়েছি নিখুঁত লক্ষ্যে ঠাকুরের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্যে।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকুলচন্দ্র হ'লেন নিরাকার ঈশ্বরের জীবন্ত রূপায়ন, মূর্তকরণ, প্রতিরূপ; সাকার ঈশ্বর।
আর, শ্রীশ্রীআচার্যদেব হ'লেন জীবন্ত ঈশ্বরেরর অবর্তমানে জীবন্ত ঈশ্বরের জীবন্ত অভিব্যক্তি, জীবন্ত উদ্ভাস। শ্রীশ্রীঠাকুরকে যারা সরাসরি পায়নি, পাচ্ছে না শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা হ'লেন তাদের কাছে এবং সকল সৎসঙ্গীর কাছেই ঠাকুরের অবর্তমানে ঠাকুরের জীবন্ত প্রকাশ, জীবন্ত প্রতিভাস, জীবন্ত আবির্ভাব, পূর্ণবিকাশ।
SriSriTHakur Anukulchandra is the Living manifestation of GOD. HE is Living Supreme Being, Living Supreme cause, Living Supreme Father. SriSriTHakur Anukulchandra is the Living embodiment of Unseen GOD, i.e SEEN GOD. He is the form, embodied of formless, shapeless, incorporeal; bodiless; un-body GOD.
SriSriAcaryadeb Babaidada is the living manifestation in the absence of the living God, Living Supreme Father, Living Supreme Cause, Living Supreme Being SriSriThakur Anukulchandra.
( লেখা ২৮শে এপ্রিল'২০১৩ )
No comments:
Post a Comment